অজানা পর্ব-২৭

0
869

#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–২৭

💖

জীবনের ক্লান্তি মুছে একটু সজীবতা পেতে চায় প্রাণ। ভ্রমণ ক্লান্ত প্রাণে দিতে পারে স্বস্তি। পরিশ্রান্ত মনকে সজীবতার দোলা দিতে ঘুরে আসতে পারেন, মেঘ পাহাড়ের দেশ নামে খ্যাত সাজেক ভ্যালি থেকে। একে রাঙামাটির ছাদ বলেও অভিহিত করা হয়।

সাজেক ভ্যালী। প্রকৃতির এক নান্দনিক সৌন্দর্যের নাম। সারা বছর জুড়েই থাকে এর ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্য্য। যতদূর চোখ যায় উচু নিচু পাহাড়ের সমারোহ। সাজেক ভ্যালীর অবস্থান রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নে। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন। এটি সর্বউত্তরে মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত। সাজেকের আয়তন ৭০২ বর্গ মাইল। রাঙামাটির একেবারে উত্তরে অবস্থিত এই সাজেক ভ্যালিতে রয়েছে দুটি পাড়া- রুইলুই এবং কংলাক। ১৮৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত রুইলুই পাড়া ১,৭২০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। আর কংলাক পাড়া ১,৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত।

সাজেক ভ্যালিতে চোখে পড়ে মেঘ আর পাহাড়ের মিতালি। মাথার ওপরে দলবেধে ভেসে যায় ভেজা তুলোর মতো মেঘ। আর মন ও শরীরে দিয়ে যায় শীতলতার পরশ। কেউ কেউ সাজেককে মেঘের উপত্যকাও বলে। এখানে ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রকৃতির রূপ পরিবর্তন হয়। দেখা মিলে ভিন্ন ভিন্ন আবহাওয়ার। কখনো শীত, কখনো গরম আবার কখনো নাতিশীতোষ্ণ অনুভূত হয়। প্রকৃতি যে কত রঙে, কত ঢঙে সাজে তা সাজেকে আসলে বুঝতে পারা যায়। একদিকে মেঘাচ্ছন্ন ভোর, অপরদিকে সূর্যের আলোছায়া খেলা মুগ্ধতার রেশ রেখে যায়। এখানের সব স্থান থেকে সূর্যোদয় দেখা গেলেও, হেলিপ্যাড থেকে সবচেয়ে সুন্দর সূর্যোদয় উপভোগ করা যায়। আর কংলাক পাহাড় থেকে সবচেয়ে ভালো সূর্যাস্ত দেখা যায়। পড়ন্ত বিকেলে সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ে, তখন সাজেকের পরিবেশ মাদকতায় ভরে ওঠে। তাছাড়া রাতের সাজেক ধরা দেয় ভিন্ন আঙ্গিকে। রাতের আকাশ পাহাড়া দেয় অজস্র তারা।

অবশেষে আরিবার ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে। সাজেকের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়েছে। দুটো প্রাইভেটকার নিয়ে যাবে ওরা। একটি গাড়িতে আরশ আর আরিবা যাবে। ওদের সাথে আরশের পার্সোনাল বডিগার্ড সজল ও একজন দক্ষ ড্রাইভার আছে। যদিও আরিবা ওর মা বাবার সাথে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু আরশের ধমকে ওর গাড়িতেই যাচ্ছে। আরিবা মনে মনে আরশকে বললো। “বেটা খবিশ! তোর জন্য একটু শান্তি নাই। ঘুরতে গিয়ে যে শান্তিতে থাকবো তারও উপায় নাই। এখন থেকেই ওনার হুকুম জারি হয়ে গেছে। যত্তসব শয়তান।” আরিবাকে চুপ থাকতে দেখে আরশ ধমক দিয়ে বললো।

“কিরে? চুপ করে দাড়িয়ে আছোছ কেন? যাওয়ার ইচ্ছা নাই? আচ্ছা থেকে যা! তুই গিয়ে কি করবি শুধু শুধু আমাদের বোঝা বাড়াবি।”

আরিবা বিরক্তি নিয়ে বললো।

“আমি তোমাদের বোঝা বাড়াই কি করে? আমাকে কি কোলে নিয়ে ঘুরতে হয়?”

“আগে তো কোলে নিয়েই ঘুরতে হতো। কি যে মুটি ছিলি রে বাবা! এখন আল্লাহ আমাকে বাঁচাইছে। তবুও এখন তো তোকে দেখে রাখতে হয় এটাই কম বোঝা কি?”

আরিবা আরশের দিকে রাগি চোখে তাকালো। ভ্রু কুচকে রাগ নিয়ে বললো।

“আমি মোটেও মোটা ছিলাম না বুঝছো? আমি কি তোমাকে কখনও বলছি আমি একা চলতে পারিনা আমায় দেখে রাখো? আগ বাড়িয়ে আমার কাছে আসে ঝগড়া করতে। আবার বেশি কথা বলে।”

আরিবা আরশ ঝগড়া করছে। পাশে সজল আর ড্রাইভার চুপ করে অসহায় লুকে তাকিয়ে আছে। আরশ রেগে বললো।

“এই! কে ঝগড়া করে তোর সাথে হু? তুই নিজেকে কি ভাবোছ? তুই কি এমন হয়ে গেছোছ যে তোর সাথে আমি আগ বাড়িয়ে ঝগড়া করতে আসবো?”

