পাতাঝরার শেষে……পর্ব ১৭

0
1556

পাতাঝরার শেষে…..
©মৌপর্ণা

পর্ব – ১৭) Yada Yada Hi Dharmasya!

“হ্যালো! অন্বেষা! তুই কোথায়? কাকিমা বারবার জিজ্ঞেস করছে?”

“রিয়া দি! কেন কটা….ওহ্হো! দশটা বাজে নাকি?”

“হ্যাঁ! তুই ঠিক আছিস তো? মিস্টার রায় আছে কি তোর সাথে?”

“হ্যাঁ রিয়া দি!”

“ঠিক আছে যেখানেই থাকিস, দেরি করিসনা, নয়তো এক্ষুণি পিজি কাকিমা আবার স্টার্ট করবে, আর শোন তোর বাড়িতেও একবার ফোন করে দিস, মনে করে! তুই জানিস কাকু চিন্তা করে…..”

“হ্যাঁ রিয়া দি! একদম! আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরছি! রাখছি এখন টাটা!”

“হ্যাঁ বাই….”

ফোনটা কেটে অন্বেষা বসে রইলো ড্রাইভিং সিটের পাশে…..
গাড়ির কাঁচের জানালা টা অর্ধেক খোলা,
খোলা হওয়ায় অন্বেষা চোখদুটো বুজে বসে রইলো সিটে হেলান দিয়ে……
গাড়ি উঁচু উঁচু বিল্ডিং, মাল্টিপ্লেক্স, গাছগাছালি পেরিয়ে অনেকক্ষণ রওনা হয়েছে অন্বেষার পিজির দিকে!

“মিস্টার রায়! আর কতক্ষণ?”

“মিনিট পনেরো ব্যাস! তোমার অনেকটা দেরি হয়ে গেলো না অন্বেষা?”
আনমনই সামনের দিকে চেয়ে কথাটা বললেন মিস্টার রায়…..

“ইটস ওকে মিস্টার রায়! আমি শুধু এই টুকু চাই, ইন ফ্যাক্ট আমরা সবাই শুধু এই টুকু চাই, আপনি আমাদের cooperate
করুন…..
ব্যাস! বাকি সবটাই তো শুনলেন মিস্টার রায়! শুভ্রনীল বাবু একাই সমস্ত প্ল্যান টা করেছেন….
আপনাকে তো শুধু…..”

“জানি অন্বেষা সবটা জানি …কিন্তু!”

“মিস্টার রায়! নিজের জন্যে না হোক নিজের মৃত বাবার জন্যে আপনাকে এটা পারতেই হবে….”

“হমম আমি চেষ্টা করবো অন্বেষা!”

“হমম…..আজ জানেন ভালোই হলো, আজকে সবটা শোনার পর,
আমাকে এমনিও সবটা বলতে হতো আপনাকে…..
মিস্টার রায়! প্লিজ প্লিজ আপনি আপসেট হয়ে পড়লে আমার ভালো লাগে না….আপনি জানেন তো!”

“হমম জানি! না গো আমি আপসেট নই! আমি ঠিক আছি!”
একটা ফেকাসে হাসি হেসে মিস্টার রায় চুপচাপ স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে চললো আবার…

*****************************************************

অন্বেষা কে ড্রপ করে রয় ম্যানশনে ঢুকতেই
চোখ পড়লো ডাইনিং টেবিলে,
শুভ্র টেবিলের এক কোণায় বসে চুপচাপ রাতের খাবার খাচ্ছে….
মিস্টার রায় কে ঢুকতে দেখেই আজ একবার চোখে চোখ রাখলো শুভ্র!
সত্যি এতগুলো বছর ওই চোখের চাহুনি টার মানে বুঝেই উঠতে পারেনি মিস্টার রায়!
অথচ সে দিনের পর দিন আগলে রেখেছে তার দাদাভাই কে!
মিস্টার রায় কোনোদিন জানতেও পারেনি এই বাড়িতে রিরি ছাড়াও তাকে কেউ দাদাভাই বলে ডাকে!
হ্যাঁ হয়তো তার সামনে ও নামে ডাকেনি কখনো, তবে শুভ্রর মনেমনে মিস্টার রায় যে তার দাদাভাই, এটাই বা কম কিসের!

ডাইনিং পেরিয়ে মিস্টার রায় সিঁড়ি বেয়ে সোজা উঠে গেলো রিরির ঘরে দিকে, ভেজিয়ে রাখা দরজায় হালকা একটা টোকা দিয়ে রিরি বলে ডাকতেই ঘর থেকে বেরিয়ে এলো রিরি এক মুখ হাসি নিয়ে….

“দাদাভাই! কি এনেছো? বিরিয়ানি?”

ওহ….এতো কিছুর মাঝে সে ভুলেই গিয়েছিলো, আজ তো সে নিজে
বিকেলে ফোন করে রিরি কে বলেছিলো হারাধন দা কে রাতের খাবার না বানাতে! অন্বেষার সাথে ডিনার সেরে, বিরিয়ানি চিকেন নিয়ে আসবে সে রিরির জন্যে!

“দাদাভাই….”

“হ্যাঁ! হ্যাঁ এনেছি তো! তবে শোন না রিরি, আধঘন্টা লাগবে আমার আরও, একটু ফ্রেশ হয়েনি….তারপর একসাথে বসবো খেতে….কেমন? এমনিও এখন ওরা ডিনার করছে….”

“হ্যাঁ……ঠিক আছে……এখনো এগারোটা বাজেনি তো!”

সিঁড়ি দিয়ে নেমেই মিস্টার রায় পকেট থেকে বের করে নিলেন চাবি, মুহূর্তেই তালা খুলে ঢুকে পড়লেন ঘরে, তারপর Swiggy
তে দুপ্লেট বিরিয়ানি অর্ডার করলেন নিজের ঠিকানায়……
মুহূর্তেই ডায়েল করে দিলো অন্বেষার নম্বর….

“হ্যালো অন্বেষা! whatsapp করো তোমার লোকেশনটা ….”

“মিস্টার রায়! হঠাৎ কি হলো? মিস্টার রায় আমরা ফোনে অন্য কোনো ব্যাপারে…..”

“অন্বেষা! দাঁড়াও দাঁড়াও! আমি ডিনার অর্ডার করবো, তোমার এড্রেস টা পাঠাও!”

“ওহঃ! এই ব্যাপার! তবে মিস্টার রায় ডিনার করে নিয়েছি আমরা! মানে রিয়া দি নুডলুস অর্ডার করেছিল, অনেকটা ছিল…..আমার হয়ে গিয়েছে মিস্টার রায়!”

“ওকে! আচ্ছা!”

“হমম…আপনি আপনার আর রিরির জন্যে অর্ডার করলেন, আজকে তো হারাধন জেঠু কে বারণ করে দিয়েছিলেন…..”

“হমম করলাম! ওকে! তুমি তাহলে রেস্ট নাও! আজ খুব টায়ার্ড ছিলে….কাল কথা হচ্ছে ……অফিসে…..কেমন?
টেক কেয়ার ….”

“টেক কেয়ার …..বাই…..”

“বাই……”

******************************************************

“দাদাভাই আজ অন্বেষা মিসের সাথে তুমি ডিনার করোনি?”

একটু ইতস্তত গলায় মিস্টার রায় বললেন –
“হ্যাঁ! করেছি তো! তবে পেট ভরেনি তখন! তাই ভাবলাম তোর সাথে আর একবার ডিনার করেনি…..”

মিস্টার রায়ের কথা শেষ হতেই রিরির মুখে ফুটে উঠলো একটা ছেলেমানুষির হাসি…

খাওয়া শেষ হলে রিরি মুখহাত দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেলো তার ঘরের দিকে!

*************************************************

মিস্টার রায় ডাইনিং টেবিল থেকে উঠে একটু এগিয়ে গেলেন সোফার দিকে, সোফার সামনে মুখোমুখি লাগানো কাঁচের শেলভ গুলোর দিকে চেয়ে রইলেন এবার!
চেয়ে রইলেন সদ্য সাজানো টব গুলোর দিকে!

কি যেন নাম বললো হোটেলের ম্যানেজার
সাক্যুলেন্ট প্ল্যান্ট! সেনিশিও রৌলিয়ানো
String-of-Pearls or String-of-Beads
ঠিক! এটাই বলেছিলো তখন!

মিস্টার রায় এক নজরে চেয়ে রইলো গাছগুলোর দিকে, থোকথোক গোছা মুক্তোর আকারের পাতা নেমে এসেছে টব বেয়ে!
টবের বেশিরভাগ টাই চাপা পরে গিয়েছে তাতে!

আর সেই খানিক অর্ধচাপা পরে যাওয়া অংশটার মধ্যেই লাগানো ক্যামেরা! হিডেন একটা ছোট্ট ক্যামেরা!
আর তাতেই রেকর্ডেড হয়েছিল সেই ভিডিও, যেটা ট্রান্সমিট হয়েছিল আটশো মিটার দূরের এক সাইবার ক্যাফেতে! আর তারপর শুভ্র ও স্বর্ণালী সেগুলো জোগাড় করে হোয়াটস্যাপ করেছিল অন্বেষার নম্বরে!

ভিডিওটার কথা ভাবতেই কেঁপে উঠলো মিস্টার রায়!
হ্যাঁ ঠিক সোফার এই জায়গাটা তে বসেই তিনি প্রথমে একটা অন্য সিম ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন আজ দুপুরে!

