অদ্ভুত প্রেমোমোহ তুমি পর্বঃ৪১

0
2574

#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ৪১
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

মানুষের ভাগ্য নদীর মতো।কখন যে তার চলার পথ পরিবর্তন করে বোঝা যায় না।নদী যেমন তার স্রোতধারার পথ সুযোগ বুঝেই পরিবর্তন করে ঠিক মানুষের ভাগ্যও তেমন।

“ভাগ্য স্থির,ভাগ্য অনঢ়
মানুষ কে মেনে নিতে হয় তার ভাগ্যের পরিনয়।”

গত দেড় মাসে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন এসেছে প্রহর এর জীবনে।কুহেলিকা তাকে সম্পৃর্ন মেনে না নিলেও তার প্রতি এক নিগূঢ় ভালোবাসার টান এখন সে উপলব্ধি করে।আর এ সবকিছুই সম্ভব হয়েছে সানায়ার সদ্য জন্ম নেওয়া ফুটফুটে শিশুটির আগমনি বার্তায়।

একদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ করে টেবিলে কোনার সাথে লেগে পড়ে যায় সানায়া।পড়তেই তার স্ফিত উদর চেপে ধরে আর্তনাদ করে উঠে।প্রহর রান্না ঘরেই ছিলো।দৌড়ে এসে দেখে সানায়ার নিম্নাভিমুখ বেয়ে রক্তের স্মিত ধারা বয়ে চলছে।সানায়ার এই অবস্থায় ভয়ে তটস্থ হয়ে পড়ে প্রহর।তার আকাশ কাঁপানো চিৎকারে পুরো বাড়ির লোক এসে জমা হয় সেখানে।চট জলদি হসপিটালে নেওয়া হয় সানায়া কে।

সার্জারীর প্রয়োজন।সাথে প্রয়োজন রক্তের।ভর সন্ধ্যায় দৌড়ে বেড়াচ্ছে সবাই রক্তের প্রয়োজনে।সানায়ার ব্লাড গ্রুপ ম্যাচ করে ওর মা আর আজরাহান এর।কিন্তু আজরাহান তো নেই আর কুহেলিকার পক্ষে এমন অবস্থায় রক্ত দেওয়া সম্ভব না।ব্লাড ব্যাংক খুঁজে রক্তও পাওয়া যাচ্ছিল না।কথায় আছে,,,,”অভাগা যেদিকে যায়,সাগর শুকিয়ে যায়।”

একবার প্রহর এর কলেজে ব্লাড ডোনেশনের ক্যাম্প হয়েছিলো।প্রহর চেয়েছিলো ডোনেট করতে কিন্তু আজরাহান দেয় নি।কারণ প্রহর প্রাপ্ত বয়স্ক ছিলো না।সেখান থেকে জানতে পারে তার ব্লাড গ্রুপ যা আজ সানায়ার প্রয়োজন।নির্দ্বিধায় রক্ত দিতে পারবে সে এখন।তাই আর কাল বিলম্ব না করে প্রহর এর রক্তেই প্রান পায় সানায়ার নতুন জীবন।

তারপর থেকে অনেকটা সমীহ করেন কুহেলিকা প্রহরকে।সেদিনও নিজের খাওয়ার প্লেট থেকে খাবার তুলে মুখে দিলেন প্রহর এর।এতোদিনের বুকে জমা আক্রোশ,ঘৃণা,ক্ষোভ যেনো এক মুহুর্তেই বরফ পানি হয়ে গেলো কুহেলিকার।ভাতের লোকমা মুখে পুরতেই ডুকরে কেঁদে উঠে প্রহর।এ তার কষ্টের কান্না নয়।সুখের কান্না।তার চিত্তে জমে থাকা অগাধ ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছে আজ তার ছোট মা।
খুশির আমেজ নিয়ে জন্মেছে সানায়ার ছেলে।ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক আজ একে অন্যের সাথে জড়িয়ে সে।আনন্দঘন মুহুর্ত যেনো আজ উপচে দিচ্ছে তার উচ্ছলতার সমাহার।প্রহর শিশুটির নাম রাখলো উৎসব।কেউ দ্বিমত করলো না
,
,
,
আজ দেড় মাস পর আজরাহান ফিরেছে।এক খুশির সাথে আরেক খুশি যোগ হয়েছে।গত দেড় মাসে অনেক কিছু বদলেছে।বদলেছে প্রহর।জীবন যেনো আজরাহান এর এই দেড় মাসের শূন্যতা প্রহর কে হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিয়েছে নারীর জীবনে তার প্রানপুরুষের ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তা।বুঝিয়েছে মাতৃত্বের স্বাধ আস্বাদন নারী জীবনের পূর্নতার সমাপ্তি।
আজ সকালেই প্রহর জানতে পারে নির্ধা কনসিভ করেছে।তার মনের ঝড় যেনো তাকে এইবার আষ্টেপৃষ্ঠে চেপে ধরলো।অজানা কারনেই সে আন্দোলিত হতে চেয়েও পারলো না।

