অজানা পর্ব-১৭

0
839

#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–১৭

অবাস্তব বিষয় শুনলে বা দেখলে মানুষ সবসময় আশ্চর্য হয়। আশ্চর্যটা যখন আকাশচুম্বী হয় তখন তারা কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে। থম মেরে বসে থাকাই তখন তাদের প্রধান কাজ হয়। জিসান ও শাওনের সেই অবস্থাই হয়েছে। ওদের আশ্চর্যটা আকাশচুম্বী। যা এই পৃথিবীতে কখনও হয়নি আরশ তা দেখিয়েছে। তখন থেকে জিসান ও শাওন গালে হাত দিয়ে থম বসে আছে। ওদের ভাবনায় শুধু একটা জিনিসেই ঘুরছে। কি বলে আরশ? এদের সাথে তৃনার বিয়ে হবে? কি করে হবে সেই সমাধান খুঁজতে ব্যস্ত ওরা দুজন।জিসান এখনও ঘোরের মধ্যে আছে।

“কিরে? তোরা এমন থম মেরে বসে আছোছ কেনো?”

আরশের কথায় জিসানের ধ্যান ভাঙলো। বিরক্তি হয়ে ওর দিকে তাকালো। নিজেকে একটু ঠিকঠাক করে বললো।

“তুই যা বললি তাতে তো এমনি হওয়ার কথা তাইনা?”

“আরে কি এমন বলছি?”

জিসান কিছুই বললোনা। শাওন গালে হাত দিয়ে বললো।

“কি বলোছনি ভাই? আমি পুরাই বোকা বনে গেছি।”

” তুই চালাক ছিলি কোন জনমে বলতো?”

শাওন ঠোঁট উল্টালো। জিসানের দিকে তাকিয়ে বললো।

“দোস্ত! তুই বল আমি কি বোকা? আমাকে দেখে কোন এঙ্গেল থেকে বোকা মনে হয়?”

“দেখ শাওন! আমি তোদের এই ঝামেলাই নাই। কারও সালিশী করতে পারবো না আমি। এমনিতেই প্যারায় আছি।”

শাওন অসহায় ভাবে জিসানের দিকে তাকিালো। জিসান কপাল কুচকে অন্য দিকে ফিরে গেলো। আরশ ভ্রু কুচকে বললো।

“তুই আবার কিসের প্যারায় আছোছ?”

“তুই যা বললি তাতে তো তেমনি হবে তাইনা?”

“আরে ইয়ার আমি কি এমন বললাম?”

শাওন গালে হাত দিয়ে বললো।

“যা দেখাইছোছ তা বাস্তবে করে দেখা!”

আরশ কিছুই বললোনা শুধু রহস্যময়ী হাসি দিলো। ওরা দুজন বিরক্তি নিয়ে বসে রইলো।

তখন আরশ ওর ১০জন বডিগার্ডদের দিকে ইশারা করেছে। ওরা তো অবাক এটা কি করে সম্ভব? ১জন নয় ২জন নয় ১০ জনের সাথে বিয়ে দিবে? পৃথিবীতে এমন কখনও হয়েছে বলে শাওন শুনেনি। শাওন তখন থেকেই গালে হাত দিয়ে বসে আছে। জিসান আবারও বিরক্তি নিয়ে বললো।

“১০ জনের সাথে বিয়ে দিবি কিভাবে?

আরশ সামান্য হাসলো। ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়েই বললো।

“বললে কি মজা থাকে ইয়ার? আকর্ষনে থাকা ভালো। যখন করবো তখন দেখিস!”

জিসান বিরক্ত হলো। বিরক্তি নিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো। ভ্রু কুঁচকে শাওনের দিকে তাকিয়ে বললো।

“তুই যাবি নাকি বসে থাকবি? ও যখন আমাদের বলতে চায়না তো আমরা এখানে কি করবো? ও একাই থাক!”

অলসতা ঝেড়ে চেয়ার ছেড়ে দাড়ালো শাওন। আরশের দিকে তাকিয়ে অভিমানী ভাব নিয়ে বললো।

“আমাদের বলবি কেনো? আমরা তো তোর বন্ধু না। যে তোর বন্ধু তাদের বল আর তাদের নিয়েই থাক। চল জিসান!”