তারপর সেই সিম থেকে একটা ফোন করে কাকে যেন দাঁতে দাঁত চেপে বলছিলেন –

“আমি বলছি…….
আজকাল …..আমার গলাটাও….. চিনতে পারোনা দেখছি……….
অবশ্য তোমার আর দোষ কোথায়?
কতদিন হয়ে গেলো, কথাই হয়না তোমার সাথে! ……..
হ্যাঁ ওই আছি…..চলে যাচ্ছে…..
তোমরা সবাই ভালো………
যাক যেটা বলার জন্যে তোমায় ফোন করেছিলাম, বলছিলাম
ওই ইমপোর্টেড এয়ার ফ্রেশনার টা আরো একবার জোগাড় করতে হবে তোমায়!
আমার অরুণের অফিস ক্যাবিনে দিও মাঝে মাঝে……..
হ্যাঁ, তুমি তো আবার সবটা সুন্দর জানো! হ্যাঁ….হ্যাঁ…..সে আর বলতে….সে কি আমি জানিনা – পনেরো বছর আগের দামে এখন কি ও জিনিস পাওয়া যায় নাকি!
তাই দামের কথা ভেবোনা, কোয়ালিটির কথা মাথায় রেখো! I’m Sure অরুণেরও খুব পছন্দ হবে ওই গন্ধটা! ওর বাবারও যে খুব পছন্দ ছিল ওই গন্ধটা!”

ভিডিওর কথাটা মনে পড়তেই মিস্টার রায় আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না ডাইনিংয়ে! হনহন করে এগিয়ে গেলেন নিজের ঘরের দিকে,
তারপর প্রকান্ড এক ধাক্কায় বন্ধ করে দিলেন নিজের ঘুপটি ঘরের দরজাটা!

তারপর এগিয়ে গেলো আলমারির ওই ঝাপসা কাঁচের সামনে…… নিজের দিকে চেয়ে রইলো বেশ কিছুক্ষন……
তারপর বিভীৎস্য জোরে চিৎকার করে উঠলো সে!
কেন? কেন বারবার জীবন এমন খেলা খেলে তার সাথে……তার সাথেই
কেন?
কেন তার জীবনে কোনোদিনও একটু শান্তি পেলোনা সে!
আজ যখন সব একটু একটু করে ঠিক হতে শুরু করেছিল, এ কেমন সত্যির সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো তার জীবন তাকে!
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ঘরের মাটিতে বসে পড়লো সে!
নতুন করে লড়াই করার মতন ইচ্ছে যে একদম নেই তার!

তবে এ লড়াই লড়তেই হবে তাকে, নিজের জন্যে না হোক তার মৃত
বাবার প্রতি হওয়া অধর্মের বিরুদ্ধে!

গাড়িতে অন্বেষার বলা লাইন গুলো কানে বেজে উঠলো আবার –

“Yada yada hi dharmasya glanir bhavati bharata
Abhythanama dharmasya tadatmanam srijamyaham

Paritranaya sadhunang vinashay cha dushkritam
dharma sangsthapanarthay sambhabami yuge yuge”

কাঁপা কাঁপা ঠোঁঠে নিজের মনেই আওড়ে গেলেন মিস্টার রায় সেই লাইনের মানে গুলো –
যখন যখন ধর্মের অধঃপতন এবং অধর্মের উদ্ভব হয়, তখন তখন সাধুদের পরিত্রান, দুষ্টু লোকের বিনাশ এবং ধর্ম সংস্থাপন করার জন্যে আমি পৃথিবীতে অবতীর্ণ হই……

**************************************************

প্ল্যান মাফিক পরের দিন অফিসে পৌঁছতেই
মিস্টার রায় সোজা এগিয়ে গেলেন নিজের ক্যাবিনের দিকে, তারপর তার PA অভয়ের মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন

“অভয় !
পুরো অফিসের সমস্ত ডিপার্টমেন্টের সমস্ত স্টাফ কে বলো আমি সবাইকে ডেকেছি G ব্লক অডিটোরিয়ামে শার্প @11
, Meanwhile সাপোর্টিং হাউস স্টাফদের ডেকে বলো অডিটোরিয়ামটা রেডি করে দিতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব!
অডিটোরিয়াম রেডি হয়ে গেলে আমাকে একটা কল করো, টিল দেন আমি কিছু জরুরি কাজ সেরে আসছি!”

কথাটা শেষ হতে না হতেই তিনি
হনহন করে এগিয়ে গেলেন এক্সিট গেটের দিকে!

ঠিক বেলা এগোরাটা তে অফিসের সমস্ত Employee পৌঁছলেন অডিটোরিয়ামে!
মিস্টার রায় স্টেজে উঠে
announce করলেন –
বেড়ে ওঠা কম্পিটেশন মার্কেটে টিকে থাকতে গেলে প্রোডাক্ট কোয়ালিটি আরও অনেক ভালো করতে হবে,
আরো বেশি করে ভাবতে হবে কি ভাবে কম খরচেই বেস্ট কোয়ালিটির প্রোডাক্ট পৌঁছনো যায় কম্পানির হাতে,
আর এই দায়িত্ব তিনি শুধু কম্পানির এমপ্লয়িদের ওপর এনফোর্স করছেন না, তিনি নিজেও আজ থেকে অনেক বেশি সময় দেবেন সমস্ত ডিপার্টমেন্ট গুলোকে!

তাই আজ থেকে উনি রোটেশনালি বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের পাশে বসেই কাজ করবেন!
তাতে সে নিজের কাজের পাশাপাশি অন্যাআন্য সব ডিপার্টমেন্টের খুঁটিনাটি গুলোও জানতে পারবেন!

সেদিন থেকেই মিস্টার রায় নিজের ক্যাবিন ত্যাগ করে বসতে শুরু করলেন বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের ঘরে! ঘুরেঘুরে চলতে থাকলো রোটেশনাল সিটিং arrangement!

**************************************************
দিন পনেরো পর –
স্বর্ণালীর ফার্মহাউসে আবার পৌঁছলে রিয়া ও অন্বেষা!

ভিডিও কলের ওপারে আজ মিস্টার রায় ও শুভ্রনীল রায় – হ্যাঁ তারা আলাদা আলাদা ভাবে জয়েন করেছেন গ্রূপ চ্যাট!

বাড়িতে চোখেচোখ পড়লেও আজ অবধি শুভ্রর সাথে সামনা সামনি কথা হয়নি মিস্টার রায়ের! সাবধানের মান নেই, হঠাৎ এরকম ওদের দুজনকে কথা বলতে দেখলে রজনী দেবীর সন্দেহ হতে পারে,
এমনিই শুভ্রর ওপর ভরসা নেই তার একদম! বছরের পর বছর সে যে মিথ্যে বলেছে তার মা কে!

ভিডিও কলের এপারে ল্যাপটপের সামনে ওরা পাশাপাশি বসে তিনজন…..
স্বর্ণালী, রিয়া ও অন্বেষা….

গত দিন পনেরো ধরে,
ওরা অনেক চেষ্টা চালিয়েও, রজনী দেবীর ফোনটা এখনো অবধি হ্যাক বা ট্যাপ করে উঠতে পারেনি….
এদিকে ভিডিও ওয়াইজ উনি যে সিম ব্যবহার করেছেন ফোন করার জন্যে, সেই সিম উনি কথা বলার শেষেই নষ্ট করে দিয়েছেন!

একজন IT হ্যাকার কে Hire
করেছে ওরা, সেও বারবার বলছে রজনী দেবীর ফোনে কোনো একটা সিকিউরিটি সফটওয়্যার এর কারণে কিছুতেই সব কল রেকর্ডস হ্যাক করা যাচ্ছেনা!
হয়তো বাড়ির বাইরে উনি অনেক কল করছেন যেগুলো ধরা পড়ছেনা রয় ম্যানশনে লাগানো কুড়িটা হিডেন ক্যামে!
নয়তো মিস্টার রায়ের ঘর লাগানো, অফিস ক্যাবিনে উনি ঢুকছেন না, রজনী দেবী হাত গুটিয়ে তো বসে নেই, উনি নতুন কিছুর ফন্দি আঁটছেন নিশ্চই!

এদিকে রয় ম্যানশনের হিডেন ক্যামেরা তে
রজনী দেবীর কথা রেকর্ড হলেও তাতে পরিষ্কার করে যে কিছুই প্রমাণ হচ্ছে না!

শুধু একটা বেফাঁস কথা! একটা বেফাঁস কথা রজনী দেবীকে পৌঁছে দেবে কাঠগড়ার ওপারে!

হিডেন ক্যামেরাতে করা ভিডিওতে উনি বারবার বলেছেন এয়ার ফ্রেশনারের কথা! তবে সেই ফ্রেশনারে যে বিষ আছে এমন কোনো কথা রেকর্ডেড নেই ভিডিওতে!

এখন একটাই উপায়!
কোনো ভাবে খুঁজে বের করতে হবে সেই ব্যক্তি কে যাকে রজনী দেবী ফোন করেন, এবং তার ফোনটা ট্যাপ করে দেখতে হবে একবার!
তাহলেই ঝামেলা শেষ!

ওরা অনেক আশা করেছিল মিস্টার রায়ের রোটেশনাল সিটিং নিয়ে কারুর তো সমস্যা থাকবেই!
কেউ তো আছে যে চায়না মিস্টার রায় ক্যাবিন ছাড়ুক, কারণ তার ওপর দায়িত্ত্ব আছে ওই এয়ার ফ্রেশনার স্প্রে করার বা করানোর!
তবে ওদের এই চালটাও উল্টো পড়লো!
কেউ বললোনা যে সে অখুশি পুরো ব্যাপারটা তে!
দিনে দিনে জিনিষটা আরও জটিল হয়ে আসছিলো!
এতদিনে ওরা বুঝে গিয়েছিলো –
শুধু রজনী দেবীই নয়, ফোনের ওপারের মানুষটা ভীষণ ভীষণ চালাক!
অথচ সে অফিসের লোক, নয়তো রজনী দেবী তাকে স্প্রে করার ব্যাপারটা বলবেন কেন?

