অতঃপরঃ ইতি পর্ব -১০ শেষ পর্ব

0
2070

শেষ পর্ব

” অতঃপর ইতি ”

লেখিকা – অপরাজিতা আফরিন মিম

আজ আকাশটা বেশ সুন্দর,স্বচ্ছ কাচের মতো,একদুম পরিষ্কার,, নীল রঙ্গে চেয়ে গেছে পুরো আকাশ,,তার মাঝে সাদা মেঘের আবরণ,,বেশ সুন্দর ই লাগছিলো সব কিছু।

রাঙ্গামাটিতে আরেকটা সকাল ফাহাদের,,সুন্দর প্রকৃতি মুগ্ধ করে দিচ্ছে তাকে বার বার,,চায়ের কাপ হাতে নিয়ে,সবুজ প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে আছে সে, আর মনে মনে ভাবছে,এমন একটা সকাল যদি জুইয়ের সাথে কাটনো যেতো,তাহলে মন্দ হতো না…..!!
পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফাহাদ,জুইয়ের ছবি সামনে ধরে বিরবির করে বলতে থাকে

— ভালোবাসি প্রিয়,,,ভালোবাসি………হাজার খানে বছর পরেও বলবো ভালোবাসি…..!!

রাঙ্গামাটিতে ফাহাদের কাজ প্রায় শেষ,,কাজটা খুব একটা কঠিনও ছিলো না,খুবই সহজ কাজ, তার বাবা আসাদ নুর চাইলে যে কোন কাউকে দিয়েই এই কাজটা করিয়ে নিতে পারতেন,,হয় তো বা নিজের লোক দিয়ে কাজ করাতে একটু বেশি পছন্দ করেন বলেই ফাহাদ কে পাঠিয়ছেন……!!
ফাহাদ ওখানকার দায়িত্বরত একজনের সাথে কথা বলে নিলো,ফাহাদের কাজ যেহেতু প্রায় শেষ,তাই ভাবছে কাল’ই সে বাসায় ফিরে যাবে।
যেমন ভাবা তেমনি কাজ…. মেনেজার ও আর আপত্তি করলেন না।

সেদিন ফাহাদ কাজ শেষ করে বিকালে বের হয় ঘুরতে,একের পর এক পাহাড়ের সুন্দর্য দেখে ফাহাদ তো মুগ্ধ, সৃষ্টিকর্তা কতটা যত্নসহকারেই না বানিয়েছেন এই পৃথিবীটা কে,কত সৌন্দর্যেই না পরিপূর্ণ করে রেখেন,আমাদের তো সকলেরই উচিত তার শুকরিয়া আদায় করা….!!

ফাহাদ ওখানে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ দেখতে পায়, মণিপুরী শাড়ি,বেশ সুন্দর’ই শাড়ি গুলো,ফাহাদ আর কিছু না ভেবেই দুইটা শাড়ি নিয়ে নিলো,একটা তার মাকে দিবে আরেকটা দিবে জুইকে,,কে জানে দুইজনে পছন্দ করবে কি না,,,তবে নিতে তো আর আপত্তি নেই,,এইসব ভেবেই ফাহাদ শাড়ি দুটি নিয়ে নেয়.সাথে নেয় মেচিং করা দুল আর গলার হার,, এই গুলো তে জুই কে খুব একটা খারাপ লাগবে না বেশ ভালো’ই লাগবে, আর আমার কাছে তো আমার জুই স্বর্গের পরী🥰 এই গুলোই ভাবছিলো ফাহাদ…….এদিকে সূর্য ডুবি ডুবি অবস্থা, তাই ফাহাদ আর দেরি না করে, হোটেলে ফিরে আসে,বাশের তৈরি একটা হোটেল, চার পাশে খুব দামি কিছু না থাকলেও বেশ সুন্দর’ই এই হোটেলটা, অনেকটা সাজানো গোছানো……

