অজানা পর্ব-৮

0
945

#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৮

বিরক্তি নিয়ে হাত ঘড়ির দিকে তাকালো আরশ। সময় দেখেই ওর মেজাজ আকাশ সম। কপাল কুচকে চেয়ার ছেড়ে উঠলে। রাগ নিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছে আর দাঁতে দাঁত চেঁপে বলছে।

“আমার কথা অমান্য করা? আমাকে ফাঁকি দেওয়া? ওর খবর আছে! আজ বুঝাবো তানজীম হাসান আরশ চৌধুরীর কথা অমান্য করলে ঠিক কতটা মুল্য দিতে হয়!”

আরশ রেগে একাকার। কেউ ওর কথা অমান্য করলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনা। রাগে ওর কপালের রগগুলো ফুলে উঠছে। চেহারা রক্তবর্ণ ধারন করেছে।

“রিবা! এই রিবা!”

আরশ আরিবার নাম ধরে ডাকতে ডাকতে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো। মি. আফজাল ও মি. জাকির ওর দিকে অবাক হয়ে তাকালো। মিসেস আঞ্জুমান ও মিসেস তারিন রান্না ঘর থেকে ছুটে এলো। সবাই আরশের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেছে। তারা একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে। অবশেষে মিসেস আঞ্জুমান আঁচলে হাত মুছতে মুছতে জিজ্ঞাসা করলেন।

“কি হয়েছে রে?”

“কি হয়নি সেটাই বলো? কোথায় তোমার ওই বেয়াদ্দব মেয়ে?”

একথা শুনে আরশের মা রেগে বললেন।

” কথায় কথায় ওরে ক্ষেপাছ কেনো? কি হইছে বল? এত ক্ষেপছোছ কেনো?”

“তারিন ঠিকই বলছে আরশ! তুমি কথায় কথায় রিবাকে গালাগাল করতে পারো না!”

আরশ ওর বাবা মার দিকে রাগি চোখে তাকালো। অগ্যতা তারা কিছুই বললোনা। আরিবার বাবা এতক্ষন চুপ হয়ে দেখছিলেন কিন্তু তিনি আর চুপ থাকতে পারলেন না। নিজের চোখের সামনে নিজের কলিজার টুকরা মেয়ের অপমান সে কিছুতেই মেনে নিবে না। রাগটা দমন করে গম্ভীর কন্ঠে বললেন।

“আমার মেয়েকে অপমান করার কোনো অধিকার আমি তোমাকে দেইনি। আমার মেয়ে যথেষ্ট ভদ্র আছে। তোমার থেকে অন্তত মামনির চারিত্রিক সার্রটিফিকেট নিব না। তোমার এই জিদের জন্য মামনি অনেক কষ্ট পায়। ওর থেকে দূরে থাকবে! আন্ডারস্ট্যান্ড? আই হোপ ইউ আর বেটার আন্ডারস্ট্যান্ড!”

আরশ অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রাখছে। তবুও ওর কাকার দিকে ঝুঁকে দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো।

“আমাকে মুখ খুলতে বাধ্য করোনা। ভালো আছি ভালোই থাকতে দেও। আমি মুখ খুললে কিন্তু তোমাদেরেই লস্! মাইন্ড ইট!”

কথাটা বলে আরশ গট গট করে উপরে চলে গেলো। সবাই ভয় পেয়ে গেছে। আরিবার বাবা তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো।

“ভাই! নিজের ছেলেকে সামলাও নাহয় বিপদে পরবে। ছোটো থেকে এত বেশি মাথায় উঠিয়েছো এখন তোমার মাথা থেকে নামছেই না, উল্টো বসে বসে তোমার মাথাটাই খেয়ে ফেলছে।”

আরশের বাবা কিছুই বললেন না। ভাইয়ের দিকে হতাশ দৃষ্টি ফেলে জায়গা প্রস্হান করলে। আরশের মা তার পিছু পিছু গেলেন। আরিবার মা স্বামীর পাশে বসলেন। আহত দৃষ্টি নিয়ে বললেন।

“কি করবো বলো তো? আরশ এমন করলে এই বাড়িতে জামেলা হবে। ওকে তো এই বাড়ি থেকে বের করেও দিতে পারি না। চলো আমরা চলে যাই!”

মি. জাকির বৌয়ের হতের উপর হাত রাখলেন। তাকে আশ্বস্ত করে বললেন।

“আমরা ওর জন্য আলাদা হতে পারিনা। আরশকে থামাতে হবে। রিবার থেকে দূরে রাখতে হবে।”

“কি করে দূরে রাখবে? আরশ ঠিক ওর কাছে চলে যাবে! আমরা সবাই জানি আরশ রিবাকে খুব ভালোবাসে!”

