#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ৪২
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি
ঝড়ের গতিতে গাড়ি চালিয়ে মারশিয়াদ আসে সেই তার গোপন বাংলো তে যেখানে নিমিত্তি আর তার পরিবার কে রাখা হয়েছে।বিস্ফোরিত নয়নে অবলোকন করে মারশিয়াদ তার সবগুলো গার্ড নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে।উহু,মারা যায়নি কেউ।শ্বাস চলছে।সবাই বেহুশ।পাশেই পড়ে আছে কোল্ড ড্রিংস এর বোতল।সিডেকটিভ দেওয়া হয়েছে।উত্তেজিত মারশিয়াদ প্রবল বেগে ছুটে যায় বাড়ির ভেতর।নিমিত্তির মা তার বেডেই শুয়ে আছে।ভদ্র মহিলার এর চেয়ে বেশি কিছু করার নেই।নিমিত্তির বাবা পড়ে আছে তার হুইল চেয়ার থেকে খানিকটা এগিয়ে।হয়তো নিমিত্তি কে বাঁচানোর প্রয়াসে ছিলেন।তা কি আদৌও সম্ভব??
মারশিয়াদ কে দেখেই মুখে অদ্ভুত গোঙানির আওয়াজ তুলে।চকিত মারশিয়াদ ত্রস্ত পায়ে এসে তাকে চেয়ারে বসায়।তার শরীরের অর্ধপাশের সাথে সাথে তার মুখের একপাশ বাকিয়ে গেছে।অনেক কষ্টে খানিকটা হাত উচু করে কিছু একটা নির্দেশ করছে মারশিয়াদ কে।একটু দূরেই রাখা টেবিলে একটা চিরকুট।মারশিয়াদ শান্ত পদযুগলে এগিয়ে যায় সেখানে।হাতে নেয় চিরকুট টি।তাতে লিখা—-
“I am waiting for u.The show is start now.”
,
,
,
দরজা খোলা দেখে কিছুটা চমকে উঠে আজরাহান।বাড়ির ভিতরে তার জন্য কী অপেক্ষা করছে তা সে জানে না।
ভিতরে আসতেই চোখে পড়ে লন্ডভন্ড ঘরের মেঝে।আসবাবপত্র সব এধারে ওধারে ছড়ানো ছিটানো।ভাঙা কাচে ছেয়ে আছে ফ্লোর।ভয়ে কাতর আজরাহান এর পুরো পরিবার জড়োসড়ো হয়ে আছে।কারো মুখে কথা নেই।নিস্তব্ধতা ছেয়ে আছে পুরো পরিবেশ।আজরাহান কে দেখে দৌড়ে আসে সারাফ ও সূর্য্যি।আধো আধো বুলিতে আর কাপা,হেচকি তোলা কন্ঠে ওদের কোনো কথাই আজরাহান এর বোধগম্য হলো না।নিজের ছোট্ট সোনামনিকে বুকে জড়িয়ে ঘাপটি মেরে বসে আছে সানায়া।একদম শান্ত।কুহেলিকা কিছু বলতে চেয়ে বললেন না।আজরাহান এর একমাত্র ভরসা এখন নন্দিতা।আজরাহান শান্ত পায়ে নন্দিতার সামনে গিয়ে বসে।নন্দিতার কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়া শুকনো নোনতা জলের ছাপ স্পষ্টত হয়ে জানান দিচ্ছে ভয়ংকর কিছুই হয়েছে একটু আগে।
স্বাভাবিক ভঙিতে আজরাহান বলে—
“কী হয়েছে ভাবী??
এইসব কী করে হলো??
নন্দিতা এক বৃহৎ ঢোক গিলে।অধর প্রসারিত করে এক নিঃশ্বাস টেনে নেয় ভিতরে কিন্তু তা বের করার কথা বেমালুম ভুলে যায় একটু আগে ঘটা ঘটনার কথা মনে হতেই।স্মিত স্বরে বলে–
“ওরা প্রহর কে নিয়ে গেছে।”
আজরাহান হতবিহ্বল হয়ে উঠে দাড়ায়।কিছু একটা ভেবেই পা বাড়ায়।নন্দিতা জিঙ্গাসু কন্ঠে বলে–
“কোথায় যাচ্ছ??
