অতিরিক্ত চাওয়া নাবিলা ইষ্ক পর্ব : ১১

অতিরিক্ত চাওয়া

নাবিলা ইষ্ক

পর্ব : ১১

” বউ…! ইউ আর মাই ওয়াইফ! আমার বউ! হউ নি কিন্তু হবে! আর সেটা খুব শিঘ্রী!

মুহুর্তের মাঝেই শরীরের তাপ বেড়ে গেলো! তাঁর আওয়াজেও একরকম জাদু আছে! আমি চুপচাপ দাঁড়িয়েই ছিলাম! আশেপাশে তাকাতে ব্যস্ত! কেউ দেখলে স্যারের নামে বাজে কথা ছড়াবে! তাঁর দিক চোখ পরতেই আমি ২ পা পিছনে চলে এলাম! কারন সে আমার সামনে এগিয়ে আসছে! যথারীতি আমিও পিছনে যাচ্ছি! কি হচ্ছে?
” ক…কেউ দেখ..দেখলে প্রব্ল..
সম্পুর্ণ কথা বলার আগেই সে ৪_৫ পা এগিয়ে আমায় ঘেষে দাড়ালেন!…
” শুসসসস…! জবাব পেয়েছো? আর এতো পাকনা পাকনা কথা কবে থেকে শিখেছো? বড্ড বুঝতে শিখেছো আজকাল! তা বিয়ে নিয়েও হয়তো সব জানো! তাই না?

আমি রীতিমতো কাপছি! তার ফিসফিসানো আওয়াজ? আমার শরীরের পশমও দাঁড়িয়ে পাল্লা দিয়ে কাপছে! আমি আড়চোখে তার দিক তাকিয়ে, একটু পিছনে যাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম! কারন পিছনে দানবের মতো ওয়ালটা আমায় আটকিয়ে রেখেছে! আমি ডান সাইডে চাপতে নিচ্ছিলাম, তার আগেই সে সেখানে হাত রাখলেন! আমি এইবার থম হয়ে রইলাম!…
আড়চোখে তাকাতেই দেখলাম, উপর থেকে নিচ অবদি আমায় চোখ বুলালেন! আমার চোখের দিক চোখ পরতেই যথারীতি নিচে তাকালাম!…
” ছেলওয়ার সুট কি আমার জন্যই পরেছো?
আমি চোখ বুঝে মাথা নাড়ালাম! হঠাৎই গালে স্পর্শ পেলাম তার ঠোঁটের!
” খুব মায়াবী লাগছে!

সেদিন ডান গালে কিস করেছিলেন আজ বাম গালে! আমার দিক কিছুটা ঝুকে বললেন..
” কান্ট্রল হচ্ছে না যে? লিপস্টিক কেন দিছো? আর দেবে না!
আমি হতম্ভব হয়ে রইলাম! ঠোঁট দুটো কামড়ে মুখে ভোরে নিলাম! বড্ড লজ্জা লাগছে! কেন যে লিপস্টিক লাগাতে গেলাম! হাত দিয়ে ঠোঁট পুছতে নিচ্ছিলাম! তখনি তার আওয়াজ কানে আসলো…
” আমি পুছে দিচ্ছি!
আমিও হাত নামিয়ে চুপচাপ দাড়িয়েছিলাম! আমি তো আর জানতাম না? যে তার পুছানো মানে কি ছিলো! মুহুর্তের মাঝে ঠোঁটে তার স্পর্শ পেলাম! চোখ বন্ধ কি করবো? আমি আশেপাশে তাকাতে ব্যস্ত! কেউ দেখলে সর্বনাশ! এদিকে তার হুশ-তয়াক্কা নেই! নিজের গতিপথ অনুসরণ করেই, মনের আনন্দে চুমু খাচ্ছেন!

