অতিরিক্ত চাওয়া { ২ } ১

0
10375

অতিরিক্ত চাওয়া { ২ }

শীতকালীন অন্ধকার ভোরবেলায় পথ চলতে লাগলো বেলী ! লম্বা গাছগুলো আকাশের পানে তাকিয়ে আছে মাথা উঁচু করে! কুয়াশাতে গাছ-গাছালি পানিময় হয়ে আছে! ছোটছোট গাছগুলো ছুঁয়ে দিতে বেশ লাগছে! গাছের থেকে পড়া পাতাগুলো লুটিয়ে আছে মাটিতে! পাতার উপড় উপড় কিছু সুপারি দেখা যাচ্ছে! নিরিবিলি শান্ত পরিবেশ! হালকা আওয়াজে পাখিদের গান। আশপাশ থেকে অদ্ভুত চু চু আওয়াজও আসছে। হালকা আলোয় পরিবেশটি দেখতে নেশায় মাতিয়ে উঠার মতো! পাশেই বয়া যাওয়া আকাশী রঙের নদির পানি গুলো থেকে, শীতকালীন ধোঁয়া বের হচ্ছে! গ্রামেই থাকে আসল প্রাকৃতিক দৃশ্য! বোঝা যায় শীতের আসল মজা! কৃষ্ণপুর হলো প্রাকৃতিক সাম্রাজ্য ! এই সাম্রাজ্যের প্রেমী হলো বেলী।
হাত ঘড়িতে নজর বোলাতেই দেখা যাচ্ছে, ভোরের ৫ টা বাজতে আরো কিছু মিনিট বাকি ! এখনও রাস্তাঘাট অনেকটা অন্ধকারে ঢেকে আছে! দূরদূরান্তে হালকা নজর দিলেই কুয়াশা আর কুয়াশা ! কুয়াশারা পাল্লা দিয়ে বলছে,
— যা বেলী, হাই পাওয়ারের গ্লাস লাগিয়ে আয় চোখে! দেখ কিছু দেখতে পারিস কিনা !
কিন্তু বেলীর তো ভালো লাগে এই কুয়াশাময় দৃশ্য! হাই পাওয়ারের গ্লাস কখনওই লাগবে না! শীতকালীন ভোরবেলার দৃশ্য দেখার জন্য বেলীর গ্লাস কখনোই লাগবে না। অবশ্য, কুয়াশার মাঝে খুঁজে পাওয়া যায় অজানা সাদাকালো জীবন। যেই জীবন গুলো আবছে। আর কেউকেউ তো নিজেই কুয়াশায় বানিয়ে ফেলে নিজেদের জীবন কাহিনী।
খচ খচ আওয়াজ আসছে পেছন থেকে! ভ্রু-উঁচু করে পেছনে ফিরলো বেলী! টাম্মি জিহ্বা বের করে সামনের পা দু’টো মাটিতে লুটিয়ে বেলীর বরাবর বসলো! শরীরে পড়িয়ে দেওয়া নতুন শার্টটি হালকা হালকা ছিঁড়ে! তাতে বোঝাই যাচ্ছে সে আজও অন্য কুকুরদের সাথে মারামারি করে এসেছে!বেলী পায়ের উপড় পা বেঁকিয়ে, গাছের সাথে হেলান দিয়ে হাত দু’টো বুকে বেধে, ভ্রু-কুঁচকে টাম্মির দিক তাকাল ! টাম্মি জিহ্বা ঝুলাতে ঝুলাতে আরেকটু এগিয়ে গেলো বেলীর দিক! এবং আগের ন্যায় ধরে বসলো!
কুকুরটিকে বেলী পেয়েছিলো কোনো এক গাছের পাশে কুঁড়িয়ে! কালো রঙের পশমে তাকে লেগেছিলো মায়ারাজ্য! শরীরে হাত বুলিয়ে যখন চলে আসবে বাচ্চা কুকুরটি বেলীর পায়ে ঘেঁষে তার সাথেই চলছিল! এমন মাসুম চাহনি দেখে বেলী আর কুকুরটিকে ওখানে রেখে আসতে পারলো না। পুরো একমাস পরিবারের চোখের আড়ালে কুকুরটি পেলেছিলো সে ! তার প্রতিদিনের টিফিনের ২০ টাকা করে জমিয়ে কিনেছিলো কুকুরের জন্য খাবারের সরঞ্জাম! ভালোবেসে নাম দিয়েছিলো টাম্মি! মায়া ভরে উঠে তাদের সম্পর্কে! টাম্মি সকলের কথা না শুনলেও বেলী যা বলবে সে তাই করে! আর সদা বেলীর পিঁছু ঘুড়বে বডিগার্ড হয়ে! বেলীর মা যখন জানতে পারেন বাড়িতে কুকুর পালা হচ্ছে, ততক্ষণাৎ ফেলে দিতে বলেছেন! অনেক কান্নাকাটি এবং না খেয়ে তাদের মানিয়েছে! সেই ছোট টাম্মি এখন বড় ওয়ালা বডিগার্ড বেলীর!
শক্ত গলায় বেলী বলল,
–তোকে যেই শার্টটি পড়িয়েছি বলতো কার? আব্বুর শার্ট! তার নতুন উঠানো শার্টটা আমি তোকে পড়িয়েছি ! এখনো আব্বু জানে না তার একটি শার্ট মিসিং! বলতো কতো টাকা শার্টটির মূল্য? ৫৫০ টাকা! আমি এখনো ৫৫০ টাকা জমাতে পারলাম না আর তুই শার্ট ছিঁড়ে অপরাধী হওয়ার অভিনয় করছিস? তোর জন্য আর নো শার্ট কিনা! ভাগ এখান থেকে! সামনে আসবি না।
কথাগুলো হাত নাড়িয়ে বলছিল বেলী। এবং কথা শেষে দ্রুত পায়ে হেঁটে সামনে যেতে লাগলো! ঠিক পেছন পেছন টাম্মিও চার-পা দিয়ে ড্যাংডেঙিয়ে এদিক-সেদিন নড়ে নড়ে হেটে চলেছে! বেলী পেছনে ফিরে দৌঁড় দিয়ে ভয় দেখাতেই টাম্মি কিছুটা দূরে সরে যায়! বেলী আবার সামনে হাঁটতে নিলে সেও হেঁটে চলছে!

