অজানা_আলোর_খোঁজে পর্ব-৮

0
2155

#অজানা_আলোর_খোঁজে
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৮

কেবিনে ঢুকে গেল। কেবিনে ঢুকার সাথে সাথে তানভীরের ভয়ে বুকটা কাঁপতে লাগল। ইষৎ ঘাম কপালে চক্ষুগোচর হলো। কি বলবে বুঝতে পারছিল না। লিয়াকত সাহেবও বেশ ঘাবড়ে গেল। তানভীর মনে মনে ভাবতে লাগল তীরে এসে তরী ডুবে যাবে না তো। এর মধ্যেই লিয়াকত সাহেব ডাহুকের মতো মাথাটা উঁচিয়ে বলে উঠল

– কে আপনি আপনাকে তো চিনলাম না। এভাবে কেবিনে কেন ঢুকে পড়লেন?

লিয়াকত সাহেবের কথা শোনে মোনালি হালকা কেঁপে উঠল। ভয়ে ফ্যাকাশে মুখটা নিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে স্বাভাবিক করে জবাব দিল

– ভাবলাম উনার স্ত্রী অসুস্থ তাই দেখতে এসেছিলাম।

লিয়াকত সাহেব কপট রাগের পরিমাণ মুখে প্রকাশ করে বলল

– সে আমার মেয়ের জামাই হয়। আমার মেয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ। হুটহাট চিল্লানি দিয়ে উঠে। মনের মধ্যে হাজারটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে থাকে। আর অপরিচিত মানুষ সহ্য করতে পারে না। এজন্যই ঢাকায় নিয়ে এসেছিলাম ডাক্তার দেখাতে।
একটু আগে আপনি এসেছিলেন এটা নিয়ে বেশ পাগলামি শুরু করেছিল এখন তাকে বুঝিয়ে একটু স্বাভাবিক করেছি এর মধ্যে আপনি আবার আসলেন। এভাবে কি কাউকে বিরক্ত করা উচিত বলুন? কাউকে খোঁজতে হলে পুলিশের সাহায্য নিন। তা না করে এভাবে একা একা কেন খু্ঁজছেন?

লিয়াকত সাহেবের কথা গুলো শোনে মোনালির মুখটা একদম চুপসে গেল। কারণ লিয়াকত সাহেবের কথায় যথেষ্ট যুক্তি ছিল। তানভীরও উনার কথায় সম্মতি দিয়ে বলে উঠল

– সত্যিই তো কেউ নিখোঁজ হলে পুলিশের সাহায্য নিন আপনি একা একা কেন খুঁজছেন? নাকি এতে কোনো ঘাপলা আছে।

মোনালি এবার হতভম্ব হয়ে গেল কথাগুলো শোনে। কি বলবে বুঝতে পারছিল না বেশ আমতা আমতা করছিল। এমন সময় মোনালির ফোনটা বেজে উঠল। মোনালি চোখের চশমাটা ঠিক করতে করতে ফোনটা ধরে বলল

– আমি দেখতেছি কিন্তু মেয়েটাকে পাচ্ছি না। আপনি চিন্তা করবেন না একমাসের আগেই খোঁজে বের করব। হাতে তো একমাস সময় আছেই।

বলেই ফোনটা রেখে দিল। ফোনটা রেখে কাচুমাচু হয়ে মুখটাকে ফ্যাকাশে করে বলল

– আপনাদের এভাবে বলা ঠিক হয়নি। মেয়েটা আমার সাথেই এসেছিল হুট করে পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে মেয়েটা মানসিক ভারসাম্যহীন। এ মুহুর্তে পুলিশকে ইনফর্ম করার সুযোগ পায়নি। যাইহোক আমার পক্ষ থেকে দুঃখিত।

তারপর লিয়াকত সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল

– আপনার মেয়ে হয়তো বেশ ভয় পেয়ে গেছে। এটার দোষটা হয়তো আমারি এজন্য দুঃখিত।ক্ষমার চোখে দেখবেন।

বলেই মোনালি কেবিন থেকে প্রস্থান নিল।মোনালি যাওয়ার পর তানভীর চট করে দরজাটা আটকে দিল। সবাই যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। তানভীর আর লিয়াকত সাহেব খেয়াল করল রুকু এখনো ভয়ে মধুমতির বুকে মাথা গুজে আছে। রুকুকে এভাবে ভয় পেতে দেখে তানভীর রুকুর পাশে বসে রুকুকে হালকা ধরতেই রুকু চমকে গিয়ে তাকাল। তানভীর খেয়াল করল রুকুর চোখ মুখ ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে আছে। চোখগুলো ফুলে লাল হয়ে আছে। রুকুর মন থেকে ভয়টা দূর করার জন্য তানভীর রুকুকে ধরে বলল

