অজানা_আলোর_খোঁজে পর্ব-১৩ ১৪

0
2050

#অজানা_আলোর_খোঁজে
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১৩,১৪

কারণ খেয়াল করলো তিরা তার হাতে পরিহিত কাঁচের চুড়ি ভেঙ্গে হাতটা আঁচড় দিয়ে কেটে ফেলেছে। বেশ অবাক চোখে তাকিয়ে দেখতে লাগল তানভীর।তিরার হাত কেটে গড়গড়িয়ে রক্ত পড়ছে। তিরার সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। তিরা শুধু তানভীরের দিকে রাগী চেহারায় তাকিয়ে আছে। পটকা তিরাকে এভাবে বাচ্চা মানুষী করতে দেখে হতভম্ব হয়ে গেল। তানভীর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তিরার কাছে গিয়ে তিরার হাতটা ধরল। হাতটা ধরার সাথে সাথে তিরা একদম স্থির হয়ে গেল। রাগের ছাপটা মুখ থেকে চলে গেল। তিরা কিছুটা সাইকোর মতো তানভীরকে ভালোবাসে। প্রায় পাঁচ বছর যাবত তানভীরকে ভালোবেসে এসেছে। কখনো মুখ ফুটে বলেনি তবে কাজে কর্মে বহুবার প্রকাশ পেয়েছে তার ভালোবাসা। মা বাবার আদরের সন্তান তিরা। টাকা পয়সার অভাব নেই বললেই চলে। পরিবারও তিরার সব আবদার পূরণ করতে মরিয়া হয়ে উঠে। তানভীরের প্রতি তার ভালোবাসাটা কিছুটা সাইকো টাইপের মতো বলা যায়।

যাইহোক তিরাকে ধরে তানভীর খাটের উপর বসিয়ে দিয়ে বলল

– কি হয়েছে তোর? এভাবে হাত কাটলি কেন? কেউ কি কিছু বলেছে?

তিরা স্বাভাবিক স্বরে জবাব দিল

– নাহ কেউ কিছু বলেনি। ইচ্ছা হয়েছে তাই কেটেছি। কিছুই হয়নি আমার।

তানভীর একটু হেসে বলল

– মানুষের হাত কাটতেও ইচ্ছা হয় জানা ছিল না তো।

কথাটা শোনে তিরা কপট রাগ করে বলল

– তোর মতো তো সবাই না।

– যাইহোক ক্ষেপিস না। আমি হাতটা পরিষ্কার করে গজ দিয়ে বেঁধে দিচ্ছি। গিয়ে রেস্ট নে।

এই বলে তানভীর তার ব্যাগ থেকে ঔষধের বক্সটা বের করে তিরার হাতটা পরিষ্কার করে সব রক্ত মুছে গজ দিয়ে বেঁধে দিল। তিরা একদম চুপ হয়ে তানভীরের দিকে তাকিয়ে ছিল। গজ বাঁধা শেষে তানভীর বলল

– যা এবার ঘরে গিয়ে রেস্ট নে। খাওয়া দাওয়া কর।

তিরা খাট থেকে উঠতে উঠতে বলল

– হ্যাঁ যাচ্ছি। তবে একটা কথা ছিল।

– কি কথা বলবি বল।

– তোর সাথে যে মেয়েটা এসেছে সেটা কে?

– এত কিছু জেনে তুই কি করবি?

– দরকার আছে বল।

– সাথী তোকে কিছু বলেনি?

– নাহ বলেনি। তুই বল।

– তাহলে আর জানার দরকার নেই। সাথীর কাছ থেকে জেনে নিস। নাহয় ঐ মেয়ের কাছ জেনে নিস।

– মেয়েটার নাম কি সেটা বলবি তো?

– নাহ বলব না। তুই জিজ্ঞেস করে জেনে নিস। এখন একটু রেস্ট নিতে দে।ঘ্যানঘ্যান করিস না একদম।

– আমি ঘ্যান ঘ্যান করি?

