অতঃপরঃ ইতি পর্ব -২

0
2981

পর্ব -২

“অতঃপর ইতি”
লেখিকা 👉 অপরাজিতা আফরিন মিম
.
মেঘাচ্ছন্ন আকাশ যেন এখুনি বৃষ্টি নামবে।জুই সবে মাত্র একটু ফ্রেশ হয়ে এসে বসলো,,এরই মাঝে জুইয়ের মা রোহেনা বেগম কপি নিয়ে হাজির।মেয়ের যে মন মেজাজ ভালো নেই সেইটা ওনি বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারছেন, তাই কিছুটা ভাব করার উদ্দশ্যেই কপি টা হাতে দিয়ে বললেন..

— কী রে,১ম দিন কলেজ কেমন কাটলো?

রোহেনা বেগম মেয়ের মুখের ভঙ্গি দেখেই বুঝে নিয়েছেন ১ম দিন কলেজ ভালো কাটে নি।তবুও জিঙ্গাসা করলো, যদি মেয়ে কিছু মুখ ফুটে বলে, সেই আশায়….
কিন্তু সে আশা যেন নিরাশা৷

জুই কিছুটা মুখ বেকা করেই জবাব দিলো..
— ভালো কেটেছে।
এবার রোহেনা বেগম কিছুটা চুপসে গেলো। কারণ এই মেয়ে কখনোই তাকে কিছু বলে না। সব সময় সবকিছু নিজের ভেতরে চাপা দিয়ে রাখে। অবশ্য এটা নতুন কিছু না,জুই ছোট বেলা থেকেই এমন।তাই রোহেনা বেগম গোপনে একটা শ্বাস পেলে আবারও বলতে লাগলো

–তো,কলেজে গাড়ি নিয়ে যাস নি কেন? হঠাৎ করেই রিক্সায় করে গেলি কী ব্যাপার?
–ইচ্ছা হইছে তাই রিক্সায় করে গেছি, আবার ইচ্ছে হলে গাড়ি করে যাবো…..এতে কারোর কোন সমস্যা?
— না সমস্যা হবে কেন।শুধু একটু জিঙ্গাসা করলাম আর কি।
— জিঙ্গাসাটাই বা কেন করতে এসো? তুমি জানো না এই জুই চৌধুরী কাউকে কৈফিয়ত দিতে পছন্দ করে না।, তোমার জিঙ্গাসা করা শেষ হলে এবার আসতে পারো…….

রোহেনা বেগম এক রাশ মন খারাপ নিয়েই রুম থেকে বের হয়ে গেলো, আর মনে মনে ভাবতে লাগলো,কেন তার মেয়েটা এমন? কারোর সাথে মিশতে চায় না,কথা বলতে চায় না,এমন কি নিজের জন্মদাতা মায়ের সাথেও না।অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়,জুই ছোট বেলা থেকেই এমন, বদমেজাজি, রাগী টাইপের…..

.
বেলকনীতে বসে গিটারে টুংটাং শব্দ করছিলো ফাহাদ।গান করতে ইচ্ছে করছে না। মনটা কেমন যেন থেমে রয়েছে,সব কিছুতেই যেন ভীষণতা। হঠাৎ করেই কেন জানি না,সকালের ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলোই তার চোখের সামনে বার বার ভাসছে….

আচ্চা তার কি সত্যি উচিত জুইকে সরি বলা? কিন্তু সে তো সরি বলতে পারে না…..

ফাহাদ ওঠে আয়নার সামনে দাড়ালো,বিশাল রুমের এক প্রান্ত জুড়ে এক বিশাল আয়না,হালকা অন্ধকার রুমে দাড়িয়ে আছে আয়নার সামনে,,কয়েকটা দীর্ঘ শ্বাস পেলে, চোখটা বন্ধ করে, সরি বলার আপ্রাণ করে যাচ্ছে ফাহাদ কিন্তু তার মুখ দিয়ে সরি শব্দটাই বের হচ্ছে না।ফাহাদ কয়েকবার বৃথা চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিলো,।
কারণ তার ইগু যে আকাশ ছোয়া সেইটা সে ভালো করেই জানে,, সে শত চেষ্টা করেও সেটা যে কমাতে পারবে না সেটাও সে জানে……আবারো চোখ টা বন্ধ করতেই চোখের সামনে স্পষ্ট ভেসে ওঠলো জুইয়ের মুখটা,কি সুন্দর তাহার চাহুনি। চোখ দুটো যেন একটা মানুষকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্টা….।অথচ এই মায়াবী মেয়েটাও রাগ করতে পারে….রাগ করলে যেন তার সুন্দর আরো দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

