অজানা_আলোর_খোঁজে পর্ব-১৮অন্তিম পর্ব

0
3405

#অজানা_আলোর_খোঁজে
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১৮/অন্তিম পর্ব

এবার কাছে যেতেই রুকুকে দেখে বেশ বিস্মিত হলো তানভীর। রুকু হাতে ফোনটা নিয়ে প্রচন্ডরকম কান্না করছে। কারও সাথে কথা বলে ফোনটা রেখেছে সেটা বুঝায় যাচ্ছে। কারণ কিছুক্ষণ আগে ফোনটা তার কানেই ছিল।রুকুকে কান্না করতে দেখে তানভীর রুকুর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।

– কি হয়েছে? এভাবে কাঁদছো কেন?

রুকু হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখগুলো মুছতে মুছতে বলল

– মন ভালো লাগছে না আবিরকে অনেক মিস করছি। শুনেছি ও নাকি বিয়ে করেছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। ওকেই ছবিতে দেখছিলাম আর কাঁদছিলাম

আবিরের কথা শোনে তানভীরের নিঃশ্বাসটা ভারী হয়ে গেল। বুকের ভেতরে একটা কষ্ট আঘাত হানল। তবুও সেটা বুঝতে না দিয়ে রুকুর দিকে তাকিয়ে বলল

– আবিরের ছবিটা কি দেখতে পারি?

রুকু কোনোরুপ কথা না বলে চুপ হয়ে রইল। মিনেট পাঁচেক দুজনের কেউ কোনো কথা বলল না। বেশ নীরব নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। কিছুক্ষণ পর রুকু তার হাতে থাকা মোবাইলটা এগিয়ে দিল তানভীরের দিকে।

– এই নিন এখানে ছবি আছে দেখে নিন।

তানভীর রুকুর হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে আবিরের ছবিটা দেখল। বেশ পরিপাটি সুন্দর একটা ছেলে। এর মধ্যে হুট করে চাপ লেগে যায় মোবাইলে। তারপর যা দেখল তা দেখে রিতীমতো তানভীর ঘামতে লাগল। বেশ অদ্ভুত লাগছিল সবকিছু। বুঝতে পারছিল না এসব কি। তানভীর কোনোরূপ কথা না বলে আস্তে করে রুকুকে মোবাইলটা দিয়ে দিল। রুকু মোবাইলটা নিয়ে আবার উদাস মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। এদিকে তানভীরের অস্থিরতা যেন বেড়েই চলেছে। নিজেকে সামলে নিল। তারপর দৌঁড়ে গেল রুকু যে রুমে থাকে সে রুমে। দরজায় খটখট আওয়াজ করতে লাগল। সাথী ঘুমঘুম চোখে দরজাটা খুলে বলল

– কি রে কি হয়েছে? এভাবে ঘামছিস কেন? আর এত সকালে এখানে কেন?

তানভীর গলার স্বরটা ভারী করে বলল

– আগে একটু রুমে ঢুকতে দে তারপর বলছি। আর দরজাটা লক করে দে যাতে রুকু এর মধ্যে রুমে প্রবেশ করতে না পেরে।

তানভীরের এমন বিমর্ষ কন্ঠ শোনে রুমে থাকা সবাই বিচলিত হয়ে গেল। সাথী দেরি না করেই রুমের দরজাটা লক করে দিল। তানভীর রুকুর ব্যাগটা নিয়ে সব ঘাটতে লাগল। অবাক হয়ে সব দেখতে লাগল। বার্থ সার্টিফিকেট দেখে অবাক হলো সে। রুকু বলেছিল রুকু ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। সে অনুযায়ী তার বয়স বিশের উর্ধ্বে হওয়ার কথা না। কিন্তু বার্থ সার্টিফিকেট অনুযায়ী রুকুর বয়স তেইশ এর উপরে। মিথ্যা কেন বলল সেটা তানভীরের কাছে একদম অজানা। বিষয়টা আরও খতিয়ে দেখতে লাগল তানভীর। একে একে ব্যাগের সব বের করল। যতই ব্যাগ ঘাটতে লাগল ততই তানভীর চমকাতে লাগল। কারণ রুকুর ডায়রিতে একই ঘটনা ভিন্ন ভিন্ন তারিখ দিয়ে কয়েকবার লেখা।ভেতরটা কেমন জানি খাঁ খাঁ করছিল। তবে বুঝতে পারছে না এসবের মানে কি। গভীর রহস্য আছে এটা শুধু টের পাচ্ছে। কোনো কথা না বলে সবকিছু আবার গুছিয়ে রেখে দিল ব্যাগে। তানভীরের সাথে বাকিরাও বেশ চমকালো বিষয়টা নিয়ে। শষী বলে উঠল

