#রহস্যের_কুয়াশা☠️
পর্ব_১১
#হাফসা_ইরিন_রাথি
মিলিকে হুজুরের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর জ্বীন হাজির করা হয়। ইহান মিলিকে এখানে দেখে খুবই অবাক হয় আর ভীত হয়ে যায়।
–রিদ তু….তুমি এখানে কি করছো? কেনো এসেছো এখানে?
(চিৎকার করে)পালিয়ে যাও রিদ।
মিলি ইহানের কণ্ঠস্বর চিনতে পারে কিন্তু ইহানকে দেখতে পাচ্ছে না। ইহানের কণ্ঠস্বরটা ভেসে আসছে সামনে বসে থাকা ছেলের মুখ থেকে।মিলি অসহায়ের মতো বলতে থাকে,
–ইহান তুমি এসেছো?আমার এখানে খুব ভয় লাগছে ইহান।
–আমার সাথে যাবে?
তখনি হুজুর কি যেনো একটা দোয়া পড়ে ফু দিলেন আর ইহান চিৎকার করতে লাগলো।মিলি ওকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে নিলে হুজুর ওকে বাঁধা দেয় তাই অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকে।
–কেনো এসেছো?
–আমার রিদকে নিয়ে যেতে।
–ও রিদ না,ও মিলি।তোমার ভুলের জন্য এই মেয়েটার জীবন নষ্ট হতে যাচ্ছে।আর সাথে ওর পুরো পরিবার।তুমি চলে যাও।তোমার যা লাগে তাই দেওয়া হবে।
–আমার রিদকে লাগবে।ওকে নিয়েই আমি চলে যাবো।আর কখনো আসবো না, সত্যি বলছি।আর ওই আমার রিদ।
–না তুমি ওকে নিতে পারবে না।অন্য যা লাগে তুমি চাইতে পারো।
–আমার ওকেই চাই,সব কিছুর বিনিময়ে।
অনেক তর্ক বিতর্কের পর ইহানকে তাড়াতে সক্ষম হলেন হুজুর।যাওয়ার আগে ইহান অনেক কেদেছিলো,হুজুরকে অনেক অনুনয় করেছিলো কিন্তু তিনি ওর কথা কিছুই শুনেন না।মিলি ইহানের কান্না শুনে কাদতে কাদতে নিজের জ্ঞান হারায়।চোখ খুলে দেখে ওর ঘরের বিছানায় শুয়ে আছে আর চারপাশে মা বাবা ওকে ঘিরে বসে আছে,সাথে ওর দাদু,মামাকেও চিনতে পারলো।মিলি বুঝতে পারলো না এতক্ষণ কি ও স্বপ্ন দেখছিল নাকি সত্যিই তেমনটাই হয়েছে।কিন্তু তখনি নিজের ডান হাতে কিছু একটার আঘাত অনুভব করলো।বাম হাতে স্পর্শ করতেই দেখলো ওর হাতে একটা ছোটো মতো তাবিজ খুব শক্ত করে বাধা আছে।মিলিকে চোখ খুলতে দেখে আর তাবিজে হাত দিতে দেখে ওর ওর বাবা ওকে ব্যাস্ত ভাবে উঠিয়ে বসালো।মিলির পুরো মাথা খুব ভারী হয়ে আছে,অনেক কষ্টে বসতে পারলো।
–এখন ঠিক আছো মামুনি?
মিলি মাথা নাড়লো।ওর দিকে সবাই উদ্বেগের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মিলি অনেক কষ্টে তাবিজটা ধরে ওদের বুঝাতে সক্ষম হলো যে এটা কি?
–এটা হুজুর তোমায় দিয়েছে।সবসময় সাথে রাখবে,ভুলেও হারিয়ে ফেলবে না কিন্তু।খুব গুরুত্বপূর্ন জিনিস এটা।(খুব সতর্কতার সাথে)
মিলি বললো বুঝতে পারলো না এটা কি এমন গুরুত্বপূর্ন জিনিস হতে পারে কিন্তু হুজুরের কথা শুনেই ওর কেমন মুখ শুকিয়ে গেলো।তাহলে কি যা যা এতক্ষণ দেখলো সবটা বাস্তবে ছিলো??মিলি ছলছল চোখে অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো,
–ইহান!