– ভয় পাওয়ার মতো কিছু হয়নি। কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আমরা সবাই তোমার পাশে আছি।

তানভীরের কথা শোনে মধুমতিও বলে উঠল

– হ্যাঁ মা আমরা আছি তোর পাশে। এখন চোখ মুখটা ধুয়ে একটু খাবার খেয়ে নে তো। অনেকক্ষণ যাবত হয়তো না খেয়ে আছিস। মনে কিছু নিস না তুই করে বললাম। অল্প সময়ে বেশ আপন হয়ে গেছিস তো তাই।

রুকু মধুমতির কথা শোনে চোখগুলো মুছে পুনরায় জড়িয়ে ধরে বলল

– ছোটবেলায় মায়ের আদর বুঝার আগেই মাকে হারিয়েছি এখন মনে হচ্ছে আল্লাহ আমাকে আপনাকে দিয়ে সে মায়ের আদরের কমতিটা পূরণ করে দিচ্ছে।

এর মধ্যেই তানভীর মধুমতি আর লিয়াকত সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলল

– আমার একটা ভুল ধারণা ছিল সেটা আজকে একদম পাল্টে গেছে। আপনাদের না দেখলে সে ধারণাটা হয়তো কখনো পাল্টাত না।

তানভীরের কথা শোনে মধুমতি আর লিয়াকত সাহেব দুজনেই একসাথে বলে উঠল

– কি ধারণা শোনি?

– আমি জানতাম বরিশালের মানুষ অনেক খারাপ। ছোটবেলা থেকে এমনেই শোনে এসেছি। বিভিন্ন ভাবে সবসময় দেখে এসেছি বরিশালের মানুষকে নানা ভাবে হেয় করে কথা বলা হয়। আপনাদের দেখে মনে হয় না বরিশালের মানুষ খারাপ। আপনাদের দেখে মনে হয় আপনারা একদম সরল মনের মানুষ।

লিয়াকত সাহেব তানভীরের কথা শোনে হালকা হেসে বলল

– সব এলাকায় ভালো মন্দ আছে কোনো এলাকায় কম কোনো এলাকায় বেশি। বরিশালেও ভালো আছে আবার খারাপও আছে তেমনি অন্য এলাকা গুলোতেও ভালো খারাপ আছে। ভালো খারাপ নিয়েই এ জগৎ। বিয়ের পর থেকে আমি আর মধুমতি সবসময় চেয়েছি মানুষকে সাহায্য করার। আমি তোমাদের সাপোর্ট করতাম না। তবে কেন করেছি জানো?

তানভীর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো

– কেন করেছেন?

– কারণ আমিও মধুমতিকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম। তাই আমার বাবা আমাকে ভিটায় থাকার জায়গা দেয়নি। এজন্য মধুমতিকে নিয়ে বরিশাল থেকে পাড়ি দিয়েছিলাম ঢাকা শহরে। শিক্ষিত হওয়ায় চাকুরির অভাব হয়নি। ঢাকায় এসে একটা ছোটখাট স্কুলে চাকুরি নিয়ে সংসার শুরু করি। তারপর বাচ্চা কাচ্চা হওয়ার পর পরিবারের সবাই মেনে নিছে।

লিয়াকত সাহেবের কথা শোনে তানভীর উৎসুক গলায় বলল

– আপনারা পালিয়ে বিয়ে করেছেন?

এর মধ্যে রুকুও মুখটাকে স্বাভাবিক করে বলল

– চাচী আপনাদের কাহিনিটা বলেন শোনি।

মধুমতি বেশ লজ্জা পাচ্ছিল তখন। একটু একটু মুচকি মুচকি হেসে বলল

– তোমার চাচাকে জিজ্ঞেস করো। আমি বলতে পারব না। বেশ লজ্জা লাগে আমার।

মধুমতির লজ্জা দেখে তানভীর হালকা হালকা হাসির ফিরিক তুলছে মুখে। আর লিয়াকত সাহেব একটা অট্ট হাসি দিয়ে বলল

– মধুমতি একটু লাজুক স্বভাবের সে বলতে পারবে না আমিই বলছি শোনো। মধুমতি তখন ক্লাস এইটে পড়ত। আমি মধুমতির লজিং মাস্টার ছিলাম। ওদের বাড়িতে থেকেই পড়াতাম ওকে। এখন এত লজ্জা পেলে কী হবে তখন বেশ চঞ্চল মেয়ে ছিল। সারাদিন পড়ায় ফাঁকি দেওয়ার ধান্দায় থাকত।

