#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ৩০
✍️ তাজরিয়ান খান তানভি
পৃথিবীতে মানুষের দুটো রূপ হয়।এক বাহিরের দুই ভিতরের।মানুষ সবসময় চায় তার আপনজনদের আগলে রাখতে।তার জন্য তাকে যদি কারো প্রানও নিতে তাতেও সে দ্বিধাবোধ করে না।
পুলিশ ষ্টেশনে একটা বেঞ্চিতে বসে আছে আজরাহান।তার সুউচ্চ শিয়র আজ নিম্নগামী।নিরুত্তেজ আজরাহান একদম স্বাভাবিক হয়ে বসে আছে।তার পায়ের কাছে বসে অনবরত চোখের জলের বিসর্জন দিচ্ছে প্রহর।সানোয়ার আহমেদ ফ্যাকাশে মুখ নিয়ে দাড়িয় আছে।চোখে তার সহস্র প্রশ্ন।
নুরাইসা আর নন্দিতা কুহেলিকা আর সানায়া কে সামলাচ্ছে।তাদের এখানে আসতে দেওয়া হয়নি।সামান চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।
এক কোনে দাড়িয়ে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে মারশিয়াদ।মুখে তার অব্যক্ত হাসি।
“রাহান ভাইয়া,কেনো চুপ করে আছেন??
বলুন না আপনি কিছু করেন নি।”
“বাসায় যা প্রহর।”
“নাহ।আপনি কেনো মিথ্যে বলছেন??
“তুই জানিস আমি মিথ্যে বলি না।”
প্রহর তীক্ষ্ম স্বরে বলে—
“আপনি মিথ্যে বলছেন।মিথ্যে বলছেন আপনি।আপনি কাউকে খুন করতে পারেন না।”
“আমি খুন করেছি প্রহর।আর এটাই সত্য।”
সানোয়ার আহমেদ উত্তেজিত কন্ঠে বলে–
“চলে আয়,প্রহর।কোনো খুনি আমার ছেলে হতে পারে না।”
আজরাহান উঠে দাঁড়ায়।সানোয়ার আহমেদ এর সামনে এসে বলে—
“তোমার আদর্শ ছেলে আজ একটা ভুল করে ফেলেছে, বাবা।অনেক বুঝিয়েছি তাকে।মানতে চায় নি সে আমার কথা।আমার কিছুই করার ছিল না।
আমার যা সাজা আমি মেনে নিবো।তোমরা চলে যাও।কোনো খুনি তোমার ছেলে হতে পারে না।”
আজরাহান সেলের ভিতরে গিয়ে বসে।প্রহর ওর হাত টেনে ধরলেও আজরাহান তা ছাড়িয়ে নেয়।
সানোয়ার আহমেদ প্রহর কে একরকম টেনেই থানা থেকে বের করে নিয়ে যায়।
মারশিয়াদ আর শিহরণ কিছুই বুঝতে পারছেনা।থানার মধ্যকার ভোটকা গন্ধ অসহ্যকর।তারচেয়ে বেশি অসহ্যকর আজরাহান নিরব সম্মতি।
কাল রাত থেকেই আজরাহান এখানে।তাকে অরিধার খুনের অপরাধে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।হোটেল রয়েল ব্লু এর দুইশত পাঁচ নাম্বার রুমে অরিধার নিথর লাশ পাওয়া যায়।হাতে রক্তমাখা ছুরি নিয়ে ফ্লোরেই বসেছিলো আজরাহান।সার্ভিস বয় এসে এই অবস্থা দেখে ম্যানেজার কে জানায়।আর তারপর পুলিশ কে খবর দেওয়া হয়।একটু নিরবেই করা হয়।কারণ হোটেল এল গুডউইল এর ও একটা ব্যাপার আছে।
,
,
,
কুহেলিকা বেগম এর স্যালাইন চলছে।সেন্সলেস সে।যখনই একটু হুশ আসে তখনই আজরাহান এর নাম নিয়ে আবারও শান্ত হয়ে যান।
সানোয়ার আহমেদ নিরুত্তাপ।বুকের ব্যথাটা একটু বেড়েছে।তবুও সহ্য করে নিয়েছেন।সবকিছুই ধোঁয়াটে মনে হচ্ছে।
সানায়ার ও শরীর ভালো নেই।একটু পর পর কেঁপে উঠে শরীর।সামান এখন আর অফিস যায় না।নুরাইসা কয়েকবার গিয়েছিলো কিন্তু প্রথম দিন এর পর থেকে আজরাহান কারো সাথে কথা বলে নি।নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছে নুরাইসা।
সিড়ির উপর বসে দরজার দিকে নিস্পলকভাবে তাকিয়ে থাকে প্রহর।কখন তার রাহান ভাইয়া ফিরবে।
পুরো পরিবার কে এক হাতে সামলে নিচ্ছে নন্দিতা।এই মেয়ে না থাকলে আজ কি হতো কে জানে!!