আজরাহান সহজ উত্তর দেয়–
“ওকে ফিরিয়ে আনতে।”
,
,
,
মারশিয়াদ এর দাদুর অবস্থা ভালো না।থেমে থেমে কেঁপে উঠছে সে।বুকের হৃদযন্ত্র দম দম করছে।শিহরণ তার পাশেই বসে আছে।শান্ত করতে চাইছেন তাকে।কিন্তু বৃদ্ধের একমাত্র অন্ধের যষ্ঠি আজ মৃত্যু মুখে পতিত।সকাল হতে কোথায় গিয়েছে মারশিয়াদ কেউ জানে না।মোবাইলও সুইচ অফ।হন্তদন্ত হয়ে আসে আজরাহান।ওকে দেখেই শিহরণ উঠে দাড়ায়।ঝড়ের গতিতে শ্বাস চলছে আজরাহান এর।নিজকে সামলে শিহরণ কে সুধায়—
“মারশিয়াদ কোথায়??
যার কোনো উত্তর পায়না আজরাহান।কারণ মারশিয়াদ কোথায় তা কেউ জানে না।
বুকের উঠানামা তরতর করে বেড়ে চলছে মুরাদ মাহমুদ এর।ক্ষনকাল দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলেন—
“ও বাঁচবে না।বাঁচবে না ও।কাদের বাঁচাতে গিয়েছে ও!!যার সাথে ওর রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই।আর আমার কথা ভাবলো না!!
ওকে ছাড়া আমি কী করে বেঁচে থাকবো!!ও ছাড়া যে আমার কেউ নেই।”
ডুকরে কেঁদে উঠেন দাদু।স্বল্প সময় জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে আবার বলেন–
“কাল রাতে ওর বাবা,মা এসেছিলো।ওরা আমার জান কে আমার কাছ থেকে নিয়ে যেতে চায়।তাহলে আমি কী করে থাকবো আমার জান কে ছাড়া??
শিহরণ নিজের সাথে চেপে ধরে দাদু কে।সান্ত্বনাবাচক কন্ঠে বলে–
“সব ঠিক হয়ে যাবে দাদু।দেখবেন,কিছুই হবে না মারশিয়াদ।ও তো কখনো কারো ক্ষতি করেনি।”
দাদুর চোখের ছোট্ট কোটর হতে অবাধ বাদলের ধারা ঝড়ঝড় করে বইতে লাগল।তারই মাঝে একটা ফাকা ঢোক গিলে বলতে লাগলেন–
“ছোটবলা থেকে শুধু অন্যের কথা ভেবেছে।নিজের জন্য কিছুই চায় নি আর যখন চাইলো তখনও তাকে খালিহাতে ফিরিয়ে দিলো ভাগ্যবিধাতা।আমার ছেলেটা সবাই কে উজাড় করে দিয়েছে।বিনিময়ে কিছুই চায় নি।তবুও কেনো ওরা ওকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চায়।”
দাদু আর কিছু বললেন না।ঝড়ঝড় করে কাঁদলেন।
ক্ষনকাল নিজের মস্তিষ্কের দৌড় লাগালো আজরাহান।তটস্থ পায়ে গিয়ে দাড়ায় মারশিয়াদ এর সে বদ্ধ ঘরের দ্বারে।তার প্রশ্নের জবাব সে এখানেই পাবে।ইব্রাহিম কে বলে একটা হাতুড়ি এনে লক ভেঙে ফেল তার।ভিতরে গিয়েই চক্ষু চড়কগাছ।
বদ্ধ ঘরের সমস্ত দেয়াল জুড়ে প্রহর এর মুখের আদলে আঁকা ছবি।কোনোটায় রঙের ছড়াছড়ি কোনাটায় রক্তের।কিন্তু সবই মনে হয় জীবন্ত।শিহরণ আর আজরাহান এর পরে বিড়াল পায়ে তাদের পিছু পিছু আসে দাদু।অবাক দৃষ্টিতে দেখে তার জান এর নিঃস্বার্থ ভালোবাসার অঙ্কিত সেই স্বপ্নের পৃথিবী।
আজরাহান ধীর পায়ে এগিয়ে যায় দেয়াল গুলোর কাছে।প্রতিটা ছবির নিচেই কিছু লিখা।
“জানি তুমি চিনবে,এক ফালি রোদ হয়ে তোমার ওই দুচোখ হাসবে।আমি আঁধারে লুকিয়ে তোমাকে খুজি।
কাজলচোখী,,
অন্তর্যামী কেন লুকাই তোমায় আঁধারের কালিমায়??
