পর্ব -৮
” অতঃপর ইতি”
লেখিকা – অপরাজিতা আফরিন মিম
.
ফাহাদ আইসক্রিম টা নেওয়ার সাথে সাথে’ই জুইয়ের উচ্চ চিৎকারে কান দাধিয়ে যায়……..।
ফাহাদ কোন রকমে সেখান থেকে দৌড়ে জুইয়ের কাছে আসে,,এসে দেখে, জুই চোখ বন্ধ করে দুই হাত কানে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করেই যাচ্ছে…. ফাহাদ কিছু না ভেবেই জুইয়ের দুই বাহুতে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলতে থাকে..
–তোমার কি হয়েছে জুই? এই ভাবে চিৎকার করছো কেন?
জুই এবার আগ পিছ কিছু না ভেবে ফাহাদ কে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে…..
ফাহাদ অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে,সে এখনো বুঝতেই পারছে না কি হয়েছে? তাই সে আবারো জিঙ্গাসা করলো
— কি হয়ছে জুই?
জুই এবার আঙ্গল দিয়ে পাশে কিছু একটা ইশারা করে দেখালো, ফাহাদও সে দিকে তাকায়, তাকিয়েই সে হো হো করে উচ্চ স্বরে হাসতে লাগলো….
জুই এবার হালকা রেগে প্রশ্ন করলো,
— হাসছো কেন?
এদিকে ফাহাদ নিজের হাসি থামনোর চেষ্টা করেই যাচ্ছে,কিন্তু হাসি থামছেই না,,এবার জুই কিছুটা রাগি লুক নিয়েই তাকালো,আর ফাহাদও হালকা হাসি থামিয়ে বললো….
— হাসবো না তো কি করবো? একটা কুকুর কে দেখে কেউ এই ভাবে চিৎকার দেয়?
কথাটা বলেই আবারো হাসতে থাকে ফাহাদ…..
ফাহাদের হাসি দেখে জুইও কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়,অবশ্য এতে জুইয়েরও কিছু করার নেই,জুই ছোট বেলা থেকেই কুকুর কে ভয় পায়,ছোট বেলায় একবার সে মাঠে খেলতে গেছিলো, তার সেই ফ্রেন্ড অহনার সাথে,তখন কোথায় থেকে জানি একটা কুকুর এসে তার পায়ে কামড় মেরে বসে, আহা, সে কি যন্ত্রণা, এখনো ভুলে নি সে……
ফাহাদ এবারে হাসতে হাসতে নদীর পাড়ে বসে পড়ে,তারপর জুইয়ের দিকে তাকিয়ে, বলতে থাকে…
— আচ্চা জুই বলো তো, বয়সের দিক থেকে এই কুকুরটা বেশি বড় নাকি আমি বেশি বড়?
— অবশ্যই তুমি,, সেটা বলার কি আছে?
— সাইজে কি এই কুকুর টা বেশি বড় নাকি আমি?
— অবশ্য তুমি।
— তাহলে তুমি আমাকে ভয় না পেয়ে এই কুকুরটা কে কেন ভয় পাচ্ছো, আমি চাইলে তোমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যেতে পারবো,এই কুকুরটা তো পারবে না,আমি তোমাকে এখানে মেরে পেলে রাখতে পারবো,কিন্তু এই কুকুরটা তো তোমাকে ২-৩ টা কামড় ছাড়া আর কিছুই করতে পারবো না, তাহলে তুমি আমাকে ভয় না পেয়ে এই কুকুরটা কে ভয় পাচ্ছো কেন??
— কুকুরটা হয় তো আমাকে কিডন্যাপ করতে পারবে না,মারতেও পারবে না,কিন্তু কামড় তো দিতে পারবে,আর সেই কামড় টাই অনেক ভয়ংকর,আর তার চেয়েও বেশি ভয়ংকর সাত দো গুনে চৌদ্দ টা ইনজেকশন 😤
এবার তো ফাহাদ হাসতে হাসতে, নদীর পাড়ের ঘাসের ওপর গড়াগড়ি খাচ্ছি….
