অগত্যা তুলকালাম।’পর্ব-২০

0
688

#অগত্যা_তুলকালাম
নাফীছাহ ইফফাত

পর্ব ২০

অনেকদিন যাবৎ ফ্রেন্ডদের খোঁজ খবর নেয়া হয়নি। এমনকি শাওনের সাথে পর্যন্ত কথা হয়নি আমার। শাওনকে টেক্সট করলাম। ঘন্টাখানেক পর ওর রিপ্লাই এলো। কিছুক্ষণ টেক্সট করে ফোন দিলাম। টেক্সটে ও বলেছে ওর নাকি অনেক কথা বলার আছে৷ এরমধ্যেই নাকি অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। তাই ফোন করা।

“হুম বল এবার কি ঘটনা ঘটেছে?” আমি বললাম।
“অনেক ঘটনা৷ আগে মৌকে দিয়ে শুরু করি। মৌ-এর ফ্যামিলি ওর রিলেশনের কথা জেনে গেছে।”
“তো এখন?”
“এখন ওর বাসা থেকে বেরুনো বারণ।”
“কি বলিস? কবে থেকে?”

“এই ধর আমরা যখন লাস্ট মিট করলাম না? তারপর অসুখ-বিসুখ হলো সবার। এর পরপরই একদিন। তুই তো কারো খোঁজ-খবরও নিস না।”

“আমি আছি আমার প্যারায়। অন্যের প্যারা কি সামলাবো?”
“কেন? তোর আবার কি হয়েছে?”
“সে অনেক কথা।” লম্বা করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম।
“তো কাল আমাদের বাড়িতে আয়। তোর কথা সব বললি, আমারগুলোও বললাম।”

“আচ্ছা দেখি।”
“আচ্ছা দেখি বললে হবে না। আসছিস ফাইনাল।”
“অকে।”
“ওহ হ্যাঁ, রিয়াদ তোর সাথে কথা বলতে চায়। ও নাকি তোকে ফোনে পাচ্ছে না। বেশ কয়েকবার ট্রাই করেছে ক’দিন আগে। সুইচড অফ পেয়েছে নাকি!”

“হুম ক’দিন আগে ফোন অফ রেখেছিলাম। বাই দ্যা ওয়ে, ও আমাকে কেন খুঁজছে?”
“তোকে নাকি খুব দরকার। জানি না ভাই, তোরে ক্যান সবার এত দরকার পড়ে? আমাদেরকে নাকি বলাই যাবে না। খালি তোরেই বলবে।”

“কি এমন কথা যে খালি আমাকেই বলবে?”
“জানি না। তুই নাকি ওর ম্যাসেজও সিন করিস না?”
“আমি কারও মেসেজই সিন করি না। অত কথা বলতে আমার ভালো লাগে না।”
“ভাব সব, বুঝিনা যেন!”
“আচ্ছা মারিয়ার কি খবর?”
“সামনের মাসে বিয়ে?”
“হোয়াট?”

“আকাশ থেকে পড়েছিস মনে হচ্ছে? আমাদের মেসেঞ্জার গ্রুপে তো সেই কবেই জানিয়েছে ও।”
“বললামই তো মেসেজ সিন করি না। তো কার সাথে বিয়ে? লাভ না এরেঞ্জ?”
“লাভ বাট এরেঞ্জ!”
“মানে?”
”কাল বাসায় আয়, সব বলবো।”
“আচ্ছা আসবো ইন শা আল্লাহ।”
“বান্ধবী শোন, তুই ভাই রিয়াদের সাথে কথা বল আগে। ছেলে হার্টফেল করবো নয়তো। আর্জেন্ট ফোন লাগা ওকে।”
“আচ্ছা, আচ্ছা।”

ফোন রেখে ভাবছি, রিয়াদের কি এমন দরকার আমার সাথে? বিজনেসের কিছু? কিন্তু সেসব তো তখনই মিটে গিয়েছিল। হার্টফেল করবে কেন আমার জন্য? আজব! কি এমন কথা?

রিয়াদের ইনবক্সে ঢুকলাম প্রথমে। ও কি টেক্সট করেছে দেখা উচিত। 103 আনরিড মেসেজ! ওহ মাই আল্লাহ!

মেসেজ পড়তে থাকলাম। প্রায় মেসেজই একইরকম।
“দোস্ত, মেসেজ সিন কর।”
“আল্লাহর দোহাই লাগে।”
“কি হইছে তোর?”
“কবে থেকে টেক্সট করছি। কই তুই?”
“আমি তোর বাসার নীচে।”

হোয়াট? এটা পড়ে কতক্ষণ তাকিয়েই রইলাম। আমার বাসার নীচে মানে? মেসেজটা প্রায় পনেরো দিন আগের। পরের মেসেজে গেলাম আবার?

