অতঃপরঃ ইতি পর্ব -৬

0
1717

পর্ব – ৬

” অতঃপরঃ ইতি ”

লেখিকাঃ অপরাজিতা আফরিন মিম

কে হবে এ বছরের সেরা বিজনেস ম্যান…?

জানার জন্য সকলেই অধির আগ্রহ নিয়ে বসে আছে।আর এরই মাঝে সেখানে আগমন ঘটে জুইয়ের, পরনে কালো রঙ্গের ওয়েস্টার্ন ড্রেস, সাথে হাই হিল,চুল গুলো বাধা।বেশ সুন্দর ই লাগছিলো তাকে। ফাহাদ ওঠে গিয়ে জুইয়ের পাশের চেয়ারটায় বসে,হালকা জুইয়ের দিকে হেলে, জুইয়ের বাধা চুল গুলো খোলে দিলো,আর সঙ্গে সঙ্গে জুইয়ের সারা পিঠ ছেয়ে গেলো, এক রাশ কালো চুলে, জুই কিছুটা বিরক্ত নিয়েই ফাহাদের দিকে তাকালো,,,তখন ফাহাদ আবারো হালকা হেলে জুইয়ের কানে কানে বলে ওঠলো
— আর কত বার বলবো তোমাকে খোলা চুলেই তোমাকে একটু বেশি মানায় প্রিয়।
এবার জুই আর কিছু বললো না, তবে মনে মনে বেশ খুশি হলো,অস্বীকার তো আর সে করতে পারবে না,ফাহাদ কে তো সে একটু হলেও ভালোবাসে, আর সেই ভালোবাসার মানুষ টা যদি এইভাবে যত্ন সহকারে বাধা চুল গুলো খোলে দেয় তাহলে কার না ভালো লাগে…..

ওদের এই কান্ডের মাঝেই মঞ্চে হঠাৎ শুনা গেলো জুইয়ে নাম, ফাহাদ বেশ অবাক হয়েই মঞ্চের দিকে তাকায়,,সেই মধ্য বয়সী মহিলাই আবার বলে ওঠলো,

দ্যা বেস্ট বিজনেস ওইমেন এওয়ার্ডস ২০২২ গোস টু জুই চৌধুরী…

শুধু ফাহাদ ই নয়, উপস্থিত সকলেই অবাক হয়ে আছে,এই বছর সেরা বিজনেস ম্যান নয় সেরা বিজনেস ওইমেন পুরস্কার পেয়েছে…..
মঞ্চের দিকে এগিয়ে যায় জুই, মঞ্চে গিয়ে পুরস্কার গ্রহণ করে, প্রথমে ধন্যবাদ জানায় উপস্থিত সকলকে, তারপর তার বাবা কে,, তার পরই বলতে শুরু করে, নিজের পথ চলার কথা,, জুই খুব ছোট্ট একটা মেয়ে, বাবাকে দেখেই বিজনেস শুরু করেছে, তবে এত সাফল্য পাবে ভাবতেও পারে নি,শহরে জুইকে সেরা বিজনেস ওইমেন বলে বেশ অনেকেই চিনে। নিজের কাজের প্রতি বেশ যত্নশীল সে.তার এই পথ চলা যেন দীর্ঘ হয় তার জন্য দোয়াও চেয়ে নিলো…..

জুইয়ের বাবা তো বেশ খুশি, যে এওয়ার্ড ওনি পান নি কখনো সেই এওয়ার্ড ই পেয়েছে ওনার মেয়ে।
ওনার জায়গায় অন্য কেউ হলেও একুই গর্ব করতো,আনন্দে ছলছল করতো….
জুই মঞ্চ থেকে নেমে এসেই বাবা কে জড়িয়ে ধরলো,সাংবাদিকরা জুইকে ঘিরে ধরলো, নানা রকম প্রশ্নের উওর দিয়েই চলেছে জুই।

ফাহাদ বসে বসে কেবল দেখেই যাচ্ছে এইসব, যাকে সে রাগি, বদ মেজাজী মেয়ে নামে চিনতো, সে কি না আজ সেরা বিজনেস ওইমেন। অবশ্য ফাহাদ ও বেশ খুশি হয়েছে তাতে, নিজের প্রিয় মানুষ টাকে এমন পর্যায় দেখার মতো আনন্দ হয় তো বা আর কিছুতে নেই।

সে দিন আর ফাহাদের সাথে জুইয়ের কথা হয় নি, বাসায় ফিরে যথারীতিতে ফ্রেশ হয়ে শুতে যাচ্ছিলো জুই, তখন তার রুমের বারান্দায় কিছু একটা পড়ার শব্দ হয়, জুই দৌড়ে সেখানে যায়, যাওয়ার সাথে সাথেই কেউ একজন জুইকে খপ করে জড়িয়ে ধরে,জুই তো ভয় যাই যাই অবস্থা,পিছন ফিরে দেখে ফাহাদ।
জুই কি করবে বুঝতে পারছে না,এদিকে ফাহাদ ওকে ধরেই রেখেছে,ছাড়ার কোন নাম গন্ধ নেই,,
জুই এবার রেগেই বলে ওঠলে…
— আপনার সাহস তো কম নয়,আপনি জুই চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরেন? কত সাহস কই পান আপনি? তাছাড়া এখানেই বা এলেন কিভাবে?
ফাহাদ কিছুটা মুচকি হেসে, জুইয়ের গলার কাছে মুখ বারিয়ে বলে ওঠলো
— কি করবো বলো,চোখ বুঝলেই যে তোমাকে দেখি,,
এই ফাহাদ কে কি যাদু করেছো বলো তো?

জুই এবার নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো,কিছুটা চেচিয়ে বললো,আপনি এখান থেকে চলে যান প্লিজ,আমার ভালো লাগছে না।

— আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছো? এই ফাহাদ কে ফিরিয়ে দিচ্ছো?
— হ্যা দিচ্ছি, চলে যান আপনি ( রেগেই বললো জুই)
— তুমি তো আমাকে ভালোবাসো জুই,,সেটা আমি বেশ ভালো করেই জানি,,শুধু অতিরিক্ত ইগোর জন্যই বলতে পারছো না,কিংবা স্বীকার করতে চাইছো না,সেটা আমি বেশ ভালো করেই জানি, কিন্তু আমিও ছেড়ে দেওয়ার পত্র নই, তোমাকে তো আমার করেই ছাড়বো, মনে রেখো তুমি……..।

এইটা বলেই ফাহাদ ওখান থেকে চলে আসে,

বাসায় এসে বেলকনিতে বসলো,,নিজের অজান্তেই চোখ থেকে দু ‘ ফোটা, ফাহাদ যখন যা চেয়েছে তা পেয়েছে তাহলে আজ কেন পেলো না? ভালোবাসা কি এমন ই? যা চাইলেই পাওয়া যায় না?কিন্তু জুই ফাহাদ কেন দুরে ঠেলে দিলো, কি নেই ওর? কিসে কম আছে? আর সেও তো ফাহাদ কে ভালোবাসে তাহলে কেন এত অভিমান?

এই সব’ই ভাবছিলো ফাহাদ, তখন কাধে নরম স্পর্শ অনুভব করে, পিছনে ফিরে দেখে…….

চলবে?

[ ভুল ক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,আর গল্পটি কেমন লাগছে, তা অবশ্যই জানাবেন,ধন্যবাদ ❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here