অজানা পর্ব-৯

0
1208

#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৯

থাপ্পড়ের টাল সামলাতে না পেরে মেঝেতে পড়ে গেলো আরিবা। গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে তাকালো। এসবের জন্য কখনোই প্রস্তুত ছিলো না ও। সবাই চমকে উঠলো। মিসেস আঞ্জুমান ও মিসেস তারিন আবাকের শেষ পর্যায়। মি. আফজাল ছেলের দিকে রাগি চোখে চেয়ে আছেন। আরিবার বাবা মেয়েকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে উঠাতে উদ্যত হলো। তার আগেই আরশ ওকে টেনে তুলে দিল আরেক থাপ্পড়। এবার আরিবা পড়তে নিলেই আরশ ওর হাত খামছে ধরে। এক টানে নিজের মুখোমুখি দাড় করিয়েছে। আরিবা অশ্রুশিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে। আরশ এসবে পাত্তা না দিয়ে দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো।

“নিজেকে কি ভাবোছ বাচ্চা হুম? কিচ্ছু বোঝছ না? আমাদের তোর চাকর মনে হয় যে সারাদিন তোর পিছেই পরে থাকবো তোর আদেশ শুনতে? কারো ইমোশনের দাম নাই তোর কাছে? জানোস সবাই কতটা ভয় পাইছে?

একথা বলে আরশ ওকে ছেড়ে অন্য দিকে তাকালো। চুল মুঠ করে ধরে নিজেকে শান্ত করতে চাইছে। কেউ কিছুই বলছেনা শুধু তাকিয়ে আছে। সবাই জানে আরশ রেগে আছে এখন কথা বললেই বিপদ। আরিবা এবার শব্দ করেই কেঁদে দিল। আরশ কান্না শুনে রেগে ওর দিকে ঘুরলো। ওর কান্নায় আরশের মন গললো না ধমক দিয়ে বললো।

“চুপ! একদম চুপ! আর একটি শব্দ করলে খবর আছে। বেয়াদ্দব! আমরা এখানে চিন্তায় বেহুস আর উনি বাথটাবে বসে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনছে। দিবো আরেক থাপ্পড়! কি ভাবো নিজেকে? প্রেসিডেন্ট? আজ থেকে তোর এই ওড়া উড়ি বন্ধ। আমি যা চাইবো তাই হবে তোর লাইফে। এটা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নে।

কথাগুলো বলে আরশ একটু থামলো। আরিবা ভবছে ও তো বেশি ভুল কিছু করেনি। আরিবা বাথটাবে শুয়ে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে ফুল ভলিউমে গান ছেড়ে চোখ বন্ধ করে আছে। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে ও চোখ খোলে। তাকিয়ে দেখে আরশ রক্তচক্ষু নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আরিবা কিছু বলবে তার আগেই আরশ ওকে টেনে রুমে নিয়ে আসে। আরিবা কিছু বুঝার আগেই দিল কষে এক থাপ্পড় দিল।

“আপনাদের লাই পেয়ে এমন হইছে। আজ থেকে আমি যা বলবো তাই হবে। কেউ বাধা দিলে কি হবে সেটা আর বলতে নেই। কাকিমনি, আম্মু! আরিবার নাস্তা নিয়ে আসো। এখন যাও সবাই!”

আরশের কথায় আরিবার ধ্যান ভাঙ্গলো। কেউ কিছু না বলে চলে গেল। আরিবা অশ্রুভরা চোখে তাকিয়ে ভাবছে এরা প্রতিবাদ করলো না কেনো? নিজের বাবা মা থাকতে অন্য কেউ ওর উপর খবরদারি কেনো করবে? এরা কিছু বলেনা কেনো? আরশকে এত ভয়পায় কেনো? কি রহস্য আছে এই বাড়িতে?

“যা গোসল করে আয়! তারপর খাবার খেয়ে পড়তে বসবি!”