আরশ ভ্রু বাকালো। এ্যাটিটিউড নিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠলো। সাদা শার্টটা ঠিকঠাক করে টেনে নিলো। সিল্কি চুলগুলো হাত দিয়ে পিছনে ঠেলে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো।

“মেয়েদের মত ঢং করিছ না তো। এসব ঢং মেয়েরা করে। মেয়েদেরকেই মানায় তোদের না। এসব ছেড়ে চেয়ারে বস!”

“না বললে কিছুতেই বসবো না আমরা।”

শাওনের কথায় আরশ রেগে ওর দিকে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো।

“বস! বলতাছি।”

কথাটা বলেই আরশ চেয়ারে বসে পরলো। শাওন দাঁত কেলিয়ে বসতে বসতে বললো।

“এবার বল ১০ জনের সাথে বিয়ে কি করে দিবি?”

“আরে ১০ জনের সাথে দিবো কখন বললাম?”

“তুইতো দশজনের দিকেই ইশারা করছোছ।”

“ইশারা করছি তাই বলে দশ জনের সাথে দিবো নাকি?”

“তাহলে?”

“দশ জনের মধ্যে তৃনা যাকে পছন্দ করে তার সাথেই দিবো।”

ওরা আসলেই বোকা বনে গেলো। সত্যি তো আরশ তো দশজনের সাথে বিয়ে দিবে বলেনি। শুধু ইশারা করেছে। জিসান এতক্ষন চুপচাপ ওদের কথা শুনছিলো। আরশের কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে বললো।

“তৃনা তোকে পছন্দ করে, ওদের না। তাই ওদের কাউকেই তৃনা পছন্দ করবেনা।”

“পছন্দ না করলে ওদের মধ্যে যে বিয়ে করতে চাইবে তার সাথেই বিয়ে দিবো।”

” বিয়ে দিবো বললেই হবে? তৃনা কখনোই বিয়েতে রাজি হবেনা তখন কি করবি?”

আরশ রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো।

“সেই টেকনিক ভেবে রাখছি। এমন চাল চালবো যে বিয়ে না করে ওর কোনো উপায় থাকবেনা।”

জিসান কিছুই বললোনা। গভীর ভাবনায় চলে গেলো। শাওন আলসামি ভেঙে বললো।

” আরে ইয়ার কখন আসবে ওই তৃনা ফ্যানা? আমার কোমর ব্যাথা হয়ে গেলো রে। মনে হয় পার্লারে সাজুগুজু করতে আছে।”

“আরে আসবে আসবে। অপেক্ষা করতে থাক! তার প্রিয় আরশ ডেকেছে না এসে পারে?”

কথাটা বলেই আরশ উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো। সাথে শাওনও যোগ হলো। জিসান বিরক্তি নিয়ে তাকালো। শাওন হাসতে হাসতে বললো।

“মনে হয় খুব সাজগোজ করতে আছে ভাই। প্রথম ডেটিং বলে কথা!”

কথাটা বলে আবার হাসতে শুরু করলো। জিসান বিরক্তি নিয়ে দাড়ালো। ওদের দিকে তাকিয়ে বললো।

“তোরা থাক! আমি একটু বাইরে থেকে আসি। এত বসে থাকতে থাকতে কোমর ব্যাথা করছে।”

কথাটা বলেই জিসান চলে গেলো। আরশ আর শাওন নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

১ঘন্টা পেরিয়ে গেছে এখনও তৃনার আসার নাম নেই। অগত্যা আরশ ওর ফোনে কল দিলো। ওর ফোন বন্ধ বলছে। আরশ চিন্তায় পরে গেলো। কি হয়েছে? এতক্ষনে তো আসার কথা ছিলো। ওরা বাইরে বের হলো। দারোয়ান ওদের দেখে বললো।

“স্যার কাউকে খুজছেন? ”

“না চাচা। আসলে একজন মেয়ের আসার কথা ছিলো কিন্তু আসলোনা কি হয়েছে কে জানে?”