ওপাশ থেকে কাউকে আসতে দেখেই, তার নিচু হওয়া শরীরে ধাক্কা দিলাম! তাতে কিছুই না? সে ব্যস্ত এখন! আমি পিছনে ফিরে ২ কদম পিছনে চলে এলাম! হাটতে হাটতে বারবার স্যার, স্যার বলছি যাতে! মহিলাটা খারাপ কোনো কিছু না ভাবে! আর সে তো ভ্রু উচু করে আমার দিক তাকিয়ে! মহিলাটা চলে যেতেই সে আমার দিক আবার আসতে নিলেই আমি দৌড় দিলাম! পিছনে আর তাকাই নি!

বাসায় এসেছি ৮ টার দিক! এতোক্ষন যাবত মায়ের পিছন-পিছনেই ছিলাম! ভয় কাজ করছিলো? আবার কে না কে কথা বলতে আসে!
বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুম! ঘুমের মাঝেও চুমুর দৃষ্য বারবার ভেসে আসছে! লজ্জায় লাল_নিল হওয়ার মতো অবস্থা!
সকাল সকাল ঘুম ভেঙে যায় ! আর সকালের আকাশ ছাদ থেকে দেখতে প্রচন্ড ভালো লাগে! ব্রাশে টুথপেস্ট লাগিয়ে, ছাদে পৌছালাম! হালকা হালকা কুয়াশা! শীতটা চলে যাচ্ছে অল্প অল্প করে! দুর-দুরান্তে চোখ যাচ্ছে বারবার! আকাশটা দেখতেও মারাত্বক সুন্দর দেখাচ্ছে! কানে আওয়াজ আসতেই সেদিকে তাকালাম… পাশের বাড়ির বড় ভাইয়া! মিষ্টি হাসি দিলেন সাথে আমিও..
” গুড মর্নিং বেলি?
” গুড মর্নিং আবির ভাইয়া!

আবির ভাইয়া প্রচন্ড ফ্রি মাইন্ডেড! সব কথা গোছালো আর সুন্দর ভাবে বলে! যা শুনতেও বেশ লাগে! তাও কেনো জানি, আমার শুধু আমার প্রিন্সের কথা,আওয়াজ,চলাফেরা সব ভালো লাগে! আমার প্রিন্স? চিল্লানোর আওয়াজ আসতেই ধরফরিয়ে সেদিকে তাকাতেই আমি থম… ওই পাশের বিল্ডিং থেকে স্যার ধমক দিচ্ছেন…
” স্কুল নেই? দ্রুত রেডি হয়ে স্কুলে আসো! আজ যদি দেড়ি করে পৌছাও?
কথাগুলো বলে? আগুনের দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো! আমিও ধীরে ধীরে নেমে এলাম নিচে! দ্রুত স্বাস নিলাম কয়েকবার! আজ মা স্কুলে যাবেন বেতন দিতে! আর এভাবেও গার্জেন ডাকা হয়েছে! ১২_১৩ দিন পর স্কুলে নাচ_গানের অনুষ্ঠান!

মায়ের সাথে স্কুলে পৌছালাম! ঢুকতেই দেখি স্যার আফরোজা মেমের সাথে কথা বলছেন! সেদিক দিয়ে যেতে হবে! আমি মা_কে ইশারায় জানিয়ে সেদিকে এগিয়ে গেলাম!…
” আসসালামুয়ালাইকুম ম্যাম, [ তার দিক তাকিয়ে ] আসসালামুআলাইকুম স্যার! শুভ সকাল!

দ্রুত পা চালিয়ে চলে আসলাম সেখান থেকে! হাহ স্যারের চোখ? ভয়াবহ দৃষ্য ছিলো! প্রত্যেকটা ক্লাস করে বাসায় পৌছালাম! স্যারের সাথে আইকন্টেক্ট ছাড়া একটি কথাও হয় নি আমাদের! বাসায় চলে আসলাম! আজ মায়ের সাথে আমিও রান্না করছি! কিন্তু পরক্ষনেই মায়ের কথা শুনে খুশি আর সকড দুটোই হলাম!…
” দ্রুত কাজ সেষ করতে হবে! আজ তৃষ্ণা কে দাওয়াত দিয়েছি বাসায়! বলেছে আসবে! আর তোর বাবাও একসাথেই খেতে বসবে!
তার জন্যই এতো রান্নাবান্না চলছে! এতো এতো আইটেম বাহ বাহ! জামাই আদর হবে নাকি?
” তা মা হঠাৎ?
” আরেহ তৃষ্ণা নাকি ঢাকা যাবে! সন্ধ্যার দিক রওনা দেবে! ওর মা নাকি অসুস্থ! ১০_১২ দিন তো থাকবেই!