“হ্যাঁ! তবে ভালোবাসার ক্ষেত্রে আরশ বেশিই পাগলামো করছে। ওর ভালোবাসা মামনিকে কষ্ট দেয়। সেটা আমি মেনে নিতে পারবোনা। আমি বুঝিনা ওর মতো ইন্টেলিজেন্ট ছেলের এসব কেনো করে?”

“আমিও সেটাই ভাবছি। আচ্ছা বাদ দাও! আরশ তখন কি বলছিলো?

“কখন?”

“ওই যে মুখ খুললে তোমাদের লস ওটা?”

মি. জাকির আমতা আমতা করতে লাগলো। মিসেস আঞ্জুমান এবার সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো। মি. জাকির জোরপূর্বক হেসে বললো।

“আরে কিছুই না। দেখো না ও রেগে গেলে কতটা ভয়ংকর হয়? সেটাই বললো। তাড়াতাড়ি নাস্তা দাও অফিসে জরুরী মিটিং আছে।”

কথাটা বলেই মি. জাকির সোফা ছেড়ে দাড়ালেন। মিসেস আঞ্জুমান কথা না বাড়িয়ে খাবার পরিবেশন করতে চলে গেলেন।

——————————

আরিবা সবে মাত্র ঘুমের রাজ্যে প্রবেশ করেছিলো। ঘুমের রাজ্যের মেইন গেট পার হয়ে একটু সামনে আগাতেই তার গায়ে এসে পানি পড়লো। আরিবা ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে বসলো। চোখ বন্ধ করে চিল্লিয়ে বলতে লাগলো।

“আব্বু আম্মু! ভুতে আমার গায়ে সিসু করে দিছে! তাড়াতাড়ি আসো! ওকে তাড়া…”

অগত্যা কেউ ওর মুখ চেপে ধরায় ও চোখ খুললো। হাত অনুসরন করে চোখ ঘুরাতেই আরশকে দেখতে পেলো। আরশকে দেখেই হাসতে শুরু করলো। আরশ পুরাই বোকা বনে গেলো। মনে মনে ভাবলে এই মেয়ে কি কোনো স্বপ্ন দেখছে নাকি? এভাবে পাগলের মতো হাসছে কেনো? আরশ ভাবনা ছেড়ে আরিবাকে ধমক দিয়ে বললো।

“চুপ! আমাকে কি তোর জোকার মনে হয়? হাসলি কেন?”

আরশের ধমকেও আরিবার হাসি পুরোপুরি থামেনি। আরিবা হাসতে হাসতে বললো।

“আমি বলছি ভুতে সিসু করছে। তার মানে তুমি ভুত আর তুমি সিসু..”

“চুপ! ”

এবার আরিবা হাসি থমিয়েছে। আরশ অনেক কষ্টে রাগ কন্ট্রোল করে এখানে আসছিলো কিন্তু রাগটা আবার মাথায় চড়ে গেছে। রাগে আরিবার গাল চেঁপে ধরলো মুখটা ওর কাছাকাছি নিয়ে আবারও বললো।

“এই মুখে খুব কথা ফুটছে তাইনা? জানোছ না বেশি বড় হতে নেই ঝরে পরে যায়? পিপীলিকা মাখা গজায় মরিবার তরে। তোরও সেই অবস্হা হবে।”

আরশ ওর গাল চেঁপে ধরায় আরিবা খুব ব্যাথা পাচ্ছে। মনে হচ্ছে ওর গাল ভেঙে যাচ্ছে। ও কথাও বলতে পারছেনা। আরশ ছাড়ছেও না। ব্যথায় আরিবার চোখ দিয়ে পানি পড়ে গেলো। পানি গড়িয়ে আরশের হাতে পড়তেই ও হাত সরিয়ে নিলো। অন্য দিকে তাকিয়ে বললো।

“যা কফি নিয়ে আয়!”

আরিবা কিছু বলছেনা কেঁদেই যাচ্ছে। আরশ ধমক দিয়ে বললো।

“ঢং করবিনা! কান্না বন্ধ করে কফি নিয়ে আয়। তখন কথা অমান্য করছোছ এখন করলে খবর আছে।”

আরিবা তবুও কেঁদেই যাচ্ছে। আরশের বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আরশের এখন নিজের হাতটাকেই কেটে ফেলতে ইচ্ছে করছে। যে হাত ওর মায়পরীকে কষ্ট দেয়, যে হাতের জন্য ওর মায়াপরীর চোখে জল আসে সে হাত রেখে কি করবে ও? পাশে টেবিলে জোরে ঘুষি দিলো। কাচ ভেঙে হাত দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। এতেও আরিবার কান্না থামলো না। ওর মায়াপরী কাঁদছে কেনো? ও কি বুঝেনা ওর কান্না আরশের সহ্য হয়না! আরশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরিবা ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। আরশ দৌড়ে গিয়ে দরজা ধাক্কাচ্ছে আর বলছে।

“রিবা! এই দরজা খোল! রিবা!”

