#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–১২
রেস্টুরেন্টে বিরক্তি নিয়ে বসে আছে আরিবা। নিজেকে ভীনগ্রহের প্রানী মনে হচ্ছে ওর। কেননা আসার সময় বেশির ভাগ মানুষ আড় চোখে দেখছিলো। রেস্টুরেন্ট টা আরশ একাই বুক করেছে। কোনো মানুষ থাকতে পারবে না। আরিবা বুঝেনা এমন করার কি দরকার ছিলো? মানুষ না থাকলে ভালো লাগে? এখন একা একা বোর হচ্ছে। আর আরশ যে এসেই ওয়াশরুমে গেলো আর আসার নামেই নিচ্ছে না। এই ওয়াস্টোন ড্রেস পড়ে থাকতে ভালো লাগেনা আরিবার। ও হাল্কা পাতলা ড্রেস পড়তে ভালোবাসে কিন্তু আরশ ওকে এটা পরেই আনবে। বিছানা উপর কালো কালারের উপর সাদা ওয়াস্টোন বসানো গাউন দেখে ওর মাথা ঘোরার উপক্রম। সাথে ম্যাচিং হিজাব। এসব ড্রেস পড়লে এগুলো ধরে রাখা লাগে। দৌড়াদৌড়ি, মজা এসব করে কখন? ও পড়তে চায়না এই ড্রেস। অগত্যা আরশের বকাবকি ফ্রি পেলো। সাথে ওর মাও বকলো। রুমে এসে বলছিলো “এই তুই ভিক্ষুকের মেয়ে? এমন ড্রেস পড়োছ মানুষ তো তোকে ভিখারীর মেয়ে বলবে। এই যুগে তারাও গোরজিয়াস্ ড্রেস পরে বুঝলি?” তারপর আরিবা আর কিছুই বলেনি ঠোঁট উল্টে ড্রেসটা পড়ে এলো। আয়নার সামনে দাড়িয়ে ও নিজেকেই চিনতে পারলোনা। কি সুন্দর লাগছে তাকে। মা সত্যি বলছে আসলেই ওই ড্রেসে ভিখারী লাগে কিন্তু এসব ভারি ড্রেস পড়া বিরক্তকর।
“আজ থেকে রুলস চেঞ্জ?”
চেয়ারে বসতে বসতে একথা বললো আরশ। ওর কথা শুনে ধ্যান ভাঙ্গলো আরিবার। না বুঝে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো। ভাবলো কিসের রুলসের কথা বলছে আরশ? অনেক ভেবেও যখন পেলোনা অগত্যা আরশেকেই জিজ্ঞাসা করলো।
“কিসের রুলসের কথা বলো ভাইয়া?”
“ওই যে আগে আমায় খাইয়ে দিয়ে পরে তুই খাইতি। এখন থেকে আগে আমি তোকে খাইয়ে দিবো পরে তুই আমায় খাইয়ে দিবি। ওকে? আবার খাওয়া হলে এটা ওটা অজুহাত দিতে পারবি না। গট ইট!”
আরিবা ঘাড় বাকিয়ে হ্যাঁ বললো। আরশ মুচকি হেসে ওকে খাওয়াতে লাগলো। সে জানেনা তার মনে কতটা শান্তি লাগছে। কিন্তু ওর মনে হচ্ছে ও খুব সুখে আছে। পৃথিবীর সব থেকে সুখি ও। চোখ তুলে আরিবার দিকে তাকালো ও। একটা হাস্যোজ্জল প্রানবন্ত মেয়ে বসে আছে। যার হাসি পুরো মুখে আচড়ে পড়ছে। আরশ চায়না এই ঘায়েল করা হাসি কেউ দেখুক। সে একা দেখবে। লুকিয়ে রাগবে স্বংগোপনে।
“ভাইয়া! এই ভাইয়া!”
“হ্যাঁ হ্যাঁ”
থতমত খেয়ে ভাবনা থেকে বের হলো আরশ। তাড়াতাড়ি করে কথাটা বললো। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে বললো।
“ডাকোছ কেনো?”
“কি ভাবো হুম? আমার মুখের খাবার শেষ সেই কবে আর তুমি দিচ্ছোই না। ডেকেও সাড়া পাইনা কই গেছিলা!”