– তাই তো করতেছিস। অবশ্য তোর কাজেই এটা। হুদাই ঘ্যানঘ্যান করা।

– বেশি বলে ফেলতেছিস কিন্তু।

– হুম তা তো বলতেছিই। আমার কাজও বেশি বলা।

– রাগ তুলিস না একদম।

– আমার বয়েই গেছে রাগ তুলতে। যা গিয়ে রেস্ট নে।

বলেই তানভীর খাটে শুয়ে গা টা এলিয়ে দিল। তিরা কোনো কথা না বলে সরাসরি নিজের রুমে আসলো।এসে দেখল রুকু খাটের উপর বসে একা একা চোখ বন্ধ করে আছে। রুকুকে এভাবে চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে দেখে তিরা একটা ধাক্কা দিয়ে বলল

– এটা আমার জায়গা তুমি বসে আছ কেন?

রুকু ধাক্কা খেয়ে হতচকিয়ে উঠে তিরার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জবাব দিল

– ভালো করে বললেই হত। আমি সরে যেতাম।

– কারও জায়গায় বসার আগে পারমিশন নিতে হয় সেটা কি তুমি জানো না? আবার বলো ভালো করে বললেই হত। ফাজিল মেয়ে একটা।

– আমি তো সাথী আপুর পারমিশন নিয়েছিলাম। উনি তো বলেনি এটা আপনার জায়গা। তাহলে আমি বুঝব কি করে এটা আপনার জায়গা।

– এত তর্ক কষতে কে বলেছে তোমাকে? ঐদিকে যাও।

বলেই বসতে নিতে এল তিরা। তিরা বসতে নিতে গেলেই সাথী বলে উঠল

– কি রে তিরা তোর হাতে কি হয়েছে? ব্যান্ডেজ করা কেন?

তিরা চোখগুলো বড় বড় করে বলল

– তোকে এত কিছু বলতে যাব কেন? তুই তোর মতো থাক।

সাথী আর কোনো কথা বলল না। কারন জানে তিরা বেশ রগচটা প্রকৃতির। বেশি বলতে গেলেই রাগের পরিমাণটা বাড়িয়ে হুলুস্থুল পাঁকিয়ে ফেলবে। তিরা বিছানায় শুইয়ে রুকুর দিকে বাঁকা চোখে কিছুক্ষণ তাকাল। তারপর বলে উঠল

– তোমার নাম কি?

রুকু কোনো উত্তর না দিয়ে বিছনার এক কোণে ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। তিরা পুনরায় জিজ্ঞেস করল

– আমি তোমাকে তোমার নাম জিজ্ঞেস করেছি সেটা কী তোমার কানে গেছে? বেয়াদবের মতো উত্তর না দিয়ে ওদিকে ফিরলে কেন? এমন বেয়াদব মেয়ে তো জীবনে দেখি নি।

রুকু কথা শোনেও না শোনার মতো করে শুয়েই রইল।পাশ থেকে সাথী বলে উঠল

– ওর নাম রুকু।

তিরা রাগী গলার উত্তর দিল

– আমি তোকে নাম বলতে বলেনি।ওকে জিজ্ঞেস করেছি। উত্তর টা ওর দেওয়া দরকার।

– তিরা থাক ও হয়তো কমফর্ট ফিল করছে না।

– কমফোর্ট ফিল করবে না তো এসেছে কেন?

– তিরা চুপ করবি তুই।

এর মধ্যেই শষী কোথায় থেকে যেন এসে তিরার কথায় জোর টেনে বলল

– এখানে কি হয়েছে? এত চিল্লা পাল্লা কেন?

সাথী গলার স্বরটা মৃদু করে বলল

– তেমন কিছু না। তিরার মাথায় ভূত চেপেছে।

– কেন কি হয়েছে তিরার।

বলেই বিছানায় রুকুকে শুয়ে থাকতে দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল

– এ মেয়ে কে? এখানে কি করছে?