শোকের ছায়ায় আচ্ছন্ন পুরো বাড়ি।
,
,
,
একের পর এক শুট করে যাচ্ছে মারশিয়াদ।টার্গেট টেষ্ট করছে।কিন্তু তার টার্গেট অপ্রতিরোধ্য।ব্যাক ইয়ার্ডে রাখা চেয়ারে বসে মারশিয়াদ।টেবিলের উপর থেকে কোল্ড ড্রিংস টা নিয়ে চুমুক দেয়।
কোনো ধরনের বাজে জিনিসের অভ্যাস নেই তার।কিন্তু নিজেকে শান্ত করতে কোল্ড ড্রিংস খাওয়া ওর একটা অদ্ভুত স্বভাব বলা চলে।
ধীর পায়ে শিহরণ এসে ওর পাশেই বসে।
“কি খবর তোর??
“ভালো।তোর কি খবর??
“ভালো।”
“দেখে তো ভালো মনে হচ্ছে না।সারারাত জেগে থাকিস নাকি??
অবশ্য নতুন বিয়ে বলে কথা!!
“দুর শালা।হাত পর্যন্ত লাগাতে দেয় না।আর সময় পেলো না আজরাহান।
ওর সেদিনই এতোবড় একটা স্ক্যান্ডাল করতে ইচ্ছে করলো!!
মারশিয়াদ উষ্ণ হাসি হাসে।
“ভাবছি,সুযোগ টা কাজে লাগাই।”
“মানে??
“আজরাহান আর ফিরবে বলে মনে হয় না।কাজলচোখীকে এই সুযোগে নিজের করে নিবো।”
“পাগলের মতো কথা বলবি না।”
“নদী যদি হতে জানে গভীর আরো,
আমিও নাবিক হবো,মানি।
কাজলের চোখ যদি আরো হয় গাঢ়,
ডুবে যেতে আমিও জানি।
—সাদাত হোসাইন
“তোর মাথা ঠিক আছে??
কি বলছিস এইসব??
“তাকে পাওয়ার এই সুবর্ণ সুযোগ আর আসবে না ডিয়ার কলিজা।”
“একদম বাজে কথা বলবি না।”
মারশিয়াদ স্মিত হাসে।বাড়ির ভিতরে করিডোরে গিয়ে কাউচের উপর বসে।শিহরণ ও তাই করে।
“আজরাহান কে আমার অস্কারে ভূষিত করতে ইচ্ছে করছে।”
“বুঝলাম না।”
“ফেবুলাস এক্টিং স্কীল তার।”
“মাথা এমনিতেই ঠিক নেই।তোর এই হেয়ালীপনা বাদ দে।”
“আজরাহান খুন করেনি।”
“কি বলছিস এইসব??
“অরিধার ফরেনসিক রিপোর্ট দেখেছিস??
“হ্যাঁ।কেনো??
“কিছু বুঝতে পারিস নি তুই??
“বুঝার কি আছে!!
মার্ডার উইপেন তো আজরাহান এর হাতেই ছিলো।আর অতিরিক্ত ব্ল্যাডিং এর জন্য মৃত্যু হয়।এমনটাই লিখা।”
“তোকে শালা ডক্টর বানালো কে??
প্রফেসর অ্যালবার্ট কে পেয়ে নেই তোর সার্টিফিকেট আমি বাতিল করিয়ে ছাড়বো।”
“আমার মাথা হ্যাং করছে দোস্ত।যা বলার ক্লিয়ার করে বল।”
মারশিয়াদ ভিডিও প্লেয়ার এ শিহরন এর বিয়ের ভিডিও প্লে করে।আর ওকে অরিধার ফরেনসিক রিপোর্ট এর কপি দেয়।কিন্তু শিহরণ কিছুই বুঝতে পারে না।
“ভিডিও এর টাইমিং দেখ।আর অরিধার ডেথ টাইম।”
“ও শিট!!
এইটা কি করে পসিবল??
“যখন অরিধা খুন হয় তখন আজরাহান হল এই ছিলো।তাহলে বল,একজন মানুষ একসাথে দুই জায়গায় কি করে থাকতে পারে??
