অতঃপরঃ ইতি পর্ব -৯

0
1532

পর্ব -৯

” অতঃপর ইতি”

লেখিকা – অপরাজিতা আফরিন মিম
.

— কেনোর উওর টা না হয় আমি দেই?

মৃদু গলায় বাক্যটি ভেসে আসে ফাহাদের পিছন থেকে,ফাহাদ কিছুটা হকচকিয়ে ওঠে পিছনে তাকিয়ে দেখে…..তার মা রাশেদা বেগম দাড়িয়ে আছে,,,ফাহাদ কিছুটা লজ্জায় পড়ে যায়….এক গাল হেসে উওর দেয়…

— কেনোর উওরটা তুমি দিতে চাও?
— হ্যা অবশ্য’ই… যদি তুই শুনতে চাস আর কি….
— কেন শুনবো না, অবশ্য’ই শুনবো, বলো তুমি..
— তাহলে বলি?
— হুম বলো 🤐
— প্রেমে পড়েছে আমার ছেলে….
ফাহাদ এবার নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকিয়ে হাসছে, রাশেদা বেগম ছেলের অনুভূতি বুঝতে পারছে,তাই সংকোচ এগাতেই ওনি বলে ওঠেন…

— তা কে সেই মেয়ে শুনি? আমি কি চিনি তাকে?
— তুমি চিনবে কেমন করে? তুমি দেখো’ই নি কখনো তাকে….
— আচ্চা তাই নাকি,,তাহলে দেখা করিয়ে দে তাহলেই তো হয়…
— হুম হুম।খুব শীঘ্রই দেখা পাবে সেই মহারানীর, শুধু একটু অপেক্ষা করো……
— না, নাহহহ আমি বাপু ওত অপেক্ষা টপেক্ষা করতে পারবো না,,
— তাহলে, যাও না,নিয়ে আসো গিয়ে নিজের পুত্রবধূ কে…।
— আনবো’ই তো,,সেই ব্যবস্থাই করছি।
— সেই ব্যবস্থা করছো মানে?
— সেই তুই বুঝবি না। ছাড়।
তুর বাবা খাবারের টেবিলে বসে আছে, খেতে আয়,তাড়াতাড়ি……!!

ফাহাদ আর কিছু’ই বললো না,মায়ের পিছন পিছন নিচে চলে এলো খেতে,,খাবারে টেবিলে বসে আছেন,ফাহাদের বাবা আসাদ নুর, মুখের তার বিরক্তির চাপ,খাবারের চামুচ নেড়ে’ই যাচ্ছেন কিন্তু কিছু খাচ্ছেন না। এদিকে এই পুরো ব্যাপারটা খেয়াল করে বিপরীত পাশে বসে থাকা ফাহাদ। সে কিছুটা নড়ে চড়ে বসে কোমল স্বরে জিঙ্গাসা করে
— কিছু কি হয়েছে বাবা? তোমার কি মন খারাপ?কোন কিছু নিয়ে কি আপসেট তুমি,?
খাবারে চামুচ নাড়তে নাড়তে আসাদ নুর বলে ওঠলেন
— তেমন কিছু না,,,ঐ আর কি…..
— বাবা, তুমি চাইলে আমাকে বলতো পারো,আমি তোমাকে আমার পুরোটা দিয়ে হেল্প করার চেষ্টা করবো।
— হুমম,সেটা তো আমি জানি,আমার ছেলে আমার জন্য সব করতে পারে… কিন্তু……
— আবার কিসের কিন্তু বাবা? তুমি বলো তো আমাকে কি হইছে?
— আসলে ফাহাদ হয়েছে কি তুমি তো জানোই আমাদের রাঙ্গামাটিতে একটা প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করা হচ্ছে,,প্রজেক্টটা বেশ ভালো’ই হচ্ছে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে,,ঐ প্রজেক্টের হিসাব নিকাশের জন্য একজন কে ঐখানে যেতে হবে,এদিকে মেনেজারের শরীরটাও ভালো না,আমিও একটা কাজে আটকে গেছি, কাকে যে পাঠাবো সেটাই বুঝতাছি না…
— ওহহ আচ্চা এই ব্যাপার।এই সামান্য একটা কারণ নিয়ে তুমি আপসেট হয়ে আছো? আমাকে বললেই তো আমি যাই। কবে যেতে হবে ঐ খানে আমাকে বলো..আমি যাবো….!!
— সত্যি তুই যাবি? ( আনন্দে উচ্চ স্বরে বলে ওঠেন ফাহাদের বাবা)
— হুম যাবো…এতে না করার কি আছে…এদিকে আমার অফিসেও খুব একটা কাজের চাপ নেই,,তাই যেতেই পারি।তুমি চিন্তা করো না বাবা,আমি মেনেজ করে নেবো…
— আচ্চা, তাহলে তুই রেডি হয়ে থাকিস,কাল ভোরে’ই রওনা দিতে হবে কিন্তু ,,আর এদিকে যাওয়ার সব ব্যবস্থা আমি করে দেবো ওকে…..
— হুমম ওকে….