সাথী উত্তর দিতে গেলে সাথীকে ব্যাগরা দিয়ে তিরা বলে উঠল

– এ হচ্ছে পারস্যের শাহজাদী।

শষী চোখ গুলো বড় বড় করে বলল

– পারস্যের শাহজাদী এখানে কি করছে। তার তো পারস্যে থাকার কথা।

বলেই হাসতে লাগল। সাথী একটা দমক দিয়ে বলল

– তোরা কি থামবি নাকি বল?

তিরা কপট রাগ করে উত্তর দিল

– তোর জ্বলে কেন এত?

শষী বুঝতে পারছিল না কাহিনিটা কি। তাই তিরাকে শান্ত গলায় বলল

– কাহিনি কী? সেটা আগে বলতো।

তিরা উত্তর না দিয়ে চুপ করে বসে রইল। সাথী শষীর দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল

– তানভীরের সাথে ঐ মেয়েটা এসেছে। তানভীর বলল তানভীরের জুনিয়র মেয়েটা। তবে জানি না মেয়েটা কে। নাম রুকাইয়া। রুকু বলে ডাকে সবাই।

শষী কৌতুহলী গলায় জবাব দিল

– সিরিয়াসলি তানভীর নিয়ে এসেছে এ মেয়েকে?

সাথী মাথা নেড়ে বলল

– হ্যাঁ।

– তানভীর একটা মেয়ে নিয়ে এসেছে ব্যাপারটা বেশ গোলমেলে লাগছে।

– আমার কাছেও গোলমেলে লাগছে। কিন্তু এটা সত্যি মেয়েটাকে তানভীরেই নিয়ে এসেছে। আর সে মেয়েকে নিয়েই তিরার এত রাগ। জানিসেই ওর পাগলামির একটা বদ অভ্যাস আছে।

সাথীর কথা শোনে তিরার রাগ মুখটা পুনরায় চক্ষু গোচর হলো। রাগে চোখটা অগ্নিশর্মা করে বলল

– এখানে পাগলামির কি দেখলি? আমরা এসেছি একটা গ্রূপ করে ঘুরতে। হুট করে এ মেয়েটাকে নিয়ে এসেছে। এটা কি তানভীর ঠিক করেছে?,

শষী শান্ত স্বরে বলল

– তা ঠিক করেনি। তবে নিয়ে এসেছে এখন তো আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। থাকতে দে। আমারা আমাদের মতো চললেই হবে। নিজেদের মজা নিজেরাই করব। ওর জন্য আমাদের আনন্দ মাটি হবে না।

সাথী শষীর কথায় জোর দিয়ে বলল

– একদম ঠিক।

বলেই শষী রুকুর দিকে তাকিয়ে বালল

– কিন্তু মেয়েটা কোনো কথা বলছে না কেন?

তিরা রুকুর দিকে উঁকি মেরে দেখে মুখটা বাঁকিয়ে বলল

– পারস্যের শাহজাদী তো ঘুমাচ্ছে।

দাঁড়া তাকে ঘুমানো বের করছি ভালো করে। এই বলে তিরা বিছানা থেকে উঠল। তিরাকে হুট করে উঠতে দেখে সাথী বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল

– আরে আরে কি করতে যাচ্চিস আবার।

সাথীর অস্থিরতা দেখে শষী বলে উঠল

– আরে এত অস্থির হস না। ওরে ওর মতো করতে দে এতে যদি ওর শান্তুি হয়। কি আর করবে।

সাথী কথার জবাব না দিয়ে চুপ করে বসে তিরার কান্ড দেখতে লাগল। তিরা হুট করে..

পর্ব- ১৪

তিরা হুট করে এক মগ পানি এনে রুকুর উপর ঢেলে দিল। রুকু সাথে সাথে উঠে খিঁচুনি দিতে লাগল। সাথী রুকুকে এভাবে খিঁচুনি দিতে দেখে তাড়াতাড়ি ওর কাছে গেল। ওকে ধরতেই লক্ষ্য করল ওর শরীরে প্রচন্ড ভাবে খিঁচুনি দিচ্ছি। সাথী ভয়ে ভয়ে বলল

– তিরা কি দিয়েছিস তুই। এখন মেয়েটার কিছু হলে কি করবি? পানির সাথে কি কিছু মিশিয়েছিস?