– এর কারণ আমাদের অজানা। অবশ্যই কোনো রহস্য আছে। রুকুর বাড়ির ঠিকানা অনুযায়ী একা গেলে হয়তো বিপদে পড়ার আশঙ্কা আছে। যেহেতু ওকে আমরা চিনি না আর ও একের পর এক মিথ্যা বলে গেছে সেহেতু ওকে ভরসা করা ঠিক হবে না। আমি মামাকে বলে রাখব। প্রথমেই আমরা ওর এলাকার পুলিশের কাছে যাব তারপর ওদের বাসায় যাব। যদি রুকু সত্যি হয় তাহলে তো আমরা এর স্টেপ নিব। আর যদি রুকু সব বানিয়ে বলে তাহলে রুকুর বিরুদ্ধে স্টেপ নিব। ভেবে চিন্তায় পা ফেলতে হবে। রুকুকে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না। সবকিছু সুন্দরভাবে গুছিয়ে করতে হবে। তবে মেয়েটার চেহারায় যথেষ্ট মায়া আছে বলা যায়।

পাশ থেকে সাথী বলে উঠল

– চেহারায় মায়া মানে?

– মায়া না থাকলে কি আর তেইশ বছরের মেয়েকে উনিশ বছরের মতো লাগে। ওর বার্থ সাটিফিকেট না দেখে কেউ বুঝবে না ওর বয়স তেইশ এর উপরে। কেন এসব লুকিয়েছে মেয়েটা কিছুই বুঝতে পারছি না।

সাথীও কিছুটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বলল

– সত্যিই এর কারণ বুঝছি না। কিছু তো একটা আছেই। অবশ্যই কোনো রহস্য আছে। নাহয় এরকম করার কথা না। কিন্তু তানভীর তোর সন্দেহ হলো কি করে?

তানভীর কি বলবে বুঝতে পারছে না। সবকিছুই তার এলোমেলো লাগছে। নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। তিরা তানভীরের নীরবতা দেখে বলল

– তোরা ওকে প্রেসার দিস না।আগে সবকিছু জানতে দে। রুকু মেয়েটা বেশ রহস্যময়ী আর রহস্য উদঘাটন করতে দে। কিছুক্ষণ পর আমরা তো রওনা দিব ঢাকার উদ্দেশ্যে তারপর তার গ্রামে যাব। সেখানে গিয়েই বাকিটা জানতে পারব। খুব সাবধানতার সাথে সব করতে হবে। কারণ বিষয়টা সেনসিটিভ। রুকুকে দেখে বুঝতে পারিনি মেয়েটা এমন। বেশ মায়াময় সহজ সরল মনে হয়েছে।

তিরার এমন কথা শোনে সবাই অবাক। যে মেয়েটা সবসময় পাগলামির ছলে কথা বলতো সে মেয়েটা এত গুছিয়ে কথা বলছে। সাথী তিরার হাতটা ধরে বলল

– বেশ গুছিয়ে কথা বলতে শিখে গেছিস।

তিরা শান্ত গলায় জবাব দিল

– জীবনের বিভিন্ন অধ্যায় মানুষকে অনেক কিছুই শেখায়।

“দূরন্ত মেয়েটাও শান্ত হয়ে যায় জীবনের বৈচিত্র্য সব অধ্যায়ের বিচরণে”