পরের দিন ভোর ৫ টা, ফাহাদের মা এসে ফাহাদ কে ঘুম থেকে ডেকে তুলে, রাঙ্গামাটি যাওয়ার জন্য। ফাহাদ ঘুম থেকে ওঠে, ফ্রেশ হয়ে নেয়,ফজরের নামাজ পড়ে,নিচে চলা যায়,ব্রেক ফাস্ট করার জন্য,ব্রেকফাস্ট করে, সকলের থেকে বিদায় নিয়ে বের যায় রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে…
গাড়ি চলছে,ড্রাইভ করছে,ফাহাদদের বাসার ড্রাইভার,পিছনের সিটে বসে আছে ফাহাদ,তার মন চাচ্ছে না রাঙ্গামাটি যেতে,তবু যেতে হবে,বাবা কে যে কথা দিয়েছে…….হঠাৎ বাম পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফাহাদ, কি জানি কি ভেবে, জুই কে টেক্স করে বসে,, খুব বেশি বড় টেক্স নয়, তিনটি শব্দের টেক্স।
— মিস ইউ জুই…….
মেসেজটা পাঠিয়ে, আবারও যথা স্থানে ফোনটা রেখে দেয় ফাহাদ। আর আনমনে ভাবতে থাকে,জুইও কি তাকে মিস করবে? ফাহাদের মতো সেও কি চটপট করবে এক পলক দেখার জন্য? কে জানে, হয় তো বা করবে না।
এই গুলোই ভাবছিলো ফাহাদ,এমন সময় ফাহাদের ফোনটা বেজে ওঠে,ফাহাদ তড়িগড়ি করে ফোনটা বের করে দেখে, জুই কল করেছে,,ফাহাদ তো মহা খুশি,এই ১ম বার জুই তাকে কল করেছে, কিন্তু ফোন রিসিভ করে কি বলবে ফাহাদ?আবারো কি মিস ইউ বলবে? না, জুই যদি রাগ করে,,এইসব ভাবতে ভাবতেই ফোন একবার বেজে কেটে যায়,,,,,দ্বিতীয় বার কল আসতে’ই ফোন রিসিভ করে ফাহাদ। ফাহাদ ফোনটা রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গেই , ওপাশ থেকে জুই বলে ওঠলো..
— ফোন রিসিভ করতে এতক্ষণ লাগে?
— না আসলে মানে….
— কি আসলে মানে করে যাচ্ছেন হ্যা?
— না কিছু না….
জুই এবার কিছুটা নরম গলায় বলে ওঠলো
— আপনার কি মন খারাপ?
— হ্যা,কিন্তু তুমি কেমন করে বুঝলে?
— আমি সব বুঝতে পারি?
— কিভাবে বুঝো? ভালোবাসার টানে?
— না, নাহহ,এই সব ভালোবাসা টালোবাসা টান মান আমি বুঝি না। আমি বুঝেছি আপনার মেসেজ দেখে।
— ওহহ আচ্চা,( কিছুটা মন খারাপ করে বলে ফাহাদ)
— তা কোথাও যাচ্ছেন নাকি?
— হ্যা, যাচ্ছি তো,তুমি কিভাবে বুঝলে?
— গাড়ির শব্দ শুনে…
— ওহহ আচ্চা..
— তা কোথায় যাচ্ছেন শুনি?
— রাঙ্গামাটি
— কিসের জন্য?
— বিজনেসের কাজে।।তুমি তো বিজনেস টপার,, তুমি তো বেশ ভালোভাবেই জানো বেজনেসে হুটহাট ছুটতে হয়।সে জন্য ছুটছি আর কি….
— ওহহ আচ্চা।তা বেশ ভালো তো,রাঙ্গামাটি যান,খোলা বাতাস শরীরে লাগান,ভালো লাগবে,মন খারাপ করার কি আছে?
— মন খারাপ করার কিছু নেই?
— নাহহ
— আছে
— কি?.
— আমার জুই রানী,,বড্ড মিস করবো তাকে…
— থাক হইছে আর ঢং করতে হবে না।
— আমি ঢং করি।
— হুমম করেন ই তো…আচ্চা বাদ দেন, ভালো থাকেন,ঘুরে আসেন,পরে কথা হবে, বাই…!
— বাই..!
বাই বলেই ফোন কেটে দেয় ফাহাদ।

সন্ধ্যার একটু আগে,রাঙ্গামাটি এসে পৌছায় ফাহাদ,এসে ফ্রেশ হয়ে,কাজে লেগে পড়ে,,রাতের হালকা আলোতেই,টুকটাক কাজ সেরে ফেলে সে।

পাহাড়ি অঞ্চল,,আশে পাশে খুব একটা মানুষ নেই, ঝিঝি পোকার ডাক শুনা যায়,দূর দূরান্ত থেকে। ফাহাদ ক্লান্ত শরীরে বিছানায় হেলে পড়ে,চোখ বুঝতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠছে জুইয়ের মায়াবীনি মুখ খানি,, কি করছে জুই? একটা ফোন করে দেখবে? ফোনটা হাতে নিতেই দেখে নেটওয়ার্ক নেই,,সাথে সাথে মুখটা চুপসে যায় ফাহাদের,,, ক্লান্ত শরীর নিয়েই ঘুমিয়ে পড়ে…….!!

চলবে?

[ কালকেই, একটি পার্ট দিয়ে শেষ করে দেবো গল্পটা,,আর খুব শীঘ্রই হাজির হবো নতুন আরেকটা গল্প নিয়ে…!! তাই,আপনাদের ভালোবাসা কামনা করছি,যেভাবে সাপোর্ট করে যাচ্ছেন এই ভাবেই সাপোর্ট করে যাবেন প্লিজ,যেহেতু এইটা আমার নতুন পেইজ তাই সকলে,লাইক কমেন্ট দিয়ে পাশে থাকবেন..ধন্যবাদ 🥰🙏 ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here