অদ্ভুত প্রেমোমোহ তুমি পর্বঃ৪০

0
2710

#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ৪০
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

আজরাহান চলে গেছে প্রায় এক সপ্তাহ।এই এক সপ্তাহে আজরাহান একবারও বাড়িতে কারো সাথে যোগাযোগ করেনি।প্রহর কলেজে যাওয়া শুরু করেছে।ক্লাস শেষ করে এসে এক অস্থির নিরবতা ভর করে তার শরীর জুড়ে।কিছুই যেন ভালো লাগেনা।অনেকবার কল করেছে আজরাহান কে।কিন্তু তা আনরিচেবল।মাঝে একদিন সানোয়ার আহমেদ বলেছিলো আজরাহান ব্যস্ত তাই সে সময় দিতে পারছে না।

কিন্তু প্রহর এর কেনো যেনো নিজেকে খালি খালি মনে হয়।আজরাহান যখন কাছে ছিলো তখন এমনটা মনে হয় নি।বুকের ভিতর কেমন যেনো বিরান ভূমি মনে হয়।সেদিন হঠাৎ করে নন্দিতার ঘরে নক না করেই ঢুকে পড়।প্রহর অপ্রস্তুত ঘটনার সম্মুখিন হয়ে পড়ে।সামান অনেক কষ্টে নন্দিতাকে মানিয়েছে।কি মনে করে মাত্রই নন্দিতাকে জড়িয়ে ধরেছে আর তখনই প্রহর সেখানে উপস্থিত।প্রহর এক মিনিটও দেরী করে না।ছুট লাগায় নিজের ঘরে।বিছানায় বসে নিজের ঠোঁট কামড়াতে থাকে।ভুল হয়েছে তার।কিন্তু তখন থেকেই কেনো যেনো আজরাহান স্পর্শ গুলো ওকে ভিতর থেকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।আজরাহান এর শরীরের ঘ্রান তার হৃদয়কে কাঁপিয়ে তোলে।প্রহর দৌড়ে গিয়ে ব্যালকনির সেই গন্ধরাজ এর কাছে বসে।বুক ভরে তার ঘ্রান সংবরন করে নিজের মধ্যে।এ কেমন অনুভুতি তা সে বুঝে না।তার শরীরে প্রতিটি লোমকূপ আজ আজরাহানের শূন্যতায় থেমে থেমে কেঁদে উঠছে।হঠাৎ করেই প্রহর কান্না শুরু করে দেয়।তার নিঃশ্বাস এর গতি বাড়তে থাকে।গলা জড়িয়ে আসে তার।ফুফিয়ে উঠে সে।

সেদিন যখন সে আজরাহান সাথে শুয়েছিলো ওর মুখটা একদম আজরাহান নাক বরাবর ছিলো।চোখ মেলতেই সে তার প্রানদেব এর মুখ দেখতে পায়।আজরাহান এর ঘন নিঃশ্বাস আচড়ে পরছিলো প্রহর এর অধরে।একদম কাছ থেকে দেখে সে তার রাহান ভাইয়া কে।উজ্জল শ্যামবর্নের এই পুরুষ তার প্রানসঞ্চারক।আজরাহান এর গাঢ় লাল ঠোঁট দুটি একদম প্রহর এর চোখের সামনে।ইচ্ছে করছে ছুয়ে দিতে।প্রহর হালকা করে হাত ঘষা দেয় আজরাহান এর গালে।আজরাহান এর হাত ছিলো প্রহর এর উন্মুক্ত ফর্সা পেটের উপর।গালে হাত দিতেই চিৎকার দিয়ে উঠে প্রহর।

“আউচচচচচ,,,

ধপ করে উঠে বসে প্রহর।আজরাহান হাসতে হাসতে উঠে বসে।

“এমন করলেন কেনো??
ব্যথা পাইনি আমি।”

“তাহলে আমার গালে হাত দিলি কেনো??