তানভীর এবার হালকা গলায় সবাইকে বলল

– তোরা এখানেই থাক। এ বিষয় নিয়ে আর কথা বলতে হবে না। আমরা কিছুক্ষণ পর নাস্তা করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিব। এর মধ্যে রুকুর সাথে স্বাভাবিক আচরণ করবি। পটকার পেটে কথা থাকে না ওকে বলার কোনো দরকার নেই।

সবাই মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। তানভীর বের হয়ে গেল। রুকু ঠিক আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। ফোনে কারও সাথে কথা বলছে। তানভীর কাছে যেতেই বুঝতে পারল আবিরের সাথে বিয়ে নিয়ে ঝগড়া করছে। বেশ চমকালো নিজেকে সামলে নিয়ে রুকুর কাছে যেতেই রুকু ফোনটা রেখে তানভীরের দিকে তাকাল। রুকুর চোখ বেয়ে তখন শ্রাবণের মেঘ ঝড়ছে। রুকুর দিকে তাকিয়ে বেশ অদ্ভুত অনুভব হচ্ছে তার। কি বলবে বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে ইতস্তত গলায় বলল

– তোমার এইচ এস সি কত সাল ?

প্রশ্নটা শোনে রুকু কিছুটা অবাক হয়ে সালটা মনে মনে আওরাতে লাগল। কিন্তু উত্তরটা বলতে পারছে না। একটা সময় মাথায় চেপে ধরল। তানভীর রুকুকে হালকা করার জন্য বলল

– তোমাকে বলতে হবে না থাক। যাও রুমে গিয়ে তৈরী হয়ে নাও। আমরা নাস্তা খেয়ে রওনা দিব। সব বলে রেখেছি পুলিশকে। তোমার ব্যাপারে সব ভেবে রেখেছি। আমরা থাকতে তোমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না।

কথাটা শোনে রুকু তানভীরকে হালকা জড়িয়ে ধরে বলল অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। বলেই রুমের দিকে রওনা দিল। রুকুর এমন স্পর্শে তানভীর স্তব্ধ হয়ে গেল।

আকাশটায় সূর্য বিস্তৃত হয়ে তখন রোদের জ্বলকানি দেখা যাচ্ছিল। এর মধ্যে পটকা উঠে কিছু শুকনো খাবার খেয়ে নিল। তারপর সবাই নাস্তা করে নতুন গন্তব্যের দিকে রওনা দিল।একটা ফেমিলি কেবিন ভাড়া করে লঞ্চে উঠল। কখনো তারা বসে বসে গান তুলছে কখনো একে অপরকে নিয়ে হাসাহাসি করছে।পটকা মনোযোগ দিয়ে খাবার খাচ্ছে। শষী সবার সাথে যোগ দিচ্ছে আবার ক্ষণে ক্ষণে মোবাইল নিয়ে বি এফ এর সাথে তুমুল ঝগড়া করছে। রুকু তখন আনমনে বসে কি যেন ভাবছে আর চোখের জল ফেলছে। রুকুর কান্না সবার চক্ষুগোচর হলে সবাই বলে উঠল

– কি হয়েছে রুকু কাঁদছো কেন?

রুকু চোখের জলটা মুছে হালকা হেসে বলল

– বাড়ি যাব। জানি না কি চলছে সেখানে। মায়ের কথা মনে পড়ছে খুব। কি হয় সে চিন্তায় মন আকুল হয়ে যাচ্ছে।

সবাই বুঝতে পারছে না এটা রুকুর অভিনয় নাকি সত্যি। রুকুর মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে তার মধ্যে কোনো মিথ্যা নেই তবে বাকি সবকিছু প্রমাণ দেয় রুকু অনেক কিছু লুকিয়েছে।সবাই তবুও রুকুকে স্বাত্ত্বনা দিয়ে বলল

– কিছু হবে না আমরা আছি তো।

সময়ের সাথে সাথে লঞ্চে হেলদুল খেতে খেতে সবাই পৌঁছাল ঢাকার সদরঘাটে। এবার রুকুর বাড়ি যাওয়ার পালা। বাসে না গিয়ে সরাসরি একটা গাড়ি ভাড়া করে নিল সবাই। রুকুর চোখে মুখে তখন ভয়ের ছাপ। রুকুর কথা অনুযায়ী রুকুর গ্রামে পৌঁছাল সবাই। থানার কাছে যেতেই তানভীর বলে উঠল

