অতিরিক্ত চাওয়া
নাবিলা ইষ্ক
পর্ব : ৬
রূমের দরজা ওফ করে বিছানায় আধশোয়া হয়ে আছি। লাইট ওফ! কানে ইয়ারফোন। খারাপ লাগছে প্রচন্ড! স্যারটা অনেক পঁচা.. তৃষ্ণা স্যার অনেক পচাঁ। গালে পাচ আঙুল বসে আছে! এতো জোড়ে কেউ মারে ? পুরো ফেসটা ব্যাথায় মনে হচ্ছে ফুলে যাচ্ছে আমার ! আর যেই গালে মেরেছে, সেখানে মনে হচ্ছে কেউ লোহা দিয়ে বারি দিচ্ছে! পাষাণ টিচার!
উনার কাছে আমি আর পড়বো না। যা ইচ্ছে করুক! আমি আর পড়তে যাবো না। আজ আব্বুকে বলবো নতুন টিচার খুঁজতে। এমন কেনো করেন আমার সাথে! আমি কি সত্যিই অনেক বাজে! আমি আর সবার মতো উনার স্টুডেন্ট নই? পুরাতন স্টুডেন্টসদের নাকি স্যাররা অনেক ভালোবাসেন! তাহলে আমিও তো স্যারের পুরাতন স্টুডেন্ট! ৪ বছর হতে চলল! ৭ম ক্লাস থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত স্যার আমায় পড়াচ্ছেন! কিন্তু আজও স্যার আমায় সজ্য করতে পারেন না!
আজ দু’দিন হচ্ছে আমি স্কুল, প্রাইভেট কোথাও যাচ্ছি না পড়তে। আর যেতেও ইচ্ছে হয় না! আমি যাচ্ছি না বলে তৃষ্ণা স্যার নাকি অনেকবার কল করে বলেছেন আমায় প্রাইভেটে পাঠিয়ে দিতে। আবার বাসায়ও এসেছেন দুইদিনই! স্যার যখন এসেছেন তখন আমি রূম থেকেই বেড় হইনি! দরজা লাগিয়ে কানে ইয়ারফোন গুঁজে ছিলাম! তার জন্য আব্বু আমায় ঝাড়ি দিয়েছেন! আমিও আব্বুকে ডিরেক্ট বলে দিয়েছি আমি আর তৃষ্ণা স্যারের কাছে পড়বো না। মা তো বকাঝকা করছেন আমায়! জিজ্ঞাস করছেন কেনো পড়বো না? আমি কোনো জবাব দিতে পারলাম না! শুধু বলেছি নতুন টিচার খুঁজতে!
স্কুলে যাচ্ছি না কারন অনেক খারাপ লেগেছিল সেদিনের হঠাৎ মাইর । সবাই আমায় দেখলেই হাসাহাসি করবে! করবে নাই বা কেনো? ক্লাসে এই স্যার আমায় অযথা মারেন! কোনো রিজন পাই নি আজও! আমি কি লোহা দিয়ে তৈরি যে অকারণে এসে শুধু মারবে! এখন থেকে এই স্যারের ক্লাসও এটেন্ড করবো না! যাতে যাই হোক, হুহ!
আজ ফ্রাইডে….
মঙ্গলবার, বুধবার আর বৃহস্পতিবার এই তিনটি দিন আমি ঘড় থেকেই বেড় হইনি! নিজের রুমে টিভি দেখেই কাটিয়েছি! সবকিছু বিরক্ত লাগছে আজকাল! এখন ঘুমের ভিতরেও স্যারের থাপ্পড় দেখি! অসজ্য! ভয়ংকর টিচার! এমন টিচার জেনো আর কারো কপালে না পরে!
অনেক্ষণ যাবত হাসান কল দিচ্ছে! ঘুড়তে যেতে বলতেছে ওদের সাথে! আজিব? হাসানটা না একটা আস্ত গাধা! আরেহ নিজের গার্লফ্রেন্ড কে নিয়েই যা নাহ! আমায় কেন ডাকতেছিস ভাই? হাসান আর তার গার্লফ্রেন্ড নিম্মির জড়াজুড়িতে রাজি হলাম ঘুড়তে যাওয়ার জন্য! আর এভাবে ৩দিন যাবত বাড়িতে থেকে বোর হয়ে উঠেছি!