ভ্রু কুচকে কথাগুলো বললো আরিবা। আরশ কিছুই বললো না। আমতা আমতা করে খাইয়ে দিতে লাগলো। আরিবার দিকে চোখ যেতেই দেখলো আরিবা ঘেমে একাকার। সরু নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। এই দুপুরে কড়া রোদের কিরন এসে নাকের ডগা থেকে আলোক রশ্মি বিচ্ছুরিত হচ্ছে। পুরো গাল জুড়ে ছড়াচ্ছে লাল আভা। এতেই ওর মায়াপরীকে সৌন্দেয্যের এক অন্যন্যা লাগছে। আরশ ভাবলো মেয়েটা সাজে না কেনো? এই পাতলা ঠোঁটে হালকা পিংক লিপস্টিক আর ওই ঘন কালো মায়াবী চোখে একটু কাজল দিলে, না জানি আরও কত ভালো লাগতো। ভেবেই পাগল হয়ে যাচ্ছে ও। বাস্তবে সাজলে কত সুন্দর লাগবে আল্লাহ জানে। এমনিতেই তো ঘায়েল হয়ে যায় সাজলে তো আরও। আরিবার ফর্সা শরীরে কালো ড্রেসটা খুব মানিয়েছে। প্রথম যখন এই ড্রেস পড়ে সামনে আসছিলো ও তো পুরা স্বপ্নের জগতে চলে গেছিলো। যেখান থেকে ওর বের হতে ইচ্ছে করছিলো না। আরিবা ভারি ড্রেস মাঝে মাঝে পড়ে তবে এই ড্রেসটার মতো সুন্দর কোনোটাতেই লাগেনি। কালোর মাঝে ফর্সা ফেজ টা যেনো চাঁদের মতো ঝকমক করছে।
“ভাইয়া প্লেট দাও! তোমার খাওয়ানো লাগবেনা।”
থতমত খেয়ে গেলো আরশ। অবাক হয়ে বললো।
“কেনো আবার কি করছি?”
“কি করোনি সেটাই বলো? সেই যে আধা ঘন্টা আগে মুখে একটুখানি বিরিয়ানী দিয়েছিলা আর দেওয়ার নাম নেই। এখন আমার ওগুলো হজম হয়ে ওয়াশরুমেও চলে গেছে কিন্তু মুখে খাবার দেওয়ার নাম নেই তোমার। এভাবে কয়দিনে খাওয়াবে ভাইয়া?”
“সাধে কি তোকে বলদ বলি? এজন্যই তো বলি। আরে আস্তে আস্তে খেলে অনেক খেতে পারবি। আমি খাওয়াবো আর তুই হজম করবি। তোর তো কোনো কাজ নাই এখানে।”
“হ্যাঁ! সারাবছর ধরে খেতেই থাকবো তাইনা?”
রাগ নিয়ে কথাটা বললো আরিবা। তাতে আরশের কিছুই না। সে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে অন্য দিকে তাকালো। ঘাড় দুলিয়ে বললো।
“তা কেনো? দুদিন ধরে তো খেতেই পারোছ!”
আরিবা অবাক হয়ে তাকালো। পরক্ষনেই ভ্রু কুচকে ভাবলো আগেই বোঝা উচিত ছিলো তার। এর সাথে কোথাও গিয়ে শান্তি নাই। এতো শুধু ওকে জালাতন করে। আরিবা রাগি গলায় বললো।
“আমার প্লেট দেও! আমাকে শান্তিতে খেতে দাও!”
“এটা কথা ছিলোনা রিবা! রুলস ইজ রুলস, আমাকে খাইয়ে দিতেই হবে।”
“সেটা পরে। আগে তুমি আমাকে ঠিক মতো খাওয়াও।”
আরশ কথা না বাড়িয়ে আরিবাকে খাওয়াতে লাগলো। খাওয়ার মাঝেই জিজ্ঞাসা করলো।
“খাওয়ার পরে কোথায় ঘুরতে যাবি?”
আরিবা গালে হাত দিয়ে ভাবলো। কিছুক্ষন পর চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বললো।
“নিরিবিলি জায়গায়। যেখানে একা থাকবো।”
আরশ চমকে উঠলো। পরক্ষনেই ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। আরিবার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো।
“একা কেনো? কি মতলব ঘুরছে মনে?”
“একা নিরবিলি বলতে কোনো বড় মাঠে আকাশের নিচে বুঝছো?”
“আচ্ছা!”
কথাটা বলে আরশ খাওয়ানোতে মন দিলো। আরিবার খাওয়া শেষে আরশ কে খাইয়ে দিলো। আরশ কিছুই বলেনি শুধু চুপটি করে তার মায়াপরীর হাতে খাবারের স্বাদ নিয়েছে। আরশ ভাবছে প্রিয়জনের হাতে খাবারের স্বাদ হয়তো সত্যিই আলাদা।
————————–
আরিবা বিশাল মাঠে ঘাসের মধ্যে বসে আছে। অনেক কষ্টে আরশ ওর মন মতো একটা জায়গা খুজে পেয়েছে। আরিবা খোলা আকাশের নিচে বসে মুক্ত নিঃশ্বাস নিচ্ছে। পরক্ষনেই আরশ ২প্লেট ফুচকা নিয়ে হাজির হলো। আরিবার পাশে বসতে বসতে বললো।
“নে রাক্ষসী খা! একটু আগে বিরিয়ানী খেয়ে এলি এখন আবার ফুচকা? বাবা রে! তোর জামাইর কথা ভেবেই আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।”
“কেনো?”