-তোরা এখানে বস একদম বের হবি না। আমি রুকুর বিষয়ে কথা বলে আসছি।

কথাটা বলেই তানভীর নেমে গেল। গাড়ি থেকে নেমে থানার ভেতরে ঢুকল। ওসি সাহেব তখন থানায় বসে পান খাচ্ছিল। তানভীরকে দেখে বলল

– কি হয়েছে বলুন।

তানভীর নিজের পরিচয় দিয়ে রুকুর সমস্ত কাহিনি বলল। ওসি সাহেব তখন একটা ছবি বের করে বলল

– আপনি কি এ মেয়ের কথা বলছেন?

তানভীর অবাক হয়ে বলল

– হ্যাঁ। কিন্তু রহস্য কি বলুন তো।

ওসি সাহেব চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল

– মেয়েটি কোথায়?

– গাড়িতে আছে।

– তাহলে চলুন আমার সাথে মেয়েটির বাড়ি যাওয়া যাক।

তানভীর ওসি সাহেবকে নিয়ে গাড়িতে উঠল। রুকুর বাড়ির দিকে রওনা দিল। গাড়িটা আস্তে আস্তে রুকুর বাড়ির দিকে এগুতে লাগল। মিনেট দশেক পর রুকুর বাড়িতে এসে গাড়িটা পৌঁছাল। রুকুকে নিয়ে ঘরে ঢুকতেই একজন মধ্য বয়স্ক লোক রুকুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল

– কোথায় গিয়েছিলি মা। মোনালি তোকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেল সেখান থেকে কোথায় গিয়েছিলি।

তানভীর অবাক হতে লাগল এসব কথা শোনে। কিসের ডাক্তার কিসের কি। বেশ আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো বিষয়টা কি খুলে বলবেন?

ওসি সাহেব ঘরে রাখা চেয়ারটায় বসে বলল

– ওর নাম রুকু। মানসিক ভারসাম্যহীন এক মেয়ে। ওকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল মোনালি। আর ঐ ভদ্রলোক উনার চাচা হয়। ভদ্রলোকের স্ত্রী সন্তান খুন হওয়ার পর রুকুর দায়িত্ব উনিই নিয়েছে।

বলেই একজন মেয়েকে ইশারা দিল। তানভীর মেয়েটা দেখেই চিনে ফেলল। এই তো সেই মোনালি যার সাথে লঞ্চে দেখা হয়েছিল।তানভীর অবাক সুরে বলল

– উনি কি তেজস্বিনী?

ওসি সাহেব জবাবে বললেন

– ও মোনালি রুকুর দেখাশোনা করে। তেজস্বিনী রুকুর তৃতীয় মা সে চার বছর যাবত জেলে আছে।

অবাক হয়ে তানভীর বলল

– মানে?

– হ্যাঁ। রুকুর বয়স যখন পাঁচ বছর ছিল তখন রুকুর বাবা রুকুর মাকে নির্মম ভাবে খুন করে যেভাবে রুকুর ডায়রিতে খুনের বর্ণণা উল্লেখ করা ঠিক সেভাবে খুন করে। বিষয়টা একদম আড়ালে ছিল। তখন রুকুই এর সাক্ষী ছিল৷ তবে বিষয়টা পুলিশের কান পর্যন্ত যায়নি৷ তারপর রুকুর ভাইকে হত্যা করা হয়। সেদিন রুকুর চাচী রুকুর চাচাত বোনকেও তার বাবা আর সৎ মা মিলে হত্যা করে। এরপর বিষয়টা চার বছর পর আমাদের কানে আসেনি। চার বছর পর রুকুকে যখন হত্যার করতে চায় তখন রুকু ভয়ে পালিয়ে আমাদের কাছে এসে সব বলে।রুকুর চাচা তখন বিদেশ ছিল বিদায় সবকিছু উনার আড়ালে ছিল।আমরা বিষয়টা নিয়ে তদন্ত করি। আর রুকুর বাবা আর তেজস্বিনির শাস্তির ব্যবস্থা করি। রুকুর বাবা মূলত কালুজাদু করতে এমনটা করেছিল। শক্তি হাসিল করতে চেয়েছিল কালো জাদু করে৷ তাই একের পর এক হত্যা করে গেছে নির্মম ভাবে। রুকুর বাবার প্রথম স্ত্রী অর্থাৎ শাদাফের মা মূলত এসব দেখেই পাগল হয়ে গেছিল। উনি পাগলা গারদে আছে।