গাছ-গাছারির মাঝে ছোট চায়ের দোকান খুলে ঘুমে ঢুলুঢুলু হয়ে পড়ে যাচ্ছে মাহফুজ ! শরীরে হালকা বাদামি রঙের চাদর জড়ানো! বড় বড় দাড়িগোঁফ গুলো বারবার হাটুতে বারি খাচ্ছে! তাও বান্দার ঘুম যাচ্ছে না! বেলী টাম্মির দিক তাকিয়ে সয়তানি হাসি দিলো! টিপটিপ করে মাহফুজের প্রায় কাছাকাছি এগিয়ে গেলো! হালকা ওয়ায়জে চিৎকার করে উঠলো..
” ওই বুড়ো নানাআআআআআ…
মাহফুজ লাফিয়ে উঠলো। সে বেশ ভয় পেয়েছে। ঘুম কাতুরে চোখে তাকিয়ে বেলীর দিক। বেলীকে সম্পুর্ন খেয়াল করতে অনেক্ষন লেগে গেলো তার। ঘুমঘুম কন্ঠে সে বেলীকে বলল,
— সয়তানি যাবে না তোর ! ভয় পাইয়ে মেরে ফেলবিরে।
— মাত্রই না আসলাম। আর এভাবেও আমি আগের থেকে কম দুষ্টুমি করি।
— হ্যাঁ, হ্যাঁ।
টাম্মি ঠিক বেলীর সামনে বসে চোখ পিটপিট করছে! দোকানে ঝুলানো রুটির প্যাকেট থেকে একটি রুটি নিয়ে টাম্মির সামনে দিলো! নিজেও হাটু মুড়ে টাম্মির সামনে বসলো! ছিঁড়ে যাওয়া শার্টটি হাত দিয়ে চেক করে দেখলো কতোখানি ছিঁড়েছে!
— সেলাই লাগবে। কঠিন সেলাই। এটা সেলাই করতে নিম্নে বিশ মিনিট। খালি কাজ বাড়াচ্ছিস। আচ্ছা, সমস্যা নেই স্কুল ফিরে সেলাব। নতুন শার্ট, এখনও টাকা উশুল হয় নি বুঝেছিস! টাকা উশুল না হওয়া পর্যন্ত পড়তে হবে!
টাম্মি চুপচাপ খেতে লাগলো! নানা কেতলি তে ফোটানক পানিতে
চা- পাতা ঢেলে দিলেন ! চিনি এবং সামান্য লবন ও দিলেন ! কেটলির ঢাকনা দিয়ে ঢেঁকে বেলীর দিক ফিরলেন!