আরিবা কিছু বলবে তার আগেই মিসেস আঞ্জুমান ধমক দিয়ে বললেন।

“এখানেও ঝগড়া করা শুরু করছোছ? যাবি না? দেরি হয়ে যাচ্ছে সেই খেয়াল নাই?”

আরিবা কিছুই বললোনা। গাল ফুলিয়ে চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসলো। আরশও ওঠে পরলো। ওদের গাড়ি চলতে শুরু করলো। পিছনে আরেক গাড়িতে মি. আফজাল, মি. জাকির, মিসেস আঞ্জুমান ও মিসেস তারিন যাবে। তাদের সাথেও একজন বডিগার্ড ও দক্ষ ড্রাইভার রয়েছে। সাজেক যাওয়ার জন্য অবশ্যই দক্ষ ড্রাইভার প্রয়োজন। তা না হলে পথে যে কোনো দূর্ঘটনা হতে পারে। তবুও প্রাইভেট কার হলে যে কোনো বড় গাড়ি বা বাসের পিছনে যাওয়াটা অধিক ভালো। তাছাড়া সাজেকের রাস্তা গুলোতে দিনের আলোতে যাওয়া ঝুঁকিমুক্ত। অন্ধকার হলো বিপদ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই ওরা রাতে যাত্রা শুরু করছে। যাতে আলোতে সাজেক যেতে পারে।

আরিবা গাড়িতে বসে বাইরে তাকিয়ে আছে। যদিও বাইরে অন্ধকার দেখার কিছু নাই। তবুও ভিতরে তাকাবেনা পাশে আরশ আছে। ওর দিকে তাকালেই ঝগড়া হবে। যা আরিবা চায়না। নভেম্বর মাসের শেসের দিকে। হালকা হালকা শীত পড়ছে। জুন থেকে নভেম্বর মাসই সাজেক ট্যুরের জন্য উপযোগী। গাড়ির জানালা খোলা। শো শো করে বাতাস ডুকছে। নভেম্বর মাস হওয়ায় হালকা হালকা শীত লাগছে। আরিবা ওড়নাটা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নিলো। আরশ বুঝলো ওর শীত লাগছে। অগত্যা জানালা আটকিয়ে দিলো। তাই আরিবা ওর দিকে তাকালো। ওকে তাকাতে দেখে আরশ রাগ নিয়ে বললো।

“নাইকা হওয়ার শখ হয়েছে আপনার?”

আরিবা কিছুই বুঝতে পারলোনা। অগত্যা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো। ওকে তাকাতে দেখে আরশ দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো।

“শীত লাগছে তাও জানালা খোলা রাখছোছ কাকে ঢং দেখাতে? কাকে দেখাতে চাছ তোর এই সুন্দর মুখখানা?”

আরশের কথা আরিবা অসম্মান বোধ করলো। সামনে সজল ও ড্রাইভারের দিকে একবার তাকালো। দেখলো ওদের দৃষ্টি সামনের দিকে। যদিও ওরা সব শুনছে। অগত্যা আরিবা রেগে আরশের দিকে তাকালো। ওর দিকে একটু এগিয়ে চেয়াল শক্ত করে অল্প স্বরে বললো।

“সবাইকে নিজের মতো ভাবেন? আপনি যেমন সবার ক্রাশ হতে চান তেমন সবাইকে মনে করেন?”

“আমি এমনিতেও হাজার হাজার মেয়ের ক্রাশ!”

আরশ ভাব নিয়ে কথাটা বললো। আরিবার কিছু বললোনা ঘুরে আবার বাইরে তাকালো। এর সাথে কথা বলা মানেই ঝামেলা বাড়ানো। ঢাকা থেকে প্রথমে ওরা খাগড়াছড়ি যাবে। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়াটা বেশি ভালো। যেখান থেকেই সাজেক যেতে চায় না কেনো প্রথমে সবাইকে খাগড়াছড়ি যেতে হয়। তারপর দিঘীনালা হয়ে সাজেকের উদেশ্যে যেতে হয়। যদি কেউ বাসে যায় তবে ঢাকা থেকে এক বাসে খাগড়াছড়ি যাওয়া যায়। ওখান থেকে লোকাল বাহনে দিঘীনালা যেতে হয়। ওখান থেকে রিজার্ভ করে চাঁন্দের গাড়ি, জীপ, সিএনজি বা বাইকে করে সাজেক যেতে হয়।