“তাই বলে এতো জোরে চিমটি দিবেন!!দেখেন তো কী করেছেন??

আজরাহান ওর পেটের দিকে তাকাতেই দেখে শুভ্র পেটে সে জায়গা একদম লাল হয়ে আছে।
আজরাহান শান্তভাবে বলে–

“তোর দোষ আমার নয়।শাড়ি ঠিক কর।”

প্রহর ওর শাড়ি টেনে নেয়।বিস্মিতভাবে বলে–

“আমি কী করেছি??

আজরাহান এক উষ্ণ শ্বাস ছাড়ে।মৌনতা ভেঙে বলে–

“তুই আমাকে স্পর্শ করলি কেনো!!!
তোর স্পর্শে আমার শরীরে বজ্রপাত শুরু হয়,তুই বুঝিছ না??

“তাই বলে এতো জোরে চিমটি দিবেন!!
অসভ্য লোক!!

আজরাহান ম্লান হাসে।তার প্রহরিনী শরীরে বড় হয়েছে কিন্তু মনের দিকে এখনো সেই ছোট্ট গলুমলু প্রহর।ফিরতি হাসি দিয়ে বলে—

“একদিন দেখবি এই অসভ্য লোকের জন্যই তোর মন পুড়বে।”

হা,পুড়ে যাচ্ছে প্রহর।একদম শেষ হয়ে যাচ্ছে।তার হৃদয়ে যে খরা চলছে তার তৃষ্ণা নিবারন এর জন্য তার রাহান ভাইয়া কে প্রয়োজন।গ্রীষ্মের তাপদাহে পুড়ে যাওয়া তার সোনার অঙ্গে বর্ষন হয়ে নামবে তার রাহান ভাইয়ার ভালোবাসা।
সে জানে না তা কীসের টান।শরীরের না ভালোবাসার !!
কিন্তু এইবার তার রাহান ভাইয়াকে তার প্রয়োজন।তার হীমশীতল দেহের উষ্ণতার জন্য তার রাহান ভাইয়ার স্পর্শ প্রয়োজন।সে আর ছোট নেই।মনের চাহিদার পাশাপাশি তার শরীরেরও চাহিদা আছে তা এখন সে অনুভব করছে।প্রহর তার শরীরের সেই সব জায়গায় স্পর্শ করতে থাকে যেখানে তার রাহান ভাইয়ার স্পর্শ লেগে আছে।আবারও ডুকরে কেঁদে উঠে প্রহর।তার নিঃশ্বাস যেনো তার হৃদপিঞ্জর ছেড়ে বের হয়ে যাচ্ছে।কেনো এমন হচ্ছে????

প্রহর এর কান্নায় হেচকি উঠে যায়।আর পাশেই কিঞ্চি তার ছোট্ট ছোট্ট মাংসশল পায়ে প্রহর কাছে এসে ওর পায়ে জিহ্বা দিয়ে চাটতে থাকে।ওকে দেখে প্রহর কিছুটা কান্না থামায়।তারপরও খানিক পর পর হেচকি উঠছে তার।কিঞ্চি কে দু হাত দিয়ে তুলে মুখের সামনে তুলে ধরে বলে—

“দেখখ কিকঞ্চিইই,ররাহহানন ভাইইইয়াআ কেএমমমন পাপাষান।আআমাকে এককটটুও মনে করে না।”

কিঞ্চি কে কোলে বসিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় প্রহর।মনোঃস্পটে ভেসে উঠে আজরাহান সাথে কাটানো সময়গুলো।আর অজান্তেই গড়িয়ে পড়ে চোখের কার্নিশ বেয়ে ঠান্ডা জল।
,
,
,
সকালে কলিংবেল বাজতেই দরজা খুলে প্রহর।বিস্মিতভাবে তাকিয়ে থাকে সে। সত্তর উর্ধ্ব একজন প্রোঢ় দাড়িয়ে।প্রহর কে ভালো করে একবার দেখে নেয়।হাসোজ্জল মুখে ভদ্রলোক কিছু না বলেই ঘরে ঢুকে পড়েন।প্রহর তার পিছু পিছু এসে দাড়ায়।ভদ্রলোক গিয়ে খাওয়ার টেবিলে বসেন।হালকা হাসিতে অমায়িক চেহারা তার।ধবধবে ফর্সা।

