#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব: ১
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বাসায় কেউ নেই।করিম চাচা শেফালি খালাও আজ কাজে আসেননি।ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ৯:১৫ বাজে।বাবা আর ভাইয়াতো এখন অফিসে তাহলে আম্মু আর আপু কোথায় গেল?..তারথেকেও বড় কথা এতটা সকাল হয়েছে তাও আম্মু আমাকে ডাকলো না কেন?ওরা ছাদে গিয়েছে হয়তো।চলুন ছাদে যেতে যেতে আমার পরিচয় দিয়ে দিই….
আমি হুমাইরা আনতারা অন্ত। বয়স ১৮,উচ্চতা ৫’৪”, গায়ের রং ফর্সা।
আমি বাবা-মার ২য় রাজকন্যা। ১ম রাজকন্যা আমার বড় বোন আফিয়া ইবনাত আফ্রা। আপু অনেক সুন্দর আর জগন্নাথ ভার্সিটিতে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ে।আমাদের রাজপরিবারে ১টা রাজপুত্রও আছে, তিনি আমার আর আপুর বড় ভাই আহনাফ জারিফ।ভাইয়ার পড়াশুনা শেষ,বাবার সাথে বিজন্যাস দেখাশুনা করেন।এবার আসি রাজা-রানীর কথায়।রাজা মানে বাবা মো: হানিফ আহমেদ একজন সফল বিজন্যাস মেন আর রানী মানে আম্মু মিসেস সাহনাজ আহমেদ একজন গৃহিণী।
ছাদ থেকে নিচে আসলাম কিন্তু আম্মু আর আপুকে পেলাম না। ফোনটা হাতে নিয়ে আপুর কাছে কল দিলাম, রিং হলো ধরলোনা।কিছু একটা ভেবে আপুর রুমে যেয়ে দেখি ফোন রুমেই আছে।এইবার আমি বেশ বিরক্ত, একরাশ বিরক্তি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলাম….
ফ্রেশ হয়ে বেলকুনিতে আসলাম।এ্যাকুরিয়ামে কয়েকটা গোল্ডেন ফিশ আছে তাদের খেতে দিলাম। তারপর বেলকুনির গ্রিলে হাত দিয়ে সামনে তাকাতেই আমি অবাক!!
কারন আম্মু আর আপু বাসার সামনের নির্জন রাস্তার পাশে একটা বেঞ্চে বসে চা খাচ্ছে। আপুর দিকে তাকাতেই দেখলাম আপু আমার দিকে তাকিয়ে হাতের কাপ আমার দিকে একটু এগিয়ে ধরে ঠোঁট নাড়িয়ে শব্দহীন ভাবে বলছে, “চা খাবি?”…. চা খেতে আমার ভালো লাগেনা, শুধু চা নয় যেকোনো গরম পানীয় আমার পছন্দ নয়।তাই আপুকে ১টা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে মুখ বাঁকা করে না বললাম।তারপর হাত দিয়ে ইশারা করে আপুকে বললাম তোমার ফোন এসেছে।
তখনি আপু আম্মুকে কিছু বিরবির করে বলে তাড়াহুরো করে চা শেষ করে দুজনই বাসার দিকে আসতে লাগলো।আমি মুচকি হেসে ফোন হাতে নিয়ে ইচ্ছেকে কল দিলাম।
ইচ্ছে আমার বেস্টফ্রেন্ড আর ফুপাতো বোনও।২বার কল করার পর ডাইনিটা রিসিভ করলো..