আকাশ ভরা তারার আজ লুকোচুরি খেলা।বিশাল চাঁদ যেনো একনিষ্ঠ রাজত্ব করছে গগন জুড়ে।দুর থেকে ভেসে আসছে বিভিন্ন পোকার গুনগুনে আওয়াজ।ব্যালকনি তে দাড়িয়ে চন্দ্রকিরণে দাড়িয়ে নিজের জীবনের অপূর্নতার সমীকরন মেলাচ্ছে প্রহর।

নরম পায়ে ওকে পিছন থেকে আলিঙ্গন করে আজরাহান।আজও প্রহর নীল রঙের শাড়ী পড়েছে।খোপায় ঘুজেছে গন্ধরাজ।ব্লাউজ এর গলার বর্ধিত অংশে উন্মুক্ত পিঠে আজরাহান এর চিবুকের স্পর্শেই বিদ্যুৎ খেলে যায় প্রহর এর শরীরে।আজরাহান শান্ত এবং স্মিত কন্ঠে বলে—

“কিরে রসগোল্লা,ঘুমাবি না??

প্রহর নির্বিকার।ক্ষনে ক্ষনে কেঁপে উঠছে তার শীতল দেহবরন।

আজরাহান ওর স্বাভাবিক কন্ঠে আবার বলে–

“কিরে কী হয়েছে তোর??

প্রবল বেগে প্রহর ঘুড়ে দাড়ায়।কেমন লালচে আভা তার অক্ষিযুগলে ভর করেছে।শীতল দেহ ধীরে ধীরে উষ্ণতায় ছেয়ে যাচ্ছে।

আজরাহান এর শরীর অনেকটাই ভেঙে পড়েছে।কেমন যেনো রোগা,জীর্ণশীর্ণ।মুখটাও ফ্যাকাশে।যেনো ধীরে ধীরে কেউ ওর রক্ত শুষে নিচ্ছে।প্রহর তাকায় আজরাহান এর বদনে।নির্লিপ্ত দৃষ্টি তার।শরীরের কাঠামোতে বিধ্বস্ততা হলেও আজরাহান এর ঠোঁটের ওই ভুবন ভোলানো হাসি যেনো ওর অঙ্গে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে।আজরাহান অবাক পানে দেখে প্রহর কে।এ যেনো এক অন্য প্রহরিনী।এক ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে সে তার দিকে।
শিহরিত প্রহর এক কিম্ভূত কান্ড করে বসে।আজরাহান এর শার্টের ফাক গলিয়ে নিজের অধর ছুইয়ে ধরে।আজরাহান হকচকিয়ে দু কদম পিছনে চলে যায়।

রুষ্ট কন্ঠে বলে—

“প্রহর,,,
এইসব কী ধরনের ব্যবহার??

প্রহর অগ্নিঝরা কন্ঠে বলে—

“আমার আপনার ঔরষজাত সন্তান চাই রাহান ভাইয়া।আমি মা হতে চাই।”

নিজেকে বিচলিত করে না আজরাহান।এইসব একদিন হওয়ারই ছিলো।সে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া করলো না।সহজ আর স্বাভাবিকভাবে বলে—

” সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা কর।”

প্রহর ঝাঝিয়ে উঠে।

“কীসের অপেক্ষা রাহান ভাইয়া!!আর কতো অপেক্ষা করাবেন আমাকে!!
নির্ধার বিয়ে তো আমার কতো দিন বাদে হয়েছে।তবুও দেখেন আজ সে পরিপূর্ন নারী।তাহলে আমাকে কেনো অসম্পূর্ন করে রেখেছেন আপনি??

