অজানা পর্ব-৭

0
1018

#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৭

হেমন্তের সকাল। হালকা হালকা শীতে পড়ছে। কাঁথার নিচে আয়েশ করে ঘুমিয়ে আছে বেশির ভাগ মানুষ। মৃদু কুয়াশায় ঘেরা পৃথিবী। হালকা শিশিরকণা বিছানো ঘাসের উপর হাটছে আরিবা। খালি পায়ে হাটতে ওর ভালোই লাগছে। অনেকদিন পর মুক্ত পরিবেশে ওর মনটা সতেজ হয়ে উঠছে। এতদিন ওর টেস্ট পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষার চাপে তো ঠিক মতো ঘুমও হয়নি। আরশ ওকে ঠিকমতো ঘুমাতেও দেয়নি সারাদিন ওর পাশে বসে ছিলো। একটু নড়লেও বকাবকি করতো। আরিবা একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলো। আরিবা বুঝেনা ওর পড়া নিয়ে আরশের এত মাথা ব্যাথা কেনো? আরিবা মোটেও মেডিকেলে পড়তে চায়না কিন্তু আরশ ওকে মেডিকেলে পড়াবে বলেই পন করেছে। এতদিনে স্টোর রুমের দিকেও খেয়াল দিতে পারেনি। ওর ইচ্ছে করছে ওই আরশের মাথা ফাটিয়ে দিতে। আরিবা হাটছে আর আরশের কথা ওর মতো করে বলছে।

“মেডিকেলে চান্স না পেলে এই বাড়িতে থাকতে পারবিনা! তোর খাওয়া দাওয়া বন্ধ! হাত পা আলাদা করে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিয়ে আসবো। বেটা খাটাশ! আমি কি তোরটা খাই না পড়ি হু? এহ আসছে! বুড়িগঙ্গা নদী কি তোর বাপের নাকি তুই কিনে রাখছোছ রে? যখন মন চায় আমাকে ফেলে দিবি!”

“আমি কিনে রাখছি!”

“কে রে তুই”

কথাটা বলে পিছনে তাকিয়েই আরিবার আত্মা উড়ে গেলো। কি হবে এবার? আল্লাহ গো এবার বাঁচিয়ে নেও! এসব ভাবছে আর দাঁত দিয়ে নখ কামড়াচ্ছে। আরিবা নখ কামরানো বাদ দিয়ে আরশের দিকে তাকালো। আরশ রেগে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আরিবা জোর পূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো।

“ভাইয়া তুমি এখানে? এত সকালে ঘুম থেকে উঠছো? কফি করে দেই?”

কথাটা বলেই আরিবা এক প্রকার পালিয়ে আসতে চাইলো।

“তোকে যেতে বলছি?”

পিছন থেকে কথাটা বললো আরশ। আরিবা আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে পিছনে ফিরলো। আরশের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বললো।

“ভাইয়া তোমার তো ঘুম থেকে উঠেই কফি খাওয়ার অভ্যাস!”

“আমি কফি চাইছি? চুপচাপ এখানে দাড়া!”

আরিবা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে দাড়িয়ে থাকলো। আরশ ২০মিনিট ধরে একটু হাটাহাটি করলো। আরিবা অসহায় ভাবে দাড়িয়ে আছে ওর পা ব্যাথা হয়ে গেছে। বেচারি ভয়ে কিছু বলতেও পারছেনা। অনেক সাহস জুগিয়ে বললো।

“ভাইয়া! পা ব্যাথা কর…”

” যা কফি করে নিয়ে আয়!”

কথাটা বলেই পাশের চেয়ারে আয়েশ করে বসলো। আরিবা কিছু না বলেই গটগট করে চলে গেলো। যেতে যেতে আরশকে বকতে লাগলো।

“আসছে হুকুমদাতা! তোর হুকুমের খ্যাতা পুরি। আজ দিব না কফি এখন নাক ডেকে ঘুমাবো। তোরটা তুই করেই খা! জীবনটা একেবারে ত্যানা ত্যানা করে দিছে। তোর জীবনটা আমি ছাই ছাই করে দিবো মনে রাখিস হারামী!”

“কিরে বিড় বিড় করে কাকে এমন বকছিস?”