রুকুর অবস্থা দেখে তিরাও ভয়ে ঢুক গিলতে লাগল। ঢুক গিলতে গিলতে বলল

– আমি শুধু পানিই দিয়েছি আর কিছু দেয়নি। কেন যে এমন হলো বুঝতে পারছি না।

শষী তিরাকে দমক দিয়ে বলল

– সব কিছুতে তোর বাড়াবাড়ি না করলে হয় না।

শষীর কথা শোনে সাথী চেঁচিয়ে উঠে বলল

– তুই কথা বলিস না। তিরাকে তুই এই আস্কারা দিয়েছিস। এখন মেয়েটার কিছু হলে সমস্ত দায়ভার আমাদের নিতে হবে।

হাত পা মালিশ কর দেখি কি হয়। তিরা কিছু না বলে সাথীর সাথে রুকুর হাত পা মালিশ করা শুরু করল। এদিকে রুকুর অবস্থা আরও খারাপ হতে লাগল। এমতাবস্থায় সাথী বলে উঠল

– শষী তুই তানভীরকে ডাক দে আগে।

শষী দৌঁড়ে তানভীরের কাছে গিয়ে হাঁপাতে লাগল। শষীর হাঁপানো দেখে পটকা বলে উঠল

– কি রে হাঁপাচ্ছিস কেন?

– রুকু ….

বলেই শষী হাঁপাতে লাগল। রুকুর নামটা মুখে নিতেই তানভীর ভয় পেয়ে গেল। ভাবতে লাগল মোনালি এসে রুকুকে ধরে নিয়ে গেল না তো? বলেই ভয়ে কুঁকড়ে গেল। তাড়াহুড়া করে বিছানা থেকে উঠে বলল

– রুকু এখন কোথায়? মোনালি কি রুকুকে ধরে নিয়ে গেছে।

তানভীরের কথা শোনে শষী বোকার মতো তাকিয়ে রইল। বোকার মতো তাকিয়ে অবাক চোখে বলল

– মোনালি কে? আর কাকে ধরে নিবে? মানে বুঝলাম না।

শষীর কথা শোনে তানভীর বুঝতে পারল। রুকুকে কেউ ধরে নেয়নি তবে রুকুর অন্যকিছু হয়েছে। তাই তানভীর একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল। তারপর পরক্ষণেই উৎকন্ঠা হয়ে বলল

– তাহলে রুকুর কি হয়েছে?

শষী ঢুক গিলতে গিলতে বলল

– তিরা চোখে মুখে পানি ঢেলে দিয়েছিল। তারপর থেকে খিঁচুনি দিতেছে। হাত পা মালিশ করেও ঠিক করতে পারছি না।

কথাটা শোনেই তানভীর রাগী গলায় জবাব দিল

– তিরার সাহস কি করে হয় এমন কাজ করার। এমনিই রুকুর অনেক সমস্যা চলছে। তার উপর ওকে এভাবে টর্চার করছে। আর তোরাও সেটা সায় দিয়ে গেলি? সাথী আর তুই কোথায় ছিলি।

তানভীরের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে শষী একদম চুপ হয়ে রইল। পাশ থেকে পটকা বলে উঠল

– তানভীর এখন রাগারাগির সময় না। আগে চল গিয়ে দেখে আসি মেয়েটার কী অবস্থা।তারপর নাহয় বাকি রাগারাগি করিস।

তানভীর পটকার কথা শোনে কোনো কথা না বলে সরাসরি রুম থেকে বের হয়ে গেল।দৌঁড়ে রুকুর রুমে গেল।গিয়ে দেখল রুকু স্বাভাবিক হয়ে বসে আছে। পাশে তিরাও মাথা নীচু করে বসে আছে। পটকা, শষী আর তানভীর রুকুকে স্বাভাবিক ভাবে বসে থাকতে দেখে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলল। তানভীর রুকুর দিকে তাকিয়ে বলল

– আপনি ঠিক আছেন তো?