কিছু একটা করতে হবে! কিন্তু কি!
অন্বেষা ল্যাপটপের সামনে বসেই বারবার আজকে প্লে করে যাচ্ছিলো দিন পনেরো আগেকার রেকর্ডেড ভিডিওটা!
যদি কিছু ওতে লুকিয়ে থাকে! কিছু!
বাকি চারজন ওরা ব্যস্ত নতুন প্ল্যান কি হতে পারে সেটা নিয়ে!

হঠাৎ অন্বেষা ভিডিওটা pause করে বলে ওঠে –
“শুভজিৎ বিশ্বাস কে কেউ অ্যাড করো ভিডিও চ্যাটে, এক্ষুণি! কি হলো স্বর্ণালী দি, শুভ্রনীল বাবু কেউ অ্যাড করুন…..”

স্বর্ণালী কিছু বুঝতে পারছিলোনা, মুহূর্তেই শুভ্রনীল অ্যাড করলো IT হ্যাকার শুভজিৎ বিশ্বাস কে! মুহূর্তেই একটা চৌকো বাক্সে ওরা দেখলো শুভজিৎ কে!”

শুভজিৎ বলে উঠলো –
“সরি টিম! এখনো অবধি আমি সেরকম কিচ্ছু করে উঠে পারিনি, আরে মশাই আপনারা তো সিম কার্ড নম্বরটাও বলতে পারছেন না, তাতে হয়তো……”

“মেলবক্স হ্যাক করতে পারবে?”
বলে উঠলো অন্বেষা!

“হ্যাক নয়, তবে খুলতে পারবো… কোয়াইট Easy যদি লিংকড ফোন নম্বর টি পাওয়া যায়!”

“উফফ! তুমি কিসের হ্যাকার?
এবারে OTP কোথাথেকে পাবো! সেই ব্যাপারটা তো একই হয়ে গেলো! মানে মেল্ খুলতে OTP লাগবে আর OTP র জন্যে সিম কার্ড নম্বর লাগবে,
সেই সিম কার্ড যেটা উনি সেই বিশেষ ব্যক্তির সাথে কথা বলার পর ডেস্ট্রয় করে দিয়েছেন!
একটা অপসন ছিল ফোনটা হ্যাক করে ট্র্যাক করা! সেটা হলেই জানা যেত কোন কোন সিম ইউজ হচ্ছে ওতে….তুমি সেটাও….”

“না! অন্বেষা এক মিনিট! এক মিনিট! আমরা একটা জিনিস ভুলে যাচ্ছি!
রজনী রায় স্পেয়ার সিম বা নতুন সিম
ইউজ করছেন ফর হার প্ল্যান! খুব সেফ খেলছেন উনি! তবে….তবে….মেল্ এর মতন একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতে উনি কি স্পেয়ার সিম ইউজ করবেন! আমার সিক্সথ সেন্স বলছে মানুষ ইম্পরট্যান্ট জায়গাতে নিজের পার্মানেন্ট সিমটি দিয়ে থাকেন….তাইনা?”

কথাটা শুনেই লাফিয়ে উঠলো বাকিরা…..
অন্বেষা সোজা হয়ে উঠে বসলো সোফায়, তারপর বললো শুভ্রনীল বাবু ওনার অফিসিয়াল ইমেল টা বলুন……
শুভজিৎ মেল্ বক্সে ঢোকো…..

“এক সেকেন্ড এক সেকেন্ড! অন্বেষা! তাড়াহুড়ো করোনা! অন্য জায়গা থেকে লগইন করলে মায়ের ফোনে একটা নোটিফিকেশন যেতে পারে আর তাতে সব কিছু ঘেটে যেতে পারে……
শুভজিৎ তুমি কনফার্ম করো মেল্ পাসওর্ড ফরগট করলে, Retrieve করতে গেলে কোন ফোন নম্বর
দেখাচ্ছে, আই মিন লাস্ট চারটে ডিজিট বলো, OTP পাঠাবে না কিন্তু!”

“রাইট জাস্ট এ সেকেন্ড! ল্যাপটপ খোলাই আছে জাস্ট এক সেকেন্ড দাও…..
হ্যাঁ ওনার মেল্ আইডি বলো……..
ওকে….দিলাম…..মেল্ আইডি…..
ওকে……..
ওকে……..
লাস্ট চারটে ডিজিট ৫৩০০…..

“Yes! এটাই মায়ের পার্মানেন্ট নম্বর…..
কিন্তু শুভজিৎ পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করলে তো…..মা বুঝে যাবে…..আর মায়ের OTP
…..আমি কি তাহলে ফোনটা আনবো…..”

“ডোন্ট Worry!! তোমাকে কোন ফোন আনতে হবেনা, তোমরা যে ভাবে ফরগেট পাসওয়ার্ড করো, আমি সেভাবে করবোনা! অথেন্টিক সোর্স এর মতন একটা মেসেজ ঢুকবেন ওনার ইনবক্সে! তারপর উনি নিজেই আমাকে ফরওয়ার্ড করবেন একটা টেম্পোরারি পাসওয়ার্ড! ব্যাস! আমার কাজ ডান! তারপর উনি নিজেই রিসেট করবেন ওনার পাসওয়ার্ড!
কারণ একটা অথেন্টিক সোর্স এর মতন আইডি ওনাকে বলবে সেটা রিসেট করতে!
তারপর পুরো ইনবক্স আমাদের কন্ট্রোলে হবে!”

“কিন্তু তাতে তোমার নম্বর টা ট্র্যাক…”

“শুভ্রনীল বাবু, আপনিও কি অন্বেষার ম্যাডামের মতন আমাকে অপর্দার্থ মনে করেন? যতটা বোকা আমায় ভাবেন ঠিক ততটা আমি নই! ভাবলেন কি ভাবে যে OTP পাঠাবো? OTP র জন্যে আইটি প্রফেশনাল হ্যাকার কেন দরকার আপনার? নিজেরাই করে নিন!
আমি তো বললাম লিংকড ফোন নম্বর দিন….নিন এবারে বলুন!”

“কি বলবো? হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি খুব বুদ্ধিমান!”

“উফফ! শুভ্র! উনি কাকিমার পুরো
ফোন নম্বর চাইছেন! সিরিয়াসলি তোরা ওনাকে ভীষণ জ্বালাচ্ছিস!”
এতক্ষণে কথা বললো মিস্টার রায়!

“হ্যাঁ! এই একজনই আছে আপনাদের মধ্যে যে ঠিক জিনিস টা বোঝে! শুভ্রনীল বাবু বলুন পুরো নম্বর টা! শুধু
শেষ চারটে ডিজিট দিয়ে ওপেন হবেনা মেলবক্স! বাই দি ওয়ে, মেলবক্স কন্ট্রোল নিয়ে কি করবেন?
যে মানুষটি একটা অন্য সিম ইউজ করছে ফর ক্রাইম, সে পার্সোনাল মেল্ থেকে কোনো মেল্ এই কাজের জন্যে ব্যবহার করবে বলে আপনাদের মনে হয়?”

সব গুলো চোখ এবারে অন্বেষার দিকে চেয়ে দেখলো, সত্যি মেলবক্স নিয়ে কি হবে?
তাও বিজনেস মেলবক্স, সেখানে কেউ কিইবা খুঁজে পাবে?

অন্বেষা গলা পরিষ্কার করে বেশ দৃঢ় গলায়
বলে চললো –
“আগের দিনের ভিডিওটা তে তোমরা নিশ্চই দেখেছো উনি টাকার কথা বলেছেন, বলেছেন পনেরো বছর আগের চেয়ে অনেক দাম বেড়েছে, আই মিন সেই রেটে এয়ার ফ্রেশনার পাওয়া যায়না,…
টাকা পয়সার ব্যবস্থা উনি করে দেবেন তবে ওনার Quality প্রোডাক্ট চায়!”

রিয়া বলে উঠলো – “হ্যাঁ তো?”

“তার মানে উনি টাকা পয়সা ট্রান্সফার করছেন নিজের ব্যাংক একাউন্ট থেকে অন্য একজন কে, যাকে দিয়ে উনি এই কাজটা করাচ্ছেন !
আর তাছাড়া টাকার ব্যাপারটা ছাড়া কেউ কেন মিস্টার রায় কে মারতে চাইবেন? তাতে তার কি লাভ?
টাকার অংক নিশ্চই আছে, আর……

ব্যাংক Account উনি নির্ঘাত লিংক করে রেখেছেন প্রাইমারি মেলের সাথে!
কারণ মানুষ স্পেয়ার সিম, স্পেয়ার মেল্ কখনো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতে লিংক করেনা!
গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতে লিংক করা হয় প্রাইমারি মেল্!

তাই যদি আমি খুব ভুল না হই তবে,
মেলবক্সে থাকবে ট্রানসাকশান ডিটেল!
কবে কত টাকা ট্রান্সফার হয়েছে কার account এ!!

কিছু ডিটেলস তো পাওয়া যাবে টাকা পয়সার লেনদেনের ! হমমম? কি বলো তোমরা?

আর তারপর ট্রানসাকশান ডিটেল নিয়ে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলে সে ব্যক্তির নাম বা ফোন নম্বর কিছুতো পাওয়া যাবেই!
আর সত্যি বলতে কি সেই ব্যক্তি আমাদের অফিসেরই কেউ! তাকে আগে চিনি, তারপর নতুন খেলা ভাবে যাবে! তাকে সেরকম চিনলে তার ফোন ট্যাপ করারও দরকার নেই!
ফোন ডিটেলস না হয় পুলিশ বের করবে, উনি Arrest হলে!”