“আমার খুব খিদে পেয়েছে।”

ভদ্রলোকের কথা শুনে প্রহর হতবিহব্বল।যেনো সবকিছুই তার পরিচিত।কিন্তু প্রহর আগে কখনো তাকে দেখেনি।কিন্তু তাকে দেখে কেমন যেনো আপন মনে হলো।
কুহেলিকা সানায়া কে নিয়ে রেগুলার চেকাপ করাতে ডক্টর এর কাছে গিয়েছে।আর নন্দিতা রান্নাবান্না শেষ করে সবেই শাওয়ার নিতে গিয়েছে।প্রহর ভাবলো হয়তো ওর ছোট আব্বুর পরিচিত।আর বৃদ্ধের মুখটাও কেমন শুকনো তাই সে আর দেরি না করে তার খাবারের ব্যবস্থা করে।তৃপ্তির সাথে খেয়ে যাচ্ছেন ভদ্রলোক।আর আড়চোখে প্রহর কে দেখছে।
হঠাৎ বিদ্যুৎ বেগে খোলা দরজা দিয়ে ভিতরে আসে মারশিয়াদ।কন্ঠের ভারিক্কি দিয়ে বলে–

“দাদু,তুমি এখানে???

ভদ্রলোক খাবার রেখে উঠে দাড়ায়।তার প্রান জুড়োয় মারশিয়াদ এর মুখে দাদু ডাক শুনে।হাতটা কোনো ভাবে ধুয়ে নির্জীব শরীর চালিয়ে গিয়ে মারশিয়াদ কে জড়িয়ে ধরে।
কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।মারশিয়াদ কিছুক্ষন তাকে জড়িয়ে রেখে নিজের থেকে আলগা করে।
ঠোঁটের কোনে হাসি দিয়ে বলে—

“ভীমরতি ধরেছে বুড়োর,কাঁদছ কেনো তুমি??
আর এখানে কেনো এলে??

দাদু কান্না থামিয়ে তার হাত বুলাতে থাকে মারশিয়াদ এর চুলে।

“কেমন আছিস দাদুভাই??

মারশিয়াদ কাঠ কাঠ কন্ঠে বলে—

“ভালো।এখানে কেনো এসেছো??
আর আমাকে খবর না দিয়ে এলে কেনো??

মারশিয়াদ এর কথা টেনে নেয় প্রহর।

“উনি বুঝি আপনার দাদু??

“হুম।”

“তাহলে তো আমারও দাদু। আর রাহান ভাইয়ারও।”

মারশিয়াদ হালকা হেসে বলে–

“হুম।”

প্রহর নিচু হয়ে দাদু কে সালাম করে।কিন্তু কেনো যেনো ওর মাথায় হাত দিতে ভদ্রলোক সংশয় বোধ করছেন আর তা দূর থেকে দেখছে নন্দিতা।

“চলো দাদু।”

“আপনি ওনাকে কেনো নিয়ে যাচ্ছেন, জান??
দাদুর খাওয়া তো শেষ হয়নি!!

“সমস্যা নেই।বাকিটা বাসায় গিয়ে খেয়ে নিবে।”

দাদু প্রহর এর দিকে তাকালেন।ভারী মিষ্টি একটা চেহারা।ভদ্রলোক হাসলেন মৃদু।

“সুখে থাকিস।”

প্রহর এর মুখে উজ্জলতা।
,
,
,
বাসায় এসে ইচ্ছেমত কতোগুলো কিল ঘুষি মার শিহরণ কে মারশিয়াদ।

“তোকে কে বলেছে দাদু কে ওখানে পাঠাতে??