প্রহর কে এইরুপে আজরাহান আগে কখনো দেখেনি।তার এখন শান্ত থাকা প্রয়োজন।তা সে থাকবে।
স্মিত কন্ঠে বলে–

“দেখ প্রহর,এতো রাতে ঝামেলা করিস না।সবাই ঘুমাচ্ছে।”

প্রহর উদ্বেলিত কন্ঠে আরও গলা উচু করে বলে—

“ঘুমাবেই তো।সবাই তো সুখে আছে।তাহলে আমাকে কেনো জ্বালিয়ে মারছেন আপনি!!

আজরাহান কিংকর্বত্যবিমূঢ়।সে বুঝতে পারছে তার এখন যাওয়া উচিত।
আজরাহান ঘুড়ে দরজার দিকে পা বাড়ায়।তীব্রতর পদচারনে প্রহর গিয়ে আজরাহান এর সামনে দাড়ায়।আজরাহান এর শার্ট খামচে বলে–

“কোথায় যাচ্ছেন আপনি??সব সময় কেনো পালিয়ে বেড়ান আপনি??কেনো আপনি আমাকে আপনার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছেন??

আজরাহান ফুঁস করে এক দম ছাড়ে।কন্ঠের তার নির্মলতা।নেই কোনো সংকোচ নেই কোনো দ্বিধা।

“তোর কী মনে হয় আমি তোকে ভালোবাসি না!!!

প্রহর এইবার শক্ত কন্ঠে বলে–

“তাহলে আমার ভালোবাসার পূর্নতা দিন আমাকে।”

কেনো যেনো আইসক্রীম না পাওয়ায় অভিমান করে কেঁদে বুক ভাসানো প্রহর আজ বিশুদ্ধ কঠিন।কন্ঠে তার সুক্ষ্ম ধার।নেই কোনো কোমলতা।ঠিক যেনো অধিকার আদায়ের লড়াই এর এক লড়াকু নারীসৈনিক।

“কী বলতে চাস তুই??

“আমাকে আমার অধিকার দিন।আপনার স্ত্রী হওয়ার অধিকার।আপনার ভালোবাসায় সিক্ত হওয়ার অধিকার।আপনার অস্বতিত্বে আমার বিচরণ করার অধিকার।”

“আমার সবটা জুড়ে শুধু তুই তা তোর অজানা নয়।”

“শুধু মুখেই বলেন আপনি।
এতো কীসের সংশয় আপনার আমাকে স্পর্শ করতে।কিসের এতো দূরত্ব আপনার??

“যেতে দে আমাকে।”

“কোথাও যেতে দিবো না আমি আপনাকে।কী ভাবেন আপনি নিজেকে!!
আপনি জানেন,,নন্দিতা ভাবী আবারও অন্তঃসত্ত্বা।তাদের মধ্যে তো কিছুই ঠিক ছিলো না।তাহলে??
তাহলে আপনি কেনো আমাকে সবকিছু থেকে বঞ্চিত করছেন??

আজরাহান এর মস্তিষ্কে তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়েছে।এ ভীষন অন্যায়!তাকে স্থির থাকতে হবে।
প্রহর এইবার ডুকরে কেঁদে উঠে।শ্রাবনের অশান্ত দ্বারা বইতে থাকে তার নয়নযুগলের কার্নিশ বেয়ে।

“আপনি জানেন,আপনি চলে যাওয়ার পর আমি কতোটা আপনিহীনতায় ভুগেছি!!!আমি একটা রাতও ঘুমাতে পারিনি।”

আজরাহান এর নিরুত্তেজ শরীর আর মন দুটোই তার নাগালের বাইরে।প্রহর এর কোনো কথা মিথ্যে নয়।মিথ্যে নয় তার প্রহরিনীর জাগ্রত অনুভুতি।কিন্তু সে নিরুপায়।সময় তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

“রাহান ভাইয়া,কেনো এমন করছেন??কী হয়েছে আপনার??
আপনি কেনো আমাকে নিজের কাছে টেনে নেন না!!আমি তো আপনার প্রহরিনী।”