“তারমানে আজরাহান খুন করে নি।”
“নাহ।”
“তাহলে চল এইটা দেখিয়ে ওর বেল এর ব্যবস্থা করি।”
“হবে না।
আজরাহান নিজে স্বীকার করেছে।সার্ভিস বয় আই উইটনেস।আর ভিডিও ইডিট করা হয়েছে এমনটা ধারনা হতে পারে।”
“কিন্তু ভিডিও তো আসল!!
“সেইটা আমরা জানি।ওরা না।”
“তাহলে এখন কি করবি??
“আজরাহান কে জিঙ্গেস করে লাভ নেই।ও কিছু বলবে না।যা করার আমাদেরই করতে হবে।”
“কিন্তু কি করবো আমরা??
“যেহেতু মার্ডার কোনো মেয়ের সম্ভবত তার সাথে কোনো ছেলে জড়িত।আজরাহানদের পরিবারে ও ছাড়া তিনজন পুরুষ।
ওর বাবা একজন রক্ষনশীল মানুষ।এই বয়সে মেয়ে ঘটিত ব্যাপারে তিনি জড়াবেন না।ওর ভগ্নিপতি তারাফ গো বেচারা।শুনেছি বউ এর জন্য মা বাবা কে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছে।আর আছে ওর ভাই সামান।এই মালটা বেশি সুবিধার না।”
শিহরণ আশ্চর্য হয়ে শুনছে সব।
“তোর তো পেইন্টার না ডিটেকটিভ হওয়া উচিত ছিলো।”
“আমার কাজলচোখীর জন্য তো আমি অন্তরীক্ষেও পৌছে যাবো।
চল এখন।”
“কোথায়??
“সামান কে আপ্যায়ন করতে।”
,
,
,
“আপনিবিহীন এই পৃথিবী টা কী ভীষন জঘন্য” তা কাছের মানুষগুলো পাশে থাকলে আমরা কখনো উপলব্ধি করতে পারি না।
দরজা বেল বাজতেই দৌড়ে তা খুলে প্রহর।অস্ফুটভাবেই বলে–
“রাহান ভাইয়া,আপনি এসে,,,.
মারশিয়াদ আর শিহরণ কে দেখে তার আশায় গৌধুলী রঙ আচ্ছাদিত হলো।প্রহর দু কদম পিছিয়ে যায়।অক্ষিপল্লব ভিজে আছে তার শীতল অশ্রুতে।প্রহর নিজের ঘরে চলে যায়।
মারশিয়াদ এক পা বাড়াতেই শিহরণ ওকে টেনে ধরে।
“ক্লাম ডাউন,মারশিয়াদ।”
“কিন্তু কাজলচোখী,,,
“আগে আমরা যে কাজে এসেছি তা করতে হবে।”
নন্দিতা আওয়াজ পেয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে।
“তোমরা এখানে??
“আসসালামু আলাইকুম,ভাবী।”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম।”
“সামান ভাইয়া বাসায় আছে??
নন্দিতা ইতস্তত বোধ করলেন।একটু ঘাবড়েও গেলেন।মনে এক অজানা সংকোচ উদয় হলো।
“তাকে কি প্রয়োজন??
“না,,মানে,,আসলে,,
মারশিয়াদ শিহরণ কে থামিয়ে বলে–
“আমরা আজরাহান এর বেল এর ব্যাপারে তার সাথে একটু কথা বলবো।”
“ও আচ্ছা।সে ঘরেই আছে।”
মারশিয়াদ আর শিহরণ ঘরে যেতেই আবারো তা ভিতর থেকে লক করে দেয়।
কিছুক্ষন পর ওরা বেরিয়ে আসে।ওরা চলে যেতেই নন্দিতা খেয়াল করে রুমের ভিতরে বসেও সামান ঘেমে নেয়ে একাকার।চোয়ালের ভাজ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে নোনতা জল।
হাত পায়ে অদ্ভুত কাপুনি।ভয়ের এক অদ্ভুত ছায়া তার চোখে মুখে।
তাহলে কি এইসবের সাথে সামান এর কোনো হাত আছে???