কথাটা শোনে মধুমতি মুখটা বাঁকিয়ে বলল

– মোটেও পড়ায় ফাঁকি দিতাম না।

লিয়াকত সাহেব মধুমতির বাঁকা সুরের কথা শোনে জবাব দিল

– সে তো কেমন ছিলে ভালোই জানি।

– হ্যাঁ এখন বানিয়ে বানিয়ে কথা বলে আমাকে লজ্জা দেওয়া হচ্ছে। তোমার চালাকি সব বুঝি আমি৷ সবসময় আমাকে ছোট করার ধান্দায় থাকো।

এক কথা দুই কথায় লিয়াকত সাহেব আর মধুমতি একটা ঝগড়া বাঁধিয়ে বসলো। তানভীর আর রুকুর তাদের ঝগড়া দেখে বেশ হাসছিল। ভালোবাসার খুঁনসুটি গুলো যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছিল। এদিকে মধুমতি ঝগড়ার এক পর্যায়ে গালটা ফুলিয়ে বসে রইল। লিয়াকত সাহেব মধুমতিকে রাগ করতে দেখে চুপ হয়ে এক পলকে মধুমতির দিকে তাকিয়ে রইল। তানভীর বেশ অবাক হয়ে বিষয়গুলো লক্ষ্য করতেছিল। তাদের বয়স বাড়লেও যেন তাদের ভালোবাসার বয়স বাড়ে নি৷ দেখে মনে হচ্ছে সদ্য প্রেমে জড়ানো কোনো কপোত কপোতি প্রেম করছে। মধুমতির রাগী মাখা মুখটাতে যেন তরুণীর বয়সের একটা ছাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে সেই সাথে লিয়াকত সাহেবের চাহুনিতে একটা তরুণ যুবকের ছাপ প্রকাশ পাচ্ছে। লিয়াকত সাহেব কিছুক্ষণ তাকিয়ে মধুমতিকে ডেকে বলল

– আরে রাগ করে বসলে কেন?আমি তো তোমার সাথে মজা করছিলাম। কি যে করে বসো না৷

পরক্ষণেই লিয়াকত সাহেবের কথা শোনে মধুমতির মুখটা প্রশস্ত করে একটা হাসি দিল। লিয়াকত সাহেব যেন সে হাসি দেখে নিজের নয়ন জোড়াল। রুকুও তাদের খুঁনসুটি গুলো অপলক নয়নে দেখে ভাবতে লাগল ভালোবাসা কখনো বয়স মানে না। ভালোবাসা সবসময় বয়সের উর্ধ্বে। ভালোবাসা কখনো বুড়ো হয় না। ভালোবাসা সবসময় তরুণ সবসময় সজীব। এর মধ্যেই লিয়াকত সাহেব বলে উঠল

– কাহিনি তো এখনো বলা হয়নি। কাহিনিটা শোনো সবাই।

রুকু আর তানভীর এবার লিয়াকত সাহেবের দিকে মনোযোগ সহকারে তাকাল। এদিকে মধুমতির মুখে যেন লজ্জার বহিঃপ্রকাশ টা মুখ লাল হয়ে ফুটে উঠেছে। লিয়াকত সাহেব পুনরায় বলতে লাগল

– মধুমতিকে যখন পড়াতাম। বেশ ভালো লাগত। তবে শিক্ষক মানুষ ছাত্রীকে প্রস্তাব কি করে দিই এই ভেবে মনের কথা বলা হত না। কয়েকবার বলার জন্য ছটফট করে বলতে নিয়েও বলতে পারিনি। এরমধ্যেই একদিন মধুমতি আমাকে প্রস্তাব দিয়ে বসলো।

কথাটা শোনে তানভীর আর রুকু বলে উঠল আরে বাবা চাচী তো অনেক সাহসী। তানভীর আর রুকুর কথা শোনে মধুমতি লজ্জায় দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে হাসতে লাগল। লিয়াকত সাহেব মধুমতির হাসিটা দেখেই বলল

