অজানা_আলোর_খোঁজে পর্ব-১৭

0
2369

#অজানা_আলোর_খোঁজে
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা।
#পর্ব-১৭

পটকা হাঁপাতে হাঁপাতে কষ্টের সুরে জবাব দিল

– আমার জীবনের সব শেষ হয়ে গেল আজকে। আমাকে কেউ খাবার দে। খুব কষ্ট হচ্ছে।

তিরা পটকার কথা শোনে কপট হেসে বলল

– মানুষ কষ্টে খাওয়া ছেড়ে দেয় আর তুই কষ্টে খাবি। কাঁদব নাকি হাসব বুঝতে পারছি না।

পটকা তিরার কথা শোনে সোজা হয়ে বসে বলল

– দেখ তিরা সবসময় হেয়ালি ভালো লাগে না।

– তো কী ভলো লাগে। এমন ভাবে দৌঁড়ে এসেছিস ভাবলাম কোনো কাটা লাশ দেখেছিস হয়তো সমুদ্র পাড়ে। তা’না এসে খাবার চাচ্ছিস।

– তুই কি বুঝবি মনের কষ্ট। তুই শুধু আছিস আমাকে হেয় করার মধ্যে।

বলেই পটকা কাঁদতে লাগল। আর টাউজারের পকেট থেকে একটা কেক বের করে খেতে লাগল। পটকার কান্ড দেখে বসে থাকা সবাই হুহু করে হেসে দিল। সবার হাসির শব্দে পটকা পুরো কেকটা মুখে দিয়ে একবারে পুরে গিলে বলতে লাগল।

– আর কেক খাবই না।

শষী হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেয়ে বলল

– আরে তুই আর খাবি কীভাবে তোর পেটেই তো সব চলে গেছে।

তানভীর সবাই কে হাতে ইশারা করে বলল

– তোরা সবাই চুপ হ। বেচারাকে আর ক্ষেপাস না।

বলেই পটকার দিকে তাকিয়ে দেখল। পটকার মুখটা বিষন্ন হয়ে আছে। পটকার পিঠে একটা হালকা চাপর দিয়ে বলল

– এবার বল কী হয়েছে? হুট করে এভাবে এসেছিস কেন? কোনো সমস্যা হয়েছে কী?

পটকা শার্টের পকেটে থাকা চকলেটের প্যাকেটটা ছিড়ে মুখে নিয়ে আমলানি দিয়ে বলল

– পর্সা বিয়ে করে নিছে রে।

পর্সা হলো পটকার ভালোবাসা। ভালোবাসা বিষয়টা পটকার দিক থেকেই ছিল। তবে পর্সার দিক থেকে প্রথমে থাকলেও পরে ছিল না। এর কারন অবশ্য পটকা নিজে। পটকায় একমাত্র বিরল প্রজাতি যে তার জি এফ কে বার্গার দিয়ে অফার করেছে। যে জি এফকে ভালোবাসার প্রমাণ স্বরূপ মস্ত বড় মাঠের মতো পিজ্জা গিফট করবে বলেছে। এসব শোনে পর্সা রিলেশনের সপ্তাহ খানেক পরেই ব্রেকআপ করে দিয়েছে।কিন্তু পটকা মন থেকে পর্সার ভালোবাসা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এজন্যই পর্সার বিয়ের বার্তা পেয়ে পটকা বেশ কষ্ট পেয়েছে। তার নমুনা তো দেখায় যাচ্ছে।

তানভীর পটকার কথা শোনে হালকা হাসি দিয়ে বলল

– যাক বেচারি কাজের কাজ করেছে।

পটকা তানভীরের কথা শোনে কপট রেগে বলল

– কেন কি কাজের কাজ করেছে শোনি?

– এই যে তোর মতো খাদককে রেখে বিয়ে করেছে। পেট টা যা বানিয়েছিস পর্সা কেন আর কেউ তোকে বিয়ে করবে না।

– সবসময় আমাকে হেয় করিস তোরা। ক্ষুধা লাগলে খাব না?