দাদু গম্ভীরভাবে বললেন–

“আমিই শিহরণ কে বলেছি তাকে আমি একবার দেখতে চাই।”

মারশিয়াদ শান্ত হয়ে দাদুর কোলে মাথা রাখে।

“কী দরকার ছিলো তোমার এখানে আসার!!
আর কয়েকদিন পরেই তো আমি তোমার কাছে চলে আসতাম।”

“তোকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো তাই!!

মারশিয়াদ উঠে বসে।বিষন্নতার ছাপ তার চোখে মুখে।কিন্তু হাসির মায়ায় তা মিলিয়ে দিচ্ছে হাওয়ায়।

“মেয়েটা একদম খন্ডিত হীরা।”

মারশিয়াদ ম্লান হাসে।

“তোমার সেখানে যাওয়া উচিত হয়নি দাদু।”

দাদু দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।

“এখন কী করবি??

মারশিয়াদ হেসে উঠে।

“তুমি কী কোনো পথ খোলা রেখেছো!!
আমার বউটাকে তো আগেই বিয়ে করে ফেলেছো।আর আমাকে বিপত্নীক।ইশশশ,,
তোমার জন্য আমার বউটা এতো ড্যাশিং ছেলেকে মিস করলো।”

মারশিয়াদ আবারও গা দুলিয়ে হেসে উঠে।শিহরণ কে বলে–

“চাচা কে বল টেবিলে খাবার দিতে।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

মারশিয়াদ যেতেই হালকা কেপে উঠে মুরাদ মাহমুদ।

“আমার ছেলেটা কত কষ্ট চেপে রেখেছে নিজের মধ্যে।এর চেয়ে ভালো হতো ওর বাবা মার সাথে ও মরে যেতো।”

কেঁদে উঠলেন দাদু।শিহরণ পাশে এসে বলে–

“কাঁদবেন না দাদু।সব ঠিক হয়ে যাবে।”

“ছোটবেলা থেকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি ওকে আমি।ওর অস্থিমজ্জা পর্যন্ত চিনি আমি।”

“শান্ত হোন দাদু।”

“এই ওর কী হবে এখন??
ও কী করে বাঁচবে??

“আপনি ওকে বিয়ে দিয়ে দিন।ও নিশ্চয় আপনার কথা শুনবে।”

দাদু উদগ্রীব হয়ে বললেন—

“আছে তোর কাছে এমন মেয়ে যে আমার পাগলটাকে ভালোবাসবে??

“আছে।”

“তাহলে আজই তুই আমার সাথে তার দেখা করিয়ে দিবি।অনেক হয়েছে।এইবার আমি ওর বিয়ে দিয়েই ছাড়বো।”

শিহরণ স্মিত হাসে।এইবার দাদু যদি কিছু করতে পারে!!!
,
,
,
কানের উপর মোবাইল ধরে চুপ করে বসে আছে প্রহর।খুব রাগ হচ্ছে তার।একরাশ অভিমান।ওপাশের মানুষটার এখন আর তাকে প্রয়োজন নেই।নাহলে কেনো এতো সংশয়!!
একে অপরের নিঃশ্বাস গুনে যাচ্ছে।নিস্তব্ধ ভেঙে আজরাহান নিরস স্বরে বলে—

“কেমন আছিস তুই??

প্রহর এর সকল অভিমান আজরাহান এর কন্ঠের উষ্ণতায় গলতে শুরু করে।মনে ওঠা ঝড় শান্ত হতে থাকে।আবেগভরা কন্ঠে বলে—

“আপনার আমার কথা মনে আছে??
“সেই যে গেলেন আমার কথা একবারও মনে পড়লো না??
এতো নিষ্ঠুর কেনো আপনি??

আজরাহান শান্ত কন্ঠে বলে–

“খেয়েছিস তুই??