মাহফুজ হলেন একাকিত্য মানুষ! বউ মাড়া গিয়েছেন ৩ বছর হচ্ছে! সন্তান আছে দুটো আপাতত তারা বিয়ে করে শহরে চলে গিয়েছেন! একা রয়ে গেলেন মাহফুজ! এই দোকান টি তার বাড়ি! টুকটাক
বেচা-কেনা করেই জীবন-যাপন করেন! ছোট একটি কুঁড়ের বাড়ি আছে ! মন চাইলে যাওয়া হয়! নাহলে এই দোকানেই থাকেন! নিজের মতো রেঁধে বেরে খান! কোনো উৎসব হলে ভালো রান্না-বান্না আশপাশ থেকে দিয়ে যায়। মাহফুজের সাথে আবার সকলের বেশ খাতির। অবশ্য দুদিন বাদে বাদে খাবার আনে বেলী। এনে একদম হাঁটু ভাঁজ করে নানার সাথে তাল মিলিয়ে বসবে খেতে। মাঝে মাঝে রাগলে চলে আসতো এই দোকানে। এসেই ঘুম। বেলীর বাবা ‘ আমার সোনা মা ‘ এবং নানা আহ্লাদী কথায় মানিয়ে বাড়ি নিতেন।
বেলী হলো মাহফুজের আদরের ১৬ বয়সের এক নাতিন ! একদম পাকা বুড়ি। নানান কথায় ব্যাস্ত রাখবে মাহফুজকে। আর মাহফুজ ও আনন্দে ব্যাস্ত হতে থাকে৷ সে তো বেলীকে নিজের নাতিন ভাবেন! এইযে, এমন শীতকালীন ভোরে সে কেনো দোকান খুলে বসে আছে? তা অবষ্যই বেলীর জন্য! মেয়েটির যে সকালের দুধ চা খেতে অভ্যস্ত তার হাতের! আর সেও মন দুলিয়ে খাওয়াতে রাজি!
— চা তো হয়ে এলো! বিস্কিট নিবি রে?
— শুধু চা দাও! মা নাকি রুটি বানাবে! বাহিরে কিছু খেলে আমার জিহ্বা কেঁটে দেবে বলেছিলো! তোমার জন্য দিয়ে যাবো স্কুল যাওয়ার সময়!
— তোর জুতো পেয়েছিলি?
— হ্যাঁ, টাম্মি বাবার লুঙ্গির নিঁচে রেখে এসেছিলো!
–যাঁদের চোরের অপবাদ দিলি যে। ওরা জানলে গ্রাম ছাড়া করবে।
বেলী দুঃখীময় চাহনি দিল মাহফুজকে,
— কীভাবে জানবে? তুমি বলবে নাকি?
— হ্যাঁ বলব।
— ইশ, মিথ্যুক।