,
,
,
পুলিশ ষ্টেশন এর বড় বাবু চেয়ার এ বসে সামনে রাখা একটা টুল এ পা উঠিয়ে রেখেছে।মুখ ভর্তি পান।লালচে দাঁত গুলো বের করে একটু পর পর কথা বলে যাচ্ছে।ভুড়ি দেখে মনে হবে এই বুঝি তার ডেলিভারির টাইম হলো।
আজকাল মানুষ বিচার চাইতে থানায় যায় না।পৃথিবী আজ বিষন্ন।যেখানে টাকার অঙ্কে সত্য কে মিথ্যা আর মিথ্যা কে সত্যে পরিণত করা হয় তার কাছে ন্যায় বিচার আশা বড্ড বেমানান।টাকার বদলে মানুষ বেচাকেনা হয়।
যেখানে আইন রক্ষক সেখানে আইন ভক্ষক হয়ে মানুষের মন ও মস্তিষ্ক সবকিছু গ্রাস করে চলছে।তাই তো মানুষ এখন আর আইনের উপর ভরসা করে না।
ধীর পায়ে আজরাহান এর সেল এর সামনে এসে দাড়ায় মারশিয়াদ।হালকা হাসি তার অধরের কোনায়।ওকে দেখে আজরাহান ও এগিয়ে আসে।
“খুন টা যখন করলেই তখন বিয়ের আগেই করতে।শুধু শুধু আমার কাজলচোখী কে কাঁদালে।”
আজরাহান ম্লান হাসে।
“আমার প্রহরিনী এতো সহজে আমাকে ভুলবে না।”
“হয়তো!!
এইসবের কী খুব প্রয়োজন ছিলো??
“তার জবাব আমি কাউকে দিতে বাধ্য নই।”
“কাজলচোখী তোমাকে ভালোবাসে বলে তুমি আজও তার সাথে আছো।”
“যতক্ষন আমি আছি আমার প্রহর তার মনে অন্য কাউকে জায়গা দিবে না।”
“আমি কি করতে পারি তুমি তা জানো না আজরাহান।”
“ছোটবেলা আমাদের স্যার একদিন ক্লাসে এসে আমাদের একটা প্রশ্ন করেছিলেন।প্রশ্নটা এমন ছিলো,,,
তিনি বোর্ডে একটা রেখা টেনে আমাদের বললেন,রেখা টিকে কোনোভাবে স্পর্শ না করে তাকে ছোট করে দেখাতে।
তা কি আদৌও সম্ভব??? নাহ।
তখন স্যার ঠিক তার উপরে আরেকটা রেখা টানলেন যা পূর্বের রেখার চেয়ে বড় ছিলো।
এই থেকে এইটা বুঝা যায়,কাউকে ছোট দেখানোর জন্য তাকে ছোট করার প্রয়োজন নেই।বরং নিজেকে তার চেয়ে বড় করে তুলতে হবে।”
“দ্যাটস গ্রেট।
আমার কাজলচোখী মানুষ চিনতে ভুল করে নি।”
আজরাহান আবারও নিজের জায়গায় গিয়ে বসে।
মারশিয়াদ ওর হাতের তর্জনীর ভিতরে চাবির রিং নিয়ে তা ঘোরাতে ঘোরাতে শিষ বাজাতে থাকে।
আজরাহান আনমনে বলে উঠে—
“তোকে বলেছিলাম না প্রহরিনী,আমি চলে গেলেও আমার ছায়া তোকে ছাড়বে না।আমি ফিরবো প্রহরিনী,আমি ফিরবো।”
,
,
,
আজরাহানদের বাড়ির গেইটে পা রাখতেই গন্ধরাজ ফুলের এক অদ্ভুত সুগন্ধ ভেসে আসছে।মারশিয়াদ সেদিকে পা বাড়ায়।গার্ডেনের সেই গন্ধরাজ ফুলের গাছে ফুল ফুটেছে।মারশিয়াদ তাতে হাত দিতেই একটা বাচ্চা কন্ঠ বলে—
“এই তুমি ফুল ছিড়বেনা।তাহলে আমার প্রহরিনী খুব বকবে।”
মারশিয়াদ সূর্য্যি কে দেখে এক গাল হাসে।হাটু ভেঙে বসে ওর সামনে।
“কেমন আছেন মিষ্টি??
“তুমি কি করে জানো প্রহরিনী আমাকে মিষ্টি বলে ডাকে??
“কারন আপনি আসলেই মিষ্টি।”
মারশিয়াদ আলতো করে ওর গাল টেনে দেয়।
“বড় আঙ্কেল,আমার চাচ্চু কোথায় তুমি জানো??
কতদিন চাচ্চু কে দেখি না।”
“চিন্তা করবেন না।আপনার চাচ্চু ফিরে আসবে।”
“সত্যি!!
“হুম।আমি কি আপনাকে কোলে নিতে পারি??
সূর্য্যি ওর দুহাত মারশিয়াদ এর দিকে বাড়িয়ে দেয়।ওকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে আসতেই সামনে পরে প্রহর।অগ্নিদৃষ্টি তার।
মারশিয়াদ সূর্য্যি কে কোল থেকে নামায়।
“কেনো এসেছেন এখানে??