কেউ শুনতে পেলো না ওর এই কথা।সবাই ওকে খাওয়াতে আর সেবা করে তাড়াতাড়ি সুস্থ করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।মিলির মাথায় কিচ্ছু কাজ করছে না।১০০ টা দুশ্চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। ইহান কি তবে এই আসবে না? ইহান এমনভাবে কেনো কান্না করলো? ইহানকে এতটা অসহায় হতে কখনো দেখেনি মিলি।কিন্তু সেই কান্না আর ওই ব্যাপারগুলো যে সত্যি,বাস্তব এইটা মেনে নিতেই ওর মন সায় দিচ্ছে না।
***
ইহান বাচ্চাদের মতো কান্না করছে হাউমাউ করে আর ছাড়া পেতে চাইছে কিন্তু রিমাদ ওকে সর্বশক্তি দিয়ে ধরে রেখেছে।অবশেষে চেষ্টা রেখে ক্লান্ত হয়ে একেবারে ভেঙ্গে পড়লো ইহান।মাটিতে বসে কান্না করতে লাগলো।ওর কান্না দেখে রিমাদ আর রোজাও কান্না করছে।
–আমায় আমার রিদকে এনে দে।আমি কেনো সেখানে যেতে পারছি না।
–ইহান প্লিজ তুই এমন বাচ্চাদের মতো করিস না।বুঝার চেষ্টা কর ওরা প্রটেকশন নিয়েছে তাই তুই বা আমরা কেউ রিদের কাছে যেতে পারবো না যতক্ষণ না রিদ ওই তাবিজটা ফেলে দেয় নিজ থেকে।
রোজা আর রিমাদ অনেক শান্তনা দিয়েও কোনো সুবিধা হলো না।কিছুক্ষণ পর জ্বীন রাজ নিজে এলেন।
–আপনি তো কিছু একটা করুন।আপনার মেয়ে হয় সে।আপনি অন্তত চুপ করে থাকবেন না।
–আমারও কিছুই করার নেই।আমি তোমাকে এখন এই পরিস্থিতিতে একটাই উপদেশ দিবো,”সৈন্যদের গড়ে তোলো। রিদের সব মনে পড়তে পারে আমি এমন একটা লক্ষণ দেখছি কিন্তু বছর খানেক সময় অবশ্যই লাগবে।ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করো।”
–তাহলে তো সৈন্যদলকে প্রস্তুত করায় আমি কোনো কারণ দেখছি না!
–ভুলে যেও না ইহান, রিদের সব মনে পড়তেই একটা বিশাল যুদ্ধ হতে যাচ্ছে।আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।আর আপাতত আমরা পৃথিবীতে গিয়ে রিদের উপর নজর রাখতে পারবো না তাই এখান থেকেই রাখতে হবে।
***
মিলি প্রতিনিয়ত অসুস্থ হয়ে পড়ছে কারণ ও প্রতিদিন রাতেই ইহানের কান্নার আওয়াজ শুনে মাঝরাতে ভয় পেয়ে কাদতে কাদতে ঘুম ভাঙ্গে।এভাবে চলতে চলতে ওর অবস্থার অবনতি হতে থাকে আর ইহান নিজেকে সারাদিন ব্যাস্ত রাখে সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজে।
মিলিকে ডাক্তার দেখিয়ে উন্নতি এই হয়েছে যে এখন ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করতে পারে কিন্তু প্রতিদিনই প্রায় সেই স্বপ্ন দেখে আর ইহানকে মনে পড়ে।এখন ও কিছু কিছু বুঝতে পারে যে কে ছিল ইহান?কেই বা ছিল রুশা।কারণ সেইদিনের পর থেকে আর কোনোদিন রুশা আর ইহানকে দেখতে পায় নি মিলি।ওদের অস্তিত্বই খুঁজে পায় নি কোথাও আর নাই বা পেয়েছে ঠিকানা।মিলি অনেক খুঁজেছে কিন্তু পায় নি।
মিলির এইবার ৮ বছর চলছে। ইহান আগের মতো আর উৎফুল্ল নেই।সারাদিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থেকে কাজ শেষে তন্ময়ী-র পাড়ে এসে বসে থাকে আর দিন গুনতে থাকে।মিলি এইবার চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে।সব কিছু স্বাভাবিক ভাবেই চলে কিন্তু অস্বাভাবিক একটা জিনিস রয়েই গেছে আর সেটা হলো সেই অদ্ভুদ স্বপ্নটা।এই স্বপ্নটার জন্য মিলি চাইলেও ভুলতে পারে না ইহানকে।অপেক্ষা করতে থাকে ওর সবচেয়ে প্রিয় এই বন্ধুটি হয়ত আবারো ফিরে আসবে,ওর সাথে খেলা করবে,দুজন মিলে ঘুরতে যাবে।
জ্বীন রাজের মতে বয়সের দ্বিতীয় ধাপে যাওয়ার আগে কোনো কিছুই মনে পড়ার সম্ভবনা নেই।কিন্তু ইহান ঠিক বুঝতে পারলো না উনার কথাটা। বয়সের দ্বিতীয় ধাপ মানে কি?
–বয়সের দ্বিতীয় ধাপ নিশ্চই কৈশোর।শৈশবের পরেই তো কৈশোর। রিদের এখন ৯ বছর ছুঁইছুঁই তাই কৈশোরের আর বেশি দূরে নেই।অযথা দুশ্চিন্তা না করে আমাদের সাথে একটু ঠিক করে কথাও তো বলতে পারিস?প্রেমিকা গুরুত্বপূর্ন এবং সবচেয়ে প্রিয় তাই বলে কি বন্ধুত্বের দাম নেই?
–ওর আমাদের সাথে কথা বলার ইচ্ছে নেই। চল আমরা যাই।(রোজা)
রোজা আর রিমাদ চলে যেতে উদ্যত হলে ইহান ওদের পেছন ডাকে।ওরা পেছন ফিরতেই দুজনকে জড়িয়ে ধরে কাদতে থাকে।৩ বন্ধু একই সাথে গলা জড়িয়ে কাদতে লাগলো। ইহান কাদতে কাদতে বললো,
–তোরা আমার কাছে সব রে।তোরা না থাকলে রিদকে আমি কখনো ফিরে পেতাম না,কোনো সম্ভাবনাই থাকতো না। রিদকে যতটুকু চাই, তোদেরও চাই।আমি তোদের সত্যি অনেক ভালোবাসি বন্ধুরা।
–আমরাও।
চলবে””””
(আর ২/৩ পর্বেই শেষ করবো গল্পটা।)