অন্বেষার কথা শেষ হতে না হতেই বাকিদের চোখগুলো জ্বলজ্বল করে উঠলো!
তবে কি এবারে একটা ব্যবস্থা করা যাবে?

সেদিন রাতেই খুলে ফেললো ওরা
রজনী দেবীর মেল্ ইনবক্স!

ইনবক্স খুলতেই, খানিকক্ষণের মধ্যে
আসল চেহারা টা ভেসে উঠলো ওদের চোখের সামনে!
দীপক ভাদুড়ী!
ভালো মানুষের মুখোশের আড়ালে উনি এতবড়ো ষড়যন্ত্র করেছিলেন বছর পনেরো আগে!
শুধু কিছু টাকার জন্যে?
ওনার তো পয়সার কোনো অভাব নেই, যথেষ্ট উঁচু পদে ছিলেন উনি!
তবু এতো বড়ো একটা পাপ উনি করতে পারলেন!
শুধু কি তখন? আজও উনি আবার একিই পাপ করতে রাজি হয়েছিলেন! তাইতো এতগুলো টাকা ওনাকে ট্রান্সফার করেছিল রজনী রায়!

*************************************************

প্ল্যানমাফিক তৈরী হলো দীপক বাবু কে হাতেনাতে ধরার উপায়!
ঠিক তার পরের দিন থেকেই শুরু হলো এক নতুন অধ্যায়!

অফিস শেষে সবাই বেরিয়ে গেলে, মিস্টার রায় রাতে ঘন্টা খানিকের জন্যে হলেও গিয়ে বসতেন নিজের ক্যাবিনে…..
উনি নিজেই একথা একটু ঘুরিয়ে বলেছিলেন দীপক বাবু কে,
যাতে দীপক বাবু ক্যাবিনে ঢুকে স্প্রে করেন ওই কেমিক্যাল আবার!

এদিকে হেড সিকিউরিটির ডেস্ক থেকে অন্বেষা খুব গোপনে কালেক্ট করছিলো মিস্টার রায়ের ঘরের বাইরে লাগানো সিসিটিভি ফুটেজ!
একটা হিডেন ক্যামও ইন্স্টল্ করা হলো মিস্টার রায়ের ঘরের ভেতরেও!
সেই ফুটেজেও চেক করতো অন্বেষা!

কাউকে কোনো ধরণের এয়ার ফ্রেশনারের বোতল বা ইনসেক্ট রেপেলেন্ট এর বোতল হাতে নিয়ে ঢুকতে দেখলেই, অন্বেষা ও
হেড সিকিউরিটি ইনফর্ম করবে বাকিদের, এটাই ছিল প্ল্যান…..

এদিকে দিন দশেক আগে এমনিই মিস্টার রায়, হাউসকিপিং স্টাফেদের জানিয়েছিলেন তার ঘরে কোনোরকম এয়ার ফ্রেশনার বা ইনসেক্ট রেপেলেন্ট যাতে স্প্রে না করা হয়, তাতে তার নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধে হয় একটু……
কাজেই আসল অপরাধী ছাড়া কারুর ও ঘরে স্প্রে করার কথা নয়!

কিন্তু কোথায় কি?
এরই মধ্যে আবার কেটে গেলো দশ দশটা দিন!
কেউ শেষ দশদিনে ও ঘরে কিচ্ছু স্প্রে করছেনা….
As per সিসিটিভি ফুটেজ!

তবে কি তারা কিছু মিস করছে? কি মিস করছে? এখনো কি অপরাধীর দল – নিরন্তর ক্ষতি করে চলেছে মিস্টার রায় কে?
কথাগুলো ভাবতেই কেঁপে ওঠে ওরা!

*************************************************

আজ রাতে ফিরে, ওরা সবাই একিই ভাবে কানেক্ট করলো গ্রূপ চ্যাটে!

শুভ্র ও মিস্টার রায় আলাদা আলাদা ভাবে জয়েন করেছিল নিজেদের ঘর থেকে!
চ্যাটে ওরা ছাড়া ছিল হ্যাকার শুভজিৎ,
স্বর্ণালী, রিয়া ও অন্বেষা!

মিস্টার রায়(অরুণজিৎ) :
আমার মনে হচ্ছে, শুভ্র তোর কোথাও একটা ভুল হচ্ছে, হয়তো আমরা বেশি ভাবছি ব্যাপারটা! হয়তো অন্য কিছু বলতে চেয়েছিলো কাকিমা ওই রেকর্ডিং টা তে!

অন্বেষা :
মিস্টার রায় প্লিজ! আপনি আবার ব্যাপারটা কে ইগনোর করে পালানোর চেষ্টা করছেন!

মিস্টার রায়(অরুণজিৎ) :
কে পালাচ্ছে অন্বেষা! আমি পালাচ্ছি? তোমাদের কথা শুনে দিনের পর দিন রোটেশনালি বসছি বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের সাথে, তাতে আমার কাজের চরম ক্ষতি হচ্ছে, কারণ ওতো লোকের মধ্যে বসে মন দিয়ে আমার কাজটা করতে পারছিনা!
সেই কাজ কম্পেন্সেট করতে আজ প্রায়
পঁচিশ দিন হলো আমি রাত জেগে কাজ করছি, তিন চার ঘন্টার বেশি ঘুমোচ্ছি না, আমাকে বাদ দাও, তুমি নিজেকে দেখো অন্বেষা, শুভ্র কে দেখো, স্বর্ণালী কে দেখো, রিয়া কে দেখো, সবাই কলেজ, ল্যাব অফিস থেকে ফিরে সারাদিন,, দিন নেই, রাত নেই বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে অফিসের ফুটেজ, ঘরের ফুটেজ!
আমরা নিজেরা দিনের পর দিন ঘুমোচ্ছি না, রাত জেগে রয়েছি, কিন্তু এতে আদেও কোনো লাভ হচ্ছে, আমার মনে হচ্ছে সেরকম কোনো প্ল্যান করছে না ওরা!”

অন্বেষা:
মিস্টার রায় যদি তাই হয় তবে রজনী রায় কেন অতগুলো টাকা ট্রান্সফার করেছেন দিপক বাবুকে! সেটা বলুন!

স্বর্ণালী:
Guys! এখন নিজেদের মধ্যে প্লিজ ঝগড়া করবেন না!
অরুণজিৎ বাবু এতগুলো রাত আমরা জেগেছি আরও না হয় কিছুদিন চেষ্টা করলাম, শুভজিৎ তোমার কাজ কতদূর এগোলো?

শুভজিৎ:
রাইট! মিস্টার রায়ের নতুন ফোন ক্লিন আই মিন ট্যাপড নেই, বাকি তোমাদের সব ফোন ক্লিন! আমার ফোনও ক্লিন!
তবে ওরা মানে রজনী রয় ও টিম সবটা বুঝতে পারছে কোনো ভাবে!
কিন্তু কি ভাবে?
তা আমি বুঝতে পারছিনা….

স্বর্ণালী :
বা ওরা কিছু বুঝতে পারছেনা! ওরা কিছু প্রেডিক্ট করছে! মানে ভেবে দেখো তোমরা প্রথমে অরুণজিৎ বাবুর ঘরে তালা দিলে,
, তারপর যখন ওরা ঠিক করলো অফিসে ক্যাবিনে স্প্রে করবে, তখন রোটেশনাল সিটিং প্ল্যান! মানে ওদের আগেই আমরা চলছি এটা কিন্তু ওরা বুঝতে পারছে!

শুভ্র: আই থিঙ্ক ইউ আর করেক্ট!

রিয়া: শুভজিৎ তুমি রজনী রায়ের ফোন ট্যাপ করতে পারলে?

শুভজিৎ: না! ওনার ফোনটা হাইলি Secured! তবে…..

অন্বেষা: তবে কি শুভজিৎ?

শুভজিৎ: মনে হচ্ছে দীপক বাবুর ফোনটা ট্যাপ করতে পারবো আজকে রাতের মধ্যেই!
ফিজিক্যালি ফোন টাচ না করে Spyware
রিমোটলি ইন্স্টল্ করা একটু চাপের তবে মনে হচ্ছে হবে, কারণ এখনো অবধি সিস্টেম ফেল করে নি, Spyware টা ইন্স্টল্ হচ্ছে এখন রিমোটলি!
সব ঠিক থাকলে কাল থেকে হওয়া সব কথা রেকর্ডেড হবে আমার কাছে, রেকর্ডিং হাতে পেলে তৎক্ষণাৎ আমি সেন্ড করবো গ্রুপ ইনবক্সে!

রিয়া : গ্রেট!

স্বর্ণালী : এটাই বোধহয় শেষ চেষ্টা!

গ্রূপ চ্যাট শেষ করে ওরা সবাই যখন উঠলো তখন ঘড়িতে ১২:৪০!
তবে এখন নিস্তার নেই কারোর!
শুভজিৎ ব্যস্ত থাকবে নিজের কাজে,
অন্বেষা ও রিয়া বসবে অফিস CCTV
ফুটেজ নিয়ে!
স্বর্ণালী ও শুভ্র বসবে ঘরের CCTV
ফুটেজ নিয়ে!
এবং মিস্টার রায় অফিসের না হওয়া কাজ গুলো শেষ করবে রাত জেগে!

******************************************************

রাত ২:১৫!
হঠাৎ গ্রূপ চ্যাটে ফোন ঢুকলো অন্বেষার!
এতো রাতে আবার কি হলো!