আরিবা অবাক চোখে তাকালো। বলে কি? এখন গোসল করবো? সবে তো সকাল ৮.৩০।

” এভাবে তাকানোর কি আছে? তোকে মারামরি করতে বলিনি। গোসল করতে বলছি।”

আরশের কথা শুনে আরিবা কিছুই বললোনা। চোখের পানিটা মুছে আলমারি খুললো। একটা টপস্ আর থ্রি কোয়াটার প্যান্ট নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকলো। আরশের দিকে একবার তাকিয়ে শব্দ করে দরজাটা বন্ধ করলো। আরশের রাগটা দরজার উপর ঝাড়লো। আরশ দরজার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো।

“কেনো মায়াপরী? তুমি এত অবুজ কেনো? তুমি জানো না আমি কত ভয় পেয়ে গেছিলাম। তুমি জানো? তোমায় হারানোর ব্যাথা এই বিশ্বের সব ব্যাথাকে হার মানায়। আমার বুকের ব্যাথা কি তোমার মনের দরজায় করাঘাত করেনা! কেনো এমন পাগলামী করলে? এই হাত! এই হাত দিয়ে তোমায় আঘাত করেছি আমি সত্যি এটা করতে চাইনি মায়াপরী। আমায় মাফ করে দিও! প্লিজ এমন ভুল আর করো না যে তোমায় আঘাত করতে হয়।”

কথাগুলো বলতে বলতে আরশের কন্ঠ ভারি হয়ে এলো। নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে সে অনুশোচনা করতে লাগলো। ওরেই বা কি করার আছে? ও তো ভয় পেয়ে গেছিলো। নিজের রাগ দমাতে পারেনি।

“এই নে ওর খাবার!”

মায়ের কথায় আরশের ধ্যান ভাঙলো। আরশ নিজের মায়ের দিকে তাকালো। আরশের মা খাবারটা পাশে টি-টেবিলের উপর রেখে আরশের পাশে বসলো। ওর হাতটা নিজের হাতের মাঝে নিয়ে বললো।

“এমন কাজ করোছ কেন যেন পরে নিজেকে অনুশোচনা করতে হয়?”

আরশ আহত দৃষ্টিতে ওর মায়ের দিকে তাকালো। ওর মা ওকে আস্বস্ত করে বললো।

“আমি জানি তুই ওকে মেরে নিজেই কষ্ট পাছ। চিন্তা করিছ না আমি ওকে বুঝাবো। তোর মন মতোই হবে কিন্তু বাবা! তোর রাগ টা একটু কমা। আমার ভয় হয় না জানি কোন দিন এই রাগ তোর সর্বনাশ করে।”

“আম্মু আমি তো চেষ্টা করি কিন্তু পারিনা। আমি তো ওর সাথে মজা করি। ও আমায় বকলেও কিছু বলিনা। ভুল করলে শুধু হালকা পাতলা মজা করার জন্য শাস্তি দেই। আজ সত্যি ওকে হারানোর ভয় পাইছিলাম তাই রেগে গেছিলাম।”

“ঠিক আছে আর রাগ করবি না। নিজেকে শান্ত রাখবি। শোন! তোর কাকিমনি আজ কষ্ট পেয়েছে। পাওয়াটাই স্বাভাবিক এক মাত্র মেয়ে। অনেক ভালোবাসে এই মেয়ে কে জানোস তো। ওর বাবা তো আরও! তুই নিজেও জানোস তোর কাকা নিজের মেয়েকে কত ভালোবাসে। তিনি কেঁদেই দিছেন। আমরাও কষ্ট পাইছি সবার আদরের তো। আর কখনও গায়ে হাত তুলবিনা!”

“হুম”

ছোটো করে উওর দিলো আরশ। আরশের মা কথা না বাড়িয়ে চলে গেলেন। তার ছেলের এখন একা থাকা দরকার। একা থাকলেই মানুষ ভাবে। ভাবলেই মানুষ তার ভুল খুঁজে পায়।

দরজা খোলার আওয়াজে আরশ ভাবনা ছেড়ে বের হলো। সামনে তাকিয়ে দেখলো আরিবা গোসল করে বের হয়েছে। সাদা টপস আর কালো প্যান্ট পরে দাড়িযে আছে। সাদা রংয়ে আরিবাকে একদম পবিত্র লাগছে। থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পরার জন্য আরিবার পা একটু বের হয়ে আছে। ধবধবে ফর্সা পায়ে কালো পশম। সদ্য গোসল করার জন্য পশমের সাথে পানির বিন্দু জমে আছে। দেখতে খুব ভালো লাগছে আরশের কাছে। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিলো। অন্যদিকে তাকিয়ে বললো।