বাড়ির উঠানে বসে দাঁত ব্রাশ করছে আনন্দ হাওলাদার! পড়ন্ত লুঙ্গিকে কুঁচিয়ে মুখে কুলিকুচি করে মুখ ফ্রেস করে চেঁচালো,
–বেলী কোথায় খুশি? বিমান আর বাবলু তো ঘুমিয়ে!
উঠান ঝাড়ু দিচ্ছিলো খুশি! স্বামীর কথা শুনে মেজাজ খিটখিট করে বলল..
— তোমার আদুরীনী কোথায় তা তোমার অজানা? দেখো গিয়ে ওপারে চাচার দোকানে টাম্মিকে নিয়ে চা খাচ্ছে! শরীরে শোয়েটার টাও পড়ে যায় নি, সেটা বিছানায় পড়ে আছে! ঠান্ডা লাগুক ওর! দেখাবো ওকে ঘুড়াফিড়া!
আনন্দ হালকা করে সাইড হয়ে গেলো! সকাল সকাল বউয়ের চিল্লাচিল্লি না শুনলে সেদিন তার দিন খারাপ যায়! এবং সেটা সে অনেক লক্ষ করে বুঝেছে! বউয়ের নাম খুশি কিন্তু বউ অখুশি হলেই আনন্দের দিন ভালো যায়। এটাই তার মনে হয়! এবং এটা হান্ড্রেড পার্সেন্ট সত্যিও মনে করেন।
সরকারি স্কুলের সাধারণ শিক্ষক আনন্দ! সরকারি বেতন এবং দু-চারটে টিউশনি দিয়েই চলে যায় তাদের দিন! বউ তার ইন্টার পাশ! এরেঞ্জম্যারেজ হলেও ভালোবাসাটা লাভ ম্যারেজের মতোই! দু’টো মেয়ে আর এক ছেলে তার! মেয়ে বড় টা বিমান অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছে! আর মেজো টা বেলী ক্লাস নাইনে পড়ছে! ছোট ছেলে এইবার পি, এস, সি দেবে! অবষ্য বেলী আর বাবলু তার ই স্কুলে পড়ছে! এই নিয়ে শান্তি পুর্ন জীবন তাদের!

বেলী পা দুলাতে দুলাতে বাড়িতে ঢুকলো ! বিমান বিছানা গুঁছাচ্ছে! বাবলু তার মায়ের আঁচল ধরে পিঁছু পিঁছু ঘুরছে টাকার জন্য! আনন্দ তৈরি হচ্ছে! আর খুশি মাটির চুলো জালাচ্ছে! হালকা করে পেছন থেকে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো বেলী ! আনন্দ পকেট থেকে ৭০ টাকা বের করে বেলূর হাতে দিলেন,
— ২০ তুমি আর ২০ বাবলুর ! বাকি ৩০ বিমানকে দিবে!
— কেনো? আপি কেন ৩০ টাকা নিবে? সমান সমান নিবো! আরও পাঁচ টাকা দাও তিনজন ২৫ করে নিবো! তাই না বাবলু?
বিমান বেলীর মাথায় ঠাঁস করে থাপড়ে বলল..
— গাধি আমি ভার্সিটি পড়ছি! কামারখালি যেতে ১০ টকা আর আসতে ১০! আর ১০ টাকা বারতি যদি লাগে! আর তোর? বাংলাবাজার যেতে আসতে মাত্র ১০ টাকা লাগবে! আর তাছাড়া তুই তো বাবার সাথেই যাস! বাবাই তো তোর ভাড়া দিয়ে দেয়! শুধু ফিরতে ৫ টাকা যায়! তাহলে বেশি টাকা তোর কাছে থাকছে না?
— টাম্মিকে খাওয়ানোর টাকা কে দিবে?
বাবলু মুখে টোষ্ট চিঁবুতে চিঁবুতে বলল..
— আমার ২০ দে! মায়ের আঁচল থেকে ১৫ টাকা মেরে দিয়েছি! হয়েগেলো না তোদের থেকে আমার বেশি টাকা?
বেলী দেওয়ার আগেই আনন্দ বাবলুকে চোখ রাঙালেন। বাবলু লাফ দিয়ে উঠানে চলে গেলো!

