অজানা পর্ব-১০

0
1097

#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–১০

“থাকবো না এই বাড়িতে, যে বাড়িতে আমার কথার কোনো দাম নেই আমার মনমত চলতে পারবো না সেখানে থাকবো না। আমি চলে যাবো তারপর দেখবো মি. খবিশ তুমি কার ওপর নিজের মর্জি খাটাও হুহ! আমি চলে গেলে আব্বু আম্মু কাকা কাকিমনি সবাই তোমায় ঝাড়বে আমার ভাবতেই ভালো লাগছে। একেবারে দারুন বুদ্ধি! আহ রিবা তুই এত বুদ্ধিমতী কবে হলি রে?”

আরিবা নিজে নিজেই এসব বলছে আর নিজেকে বাহবা দিচ্ছে। আবার ঠোঁট উলটে গালে হাত দিয়ে বললো।

“কিন্তু পালাবো কি করে? বডিগার্ড রা আছে তো? সমস্যা নাই সন্ধ্যায় পালাবো। ইয়েস! বেলকনি দিয়ে পালাবো।”

এসব ভেবেই খুশিতে আরিবা খাটের উপর উরাধুরা লাফাচ্ছে আর গান গাইছে।

” আমার মনেরই অঙ্গনে
সুখের ফাগুন এলো বুঝি।
এই হঠাৎ পাওয়া সুখটাকে
সারাটা দিন খুঁজি,
সুখের ফাগুন এলো বুঝি।

এটুকু গেয়েই আরিবা থামলো। ভাবলো নাহ এই গান তো তার নাচের সাথে যাচ্ছে না অন্য গান লাগবে কি গান? হ্যা পেয়েছি বলেই আবার নাচ শুরু করলো আর গাইতে লাগলো।

নাচ দেখতে এলো সব জুয়ান বুড়া
হায় হায় জুয়ান বুড়া।
সুন্দরী রিবা নাচে কোমর ধুলাইয়া।
আমার হাসিতে কয় আমি ঐশীরিয়া।
সুন্দরী রিবা নাচে কোমর ধুলাইয়া।

“স্টপ দিস ননসেন্স!”

হঠাৎ কারো রাগে ভয় পেয়ে গেলো আরিবা। সামনে তাকিয়ে আরশ কে দেখে থেমে গেলো। ভাবলো খটাশটা তো এখনি গেলো। আবার আসলো কেনো? তাকিয়ে দেখলো আরশ এ্যাশ কালার টি-শার্ট চেন্জ কালো শার্ট পড়েছে। ফর্সা শরীরে কালো শার্টটা খুব মানিয়েছে। ওকে সব কালারেই মানায় তবে কালো সাদা নেভি ব্লু রংয়ে বেশি মানায়। তখন চোখ ফেরানো যায়না। কালো সিল্ক চুলগুলো বাতাসে উড়ছে দেখতে দারুন লাগছে আরিবার কাছে।

“এই তুই কোন লেভেলের বলদ আমারে বলতো? এটা গান? তোর গান শুনে তো আমার ২নাম্বার চাপছে।”

আরশের কথায় আরিবা ভাবনা থেকে বের হলো। ওর কথা শুনে আরিবার বমি পেয়ে গেলো। আরশের থেকে এর বেশি কিছু আশা করা যায়না। কাকে নিয়ে ভাবছে ও? এই লোকটা সুন্দর হলেই কি? এর ব্যবহার সুন্দর না। কথায় আছে ব্যবহারেই মানুষের আসল সৌন্দর্য। আরিবা বিরক্তি নিয়ে খাটে বসে পড়লো। এই ছেলে মানেই উল্টো পাল্টা কাজ আর আরিবাকে পঁচানো। এ ছাড়া কিছুই জানেনা।

“কিরে? তোকে না পড়তে বসতে বলছি? পড়া লেখা বাদ দিয়ে লাফাছ কেনো? কার বিয়ে?”

“তোমার!”

“আমার বিয়েতে আমি নিজেই নাচবো তোকে নাচতে হবেনা। তুইতো শুধু কাদবি!”

“কেনো? আমি কাঁদবো কেনো?”