– হুম তা ঠিক। ওকে যা হয়েছে তে হয়েছেই এবার আরও কিছু পকেটে থাকলে খেয়ে চল। তোদের সবার সাথে কথা আছে। একসাথে বসে রুকুর বিষয়টা নিয়ে কথা বলব।

পটকা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল

– মনের কষ্ট কেউ বুঝল না রে।

পটকার কথা শোনে সবাই হাসতে লাগল। হাসাহাসি করে সবাই উঠে দাঁড়াল। রুকু ভয়ে তানভীরের হাতটা বেশ শক্ত করে ধরল। তিরা তা দেখেও নিজেকে সামলে নিল। তানভীরের হাত যখন রুকু ধরল। মনের অজান্তেই আস্তে গলায় তানভীর বলে উঠল

– এভাবেই হাতটা ধরে রেখো সবসময়।

তানভীরের কথা শোনে রুকু একদম চুপ হয়ে গেল। মনের গহীনে এক ভালোবাসা যেন উত্তাল সাগরের মতো তার বুকে ঢেউ তুলছে। চুপ হয়ে শুধু তানভীরের হাতে হাত রেখে চলতে লাগল আস্তে পায়ে। রাতের আকাশটায় তখন তারায় খেলা করছিল। চাঁদের হালকা আলোয় সবকিছু যেন জ্বল জ্বল করছিল। ভালোবাসার হাওয়া যেন তানভীর আর রুকুর গায়ে লেগে শীতলতার অনুভূতি দিচ্ছিল। ভিতরে অনেককিছুই হচ্ছে এখন কিন্তু দুজনের বাহিরে তা প্রকাশ পাচ্ছে না।

এক পর্যায়ে সবাই রিসোর্টে পৌঁছাল। রুকু রুমে এসে কাপড়টা পাল্টাতে ওয়াশরুমে গেল আর তিরা চুপ হয়ে বসে চোখের পানি ঝড়াতে লাগল। সাথী তিরার পাশে গিয়ে তিরাকে জড়িয়ে ধরে বলল

– কষ্ট পাস না। একটু স্থির কর নিজেকে। জীবনে সব পেয়ে ফেললে পূর্ণতার মূল্য থাকে না। একটু অপূর্ণ থাকতে হয়।

তিরার কান্নাটা যেন আরও জোরে আসতে লাগল। সাথীকে জড়িয়ে সজোরে কান্না করে বলল

– হুম পাঁচ বছরের ভালোবাসা হেরে গেল। হয়তো ভালোইবাসতে পারিনি ওকে।

এই বলে দুহাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চুখ দুটো মুছতে মুছতে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিল। শষীও তিরাকে দেখে মন খারাপ করেও নিজেকে স্বাভাবিক করে নিল। এর মধ্যে তানভীর রুমে প্রবেশ করল। তানভীর রুমে প্রবেশ করে খেয়াল করলো তিরার চোখগুলো ফোলা। তিরার চোখ ফোলা দেখে তানভীর তিরার পাশে গিয়ে বসে বলল

– কি রে কাঁদতেছিস কেন?

– নাহ কাঁদছি না তো।

– চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে কাঁদতেছিস।

– এমনি কেঁদেছি তোকে এত জবাব দিতে যাব কেন?

বলেই মুখ ঘুরিয়ে নিল তিরা।তানভীর তিরার পাশে বসে দুহাতের চারটা আঙ্গুল কানের পিছনে দিয়ে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে চোখটা চেপে মুছে দিয়ে বলল

– তোকে কাঁদলে মোটেও ভালো লাগে না। হাসলেই তোকে সুন্দর লাগে। তোর খামখেয়ালি গুলোই বেশি ভালো লাগে। এত সিরিয়াসনেস তোকে মানায় না।

বলেই হাতটা সরিয়ে পাশে বসলো। তিরা তানভীরের এতটুকো ভালোবাসায় একদম গলে গেল। নিজেকে স্বাভাবিক করে হেসে দিল। এর মধ্যেই রুকু ওয়াশরুম থেকে বের হলো। রুকু বের হওয়ার সাথে তানভীর বলে উঠল