ইচ্ছে: বল..(ঘুম জরানো কন্ঠে)
আমি: আমার খুব টেনশন হচ্ছে।
ইচ্ছে: আমারো।আমাদের যদি একভার্সিটিতে চান্স না হয়?…আমরা আলাদা হয়ে যাব ভাবতেই কান্না পাচ্ছে।
আমি: আমি বাবাকে বলে দিয়েছি এক ভার্সিটিতে চান্স না হলে আমরা প্রাইভেটে ভর্তি হবো তাও কেউ কাউকে ছেড়ে যাবোনা,কোনদিন ও না। দরকার হলে আমার বাসার কাজের লোকের সাথে তোর বিয়ে দিবো তাও তোকে আমার কাছেই রাখবো।
ইচ্চে: ডাইনি ,তুই আমাকে কাজের লোকের সাথে বিয়ে দিবি? তোর বর উগান্ডা ফেরত পাগল হবে দেখেনিস..(রেগে)
আমি: মোটেও না আমার বর বেস্ট হবে ,হুহ্।
ইচ্ছে:বেস্ট না ছাই হবে।আচ্ছা শোন,ইরিন বললো আজ নাকি DU রেজাল্ট পাবলিশ হবে।
আমি:আচ্ছা হোক আর শোন RU তে ১৭-২২ অক্টোবর এক্সাম হবে ভাল করে প্রিপারেশন নে DU তে না হলে ওখানে হতেই হবে।
ইচ্ছে: ওকে।
আমি: ওকে বাই।
ইচ্ছের সাথে কথা বলে খেতে গেলাম ততক্ষণে আম্মু আপু চলে এসেছে।খাচ্ছি এমন সময় আপু ধুরমুর করে আমার সামনে এসে আমাকে বলতে লাগলো,
আফ্রা: ঐ তুই আমাকে মিথ্যে বললি কেন? রাযীন তো আমাকে ফোন দেইনি।
আমি:কখন মিথ্যে বললাম ,আমি কি তোমাকে বলেছি রাযীন ভাইয়া ফোন দিয়েছে?(ভাবলেশহীন ভাবে)
আফ্রা:তাহলে বেলকুনিতে ঐরকম হাত দিয়ে ফোনের ইশারা করলি কেন?
আমি: তোমাকে ফোনে পাচ্ছিলাম না তাই।(টেডি স্মাইল দিয়ে)
আপু আমার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে রুমে চলে গেল।
রাযীন ভাইয়া আপুর ফিওন্সি আর বাবার বন্ধুর ছেলে ।ভাইয়ার সাথে আপুর ৫ বছরের প্রেম। এইতো ১ মাস মতো হলো আমরা জানতে পেরেছি পরে খোজ নিয়ে জানা গেল বাবার ছোট বেলার বন্ধুর ছেলে রাযীন ভাইয়া।আমরা যখন রাজশাহীতে থাকতাম উনারা তখন আমাদের পাশের বাসায় থাকতেন।রাযীন ভাইয়াকে এখনও সামনা-সামনি দেখিনি ,ফোনে দেখেছি।ভাইয়া এখন কানাডাতে আছেন কি সব ডক্টরি ডিগ্রী নিতে।দেশে আসলেই বিয়ে।ভাইয়ার বাবা RU এর ভিসি আর মা ডক্টর ,আন্টিকে আমি কয়েকদিন আগে দেখেছি ঢাকায় এসেছিলেন ,চমৎকার মানুষ উনি।যাইহোক রাযীন ভাইয়ার নাকি একটা ছোট ভাই আছে ,উনার নাম চাঁদ ।আমি উনাকে দেখিনি ছোটবেলায় আমরা যখন রাজশাহীতে থাকতাম চাঁদ ভাইয়ার সাথে নাকি আমার খুব ভাল সখ্যতা ছিল কিন্তু আমার তো কিছুই মনে পরেনা।
খেয়ে রুমে যেয়ে পড়তে বসলাম ।এই পড়াশুনা নামক প্যাড়াটা জীবন তেজপাতা করে দিল।
.
রাতে….
পড়ছি এমন সময় নিচ থেকে আপু ডাকছে।নিচে এসে দেখি সবার মন খারাপ।
জারিফ: ছোট পাখি মন খারাপ করিসনা আমি তোকে প্রাইভেটে ভর্তি করিয়ে দিবো।
আমি: তারমানে আমার DU তে চান্স হয়নি? আর ইচ্ছের?(মন খারাপ করে)
আফ্রা: ওরও হয়নি। আমি বুঝিনা সারাদিন তোরা কি পড়াশুনা করিস।(রেগে)
আপুর কথা শুনে আমার মন আরও খারাপ হয়ে গেল।
আম্মু: আহ্ আফ্রা , অন্ত কি কম চেষ্টা করেছে নাকি?