প্রহর কিঞ্চিৎ রেগে উঠে।ঝামটা মেরে বলে–

“আপনি আসেন নাই কেনো??
এক সপ্তাহের বেশি হয়ে গেছে।”

“আমি চাকরিটা ছেড়ে দিবো প্রহর।চলে আসবো তোর কাছে।আর কখনো তোকে ছেড়ে যাবো না।জীবনের অন্তিম প্রহর পর্যন্ত তোর কাছেই থাকবো।”

প্রহর এক লাফে বিছানা থেকে উঠে দাড়ায়।

“সত্যিই???

“হুম।”

প্রহরের মনের কালো মেঘ সরে নিমিশেই সেখানে জায়গা করে নেয় রৌদ্রজ্জ্ব্যল সূর্য।
খুশির ফোয়ারা বইছে তার সারা শরীরে।আনন্দে আত্নহারা প্রহর পরক্ষনেই ভুলে যায় তার রাগ,অভিমান,বিষন্নতা।সেদিন হঠাৎ করে আসা মারশিয়াদ এর দাদুর কথা বলতে থাকে।আজরাহান নিশ্চুপভাবে শুনছে।

“জানেন দাদু কে না একদম সাদা ভাল্লুক এর মতো লাগে।”

বলেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠে প্রহর।
বিরস কন্ঠে আজরাহান বলে—

“বড়দের এইসব বলতে নেই প্রহর।”

প্রহর অধর সংকোচন করে।

“আমি কী করবো!!
এমনিতেই তো সাদা।তার উপর পড়ছে ইয়া বড় এক সাদা পাঞ্জাবী।কৃষ্ণ কালো ভ্রু।তাকে দেখতে একদম শ্বেত ভাল্লুক মনে হচ্ছিলো।”

“আচ্ছা এখন রাখি।ভালো থাকিস।”

আজরাহান এর কথা কেমন যেনো ধরা গলায়।প্রহর তা বুঝেও দৃষ্টিগোচর করে।তার মনের খুশি এখন তার রাহান ভাইয়া কবে ফিরে আসবে।
,
,
,
দপ দপ করে মস্তিষ্ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মারশিয়াদ এর।রাগে রি রি করছে তার গা।বুকের ভিতরে এতটা চাপ সে আগে কখনো অনুভব করেনি।উত্তাল ঢেউ যেনো তার পাজর ভেঙে দিচ্ছে।পাহাড় ধ্বসে পড়ছে তার হৃদয়চিত্তের কুঠিরে।বাতাসের গতি তাকে আজ কোথায় নিয়ে ঠেকিয়েছে তা সে জানে না।
একটু আগেই প্রহর এক কষিয়ে চড় মারে মারশিয়াদ এর গালে।অবশ্য দোষ টা তার একান্তই নিজের।

আজ কলেজ থেকে ফিরার পথে প্রহর কে পৌছে দেবে বলে সাথে নিয়ে যায় ইনশিরাহ।কিন্তু ঘন্টা খানেক বাদে নন্দিতা কল করে আশফিক কে বলে প্রহর বাসায় ফেরেনি।আশফিক এর আর কিছুই বুঝতে বাকি থাকে না।ইনশিরাহ নেশার্ত চোখ দেখে তার আগেই বোঝা উচিত ছিলো।ভয়াতুর আশফিক কল করে সব কিছু জানায় মারশিয়াদ কে।

আতঙ্কিত মারশিয়াদ ঘোড়া গতিতে ছুটে যায় ইনশিরাহ এর বাসায়।ওসনিয়াত কে বারবার জিঙ্গেস করার পরও সে বলতে পারে না ইনশিরাহ কোথায় আছে।মারশিয়াদ এর মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয়।ড্রাগ অ্যাডিক্টেড ইনশিরাহ উল্টা পাল্টা কিছু না করে বসে।

বাধ্য হয়ে মারশিয়াদ ইতিকাফ আজমী কে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে।জানতে পারে শহর থেকে দূরে একটা ওয়্যারহাউজ এ রেখেছে প্রহর কে সাথে ইনশিরাহ আছে।মারশিয়াদ সেখানে গেলে দেখে ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে আছে প্রহর।অকথ্য ভাষায় কথা বলেছে তাকে।ক্ষীপ্ত ইনশিরাহ একসময় প্রহর এর চুল মুষ্টিবদ্ধ করে বলে—

“নিজের স্বামী দিয়ে হয়না।মারশিয়াদ কে কেনো নিজের রূপে ফাসিয়েছিস??