“তোর কি হয়েছে বলতো?”
“আমার অনেক দরকার তোকে।”
“তোকে কথাটা না বলতে পারলে আমি শ্বাসরোধ করে মারা যাবো।”
“তোর ফোন বন্ধ কেন? কল ঢোকে না কেন?”
“আমাকে ব্ল্যাকলিস্টে দিয়েছিস?”
“দোস্তওওওওওওওওও!”

ওহ আল্লাহ! ছেলেটা কি পাগল হয়ে গেল? এমন করে কেন? আমি রাফিনের কাছ থেকেই সরে আসতে চাইছি গুনাহের জন্য। আবার এই ছেলে নাকি আমার সাথে কথা না বলতে পারলে শ্বাসরোধ করে মারা যাবে। আল্লাহ! কি একটা অবস্থা? এখন আবার এর সাথে কথা বলো আর গুনাহ কুড়াও। কি যে করি? কথা না বললেও তো মরে যাবে মনে হয়। ধুরর!

পরদিন শাওনের বাসায় যাওয়ার জন্য বের হলাম। মাঝপথে কোঁকড়া চুলের রাফিনের সাথে দেখা। খানিক ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। এরপর ও-ই আগ বাড়িয়ে আমার সামনে এসে বললো,
“কই যাচ্ছো?”
“ফ্রেন্ডের বাসায়।”
”ওহ আচ্ছা।”

আমি ওর আপাদমস্তক তাকিয়ে বললাম,
“তোমার কোঁকড়া চুল পছন্দ?”
“খুবব.. না মানে না৷ পছন্দ না, একেবারেই পছন্দ না।”

আমি বেশ কয়েকবার লক্ষ্য করেছি রাফিনের সাথে এই ছেলেটার বিস্তর ফারাক। রাফিনের সম্পূর্ণ বিপরীত কোঁকড়া চুলের ছেলেটা৷ রাফিনের পছন্দ-অপছন্দ বিষয়ক প্রশ্ন করলেই ছেলেটা থতমত খেয়ে যায়। তোতলাতে থাকে। কে এটা? হুবুহু রাফিনের মতো দেখতে? রাফিনের তো কোনো জমজ ভাই নেই। বড় একজন ভাই আছে তাকে আমি চিনি। সে ম্যারিড, একটা মেয়েও আছে। এই ছেলেটার সাথে কি রাফিনের কোনো সম্পর্ক আছে? হুবুহু মিল দুজন মানুষ কি করে হয়?”

আমি বললাম, “আচ্ছা বলতো, আমি তোমার সাথে ফোনে কথা বলতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করি নাকি সরাসরি কথা বলতে?”
“সরাসরি।” কিছুটা সন্দেহ নিয়ে বললো।

আমি উৎফুল্ল হওয়ার ভান করে বললাম,
“এক্স্যাক্টলি! ইউ আর এবসোলিউটলি রাইট।”
ওকে বেশ খুশি খুশি দেখালো। আমি বললাম,
“এখন তাহলে আসি, হুম?”
“শিউর, শিউর।”

আমি সামনে পা বাড়ালাম। ও বললো,
“বিকেলে যাবে কাশবনে?”
আমি দু’পাশে মাথা নাড়ালাম। ছেলেটার মনে হয় হালকা মন খারাপ হলো।

আমি যেতে যেতে রাস্তাতেই রাফিনকে টেক্সট করলাম। সেই সেইম কুয়েশ্চন।
“আচ্ছা বলতো, আমি তোমার সাথে ফোনে কথা বলতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করি নাকি সরাসরি কথা বলতে?”

রাফিন অনলাইনেই ছিল। সাথে সাথে টেক্সট করলো।
“কোনোটাই না। তুমি টেক্সটে বেশি সাচ্ছন্দ্যবোধ করো।”

আমি মুচকি হেসে মাথা দোলালাম৷ আগেই বলেছি, এই ছেলের সাথে রাফিনের কোনো মিল নেই। ছেলেটা সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকাতে পারে না। ওর দৃষ্টি এলোমেলো হয়ে যায়। অথচ রাফিন তাকালে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আমার চোখের দিকে। একবারও চোখের পলক অব্দি পড়ে না।

রাফিন আবার টেক্সট করলো, “হঠাৎ এটা কেন জানতে চাইছো?”
“এমনিই। আচ্ছা বলতো, আমি এখন কোথায়?”
“আমি কি ভবিষ্যত জানি নাকি তোমার মনে বাস করি যে যখন যা জিজ্ঞেস করবে বলে দিতে পারবো?”