রুকু মাথা নেড়ে বলল

-হ্যাঁ ঠিক আছি।

তারপর তানভীর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল

– সবার মনে হয় রুকুকে নিয়ে বেশ সমস্যা হচ্ছে। তাহলে শোন রুকু আমার কোনো জুনিয়র না। না ওর সাথে আমার প্রেম না কিছু। রাস্তায় দেখা ওর সাথে।

তানভীরের কথা শোনে সবাই হা করে তাকিয়ে রইল। সামন্য রাস্তায় দেখা একটা মেয়েকে তানভীর নিয়ে এসেছে ব্যাপারটা বেশ অদ্ভূত মনে হলো সবার কাছে। সবাই এক গলায় বলে উঠল

– কিন্তু হুট করে এ মেয়েকে নিয়ে এখানে কেন আসলি? ওকে কি আগে সত্যিই চিনতিস না।

– না চিনতাম না।

– তাহলে? কি হয়েছে কাহিনি বল।

– হ্যাঁ বলছি। তবে শষী তোকে একটা সাহায্য করতে হবে।

– কি সাহায্য?

– তোর মামা পুলিশ অফিসার তো তাই না?

– হ্যাঁ।

– তোর মামার সাহায্য লাগবে।

– কারণটা কী আগে বল।

তারপর তানভীর রুকুর জীবনে ঘটে যাওয়া কালো অধ্যায়ের কথা বর্ণণা করলো। সবাই যখন কথা গুলো শোনছিল সবার কাছে বেশ অবাস্তব লাগছিল বিষয়টা। তানভীর যতই বলছিল ততই সবার মাথায় ইষৎ ঘাম চক্ষুগোচর হলো, চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগল। বিষয়টা সবার কোমল মনে বেশ নাড়া দিল। তিরার ভিতরটাও খা খা করতে লাগল এটা ভেবে যে কেন সে রুকুকে না জেনে এত কষ্ট দিল। তানভীর পুরো কাহিনি বলে চুপ হয়ে গেল। রুমটায় তখন পিনপনা নীরবতা বিরাজ করছে। সবার ভেতরটায় অজানা একটা ভয় তাড়া করছে। কেউ কিছু বলছে না শুধু নীচের দিকে তাকিয়ে দম নিচ্ছে।মিনেট পনেরো রুমটায় নীরবতা বিরাজ করল। নীরবতার বাঁধ ভাঙ্গে শষীর তীক্ষ্ণ কন্ঠে। শষী বলে উঠল

– আচ্ছা ঠিক আছে আমার দিক থেকে মামাকে বলে যতটা সাহায্য করার দরকার করব। আপাতত আমরা ঘুরতে এসেছি। দুদিন ঘুরে তারপর রুকুর দিকটা ভাববো। কি বলিস সবাই।

সবাই তাল মিলিয়ে এক গলায় বলে উঠল

– হ্যাঁ এটাই ভালো হবে। এতে করে রুকুর ও মনটা রিফ্রেশ হবে। সমুদ্র পাড়ে ঘুরতে যাব। মনটা রিফ্রেশ করে তারপর সবাই এক জোট হয়ে এ অন্যায়ের সমাধান করব।

তিরা কোমল কন্ঠে রুকুর হাতটা ধরে বলল

– তোমার সাথে এমন করা মোটেও উচিত হয়নি। এতটা কষ্ট সহ্য করেছ বুঝতে পারিনি। পারলে ক্ষমা করে দিও।

তিরা খুব রগচটা হলেও ওর রাগটা বেশিক্ষণ স্থায়ী না। ভেতরে ভেতরে সে খুব নরম মনের মানুষ বলা যায়। তিরার কথা শোনে রুকু হালকা স্বরে উত্তর দিল