ভিতর থেকে কোনো শব্দ আসছেনা। আরশের মন অস্থির হয়ে উঠলো। ও আরো জোরে ধাক্কা দিচ্ছে আর আরিবার নাম ধরে ডাকছে। চিল্লাচিল্লি শব্দে সবাই দৌড়ে এলো। আরিবার মা ঘরে ঢুকেই জিজ্ঞাসা করলো।

“আরশ কি হইছে বাবা? দরজা ধাক্কাচ্ছিস কেনো?”

আরশ অস্থিরতায় কথাই বলতে পারছেনা। কোনো মতে থেমে থেমে বললো।

“কাকিমনি! রিবা ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা অফ করে দিছে। কিছুতেই খুলছেনা!”

“কি!”

সবাই চমকে একসাথে কথাটা বললো। আরিবার বাবা রেগে দু’কদম এগিয়ে আসলো। আরশের একদম মুখোমুখি দাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলো।

“কি করছো আমার মেয়ের সাথে?”

আরশ কিছু বললো না। আবার দরজা কাছে গিয়ে বলতে লাগলো।

“রিবা দরজা খোল! প্লিজ দরজা খোল! বের হয়ে আমাকে বক, গাল ফুলিয়ে থাক তবুও বের হ প্লিজ!”

আরশ এবার কেঁদে ফেললো। আরশের মা বাবা দাড়িয়ে দাড়িয়ে ছেলের পাগলামো দেখছে। আরিবার বাবা আরশের কাছে এসে ওকে নিজের দিকে ঘুড়ালেন। ওর চোখে চোখ রেখে রাগি গলায় বললেন।

“আমার মেয়ের কিছু হলে তোমাকে আমি খুন করবো, দেইখো তুমি!”

কথা বলতে বলতে তিনি কেঁদে ফেললেন। আরিবার মা অনুভূতি শুণ্য হয়ে দাড়িয়ে আছে। আরিবার বাবা দরজায় হাত রেখে বললেন।

“মামনি আমার! দরজা খোলো! আমি কথা দিচ্ছি আরশকে শাস্তি দিব রের হও মা!”

ভিতর থেকে কোনোও শব্দ শোনা যাচ্ছে না। আরিবার মা দৌড়ে গিয়ে আরশের কলার চেঁপে ধরলো। কেঁদে কেঁদে চিল্লিয়ে বলতে লাগলো।

“এই মূল্য দিলি এত ভালোবাসার? হুম বল? নিজের ছেলের মতো ভালোবাসছি তার এই প্রতিদান দিলি? কি করছোস আমার মেয়ের সাথে? তোর জন্য আমার মেয়ের কিছু হলে তোকে আমি কখনো ক্ষমা করবোনা।”

আরশ কিছুই বলছেনা ভাবলেশহীন ভাবে দাড়িয়ে আছে। আরেশের মা এসে কলার ছাড়াতে ছাড়াতে বললো।

“কি করছিস আন্জু? দেখ আমার ছেলের হাত থেকেও রক্ত ঝরছে। ছাড়!”

“তোমার তো মেয়ে না ভাবি কি করে বুঝবা তুমি? সামান্য হাত কাটছে। তোমার ছেলের এমন কিছু হলে তুমি একথা বলতে পারতে? যার যার তার তার! নিজের ছেলে দোষ করছে ওকে কিছু না বলে আমাকে আটকাচ্ছো।”

আরশের মা অবাক হয়ে রাইলো। কি বলছে ও? সে কি আরিবাকে কম ভালোবাসে? আরশের মা কথা না বাড়িয়ে জোর করে আরশের হাত বেঁধে দিলো। আরশের বাবা এগিয়ে এসে বললো।

“কথা না বলে দরজা ভেঙে ফেলো! বডিগার্ডদের ডাকো!”

আরশের বাবার কথা শুনে সবার খেয়াল হলো। তাড়াহুরো করে দরজা ভাঙতে উদ্যত হলো আরশ। অগত্যা দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকেই সবাই অবাক হয়ে গেল।

ইনশাআল্লাহ চলবে….

(রি-চেইক করার সময় পাইনি। ভুলত্রুটি কষ্ট করে বুঝে নিবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here