বেখেয়ালি মনে পর্ব-১২

0
803

#বেখেয়ালি_মনে
#লেখনীতে- Ifra Chowdhury
পর্ব-১২
.
.
আজ হক বাড়িতে সৈয়দ হকের জন্য মিলাদের আয়োজন করা হয়েছে। এলাকার প্রায় সকলকেই দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকেই সবাই খুব ব্যস্ত। বিশেষ করে, সৈয়দ হকের দুই ছেলে- মোস্তফা হক আর মাহবুব হক। ইনান আর ইয়াদও ওদের বাবা ও চাচ্চুকে খুব সাহায্য করছে।

বাসার ছাদে প্যান্ডেল করে তাতে লোকজনকে খাওয়ানো হচ্ছে। ইনান সকাল থেকেই ছাদে। কিছু একটা নেওয়ার জন্য নিচে আসতেই একদম হা হয়ে যায় সে। ত্রয়ী সাদা সেলোয়ার-কামিজ পড়ে ড্রইংরুমে বসে আছে। সাদা ইনানের খুব প্রিয় রঙ। ত্রয়ীকে সাদা রঙের ড্রেসে দেখে মনে হচ্ছে সদ্য ফোটা বেলীফুল।

ত্রয়ী ড্রইংরুমে একা ছিলো। ইনান ধীর পায়ে তার দিকে এগিয়ে যায়। তাকে দেখে ত্রয়ী বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই ইনান হ্যাচকা টানে ওকে নিজের কাছে টেনে নেয়।

ত্রয়ী ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। শরীরে কাঁপুনি দিয়ে উঠে। শিরা-উপশিরায় শিহরণ দেয়। বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়। হৃদ স্পন্দনের গতি ক্রমাগত বাড়তে থাকে।
ইনানের সেই দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে স্থির নয়নে ত্রয়ীর দিকে তাকিয়ে আছে।

ত্রয়ী চারপাশে তাকিয়ে কাঁপা গলায় বলে,
-কি করছেন কী? মানুষ দেখলে কি ভাববে? ছা..

ত্রয়ীর কথাটুকু শেষ করতে না দিয়ে ইনান তার আঙ্গুল দিয়ে ত্রয়ীর ঠোঁট চেপে ধরে। তারপর ধীরে ধীরে ওর ঠোঁট দু’টো ক্রমশই ত্রয়ীর ঠোঁটের দিকে এগিয়ে নেয়। সাথে সাথেই ত্রয়ী চোখ বন্ধ করে ফেলে।

ইনান তার বাহুতে হালকা ঝাঁকুনি খেতেই হুশে ফিরে। সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে ত্রয়ী ইফতিহা আর ইয়াদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।

ইনান নিজের মাথায় নিজেই ধাক্কা দিয়ে বলে,
– এভাবে মেয়েদের নিয়ে ভাবতে নেই ইনান। একবার তাদের মায়ার জালে বাঁধা পড়লেই তুই তিলে তিলে ছারখার হয়ে যাবি।

পরক্ষণেই মনে পড়ে যায় তার অতীতের কথা। সে চোখ বন্ধ করে ফেলে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয়। এমন অন্ধকার অতীত থাকা সত্ত্বেও তুই কী করে আবার অন্য মেয়েতে আসক্ত হতে চাচ্ছিস ইনান?
নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে। কিন্তু উত্তর খুঁজে পায় না।

নিজেই নিজেকে বেদমে থাপ্পড় দিতে থাকে। মুহুর্তেই ওর হাত দু’টো কারো হাতের মধ্যে আটকা পড়ে যায়। ইনান পাশ ফিরে তাকাতেই একদম শক্ত হয়ে যায়। ঘামতে থাকে। ক্রুদ্ধ কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
-তুমি? তুমি এখানে কেন?

___________________________________________________________

অনেক্ষন যাবৎ ত্রয়ী ইনানের দেখা পাচ্ছেনা। অথচ এই মুহুর্তে ইনানের সাথে দেখা করা খুব জরুরি তার। হক বাড়িতে দাওয়াত খেতে আসা মানুষদের সাথে কিছু বখাটে ছেলেও এসেছে। বখাটেদের সংখ্যা চার জন। তাদের মধ্য থেকে একজন ত্রয়ীকে একা পেয়ে তার হাত ধরেছে। আর বাকি তিনজন নানা রকম বাজে কথা বলেছে।

তাদের কথা গুলো এমন ছিলো,
“আজকাল বাজারে যেসব মাল দেখা যায়, তারা সবই খেয়ে ছেড়ে দেওয়া মাল। ঐ মাল গুলোতে কোনো তৃপ্তি পাওয়া যায় না। অথচ, দেখ্ বাড়ির ভিতরের এসব টসটসে মালের স্বাদ যদি একবার পাইতাম, তাহলে এ জীবন একদম সার্থক হয়ে যেতো।”

ত্রয়ীর হাত ধরাতে সে চিৎকার দিতে গিয়েও দেয়নি। লোকলজ্জার ভয়ে। বাড়ি ভর্তি লোক তখন।