– আমি কিছু মনে করেনি। আপনারা তো না বুঝে করেছেন। তবে আমার জন্য এতকিছু করছেন এটাই অনেক। আপনাদের মতো হেল্পফুল কাউকে পাব কখনো চিন্তা করেনি। অজনা আলো খোঁজতে গিয়ে অজানা কতগুলো উদার মনের মানুষের সাথে দেখা হলো। আপনাদের ঋণ কখনো ভুলব না।

সবাই দৃঢ় গলায় বলল

– কাউকে সাহয্য করাতেই আমরা শান্তি পাই। তোমাকে সাহায্য করতে পারলে বেশ ভালো লাগবে।

সাথী পটকার দিকে তাকিয়ে দেখল। পটকা এখনো হাতে বিস্কুটের প্যাকেট নিয়ে একটা একটা করে বিস্কুট বের করছে আর মুখে পুড়ে খাচ্ছে। পটকাকে এভাবে খেতে দেখে সাথী কপালটা কু্ঁচকে বলল

– তুই কি একাই খাবি নাকি ওদের খেতে দিবি। কত দূর থেকে এসেছে সে হুঁশ কি তোর আছে। সারাদিন কি তোর খাওয়া ছাড়া কাজ নেই। এটা না ওটা খেতেই আছিস।

তানভীর সাথীর কথা শোনে হাসতে হাসতে বলল

– খেতে দে ওরে। ওর তো এই একটাই পেট। না খেলে সেটার কি মান থাকবে নাকি।

তানভীরের কথাটা শোনে সবাই হুহু করে হেসে উঠল।পটকা সবার হাসি দেখে মুখটা গম্ভীর করে বলল

– তোদের সবার শুধু আমার খাওয়ার দিকে নজর।যাইহোক তানভীর চল রুমে খাবার আছে খেতে চল। আর সাথী তুই আমার রুমে আস তো। খাবার এনে রুকুকে দে খেতে।

বলেই পটকা তানভীরকে নিয়ে চলে গেল। আর সাথীর পটকার সাথে গেল। তিরা এর মধ্যে রুকুর সাথে বেশ ভাব জমিয়ে ফেলল। সাথী এসে তিরা আর রুকুর এত ভাব দেখে মনে মনে ভাবতে লাগল। তিরা মেয়েটা সত্যিই পাগল। হুট করে রাগ করলেও সবচেয়ে বেশি মায়া তার মনেই আছে। সাথী তাদের আড্ডায় ব্যাগরা দিয়ে বলল

– হয়েছে হয়েছে এখন আর এত কথা বলতে হবে না। রুকু খবারটা খেয়ে নাও৷ তারপর সবাই সমু্দ্র পাড়ে ঘুরতে যাব।

বলেই সাথী খাবারটা এগিয়ে দিল রুকুর দিকে। রুকু খাবারটা সাথীর হাত থেকে নিয়ে ভেতরে ভেতরে খুশিতে নাচতে লাগল। জীবনে কখনো সমুদ্র দেখেনি। আজকে সে সমুদ্রবিলাস করবে। এটা ভেবেই তার মন আনচান করতে লাগল। ঝটপট খাবারটা খেয়ে নিয়ে একটু গা ছড়িয়ে বিছানায় এলিয়ে পড়ল। খানিকক্ষণ পর একটা তীক্ষ্ণ আওয়াজে রুকুর ঘুম ভাঙ্গল। ঘুম থেকে উঠে অবাক চোখে।

চলবে?

(কপি করা নিষেধ)

( আর মাত্র কয়েকটা পর্ব বাকি আছে। আপনারা একদিন পর্ব না দিলে অস্থির হবেন না। একদিন পর্ব মিস গেলেও পরদিন আমি দুই পর্ব একসাথে দিব। কালকে পর্ব দিতে পারব না।পরশু একসাথে দুই পর্ব দিব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here