অতিরিক্ত চাওয়া নাবিলা ইষ্ক পর্ব : ২

অতিরিক্ত চাওয়া

নাবিলা ইষ্ক

পর্ব : ২

টেষ্ট দিলাম, কিন্তু বেশি ভালো হয় নি। কিভাবে ভালো হবে? কাল তো পড়তেই বসি নি! বসে বসে অনলাইন গেমস খেলেছিলাম আর বাবার সাথে রাত ২ টা অবদি নানান গল্প জুড়েছিলাম!

সবাই ক্লাস নাইনের ব্যাচ, মোট ১৯ জন ! শুধু আমি ৮ এর। আমার ব্যাচের স্টুডেন্টসরা ছেলে_মেয়ে একসাথে পড়ে। তাই স্যার এই ব্যাচের সাথে পড়ায়। কারন এই ব্যাচে শুধু মেয়েরা! অবশ্য আমার কোনো প্রব্লেম হতো না ওদের সাথে পড়তে। কিন্তু স্যার ওঁদের সাথে পড়তে দেয় না।
এখানের সকল মেয়েদের বয়স ১৭_১৮ তো হবেই! একা আমি একটু বেশি কমবয়সী! তাই সবাই পিচ্চি বলে সম্বেদন করে! কিন্তু আমার পিচ্চি শব্দটা মোটেই পছন্দের না!

স্যার কাল খাতা দেখে জানাবে কার টেষ্ট কেমন হয়েছে! আমি আগে থেকেই জানি, আমার টেষ্ট সকলের থেকে বাজে হয়েছে!
স্যার সকলের খাতায় বাড়ির কাজ লিখে দিচ্ছে। আর মিষ্টি করে মুখের দিক তাকিয়ে বলছে…
” বাড়ির কাজ লিখে দিলাম! পড়ে আসবা ঠিকাছে!

সবার বাড়ির কাজ লিখে দিলো! আমার বাড়ির কাজ লিখার সময় স্যারের ফেসটা বুম হয়ে রইলো! করল্লা খেলে মুখের এক্সপ্রেশান্স যেমন হয় আর কি? আজিব? আমার দিকে তাকায় ও না! আমার চেহরায় কি কালি মাখা নাকি? আমিও তো সব স্টুডেন্টসদের মতো! আমি তো কোনো খারাপ বিহেভ করি নি স্যারের সাথে তাও আমায় দেখতে পারে না! এই কথাটা স্কুল, কোচিং এর সকল স্টুডেন্টস জানে! যে তৃষ্ণা স্যার বেলিকে একদমই দেখতে পারেন না। অবষ্যই বেলি কোনো খারাপ বিহেভ করেছে স্যার এর সাথে! এটাই সবার ভাবনা! কিন্তু আমি তো স্যারের চোখের দিক তাকিয়েও জীবনে কথা বলি নি। খারাপ বিহেভ তো দূরের কথা!

সামনে বসায় গেট দিয়ে সবার আগে আমি বেড়িয়ে এলাম! স্যার একটা ফ্ল্যাটে থাকেন ৪ তালায়! সেখানেই পড়ান আমাদের! এই ফ্ল্যাটটা স্যার কিনেছেন যাতে আমাদের পড়াতে প্রব্লেম না হয়। আর কোনো অভিযোগ যাতে না আসে!

দুপুর ২ টায় পড়তে এসেছিলাম এখন ৪ টা বাজে! হঠাৎ পিছনে ফিরে উপরে চোখ পড়তেই দেখলাম স্যার বারান্দার রেলিং ধরে এদিকেই তাকিয়ে আছেন! আমাকে ঘুড়তে দেখে স্যার ভিতরে চলে গেলেন! আহ?
মাঝে মাঝে আমার খুব কান্না পায় স্যারের বিহেবে! কি করেছি আমি উনার সাথে?
আমাকে পড়াতে না চাইলে বললেই তো হয়। আমি তো এতোটা অবুঝ না যে বুঝতে পাড়বো না। আমি নাহয় অন্যটিচার খুজে নেবো। ঢাকায় ও স্যার আমার সাথে এমন বিহেভ করতো৷
ওহ বলতেই ভুলে গেছি বর্তমানে আমরা চট্রগ্রামে আছি। কিন্তু আগে ঢাকায় ছিলাম আর স্যার ও সেখানে থাকতো।