বাবা: ঠিক বলেছো। অন্ত মামনি তুমি যে চেষ্টা করেছো সেটাই অনেক।তুমি ইচ্ছের সাথে কথা বলে ঠিক করে নাও তোমরা কোন ভার্সিটিতে পড়বে।
আমি: বাবা আমরা RU তে
এক্সাম দিবো ।
জারিফ: হোয়াট? নো,তুই ঢাকা ছেড়ে কোথাও যাবিনা ।আমরা সবাই ঢাকা থাকবো আর তুই রাজশাহীতে একা…নো নিড।
আমি: প্লিজ ভাইয়া।বাবা তুমি ভাইয়াকে বলো না।
বাবা: আচ্ছা ঠিক আছে ।
তুমি রাজশাহীতে যাবে।
জারিফ:কিন্তু বাবা…
বাবা: কোন কিন্তু নয়।আমরা ওর স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারিনা জারিফ।
জারিফ: ওকে এখানকার বেস্ট…
বাবা : তুমি আর না করোনা জারিফ
জারিফ: ওকে।
আমি: আমার আরেকটা রিকুয়েস্ট আছে বাবা।
বাবা : কি রিকুয়েস্ট ?
আমি: ভিসি আঙ্কেল কে আগে কিছু জানানোর দরকার নেই।চান্স পাওয়ার পর জানাতে পারবে।
বাবা: ঠিক আছে মামনি ,তুমি যা চাইবে তাই হবে।
আমি: থ্যাঙ্ক ইউ বাবা।(জরিয়ে ধরে)
বাবা: আমার সোনা মামনি।
কথা শেষে খেয়ে রুমে এসে ইচ্ছেকে সব জানিয়ে পড়তে বসলাম।
২০দিন পর….রাত ১১টা,
ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে ,ফুপ্পা ড্রাইভারের পাশে বসে আছেন ।আমি আর ইচ্ছে পেছনের সিটে বসে আছি।…হ্যা আমরা রাজশাহী যাচ্ছি। ভাইয়া জরুরি কাজে চীন গিয়েছে তাই বাবা ফুপ্পাকে আমাদের সাথে পাঠিয়েছে।
সকাল ৯টায় এক্সাম সেইজন্য আমরা রাতে রওনা দিয়েছি। সারা রাতে রাজশাহী পৌঁছালাম ।
সকালে…
ফুপ্পার থেকে বিদায় নিয়ে আমরা এক্সাম হলের দিকে যাচ্ছি। ভেতরে ঢুকে আমরা সব রাস্তা গুলিয়ে ফেলেছি।উফ্ কি ভীর! ম্যাপে আমাদের এক্সাম হল দেখে নিয়েছিলাম। দুই জনের একই হলে এক্সাম। কিন্তু পুরো ভার্সিটি তন্নতন্ন করে খুঁজেও এগ্রিকালচার বিল্ডিং পেলাম না। কয়েকজনকে জিজ্ঞেস ও করেছি,উনারা বলতে পারেননি।একজন এগ্রিকালচার বিল্ডিং এর রাস্তা দেখিয়ে দিলেন কিন্তু আমরা ঘুড়ে ঘুড়ে ১ম বিজ্ঞান ভবনের সামনে চলে এসেছি।আমাদের কাছে ফোনও নেই। এই দিকে ৮:১০ বেজে গেছে, ১ম বিজ্ঞান ভবনে যাদের সিট পড়েছে তারা হলে ঢুকতে শুরু করেছে।আর ২০ মিনিটের মধ্যে আমরা হলে ঢুকতে না পারলে এক্সাম দিতে পারবোনা।
ইচ্ছে বলল,
ইচ্ছে : এই অন্ত, ঐ যে দেখ ওখানে কিছু ছেলে-মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে,দেখে মনে হচ্ছে এই ভার্সিটিরই বড় ভাইয়া আপু।চল গিয়ে হেল্প চাই।
ইচ্ছের কথামত ঐদিকে তাকাতেই একজনকে দেখে আমার চোখ কিছুক্ষণের জন্য স্থির হয়ে গেল…..
চলবে………..
( ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন।উৎসাহ পেলে লিখা continue করবো। )