এসব ঘটনার পর রুকু স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। এর মধ্যে একটা সম্পর্কে জড়ায় ছেলেটার নাম আবির। সেখানেও সে ঠকে। মূলত এতকিছুর জন্য তার জীবনটা আরও দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। ছেলেটা অন্য মেয়েকে বিয়ে করে ফেলে। ছেলেটার বিয়ে এদিকে এত নির্মম পরিস্থিতি মিলিয়ে সে মানসিক ভাবে আঘাত পায়। জীবনের ঘটে যাওয়া নির্মম পরিস্থিতি গুলো তাকে তাড়া করতে থাকে। মূলত মানসিক ভাবে উল্টা পাল্টা চিন্তা করে এমনটা করে। সে যা চিন্তা করে সেটা সে বাস্তব মনে করে। সে ঘটনা গুলো থেকে এখনো বের হয়ে আসতে পারছে না। অতীতের ঘটনাগুলোকে সে বর্তমান মনে করে এমনটা করে। এ নিয়ে দুইবার পালালো। মোনালি বিষয়টা জানাতে পারে নি পুলিশকে কারন সে ঢাকায় ছিল রুকুকে চিকিৎসা করতে নিয়ে গেছিল। রুকুর যে ব্যাগটা সে যেখানেই যাক সাথে নিয়ে যাবে। আর কোথাও বের হলে সাদা শাড়ি পড়ে বের হবে। ঐ আগের ঘটনার ট্রমা।

আর আপনি বললেন না রুকুর মোবাইলে সীম কার্ড ইনসার্ট তবুও কার সাথে কথা বলে। আর আজকে সকালে এটা দেখেই আপনার ওকে সন্দেহ হয়।

তানভীর শান্ত গলায় বলল

-হ্যাঁ এটা বুঝতে পেরেই অদ্ভূত লেগেছিল আর সন্দেহ হয়েছিল।

এটাও তার কল্পনা। মোবাইলে এলার্ম সেটিং করা সেটাই বেজে উঠে। আর ভাবে আবির কল দিয়েছে। তখন সে মোবাইলে কথা বলতে শুরু করে। কাহিনি এটাই। তবে এর আগের বার এরকম করে পালিয়ে মেয়েটা বেশ বিপদে পড়েছিল। ঠিক সময় উদ্ধার না করতে পারলে রেপ এর শিকার হতো। সেক্ষেত্রে আপনারা ওকে এত সাহায্য করেছেন এটার জন্য ধন্যবাদ। রুকুর বয়স তেইশ হলেও সে চার বছরের আগের সময়েই এখনো আটকে আছে।

কথাগুলো শোনার পর সবাই বেশ অবাক হলো। কত কিছু মানুষের জীবনে ঘটে তা সত্যিই কল্পনা করা যায় না। তানভীর রুকুর পাশে গিয়ে রুকুকে বলল

– ভালো থেকো। এই যে ওসি সাহেব দেখছো উনি তোমার বাবা আর তোমার সৎ মাকে শাস্তির ব্যবস্থা করেছে। আর মোনালি তেজস্বিনি না ভালো করে দেখো ও তোমার দেখাশোনা করবে। তুমি এখানে ভালো থাকবে।