স্কুলের গেইটের সামনে আসতেই শিলার বিশাল আনন্দময় চিৎকারে বেলীর বুক ধক করে উঠলো। বিরক্তিকর চেহরা নিয়ে প্রশ্ন করে ফেলল,
— কিসসে? এতো ফুর্তি। ব্যাপার কি? টেস্টে মনে হচ্ছে এবার সেই রেজাল্ট আনবে।
শিলা প্রসঙ্গে উল্টিয়ে বলল,
–ভালোভাবে আশেপাশে নজর দে বুঝে যাবি!
— কেন? এতো কষ্ট কেন করব।
— আররে, তাকা না।
অগ্যত বেলী ভ্রু-উঁচু করে আশেপাশে চোখ ঘুড়াতে লাগলো! কিছু ভ্যানগাড়ি রয়েছে এদিক-সেদিক! একটাতে চটপটি ফুচকা, অন্যটায় আলুরদোম এমন অনেক কিছু! আর এগুলো স্বাদযুক্ত মন নিয়ে খাচ্ছে স্কুলের ছাত্র_ছাত্রিরা! অবষ্য স্কুল থেকে নিষেধ করা হয়েছিলো কিন্তু কে শুনে কার কথা? আর কি, আশেপাশে হাজারো গাছ! পাশেই বড় নদি বয়ে যাচ্ছে! ঘাটের কাছে নানান নৌকো বেঁধে ! কিছু জেলেদের ও দেখা যাচ্ছে দূর-দূরান্তে ! শিলার দিক তাকাতে গিয়ে চোখ গেলো স্কুলের সোজা স্ট্রিট রোডটির দিক। এইবার বেলীর বুক আরও জোরে ধকধক করতে লাগলো লাগাতার। উঁচু করা ভ্রু কুঁচকে গেলো সেকেন্ডেই ! বেলীর এমন ভয়াবহ চেহারা দেখে হাসতে লাগলো শীলা। বেলী বিশ্রী এক্সপ্রেশন নিয়ে তাকাল শিলার দিক। শিলা মহানন্দের সাথে বলতে থাকলো,
” দেখেছিস? ইশ, আরও সুন্দর হয়ে এসেছে। লোকটা দিনদিন এমন ভয়ানক সুন্দর কেন হচ্ছে বলত? এটা তো গুনাহ। এইযে আমার মনটা যে ভেঙে দিচ্ছে। ক্লাস এঈট থেকে ক্রাশ খেয়ে বসে। এখন তো একদিন না দেখলেও ভালো লাগে না ! ১৭ দিন পর গ্রামে ফিরেছে ঢাকা থেকে! ১৭ দিন… এতো দিন। উফ, না গেলে কতো ভালো হতো তাই না? জানিস, আমার সাথে কথা বলেছে একটু আগে! ওইযে, ৬ মাস আগে ফেইসবুকে রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম? আজ সেটাও এক্সেপ্ট করেছে! আর আমার দিক তাকিয়ে হেসেছে ও।
বলতে বলতে শিলার গাল দুটো লাল হতে লাগলো। বেলী নাক কুঁচকে ফেলল। আঁড়চোখে তাকাল মেইন রোডে।

