#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–১৬
ক্লাস শেষে রুম থেকে বের হচ্ছে আরিবা, নেত্রা, শান্তা, তূর্য ও শাওন। আজ এক দিনেই ওদের তিনজন ফ্রেন্ড হলো। ওরা খুব ভালো, ওদের সাথে খুব মজা হয়েছে। সবাই খুব মিশুক টাইপের। হঠাৎ তৃনা সামনে আসায় হাটার গতি থামিয়ে দিলো ওরা। তমা ওর সামনে দাড়িয়ে রাগ নিয়ে বললো।
“মাফ চা জুঁইয়ের কাছে! (যাকে আরিবা সকালে থাপ্পড় দিয়ে ছিলো।)
আরিবা বুকে হাত বেধে দাঁড়ালো। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো।
“কি বললি? ঠিক বুঝলাম না। আবার বল!”
তমা রেগে জোরে জোরে বললো।
“এক কথা বারবার বলতে ভালো লাগেনা। ভালো ভালোই বলছি মাফ চা।”
আরিবা কানে হাত দিয়ে বললো।
“আস্তে বল! আমি বয়রা না যে শুনবো না। দিলি তো আমার কান শেষ করে।”
“তোকে মাফ চাইতে বলছি। আমি কোনো ঝামেলা চাইনা।”
তৃনার কথায় আরিবার কোনোও হেলদোল হলোনা। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ঘাড় ফিরিয়ে সবার দিকে একবার করে তাকালো। হেসে হাতে তালি দিতে দিতে বললো।
“হাতে তালি দে তোরা! কি সুন্দর কথা! তৃনা কোনোও ঝামেলা চায়না খুব সচেতন নাগরিক।”
ওর কথা শুনে সবাই হাতে তালি দিচ্ছে আর ঠোঁট চেঁপে হাসছে। তৃনা রাগে ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু ওরা বেশি লোক বলে কিছু না বলে রাগ দেখিয়ে চলে গেলো। ওরা হাটতে হাটতে মাঠে চলে আসলো। হঠাৎ করে শান্তা সবাইকে বললো।
“চল দোস্ত সবাই মিলে ফুচকা খেতে যাই।”
ফুচকার কথা শুনেই আরিবা লাফিয়ে উঠলো। তাড়াহুড়া করে বললো।
“যাই মানে কি? চল চল তাড়াতাড়ি যাই!”
সবাই একমত হলো কিন্তু নেত্রা আমতা আমতা করে বললো।
“যাবো ভালো কথা যদি আরশ ভাইয়া শোনে তাহলে কি হবে? তোকে বকবে রিবা!”
আরশ কে তা ওরা বুঝতে না পেরে তাকিয়ে রইলো। আরিবা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো।
“ধুর! রাখ তোর আরশ ভাইয়া। সে তো এমনিতেই আমার দোষ খুজে বের করে। তার ভয়ে কি মজা করবো না? আরে ইয়ার! জীবন তো একটাই।”
কথাটা বলেই আরিবা একটু ভাব নিলো। সবার মাঝ থেকে তূর্য বলে উঠলো।
“আরশ টা আবার কে রে?”
আরিবা বিরক্তি নিয়ে বললো।
“মি. চরিং মাষ্টার!”
সবাই অবাক হয়ে ভ্রু কচকে তাকালো। চরিং আবার কি বা কে সেটাই খুঁজতে লাগলো। অগত্যা খুঁজে না পেয়ে জিজ্ঞাসা করলো। আরিবা কিছুই বললো না।
নেত্রা বললো “ওর চাচাতো ভাই! ”
শাওন ভ্রু কুচকে বললো।
“মি. চরিং মাষ্টার বললো কেনো তাহলে?”
“আরশ ভাইয়া ওকে অনেক আগে ২টা চর মেরেছিলো। পাস্ট টেন্সে ভার্বের পরে ing যোগ হয়। ওকে পাস্টে চর মেরেছে বলে ও চরের সাথে ing যোগ করে চরিং করছো।”
“কি”
সবাই অবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে আছে। কি লজিক বাবা রে! টেন্সে আরিবা খুব পারদর্শী। তূর্য আরিবার দিকে তাকিয়ে বললো।
“বইন! আল্লাহ তোরে বাঁচিয়ে রাখুক। বাংলাদেশকে উল্টাতে তোর মতো ২ জন লোকেই যথেষ্ট। কি লজিক ভাব একবার।”
তূর্য কথা শুনে আরিবা একটু ভাব নিলো। হাত দিয়ে নাকটা ঘষা দিয়ে বললো।
“বুঝতে হবে। একেই বলে লজিক। আমার সাথে দুদিন থাক শিখে যাবি।”
“হুম এমন শিখাই শিখবি যে পাবনা যেতেও হতে পারে। আমার শীঘ্রই যেতে হতে পারে।”
আরিবা গরম চোখে নেত্রার দিকে তাকালো। নেত্রা অন্য দিকে তাকিয়ে বললো।
“চল চল! ফুচকা খেতে যাই।”
অগত্যা আরিবা কিছু না বলে চলে গেলো। সবাই ঠোঁট চেপে হেসে ওর পিছু চললো।
কলেজর পাশে ওরা ফুচকা খাচ্ছে। আরিবাতো খুব মজায় আছে। ওর প্রিয় খাবার পেয়েছে। ২প্লেট শেষ করে আরও ১প্লেট খাচ্ছে। এখানের ফুচকা নাকি খুব মজা। ফুচকা খাচ্ছে আর পাশে সবার সাথে হাসাহাসি করছে। আরিবাকে এত খেতে দেখে শাওন বললো।
“বইন! তুই কি রাক্ষস হায়? এত খেতে পারোছ?”