দুপুর ৩ টা বাজছে.. আমি, হাসান, নিম্মি অনেকটা দূরে বেড়িয়েছি। অনেকটা রাস্তা যেতেই সামনে ডার্ক কালারের একটি গাড়ি থামলো। গাড়িটা কার? তা চিনতে বেশি সময় লাগে নি আমার ! গাড়িতো তৃষ্ণা স্যারের। নিশ্চিত আমায় আবার সকলের সামনে চড় মারবেন। আমি উল্টো পথ ধরে তাড়াতাড়ি হাটা ধরলাম মাথা নিচু করে। যত দ্রুত সম্ভব হেটেই যাচ্ছি! ভয়ে বুকের ভেতর মোচড় দিচ্ছে বারবার!
স্যার মে বি আমার পিছনে দৌরে আসছেন আর চিল্লাচ্ছেন… ” বেলি স্টপ দেয়ার।
তারপরও আমি থামছিনা! এখন দৌড় দেওয়া উচিৎ কিন্তু রাস্তায় প্রচুর লোকজন! তাও চিন্তাভাবনা ছেড়ে দৌড় দিতে নিচ্ছিলাম, তখনি পিছনে কেউ হাত ধরে ফেলে। হাওয়ার মতো বেগে সে আমায় তার দিক ঘুড়ায়। তার দিক ঘুড়তেই মাথায় ঠাস করে একটা থাপ্পড় লাগালেন….
আমি এখন কেদেই দিলাম… এ্যা এ্যা এ্যা……!
নিচে তাকিয়ে কেদেই যাচ্ছি… তখনি হাসান বলে উঠলো….?
” আসসালামুয়ালাইকুম স্যার…
নিম্মিও সালাম দিলো…
” আসসালামুআলাইকুম স্যার..
আবারও হাসানের আওয়াজ পেলাম..
” স্যার কি হয়েছে? বেলি কি করেছে?
হাসানের ভয়েস শুনে আমি আরো জড়ে কেদে উঠলাম। কারনটা সজা আমি কিছুই করি নি! আমাকে নিয়ে কিসের এতো সমস্যা এই স্যারের! আশেপাশের অনেকেই আমাদের দিক তাকিয়ে আছে। বেশকিছুক্ষন পর তৃষ্ণা স্যারের আওয়াজ পেলাম….
” হাসান… নিম্মি বাসায় যাও।
হাসান মনে হয় কিছু বলতে চাচ্ছিলো! কিন্তু স্যার ওদের কিছু বলতে না দিয়েই বললেন…
” হোয়াট? যাষ্ট গো…?
ওরা স্যারের এমন ভয়ংকর আওয়াজ শুনে চলে যাচ্ছে। আমিও ভাবছি দৌর দেবো। তার আগেই হাতে স্পর্শ পেলাম। হুম তৃষ্ণা স্যার আমার হাতটা টাইট করে ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন সামনে। আমি মাথা নিচু করে চারপাশের মানুষের অদ্ভুত চাহনীয় দেখছি।
গাড়ীর দরজা ওপেন করে বললেন…
” সিট…!
আমি তো দাড়িয়েই ছিলাম। আমার ভাবটা ছিলো.. আমি গাড়িতে বসবো না। কিন্তু তা তো হলো না উল্টো আরো ব্যাথা পেলাম। ধাক্কা মেড়ে ভিতরে ফেলে দিলো। রাগে দুঃখে আমি এইবার ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদে উঠলাম। কাদতে কাদতে হিচকি উঠে গেছে। কি হচ্ছে আমার সাথে? ঘর থেকে বেরিয়ে আসাই ভুল হয়েছে আমার!
গাড়ি চলছে আর আমার কান্নার বেগও বাড়ছে। গাড়িটা অনেক্ষানী গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। আমি তাও স্যারের দিক তাকায়নি। আমি নিচে তাকিয়েই কাদছি! ভেবে রেখেছি আর দেখবোই না এই স্যারকে! ভয়ংকর বিটিং করা টিচার!