যখন আমরা ঢাকায় ছিলাম তখন আব্বু আমায় তৃষ্ণা স্যারের কাছে দিয়েছিল পড়তে। স্যার টাকা ছাড়াই অনেক স্টুডেন্টস পড়াতো। স্যারের বাবা তো প্রায়_সময় চিল্লাতো যে ” আমার এতো বড় ব্যাবসা কে দেখবে। তুই শিক্ষকতা ছেড়ে আমার ব্যবসায় হাত লাগা ” কিন্তু স্যার পাত্তা দিতো না কারন তার শিক্ষক কেরিয়ার অনেক পছন্দের।
তখন আমি ৭ এ পড়ি৷ প্রথমত স্যার ভালো ভাবে কথা বলতেন মিষ্টি ভাবে কথা বলে বুঝাতেন। কোনো কিছু না বুঝলে হাসি_মাখা মুখ নিয়ে একশো বার বুঝাতেন! মাঝে মাঝে তো গল্প ও শুনাতেন। আর প্রায়_সময় আমায় গান শুনাতেন! আবষ্যই ভালোবাসার গান শুনাতেন! কিন্তু আমার কাছে সেই গান গুলো বোরিং লাগতো! কিন্তু তাও মুচকি হেসে শুনতাম! ধীরে ধীরে স্যারের ব্যাবহার চেঞ্জ হতে থাকে। গান তো দূরের কথা পড়ার ব্যাপার ছাড়া আর কোনো কথাই বলতেন না! আর হঠাৎই আমার উপড় চিল্লিয়ে উঠতেন!
স্যারের কাছে ৮ মাস পড়ার পর যখন ৮ এ উঠবো তখন বাবার কাজের জন্য ট্রান্সফার হতে হয় চট্রগ্রামে। আমি তো অনেক খুশি হয়েছিলাম যে তৃষ্ণা স্যারের কাছে আমায় আর পড়তে হবে না।
সকালে আমরা চলে যাবো ঠিক তার আগের সন্ধ্যায় আব্বু স্যারকে ফোন করে বলে দেয় যে আমি আর পড়বো না।
স্যার কি বলে তা জানি না? কিন্তু আব্বু বলেছে যে স্যারের বাসায় গিয়ে বই গুলো নিয়ে আসতে। আমিও ভাবলাম যে লাষ্ট বার স্যারকে সালাম দিয়ে আসবো।

