অগত্যা তুলকালাম।’পর্ব-৩০

0
501

#অগত্যা_তুলকালাম
নাফীছাহ ইফফাত

পর্ব ৩০

রাফিনের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে বেশ ঝামেলায় পড়ে গেলাম আমি। প্রতি ক্ষণে আমার পুরোনো কথা মনে পড়তে লাগলো। যতবার মনে হয় ততবার ইস্তেগফার-এ মশগুল হই। তবুও যেন ভুলতে পারছি না। তার সাথে আজ সকালে আবার যুক্ত হয়েছে সেই পুরোনো ডায়েরিটা। যেটা কয়েক বছর আগে কাশবনে কুড়িয়ে পেয়েছিলাম।

কয়েকদিন আগে চুক্তিপত্র নিয়ে ব্যবসায়ে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ব্যবসায় শুরু করার আগে কয়েকজনের সাথে চুক্তি করে টাকার লেনদেন হয়েছিল। সেসব লেনদেনের পাট তখনই চুকিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু তারাই আবার এতদিন পর এসে ঝামেলা করছে। রীতিমতো হুমকি দিচ্ছে ব্যবসায় বন্ধ করে দেওয়ার। তাই আমি ও নাকীব সকালে বিজনেসের ফাইল খুঁজছিলাম। ফাইল খুঁজতে গিয়ে হঠাৎ সেই খয়েরী মলাটের পুরোনো ডায়েরিটা আমার হাতে লেগে উল্টে পড়ে আর বেরিয়ে আসে রঙ্গিন কিছু ছবি৷ ছবিগুলো হাতে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ দেখলাম। সবগুলো হাতের এবং কাশফুলের ছবি। হাতটা একটা ছেলের, হাতে দামী ঘড়ি। ছবিগুলো ঢুকিয়ে রাখতেই টুক করে কি যেন পড়লো নিচে। আগে ডায়েরির শেষ মলাট খুলে দেখলাম যেখান থেকে জিনিসটা পড়েছে। একটা পকেটের মতো আছে, ওখান থেকেই পড়েছে একটা ব্রেসলেট।
নিচ থেকে ব্রেসলেটটা কুড়িয়ে আমি রীতিমতো চমকে উঠলাম। এটা আমার হারিয়ে যাওয়া ব্রেসলেট। সেদিন, সেই প্রথম যেদিন রাফিনের সাথে ধাক্কা লেগে সাইকেল থেকে পড়ে গিয়েছিলাম সেদিন এই ব্রেসলেটটা হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি।

আমাকে ব্রেসলেট হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নাকীব বললো,
“আপু, তাড়াতাড়ি খোঁজো, কি দেখছো এত?”
আমি ওকে ব্রেসলেটটা দেখিয়ে বললাম,
“দেখ, এটা কাশবনে হারিয়ছিলাম। এই ডায়েরির মধ্যে কি করে এলো?”
“তুমি রেখেছো হয়তো ডায়েরীর ভেতর। পরে ভুলে গিয়েছো।” আলমারির ভেতর মাথা ঢুকিয়ে ফাইল খুঁজতে ব্যস্ত নাকীব। সেখান থেকেই কথাটা বললো।
“আমি কেন ডায়েরির ভেতর রাখবো? এটা তো আমার ডায়েরি না।”
“তাহলে?”
“এটা কাশবনে কুড়িয়ে পেয়েছি।”
“কখন?”
“দু’বছর আগে লাস্ট যখন কাশবনে গিয়েছিলাম তখন।”
“ওহ! তুমি যেমন দু’বছর আগের কুড়িয়ে পাওয়া পুরোনো ডায়েরি সযত্নে আলমারিতে তুলে রেখেছো তেমনই হয়তো ডায়েরির মালিকও তোমার হারিয়ে যাওয়ার পুরোনো ব্রেসলেট কুড়িয়ে তুলে রেখেছে।”
“ফাইজলামি রাখ। এটা সত্যিই আমার।”
“তোমার ব্রেসলেটের মতো দুনিয়ায় আর ব্রেসলেট থাকতে পারে না? নাকি এটা একমাত্র তোমার জন্য বানিয়েছে? শুধু শুধু বাহ্যিক একটা ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছো। এদিকে বিজনেস ডুবে যেতে চলেছে সেই খবর নেই।”

আমি কোনো কথা না বলে ব্রেসলেটটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। নাকীব ডায়েরি ও ব্রেসলেট কেড়ে নিয়ে আগের জায়গায় রাখতে রাখতে বললো,
“তুমি আপাতত ডায়েরিটা রাখো আর চুক্তিপত্রের ফাইলটা খোঁজো। নাহয় ডুবতে হবে আমাদের।”