আরিবা চেয়েছিলো খাগড়াছড়ির আলুটিলা গুহা, ঝুলন্ত ব্রীজ, রিসাং ঝর্না দেখে যেতে কিন্তু আরশ ওকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছে। আরিবারা সকালে দিঘীনালা পৌছে গেলো। ওখানের একটা রেস্টুরেন্টে সকালের নাস্তা শেষ করলো। তারপর দিঘীনালা আর্মি ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিয়ে সকাল দশটায় সাজেকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। দিঘীনালা থেকে সাজেক ৪০ কিলোমিটার দূরে। প্রতিদিন দিঘীনালা থেকে সাজেকের উদ্দেশ্যে ২বার গাড়ি ছাড়ে। সকাল ১০টায় এবং দুপুর ২.৩০। কেউ সকালের স্টেপ মিস করলে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

সাজেক যাওয়ার পথে উঁচুনিচু রাস্তা ও সবুজ সমারোহ মাখা নান্দনিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে কখন সাজেক পৌছে গেছে বুঝতে পারেনি আরিবা। ওরা দুপুরেই পৌছে গেলো। ওরা ঠিক করলো এখন সবাই ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে ঘুম দিবে। তারপর বিকেলে ঘুরতে যাবে। আরশ সজলকে পাঠাইছে সবার জন্য দুপুরের খাবার আনতে।

আরশ আগে থেকেই রিসোর্ট বুকিং দিয়ে রেখেছিল। আরিবার সবথেকে প্রিয় রিসোর্ট ছিলো। মেঘমাচাং, মেঘপুঞ্জি, মেঘকাব্য, ঝিঁ ঝিঁ পোকার বাড়ি, রুংরাং ও সামপারি। এগুলো সম্পর্কে ও গুগলে জেনেছে। আরশ ওর পছন্দের রিসোর্ট মেঘমাচাং বুক করেছে। আরিবা খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। ও নিজের রুমে চলে গেলো। একটি কটেজে ও একাই থাকবে। আরশ পাঁচটি কটেজেই বুকিং দিয়েছে। একটি কটেজে আরশ, আরেকটিতে আরিবা, আর দু’টায় ওর মা বাবা রা। আরেকটাতে ড্রাইভার ও বডিগার্ডরা। আরিবা ওর কটেজে চলে গেলো। তাকিয়ে দেখলো পুরো কটেজটা কাঠের মাচা করে পাহাড়ের গা ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে। আর ছাঁদ দেওয়া হয়েছে বাঁশ দিয়ে। রুমে একটা কাপল বেড আছে। ছোট একটা ফ্যান ও লাইট রয়েছে। খুব পরিষ্কার পরিছন্ন রুমটা। আরিবা বারান্দার দিকে তাকালো। খুব সুন্দর বারান্দা। আরিবা বারান্দায় চলে গেলো। ওখানে একটি দোলনা ও একটি টুল রয়েছে। আরিবা দোলনায় বসে পরলো। হাসি মুখল একটু দোল খেলো। অগত্যা উঠে দাড়ালো। সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো। যত দূর চোখ যায় শুধু সবুজ উচু নিচু পাহাড় আর মেঘের লুকোচুরি খেলা। আরিবার মনটা ভালো হয়ে গেলো। খেলা পরিবেশে চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিলো আরিবা। অতঃপর মন খুলে খোলা আকাশের নিচে ঘুরতে লাগলো।

আরশের কটেজ আরিবার পাশেই। আরশ বারান্দায় এসে আরিবাকে হাসি মুখে ঘুরতে দেখলো। ওর মন ভুলানো হাসি দেখে আরশের মনটা খুশি নেচে উঠলো। বুকে হাত বেধে হাসি মুখে এক দৃষ্টিতে আরিবার দিকে তাকিয়ে থাকলো। অনেকক্ষন ঘোরার পর আরিবা থেমে গেলো। হাসি মুখে পাশে তাকাতেই আরশকে দেখতে পেলো। ওকে দেখেই হাসি থামিয়ে দিলো। আরিবাকে তাকাতে দেখে আরশ থতমত খেয়ে গেলো। চোখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকালো। অগত্যা আরিবার দিকে তাকিয়ে রাগ নিয়ে বললো।

“এই! তুই এখানে কি করোছ? তোকে না বলছি ফ্রেশ হতে? যাহ ফ্রেশ হ!”

আরিবা রাগ নিয়ে বললো।

“তোমার কি? আমি এখানেই থাকবো!”

আরিবার কথা শুনে আরশ আগাতে আগাতে বললো।

“তুই দাড়া ওখানে! আমি আসতাছি। মুখে মুখে তর্ক করা ছুটাবো।”

আরশকে আসতে দেখে আরিবা একটা ভেংচি দিয়ে হাসি মুখে ভিতরে চলে গেলো। তা দেখে আরশ হেসে ফেললো। বুকে হাত বেধে সামনে দূর অজানায় তাকিয়ে রইলো।

💝

ইনশাআল্লাহ চলবে….

(অনেক ভুল হবে হয়তো। জানি অতটা ফুটিয়ে তুলতে পারিনি। তবে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। কেমন হয়েছে জানাবেন? হ্যাপি রিডিং।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here