অজানা পর্ব-১১

0
839

#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–১১

” ‘তুমি কি সত্যি আমার আম্মু?’ রিবার মুখে এ প্রশ্ন শোনার আগে তুমি আমার মরন দিও খোদা।”

দরজার কাছ থেকে একথা শুনতেই চমকে উঠলো আরিবা। কি বলছে এসব ওর আম্মু?

“আম্মু”

আরিবার ডাক শুনে চমকে ওঠলো ওর মা। আরিবা সব শুনে ফেলেনি তো? তাহলে উনি কি করবেন? কিভাবে সামলাবেন নিজের মেয়েকে? এসব ভেবেই তার আত্মা কেঁপে উঠলো। আরিবা এবার রুমের ভিতরে প্রবেশ করলো। তার ঠিক পিছনে দাড়িয়ে আবারও ডাকলো। অগত্যা মিসেস আঞ্জুমান ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকালেন। মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলেন। আরিবা রাগি চোখে তাকিয়ে আছে। তিনি ভয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন।

“তুই এখানে? কখন আসলি?”

“আমি যখন আসি তাতে তোমার কি? তুমি এসব কি বলছিলে?”

আরিবার রাগি গলায় এমন কথা শুনে চমকে গেলেন তিনি। ভাবলেন এবার তিনি কি করবেন? আরিবা কি সব শুনে ফেলেছে? কি জবাব দিবেন তিনি? আমতা আমতা করে এদিক ওদিক তাকালেন। আরিবাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরিবা ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বললো।

“আম্মু তুমি এসব কি বলো? তুমি জানো না আমি মজা করি? আমি তো জানি তুমি আমাকে সবার থেকে বেশি ভালোবাসো। আমার ভালো চাও বলেই বকো। আবার আমার কিছু হলে তুমিই তো কান্নাকাটি করে সব এক জায়গায় জড়ো করো।”

মিসেস আঞ্জুমান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। মনে হচ্ছে তার বুক থেকে বড় একটা পাথর নেমে গেছে। তিনিও মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন। আরিবা আহ্লাদি কন্ঠে গাল ফুলিয়ে বললো।

“তুমি মরে গেলে আমি কি করে থাকবো? তুমি তো জানো আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারিনা। আর কখনো এমন কথা বলবেনা। এই আমাকে ছুঁয়ে প্রমিজ করো?”

“প্রমিজ!”

মিসেস আঞ্জুমান মেয়ের হাতে হাত রেখে প্রমিজ করলেন। আরিবা হেসে ফেললো। ওকে হাসতে দেখে মিসেস আঞ্জুমান বললেন।

“৩২ পাটি দাঁত পরে বের করিছ। এখন পড়তে যা। নাহয় বিরিয়ানী পাবিনা!”

“আম্মু পরে যা…”

“পরে যাওয়া লাগবেনা এখুনি যা!”

আরিবা গাল ফুলিয়ে চলে গেলো। মুচকি হেসে মিসেস আঞ্জুমানও ওর পিছে পিছে রান্না ঘরে দিকে গেলেন।

———————————-

“কিরে ওভাবে রেগে চলে আসলি যে?”

জিসানের পাশে বসতে বসতে একথা বললো আরশ। এ কথা শুনে কিছুই বললো না জিসান। শাহীন আরেক পাশে বসে ওকে শুরশুরি দিতে লাগলো। কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালোনা জিসান। মাথা নিচু করে ক্লাসে বসে রইলো। আরশ ওর পিঠে একটা চাপড় মেরে ভ্রু কুঁচকে বললো।

” তৃনাকে নিয়ে বলার পরেই চলে এলি, কোনো প্রবলেম? ওকে পছন্দ টছন্দ করোছ নাকি?”

“হুরর! কি যে বলোছ জগতে কি মেয়ের ঠাডা পরছে যে ওর মতো ক্যারেক্টারলেস মেয়েকে পছন্দ করবো?”

জিসান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কথাগুলো বললো। ওর কথা শুনে আরশ কিছুই বললোনা। শাহীন ওর সাথে তাল মিলিয়ে বললো।

“হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলছোছ। ও তো আস্ত বাজে মাইয়া। আমি জানি আমার বন্ধু ওমন মেয়ের প্রেমে স্বপ্নেও পরবেনা।”

আরশ শাহীনের দিকে তাকালো। চোখের ইশারায় জিজ্ঞাসা করলো ও কিছু জানে কিনা? শাহীন ঠোঁট উল্টালো। ঘাড় বাকিয়ে বুঝালো ও কিছুই জানেনা। আরশ আর কথা বাড়ালো না, বই পড়ায় মন দিলো।