অগত্যা ডায়েরি ছেড়ে ফাইল ঘাঁটাঘাঁটিতে লেগে পড়লাম। ব্রেসলেটটা পাওয়ার পর থেকে ডায়েরিটা পড়ার অদম্য ইচ্ছেটাকে আমি কিছুতেই দমাতে পারলাম না। নাকীব যতই বলুক ব্রেসলেটটা অন্য কারো তা আমি বিশ্বাস করি না। কারণ আমার ব্রেসলেটের কোণার একটা পাথর আগেই পড়ে গিয়েছিল। সেই সেইম পাথরটা এই ব্রেসলেটেও নেই। শুধু তাই না, আমার ব্রেসলেটে একটা লাল রংয়ের ফিতে আমি এড করেছিলাম যাতে সবার চেয়ে আলাদা দেখায়। সেই ফিতেটাও এই ব্রেসলেটে বিদ্যমান। সুতরাং আমি হলফ করে বলতে পারি, এই ব্রেসলেট আমারই।
রাতে সবাই ঘুমানোর পর ডায়েরিটা খুলে বসলাম। শুকিয়ে মড়মড়ে হয়ে গেছে পাতাগুলো। আমি পড়তে শুরু করলাম মনোযোগ দিয়ে। প্রথম পাতায় সুন্দর হাতের লেখা।
“ডায়েরিটা আমার বন্ধুর মতো। বন্ধু নয় ঠিক, প্রেয়সীর মতো। আমার প্রিয়তমাকে নিয়ে লিখা এই ডায়েরি। আমি কখনো ডায়েরি লিখিনি। অত সময়ও আমার নেই। কিন্তু ওকে দেখার পর যখন মনের কথাগুলো বলতে পারছিলাম না তখন সিদ্ধান্ত নিলাম ডায়েরি লিখার। ওকে যা মুখে বলতে পারবো না তাই আমি এই ডায়েরিতে লিখে রাখবো। তাই ডায়েরিটা আমার প্রিয়তমার মতোই। হয়তো আরও বেশি কিছু। কারণ এতে যা লিখা থাকবে তার অনেকাংশই হয়তো ওকে বলতে পারবো না কখনো। তাই না বলা কথাগুলো ডায়েরিতে লিখে আমি মনের খোরাক যোগানোর চেষ্টা করছি।”

আমি বেশ আকর্ষণ বোধ করলাম। সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ বোধ করলাম ডায়েরীর প্রথম পাতায় লাগানো কাশবনের ছবিটা দেখে। ছেলেটারও হয়তো কাশবন নিয়ে কোনো স্মৃতি জমা আছে। তাছাড়া প্রিয়তমাকে নিয়ে লেখা ডায়েরি, নিশ্চয়ই রোমান্টিক হবে। যদিও বিবেকে বাঁধা দিচ্ছিলো অন্যের ডায়েরি না বলে পড়তে। তাও নিজেকে এই ভেবে স্বান্তনা দিলাম যে, এটা তো কুড়িয়ে পেয়েছি। না পড়লে ডায়েরির মালিককে খুঁজবো কিভাবে আর ব্রেসলেট রহস্যই বা জানবো কিভাবে? আচ্ছা, ডায়েরির মালিক কি এত বছর পরও ডায়েরিটার অপেক্ষায় আছে? হয়তো আছে। মানুষ প্রেমে পড়লে কত কিই না করে। আচ্ছা, এই ডায়েরির প্রেমটা হালাল তো? নাকি হারাম প্রেম? আমার আর রাফিনের সম্পর্কের মতো? নাহ! পড়েই দেখি।

পরের পৃষ্ঠায় গেলাম দ্রুত। এই পৃষ্ঠায় বড় করে হেডলাইন দেওয়া, “আমার প্রিয়তমা”।
আবার আরেকটু ছোট আকারে লেখা “সাক্ষাৎ”। তারপর থেকে কাহিনী শুরু।

“এই এলাকায় আসার পর থেকে কাশবনের গহীনে বাইক চালানো আমার স্বভাবে পরিণত হয়েছে। কাশবনের গহীনে কেউ সচরাচর যায় না। তাই সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিদিন বিকেলে কাশবনের চিকন গলিতে বাইক রাইড করি আমি। কাশবন আমার খুব প্রিয় একটা জায়গা। কাশফুলের মধ্যিখানে বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়াতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। তাই প্রায়ই নির্জনে একা বাইক চালাই। আজও রাইড করছিলাম হঠাৎ এক ডাগর চোখের রূপসী সাইকেল নিয়ে ঢুকে পড়ে আমার নির্ধারণ করা জায়গাটায়। ফলাফল ধাক্কা লেগে কুপোকাৎ। যদিও আমি পড়িনি কিন্তু মেয়েটা পড়ে গিয়ে একেবারে মাটিতে বসে পড়লো।”