ব্ল্যাক জিপগাড়ি দাঁকড়িয়ে! ড্রাইভিং এ বসে থাকা ব্যাক্তি বেশ ভাবে আছেন মনে হচ্ছে। পা স্ট্রিং এ উঠিয়ে দিব্বি বসে ! সাদা রঙের হাফ জিন্স পরনে! যার ফলে কালো লোম গুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে! ঝাপসা কালো রঙের গেঞ্জিটায় হাতের আঙুল পর্যন্ত ঢেকে ! সানগ্লাস চোখে সিটে হেলান দিয়ে আকাশের দিক মুখ করে রয়েছে! পাশের সিটে দেখা যাচ্ছে তার জিগরি তিন চাচাতো ভাইরা। আবিদ, আয়ুশ, অভি। একদম কপি তৃষ্ণার। ভাইরা ভাই যে। কাঁধে কাঁধে মিল। এই যে পেছনে আবিদ বসে সিগ্রেট খাচ্ছে! আয়ুশ আর অভি সিগ্রেটের ধোয়া বেশ স্টাইল মেরে উড়াচ্ছে!
বেলী উঁহু উঁহু করতে করতে দ্রুতো লুকিয়ে স্কুলে ঢুকে গেলো! তার এখনও স্পষ্ট মনে আছে ঢাকা যাওয়ার আগে তাকে দিয়ে কি কাহিনী গুলো করিয়েছে! কি জঘন্য।

সেদিন ছিলো শুক্রবার! বিকেলবেলায় টাম্মিকে নিয়ে বেলী পুকুরপাড়ের দিক গিয়েছিলো বাদাম টুকাতে ! সে যখন বাদাম টুকাতে ব্যস্ত তখন গর্জন শুনে পেছনছনে ফিরে যা দেখল বেলী তা দেখার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলো না ! কাদায় মাখামাখি টাম্মির সাথে কাদায় পা মাখা তৃষ্ণা দাঁড়িয়ে। তৃষ্ণার নতুন শু তে কাদা আর পানি দিয়ে টুইটুম্বুর! জিন্সের নিচ দিয়েও হালকা কাদা লাগানো!
তৃষ্ণা সেই কাদা লেগে যাওয়ার দোশ দিয়েছিলো টাম্মির উপড়! তখন দোশ যেহেতু টাম্মির তার ফল তো বেলীকে ভুগতেই হতো। যার কারনে বেলীকে সেই জুতো আর প্যান্ট পরিষ্কার করতে হয়েছে ! তাও তৃষ্ণার সামনেই এবং সেখানের পুকুরে। এতো ধুয়েছে তাও বলেছে হয়নি আবার ধুয়ে দে! প্যান্টে যতটুকু কাদা লেগেছে ততটুকু ধুলেই তো হতো? তাই না? অথচ তাকে পুরো প্যান্ট ধুতে হয়েছে! এখন কথা আসে তাহলে তৃষ্ণা কি পড়েছিল তখন। তাহলে বলে দেই, তার জিগরি ভাই আবিদ তৃষ্ণার জন্য ততক্ষণাত প্যান্ট এবং জুতোর ব্যাবস্থা করে ফেলেছিলেন। সেই জুতো আর প্যান্ট বেলি তৃষ্ণাকে আর কখনও পড়তে দেখে নি!
এমন অনেক কাহিনী রয়েছে যেগুলো বেলী মুখ বেঁকিয়ে মনেমনে হাজার অকাধ্য গালি দিতে দিতে করেছে! না করে উপায় কি? এই গ্রামের চেয়ারম্যানের ছেলে! চাচারা পাশের গ্রামের ধনী মান্য ব্যাক্তি, মামা মন্ত্রী । এবং খুব পাওয়ারফুল ব্যাকগ্রাউন্ড তাদের। একজন কে খুন করে সাথে সাথে মামলা চাপিয়ে দিতে পারবে। এমন ব্যাক্তিদের সাথে কি কেউ আগ বাড়িয়ে ঝগড়া করতে যাবে? বরং তারা যা বলবে তাই করতে হবে। এবং বেলীকে তাই করতে হচ্ছে।
নিষ্ঠুর পৃথিবী।

চলবে,
নাবিলা ইষ্ক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here