যে মেয়ে কি না,কলেজে সবার সামনে একাই ৩-৪ টা ছেলে কে মেরে সিদা বানিয়ে দিলো,সে কি না, সামান্য ইনজেকশন কে ভয় পাচ্ছে..এটা কি মানা যায়…..।
এবার জুই রাগে কিড়মিড় করছে,ইচ্ছে করছে ফাহাদ কে গিলে খেতে,কিন্তু আপাতত কিছু বলা যাবে না,,তাই সে ফাহাদ কে রেখেই হাটতে লাগলো,বেচারা ফাহাদও এবার কোন রকমে হাসি কন্ট্রোল করে জুইয়ের পিছু পিছু হাটতে লাগলো….
গোধূলির শেষ লগ্ন, সূর্য যায় যায় অবস্থা,,পাশাপাশি দাড়িয়ে আছে জুই আর ফাহাদ, দুজনেই নিশ্চুপ,তাদের দৃষ্টি বিশাল ঐ সূর্যের দিকে,এক অপূর্ব মূহুর্তে সাক্ষাৎকারে হচ্ছে দুজন,,দুজনের হাতে চায়ের কাপ, ফাহাদ চায়ের কাপে চুমুক বসিয়ে, আবারো একুই ভঙ্গিতে দাড়ায় ফাহাদ। হঠাৎ আনমনে জুইয়ের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো…
— প্রিয়তমার হাসির মতোই সুন্দর এই গৌধূলি লগ্ন…..
ভালোবাসি প্রিয়তম………
জুই এবার বাকা চোখে ফাহাদের দিকে তাকায়,,
ফাহাদ বুঝতে পারে জুই রেগে গেছে,
এবার ফাহাদ মৃদু হেসে বলে,
— আমি তো তোমাকে বলি নি,আমি বলেছি আমার প্রিয়তমা কে,আর তুমি কোন আমার প্রিয়তমা নও 😅
আমার প্রিয়তমা তো অন্য একজন, যার হাসি গোধূলি লগ্নের মতো সুন্দর…..আর তুমি তো হলে পেত্নি,তোমার হাসির যে বাহার,তা পেত্নির চেয়ে, কোন অংশে কম নয়…
কথাটা বলেই হো হো করে হেসে ওঠে ফাহাদ…
জুই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে বলে
— কী আমি পেত্নি?
— হ্যা পেত্নি,কোন সন্দেহ আছে?
— না নেই,আর এখন যে আমি তোমার ঘাড় মটকাবো তাতেও কোন সন্দেহ নেই,,
এইটা বলেই জুই ফাহাদের দিকে তেড়ে আসে,বেচারা ফাহাদ জুইয়ের নক দেখেই ভয় পেয়ে যায়,মেয়েরা কেন যে এত বড় বড় নখ রাখে তার উওর খুজে পায় না ফাহাদ, এদিকে জুই তার দিকে ধাবিত হয়েই যাচ্ছে,ফাহাদ আর কিছু না ভেবে দিলো দৌড়,কারণ আপাতত সে জুইয়ের সেই বিশাল নখের কবলে পড়তে চায় না…….
হাটুতে হাত রেখে বাকা হয়ে হাফাচ্ছে ফাহাদ,সাথে জুইও দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে কাথ হয়ে হাফাচ্ছে,এই ভাবে দৌড়ানো ঠিক হয় নি,দুজনের ই পেটে ব্যাথা করছে,,জুই হাপাতে হাপাতে সামনের দিকে তাকায়, আর সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে ফুসকাাাা😍
জুইয়ের চিৎকারে ফাহাদ লাপিয়ে ওঠে,চারপাশে একবার তাকিয়ে একবার দেখে নেয়,না কুকুর তো নাই তাহলে চিল্লাচ্ছে কেন? ফাহাদ আবারো মনযোগ দিয়ে শুনে,,, নাহহ এবার কুকুর বলে চিল্লানি দেয় নি,ফুসকা বলে চিল্লানি দিয়েছে,,ফাহাদ মনে মনে ভেবে পায় না,মেয়েরা এই ফুসকায় কি এমন পায়,যা দেখলেই চিল্লানো শুরু করে দেয়? কি আছে এই ফুসকায়? ফাহাদ বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে, এই মেয়ে ফুসকা, না খেয়ে ছাড়বে না,, তাই সে আগে আগে গিয়ে ১ প্লেট ফুসকার ওয়াডার দেয়,, জুইও ফুসকার দোকানের একপাশে দাড়িয়ে আছে,ফুসকার আশায়,জুই আর লোভ সামলাতে পারছে না,ফুসকার ঘ্রাণে যেন মাতাল হয়ে যাচ্ছে…..