এটুকু পড়ে আমার বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো। এ তো আমার আর রাফিনের সাক্ষাৎ। এই ডায়েরিতে কি করে এলো? দ্রুত সামনে আগালাম।

“আর ঠিক তখনই কোথা থেকে একটা বল এসে ওর মাথায় পড়লো। ব্যাথায় একেবারে কঁকিয়ে উঠলো মিস পিছলাবতী। আমার হাসি পেলেও সেটা চেপে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, “স্যরি মিস! আ’ম এক্সট্রিমলি স্যরি!”

সে আমার হাত ধরে উঠে এলো। সে-ই প্রথম ছোঁয়া, যেটা আমার হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করে দিলো। বলে রাখা ভালো, আগের এলাকায় থাকতে আমার আরও অসংখ্য মেয়েবন্ধু ছিলো। তারা সবাই নিজ থেকে এসেছে আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে এবং আমার কাউকেই ভালো লাগতো না। তখন আমার একমাত্র ভালোবাসা ছিল বাইক। তাই আমি সবাইকে উপেক্ষা করে বাইক রাইডে মেতে থাকতাম৷ আমার বাইকে কখনো কোনো মেয়েকে তুলিনি এবং একটা ফুলের টোকাও কোনোদিন বাইকে আমি পড়তে দিইনি৷ এমনকি সেসব মেয়েরা চাইতো আমার বাইকে উঠতে কিন্তু তাদেরকে কখনোই সেই সুযোগ দিইনি। আমার এহেন উপেক্ষা সহ্য করতে না পেরে তারা নিজেরাই চলে গিয়েছিলো। কিন্তু এই প্রথমবার আমি আমার বাইক তোলার জন্য হাত না বাড়িয়ে কোনো মেয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম। বাইক কুপোকাৎ হয়ে পড়ে রইলো অনতিদূরে। পরবর্তীতে ভাবলাম, আশ্চর্য!বাইকের চেয়ে মেয়েটাকে তোলা অতীব জরুরী কেন মনে হয়েছে আমার?

মেয়েটা সমস্ত দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়ে যা বললো তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। সে-ও আমার মতো সেম কারণে এই নির্জন জায়গায় সাইকেল চালায়।

মেয়েটার মাথায় যার বল এসে পড়েছে সেই ছেলেটা কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে মেয়েটার কাছে এসে দাঁড়ালো। ডাগর চোখের রূপসী তার চুল টেনে দিয়ে বললো, খেলতে যেতে। ছেলেটাও মহাউৎসাহে ছুটে গেল। ব্যাপারটা আমাকে এত মুগ্ধ করলো যে বলার বাহিরে। এরপর মেয়েটা সাইকেল নিয়ে চলে যায়। সে যাওয়ার পরপরই তার একটা জিনিস আমি খুঁজে পাই৷ সেটা সযত্নে নিজের কাছে রেখে দিলাম। সেই প্রিয় জিনিসের ছবি পরবর্তী পৃষ্ঠায়…”

পরবর্তী পৃষ্ঠায় গিয়ে দেখলাম, আমার সেই ব্রেসলেটের ছবি। কাশবনের বেঞ্চের ওপর রাখা আছে ব্রেসলেটটা এবং তার পাশেই কাশফুলের গুচ্ছ। এবার আমার আর কোনো সন্দেহ রইলো না ডায়েরিটা কার তার ব্যাপারে। পরের পৃষ্ঠায় গেলাম দ্রুত।

এই পৃষ্ঠায় মাঝারি আকারের হেডলাইন দিয়ে লিখা, “উপলব্ধি”।

“কেন বাইক ছেড়ে মেয়েটার দিকে হাত বাড়িয়েছিলাম
সেই ব্যাপারটা লক্ষ্য করলাম রাতে ঘুমানোর সময়। আমি কিছুতেই ঘুমাতে পারছিলাম না। বারবার চোখে ভেসে উঠছে সেই ডাগর চোখের মেয়েটার মুখাবয়ব, তার পড়ে যাওয়া, আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দেওয়া, হাত ধরে উঠে আসা, পিচ্চি ছেলেকে চুল টেনে দেওয়া, তারপর মুচকি হাসি, এরপর সাইকেল চালিয়ে মৃদু কদমে সামনে হেঁটে যাওয়া সবটা, সবটা আমার ব্রেইনের আনাচে-কানাচে বিচরণ করতে থাকলো।”