আরিবা ওর পিঠে একটা চাপড় মেরে বললো।
“টাকা আমার যাবে তাতে তোর বৌয়ের কি?”
শাওন বোকা বনে গেলো। সবাই বলে বাপের কি? আর এ বউকে টেনে আনছে? শাওন কিছুই বললো না। সবাই চুপচাপ খাচ্ছে। হঠাৎ পিছন থেকে একজন বলে উঠলো।
“এখানে কি করোছ?”
একথা শুনে আরিবা পিছনে তাকালো। আরশ রনচণ্ডীরূপ নিয়ে তাকিয়ে আছে। আরিবা ভয় পেলো। কিন্তু ভাবলো মাইর যখন খাবো আগে ফুচকা খেয়েই নেই। তাই ফুচকা খেতে লাগলো। আরশ রেগে বললো।
“তোকে কলেজে ভর্তি করছি কি করতে?”
আরিবা খেতে খেতে বললো।
“পড়া লেখা করতে!”
“তো কি করতাছোছ তুই?”
“পড়া লেখাই করতাছি।
“এগুলো পড়া লেখা? চল! বাড়ি চল!”
আরশ ওকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আরিবা চিল্লিয়ে বললো।
“আরে আমার ফুচকা! আগে ওগুলো শেষ করে নেই তারপর মাইরেন প্লিজ!”
সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। শান্তা জিজ্ঞাসা করলো।
“নেত্রা এই ছেলেটা কে? ওর বয়ফ্রেন্ড?”
“আরশ ভাইয়া। ওর চাচাতো ভাই। ওই যে চরিং মাস্টার। আজ আরিবা শেষ।”
আরিবা জোরে জোরে এটা ওটা বলছে কিন্তু আরশ কিছুই বলছে না। ওকে গাড়িতে বসিয়ে ফুল স্পিডে গাড়ি চালাতে লাগলো। আরিবা এবার ভয় পাচ্ছে। আরশ গম্ভীর মুখে আছে। আজ হয়েছেটা কি? আরিবা কিছু না বলে বাইরে তাকিয়ে রইলো। আরশ রেগে ফেটে যাচ্ছে কিন্তু কিছুই বলছেনা। ও আবার আরিবার গায়ে হাত তোলতে চায়না। এমনিতেই তৃনার ওই কাজে রেগে ছিলো। কলেজে এসে আবার এগুলো দেখলো। আরিবা ছেলেদের সাথে হাসাহাসি করছে দেখেই আরশের মাথা গরম হয়ে গেছে। ওর একটাই কথা ওর মায়াপরী অন্য ছেলেদের সাথে হাসবে কেনো? হাসবে ওর সাথে। ওর মায়াপরীর হাসি শুধু ও একাই দেখবে। অন্য কোনো ছেলেরা দেখতে পারবে না।
আরশ আরিবাকে ড্রয়িংরুমে এনে ধাক্কা মারলো। আরিবা পরতে পরতে সামলে নিলো। মিসেস আঞ্জুমান ও মিসেস তারিন সোফায় বসা ছিলেন। আরশের কাণ্ড দেখে আবাক হয়ে সোফা থেকে দাড়ালেন। আরশ রাগে ফোসফাস করছে। আরিবা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। মিসেস তারিন আরিবার কাছে আসলেন। আরিবাকে ধরে আরশের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন।
“কি হয়েছে? এমন করোছ কেনো? সব সময় মেয়েটার সাথে এমন করোছ। এই স্বভাব বাদ দে!”
আরশ কিছুই বললো না। রাগি চোখে আরিবার দিকে তাকিয়ে আছে। মিসেস আঞ্জুমান আরশের দিকে তাকিয়ে বললেন।
“কি হইছে রে আরশ? ও আবার কি ভুল করলো?”
“তোমার মেয়েকে জিজ্ঞাসা করো কি করেছে ও!”