আজরাহান এর দীপ্ত চেহারায় ঘন আঁধার ভর করে।ছেয়ে যায় বিধ্বস্ততা।পা দুটো ছড়িয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে মাথা রাখে তাতে।ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় প্রহর এর দিকে।আজ তার প্রহরিনী বিক্ষিপ্তচিত্তের ধারণকারী।তার ভঙ্গুর হৃদয়কে সুতোয় গাথা মালা যে তৈরি করতে পারবে না সে।
আজরাহান এর শান্ত চাহনি প্রহর এর হৃদয় কাঁপিয়ে তোলে।তার শরীরের অস্থিমজ্জা যেনো ভেঙে চুরে একাকার হয়ে যাচ্ছে তার রাহান ভাইয়ার নির্লিপ্ত চাহনিতে।আজরাহান এর প্রজ্জলিত মুখঃচ্ছবি ধীরে ধীরে ঢাকা পড়ে অন্ধকার মায়ায়।কন্ঠের দৃঢ়তা রেখে বলে—

“তুই আমার সেই প্রহরিনী না যাকে আমি ভালোবাসি।আমার প্রহরিনী আমাকে ভালোবাসতো আমার শরীর কে নয়।তুই তো আজ আমাকে শোপিস বানিয়ে দিলি রে।তাই আজ নিজের কাজে আমাকে ব্যবহার করতে ইচ্ছে হচ্ছে তোর!!!

কান্না ও দ্বিধামিশ্রিত কন্ঠে প্রহর বলে–

“রাহান ভাইয়া!!!

“নাহ।তুই আর আমাকে এই নামে ডাকবি না।আজ তোর কাছে আমার ভালোবাসার মূল্য নেই।আছে শুধু আমার শরীর এর।”

প্রহর দৃষ্টি আবদ্ধ করে আজরাহান এর চোখে।এক শীতল অশ্রু ধারা নেমে যাচ্ছে আজরাহান এর নেত্রজোড়া থেকে।প্রহর ধড়াস করে বসে আজরাহান এর পায়ের কাছে।ওর পায়ের উপর হাত রাখতেই আজরাহান তা তীব্র গতিতে সরিয়ে নেয়।

“আমাকে স্পর্শ করবি না।তোর সেই অধিকার নেই।”

“রাহান ভাইয়া।”

আজরাহান ধম করে উঠে দাড়ায়।প্রহর এর দু বাহুতে ধরে ওকে ঝাকিয়ে উত্তেজিত আর রুষ্ট কন্ঠে আজরাহান বল উঠে—

“শরীরের উর্ধ্বে ভালোবাসা প্রহরিনী,শরীরের উর্ধ্বে ভালোবাসা।কিন্তু আজ তোর কাছে আমার ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই।আজ তোর আমার শরীরের প্রয়োজন।”

আজরাহান ফোস করে শ্বাস ছাড়ে।আবার বলে–

“তাই আমি তোকে মুক্তি দিলাম।যা আজ থেকে তুই মুক্ত,স্বাধীন।”

প্রহর শান্ত হয়ে।তার বুকে জ্বলে উঠা স্থিমিত কয়লার গনগনে আগুন শান্ত হয়।আজরাহান কে সে ভালোবাসে।তার ভালোবাসায় কামনা ছিল না।ছিলো পবিত্রতা।ছিল অগাধ বিশ্বাস।তাহলে আজ এমন কেনো হলো!!
তাহলে কী সে তার রাহান ভাইয়া কে পরিপূর্নভাবে ভালোবাসতে পারেনি????