————————

দুপুর ১.৩০। আরিবা সিড়ি দিয়ে দৌড়ে নিচে নামলো। নামতেই সোফায় বসা আরশকে দেখলো। অগত্যা ও থেমে গেলো। ভাবলো এবার কি হবে? ভাবছিলো আরশ বাসায় নেই এই ফাঁকে খুব মজা করে বিরিয়ানী খাবে কিন্তু তা আর হলো কই? মন খারাপ করে চেয়ারে বসে পড়লো। আরশ সোফায় বসে ফোনে কিছু একটা করছে। ফোনের দিকে নজর থাকলেও আড় চোখে আরিবাকে দেখছে। কিন্তু এমন ভাব করছে মনে হয় ফোনে ওর গুরুত্বপূর্ন কাজ আছে। পৃথিবীর অন্য কিছুতে ওর মন নাই। আরিবা টেবিলে বসতেই ওর কাকিমনি ওকে বিরিয়ানী দিলো। আরিবা আরশের দিকে আড় চোখে একবার তাকিয়ে খাবার মুখে তুলতে লাগলো।

“তুই কি ভুলে গেছোছ? বিরিয়ানী আমাকে খাইয়ে না দিয়ে তোর খাওয়া হারাম?”

একথা শুনেই আরিবা প্লেটে খাবার রেখে দিলো। এতক্ষণ এই ভয়েই ছিল। যখন থেকে ও বড় হইছো ওইদিন থেকেই বিরিয়ানী রান্না করলে আগে আরশকে খাইয়ে দিতে হয়। ওকে খাওয়াতে খাওয়াতে নিজেরেই পেট ভরে যায় পরে আর তৃপ্তি করে খেতে পারেনা। ও বুঝেনা আরশ কেনো এমন করে? আরশ তো জানে বিরিয়ানী ওর কত পছন্দ তবুও এমন করে। আগে আরিবার এত খারাপ লাগতোনা কিন্তু আজ খুব খারাপ লাগছে। সকালে মারলো এখন আবার এমন করে। একটু দয়া দেখালে কি হতো? ও তো আজ এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। আরিবা মন খারাপ করে আরশের দিকে তাকালো। আরশ এখনও ফোনে ব্যস্ত। আরিবা মন খারাপ করে হাত দিয়ে প্লেটটা ঢেলে দিল। হাত ধুয়ে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে উপরে চলে গেলো। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আরশ বিস্ময়ের শেষসীমানায় পৌঁছে গেছে। কি হলো এটা? আরিবা কাঁদছে? আরিবার কান্না দেখেই ও অস্থির হয়ে উঠলো। ও তো আরিবাকে কষ্ট দিতে চায়নি। ওর মা কাকিমনির দিকে তাকিয়ে অস্থির হয়ে বললো।

“কি হলো এটা? আজ কাঁদলো কেনো? এমন তো কখনো করেনা। দোখছো রিবা কাঁদছে? আমি কি বেশি কষ্ট দিছি ওকে বলো? শুধু ওর হাতে খেতে চাইছি। এটা কি দোষের কিছু বলো কাকিমনি?”

“সকালে মেরেছিলি এখন আবার এমন করছোছ তাই।”

আহত দৃষ্টিতে ওর কাকিমনির দিকে তাকালো আরশ।সকালের কথা মনে পড়তেই ওর হৃদয় কেঁপে উঠলো। কেনো যে ও নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারেনা বুঝেনা। নিজের চুল মুঠ করে ধরে সোফা থেকে দাড়িয়ে গেলো। মিসেস তারিন ছেলের এমন অস্থিরতা দেখে ওর দিকে এগিয়ে আসলেন। ছেলেকে ধরে সোফায় বসালেন। অগত্যা ওর পিঠে হাত রেখে বললেন।

“বাবা শান্ত হ! তোর বুঝতে হবে আরিবা এখন ছোট নেই। আগের মতো তোর সব মর্জি মেনে নিবেনা। এখন হালকা কিছু হলেই রেগে যাবে। অভিমান করবে আবার তোর সাথে তর্কও করবে। বড় হওয়ার সাথে সাথে মানুষ বদলায়। আরিবাও বদলেছে। তুই নিজেকে একটু বদলা বাবা!”

আরশ মায়ের দিকে ভগ্নহৃদয়ে তাকালো। হতাশ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বললো।

“মা আমিতো ওর সাথে এসবেই অভস্ত। ওর সাথে এমন না করলে আমার ভালোলাগে না। মরা মরা লাগে। ওর রাগ না দেখলে আমার ভালোলাগে না। তাইতো ওর সাথে এমন করি।”

“যেগুলো তে রাগ করে সেটাই করবি। যেগুলো তো কষ্ট পেতে পারে সেগুলো করবি না। শোন মাঝে মাঝে ওকে তো ঘুরিয়ে আনতে পারোছ। ও তো ঘুরতে খুব ভালোবাসে।”

কথাগুলো বলতে বলতে মিসেস আঞ্জুমান আরশের পাশে এসে বসলো। আরশ ওর কাকিমনির দিকে তাকিয়ে বললো।

“নিতে তো পারি কিন্তু ছেলেরা বাজে চোখে ওকে দেখে আমার ভালো লাগেনা।

“তুই আছোছ কি করতে?”