আরশ শাওনের দিকে গরম চোখে তাকালো। ওদের কথা দারোয়ান কে বলার কি দরকার ছিলো। শাওন আমতা আমতা করে বললো।

“সরি ইয়ার! মুখ থেকে বেরিয়ে গেছে।”

দারোয়ান ওদের দিকে তাকিয়ে বললো।

“স্যার! একটা মেয়েকে দেখছিলাম আসছে। মেয়েটা ভিভরে আসতে চাইলে একটা ছেলে ওকে ভেতরে যেতে বাধা দিচ্ছে। অনেক তর্কাতর্কি হয় ওদের মাঝে। অবশেষে মেয়েটা চলে যায়। ছেলেটাও চলে যায়।”

দুজনেই অবাক হয়ে তাকালো। ছেলেটা কে ছিলো? মেয়েটা যে তৃনাই হবে তাতে ওদের সন্দেহ নাই। কে তৃনাকে সাহায্য করলো? কে চাইতো তৃনার বিয়ে না হোক? হঠাৎ জিসানের কথা মনে পড়তেই আরশ ভাবলো জিসান করে নি তো? জিসান কেনো সাহায্য করবে কেনো? ওর কি লাভ? জিসানেই বা কই গেলো? আরশ এসব ভাবনা চিন্তা ফেলে শাওনকে বললো।

“শাওন! জিসান কই? ওকে ফোন লাগাতো?”

ফোন করে শুনলো জিসান বাড়ি চলে গেছে। ওদের সন্দেহ আরও গাড় হলো। শাওন ফোন বের করে দারোয়ান কে বললো।

“দেখুন তো এই ছেলেটাই না?”

“হ্যাঁ স্যার! এই ছেলেটাই ছিলো। এই ছেলেটাই।”

দুজনেই অবাক হলো। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে। জিসান কেনো এটা করলো? ওর কি লাভ হলো? কেউ কিছুই বললো না। বিদায় দিয়ে ওরা দুজনেই বাড়ি চলে গেলো। জিসানকে কালকে জিজ্ঞাসা করবে এমন করলো কেনো? তৃনার সাথে ওর কি সম্পর্ক?

—————————–

অন্ধকার রুমে একটা মহিলাকে খুব অত্যাচার করা হচ্ছে। শুধু মাত্র একটা সাইন করার জন্য। মহিলাটির কোনো হেলদোল নাই। এসবে সয়ে গেছে সে। এই ১৫টা বছর ধরে সয়ে আসছে। কদিন পর পরেই আসে এসব সাইন এর জন্য। না দিলেই করে অমানুষিক নির্যাতন। শেষে বাদ্য হয়ে দিয়ে দেন। আজও তাই হচ্ছে তার উপর। এই সাইনের জন্যই ওদের পাপ ধরা পরেনা। ওরা মুখোশ পরে সমাজে উচ্চ স্হানে বসে আছে। তাই আজ তিনি মরে গেলেও সাইন দিবেন না। কিন্তু এরা তো একে মারতে চায়না। একে মারলেই এদের লস। তাই অত্যাচার বন্ধ করে দিলো। একজন বলে উঠলো।

“তোর মেয়েকে বাঁচিয়ে রাখতে চাস্ নাকি চাস ওকে মেরে ফেলি?”

মহিলাটি চমকে তাকালো। তাড়াহুড়া করে বললো।

“আমার মেয়ে বেঁচে আছে? আমার নাবিলা বেঁচে আছে? সত্যি বলছো? আমার নাবিলা বেঁচে আছে? ”

লোকটি আবার বললো।

“হুম। বেঁচে আছে বাট সাইন না করলে বেশিক্ষন বেঁচে থাকবেনা।”

মহিলাটি খুব দূর্বল। কথা বালার শক্তি পাচ্ছেনা। তবুও কষ্ট কাঁপা কাঁপা গলায় থেমে থেমে বললো।

“আমার মেয়ে যে বেঁচে আছে তার প্রমান কি?”

লোকটি একটা কাগজ দেখালো। মহিলাটি দুঃখের মাঝেও হেসে ফেললো। আল্লাহর কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। অবশেষে সাইন করে দিলো। লোকগুলো চলে যায়। ব্যাথা যুক্ত শরীর নিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো মহিলাটি। কথা বলার শক্তি নাই তবুও স্বল্প স্বরে হেসে হেসে বলতে লাগলো।

“আমার মেয়ে বেঁচে আছে। ওকে কি দেখতে পারবো আল্লাহ? নাকি তার আগেই পরপারে চলে যাবো?”

এগুলো বলেই গুনগুন করে কেঁদে উঠলো। কবে হবে এর থেকে মুক্তি? আদৌ কি মুক্তি পেতে পারে সে? আল্লাহ কি দেখেনা? কবে দিবে এই মানুষদের পাপের শাস্তি? আস্তে আস্তে তার শরীর দূর্বল হয়ে গেলো। হুশ হারালেন তিনি।

ইনশাআল্লাহ চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here