রিয়া ও অন্বেষা বসে পড়লো ফোনের সামনে, মুহূর্তেই সবুজ বোতাম slide
করে রিসিভ করলো ভিডিও রিকোয়েস্ট!

এতো রাতেও ওরা কেউ ঘুমোয়নি, মুহূর্তেই সবাই কে দেখা গেলো স্ক্রিনে আবার!

শুভজিৎ: Guys! সরি! এতো রাতে কল করার জন্যে তবে খুব আর্জেন্ট ছিল একটা কথা জানানোর!

স্বর্ণালী ও অন্বেষা : নো প্রব্লেম বলো!

শুভজিৎ: আমি ট্যাপ করে ফেলেছি দীপক বাবুর ফোন,
মিস্টার অরুণজিৎ রায়, ইউ শুড থ্যাংক দেম ……..
এটা সত্যি একটা ষড়যন্ত্র! বিশাল রকমের!

শুভ্র : তুমি সবটা বলো!

শুভজিৎ: ফোনটা ট্যাপ করতেই, আমি দেখলাম ওনার নম্বরে একটা কল এলো, তাও এতো রাতে!
অভয় নামে কেউ ওনাকে কল করেছিল, রেকর্ডিংটা শোনো –
মুহূর্তেই শুভজিৎ ল্যাপটপ থেকে ফুল ভলিউমে চালিয়ে দিলো রেকর্ডিং!

“হ্যাঁ অভয়! বলো! এতো রাতে?
উউফ! অভয় ……….
অভয়……সিরিয়াসলি তুমি এবারে আমাকে পাগল করে দেবে,
তোমাকে আমার একদম বলা ঠিক হয়নি যে তোমার অরুণজিৎ স্যারের ক্যাবিনে লাগানো হিডেন ক্যামটা আমি দেখে ফেলেছি!
তুমি এতো প্যানিক করছো কি বলবো!
এতো টেনশন কেন করছো?
আরে বাবা কেউ কিচ্ছু বুঝবে না, আর কি ভাবে বুঝবে?
তুমি তো ওই কেমিক্যাল টা স্প্রে করোনি রে বাবা!
তুমি ভুলে যাচ্ছো অভয় তুমি মিস্টার দীপক ভাদুড়ির সাথে কাজ করছো,

অরুণজিৎ রায়ের রোটেশনাল সিটিং দেখেই আমি ম্যাডাম কে বললাম কিছুতো ওরা বুঝেছে, তাইতো, তাইতো ম্যাডাম ও ফোনে এসব কথা বলা বন্ধ করে দিলেন!

তারপর সেদিন অরুণজিৎ এর ক্যাবিনে নতুন আনা চারা গাছটার
দিকে বারবার ওনার
চেয়ে থাকা দেখেই বুঝেছি কিছুতো একটা গড়বড় আছে!

আর তাইতো আমি তোমাকে দিন পাঁচেক থেমে যেতে বললাম,
স্প্রে টা করতে বারণ করে দিলাম তোমায়……
এখন যেটা আমরা করছি ওদের পক্ষে সেটা কোনোদিনও বোঝা সম্ভব নয়, কারণ ফুটেজে ওরা সন্দেহ জনক কিছুই পাবেনা!
ইন ফ্যাক্ট সন্দেহজনক কোনো কাজই তুমি করোনি!
অভয়……
জাস্ট স্টপ টেলিং ননসেন্স………
এতো রাত্রে আমায় ফোন করে মূর্খের মতন কথা বলোনা…..
ওরা খামোখা কেন ফিঙ্গার স্পঞ্জ ড্যাম্পার টা টেস্ট করাতে যাবে বলতে পারো?
হ্যাঁ সিসিটিভি তে কি ধরা পড়বে বলো?
ওরা দেখবে যে তুমি ফিঙ্গার স্পঞ্জ ড্যাম্পার টা চেঞ্জ করেছো, তাতে কি!
তুমিতো মিস্টার রায়কে নিজেই বলেছো আগেরটা পুরোনো হয়ে গিয়েছিলো, তাই তুমি অফিস স্টোর থেকে একটা এনে রেখেছো ও ঘরে!

ওদের মাথাতেই আসবে না এটা, যে নতুন
ফিঙ্গার স্পঞ্জ ড্যাম্পার টাতে আমরা মিশিয়েছি ওই কেমিক্যাল!

আবার তুমি মূর্খের মতন কথা বলছো!
মূর্খের মতন কথা বলছো তুমি…..

বাকি ডিপার্টমেন্টের লোকেদের সাথে বসলেও তারাতো নিজেদের কাজ করছে, তাদের কাজটা ওতো ফাইল পত্তর নিয়েও নয়!
ফিঙ্গার স্পঞ্জ ড্যাম্পার কারা ইউজ করে বলো ?
রাইট যারা ব্যাংকে টাকা কাউন্ট করে, বা যাদের অনেক ফাইলপত্তর ওল্টাতে হয়,

মিস্টার রায়ের কাজটা ফাইল ক্রস চেক করা!
ফাইলের পাতা ওল্টানোর জন্যে বারবার ওই স্পঞ্জ ইউজ করবেন উনি, ওনার আঙুলেই ভেজা কেমিক্যাল লেগে থাকবে সারাদিন ধরে, সেটা খানিকটা মাত্রায় আসতে আসতে ইনহেল ও করবেন উনি!
ভেজা আঙ্গুল থেকে ও সামনে রাখা ভেজা স্পঞ্জটা থেকে!

হ্যাঁ হয়তো ফাইলের পাতায় লাগবে একটু আধটু, একটু হয়তো ভ্যাপসা গন্ধও ছাড়বে ওই ফিঙ্গার স্পঞ্জ ড্যাম্পার! তবে তাতে কেউ কিচ্ছু টের পাবেনা…..
বাকিরা তো খানিকটা দূরে বসে!

উফফফফ! অভয়! আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিওনা তুমি!

কেমিক্যাল অন্য কারোর হাতে লাগার কথা নয় কারণ শুখনো পেপার শুষে নেবে ওই কেমিক্যাল!
তাই পরে সেই ফাইল অন্যরা উল্টোলেও শুখনো কেমিক্যাল থেকে কোনো অসুবিধে বাকিদের হওয়ার কথা নয়!

আর বাকিরা ফিঙ্গার স্পঞ্জ ড্যাম্পার যদি
ইউজ করে তো করুক!
মরলে মরুক! তোমার বাবার কি?
তুমি তোমার বৌয়ের সাথে মালডিভস বেরিয়ে এসো এই ডিসেম্বরে!
রাখো এখন ফোনটা….নন সেন্স……”

শুভজিৎ রেকর্ডিং বন্ধ করে বলে উঠলো –
“শুনলে তো সবটাই! কাল ডাইরেক্ট পুলিশ কে ফোন করো! ওই ফিঙ্গার ড্যাম্পার কোথায় আছে অরুণজিৎ বাবু”

মিস্টার রায়(অরুণজিৎ) : অফিসেই! বাড়িতে আনিনি আমি!
কথাটা বলতে বলতে গলাটা বুজে এলো মিস্টার রায়ের…..

স্বর্ণালী: কাল তাহলে অরুণজিৎ বাবু আপনি অফিস যাবেননা! আমরা পুলিশ নিয়ে পৌঁছবো ওই স্পঞ্জ ড্যাবারে রাখা কেমিক্যাল টেস্ট করানোর জন্যে!

শুভজিৎ: Guys! আগে যেটা বলেছিলাম এরকম Unethical হ্যাকিং সাপোর্টিং এভিডেন্স নয় কিন্তু, ধরা পড়লে আমার জেল ও হতে পারে, কাজেই এই রেকর্ডিং টা না ইউজ করে যদি কাজটা তোমরা বের করতে পারো তবে খুব ভালো হয়!

অন্বেষা: ডোন্ট ওয়ারী শুভজিৎ! আমি বলবো যে ক্যাফেটেরিয়া তে আমি ওভারহিয়ার করেছি কনভার্সেশন টা, ঘরের CCTV ফুটেজে তো দেখাই যাচ্ছে অভয় চেঞ্জ করেছে ফিঙ্গার ড্যাম্পার আর সেখানেই ওই বিষাক্ত কেমিক্যাল!
তাই অসুবিধে হওয়া উচিত নয়, এদিকে রজনী রায়ের ওই ভিডিও টাও পুলিশ কে দেখিয়ে বলবো ওনার ব্যাংক ট্রান্সাকশন চেক করতে! আমরা বলবোনা মেলবক্স খুলে আমরা আগেই দেখেছি পুরো ব্যাপারটা! তাছাড়া অভয় বাবু যা লেস কনফিডেন্ট লোক, তুলে নিয়ে গিয়ে ঘা কতক দিলেই এমনি সব কিছু গড়গড় করে উগলে দেবেন উনি! বাকি ইনভেস্টিগেশন না হয় পুলিশ করুক!

****************************************************

পরের দিনই অভয় কে তুলে নিয়ে গিয়ে সেকেন্ড ডিগ্রি শুরু করতেই, সবটা বলে দিলো সে!
আরও দিন দুয়েকের মধ্যেই Arrest হলো শঙ্খ, রজনী রায়, দীপক ভাদুড়ী!

কেসটা কোর্টে উঠতেই ওরা যে ভয়টা পেয়েছিলো সেটাই হলো!

শুভ্রর নামটাও উঠে এলো সেদিন!
অরুণজিৎ রায় যেটা কোনোদিনও চাইনি সেটাই হলো তখন!
পুরো সত্যিটা গোপন করার জন্যে শুভ্রর এগেইনস্ট এ কেস শুরু করলো ডিফেন্স lawyer …..