নিজের মায়ের কথা শুনে হতাশ হলো আরশ। আহত দৃষ্টিতে বললো।

“আম্মু! আমি কয়জন কে আটকাবো? সবার চোখে কি পট্টি বেঁধে দেব?”

“দরকার পড়লে দিবি। যেহেতু খারাপ লাগে সেহেতু দিবি। মায়ের দিকে কেউ তাকালে কখনও খারাপ লাগছে? বুঝলি আন্জু! সব দরদ বউয়ের জন্য। আমাকে কদিন পর চিনবেই না।”

অসহায় ভাব নিয়ে কথাটা বললেন মিসেস তারিন। মিসেস আঞ্জুমান মুচকি মুচকি হাসছে। আরশ কিছু না বলেই গটগট করে চলে গেলো।

বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে আরিবা। সামনে রোডের দিকে তার স্হীর দৃষ্টি। বিরিয়ানী খেতে পারেনি বলে বড্ড খারাপ লাগছে ওর। কেনো যে রাগ করে চলে আসলো? কেউতো ওকে ডাকতেও এলোনা। সবাই কি ওরে রেখেই সব শেষ করে ফেলছে? ধুর! আমি আসলেই বোকা কেনো যে রাগ করতে গেলাম। এখন আমও গেলো ছালাও গেলো। এসব ভেবে রাগে দুঃখে কান্না চলে এলো আরিবার। চোখটা মুছে সামনে তাকিয়ে রাইলো। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ ওর চোখ ধরতেই চমকে উঠলো। পরক্ষনেই বুঝে ফেললো এটা আরশ। রাগ ওর চরম মাত্রায় বেড়ে গেছে। হাত ছুটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। অনেকক্ষন ধস্তাধস্তির পর আরশ ওর চোখ ছেড়ে দিলো। আরিবা গাল ফুলিয়ে আছে। ওর দিকে তাকাতেই বুকটা কেঁপে উঠলো আরশের। তার মায়াপরীর চোখ দুটো লাল ফোলা ফোলা। তারমানে ও অনেক কাঁদছে। ওর মায়াপরীকে ও খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। “একটু অপেক্ষা করো মায়াপরী। যতটা কষ্ট দিয়েছি তার থেকে বেশি ভালোবাসা দিব জাস্ট ওয়েট।” মনে মনে এসব বলছে আর মুচকি হাসছে। আরিবাকে অনুসরণ করে সামনে তাকিয়ে বললো।

“একজনের জন্য সারপ্রাইজ আছে সে কি তা গ্রহন করবে?”

আরিবা গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো।

“এহহ! আমার বিরিয়ানী খেয়ে এখন সারপ্রাইজ দিতে আসছে। আমার লাগবে না এমন সারপ্রাইজ।”

কথাটা বলেই আরিবা চলে যেতে উদ্যত হলো। অগত্যা আরশ ওর হত ধরে নিজের সামনে দাড় করালো। আরিবার কাঁধের উপর দুহাত দিয়ে দাঁড়ালো। আরিবা অবাক চোখে দেখছে। কি হচ্ছে এসব? আজ এর কি হলো? আরিবার ভাবনার মাঝেই আরশ ওর দিকে হালকা ঝুঁকে বললো।

“কিরে ভাবনারানী কি ভাবোছ? চুপচাপ রেডি হয়ে নে বাইরে লাঞ্চ করবো আজকে। তারপর পুরো বিকাল ঘুরবো। খাটের উপর যে ড্রসটা রাখা আছে ওটাই পড়বি!”

আরিবা অবাক চোখে তাকালো। পরক্ষনেই লাফিয়ে উঠলো। আরশ অবাক চোখে দেখছে। এ নাকি রাগ করছিলো? কোথায় রাগ? সত্যি মেয়েটা অবুঝ। আরশের ভাবনার মাঝেই আরিবা নাচতে নাচতে চলে গেলো। খাটের উপর রাখা ড্রেসের দিকে তাকিয়ে আরিবা অবাক হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবলো এই ড্রেস কি করে পড়ে যাবে ও?

ইনশাআল্লাহ চলবে….

(রি-চেইক করিনি ভুল হতে পারে। বুঝে নিবেন গাইস্ হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here