প্রহর কোনো প্রতিত্ত্যুর করে না।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সে এখান থেকে মুক্তি চায়।

ইনশিরাহ হয়তো গায়েও হাত তুলেছে।তার অবস্থাও ভালো না।ড্রাগস নিয়ে ডুল হয়ে আছে সে।বের করে আনে প্রহর কে অন্ধকার আস্তাবল থেকে।আর ইনশিরাহ কে বলে যেনো আজকের পর যদি আর কোনোদিন সে প্রহর এর দিকে হাত বাড়ায় তাহলে সে ভুলে যাবে সে মেয়ে।

সেখান থেকে বেরিয়ে আসতেই এক চড় বসায় মারশিয়াদ এর গালে প্রহর।আর বলে–

“আর কখনো আসবেন না আপনি আমার সামনে।আপনি আমার জীবনের অভিশাপ।যখন থেকে আপনি আমার জীবনে এসেছেন তখন থেকেই একটার পর একটা বিপদ হয়েই চলছে।চলে যান আপনি,চলে যান এখান থেকে।”

“আমি চলে যাবো কাজলচোখী।অনেক দূরে চলে যাবো।আমার কাজ শেষ হলেই চলে যাবো।আর কখনো ফিরবোনা।কখনো না।”
কাউচে বসে আনমনে আওড়াতে থাকে মারশিয়াদ।

প্রহর কে পৌছে দিয়ে ওর সামনে এসে দাড়াতেই গলা চেপে ধরে শিহরণ এর।

“তোর জন্যই হয়েছে সবকিছু।কেনো গিয়েছিলি দাদু কে নিয়ে??
ওই পাগল মেয়ে যদি কাজলচোখীর কোনো ক্ষতি করে ফেলতো!!

“আমি ভাবতে পারিনি ইনশিরাহ এমন করবে।”

মারশিয়াদ ধপ করে কাউচে বসে।

“কেনো করছিস এইসব তোরা??
আমি তো বলেছি আমি চলে যাবো তার থেকে দূরে।
ইনশিরাহ কে আমি কখনো আপন করতে পারবো না।ওকে বিয়ে করলে হয়তো ওকে শরীরের সুখ আমি দিতে পারবো কিন্তু মনের সুখ,আমি কখনই ওকে দিতে পারবো না।
আমার সবটা জুড়ে শুধু সে।
আশফিক ওকে ভালোবাসে।আজ না হয় কাল ও ঠিক আশফিক কে মেনে নিবে।”

অনর্গল কথা বলায় মারশিয়াদ এর গলা শুকিয়ে আসে।এক ফাকা ঢোক গিলে আবার বলে–

“আমাদের তাকেই ভালোবাসা উচিত যে আমাকে ভালোবাসে।
প্রিয় মানুষ হারানোর যন্ত্রনা আমার চেয়ে বেশি কেউ বোঝেনা।আমি কাউকে তার ভালোবাসা থেকে আলাদা করবো না।
আমার ভালোবাসা কখনো তার মনে বিন্দুচিহ্নও রাখেনি।তাতে আমার কোনো আফসোস নেই।আমি আসলেই তার জীবনের অভিশাপ।আমি তাকে সেই অভিশাপ থেকে অতি শীঘ্রই মুক্তি দিবো।”

মারশিয়াদ হেলান দেয়।পাথর চাপা পড়েছে আজ তার অনুভুতিতে।আর কখনো সে তার কাজলচোখীর সামনে যাবে না।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here