বিকেল দিকে আমি স্যারের বাসায় যাই। বিল্ডিংয়ের ৮ নাম্বার ফ্ল্যাট ছিলো স্যারদের! স্যারদের ফ্ল্যাটটা সব ফ্ল্যাট থেকে আলাদা ছিলো! সুন্দর বললেও কম হবে। আমি গিয়েই দেখি স্যারের আম্মু মানে আন্টি ডাইনিং এ খাবার বাড়ছে,আর আংকেল নিউসপ্যাপার পড়ছে। পাশেই স্যারের বোন বসা আর কেউ ছিলো না। আন্টি আমায় দেখে বলল…….
” বেলি? তোমার স্যার স্টাডিরূমে!
আমি স্টাডিরুমের দিক এগিয়ে গেলাম দেখি স্যার চেয়ারে মাথা হ্যালান দিয়ে চোখ বুঝে আছেন। মে বি মাথা ব্যাথা ছিলো।
” স্যার আমি বেলি! আসবো?
স্যার চোখ বোঝা অবস্থায় বললেন….
” কাম!
ট্যাবিলের উপর সকল বই গুলো রাখা ছিলো। আমি বই গুলি গুছিয়ে নিলাম….
” স্যার?
এইবার স্যার আমার দিকে তাকালেন। চোখ গুলি ভয়ংকর লাল ছিলো। এমন লাল থাকার কারন সেদিনও বুঝি নি আর আজও বুঝি না! নিচু স্বরে বললাম….
” স্যার আমি চলে যাবো কাল। ভালো থাকবেন। আসসালামুয়ালাইকুম।
কিন্তু স্যার কিছু বললেন না। যেমন ভাবে ছিলেন ঠিক তেমন ভাবেই তাকিয়ে আছেন। আমি চলে যাচ্ছিলাম তখনি স্যার ডাকলেন…
” বেলি..?
আমি পিছনে তাকাতেই দেখি স্যার আমার সামনে। কিছু বলার আগেই স্যার আমার মাথাটা তার বুকের সাথে মিশিয়ে ধরে। আমার মাথায় ধীরে ধীরা হাত বুলাতে লাগলেন………
” পড়ালেখা মন দিয়ে করিয়ো! নিজের যত্ন নিয়ো। দুষ্টুমি একদম করবে না। সারাদিন খেলাধুলা করার প্রয়োজন নেই! আম্মু আব্বুর কথা শুনবে। আইসক্রিম একদম ই খাবা না।
আর রাস্তা_ঘাটে চলাফেরা কম করবে! ওখানে সাবধানে থাকবে। আর তাড়াতাড়ি বড় হওয়ার চেষ্টা করবে! হয়তো কেউ তোমার বড় হওয়ার অপেক্ষা করছে! অনেক অপেক্ষা!

স্যারের ভয়েসটা না কেমন জানি লাগছিলো। কেমন অদ্ভুত ছিলো ভয়েস যেখানে হয়তো কোনো কষ্টের, অভিমানের আর্তনাদ ছিলো।
আমি স্যারের বুকেই মাথা নাড়ালাম। স্যার আমার মাথাটা তার বুক থেকে সড়িয়ে আমার গালে হাত রাখলো। স্যারের হাত গুলি অসম্ভব ভাবে কাপছিলো! আর তাও অনেক। আমার গাল দু’টি শক্ত করে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললেন…
” ভালো থেকো বেলি…!
কথাটা বলেই স্যার স্টাডিরুম থেকে চলে গেলেন। আমি কিছুক্ষণ সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলাম! কেনো জানো সেদিন প্রচন্ড খারাপ লেগেছিলো ! কেনো খারাপ লেগেছিলো তা আজও বুঝি নি! সব বই গুলি গুছিয়ে নিয়ে বেড়িয়ে এলাম!

সকালে ট্রাকে করে আমাদের সকল ছামান গুছানো হলো! চলে যাবো তখনি দেখি স্যার আমার দিকে তাকিয়ে আছেন! আমি ” স্যার ” বলে ডাকলাম! সে একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে ছিলেন! আমি হাতে ইশারা জানালাম ” বায় “।
স্যার কোনো কথা না বলে ভিতরে চলে গেলেন।
আমরাও এসে পড়লাম চট্রগ্রাম। ধীরে ধীরে দিন যেতে লাগলো আমিও ৮ উঠলাম। আমিতো প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম যে তৃষ্ণা নামের একজন শিক্ষক ছিলো! যিনি আমায় পড়াতেন! ৭_৮ মাস পর স্যারকে আমাদের স্কুলে দেখলাম তাও আমার ক্লাসে। তখন লাষ্ট ক্লাস ছিল আমাদের! প্রিন্সিপাল স্যার তাকে সকল স্টুডেন্টসদের সাথে পরিচয় করাচ্ছিলো! আমি তো অবাকের সাথে সাথে প্রচন্ড খুশি! বসা থেকে দাঁড়িয়ে গিয়ে স্যারকে সালাম দিলাম বাট স্যার কিছুই বললেন না।
তারপর বাবা কি মনে করে আবার তৃষ্ণা স্যারের কাছে পড়তে দিয়ে দিলেন।

আমি তো এটাই ভেবে পাই না? স্যারদের নিজেদের বাড়ি ঢাকায়। তো এখানে থাকার মানেটা কি?

চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here