“মামনি! কি হইছে? মন খারাপ কেনো?”

আরিবা করো প্রশ্নের কোনো উওর না দিয়েই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কি হলো এটা। আরিবার বাবা অস্থির হয়ে বললো।

“ভাই তোর ছেলে আমার মেয়েকে বেশি জালাচ্ছে রে? মেয়েটার মুখটা কেমন অন্ধকার দেখ?”

আরশের বাবা কফির গ্লাস টা পাশে রাখলেন। আরিবার বাবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন।

“তুই তো সব জানোস তাও কেনো বলোছ?”

“খারপ লাগে তো!”

আরশের মা এগিয়ে এসে বললেন।

“জাকির ভাই বাদ দে তো! ওদের জামেলা ওরাই মিটাবে।”

“তোমার লাই পেয়ে মেয়েটা আরও আগেই নষ্ট হতো আরশ একটু টাইট দেয় বলেই ঠিক আছে।”

কথাটা বলে মিসেস আঞ্জুমান ও মিসেস তারিন রান্না ঘরে চলে গেলেন। মি. জাকির ও মি. আফজালও অফিসের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।

——————————

বেলকনির রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে নিদ্র। স্থির দৃষ্টি নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশটা ঘোলাটে কুয়াশাচ্ছন্ন। ওর মনটাও ঠিক এই আকাশের মতো। ভালোই তো ছিলো। প্রতিদিন তার বিউটি ডল কে দেখতো তাকে নিয়ে ভাবতো কতো কি কিন্তু হঠাৎ কেনো ওর জীবনে কুয়াশা নেমে এলো? ২১বছর বয়সে এক ১৫ বছরের মেয়ের প্রেমে পড়েছিলো। ভাবতেই ঠোঁট বাকিয়ে তাচ্ছিল্য হাসলো ও। ভেবেছিলো ওর বিউটি ডল একটু বড় হলো বউ করে নিয়ে আসবে। সারাদিন তাকিয়ে দেখবে ওই মিষ্টি মেয়েটাকে। কিন্তু বুঝতে পারেনি এমন হবে। ওর বিউটি ডল অন্য কারো। ও চাইলেই পারে ওর বিউটি ডল কে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যেতে কিন্তু ওর বোনের কি হবে? কতদিন ওই মুখটা দেখেনা, ও যে অস্থির হয়ে ওঠছে। কিন্তু ওর কিছুই করার নেই। ভালোবাসায় এত কষ্ট কেনো? একদিকে বোন আর একদিকে বিউটি ডল। কি নিয়তি তার! ভেবেই ওর চোখ এসে ভীর করলো একরাশ জন। অশ্রুসিক্ত নয়নে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো।

“বিউটি ডল! হয়তো কখনোও তুমি জানবে না আামার মনের বিশাল জায়গা জুড়ে তুমি আছো। আমার রাত জাগার কারনটাও হয় তো তুমি কখনও জানবে না। বলো তো কেনো আমার সাথেই এমন হলো?”

চিৎকার করে কেঁদে উঠলো নিদ্র। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিলো। ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই কিন্তু কি করবে ও? ভিতরে আর জমিয়ে রাখতে পারছেনা। ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা করতে লাগলো। কিছুক্ষন পর নিজেকে সামলে নিলো। চোখের পানিটা মুছে বলতে লাগলো।

“জানো! আমি নিজেকে এখন অনেক ব্যস্ত রাখি। কলেজ আবার অফিসও করি। কিন্তু এই ব্যস্ততা আমায় শুধুই ক্লান্তি দিয়েছে তোমাকে ভুলতে দেয়নি। একবার এসে তোমায় ভুলে যাবার কারনটা বলে যাও প্লিজ। হে আল্লাহ ও যখন আমার নয় তখন কেনো ওর উপর আমার ভালোবাসা জাগালে বলো? কেনো প্রথম দেখাতেই ওর সৌন্দর্যে চোখ আটকে দিয়েছিলে? বলো?”