“এই যে! যেই হারে খাওয়া দাওয়া করোছ এতে তো দু মাসেই তোর জামাইকে ভিখারি বানাবি।”
“আমার জামাইর চিন্তা তোমায় করতে হবেনা। সবাই কি তোমার মতো কিপ্টা?”
আরিবা ভেংচি মেরে কথাটা বললো। আরশ ভাব নিয়ে বললো।
“এই আমি কিপ্টামি কই করলাম? জানোছ আমি কত টাকা রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসি? আচ্ছা তুই বিরিয়ানী খেলি এখন আবার দু প্লেট ফুচকা! এসব কই রাখোছ হু?”
আরিবা গাল ফুলিয়ে আরশের দিকে তাকালো। রাগ নিয়ে উঠে চলে আসতে উদ্যত হলো। অগত্যা আরশ পিছন থেকে হাত ধরে জোর করে বসালো। আরিবার সামনে বসেই ফুচকা খেতে লাগলো। আরিবার আর সহ্য হচ্ছে না জিবে জল এসে গেলো। যদি আরশ সব খেয়ে নেয়? এসব ভেবে নিজেও গাপুসগুপুস করে খেতে শুরু করলো। আরশ একনজর তাকিয়ে মুচকি হেসে খাওয়ায় মন দিলো। খাওয়া শেষে ওরা একটু ঘুরাঘুরি করলো। সন্ধ্যা হয়ে আসছে অগত্যা ওরা বাড়ির পথে যাত্রা করলো।
——————————-
মাঝরাতে প্রচন্ড পিপাসায় জেগে গেলো আরিবা। বিরিয়ানী খেয়েছে বলেই তার এই দশা। সন্ধায় বাড়িতে ফিরেই ঘুম দিছে সে। আরশ বলছে পড়া ধরবে সেই ভয়ে আরও বেশি ঘুমাইছে। খাট থেকে নেমে পড়লো আরিবা। পানির গ্লাস হাতে নিতেই থমকে গেলো সে। সেই কান্না? এতদিন পড়ে আবার কেনো? কেউ কি শুনে না? নাকি শুনেও কান দেয় না? স্টোর রুমটা এখন ওর রুমের খুব কাছে। ও ঠিক মতো পড়তে চায়না বলে আরশ ওর রুমের পাশে এনেছে ওকে।এজন্য বোধহয় ও একাই শুনতে পায়। আরিবা আর বসে থাকবেনা। এর রহস্য তাকে বের করতেই হবে। দরজা খুলে সামনে এগিয়ে গেলো। ভয়ে ভয়ে স্টোর রুমের দিকে আগাচ্ছে আর ওর বুক দরফর করছে। তবুও ও থামবে না। এ নিয়ে আর ভাবতে ভালো লাগেনা। স্টোর রুমের সামনে এসে দাড়ালো। পা দুটো কাঁপছে ওর। কি করবে? খুলবে কি খুলবেনা দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছে ও। অবশেষে খুলবে বলেই ঠিক করলো। কেননা ও সিউর ভিতরে কেউ আছে। ও স্পষ্ট কান্না শুনতে পাচ্ছে। পাশে ঝুলানো চাবিটা নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে তালাটা খুলে আস্তে করে ঠেলা দিয়ে দরজাটা খুললো। দরজা খুলতেই ও ভয় পেলো। ভিতরে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার কিছুই দেখা যায়না। কিন্তু কান্নাটা ভিতর থেকেই আসছে। অগত্যা ও ভয়ে ভয়ে সামনে পা বাড়ালো হঠাৎ একটা ভয়ংকর আওয়াজ শুনেতে পেলো। নিজেকে আর স্হীর রাখতে পারলোনা। মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।
ইনশাআল্লাহ চলবে…..
(বিরিয়ানী আর ফুচকার কথা লিখতে গিয়ে আমার নিজেরেই খেতে ইচ্ছা করছে। আর কার কার ইচ্ছা করছে শুনি? আচ্ছা গল্পের পার্ট কি ছোটো হয়? রি-চেইক করিনি। ভুলত্রুটি হতে পারে। কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন! হ্যাপি রিডিং)