রাত ১১টা ৩০ মিনিট……

রাঙ্গামাটির এই অঞ্চলে মানুষের কাছে প্রায় মধ্যরাত,,এদিকে ফাহাদের চোখে ঘুম নেই,,আনন্দে ছলছল করছে সে,,কালকেই সে দেখা পাবে তার প্রিয়তমার…৪ দিন হয়ে গেছে সে তার প্রিয়তমা কে দেখে না,,এই দূরত্ব যে তাকে কতটুকু পোড়াচ্ছে তা কেবল সে জানে,,কখন যে গুছবে এই দূরত্ব সেই প্রহর ই গুনছে ফাহাদ….!! তখন হঠাৎ করেই ফাহাদের মনে উঁকি দিলো হাজার খানেক প্রশ্ন,,আচ্চা ঐদিন জুই কেন,ওর সাথে নদী পাগে যেতে রাজি হলো? এত ভালো ভালো সময় কাটালো,,কত হাসি খুশি ছিলো সে,,তার পরের দিনও না চাইতে জুই নিজের থেকে কল দিলো…আচ্চা তাহলে জুইও কি বুঝতে পেরেছে সে ফাহাদ কে ভালোবাসে,,,নাকি এমনিতেই একজন ভালো বন্ধু হিসেবে,, ফাহাদের সাথে এত ভালো ব্যবহার করে যাচ্ছে…?? কে জানে কি হচ্ছে,কিছু’ই মাথায় ডুকছে না ফাহাদের,কোথায় থেকে যে কি হয়ে যাচ্ছে,বুঝতেই পারছে না ফাহাদ…..এই সব ভাবতে ভাবতেই গভীর ঘুমে তালিয়ে যায় ফাহাদ……….!

পরের দিন সকালে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দেয় ফাহাদ। বাসায় আসতে আসতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। বাড়ির মেইন গেইটের সামনে দাড়িয়ে আছে সে। অবাক হয়ে চোখ ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখছে,কি হচ্ছে এই সব,,চারপাশে ঝলমলে আলো,চোখ দাধিয়ে দেওয়ার মতো,পুরো বাড়িতে উৎসবের সাজ, কি হচ্ছে বাড়িতে তাও ফাহাদ কে না জানিয়ে,এবার কিছু না ভেবেই বাড়িতে প্রবেশ করে ফাহাদ।তখন তার মা দৌড়ে আসে তার কাছে, ফাহাদের হাত ধরে টেনে ওপরে নিয়ে যায়,,ফাহাদের রুমে গিয়ে,ফাহাদের হাতে কিছু কাপড়, চোপড় দিয়ে বলে, রেডি হয়ে নে…..
ফাহাদ অবাক হয়ে জিঙ্গাসা করে,,

–রেডি হয়ে নেবো..মানে কি?

— এত মানে টানে তোকে বুঝতে হবে না,এসে যাতে দেখি রেডি হয়ে আছিস ব্যাস…
এইটা বলেই, ফাহাদের মা, রুম থেকে বেরিয়ে আসে,,এদিকে ফাহাদ কিছুই বুঝতে পারছে না।

তাই মায়ের দেওয়া পোশাক গুলো পড়েই নিচে চলে আসে ফাহাদ,,নিচে এসে তো আরো অবাক,ওর বন্ধু,বান্ধব,কাজিন প্রতিবেশি সকলে হাজির।

আর এরই মাঝে হঠাৎ করেই সবার মাঝে উপস্থিত হয় জুই,,পড়নে তার ভারি খেয়ারি রঙ্গের লেহেঙ্গা, সাথে হালকা সাজ,পুরো শরীর জুয়েলারিতে ভরপুর। বেশ সুন্দর ই লাগছিলো তাতে, ফাহাদ তো চোখ’ই সরাতে পারছে না জুইয়ের ওপর থেকে ….

ফাহাদ আর জুইকে পাশাপাশি বসিয়ে দিলেন ফাহাদের মা, তার পর ফাহাদের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠলেন “সারপ্রাইজ……..
ফাহাদ তো অবাকের শীর্ষে,,তার মানে এইসব কিছু প্লেন করেই করা হয়েছে।
তখন ফাহাদের মা রাশেদা বেগম বলতে থাকেন..