বারবার উঠে এলো একই প্রশ্ন! কেন শুভ্রর নামে পারচেজ করা হয়েছে ওই বিষাক্ত কেমিক্যাল! কেন ও গত চার বছর পুলিশের কাছে আসেনি সবটা জেনেও!

নিজে সে অপরাধ না করলেও দীর্ঘ চার বছর সে শুধু অপরাধটা হতে দেয়নি,
তবে অন্যায় টার প্রতিবাদও সে করেনি এর আগে কেন?

শুভ্রর Lawyer ও তখন জোর প্রতিবাদ করে চলেছে যে শুভ্রই অন্বেষার মাধ্যমে বাঁচিয়েছেন মিস্টার রায় কে,
বদলে দিয়েছেন ওই বিষাক্ত কেমিক্যাল বারবার!
তার ওপরেও হয়েছে অনেক টর্চার, সে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো!

অনেক ঝোক্ষিঝামেলা পুহিয়ে টাকা পয়সা
দিয়ে ম্যানেজ করে দীর্ঘ চার মাস পর শুভ্রর এগেইনস্ট এ সব কেস ক্লোস্ড হলো!

এই চারমাসে আরও একটা সত্যি ওদের সামনে এলো –
বিগ মিস্টার রায় – অর্ঘনীল বাবু মারা যাওয়ার সপ্তাহ খানেক আগে রুদ্রনীল বাবু কোনোভাবে আঁচ করতে
পেরেছিলেন তার স্ত্রী রজনী দেবীই মেরে ফেলেছেন তার ভাই কে!
তবে কি ভাবে কি হয়েছে উনি জানতেন না কিছুই!
সেই সত্যটা উনি বলেন অর্ঘনীল বাবু কে! রাতারাতি অর্ঘনীল বাবু কিছুদিনের মধ্যেই কোর্ট পেপার বানিয়ে পাওয়ার অফ এটর্নি করেন সুবর্ণা দেবী কে ও রজনী দেবীকে ব্ল্যাকলিস্ট করেন!
তারপর দিন দুয়েকের মধ্যেই উনি মারা যান!
রুদ্রনীল বাবু এই সত্যিটা মেনে নিতে পারেন না! রায় ম্যানশন ছেড়ে, নিজের পরিবার ছেড়ে থাকতে শুরু করেন শহরের বাইরে দূরে!

একমাত্র শুভ্রর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল ওনার, আর তাছাড়া মাঝেমাঝেই হুটহাট করে অফিসে দেখা করতেন উনি মিস্টার(অরুণজিৎ) রায়ের সাথে….

শুভ্র Arrest হওয়ার পর থেকেই উনি ভেঙে পড়েছিলেন খুব,

এদিকে তার স্ত্রী ও ছোট ছেলের বিরুদ্ধে ভারী কেস চলছিল, তারা কাঠগড়ার ওপারে ছিল!
তবে তাদের জন্যে ওনার সেরকম কষ্ট হচ্ছিলোনা……
দোষী কে শাস্তি তো পেতেই হবে!
শঙ্খ বয়েসে অনেকটাই ছোট,
সে ১৯….. হয়তো ১০-১২ টা বছর জেলে কাটালে একটু শুধরে যাবে সে! ড্রাগ, মদের নেশাটাও কেটে যাবে হয়তো, একটা নতুন জীবন ফিরে পাবে সে,
রজনী দেবীর জন্যে এতদিনে আর কোনো
জায়গা ছিলোনা তার মনে,
হিংসায়, ঘৃনায়, যে রজনী দেবী অনেক নীচে নেমে গিয়েছে, এই সব মানুষের ক্ষমা হয়না!

তবে থেকে থেকে মাঝেমাঝে নিজেকেও দোষী মনে হয় তার, হয়তো একটু খানি ভালোবাসা, বদলে দিতে পারতো রজনী দেবীর মনে জমে থাকা ঘৃণা, ব্যাথা টাকে!

হয়তো তাদের পরিবারটাও একটা সুখী পরিবার হতে পারতো!
সেও তো সেরকম ভালোবাসা দিতে পারেনি মানুষটাকে কখনো!

শুভ্র Arrest হওয়ার পর সে ভীষণ ভাবে ভেঙে পরে! শুভ্র যে বড়োই কাছের ছিল তার!
সেইসময় খানিক জোর করেই তার অরুণ(মিস্টার রায়) তাকে নিয়ে আসে রয় ম্যানশনে!
ও বাড়িতেই থাকতে শুরু করে রুদ্রনীল বাবু
আবার!
হ্যাঁ তার চেনা রয় ম্যানশনে!
সম্পর্কের বাঁধন টা আসতে আসতে শক্ত হতে শুরু করে তার অরুণের(অরুণজিৎ রায়) সাথে! রিরির সাথে!

গত সপ্তাহে শুভ্রর কেসটা পুরোপুরি বন্ধ হলে ওরা সবাই এক হয়ে যায় আবার!
রুদ্রনীল বাবু একেবারে ফিরে আসেন রয় ম্যানশনে!
মিস্টার রায়ও আর ঘুপটি ঘরে থাকেন না এখন!
উনি শুভ্রর ঘরেই থাকেন শুভ্রর সাথে!
গত তিন চার মাসে শুভ্রর সাথে তার দাদাভাইয়ের একটা গভীর বন্ধুক্ত তৈরি হয়েছে…..
শুভ্রর বেল পাওয়া থেকে, শুভ্রর কেস, Lawyer, সেটেলমেন্ট সব কিছু নিজে হাতে সামলেছিলেন মিস্টার রায়!

রয় ম্যানশনে আবার ঘরের সমস্ত সদস্য
একই ডাইনিং টেবিলে বসে রাতের খাবার খাওয়া শুরু করেছে দীর্ঘ পনেরো বছর পর! আবার বাড়িতে ফিরে আসে খুশি!

***************************************************

আরও দিন পাঁচেক পরের ঘটনা, দিনটা শনিবার…….

গত তিন চার মাসে কম্পানির অনেকটাই কাজ বাকি পরে গিয়েছে কোর্ট, থানা পুলিশ করে!

একদিকে শুভ্র কে পুরো ব্যাপারটা থেকে বের করে আনা, অন্যদিকে রজনী রায় ও শঙ্খর কেস – সেই কেসটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে মাস দুয়েক হলো….
যাবৎ জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত দোষীরা!

রজনী রায় নিজেই সব দোষ শিকার করে নেওয়াতে তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে গেলো কেস!
ওতো বিষাক্ত একটা মানুষ যে lawyer
দিয়ে কেসটা শুরু হওয়ার আগেই সব শিকার করে নেবেন কেউ ভাবতেই পারেনি এটা!

সব কিছু মিলিয়ে থানা, পুলিশ, অফিস করে কিছুতেই সব সামলে উঠতে পারছিলোনা মিস্টার রায়!
এদিকে রিরির বোর্ড এক্সাম শেষ হয়ে গিয়েছে দুসপ্তাহ আগে!
এই ঝড়ের মধ্যেই জীবনের প্রথম পরীক্ষা দিলো মেয়েটা!
সত্যি অন্বেষা যেভাবে রিরি কে মেন্টাল সাপোর্ট করেছে, দিনের পর দিন বাড়ি এসে রিরিকে যেভাবে সব সাবজেক্ট পড়িয়েছে, রিরির পাশে দাঁড়িয়েছে অন্য কেউ থাকলে মিস্টার রায় এতটা নিশ্চিন্তে থাকতে পারতেন না!
অন্বেষা রিরির পাশে ছিল বলেই, রিরি কনফিডেন্টলি বলছে ৯০ শতাংশ সে পাবেই!
শুধু কি তাই? রিরির পরীক্ষা শেষ হয়েছে জেনেও অন্বেষা এখনও সপ্তাহে রবিবার করে আসে,
ক্লাস ইলেভেন যে ভীষণ ভাস্ট! তাই কেমিস্ট্রি ও ফিজিক্স দুটোই শুরু করে দিয়েছে সে একসাথে!

মিস্টার রায় এদিকে এক ফোটাও সময় বের করে রিরির জন্যে অন্য বিষয়ের টিচার খুঁজেতে শুরু করেননি এখনো,
যদিও দুসপ্তাহে আগেই পরীক্ষা শেষ হয়েছে মেয়েটার, রেসাল্ট বেরোতেও দেরি আছে অনেক, তবে এই কম্পিটিশনের মার্কেটে সবাই পরীক্ষার পরের দিনিই ভর্তি হয়ে যায় নতুন ক্লাসের টিউশন ব্যাচে……

সব মিলিয়ে অনেক কাজ বাকি মিস্টার রায়ের!

তবে অফিসের খানিকটা কাজ না এগিয়ে রাখলে অনেকটাই ক্ষতি হচ্ছে কম্পানির,
সমস্ত Approval এর ফাইল পরে মাস খানিকেরও বেশি!

আজ শনিবার, অফিস বন্ধ, তবু বন্ধ নেই মিস্টার রায়ের কাজ!
টেবিল ভর্তি ফাইল পরে মিস্টার রায়ের সামনে,
একটা একটা করে ফাইল তুলে সব হিসেবে নিকেশ নিয়ে বসেছে সে ল্যাপটপ খুলে সকাল থেকে!

“দাদাভাই আমি একটু বেরোচ্ছি রে!”
শুভ্রর কথায় ফাইল থেকে চোখ সরালো মিস্টার রায়………

“এখন ভর দুপুরে কোথায় বেরোচ্ছিস? ইউনিভার্সিটি নাকি?”