“ছোট মানুষের এত কিছু জানতে হয়না। পরিসংখ্যানের সব অংকগুলো কর। আমি কলেজ থেকে এসে ধরবো। না পারলে কি হবে তা নাই বা বললাম।”

আরিবা কিছুই বললো না ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে টেবিলে বসলো। মনে মনে বলছে মি. খবিশ যা হুকুম করার আজেই করে নেও কাল পাবেনা হুহ! আরিবার ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখে আরশের খটকা লাগলো। এত ভালো ভাবে কথা শোনার মেয়ে তো আরিবা না। কিছু তো গরবর আছে। আরশ কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো। আরিবা আড়চোখে দেখলো সত্যি সত্যি গেছে কিনা। আরশ যেতেই আরিবা টেবিল থেকে উঠে পড়লো। ধিনাক ধিনাক নেচে দরজা লক করে দিলো। নিজের আলমারি খুলে ড্রেস বের করছে। চুজ করতে করতে আরশকে বকতে লাগলো।

“শালা শয়তানের মামাতো ভাই! আমার গায়ে হাত দেয়া তাইনা? আজ প্রযন্ত আমার বাবা হাত তোলাতো দূরে একটু রাগ করেও কথা বলেনি আর তুই আমায় মারছোছ? এই জান্নাতুল ফেরদৌস আরিবা চৌধুরীকে মারছোছ? তোকে এর মজা বুঝিয়েই ছাড়বো। হুহ!”

আরিবা পছন্দের সব ড্রেস প্যাকিং করছে আর এসব বলছে। সাজগোজ করার জিনিস নিজের জুতো এটা সেটা সব নিচ্ছে। শেষে মনে হলো সে তার পুতুল ট্যাডিবিয়ার সাথে নেয়নি। অবশেষে মনে হতেই ওগুলো নিয়ে নিলো। প্যাকিং শেষ হতেই সে খাটে বসতে নিলো কিন্তু বসবে কোথায়? পুরো খাট জুড়ে শুধু প্যাকেট আর প্যাকেট। আরিবা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। নিজেকেই বকতে লাগলো।

“আরে রিবা তুই সত্যিই বোকা! এগুলো নিতেই তো ২টা গাড়ি লাগবে তাহলে পালাবি কিভাবে? থাক আজ বরং পালাই পরে আস্তে আস্তে চুরি করে সব নিয়ে যাবো। দরুন আইডিয়া! এখন বরং নিচে যাই একটু ঘুরে দেখি কাল থেকে তো দেখতে পারবোনা।”

—————————–

কলেজে পৌছাতেই বেশিরভাগ মেয়েরা আরশের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন স্মার্ট ছেলে খুব কমেই আছে। আরশ বাইকটা সাইডে রেখে নেমে পড়লো। চোখের সানগ্লাসটা শার্টের সাথে ঝুলিয়ে কলেজের ভিতরে প্রবশ করলো। তাকে ডুকতে দেখেই তৃনা দৌড়ে এলো। তৃনা কাছে এসেই বললো।

“আরশ কেমন আছো? এত দেরি হলো কেনো? কোনো প্রবলেম হয়েছিল?”

তৃনার এমন ঢং লাগানো হেলেদুলে কথায় আরশের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। কপাল কুচকে তৃনার দিকে তাকালো। এমন গায়ে পড়া স্বভাবের মেয়েদের আরশ সহ্য করতে পারেনা। মেয়েরা কোনো বেহায়া হবে? তারা কেনো ছেলেদের গায়ে ঢলে পড়বে? তারা তো থাকবে ছেলেদের থেকে দূরে। আরশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই তৃনা আরশের একদম কাছাকাছি চলে আসলো। আরশের গায়ে হাত রাখে বললো।

” ব্লাক কালারে তোমায় অনেক সুন্দর লাগছে।”

আরশের মেজাজ এখন আকাশচুম্বী। হাতটা ঝাড়া মেরে ফেলে সামনে চলে গেলো। এই মেয়ের সাথে কথা বলা না বলা সমান। সবাইকে বুঝিয়ে বলার পর দূরে চলে যায় কিন্তু এ বেহায়ার মতো চিপকে আছে। আরশ বিরক্তি নিয়ে ওর বন্ধুদের দিকে এগিয়ে গেলো। গিয়েই জিসানের পিঠে ধীরিম করে এক কিল বসিয়ে দিল। জিসান পিঠ ডলতে ডলতে বললো।

“ধুর শালা মারোছ কেন? আমি কি করছি?”

“এই শাহিন! একে বলে দে আমার কোনো বোন নেই!”

“বোন নেই মানে? কস কি বেটা? ওই যে তোর চাচাতো বোন আছে না!”

আরশ আবারও জিসানকে একটা ঘুষি দিয়ে বললো।

“এরে মামু! ওটা শুধু আমারই বুঝলে? নজর দিলেও চোখ তুলে ফেলবো।”

জিসান একটা ভেংচি কাটলো। শাহিন হাসতে হাসতে বললো।

“তোরা একজনকে নিয়ে মারামারি কর আমি দেখি। দরকার পড়লে ছাড়াবে প্রমিজ ভাই”

আরশ আর জিসান রেগে শাহিনের দিকে তাকিয়ে আছে। শাহীন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে হাসলো। ওরা দুজন মিলে দিলো শাহীনকে এক গন ধোলাই। শাহীন নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বললো।

“আরে ইয়ার! আমি কি করছি? আমি তো বলছি মাইর ছাড়াবো।”

“আচ্ছা ছাড়া কে নিষেধ করছে এই যে আমরা মারছি তুই ছাড়া! কি বলোছ জিসান?”