– আজকে যেভাবে মুখ ঢেকে হাসছে সেদিনও মধুমতি প্রস্তাব দিয়ে এভাবে লজ্জা পেয়ে হাসছিল। মধুমতির হাসি দেখে সেদিন বুকের বাম পাঁজরে হালকা চিনচিন করে ব্যাথা হচ্ছিল। বলতে পারো ভালোবাসার ব্যাথা। সে থেকেই শুরু হয় আমাদের প্রেম কাহিনি। মধুমতির বাবা ছিল একরোখা মানুষ। কীভাবে যেন বুঝতে পারল মধুমতির সাথে আমার সম্পর্ক চলছে তাই আমাকে পড়ানো থেকে বাদ দিয়ে মধুমতির বিয়ে ঠিক করে ফেলল। আমি তো তখন পাগল প্রায়। এখন তো ঘরে ঘরে মোবাইল আছে তখন তো মোবাইলও ছিল না। তোমার চাচীকে আবার ঘরের বাহিরেও আসতে দিত না। কি যে মুশকিলে পড়েছিলাম কি বলব। যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। বুকটা চিড়ে যাচ্ছিল। ভালোবাসার যন্ত্রণা অনেক বড় যন্ত্রণা।
এর মধ্যে জানতে পারি পনের দিন পর মধুমতির বিয়ে। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। আমার বাবাকে বললাম। আমার বাবা সরাসরি বলে দিল মধুমতিকে বিয়ে করলে বাড়িতে জায়গা দিবে না। তবে আমি মধুমতিকে ছাড়া নিজেকে ভাবতে পারতাম না। অনেক কষ্টে রাতের অন্ধকারে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে বিয়ের পাঁচদিন আগে ওর সাথে দেখা করি। জিজ্ঞেস করি আমাকে বিয়ে করবে কিনা। মধুমতি আর না করে নি। মধুমতিকে একটা চিঠি হাতে দিয়ে চলে আসলাম। কীভাবে বাসা থেকে পালাবে সব চিঠিতে লিখে দিয়েছিলাম। সে ও তাই করলো। এরপর পালিয়ে বিয়ে করলাম। পরিবার জানার পর মেনে নেয়নি। সরাসরি মধুমতিকে নিয়ে চলে আসলাম ঢাকায়। শুরু হয় আমাদের পথ চলা আর সে পথ চলা ধরেই এখনো দুজনের পাশাপাশি আছি বেশ ভালো আছি।

বলে লিয়াকত সাহেব মধুমতির দিকে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে তাকাল। মধুমতিও তখন চুপ হয়ে রইল। দুজনের ভালোবাসার রেশ যেন কাটছে না। সে রেশটা মিনেট দশেক ছিল। কেবিনটা তখন জাহাজের হেলদুলের সাথে ভালোবাসার সাগরে হেলদুল খাচ্ছিল। নীরবতার সমাপ্তি ঘটে মধুমতির তীক্ষ্ণ কন্ঠে। মধুমতি রুকুর মাথায় হাত দিয়ে সুরেলা তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে উঠল

– তা মা অনেকক্ষণ তো হলো এবার খেয়ে নে। খেয়ে নিয়ে জাহাজের করিডোরে তোর স্বামীকে নিয়ে ঘুরে আস ভালো লাগবে।

রকু মাথাটা নত করে ভাঙ্গা গলায় জবাব দিল

– এখন তো আর করিডোরে ঘুরতে পারব না। কারণ তেজস্বিনী দেখলে সমস্যা।

মধুমতি অবাক হয়ে বলল

– এ তেজস্বিনী টা আবার কে?

– মেনালিই হলো তেজস্বিনী আমার সৎ মা। আমাকে
খুঁজার জন্য মোনালি সেজে খুঁজে বেড়াচ্ছে।

মধুমতি রুকুর কথাটা শোনে দুগালে হাত দিয়ে মুখটা হা করে অবাকের সুরে বলল

– বাবারে বাবা কি সাংঘাতিক মহিলা। যাইহোক তুই চিন্তা করিস না। এখন তুই আর তানভীর খেয়ে নে। এখানে তরকারি আছে ভাত আছে খেয়ে নে। আমি আর তোর চাচা গেলাম। একটু পর আবার আসব।

বলেই লিয়াকত সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল

– তোমার মোবাইল নম্বরটা ওদের দাও তো। ওদের নম্বরটাও নাও যাতে কল দিয়ে খুঁজ নিতে পারি।

মধুমতির কথা শোনে লিয়াকত সাহেব তানভীরের সাথে নম্বর আদান প্রদান করে মধুমতিকে নিয়ে কেবিন থেকে প্রস্থান নিল।এদিকে তানভীর খাবারগুলো নিয়ে রুকুর দিকে এগিয়ে দিল। রুকুর তখন ক্ষুধায় পেট টা চুচু করছিল। সারাদিন তেমন কিছু খেতে পারে নি৷ খবারগুলো পাওয়ার সাথে সাথে গপাগপ খেয়ে নিল। তানভীর রুকুকে এমন ভাবে হুমরি খেয়ে খেতে দেখে একটু চমকালো বটে। তবে সেটা প্রকাশ না করে নিজের খাওয়াতে মনোযোগ দিল। দুজন খেয়ে একটা ঢেকুর তুলতেই তানভীরের ফোনে লিয়াকত সাহেব কল দিল। লিয়াকত সাহেবের কল পেয়েই তানভীর ধরে হাস্যমাখা মুখে বলল