কোনোমতে তাদের হাত থেকে পালিয়ে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। তারপর ঠিক করে এমন চুপ করে থাকলে ঐ সব জানোয়ার গুলো পার পেয়ে যাবে। তাই সে ঠিক করে সব কথা ইনানকে জানাবে। সেই তখন থেকে ইনান কে খুঁজে যাচ্ছে, কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেনা। ইনানের রুমে গিয়েও খুঁজেছে সেখানেও নেই। হঠাৎ তার চিলেকোঠার ঘরের কথা মনে হয়। ও দ্রুত গতিতে পা বাঁড়ায় সেদিকে।

___________________________________________________________

– কেমন আছো?
শীতল কন্ঠে জিজ্ঞেস করে মেয়েটা।
ইনান হাসে। সেই হাসিতে মিশে আছে ঘৃনা। যন্ত্রনা আর অবহেলা।
– ভালো না থাকার কোনো কারন নেই। তুমি?
-ভালো।
-তো হঠাৎ এই বাড়িতে?
-মণি আসতে বলল।

রাবেয়া হক ওকে আসতে বলেছে শুনে ইনানের মেজাজ বিগড়ে যায়। বিরক্তি নিয়ে বলে,
– মা আসতে বললেই তোমাকে আসতে হবে? জানো না আমি এখন এখানে আছি? আর তোমাকে আমি জাস্ট সহ্য করতে পারিনা, এটাও তো তুমি জানো।

মেয়েটার গাল থেকে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। শান্ত গলায় বলে,
-জানি, তবুও তোমাকে দেখার লোভ সামলাতে পারিনি।

ইনান ওর হাত দেয়ালে সজোরে বাড়ি দিয়ে বলে,
– এখন কেন ইয়ার? এখন কেন? যখন আমি তোমার বাবা-মায়ের হাত পা চেপে ধরে কান্না করে তোমাকে একবার দেখতে চেয়েছিলাম, তখন কেন আসোনি?

– আমি যদি এখন তোমার জীবনে ফিরে আসতে চাই?
ইনান তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়। বলে,
– সব কিছুরই একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। আর এখন সেই সময়টা শেষ হয়ে গেছে।
– তার মানে তোমার জীবনে এখন অন্য কেউ এসেছে?

ইনান মেয়েটার কথার প্রত্যুত্তর দেওয়ার আগেই ত্রয়ী হুড়মুড় করে চিলেকোঠার ঘরে ঢুকে। দরজার পাশেই ইনান ছিলো, তাই ত্রয়ী খুব সহজেই ইনানকে জড়িয়ে ধরে। মেয়েটা জানালার পাশে ছিলো বিধায় ত্রয়ী তাকে দেখতে পায়নি।

ত্রয়ী ইনানের বুকে গিয়ে অনবরত কেঁদে যাচ্ছে। ওর কান্নার কারণ ইনান বুঝতে পারছেনা। একটু আগেও তো মেয়েটাকে দেখে এসেছে সে। তখনো তো দিব্যি হেসে কথা বলছিলো। মুহুর্তেই কী হয়ে গেলো?

এদিকে মেয়েটা ত্রয়ীর এমন কান্ড দেখে ইনানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইনান জিজ্ঞেস করে,
– কী হয়েছে ত্রয়ী? তুমি ঠিক আছো তো?

ত্রয়ী কান্না করতে করতেই ইনানের বুক থেকে মুখ তুলে তাকায়। সাথে সাথে ওর চোখ যায় জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে।

ত্রয়ী আর মেয়েটা দু’জনেই প্রশ্নবিদ্ধ চোখে ইনানের দিকে তাকায়।
ইনান দু’জনের প্রশ্ন বুঝতে পেরে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

___________________________________________________________

সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই লোডশেডিং হয়। ত্রয়ী ছাদে গিয়ে দোলনায় বসে। মিনিট পাঁচেক পরে ইনান কফি মগ হাতে নিয়ে ছাদে আসে। ত্রয়ীর দিকে কফি মগ এগিয়ে দিয়ে বলে,
– কফিটা খাও, ভালো লাগবে।

ত্রয়ী নিঃশব্দে কফিটা হাতে নেয়।
ইনান তার পাশে বসে। কফিতে চুমুক দিয়ে বলে,
– বিকেলে কাঁদছিলে কেন?
ত্রয়ী আকাশের দিকে তাকায়। কিছু একটা ভাবে, তারপর বলে,
– তার আগে বলুন ওই মেয়েটা কে ছিলো?

ইনান হাসে। বলে,
– তুমি বয়সের তুলনায় অনেকটা ম্যাচিউরড।
– প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছেন?
– নাহ, এড়িয়ে যাওয়ার মতো প্রশ্ন করো নি, যে আমকে তা এড়িয়ে যেতে হবে।

ত্রয়ী কফিতে চুমুক দেয়। বলে,
– তাহলে বলুন মেয়েটা কে?

ইনান আবারও হাসে। সেটা বেশ রহস্যময় হাসি। এই হাসির মানে খুঁজতে গেলে ত্রয়ী নিজেকে হারিয়ে ফেলে, তবুও হাসির রহস্য ভেদ করতে পারেনা।

.
.
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here