“এসব পরোছ কেনো? এখন থেকে ফুল প্যান্ট পড়বি। প্রতিটা টপস্ এর সাথে কটি না হয় ওড়না পড়বি।”

আরিবা কিছুই বললোনা। কপাল কুচকে বিরক্তি নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দড়ালো। চিরুনি দিয়ে চুলগুলো ঠিক করতে লাগলো। এদিকে আরশের বেহায়া চোখ বারবার আরিবার দিকেই চলে যাচ্ছে। আরিবা হাতে ক্রীম নিলো মুখে মাখবে বলে। কিন্তু তার আগেই আরশ ধমক দিয়ে বললো।

“তোকে কি দেখাতে নিবো? নাকি সেরা সুন্দরী হওয়ার কমপিটিশন এ নিবো যে এমন সাজুগুজু করা শুরু করছোছ?”

আরিবা হতাশ হয়ে ভাবলো। ও যা করে তাতেই আরশের এলার্জি উঠে কি করবে ও? এখন নাকি ওর মন মতো চলতে হবে? ও তো মরেই যাবে। আরিবার ঘুরাঘুরি করার খুব শখ। সবাই কতো ঘুরতে যায় কিন্তু আরিবা যেতে পারেনা। এসব ভেবেই সে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

“কিরে রিবা? তুই কি সেরা সুন্দরী হওয়া নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করছোছ নাকি?”

আরশের ফালতু কথা শুনে আরিবার মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গেলো। অনেকক্ষন অনেক কষ্টে নিজেকে আটকে রাখছে আর পারবেনা। আরশকে কটা কথা শুনিয়ে দিবে ভাবলো। কিন্তু এর আগেই আরশ ওর ভাবনায় এক মগ জল ঢেলে বললো।

“এই! আমার কি কোনো কাজ নাকি যে সারাদিন তোর পিছে পরে থাকবো? তারাতারি খাবার খেতে আয়!”

“আমি খেয়ে নিবো তুমি যাও!”

” আমি খাওয়ে দিবো!”

“কি!”

আরিবা যেনো আকাশ থেকে পড়লো। বিষ্ময়ে ওর চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। আরশ আমতা আমতা করে বললো।

“তোকে তো খাইয়ে দিতেই পারি! তাছাড়া আমি খাইয়ে দিবো আর তুই পড়বি তাই খাইয়ে দিচ্ছি নাহয় আমি দিতাম না।”

“আমি তোমার হাতে খাবোনা।”

“আমি না শুনতে পছন্দ করিনা। মাইর না খেতে চাইলে তাড়তাড়ি আয়!”

আরিবা কিছুই বললোনা যদি আবার মারে? একে দিয়ে বিশ্বাস নেই। অগত্যা সে চুপচাপ খেতে বসলো। আরশ ওকে খাইয়ে দিচ্ছে আরশের মনে শান্তি লাগছে। আর আরিবা ও তো যেনো জোর করে খাচ্ছে গলা দিয়ে তার খাবার নামছে না। আরশ ওকে খাওয়াতে গিয়ে খেয়াল করলো ওর গাল লাল হয়ে আছে। থাপ্পড় খুব জোরেই দিয়ে ছিলো। রাগলে আস্তে মারা যায়না। আরশের ভিতরে অনুশোচনা হতে লাগলো। ও আরিবা কে খাইয়ে দিয়ে গালে পরম যত্নে ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আরিবার মেজাজ খারাপ হচ্ছে ও জোর করেই সহ্য করছে আরশের এসব নেকামী। নিজে কষ্ট দিয়ে আবার মলম লাগাচ্ছে এসব মানুষ খুব খারাপ। আরশ ওকে রেখে রুম থেকে বের হতেই আরিবা একটা বুদ্ধি করে ফেললো। ও সময় পেলেই এ্যাপলাই করবে। ভেবেই ও হেসে দিলো। নিজেকে বাহবা দিয়ে হাত দিয়ে নাক ঘষলো। মুচকি হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে বললো।

“মি. খবিশ বুঝবি মজা! আমার উপর জোর খাটানো ছুটে যাবে। কেঁদেও কুল পাবিনা, হুহ!

ইনশাআল্লাহ চলবে…

(ছোট হওয়ার জন্য সরি। ভুলত্রুটি মাফ করবেন প্লিজ প্লিজ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here