– হ্যাঁ চাচা বলেন।

ফোনের ওপাশ থেকে লিয়াকত সাহেব বলে উঠল

– বাবা দরজাটা একটু খুলো।

তানভীর দৌঁড়ে কেবিনের দরজা খুলতেই লিয়াকত সাহেব একটা ব্যাগ এগিয়ে দিল। লিয়াকত সাহেবের ব্যাগটা হাতে নিয়ে কৌতুহলের সুরে বলল

– এটা কিসের ব্যাগ চাচা?

লিয়াকত সাহেব খিক করে হেসে দিয়ে বলল

– এটা তোমার চাচী রুকুর জন্য পাঠিয়েছি। এতে তোমার চাচীর একটা বোরকা আছে ওকে পড়িয়ে একটু বাইরে ঘুরতে বের হও দুজনেরেই ভালো লাগবে।

বলেই লিয়াকত সাহেব চলে গেল। তানভীর বোরকাটা নিয়ে রুকুর দিকে এগিয়ে দিয়ে হালকা হেসে বলল

– এ বোরকটা পড়ে মুখটা আটকে ফেলুন। আপনাকে একটু লঞ্চ টা ঘুরে দেখাই। একঘেয়েমিটা কেটে যাবে। মনটাও ফ্রেশ লাগবে।।

কথাটা শোনে রুকুর মনে যেন আনন্দের চিলিক দিল। এক পসলা বৃষ্টির পর যেমন সূর্য রশ্নি উঠে পৃথিবীকে আলোকিত করে হাস্যউজ্জ্বল করে তেমনি রুকুর মনেও সূর্য় কিরণের জ্বলকানির মতো খুশির রেখা ফুটে উঠেছে। বোরকাটা তানভীরের হাত থেকে চট করে নিয়ে পড়ে নিল। সেই সাথে নিকাবটাও বেঁধে নিল। এ মুহুর্তে রুকুর চোখ গুলো শুধু তানভীর দেখতে পাচ্ছে। রুকুর চোখগুলো দেখে তানভীর যেন সে চোখে আটকে গেল। খেয়াল করল চোখটা এত টানা টানা না কিন্তু চোখটা দুইটা ভাঁজ দিয়ে ভেতরে ঢুকে আছে তবে চোখের লেন্সটা যেন একটু উপরের দিক হয়ে ভেসে আছে। তানভীরের জানামতো ডাগর ডাগর চোখ বলা হয় সে চোখকে যে চোখের পাপড়ি গুলো বেশ বড় আর টানা টানা। তবে রুকুর চোখে এর কোনো বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান নেই কিন্তু চোখের লোন্সটা এমন ভাসা ভাসা থাকলে সে চোখেকে কি চোখ বলা হয় সেটা আপাতত জানা না থাকলেও রুকুর চোখের মায়ায় কিছুক্ষণের জন্য তানভীর আটকে গিয়েও নিজেকে সামলে নিল। কারণ মেয়ে মানুষের চোখের মায়ায় পড়ার মতো বোকা কাজ টা সে করতে চায় না। তবে মেয়েরা তাদের চোখ দিয়ে খুব সহজে একটা ছেলেকে মায়ার জাল বিছিয়ে কপোকাত করতে পারে। তার জলজ্যান্ত প্রমাণ রুকুর চোখগুলো। তানভীরকে এভাবে তাকিয়ে দেখে রুকু হালকা অস্বস্তি নিয়ে বলল

– কী ব্যাপার কী দেখছেন?

তানভীর রুকুর কন্ঠটা শোনার সাথে সাথে রুকুর চোখ থেকে চোখটা সরিয়ে নিয়ে বলল

– নাহ কিছু না। চলুন বাইরে যাওয়া যাক।

বলেই রুকুকে নিয়ে কেবিনের বাইরে গেল। করিডোরে যেতেই রুকু থমকে গেল।কারণ…

চলবে?

(কপি করা নিষেধ)

গল্প সম্পর্কিত আপডেট পেতে কমেন্টে দেওয়া গ্রূপ লিংকে ঢুকে গ্রূপে জয়েন করুন।সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করলে আপনার নাম ও হয়ে যেতে পারে আমার পরবর্তী গল্পের একটা চরিত্রের নাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here