জুই মনযোগ দিয়ে ফুসকা খাচ্ছে,আর সেটা মনযোগ দিয়ে দেখছে ফাহাদ,,একটা মেয়ে এত যত্নসহকারে ফুসকা খেতে পারে, সেটা ফাহাদের জানা ছিলো না,,এই সব ‘ই ভাবছিলো ফাহাদ, তখন জুই ফাহাদের দিকে তাকিয়ে জিঙ্গাসা করলো..
— কয়টা বাজে?
ফাহাদ হাত উল্টিয়ে একবার ঘড়ি দেখে নেয়,আট টা বাজে,,সে জুইয়ের দিকে তাকিয়ে সেটাই বলতেছিলো
– আআট
ফাহাদের এই আট বলার জন্য যেই মুখ খোললো,সে ফাঁকে, জুই ফাহাদের মুখে,একটা ফুসকা দিয়ে দিলো, আর সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠলো,
— জুইয়ের দেওয়া, ফুসকা যে পেলবে,তার একদিন কি আমার একদিন….
ফাহাদ বেচারা, অসহায় দৃষ্টিতে একবার জুই দিকে তাকায় তো আরেকবার চারপাশ তাকায়,সে খাবে নাকি পেলবে সেটাই বুঝতে পারছে না।হঠাৎ ফাহাদের চোখ পড়লো ফুসকা ওলার দিকে,ফুসকা ওলা মিটিমিটি হাসছে,,ফাহাদের চাহুনি দেখে, এবার কিছু হেসে সেও বলে ওঠলো…
— মামা, খাইয়ালান,নাইলে ভাইবি, রাগি যাবে…..
এটা বলেই আবার মুচকি হাসে….
ফাহাদও আর উপায় না পেয়ে,কিছুটা নাক কুচকে খেয়ে নেয়,,জুই এইসব দেখছে আর মিটমিটি হাসছে,,ফাহাদ মুগ্ধ হয়ে সেই হাসি দেখে যাচ্ছে….হয় তো বা তার রাগ করার কথা ছিলো,কিন্তু চাইলেও ভিতর থেকে রাগ আসছে না…….
সেদিন রাতে জুই কে বাসার নিচে পৌছে দিয়ে, বাসায় চলে আসে ফাহাদ।
ফ্রেশ হয়ে,বেলকুনিতে গিয়ে বসে,রাতের আকাশ বেশ সুন্দর ই লাগছে,সাথে একটা চাঁদ ও আছে,,ফাহাদ মনে হলো এই চাঁদ টা জুইয়ের মতো’ই সুন্দর,আর মায়াবী,তাই সে আনমনে বলতে লাগলো…
” কেন এত সুন্দর তুমি? কেন? কেননননননন? তোমার ঐ দু’ চোখে আমি কেন হারাই বলো তো? তোমার ছায়াও যেন আমার মনে আনন্দ জোগায়,তোমার চুলের ভাজে নিজেকে কেন বার বার হারাই,কেননন??? কে দিবে আমার এই কেন উওর বলো তো????””
— কেনোর উওর টা না হয় আমি দেই?
মৃদু গলায় বাক্যটি ভেসে আসে ফাহাদের পিছন থেকে,ফাহাদ কিছুটা হকচকিয়ে ওঠে পিছনে তাকিয়ে দেখে………!!
চলবে…?
[ প্রিয় পাঠরা..!! সবাই কেমন আছেন? আপনাদের উদ্দেশ্য কিছু কথা বলার ছিলো…..
আমি ভাবছি এই গল্পটি আর বেশি বড় করবো না, ২ টি পর্বের মাধ্যেই শেষ করে দিবো…..!! আপনাদের কি মত??… ২ টি পর্বের মধ্যেই শেষ করে দিবো কি??? ]