প্রহর কিছুতেই ওকে যেতে দিবে না।আজরাহান এক রকম জোর করেই ওকে ঘরে তার দ্বার বন্ধ করে দেয়।
,
,
,
দরজায় কড়াঘাত নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়ে নরম পায়ে সানোয়ার আহমেদ এর স্ট্যাডিরুমে পদার্পন করে আজরাহান।বুকশেল্ফ থেকে একটা বই নিয়ে মাত্রই দাড়িয়েছেন।আজরাহান এর উপস্থিতি টের পেয়ে হালকা সরে এসে দাড়ালে।টেবিলের উপর থাকা তার চশমা টা চোখে তুললেন।দু কদম পাশ ফিরে চেয়ার টা হালকা টেনে তাতে আরাম করে বসলেন।নিরব হয়ে দাড়িয়ে আছে আজরাহান।তার ব্যথা উপশমের একমাত্র দাওয়াখানা তার বাবা।সানোয়ার আহমেদ বইটা খুললেন।দু পাতায় নিজের চোখ ঘুরালেন।তারপর কিছু ভেবে বই টা বন্ধ করলেন।সম্পূর্ন ঘরে এক মৃদু আলোর সন্নিবেশ।কিন্তু তাতে আজরাহান এর বিষন্ন মুখটা সানোয়ার খুব ভালো করে পরখ করলেন।চোখ থেকে চশমাটা খুললেন।আজকাল রাতে দেখতে একটু অসুবিধা হয়।দিনের বেলা নিজেকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখলেও রাতের এই নিস্তব্ধতা তাকে আজকাল বেহিসেবী পোড়ায়।তাই নিজেকে ডুবিয়ে রাখেন বই এর মাঝে।ঘুম আজকাল আড়ি পেতেছে তার সাথে।একটা শীতল আর আবেগভরা কন্ঠে সানোয়ার বললেন–

“কিছু বলবে??

আজরাহান লম্বা পায়ে কিছুটা সামনে এগিয়ে এলো।তার কন্ঠে স্বাভাবিকতা।নিরস ভাবে বলল–

“সময় হয়েছে বাবা।তাকে আমার প্রয়োজন।”

সানোয়ার কিছুটা সময় নিলেন।তারপর বললেন–

“তোমার কী মনে হয় সে রাজী হবে??

“সে তাকে ভালোবাসে বাবা।”

সানোয়ার একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।তার দীর্ঘশ্বাস আজ দেয়ালের ও প্রান্তে ধাক্কা খেয়ে তার কাছেই ফিরে আসছে।
সন্দিহান কন্ঠে বললেন—

“কী করে একজন নিজের অস্তিত্ব কে বিলীন করে অন্যের ভালোবাসা কে নিজের মধ্যে লালন করবে??

আজরাহান মলিন কন্ঠে বলে–

“আমি তার চোখে সেই ভালোবাসা দেখেছি বাবা।”

সানোয়ার ধীর পায়ে আজরাহান এর সামনে এসে দাড়ায়।বুক টা তার হু হু করে উঠে।অজানা আগ্রাসন তার শরীরটাকে নির্জীব করে দিচ্ছে।

তার আদর্শ ছেলের জন্য তার আজ গর্বিত হওয়া উচিত।তবে কেনো তার চোখে নোনতা জলের ধারা??

কিছু না বলেই জড়িয়ে ধরে আজরাহান কে।ভালোবাসার মায়ায় জড়িয়ে আর কী লাভ??
টপ টপ কর ঝড়ছে সানোয়ার আহমেদ এর চোখের জল।আজরাহান শান্ত কন্ঠে বলে–

“আমার সুপার হিরো কাঁদছে কেনো??
ইউ আর এ ব্রেভ বয়!!ডোন্ট ক্রাই বাবা।”

সানোয়ার আহমেদ ওকে ছেড়ে দাড়ায়।চোখ বুলিয়ে দেখে তার আদর্শ ছেলে কে।একদম সহজ,স্বাভাবিক,শান্ত আর স্নিগ্ধ সে।এ যেনো ফোটা পদ্ম।
গলায় স্নিগ্ধতা নিয়ে বলে—

“আমার ব্রেভ বয় যদি এভাবে ভেঙে পড়ে তাহলে আমার কী হবে!!
কী করে আমি সামলাবো আমি সবকিছু!!

সানোয়ার আহমেদ কিছু বললেন না।তার বুকের চিনচিনে ব্যথা ক্রমশ তার গতি বৃদ্ধি করছে।আবারও আজরাহান কে আবদ্ধ করেন নিজের বাহুবন্ধনে।এ জন্মের বাধঁন সে চাইলেও ছিড়তে চায় না।

দুজন মানুষের নিরব ভালোবাসায় আর ক্রন্দনে ভারী হয়ে উঠে রুষ্ঠদ্বারে আবদ্ধ সে সমাহিত পরিবেশ।
,
,
,
চোখে এক হতাশা আর ভয় নিয়ে বসে আছে মুরাদ মাহমুদ।তার ভবিষ্যৎ এখন আঁধারের সীমানায় দাঁড়িয়ে।

গভীর কন্ঠে বললেন–

“তাহলে এখন কী হবে??