কথাটা শুনে আমি স্তব্ধ! ১০_১২ দিনের জন্য চলে যাবেন! হু আমি এতোদিন কিভাবে থাকবো? মাথাটা মনে হচ্ছে ঘুরে পরে যাবে! আমি ধীরে সুস্থে রুমে এসে বিছানায় বসে পরলাম! মাথাটা দু-পাশে চেপে ধরে বিছানায় কাত হয়ে রইলাম! বড্ড যন্ত্রণা হচ্ছে যে? বুকের সাথে পুরো শরীরে..!
আমি সেই যে শুয়েছি আর উঠি নি! হঠাৎ তার আওয়াজ কানে আসতেই দ্রুত বিছানা ত্যাগ করে, সেদিকে চলে এলাম! সোফায় বসে বসে ফোন টিপছে! আমি লুকিয়ে তাকে দেখেই যাচ্ছি! মুখটা শুখনো হয়ে আছে! মেজাজ ভালো নেই তার! মা অসুস্থ তো তাই হয়তো? আমার জন্যই তো তাদের রেখে এখানে থাকছেন স্যার! কিন্তু সে চলে গেলে আমি কিভাবে থাকবো?
আমি যে পারবো না থাকতে! বড্ড ভালোবেসেছি যে স্যারকে! মায়ের ডাকে দ্রুত রান্নাঘরের দিক চলে এলাম! মা যা যা হাতে দিলো? তা নিয়ে টেবিলে সাজিয়ে রাখলাম! স্যার আমার দিক করূন চোখে তাকিয়ে! আর আমার বুকটা ধুক করব উঠলো! কষ্ট হচ্ছে যে! ভাবতেই আমার কান্না করতে ইচ্ছে করছে! ১_২ দিন না, ১০_১২ দিন তাকে দেখতে পাবো না!

টেবিলে বাবা, সে,আর আমি বসে আছি! মা খাবার বেরে দিচ্ছে! আমার আজ আর খাওয়া হবে না! গলা দিয়ে খাবার নামবে না! সে আড়চোখে তাকাচ্ছে আর খাচ্ছে! মায়ের রান্নার প্রশংসা করছে আর নানান কথা বলে যাচ্ছে! যখন শুনলাম মায়ের মুখে তার বিয়ের কথা?আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো! স্যারকে ঢাকা যেতে বলেছে তার মা! তার জন্য পাত্রী দেখা হয়েছে! ছেলের বিয়ে নিয়ে তার মা নাকি চিন্তিত! আমার চোখের পানি মনে হচ্ছে গড়িয়ে পরবে! অন্যদিক ফিরে চোখের পানি মুছে নিলাম! আড়চোখে তাকে দেখতে লাগলাম!