নিদ্রর মনে পড়ে গেলো আরিবাকে দেখার প্রথম দিন। দিনটি ছিলো ২১ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন আরিবাদের স্কুলে অনুষ্ঠান ছিলো। আরিবা গানে অংশগ্রহন করেছিলো। নিত্রা সকাল থেকেই তাড়া দিচ্ছে। স্কুলে যাওয়ার আগেও এসে বললো।

“ভাইয়া তাড়াতাড়ি চল! দেরি হয়ে গেছে আমার বেষ্টুর গান শেষ হয়ে যাবে।”

“আমার যেতে ইচ্ছে করছেনা তাও জোর করে নিয়ে যাচ্ছিস!” যদি তোর বেস্টুর গান আমার ভালো না লাগে তো তোর খবর আছে।”

“ভাইয়া রিবার কন্ঠ অনেক সুন্দর শুনলেই বুঝবা!”

“হুম সারাদিন ওই মেয়ের কথা শুনিয়ে আমায় পাগল বানাইছোছ এবার গিয়ে দেখি।”

“চল!”

নিদ্র এসব অনুষ্ঠানে কখনেও যায়না। নেত্রা জোর করে নিদ্রকে ওদের স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে। নিদ্র স্কুলের সামনে গাড়ি থামিয়ে বিরক্তি নিয়ে নামলো। কয়েক কদম সামনে আগাতেই শুনলো।

আমি তোমাকে আরও কাছে থেকে
তুমি আমাকে আরও কাছে থেকে

স্কুলের গেটের সামনে আসতেই গানটা শুনে থমকে গেলো নিদ্র। কি মিষ্টি কন্ঠ। অনেক গান শুনছে ও কিন্তু শুনতে এত মিষ্টি কখনোও মনে হয়নি।

“ভাইয়া দেরি করে ফেলছি রিবা গান শুরু করে দিছে।”

“এটাই তোর বেস্টু!”

ঘোরের মধ্যে থেকেই কথাটা বললো নিদ্র। নেত্রা মাথা নাড়িয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেলো ভিতরে। নিদ্র মন দিয়ে শুনতে শুনতে সামনে আগাতে লাগলো। যার কন্ঠ এত মিষ্টি সে না জানি কতই মিষ্টি।

আমি তোমাকে আরও কাছে থেকে
তুমি আমাকে আরও কাছে থেকে
যদি জানতে চাও তবে ভালোবাসা দাও
ভালোবাসা নাও।

নিদ্র এস্টেজের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একটা মেয়ে হেসে হেসে মুখ নাড়িয়ে গান করছে। কি তার চোখের ভঙ্গি। লাল টপসটা গায়ের রংয়ের সাথে খুব মিলেছে। ছেড়ে রাখা ছুল গুলো বাড়ে বাড়ে মেয়েটার মুখে আছড়ে পড়ছে। আর মেয়েটা চুল গুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে। নিদ্রর কাছে খুব ভালো লাগছে।

“ভাইয়া! এই নে কফি!”

কারো ডাকে ভাবনা থেকে বের হলো নিদ্র। চোখটা মুছে পাসে ফিরে দেখলো নেত্রা কফি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। হাত বাড়িয়ে কফির মগটা নিয়ে বাইরে তাকালো।

“ভাইয়া কি হইছে তোর? এমন মন মরা থাকছ কেন আজকাল? আমার সাথে আগের মতো মজা করছ না স্কুলেও দিয়ে আসোছ না কি হইছে?”

নিদ্র মুচকি হসলো। যে হাসিতে লুকিয়ে আছে হাজারো না বলা কষ্ট। কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো।

” পড়ার অনেক চাপ তাই!”

“নাহ! কিছু একটা আছে। আমাকে বল? আমি তো পর না!”

“আমার মনের কথা তো আমার বোনকেই বলবো!”

“তো বল!”

“তুই তো আমার বোন না! তোকে পালতে আনছি!”

কথাটা বলেই নিদ্র খিলখিল করে হেসে উঠলো। নেত্রা ওর ভাইয়ের পিঠে কয়েকটা কিল বসিয়ে দিয়ে বললো।

“মা নাস্তা করতে নিচে ডাকছে।”

“যা আমি আসছি!”

নেত্রা চলে গেলো। নিদ্র নিজেকে ঠিক করে নাস্তা খেতে চললো।

ইনশাআল্লাহ চলবে……

(রি-চেইক করিনি ভুলত্রুটি মাফ করবেন। দেরি হওয়ার জন্য সরি গাইস!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here