“হুম”

আরশের কথায় জিসান মাথা দুলিয়ে তাল মেলালো। শাহীন রেগে বললো।

“ধুর! তোদের মারামারির কথা বলছি।”

আরশ কপাল কুচকে বললো।

“এই তুইকি বন্ধু নাকি শত্রু রে?”

“বন্ধু”

শাহীনের নির্দ্বিধায় বলা কথাটা শুনে জিসান চুইংগাম চিবাতে চিবাতে বললো।

“আমার তো মনে হয় শত্রু! আচ্ছা শাহীন তোর প্রেমিকার খবর কি?”

“আর খবর! পাশের বাসার মেয়েটার প্রেমে পড়ে লাভ হলো না ইয়ার! ভাবছি পাশাপাশি বাসা সারাদিন দেখা হবে প্রেম হবে বাট মেয়েটাতো রাজি হচ্ছে না।”

আরশ মুচকি হেসে বললো।

“এটাই ভালো, কষ্ট করে পেলে মজা থাকে দোস্ত! তাছাড়া এই তৃনার মতো চিপকু না হওয়াই ভালো। এইসব মেয়েরা হাজার প্রেম করে ভাই!”

জিসান মন খারাপ করে চলে গেলো। ওর যাওয়ার পানে আরশ আর শাহীন অবাক হয়ে তাকালো। আরশ শাহীনের দিকে তাকিয়ে বললো।

“এর আবার কি হলো?”

“জানিনা!

“চল গিয়ে জিজ্ঞাসা করি!”

ছোট্ট করে কথাটা বলে সামনে আগালো আরশ। ওর সাথে সাথে শাহীনও সমান তালে পা চালালো।

——————————

“কিরে আরশ না তোকে পড়তে দিয়ে গেছে? পড়া রেখে নিচে কেনো?”

নিচ তলায় নামতেই এমন কথা শুনে দাড়িয়ে পড়লো আরিবা। বিরক্তি নিয়ে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো।

“হ্যাঁ দিয়ে গেছে বাট আমার পড়তে ভালো লাগছেনা।”

“এজন্যই তো আরশের বকা শোনোছ, মাইর খাছ। নিজে ভুল করোছ আর আরশ মারলেই ওর দোষ তাইনা?”

আরিবা কপাল কুচকে মেজাজ খারাপ করে দাড়িয়ে আছে। মিসেস তারিন এগিয়ে এসে বললো।

“আন্জু থামতো! আরশ একটু বেশি বেশি করে।”

আরিবা ওর কাকিমনির দিকে এগিয়ে গাল ফুলিয়ে বললো।

“তুমি একটু বুঝাও এই মহিলাকে। আচ্ছা কাকিমনি এই মহিলাকি আমার নিজের আম্মু নাকি আব্বু কোথা থেকে একে কু্রিয়ে আনছে?”

মিসেস তারিন অসহায় দৃষ্টিতে আঞ্জুমানের দিকে তাকালো। মিসেস আঞ্জুমান কথা না বলে টলমলে চোখে চলে গেলো। আরিবা বোকা বনে গেলো। সে তো দুষ্টামি করছে এতে রাগ হওয়ার কি আছে? আগেতো রাগ করতো না আজ কি হলো। মিসেস তারিনের দিকে বোকা দৃষ্টিতে তাকাতেই তিনি বললেন।

” এমনি ওই যে আরশ তোকে মারছে সেটাই ওর মনে পড়েছে। ও তো কখনও তোকে মারেনি। যতই আরশকে ভালো পাক তোর থেকে বেশি পায়না মনে রাখবি!”

আরিবা মুচকি হেসে ওর কাকিমনিকে জড়িয়ে ধরলো। তিনি আরিবাকে ছাড়াতে ছাড়াতে বললেন।

“রুমে গিয়ে পড়তে বস! নাহয় আবার আরশ ক্ষেপে যাবে। তুই পড় আমি তোর প্রিয় বিরিয়ানী রান্না করে আনছি।”

“সত্যি! ”

“হুম! আচ্ছা শোন যাওয়ার সময় তোর মায়ের রুম দিয়ে যাইছ। মানে রাগটা ভাঙ্গিয়ে যাইছ!”

“আচ্ছা”

কতাটা বলেই আরিবা ওর মায়ের কাছে চললো। ওর মায়ের রুমের ডুকবে তার আগেই একটা কথা শুনে থমকে গেলো ও। অবাক হয়ে ভাবলো কি বলছে এসব ওর মা?

ইনশাআল্লাহ চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here