আরশ রাগি গলায় কথাটা বললো। মিসেস আঞ্জুমান আরিবার কাছে গিয়ে বললো।
“কি করছোছ আজকে?”
“আন্জু চুপ থাক! ওর কথাই হবে? এই তুই বল ও কি করেছে?”
“কলেজে একদিন যেতে না যেতেই নাগর জুটিয়েছে সে। তাও একটা না দুটো। তাদের সাথে ফুচকা খাচ্ছে হাসাহাসি করছে।”
মিসেস আঞ্জুমান ও মিসেস তারিন আবাক হয়ে গেল। মিসেস আঞ্জুমান মেয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো।
“কিরে সত্যি?”
আরিবা কিছু বলছে না চুপ করে মাথা নিচু করে কাঁদছে। আরশ কোন কাজকে কোন কাজ বানিয়ে দিছে তা শুনেই হতবাক। উওর দেওয়ার ভাষাও ভুলে গেছে ও। আরশ আবার রাগি গলায় বললো।
” ও কি বলবে? আমি নিজে চোখে দেখেছি।”
মিসেস তারিন ছেলেকে ধমক দিলেন। আরিবার দিকে তাকিয়ে বললেন।
“আমায় সত্যি করে বলতো কি হইছে?”
আরিবা কেঁদে কেঁদে বললো।
“কাকিমনি ওরা আমার বন্ধু। আজ ৩টা বন্ধু হইছে একটা মেয়ে ২টা ছেলে। ওরা খুব ভালো। আমি একা ফুচকা খেতে যাই নি। সবাই ছিলো নেত্রাও সাথে ছিলো। বিশ্বাস না হলে ওকেই জিজ্ঞাসা করো।”
আরশের মা রাগি চোখে আরশের দিকে তাকালো। ধমক দিয়ে বললো।
” আরিবার নামে মিথ্যা বলে কি লাভ পাছ বলতো? এমন কথা কি করে বললি হুম? তোর মুখে আটকালো না?”
“ও ছেলেদের বন্ধু বানাবে কেনো? ওর কোনো ছেলে বন্ধু থাকবে না ওরে বলে দেও।”
কথাটা বলেই আরশ ঠাসঠুস শব্দ করে সিড়ি দিয়ে উপরে চলে গেলো। আরিবার মা মেয়ের দিকে তাকালেন শান্ত ভাবে বললেন।
“এ কিছুনা তুইতো জানোছ আরশ এমন। তুই উপরে যা! গোসল করে খেতে আয়।”
আরিবা মাথা নিচু করে চলে গেলো। মিসেস আঞ্জুমান ও মিসেস তারিন একে অপরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
———————–
রেস্টুরেন্টে বসে তৃনার জন্য অপেক্ষা করছে আরশ। সাথে জিসান শাওন ও আরশের কিছু বডিগার্ড। শাওন গালে হাত দিয়ে বললো।
“ভাই! কতক্ষণ অপেক্ষা করবো? এই মহিলা হয়তো পার্লারে সাজতে গেছে রে। প্রথম ডেট তো তাই সেজেগুজে আসতে দেরি হচ্ছে।”
জিসান বিরক্তি নিয়ে শাওনের দিকে তাকালো। অগত্যা ওর থেকে চোখ ফিরিয়ে আরশের দিকে তাকালো। বিরক্তি নিয়ে বললো।
” শালা! তুই প্রেম করবি ভালো কথা আমাদের আনলি কেনো? আমরা বসে বসে তোদের রঙ্গলীলা দেখবো?”
আরশ হেসে বললো।
“আগেও বলছি আমার বোন নাই। শোন! প্রেম করতে না। বিয়ে করতে ডাকছি।”
শাওন আর জিসান মজা নিলো। শাওন হেসে বললো।
” মজা করার মুডে নাই। আমি অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছি ভাই। এখন পেট থেকে হাসি বের হয়না।”
আরশ সিরিয়াস হয়ে বললো।
” সত্যি বলছি।”
জিসান চমকে উঠলো। শাওন ক্লান্ত ভাব ছেড়ে সিরিয়াস হয়ে বললো।
” সত্যি! তুই বিয়ে করবি?”
” আমি কি বলছি আমি বিয়ে করবো? আমার তো মায়াপরী আছে।”
জিসান ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করলো।
“তো কে করবে?”
“ওই যে” বলেই আঙুল দিয়ে দেখালো।
আরশের ইশারা অনুসরন করে তাকাতেই ওরা অবাক হয়ে গেলো।
ইনশাআল্লাহ চলবে……
(রি-চেইক করিনি ভুলত্রুটি হতে পারে। বুঝে নিবেন প্লিজ। কেমন হইছে জানাবেন। হ্যাপি রিডিং)