হঠাৎ আমার কোমড়ে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম। আমি কেপে উঠে সামনে তাকানোর আগেই সেই হাত জোড়ার মালিক আমায় টেনে তার দিক নিয়ে নিলেন। আমি বিশ্ময় নিয়ে সেদিকে তাকাতেই আমার ঠোঁটে তার ঠোঁটের উষ্ণ আভাস পেলাম। মুহুর্তের মধ্যে কি হলো আমার কোনো আইডিয়া নেই। পুরো শরীরের পশম ধীরে ধীরে দাড়াতে শুরু করলো।
কোমড় থেকে এক হাত উঠিয়ে আমার থুতনির নিচের থেকে ধরে গাল পর্যন্ত চেপে ধরলো। মুখটা তারদিক আরো টেনে নিলো। আমার কোমড় তার এক হাতে সম্পুর্ণ আবদ্ধ।
তীব্র থেকে তীব্র ভাবে তার ঠোঁট আমার ঠোঁটের মাঝে আবেশে প্রবেশ করছে। কি হচ্ছে এটা? সেইটার আইডিয়াই নেই। কিন্তু আমার চোখ লাগাম ছাড়া হচ্ছে ধীরে ধীরে চোখ বুঝে গেলো। আর তার ঠোঁটের ছোয়া তীব্র হয়েই যাচ্ছে। তার আচরণ অনেকটা না পাওয়ায় নেশা হাতে পেয়েছে এমন। মাইন্ড কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে আমার। কি হচ্ছে? কেনো হচ্ছে? কে করছে? কোথায় আছি? কিছু মাইন্ডে নেই শুধু এতটুকু আছে তা হলো অচেনা ফিলিং। যেটা পুরো শরীরে শিহরণ লাগিয়ে দিচ্ছে। ঠোঁটের পাশ বেয়ে পানি পড়লো মনে হচ্ছে? আমি উতলা হয়ে দেখার জন্য চোখ খুলতেই দেখলাম তার চোখ বন্ধ অবস্থায় এক চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। যেই পানির ফোটা আমার ঠোঁটে টাচ করতেই তার ঠোঁটের ছোয়ায় মিশিয়ে যাচ্ছে।
আমি তাকিয়ে থাকতে পারলাম না চোখ লাগাম ছাড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ডেইরিমিল্ক ও মে বি আমি এতোটা মজা করে খাই নি। যতোটা মজা নিয়ে সে আমার ঠোঁটের স্বাদ নিচ্ছে। না প্রচন্ড অস্বস্তি হচ্ছে অনুভুতিতে কিছুক্ষণ বাদে মনে হয় আমি মড়েই যাবো? আমার দু হাত তার বুকের দুই সাইডে মেলে দিয়ে কিছুটা ধাক্কা দিতেই।
তার ঠোঁটের ছোয়া আরো তীব্র ভাবে পাচ্ছি আমার ঠোঁটে। আমি চোখ খিচে আমার ঠোঁট চেপে ধরে মুখে ভড়ে নিলাম। সে মনে হলো রেগে গেলো? আমার গাল এমন ভাবে চেপে ধরলো মনে হলো গাল দাতের মাঝে ঢুকে যাবে। আর ঠোঁট তো মুখ থেকে বেড়িয়ে এলো। আর সাথে সাথে তার ঠোঁট দিয়ে আবার চেপে ধরলো। এইবার আরো উতলা হয়েই ঠোটের স্বাদ নিচ্ছে। তার গরম নিস্বাস গুলি আমার গালে এসে বারি খাচ্ছে। আমার শরীর মনে হচ্ছে নিজের থেকে সরে যাচ্ছে।
আমার ঠোঁট মনে হলো আর নেই। সে ঠোঁটে ঠোঁট ছেড়ে দিয়েই অন্যপাশের জানালার দিক তাকালেন। মনে হচ্ছিলো জড়ে জড়ে স্বাস নিচ্ছে। তার একহাতের দু আংগুল কপালে রাখা। আর আমি তো নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছি নিচের দিক তাকিয়ে। কি হলো? এইটা লিপ কিস ছিলো? আমার জীবনের প্রথম কিস? তাও স্যারের কাছ থেকে পাওয়া। লজ্জাজনক লাগছিলো ব্যাপারটা আমার কাছে।
সে তো আমায় পছন্দই করেন না। আমাকে তো সজ্যই করতে পারেন না। তাহলে এগুলোর কি মানে ছিলো…?
চলবে…..?