“আমি ফ্রেন্ডের বাসায় যাচ্ছি।”
“কোন ফ্রেন্ড?”
“শাওন।”
“ওহ অকে। যাও।”

শাওনের বাসায় চলে এলাম। ও আমার গেটআপ দেখে বেশ অবাক হলো।
“এই ক’দিনেই এত চেঞ্জ?”
“চেষ্টা করছি।” মুচকি হেসে বললাম।

সারাদিন ধরে ওর সাথে কথা বললাম। রিয়াদের বিষয়টা ওকে জানালাম না। মারিয়ার ব্যাপারে ও বললো,
“মারিয়ার বয়ফ্রেন্ড প্রপোজাল পাঠিয়েছে মারিয়ার বাসায়। ওরা কেউই আগে জানায়নি যে ওরা একে-অপরকে ভালোবাসে। মারিয়ার একজন কাজিন দুজনের পরিবারকে ভালো ছেলে কিংবা ভালো মেয়ে আছে বলে ওদের সন্ধান দেয়। এরপর দেখা-সাক্ষাৎ করে দুই পরিবারেরই পছন্দ হয়৷ এখন সব ঠিকঠাক। আকদ হয়ে গেছে অলরেডি।”

“মা শা আল্লাহ! হারাম রিলেশন থেকে মুক্তি পেল। অবৈধ সম্পর্কের অবসান ঘটালো।” বেশ খুশি হয়ে বললাম।

বিড়বিড় করে বললাম, “রাফিন যদি একটু বুঝতো!”

শাওনের হাত ধরে বিশেষভাবে বললাম,
“শোন মারিয়াকে বলবি ও যেন আগের অবৈধ সম্পর্কটার জন্য তাওবা করে নেয়।”
“কেন এখন তো ওরা ম্যারিড। এখন আর তওবা করা লাগবে কেন?”
“এখন ম্যারিড, এখনকার সম্পর্কটা হালাল। বাট এর আগে যা ছিল তা তো গুনাহ-ই। ঐ গুনাহ তওবা না করলে মাফ হবে না।”

“আচ্ছা বলবো। কিন্তু তোরও তো হারাম সম্পর্ক আছে। সব জেনেও মানছিস না যে?”
“কে বললো মানছি না? ক’দিনের ভেতর ইন শা আল্লাহ সব হারাম রিলেশন থেকে বেরিয়ে আসবো আমি।” উদাস গলায় বললাম।

“সব রিলেশন বলতে? কয়টা রিলেশন তোর?”
“অনেক।”
“কিহ?”
“হারাম রিলেশন বলতে শুধু বয়ফ্রেন্ডকে-ই বোঝায় না রে পাগলী। ছেলেবন্ধু, ছেলে কাজিন, যেকোনো গায়রে মাহরামের সাথে সুমধুর সম্পর্ক, মিষ্টি মধুর কথা বলা, চলাফেরা করা মানেই হারাম সম্পর্ক। যেমন রাফিন ছাড়াও আমার আর কার সাথে হারাম সম্পর্ক জানিস? রিয়াদের সাথে। ওর সাথে কথা বলে সব মিটমাট করতে হবে। ও কি বলতে চায় শুনতে হবে। তারপর সব শেষ।”

“তুই এখনো কথা বলিসনি ওর সাথে?”
“পরে বলবো।”
“কথা বলার পর তারমানে সব শেষ? সত্যিই?”
“হুম। শতভাগ!”
“আর কখনো কথা বলবি না ওর সাথে?”
“নাহ! হারাম ইজ হারাম। পারলে তুইও বলিস না।”

“ও তো মরেই যাবে।” অন্যদিকে ফিরে বললো শাওন। আমি বললাম, “কিহ?”
“কিছু না। বস, নাস্তা নিয়ে আসি। বিকেল হয়ে গেছে।”
“হুম।”

শাওনের রুমটা মাঝামাঝি ধরণের। খাটের দু’পাশে দুটো জানালা। আমি খাটের ওপর বসে ডানের জানালায় চোখ রাখলাম। আকাশ মেঘে ঢেকে আছে। কিছুক্ষণের মাঝেই বৃষ্টি নামবে। মেঘ ডাকছে গুড়ুম গুড়ুম শব্দে। উঠানে কিছু ছেলেমেয়ে বাড়ি থেকে চেয়ার টেনে টেনে নিয়ে আসছে। হয়তো বসে কোনো খেলা খেলবে। আমিও মনোযোগ দিয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলাম।

হঠাৎ দেখি রাফিন বেরুচ্ছে একটা বাড়ি থেকে। বেরিয়েই হাঁক ছাড়লো, “সবাই গোল হয়ে বসো। এখনই খেলা শুরু হবে।”

আমি বিস্ময়ে হতবাক। এটা রাফিনের বাসা? সত্যিই রাফিন তো! নাকি আমার দৃষ্টভ্রম? চোখ কচলে দেখলাম, হ্যাঁ, রাফিনই তো। শাওনের বাসার এত কাছে ওর বাসা? ওহ মাই আল্লাহ!

#Be_Continued__In_Sha_Allah ❣️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here