আজরাহান পূর্ব দেয়ালে আসে।মারশিয়াদ এর শরীরের তাজা রক্তে আঁকা ছবি।যেনো এখনো জীবন্ত।সেখানে লিখা,,,,
“ওই যে তোমার কাজলচোখ
আমার হৃদয় পুড়ে,
দহনের দিনে বাদল হয়ে
আমার বুকে ঝড়ে।”
শিহরণ এর হতবিহ্বল দৃষ্টি।বুকের ভিতর চাপ অনুভব করছে সে।সে আজও তার বন্ধুকে বুঝতে পারেনি।
আরো কিছু লিখা—-
“” তুই গেঁথে যাস আরো,যতই ছাড়াতে চাই,
তুই ক্ষতই বাড়াস,যতই সারাতে চাই,
তুই অর্ধেক ব্যথা,অর্ধেক ব্যথাহীন,
তুই বুকের ভিতর আস্ত এক সেফটিপিন।”
—-সাদাত হোসাইন
আজরাহান আনমনে বলে উঠে–
“আমি আমার ছায়া কে পেয়ে গেছি,বাবা।এখন শুধু তার ফেরার অপেক্ষা।”
,
,
,
হাত পা বাধা নিমিত্তি আর প্রহর তাদের জলপুকরের উপচানো জল ঢেলে চলছে।পাশেই দাড়িয়ে আছে জন বিশেক লোক।অরল্যান্ডো!!
হ্যা।অরল্যান্ডো তুলে এনেছে ওদের।কারন মারশিয়াদ এর দূর্বলতা তারা খুজে পেয়েছে।নিমিত্তি কে উঠিয়ে এনেছে শধুমাত্র ওই ফর্মূলার জন্য।আর প্রহর কে এনেছে মারশিয়াদ এর অস্তিত্ব মিটানোর জন্য।
মারশিয়াদ এর নরম পায়ের উপস্থিতি বুঝতে পারে অরল্যান্ডো।ভয়ংকর এক পৈশাচিক হাসি তার সাদা শরীরের ওই গাঢ় বেগুনি ঠোঁটে।
মারশিয়াদ কে দেখেই অস্ফুট ভাবে প্রহর বলে–
“জান!!!!
প্রহর এর মুখে জান ডাক শুনে মারশিয়াদ ব্যকুল হয়ে উঠে।ওর হৃদপিঞ্জরে ঝড় বইতে শুরু করে।তপ্ত দেহে বর্ষন শুরু হতে থাকে।
মারশিয়াদ ক্রুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অরল্যান্ডোর দিকে।আক্রোশভরা কন্ঠে বলে—
“তোর হিসেব আমার সাথে।ওদের যেতে দে।”
মারশিয়াদ এর কথায় বিকট হেসে উঠে অরল্যান্ডো।
“ওদের তো ছেড়ে দিবোই।কিন্তু তার আগে হিসেব টা তো সেরে নেই।”
“কি চাই তোর??
“ওই ফর্মূলা।”
মারশিয়াদ ফুস করে এক শ্বাস ছাড়ে।আর বলে–
“দিবো।তার আগে ওদের যেতে দে।”
হা হা করে হেসে উঠে অরল্যান্ডো।ক্রুব্ধ কন্ঠে বলে–
“আমাকে কী তোর বোকা মনে হয়??
আগে আমি যা বলেছি তা কর।”
মারশিয়াদ আর কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে পকেট থেকে বের করে একটা টিউব এগিয়ে দেয় যার মধ্যে আছে এক ধরনের লিক্যুইড।অরল্যান্ডো যেনো অমাবস্যার চাঁদ হাতে পেয়েছে।
মারশিয়াদ শান্ত ভঙিতে বলে–
“এইবার ওদের যেতে দে।”
এক অতৃপ্ত হাসি দেয় অরল্যান্ডো।একটু পিছনে যায়।হাতল ওয়ালা চেয়ারের উপর একটা লোহার রড।হাতে নেয় তা অরল্যান্ডো।ক্ষীপ্ত কন্ঠে বলে–
“আমার ভাইয়ের কলিজা বের করেছিলি তুই।আজ তোর হৃৎপিন্ড বের করে নিবো আমি।”
বিনা সময় ব্যয়ে সেই রড দিয়ে একটা বাড়ি দেয় মারশিয়াদ এর বুকে।প্রায় তিন হাত দূরে ছিটকে পড়ে মারশিয়াদ।আর্তনাদ করে উঠে প্রহর আর নিমিত্তি।প্রহর এর ক্রন্দনরত কন্ঠে ভেসে আসে সেই চিরচেনা স্বর–
“জান!!!!!