মারশিয়াদ ম্লান হেসে বলল–

“কী আর হবে!!আমি,তুমি আমরা।আর কারো প্রয়োজন নেই আমাদের।”

কন্ঠের গভীরতা খানিক বাড়িয়ে দাদু বললেন—

“তাহলে কী আমার বংশ রক্ষায় কেউ থাকবে না??

মারশিয়াদ স্মিত হাসলো।উচ্ছলিত স্বরে বলল–

“তা নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না।আমি তার ব্যবস্থা করেছি।”

দাদু উদ্বিগ্নভাবে সুধায়–

“কি করেছো তুমি??

মারশিয়াদ ফিক করে হেসে দেয়।

“মহৎ কাজ।আমি নিমিত্তি কে অ্যাডপ্ট করবো।আমার সব প্রপার্টি ওর নামে ট্রান্সফার করে দিবো।ওর বাবা,মাও আমাদের সাথে থাকবেন।আমাদের পরিবার পূর্ন হবে দাদু।ইউ ডোন্ট ওয়ারি।”

বৃদ্ধ গোঙানি দিয়ে কেঁদে উঠলেন।কী বলে এই ছেলে!!!

“তাই বলে তুমি,,,

মারশিয়াদ শক্ত কন্ঠে বলে–

“আমি তো বলেছি দাদু আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়।”

মারশিয়াদ এইবার দুষ্টুমির ছলে বলে–

“তোমার আর আমার মাঝে এইসব মেয়ে মানুষের কোনো প্রয়োজন নেই।বাড়ন্ত ঝামেলা।জানোনা,মেয়ে মানুষের মাথায় কুট বুদ্ধি বেশি থাকে।”

মারশিয়াদ এর কথা শেষ না হতেই ধুম করে এক বিকট আওয়াজ আসে।ওরা দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ায়।মুরাদ মাহমুদের বিস্ফোরিত চোখ উদ্বুত ভয়ে কেঁপে উঠে।মারশিয়াদ এর বাড়ির সামনেই একটা অপরিচিত গাড়ি ব্লাস্ট হয়।দাদু কে সেখানেই রেখে দৌড়ে বাড়ির সদর দরজায় আসে মারশিয়াদ।রাগে অগ্নিশর্মা মারশিয়াদ ওর গার্ডদের প্রধান কে গলা চেপে ধরে বলে—

“খেয়ে খেয়ে অসুর এর মতো শরীর বানিয়েছিস।আমার বাড়ির সামনে এইসব হলো কী করে??

ভয়ে অলরেডী থর থর করে কেঁপে অস্থির গার্ড।এক শুকনো ঢোক গিলে নেয়।মারশিয়াদ এর রাগ সম্পর্কে ভালো করেই জানে।কাপা কাপা গলায় বলে–

“সসরিই স্যাআর,আআআসলে আমমরা কিছছু বুজে উউঠার আগেই ওটা ব্লাস্ট হয়ে যায়।”

মারশিয়াদ এর মোবাইল বাজতেই তার রিসিভ করে নেয়।ওপাশের মানুষের প্রতিটি কথায় মারশিয়াদ এর মস্তিষ্কের দুপাশের রগ দপদপ করতে লাগল।কপালের পঞ্চ ভাজ অঙ্কিত করছে তার রেখা।হাতের শিরা বেয়ে চলমান রক্তের ধারা যেনো ঘোড়দৌড় শুরু করেছে।ভারী কন্ঠে বলে—

“দাদু কে বাড়িতে থেকে বের হতে দিবি না।যদি তার গায়ে একটা আচড় লাগে তোদের একটাকেও আমি আস্ত রাখবো না।”

মারশিয়াদ আর কোনো কথা বলে না।তটস্থ পায়ে বাড়ির ভিতরে গিয়ে নিজের গাড়ি নিয়ে বের হয়।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here