“না রে দাদাভাই…..তোকে মিথ্যে বলবোনা আজ……স্বর্ণালীর সাথে বেরোচ্ছি একটু, একটা মুভি দেখে, লাঞ্চ সেরে রাতে ফিরবো একেবারে, হারাধন দা কে বলে দিয়েছি…..
চল! আমি বেরোই রে! স্বর্ণালী ওয়েট করছে……
….রাতে কথা হবে……..টাটা…..
আর দাদাভাই আর একটা কথা ছিল তোর সাথে…..রাতে এসে বলছি সব…..”

“ওকে…চল বাই…..”

******************************************************

রাতে যখন শুভ্র বাড়ি ঢুকলো, বাকিদের মুখে শুনলো দুপুরের পর থেকেই ঘর লাগিয়ে শুয়ে তার দাদাভাই………
কিচ্ছু খায়নি সে দুপুর থেকে……..
বারবার ডাকতে গেলে বলেছে শরীর ঠিক নেই তার!
রুদ্রনীল বাবু ডাক্তারের কথা বললেই বলেছে সে ঠিক আছে, একদিন বিশ্রাম নিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে…..

শুভ্র সবটা শুনে ওপরের সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই দেখলো অন্বেষা পড়াচ্ছে রিরি কে……

একটু অদ্ভুত লাগলো শুভ্রর!
আজ তো শনিবার, রবিবার নয়, আজ হঠাৎ অন্বেষা এলো যে!

রিরির ঘরের দিকে এগিয়ে গিয়ে অন্বেষার দিকে চেয়ে শুভ্র বললো –
“অন্বেষা আজকে হঠাৎ?”

অন্বেষা বইয়ের পাতা থেকে চোখ না সরিয়েই বললো –
“রিরি ডাকলো তাই…..
পরে কথা হবে আপনার সাথে……”

অন্বেষার কথা বলার সুরটা আজ একটু অন্যরকম লাগলো শুভ্রর….
এদিকে তার দাদাভাইও শুয়ে ঘর লাগিয়ে!
কিছু একটা তো নিশ্চই ঘটেছে….

একটু এগিয়ে গিয়ে দাদাভাই বলে ঘরে একটা টোকা দিতেই মিস্টার রায় দরজা খুলে আবার খাটে গিয়ে শুয়ে পড়লেন, খাটে পরে খোলা ল্যাপটপ, চার পাঁচটা ফাইল!

“কি হয়েছে তোর?”

“শুভ্র! দরজাটা লাগিয়ে দিবি প্লিজ!”
ভাঙা ভেজা গলায় উত্তর দিলো মিস্টার রায়!

শুভ্র দরজাটা লাগিয়ে লাইট টা জ্বেলে দিতেই দেখলো মিস্টার রায়ের ভেজা চোখ…..

“দাদাভাই কি হয়েছে? তুই কাঁদছিস? দাদা ভাই ……”

“সব শেষ হয়ে গেলো…..বোধহয়….আমি আজকে তুই বেড়োনোর পর বারবার কল করছিলাম……অন্বেষা কে!
আমি বললাম একটু বেড়োবো….তো বলে সময় নেই একটুও…..
বললাম একটু কথা বলো…কথা বলছেনা ঠিক করে, ইনফ্যাক্ট গত রবিবার থেকেই আর রাতে ফোন করছেনা……
মানে এমনিও রাতে দু-একটাই কথা বলতো, এমনি খোঁজখবর নিতো, ওই ফোন করতো রোজ!
তো ফোন করছিলোনা…..
ও ফোন করছিলোনা দেখে আমি ফোন করতাম রোজ, রোজ বলে ব্যস্ত, ব্যস্ত…..
আজকে ও পরিষ্কার করে
বলে দিলো জানিস
ও থাকতে চায়না আমার সাথে……”

“রিলাক্স! এরকম কিছু হয়নি ওকে?
আমি পরিষ্কার দেখলাম ও নিজেও একটু ডাউন আছে, খেপে আছে তোর ওপরে!
ওরকম ব্রেকাপ আমাদের রোজ হয়, কিছু একটা গন্ডগোল পাকিয়েছিস তুই! ভালো করে ভেবে বল কি করেছিস?”

“কিছু করিনি আমি! আগের রবিবার সব ঠিক ছিল, মানে আমার সাথেই গাড়ি করে ফিরলো, তারপর হঠাৎ কি হলো….
আজ জানিস মনটা খুব ছটফট করছিলো, তাই রিরি কে বললাম একবার ডাকতে….
দেখ রিরি ডাকলো আর চলে এলো…..
আমাকে বললো খুব ব্যস্ত!
আমি গিয়েছিলাম ও ঘরে…..বলছে ডিস্টার্ব করবেন না, এখন আপনি যান….
অনেকদিন আপনি আপনি করেনা জানিস!কি হলো শুভ্র….হঠাৎ কি হলো?”

“আয় আমার সাথে…চল…..”

“না না…শুভ্র ……আমার কথাটা শোন্……প্লিজ শুভ্র……”

মিস্টার রায়ের কথাটা শেষ হতেনা হতেই ওরা গিয়ে দাঁড়ালো অন্বেষার সামনে…..

“রিরি আমাদের ঘরে গিয়ে বস একটু….”
শুভ্র মৃদু স্বরে কথাটা শেষ করলো….

অন্বেষা মুহূর্তেই উঠে দাঁড়ালো চেয়ার থেকে, তারপর আসছি বলে বেরিয়ে যেতেই যাচ্ছিলো কি মিস্টার রায় আবার হাতটা ধরে টেনে নিলো অন্বেষা কে নিজের কাছে….

“মিস্টার রায় ছাড়ুন….আমার লাগছে ভীষণ……মিস্টার রায়….ছাড়ুন……
আমি বলছি তো ছাড়ুন…..”
চিৎকার করে কথাটা শেষ করলো অন্বেষা, মিস্টার রায় হাতটা ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো অন্বেষার সামনে…….

অন্বেষা কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো মিস্টার রায়ের দিকে চেয়ে তারপর হনহন করে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেলো নীচে…..
তারপর এগিয়ে চললো সদর দরজার দিকে…..
“অন্বেশা দাঁড়া…..অন্বেষা একটু দাঁড়া…”

রুদ্রনীল রায়ের মৃদু ডাকে থমকে দাঁড়ালো অন্বেষা…..কাঁদোকাঁদো গলায় বলে চললো –

“জেঠু প্লিজ, তুমি আমাকে দাঁড়াতে বলোনা……আজ ইচ্ছে করছেনা একদম!”

“একটু বস এখানে! একটু বস…..বড়দের কথা শুনতে হয় কিন্তু……”

অন্বেষা মাথা নীচু করে এগিয়ে গেলো সোফার দিকে……
বসে পড়লো সোফায়….

“বল এবারে কি হয়েছে…..
দেখ অরুণ মুখে কিছু না বললেও আমি বুঝেছি তোদের ঝামেলা হয়েছে……নিচে বসেও আমি সব শুনেছি……
অনেকদিন পর সবটা ঠিক হয়েছে অন্বেষা……
অনেকদিন পর ওর মুখে একটু হাসি দেখেছি আমি……
এখন তুই যদি ……ওরম ঝামেলা করিস…..
আজকে সারাদিন না খেয়ে আছে….”

“আমি ঝামেলা করিনি ওকে? সব দোষ আমার নয়! তোমার অরুণেরও কম দোষ নেই……ঠিক আছে….”
ভাঙা ভাঙা আদুরে গলায় বলে চললো অন্বেষা…….

শুভ্র ও মিস্টার রায় দুজনেই সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে দাঁড়ালো সোফার সামনে…..
মিস্টার রায় নিঃস্পলকে তাকিয়ে রইলো অন্বেষার দিকে……

খুব নীচু গলায় বললো –
“আমি জানি আমি একদম সময় দিতে পারছিনা তোমায়…..
আসলে অন্বেষা……..
আমি কি করবো বলো…
অফিস….বাড়ি…কোর্ট…..শেষ তিন চার মাস খুব চাপের গিয়েছে গো! আমি সবটা বুঝি…..”

“তুমি কিচ্ছু জানোনা মিস্টার রায়! তুমি কিচ্ছু জানোনা…..
আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছনা এটা সমস্যা নয়!
আমি জানি তুমি ব্যস্ত,
কম্পানি নিয়ে….নিজেকে নিয়ে, পরিবার নিয়ে…..
অনেক কাজ জমে গিয়েছে তোমার শেষ চার মাসে…..
এখন ফ্যামিলি কেও একটু আধটু সময় দাও তুমি……তাতে আমার একটুও খারাপ লাগেনা মিস্টার রায়! কেন জানো?
আমার কাছে ভালোবাসার মানে দুজন হাতে হাত রেখে রূপকথার সাগরে ডুব দেওয়া নয়!
আমার কাছে ভালোবাসা মানে জীবনের সব চেয়ে ক্রাইসিসের সময়ে পাশে থাকা!
রোদে, ঝরে, বৃষ্টিতে, শীতে, ভালোতে, খারাপ, পাওয়াতে, না পাওয়াতে দুজন দুজনের পাশে থাকা!
আমি তো শুধু তোমার সাথে অফিসের শেষে ও রবিবারে রিরি কে পরিয়ে, এক গাড়িতে ফেরার মুহূর্ত টার জন্যে অপেক্ষা করি!
ওইটুকু সময়ের মধ্যেই নিজের সব সুখটুকু খুঁজে নিয়েছি, কখনো মুখ ফুটে বলেনি আমার সময় চায়….
বলিনি আমার কষ্ট হয়,
বলিনি আমি মিস করি তোমাকে……
কোনোদিনও একটা দিনের জন্যেও ভাবিনি কেন আমিই রোজ রাতে তোমায় ফোন করবো…..
নিজেই ফোন করেছি রোজ, কোন গার্ল ফ্রেন্ড এমন করে মিস্টার রায়….”