রুকু স্বস্তির একটা নিঃশব্দ নিয়ে বলল

– আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।

তানভীরের মনটা রুকুর কাছে পড়ে থাকলেও বাস্তবতা এটাই যে তাকে এখন এ বাড়ি থেকে বিদায় নিতে হবে। সবাইকে বিদায় জানিয়ে তানভীর, শষী,তিরা,সাথী, পটকা বের হলো। খানিকটা পথ হাঁটতেই তিরা বলল

– তোর পাশে থাকার সুযোগ দেওয়া কি যায় না।

তানভীর তিরার হাতটা ধরে বলল

– জীবনে চলার পথে কত বৈচিত্র মানুষের সাথে দেখা হয়। বৈচিত্র্য তাদের জীবন। ঘটনার আড়ালে কত ঘটনা থাকে সেটা বুঝা বড় দায়। রুকু মেয়েটা কতটা কষ্ট পেয়ে এ জীবনে এসে পৌঁছেছে চিন্তা কর। নির্মম কত হত্যার সাক্ষী সে।আর তার বাবা সামান্য কালো জাদুর জন্য কতগুলো প্রাণ নির্মম ভাবে নিল। ভাবলেই গা টা শিউরে উঠে।জানি তোকে কষ্ট দিয়েছি তবে জীবন সাথী বানিয়ে সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে পারব না।ভালো থাকিস তুই।

তিরা আর কিছু বলল না। সবাই রুকুর সাথে ঘটে যাওয়া নির্মমতার কথা ভেবে আঁৎকে যাচ্ছিল।

তারপর সবাই সবার গন্তব্য চলে গেল। তানভীরও বাসায় গেল। বছর দুয়েক রুকুর খোঁজ খবর নেয় নি তানভীর। তিরারও অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে।এর মধ্যে একটা কলেজে তানভীরের চাকুরি হলো৷ প্রথম দিন যেতেই স্টুডেন্ট পরিচিতর জন্য একের পর এক নাম জিজ্ঞেস করতে লাগল। একটা মেয়ে বলে উঠল আমার নাম রুকাইয়া। নামটা শোনতেই তানভীরের বুকটা ধুক করে উঠল। এর মধ্যে রুকুর খোঁজ না নিলেও সেদিন কলেজ ফেরত এসে রুকুর খুঁজ নিয়ে জানতে পারল রুকুর পরিবার রুকুকে নিয়ে সব বিক্রি করে ঢাকায় চলে এসেছে কোথায় এসেছে কেউ জানে না। তানভীর সেদিন রাতে একটা ডায়রি নিয়ে ছোট্ট করে লিখল

“হয়তো কোনো এক পথে দেখা হবে দুজনের।যে পথে আমি আলো নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকব৷ আর তুমি আসবে #অজানা_আলোর_খোঁজে।”

বিঃদ্রঃ –
১) মেনালি একটা পর্বে কেবিনে ঢুকে বলেছিল যে হাতে একমাস সময় আছে আর রুকুকে একমাসের মধ্যে বের করবে। এর কারণটা ছিল যে রুকুর পরের চেক আপ একমাস পর ছিল এবং রুকুর চাচাকে মোনালি এজন্য স্বাত্ত্বণা স্বরূপ এ কথা বলেছিল।
২)তানভীর কেন দুবছর খবর নেয় নি। বাস্তবতা এটাই শত ভালোবাসা থাকলেও সব ভালোবাসার খোঁজ খবর প্রতিনিয়ত নেওয়া সম্ভব হয়না। এতে পারিবারিক ঝামেলা হওয়ার সম্ভবনা থাকে। আর তানভীর অত্যন্ত বাস্তবাদী তাই আর খোঁজ খবর নেয়নি।

প্রিয় পাঠক পাঠিকা

আমি চেয়েছিলাম একটা গল্পে সব তুলে ধরতে সামাজিক কিছু দিক,থ্রিলার,রোমান্টিক,বন্ধুত্বের বন্ধন, ভালোবাসার যোগ বিয়োগ,হাসি মজা,ভ্রমন। তাই সে সব কিছু বেইস করে এটা লেখা। আমি সব কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কেমন হয়েছে অবশ্যই বলবেন।ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here