পরবর্তী পৃষ্ঠায় আবার মাঝারি সাইজের হেডলাইন, “অপেক্ষা এবং পুনরায় সাক্ষাৎ”।

“পরের সারাটাদিন আমি কাশবনে বসে থেকেছি কিন্তু সে আসেনি। তারপরদিনও সারা বিকেল বসেছিলাম। সেদিনও সে আসেনি। তারও পরদিন বিকেলে মাঠেই বসেছিলাম। ওখানে একদল ছেলেপিলেরা ক্রিকেট খেলছে। আমি নজর রাখছিলাম তার আসার দিকে। হঠাৎ পিচ্চি ছেলেগুলো আমাকে টেনে নিয়ে গেল। তাদের দলে নাকি দুজন প্লেয়ার শর্ট পড়েছে। আমিও খেলায় মেতে উঠলাম অনেকদিন পর। একটা সময় আমার ড্রিম ছিল জাতীয় দলে খেলার। এখন আর খেলা হয় না। খেলার একপর্যায়ে হঠাৎ মেয়েটা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমি থমকে গিয়ে মুখ ফসকে বলেই ফেললাম, “আরে আপনি?” সে হয়তো ধরে ফেলেছে আমার ব্যাপারটা এই ভয়ে আধমরা হয়ে রইলাম। তারপর খানিক কথা হয়। কথার ফাঁকে জানলাম, ক্রিকেট টিমটাই নাকি তার। মনে মনে ভাবলাম, মিস পিছলাবতী ক্রিকেটও খেলে? বাহ! পিছলাবতীর সাথে তার ভাইও ছিল। সে আমাদেরকে রেখে সাইকেল নিয়ে চলে গেল। তখন আবার এক পিচ্চি আসে মেয়েটার কাছে। আবার সেই আগের দিনের মতো পিচ্চিকে আদর করে মিস পিছলাবতী। চুল এলোমেলো করে দেয়, চুমু খায় কপালে। ওর এই ব্যাপারগুলো আমাকে ভীষন টানছিলো। আমার মনে হয় যারা পিচ্চিদের বেশি ভালোবাসে তাদের মনটাও পিচ্চিদের মতোই হয়৷

সেদিন অনেক কথা হয় তার সাথে। এপর্যায়ে তার নামটা জানা হয় অবশেষে। মিস পিছলাবতীর নাম আরোহী। এজন্যই সে সাইকেলে আরোহণ করতে করতে ধপাস করে পড়ে যেতে ভালোবাসে বোধহয়৷ হাহা! সেদিন সুযোগ বুঝে তার ঠিকানাও নিয়ে নিলাম। যদিও শুধু বাসাটাই দেখিয়েছিলো সে। অজস্র বিল্ডিংয়ের ফাঁকে তার সেই সাদা বিল্ডিং খুঁজে পেতে কি বেগ আমাকে পোহাতে হয়েছে সেটা তো শুধু আমিই জানি।”

এটুকু পড়ে ডায়েরি রেখে দিলাম। আপাতত আর পড়ার সময় নেই৷ তাহাজ্জুদের সময় হয়ে গিয়েছে। তবে পড়ে যা বুঝলাম, এটা আমার ডায়েরীর উল্টোপিঠ৷ আমার অজানা ঘটনাগুলোই এখানে লিখা এবং হারিয়ে যাওয়া খয়েরী মলাটের ডায়েরীর মালিক কে সেটাও আমার কাছে স্পষ্ট। এবার শুধু পুরো ডায়েরিটা পড়ে তাহার অনুভূতিটুকু জানার অপেক্ষায়…

#Be_Continued__In_Sha_Allah ❣️

[ #Note: অ্যাসাইনমেন্টের ফাঁকে অনেক কষ্টে উপন্যাসটা লিখি শুধু আপনাদেরই জন্য৷ পড়ার পর যদি অল্প হলেও নিজেদের মতামতটুকু ব্যক্ত না করেন হতাশ হতে বাধ্য হই, লেখার আগ্রহই হারিয়ে ফেলি মাঝেমধ্যে। আমি যেমন আপনাদের কথা ভেবে শত ব্যস্ততার ফাঁকেও লিখছি তেমনই আপনাদেরও কি উচিত না আমাকে উৎসাহ প্রদান করা? 💔]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here