“অন্বেষা আমি জানি…”

“প্লিজ! আমি শেষ করিনি এখনো…..
কিছু বলবেনা তুমি!
আমি তোমাকে বলিনি…যে…. রোজ আমার বাবা আমাকে বিয়ের কথাটা বলে…..
সেই পুজোর সময় থেকে …..পুজোর সময় থেকে আমি বাবাকে সবটা বলেছি…..সবটা …..আমাদের ব্যাপারটা…..
অনেক …….অনেক কষ্টে আমি রাজি করিয়েছি….
ঋতেশ রাজি করিয়েছে বাবাকে…..রিয়া দি রাজি করিয়েছে…….
তবু আমি একবারও বলিনি তোমাকে যে বাবা তোমার সাথে কথা বলতে চায়……
কারণ আমি জানি পরিস্থিতি ঠিক নেই……
তুমি ঠিক নেই…..
শুভ্রর ঝামেলাটা মিটলে বলবো সব….
তারপর ভাবলাম…..খুব চাপে আছো…
থাকে এক সপ্তাহে বাদে বলবো….
ভেবেছিলাম এই সপ্তাহে তোমায় বলবো সবটা…..
কিন্তু তুমি কি করলে……”

বিস্মিত মুখে দাঁড়িয়ে রইলো মিস্টার রায়
কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলোনা সে এমন কি করেছে……
হাই মেমেরি স্ট্রেংথ এই সময় ফিকে পরে আসছিলো…..
একবার মনে হলো সে বোধহয় বাকি দেড় মতন নরমাল হয়ে যাচ্ছে…..
কিন্তু এখন এসব ভাবার সময় নয়, কিছুক্ষণ ফেকাসে মুখে দাঁড়িয়ে রইলো চুপচাপ আর তারপর জিজ্ঞেস করলো

“কি করলাম আমি অন্বেষা?”

অন্বেষা উঠে দাঁড়ালো সোফা থেকে…..
ভেজা দুটো চোখের ওপর আলতো হাত বুলিয়ে, মৃদু স্বরে বললো –

“মনে করো! ঠিকঠাক ব্যাপারটা মনে করতে পারলে তবেই আমি কথা বলবো……”

“অন্বেষা প্লিজ! প্লিজ যেওনা প্লিজ…..
আমি হাত জোর করছি….প্লিজ….
আমি না জেনেই সরি বলছি……প্লিজ…..
আর কখনো হবেনা….প্লিজ….”

“তুমি আগের দিন আমাকে কি বললে”
একটু এগিয়ে গিয়ে মিস্টার রায়ের মুখোমুখি দাঁড়ালো অন্বেষা……

“কবে?”

“রবিবার, আমাকে গাড়ি থেকে ড্রপ করার আগে…..সবার সামনে বলো কি বললে?”

“কি বললাম….বললাম তুমি খুব আন্ডারস্ট্যান্ডিং…..তুমি না থাকলে….আমি ……এগুলো তো ভালো কথা…..”

“তারপর কি বললে?”

“কি বললাম….তারপর বললাম রিরির জন্যে তুমি যা করেছো…..
এক সেকেন্ড …..তুমি চেকের কথাটা বলছো?”

অন্বেষার চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো এবার….ভেজা গলায় বলে চললো সে –

“আমি দিনের পর দিন এসেছি এখানে……রিরিকে আগলে রেখেছি…..পড়িয়েছি…..ওকে মেন্টালি সাপোর্ট করেছি…..তখন ওর এক্সামের এক সপ্তাহ বাকি…..তুমি কোর্ট, কেস, অফিস নিয়ে ব্যস্ত….
এমনকি হারাধন জেঠুর শরীর ঠিক ছিলোনা বলে আমি রান্নাও করেছি তোমাদের কিচেনে……নিজের বাড়িতে কখনো গ্যাস জ্বালায় নি আমি!
এতো কিছুর পর তুমি আমাকে চেক দিয়ে বললে –
অন্বেষা প্লিজ আমি কারোর ফেভার নি না!

বলেই গত পাঁচ মাসের টিউশন ফিস টার জন্যে একটা চেক দিলে……
আমি তোমাদের মতন বড়োলোক নই, তবে আমার একটা আত্মসম্মান আছে মিস্টার রায়….”

“অন্বেষা কিসব বলছো তুমি…..
আমি তো এমনিই বললাম…….
তুমি এতো কষ্ট করেছো তাই বললাম ফিসটা তুমি…”

“ফিস!
আমি তোমাদের কম্পানির কেমিক্যাল এনালিস্ট, স্যালারি পাই আমি, আর তাতে আমাদের মতন মধ্যবিত্ত্ব ফ্যামিলি তে না খুব ভালো ভাবেই চলে যায়….
সব সময় সব কিছুর হিসেব টাকা দিয়ে করবেনা তুমি! ওকে?
আর সবাই আর আমি এক?
আমি ফেভার করেছি…..”

“আচ্ছা সরি….সরি….মন থেকে…
কিন্তু….আমি সেরকম ভেবে কিছু…..”

“নাহ না…তুমি বলো…..বলো….তুমি…..বলো….
ফেভার করেছি আমি? আর সেই ফেভার তুমি টাকা দিয়ে শোধ করতে চাও….”

“না অন্বেষা! সেরকম …..”

“সেইরকমই ব্যাপার…..
আমি যা করেছি ভালোবেসে করেছি….
ফেভার করিনি…..
একফোঁটা সময় দাও না….
সারাটাদিন ব্যস্ত!
আমার জন্মদিন চলে গিয়েছে দুমাস আগে, তোমার মনেও ছিলোনা….
আমি বলিওনি….কাউকে বলেনি….
কি বলতাম তোমায়…..আমি জানি পরিস্থিতি ছিলোনা সেসময়…..
তাই বলিনি….
তবে খুব কষ্ট হয়েছিল মিস্টার রায়!
মনে হয়েছিল একবার….শুধু একবার তুমি বলবে – হ্যাপি বার্থডে…..

রোজ রোজ আমি ফোন করি…..একটা ফোন করোনা তুমি রাতের বেলায়……..
বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে যাও, ব্যাস সব দায়িত্ব শেষ!
Valentine’s day
গেলো! তাও বলিনি….
কিচ্ছু বলিনা বলে আমার কি কষ্ট হয়না….

হয়! খুব কষ্ট হয়!
তবে আমি নিজেকে বোঝায় তুমি কেয়ার করো আমার,
আমাকে একবার দেখতে আসো লাঞ্চ টাইমে, রাতে গাড়িতে বাড়ি পৌঁছে দাও, লাঞ্চ করেছি কি না জিজ্ঞেস করো,
আমার জন্যে সেটাই ভালোবাসা!

তাই বলে চেক! ফিস! ফেভার!
আমাকে টাকা দিচ্ছ তুমি? তাহলে একদিন রান্না করেছি সেই টাকাও দাও……
তোমার জন্যে রাত জেগে CCTV ফুটেজ চেক করতাম আসল অপরাধী কে ধরার জন্যে, সেটার জন্যেও দাও…..
সেটাও তো ফেভার ছিল তাইনা….
করো হিসেব সেগুলোর…”
বলেই অন্বেষা কাঁদতে শুরু করলো…
সবার সামনেই….

মিস্টার রায় নিজের হাতদুটো দিয়ে ভেজা গালটা মুছে দিলো অন্বেষার….
হাতদুটো অন্বেষার কাঁধে রেখে বললো –

“আর কখনো বলবোনা…খুব ভুল হয়ে গিয়েছে…..বড়ো ভুল…..হয়ে গিয়েছে…..I’am Sorry মন থেকে……প্লিজ…..অন্বেষা এবারকার মতন প্লিজ ক্ষমা করে দাও…”

মিস্টার রায়ের কথা শেষ হতেই অন্বেষা ও মিস্টার রায় দেখলো শুভ্র ও তার বাবা খুব
অদ্ভুত মুখ করে চেয়ে আছে ওদের দিকে……
দুজনেরই মুখে একটা চাপা হাসির রেখা…

মিস্টার রায় অন্বেষার কাঁধ থেকে হাত দুটো নামিয়ে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলেন….

অন্বেষার কানদুটো কেমন লাল হয়ে উঠলো,
কোনোমতে মুখটা ওড়নায় মুছে বললো – “ইটস ওকে! চলুন আমাকে পৌঁছে দেবেন……..”
তারপর রুদ্রনীল বাবুর দিকে চেয়ে বলে উঠলো –
জেঠু আমি আসছি….অনেক রাত হয়ে গিয়েছে তো”

“হ্যাঁ ঠিক আছে! আচ্ছা
অন্বেষা ভালো কথা …..তোর …..বাবার ফোন নম্বরটা দিয়ে যা! এসব বিয়ের ব্যাপারে বোড়দের কথা বলাই ভালো….কি রে অরুণ তাইতো….”

মিস্টার রায়ের মুখে একটা স্বচ্ছ হাসির রেখা ফুটে উঠলো, একটা বড়ো দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে বললো –
“হ্যাঁ! তুমিই কথা বলো, আমি পরে বলবো…….”
তারপর হাতদুটো ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে রইলো সে অন্বেষার দিকে চেয়ে!

অন্বেষা মুহূর্তেই একটা নম্বর হোয়াটস্যাপ করে দিলো রুদ্রনীল বাবুর নম্বরে, হালকা হাসি হেসে বললো –
“আসছি…জেঠু! শুভ্র দা বাই…..”

“হমম বাই…..”

“মিস্টার রায় চলো এবারে! সত্যি দেরি হয়ে যাচ্ছে!”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here