আমার প্রিন্স অন্যকারো হয়ে যাবে? সে কি আমার হবে না? আমাদের ভালোবাসায় কি কোনো শক্তি ছিলো না! রুমে বসে চোখের বন্যা ঝড়িয়ে ফেলছি! কান্নার বেগ মনে হচ্ছে শুধু বাড়ছে! হু হু হু করে আওয়াজ আসতে চাচ্ছে!
খানিকক্ষণ পর কারো পায়ের আওয়াজে চোখ মুছে সেদিকে তাকালাম! রুমে স্যার এসেছেন পিছনে মা! আমি দ্রুত বিছানার থেকে নেমে স্যারকে সালাম দিলাম! সে আমার দিক তাকালেন…
” ১০_১২ দিনের পড়া আমি দিয়ে যাবো! সেগুলো প্রতিদিন পড়ে সেষ করে ফেলবে কেমন?
আমি নিচে তাকিয়ে থেকেই মাথা নাড়ালাম! মায়ের আওয়াজে তার দিক তাকালাম..
” আমি চা নিয়ে আসি! মন দিয়ে সব বুঝে নে! যা না পারিস!
মা যেতেই আমি ৩-৪ পা পিছিয়ে গেলাম! স্যার দ্রুত আমায় জাপটে ধরলেন! মাথাটা তা বুকে চেপে ধরলেন…
” বেলি আমায় ঢাকা ফিরতে হবে! একবারের জন্য চলে যেতে হবে! আমার জন্য মা দিনদিন অসুস্থ হচ্ছে! কসম দিয়েছে তার! এখান থেকে না গেলে তার মৃত্যু দেখতে হবে!
আমি স্তব্ধ হয়ে রইলাম! কান্নাটাও এখন আসছে না “সে আবারও বলতে লাগলেন..
” ১ মাস সময় নিয়েছি! ১ মাসের মাঝেই ঢাকা সিফট হতে হবে! আর ১০_১২ দিনের জন্য ঢাকা যেতে হবে! মা
হসপিটালে এডমিট! সে যতদ্রুত সম্ভব আমার বিয়ে দিতে চান!

আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিলাম! হাউমাউ করে কান্না করতে লাগলাম! ভালোলাগা,ভালোবাসা শিখিয়ে এখন চলে যাবে! কিভাবে থাকবো আমি? কিভাবে বাচবো?
তার বকা, তার ছোয়া, তার হাসি, প্রতিচ্ছবি কিভাবে ভুলবো? পারবো না ভুলতে! পারবো না তো?
” আ..আমি কিভাবে থাকবো? আমি পারবো না থাকতে! বিস্বাশ করেন এক দিনও থাকতে পারবো না!

সে দ্রুত পা এগিয়ে আমায় জড়িয়ে ধরলেন!..
” আমিও পারবো না! আমি আসবো তো তোমায় দেখতে! আর বিয়ে? বিয়ে তোমায় ই করবো!

আমি তাকে জড়িয়ে কাদতে লাগলাম! আমি বেচে থেকেও মরে যাবো তাকে ছাড়া! হু কিভাবে থাকবো! সে আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিলেন! পকেট থেকে একটি ফোন বের করলেন!,
” যখন মন চাইবে কল দেবে! দেখতে চাইলে ভিডিও কল দেবে! আমি কল দিলে সাথে সাথে রিসিভ করবে! সন্ধ্যায় চলে যাচ্ছি! কিছুদিনের মাঝে আবারও আসবো!
” তাতে কি? চিরদিনের জন্য তো চলে যাবেন!

আমি আবারও হু হু করে কেদে উঠলাম! কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে! এতো কষ্ট কেন হচ্ছে?
” শুসসস! কান্না বন্ধ! আন্টি আসছে! চুপ ”
আমি দ্রুত চোখের পানি মুছে নুলাম! সে আমার ১০_১২ দিনের পড়া দিয়ে দিলেন! কিভাবে চলবো, কিভাবে থাকবো, সব কিছু বলে দিচ্ছেন! আর আমি নিজেকে কান্ট্রল করছি! কান্নার বেগ যে বেড়িয়ে আসতে চাচ্ছে!

চা টা সেষ করে সে যেতে লাগলো! মা বেড়িয়ে যেতেই আমি দ্রুত তাকে জড়িয়ে কেদে দিলাম!
” আমার কষ্ট হচ্ছে? আমি আপনার সাথে যাবো!
” হুসশ কাদে না! [ চোখের পানি মুছিয়ে ] আমার সাথে যাবে! যখন সময় হবে!
সে আমার কপালে চুমু খেয়ে বেড়িয়ে গেলেন! আমি দ্রুত দরজা বন্ধ করে কেদে উঠলাম! নিস্তব্ধ হয়ে শরীরটা ফ্লোরে পরে গেলো! কষ্ট যে সজ্য হচ্ছে না! এমন কষ্টের সাথে তো আমি পরিচিত নই! সারাজীবনের জন্য কি তাকে পাবো?……..

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here