আমার ছেলে যখন যা চেয়েছে,আমি তাকে তখন তা’ই দিয়েছি,সে দিন রাতে আমার ছেলে যে পাগলের মতো কান্না করছে জুইয়ের জন্য,,, আমি কি করে তার এই ইচ্ছা অপূর্ণ রাখতাম,,ছেলে আমার বড় হয়ে গেছে,কিছুই বলতে চায় না মুখে,ভাগ্যিস ডাইরি টাইরি লিখে মাঝে মধ্যে, সেই দেখেই বুঝতে পারলাম ছেলে আমার জুইকে ভালোবাসে,,তারপর বাকিটা অহনার কাছ থেকে জানতে পারলাম….।
আবদার নিয়ে ছুটে গেলাম,জুইয়ের বাবা/মার কাছে,গিয়ে দেখি,জুইয়ের মা আমার কলেজ ফ্রেন্ড। সেও আর আপত্তি জানলো না জুইকে আমার ছেলের বউ হিসেবে দিতে,এদিকে জুইও কিছুটা ভালোবাসতো ফাহাদ কে,,, তাই সব প্লেন মাপিক এগোলো,,তোকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য’ই রাঙ্গামাটি পাঠিয়ে দিলাম।আর এই ফাকে আমরাও সব আয়োজন করে নিলাম….এখন ছোট খাটো করে বিয়েটা হবে,,পরবর্তী তে না হয় আবারো জাকজমক করে উৎসব করবো….কথা গুলো বলেই মুচকি হাসলেন রাশেদা বেগম।।

ফাহাদ কেবল হা করে তাকিয়ে আছে তার মায়ের দিকে।সন্তানের খুশির জন্য একটা মা কি না করে।। কৃতজ্ঞে ভেসে ওঠে ফাহাদের দুটি চোখ……!

এদিকে জুই মুচকি মুচকি হাসছে ফাহাদ কে দেখে, ফাহাদ এবার দেখেও না দেখার ভান ধরে থাকে,,তারপর সুন্দর ভাবেই তাদের বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়….!!

এদিকে জুইকে ফাহাদের রুমে বসিয়ে দিয়ে গেছে, ফাহাদের ভাবিরা,, অনেকক্ষণ হয়ে গেছে,কিন্তু ফাহাদ এখনো আসছে না। জুই আনমনে ভাবতে থাকে, ভালোবাসার মানুষটিকে পাওয়ার আনন্দ কেন এত বেশি? যেদিন ফাহাদের মা ওদের বাড়িতে সমন্ধ নিয়ে যায় এবং পাকা কথা বলে আসে,,সে দিনের পরই জুই ফাহাদের সাথে নদীর পাড়ে যায়,ঘুরে,মজা করে,হঠাৎ করেই রাগী মেয়েটা কেমন যেন শান্ত শিষ্ট হয়ে গেলো….রাগী মেয়েটাও বুঝতে পারে, ভালোবাসার মানুষটিকে পাওয়ার আনন্দ।

এই সব ভাবতে ভাবতে,রুমে আগমন ঘটে ফাহাদের,জুই এগিয়ে যায় ফাহাদ কে সালাম করতে,,তখন ফাহাদ জুইকে বুকে টেনে নিয়ে বললো…

“” তোমার স্থান, সর্বদা’ই আমার বুকের গহীনে……””

মুচকি হেসে ওঠে জুই… ফাহাদ তখন জুইকে নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে বসে,জুই নিজের মাথাটা ফাহাদের বুকে রেখে বসে আছে,,,আর তাকিয়ে আছে আজকের আকাশে ওঠা বিশাল চাঁদের দিকে…..এদিকে ফাহাদও আষ্টে পৃষ্টে আকড়ে ধরে রাখে জুই কে,,এক পলক আকাশের দিকে তাকিয়ে, ফাহাদ বলে ওঠে…!!

“” আকাশের চাঁদ টা প্রিয়তমার হাসির মতো’ই সুন্দর””

জুই আবারো মৃদু হেসে আগলে ধরে ফাহাদ কে,,আর মনে বলতে থাকে,,

“তার চেয়েও বেশি সুন্দর,,প্রিয় মানুষটার বুকে মাথা রেখে, স্মৃতিচারণ করা,🥰 আজ এই সুন্দর তিথিতে প্রিয় মানুষটার বুকে মাথা রেখে,, ইতি ঘটোক আমার লুকোচুরি ভালোবাসা,প্রকাশ ঘটোক হৃদয়ে জমা সকল কথা,, “অতঃপর ইতি” হোক সেই সকল ইগু যা তোমাকে এক আকাশ সমান কষ্ট দিয়েছে,,ধুয়ে মুচে দিক সকল অভিমান…. “অতঃপর আমি তোমার বুকে মাথা রেখেই ইতি করতে চাই হাজারো যুগ…..”

সমাপ্ত……..!!

[ ইচ্ছে ছিলো, সেড ইনডিং দেওয়ার,কিন্তু আমার পাঠকরা সব হেপি ইনডিং পছন্দ করে 🥰 তাই হেপি ইনডিং দিলাম 🙏 ধন্যবাদ ❤️ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here