#অজানা_অনুভূতি
#পর্ব – ০২
#লেখিকা – আদ্রিতা খান অদ্রি
সাজ্জাদ আর স্বাধীন ভাইয়া রুমে আসলেন। আপুকে বললেন ডক্টর বলেছে এখন বাসায় যেতে পারবে। সাজ্জাদ আবার বললেন আদ্রিতা ঠিক মতো না খাওয়ার ফলে এইরকম হয়েছে।
আরে দুলাভাই আপুর সাথে বিয়ের আগেই দেখি শালিকার এতো খোঁজ খবর নিচ্ছেন। আর এখন থেকে ত ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করতেই হবে কিছু মাস পরই ত আপুর আর আপনার বিয়ে। কতো কাজ পরে আছে। সাজ্জাদ কিছু বললো না আর।
স্বাধীন ভাইয়া বলে উঠলো, হ্যাঁ তাই ত অনেক কাজ আছে। সব দায়িত্ব ত আমাকে আর আদ্রিতাকেই নিতে হবে। হেসে উঠলাম নিজ ভালোবাসার মানুষের বিয়ের দায়িত্ব নাকি নিজেকে নিতে হবে। স্বাধীন ভাইয়া মনে হয় আমার ব্যাপারে জানে না। জানলে হয়তো এ কথা বলতো না। হসপিটাল থেকে বের হলাম। এখন ও দুর্বল লাগছে। আপু আমাকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
সাজ্জাদ বললেন, আমি তোমাদের বাসায় পৌঁছে দেয়।
না, দরকার নেই আমরা যেতে পারবো। বলেই একটি রিকশা ডাক দিলাম। আমি আর আপু উঠে পড়লাম।
এদিকে সাজ্জাদ হয়তো কিছুটা অপমানিতবোধ করছে।
কিরে দোস্ত তোর শালিকা একটু বেশি তেজী আর মিশুক মনে হয়।
কিসের শালিকা বিয়ে হয়েছে নাকি। আগে বিয়ে হোক তারপর দেখা যাবে সম্পর্ক কি হয়। এইটা বলে সাজ্জাদ ও চলে গেলো।
স্বাধীন বুঝতে পারলো না সাজ্জাদ রেগে চলে গেলো কেন। যাক বাবা আমি আবার কি করলাম৷সাজ্জাদ রেগে গেলো কেনো। স্বাধীন একা একা কি করবে সেও বাসার দিকে চলে গেলো।
এদিকে, তোকে কতোবার বলেছিলাম দিন দুপুরে ঘর থেকে বের হবি না। আজ যদি সাজ্জাদ না থাকতো তোর কি অবস্থা হতো ভাবতে পারিছ।
মা, প্লিজ স্টপ। একটু সাহায্য করেছে শুধু আর কিছু না। উনার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে তাই করতো। আমার আর এসব কথা ভালো লাগছে না। আমি রুমে গেলাম। বলেই রুমে চলে আসলাম। বাসায় আসার পর থেকে মা শুধু আমাকে বকছে আর সাজ্জাদের প্রশংসা করে যাচ্ছে। বিরক্ত লাগছে। ফ্রেশ হয়ে একটু ঘুমিয়ে পড়লাম।
অন্যদিকে ~
সাজ্জাদ, বিয়ের কথা মোটামুটি ফাইনাল। কোন মাসে বিয়ে রাখতে বলিস?
বাবা তোমাদের ইচ্ছে অনুযায়ী বিয়ে হবে।
আচ্ছা।
বাবা, সামিরার সাথেই কি বিয়ে হবে? না মানে ওর বোনের আচরণ আমার পছন্দ না। দায়িত্ব জ্ঞান নাই। বোকা একটা বললে আর একটা বুঝে।
আরে সমস্যা কোথায় ওর সাথে ত বিয়ে হচ্ছে না। বিয়ে হচ্ছে ওর বোনের সাথে। সামিরা অনার্সে পড়ে। যথেষ্ট ম্যাচুরিটি আছে ওর মধ্যে। আর ওর বোন মানে আদ্রিতা ও মাএ ইন্টার ১ম বর্ষে পড়ে, ওর মধ্যে এখন ম্যাচুরিটি কিভাবে আসবে। চঞ্চল থাকবে এইটাই স্বাভাবিক। যদি ও তোর মতো গম্ভীর ছেলের জন্য ও পারফেক্ট বলেই সাজ্জাদের বাবা হাসলো। সাজ্জাদ আর কিছু বললো না। কারন এইখানে বলে লাভ নেই। ভাগ্যে মনে হয় সামিরাই লেখা আছে। সাজ্জাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এমন না যে আদ্রিতাকে সে পছন্দ করে না। কিন্তু সাজ্জাদ আদ্রিতাকে যেই অপমানটা করেছিলো তা ক্ষমার অযোগ্য। সাজ্জাদের বাবা আর আদ্রিতার বাবা বন্ধু অনেক আগে থেকেই। সেই বন্ধুত্বের গভীরতা বাড়াতেই সাজ্জাদ ছোট থাকতে সাজ্জাদের সাথে সামিরার বিয়ে ঠিক করে রাখা হয়েছিলো। কিন্তু এ বিষয়ে আগে সাজ্জাদ বা সামিরা জানতো না। এমন সময় সাজ্জাদের মা আসলো
সাজ্জাদ, আদ্রিতা যে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো খবর নিয়েছিলি ও কেমন আছে?