চলে যান এখান থেকে।”
মারশিয়াদ শান্তভাবে তাকায়।
“কি হলো কথা কানে যাচ্ছে না।দাড়িয়ে আছেন কেনো??
চলে যান এখান থেকে।কেনো আসেন এখানে বার বার!!!
আমার রাহান ভাইয়ার কিছু হলে আমি আপনাকে কিছুতেই ক্ষমা করবো না।কিছুতেই না।”
নিজের রাগ সংবরণ না করতে পেরে প্রহর এক ধাক্কা মারে মারশিয়াদ কে।আচমকা ধাক্কায় মারশিয়াদ নিজেকে সামলে নিতে কিছুটা বেগ পায়।প্রহর এর চিৎকার এ নন্দিতা সেখানে উপস্থিত হয়।ওকে কিছু বলতে গেলে মারশিয়াদ ইশারা করে কিছু না বলতে।প্রহর চলে যায়।
“তার মনের অবস্থা আমি বুঝি।আমার আসলে এখানে আসা উচিত হয় নি।”
মারশিয়াদ সূর্য্যি কে একটা চকলেট এর প্যাকেট দেয় আর সাথে একটা চিরকুট।ওর কানে কানে বলে–
“মিষ্টি,এইটা আপনার প্রহরিনী কে দিবেন।”
প্রহর এর কাছে গিয়ে কাগজটা ওর হাত দেয়।তাতে লিখা—–
“আপনার রাহান ভাইয়া ফিরবে কাজলচোখী।তাকে ফিরতেই হবে।আপনার জন্য।”
প্রহর কাজটা মুছড়ে ফেলে দেয়।
মারশিয়াদ গাড়িতে বসে।যার চোখের জল দেখবে না বলে নিজের বুকে অথৈই সাগর জমিয়েছে সে আজ তারই সামনে কেঁদে যাচ্ছে।
“আমিও চলে যেতেই পারতাম,তোমার মতো,
আমার বুকেও জমছে অথৈ কান্না,ক্ষত
তবুও আমি থেকেই গেছি,কোথাও যাইনি,
তোমায় ভুলে,অন্য মানুষ খুঁজতে চাইনি!
—-সাদাত হোসাইন
,
,
,
আজ এক সপ্তাহ আজরাহান জেলে।সানোয়ার আহমেদ লাগাতার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।কিন্তু কোনো লয়্যারই কেস নিতে রাজি নন।কারন যেখানে মার্ডারার নিজের মুখে স্বীকারোক্তি দিয়েছে সেখানে এই কেস জেতার সম্ভাবনা খুব কম।
প্রহর আজও সিড়ির উপর বসে আছে।আজ আজরাহান কে কোর্টে উঠানো হবে।সানোয়ার আহমেদ সকালেই বেরিয়েছেন।তৃষ্ণার্ত চাতকের মতো চেয়ে আছে প্রহর।
আচমকা ওর ঘোর লেগে যায় গন্ধরাজ এর তীব্র গন্ধে।
আজরাহান এসে দাড়ায় সেখানে।প্রহর ছলছল আঁখি নিয়ে দৌড়ে যায় ওর কাছে।শ্রাবনের মেঘ ফুড়ে বাদল নেমেছে।
আজরাহান শান্ত।কঠিন শান্ত।প্রহর কে এড়িয়ে মায়ের ঘরে যায়।কুহেলিকা আধমরা হয়ে শুয়ে আছে।হাতে স্যালাইন চলছে।আজরাহান কে দেখে উঠার চেষ্টা করতেই ক্যানালা বেয়ে রক্ত উপরে উঠে আসে।
“কুইন,কি হচ্ছে এইসব!!
শান্ত হও।আমি ঠিক আছি।”
কুহেলিকা কিছু বলতে চান।কিন্তু মুখ থেকে অস্ফুট আওয়াজ বেরিয়ে আসে।আজরাহান তাকে শান্ত করে।চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পরে ঠান্ডা অশ্রুজল।সানায়া ওকে দেখে যেনো প্রান ফিরে পায়।
,
,
“রসগোল্লা!!!
আজরাহান এর কন্ঠ শুনে ওকে জড়িয়ে ধরে প্রহর।
“আপনি এতো নিষ্ঠুর কেনো??
একটুও কষ্ট হয় না আপনার আমার জন্য??
“যা কিছু ছিলো আমার
হয়েছে সব তোর
এই জন্মের মতো আমি
তোমাতেই বিভোর।”
চলবে,,,