কিন্তু এই জুইয়ের মুখ ই কেন বার বার তার চোখের সামনে ভেসে ওঠছে? কেন??? এই প্রশ্নের উওর খুজে পায় না ফাহাদ।
রোজ কারের মতো আজকেও কলেজে এসেছে ফাহাদ।মাঠে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে মগ্ন ছিলো সে,হঠাৎ তার চোখ স্হির হয়ে যায় অন্য প্রান্তের জুই কে দেখে,খয়ারি রঙ্গের একটা টাপস পড়ে আছে জুই সাথে চুল গুলো খুলা।আহা! কি সুন্দর যে লাগছে তাকে যেন একটা পরী….

জুই ক্লাসেই যাচ্ছিলো তখন কিছু ছেলে জুইকে উদ্দেশ্য করে শিশ বাজিয়ে ওঠলো,সাথে কিছু বাজে মন্তব্য,ফাহাদের মেজাজ হয়ে গেলো গরম,হাতে মুঠি আবদ্ধ করে ছেলে গুলোর দিকে এগোতে লাগলো সে রাগ তার শরির কাপছে। ছেলেগুলোর অবস্থা যে আজ খারাপ হবে সেটা বুঝাই যাচ্ছে….
কিন্তু ফাহাদ কিছু করার আগেই, জুই গিয়ে থাপ্পর মেরে বসে শিশ মারা ছেলেটাকে,
জুইয়ের থাপ্পর খেয়ে ছেলেটা রেগে জুইয়ের গায়ে হাত দিতে যায়,কিন্তু জুই এবার ছেলেটার পেটে লাথি মেরে বসে,ছেলেটা টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায়….

এই সব কাহিনি দেখে তো কলেজের সবাই অবাক একটা মেয়ে কি না ফাইট করছে তাও একটা ছেলের সাথে, সাথে ফাহাদও অবাক,কি গুন্ডি মেয়েরে,ওকে সেইভ করার জন্য করোর প্রয়োজন নেই সে একাই একশ….অথচ কাল পর্যন্ত মেয়েটা কত ই না শান্তশিষ্ট লাগছিলো,একটা মেয়ের কত শত রূপ।রেগে গেলেই শেষ…..

এরই মাঝে হাজির হয় কলেজের প্রফেসার, ঝগড়ার একটা কুল কিনা রে, সবাই সবার ক্লাসে ফিরছিলো তখন,ফাহাদ জুইয়ের সামনে গেলে,
জুইয়ের একদুম কাছে এসে মুখটা জুইয়ের কানের কাছে নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললো…

— অফফফফসসস সেই!! মুগ্ধ আমি।
জুই চোখ পাকিয়ে বললো
— আপনার ও কি মার খেতে ইচ্ছে করছে নাকি?
— হুম ইচ্ছে করছে তো।মেয়েদের মাইর খাই নি তো কখনো, একটু খেয়ে দেখতে চাই, কেমন লাগে খেতে 😋
— খুব শীঘ্রই আপনিও খাবেন, একটু অপেক্ষা করেন….
–এত অপেক্ষা টপেক্ষা এই ফাহাদ করতে জানে না..ফাহাদ কিছু চাইছে মানেই তা সাথে সাথে দিতে হবে।
জুই এবার রেগে ক্লাসে চলে গেলো,আর ফাহাদ ও তার ক্লাসে চলে গেলো…..

রাত ৯টা ২০ মিনিট….
হঠাৎ জুই কে কল দিলো অহনা।
জুই ফোনটা রিসিভ করতে ই অহনা বলে ওঠলো
— ঐ রেডি তুই?
— হুম রেডি,, তুই আয় আমি বের হচ্ছি
এইটা বলেই ফোন টা কেটে দিলো জুই…..

পিছন থেকে জুইয়ের মা রোহেনা বেগম বলে ওঠলেন
— কোথায় যাচ্ছিস তুই??…..

চলবে?

[গল্প টি কেমন হইছে অবশ্যই জানাবেন, কারণ আপনাদের মন্তব্য গুলো, আমাদের ভুল ক্রটি শুধরাতে সাহায্য করে,নতুন কিছু লিখতে অনুপ্রাণিত করে….ধন্যবাদ 🙏]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here