ঠিকই ত মেয়েটার একবার ও খোঁজ নেওয়া হয় নি। কেমন আছে যদি একবার জানতে পাড়তাম ( মনে মনে)
মা, আমার কাছে সামিরার নাম্বার নেই। তাই ফোন দিতে পারি নি।
আরে এ কথা আগে বলবি না। নে নাম্বারটা লেখ। একথা বলে সাজ্জাদকে নাম্বারটা দিলো। রাতের খাবার খেয়ে সাজ্জাদ তার রুমে আসলো। এতো রাতে কল দিবে নাকি না বুঝতে পারছে না। আর কল দিয়ে আদ্রিতার কথা জিজ্ঞেস করলে যদি সামিরা কিছু মনে করে। আচ্ছা সামিরা মনে হয় না জানে যে আদ্রিতা আমাকে ভালোবাসে জানলে নিশ্চয়ই এ বিয়েতে রাজি হতো না। আর কিছু না ভেবে ঠিক করলো সামিরাকে কল দিবে
এদিকে ~
আদুরি আমার পক্ষে সাজ্জাদকে সাথে বিয়ে করা সম্ভব না। দি আমাকে আদুরি বলে ডাকে। ছোট থেকে আমি যা চেয়েছি মা – বাবার পর দি আমার সকল চাওয়া পূর্ণ করেছে। আর এখন আমার পছন্দের মানুষের সাথে দির বিয়ে। এইটা আমার বা দি কারোর পক্ষেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। আমি ত অতীত ভুলে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কে জানতো ২ বছরের পুরনো অতীত আবার সামনে আসবে।
দি, তুই কি পারবি বাবার অবাধ্য হয়ে বিয়ে ভেঙে দিতে? পারবি না ত। তাই ঝামেলা করিছ না। বিয়েটা করে নে। আর এখন আমাদের প্রায় সকল আত্মীয় স্বজনরা জানে তোর সাথে সাজ্জাদের বিয়ে। এখন এ বিয়ে ভেঙে দেওয়া সম্ভব নয়।
তাই বলে আমার ছোট বোনের ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করে নিবো? যে কিনা আমার বোনকে এতোগুলা মানুষের সামনে অপমান করেছিলো তাকে বিয়ে করবো?
দি, বাদ দে পুরান কথা ভুলে যা সব। আমার ভালোবাসা একপাক্ষিক ছিলো তাই পূর্ণতা পাই নি। ভাগ্যে এইটাই লেখা ছিলো মেনে নে। এমন সময় সামিরার ফোনে কল আসলো।
আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন?
ওলাইকুমস সালাম, জ্বি আমি সাজ্জাদ।
সামিরা কিছুটা বিরক্ত হলো। সে ত চাই না সাজ্জাদের সাথে তার বিয়ে হোক। বললো আপনি কিছু বলবেন।
জ্বি, না মানে আদ্রিতা এখন কেমন আছে?সকালে ত অসুস্থ ছিলো অনেক
সামিরা বুঝতে পারলো, ফোনটি তার জন্য করে নি বরং আদুরির জন্য করেছে। মনে মনে খুশি হলো।
হ্যাঁ, আদুরি ভালো…. না মানে আদ্রিতা ভালো আছে।
আপনি কি আদ্রিতাকে আদুরি বলে ডাকেন?
জ্বি, ও আমার সব থেকে আদরের।
ও আচ্ছা আপনার বোনকে বলবেন নিজের যত্ন নিতে সব সময় আমি সাহায্য করার জন্য থাকবো না।
দি আর কিছু বলার আগেই হাত থেকে ফোন নিয়ে নিলাম, বুঝতে পেরেছিলাম সাজ্জাদ ফোন দিয়েছে।
এই যে শুনেন, একবার সাহায্য করেছেন বলে বার বার বলতে হবে না। আমার দরকার নেই আপনার সাহায্য। দির সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে, এখনো বিয়ে হয় নি। এতো রাতে ফোন করার মানে কি? কথা গুলো বলে ফোন কেটে দিলাম। দি ও কিছু বললো না।
সাজ্জাদ অবাক হলো, যেই মেয়েটি একসময় তার সাথে একটু কথা বলার জন্য কতো পাগলামি করছে আর আজ সেই মেয়েটি তার মুখের উপর লাইন কেটে দিলো। সত্যি মেয়েরা আঘাত পেলে সম্পূর্ণ বদলে যাই।
#চলবে
[ আসসালামু আলাইকুম, পাঠকরা আপনারা গল্পটি কি রকম চান? সেই হিসেবে নায়ক নায়িকার মিল হবে ]