– তোমার বাসার ঠিকানা দাও। কালকে সকালে এখান থেকে গিয়ে একদম তোমার বাসায় উপস্থিত হব।

এরপর শষীর দিকে তাকিয়ে বলল

– তুই তোর মামাকে সবটা জানিয়ে রাখ। যদি কোনো দরকার পরে ফোন দেওয়ার সাথে সাথে যেন সাহায্য পাই।

শষী তানভীরকে আশ্বাস দিয়ে বলল

– তুই চিন্তা করিস না আমি বলে রাখব।

রুকু এর মধ্যে বাসার ঠিকানাটা তানভীরকে বলল।সবাই প্ল্যান করলো যে কালকে সকালে উঠেই তারা রুকুর বাড়িতে যাবে। সবকিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখল।

রাতের খাবার সেড়ে রুকু চুপটি করে রিসোর্টের খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল। রাতের মৃদুমগ্ন বাতাসে রুকুর চুলগুলো এলোমেলো হয়ে তখন দুলছিল। তানভীর শুধু দূর থেকে রুকুকে চেয়ে দেখছিল। এক অপরূপ মায়া মুখটা যেন তানভীরকে শুধু তার দিকেই আকৃষ্ট করছে। এত অল্প পরিচয়ে এত মায়া কীভাবে আসলো সেটাও তানভীরের কাছে বেশ আশ্চর্য লাগছে। রুকুর দিকে অপলক নয়নে তাকিয়ে থেকে আরও মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে তানভীর। তার ভেতরের শ্বাস যেন জোরে জোরে বের হতে লাগল। মন চাচ্ছে দৌঁড়ে গিয়ে রুকুর পাশে দাঁড়িয়ে রাতের আকাশটা উপভোগ করতে। তবে সে সাহস তার হচ্ছে না। তিরা এসে তানভীরকে এভাবে দেখে তানভীরের কাছে গিয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল

– দূর থেকে না দেখে কাছে গিয়ে দেখ। মনের কথাটা বলে ফেল। ভেতরে চেপে রাখলে হবে বল।

তিরার কথা শোনে তানভীর হালকা লাজুক কন্ঠে বলল

– ধুর কি যে বলিস না। কাছে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না।

– ভালোবাসিস রুকুকে?

তানভীর তিরার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে চুপ হয়ে রইল। তিরার আর বুঝতে বাকি রইল না তানভীর রুকুকে কতটা ভালোবাসে। তিরার ভেতরে ভাঙ্গনের ঝড় বইছে। তবে বাইরে সে ঝড়ের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে না। তানভীরের পিঠে হালকা হাতে ধরে বলল

– আচ্ছা দূর থেকেই দেখ তাহলে আমি গেলাম।

বলেই তিরা চলে গেল। তানভীর রুকুর দিকে তাকিয়ে রুকুকে পুনরায় দেখতে লাগল। রুকু তার সামনে আসা চুলগুলো পেছনে নিচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পর গায়ের উড়না ঠিক করছে৷ আবার দুহাত মেলে চোখ বন্ধ করে বাতাস উপভোগ করছে। এর মধ্যেই সাথী এসে তানভীরকে ধাক্কা দিয়ে বলল

– আর এভাবে দেখতে হবে না এবার রুমে যা। অনেক রাত হয়েছে।

বলেই রুকুর কাছে গেল। রুকুকে নিয়ে রুমে গেল। তানভীর রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করতেই রুকুর চোখটা ভেসে উঠল। পরক্ষণেই তানভীর চোখটা খোলে ফেলল। রুকুকে ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেল। সকালে বেশ ভোরেই ঘুম ভাঙ্গল তানভীরের। রুম থেকে বের হয়ে খেয়াল করল রুকু ঠিক আগের জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছে। এবার কাছে যেতেই রুকুকে দেখে বেশ বিস্মিত হলো তানভীর।

চলবে?

(কপি করা নিষেধ)

(শেষ পর্বটা বাকি। শেষ পর্বটা বেশ গুছিয়ে লিখতে হবে। তাই দুদিন পর দিব।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here