অরল্যান্ডো সময় ব্যয় করে না।তার মনের ইচ্ছা আজ পূর্ন হতে চলেছে।তার ভাইয়ের মৃত্যুর বদলা।একের পর এক আঘাত করে চলছে মারশিয়াদ কে।তার হাত যে বাধা।অরল্যান্ডোর লোক প্রহর আর নিমিত্তি কে ওদের গান পয়েন্টে রেখেছে।
প্রহর ভেজা কন্ঠ আর নিমিত্তির সেই মায়াভরা ডাক–
“জান!!!
“ভাইয়া!!!
হঠাৎ ই মারশিয়াদ এর মুখ দিয়ে এক দলা রক্ত বের হয়ে আসে।মাথা,মুখ আর শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে বের হতে থাকে শ্লথ ধারায় লহুর ধারা।মারশিয়াদ হাটু গেড়ে বসে অরল্যান্ডোর সামনে।হাত জোড় করে কম্পনরত কন্ঠে বলে–
“মেরে ফেল আমাকে।কিন্তু ওদের ছেড়ে দে।ওদের কোনো দোষ নেই।”
অরল্যান্ডো মারশিয়াদ এর চুল মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে–
“আগে তো তোকে শেষ করি পরে ওদের কথা ভাববো।”
হুট করেই মারশিয়াদ এক কান্ড করে বসে।অরল্যান্ডোর দু পা ধরে টান মেরে ওকে ফ্লোরে ফেলে দেয়।দ্রুত উঠে গিয়ে ওর গলায় পকেট থেকে বের করা ছুরি ধরে।
মারশিয়াদ প্রস্ফুটিত অধরে হাসে।উচ্ছলিত কন্ঠে বলে–
“এইটা আমি আমেরিকা থেকে নিয়ে এসেছি।জানতাম তোর মতো জানোয়ার কে জবাই করতে কাজে লাগবে।একদম শার্প।জাস্ট একটা টান।”
অরল্যান্ডোর বুক ভয়ে কেঁপে উঠে।ভয়াতুর চোখে হালকা মাথা ঝুকিয়ে তাকিয়ে থাকে ওর গলায় ধরা সেই চিকচিকে পাতলা ছুরির দিকে।
মারশিয়াদ মাথা উচু করে তাকায় তার সামনের দুই অশ্রুসজল চোখের রমনীর দিকে।কতটা ভীত তারা!!!
গলা উচিয়ে বলে—
“তোদের কী নিমন্ত্রন করতে হবে!!
ছাড় ওদের।”
অরল্যান্ডোর ভীতসন্ত্রস্ত লোক পটাপট প্রহর আর নিমিত্তির বাঁধন খুলে দেয়।মারশিয়াদ ওর বাম হাত দিয়ে অরল্যান্ডোর শার্ট ধরে ওকে দাড় করিয়ে ওর পিঠ ঘুরিয়ে নেয় নিজের দিকে আর ছুরি ধরে রাখে।কাপা পায়ে ওরা দুজন হেটে আসে মারশিয়াদ এর কাছে।মারশিয়াদ চোখ তুলে তাকায় তার নীলনয়ন ধারীর দিকে।শান্ত কন্ঠে বলে–
“সরি কাজলচোখী,বলেছিলাম আর কখনো আপনার সামনে আসবো না।কিন্তু বাধ্য হয়ে আসতে হলো।ক্ষমা করবেন।”
প্রহর স্বতন্ত্র কন্ঠে বলে–
“জান!!
আই এম সরি।”
মারশিয়াদ অধর ছড়িয়ে হেসে উঠে।আর বলে–
“আপনি কেনো সরি বলছেন!!এতে আপনার কোনো দোষ নেই।”
মারশিয়াদ নিমিত্তি কে বলে–
“নিমিত্তি বাইরে যাও।গেটের বা’পাশে একটু দূরে দেখবে একটা বড় পাথরের চাকতি আছে।তার ভিতর একটা প্যাকেট।নিয়ে আসো।”
অরল্যান্ডো বেজায় নড়াচড়া করে।মারশিয়াদ কড়া কন্ঠে বলে–
“সাপের মতো এতো মোড়মুড়ি করছিস কেনো।তোর এখনো সময় হয়নি।”
কিছু সময় পরে নিমিত্তি ফিরে আসে।মারশিয়াদ ওকে বলে–
“এর ভিতরে একটা মোবাইল আর আছে দুইটা ব্লুটুথ।আমার মোবাইলটা বের করো।”
মারশিয়াদ ওর মোবাইলটা নিয়ে অন্য মোবাইলটাতে কল করে দুটো ব্লুটুথ কানেক্ট করে নেয়।একটা নিজের কানে অন্যটা নিমিত্তির কানে লাগিয়ে দেয়।
আবার বলে–
“যাও।এখান থেকে বের হয়ে ডানদিকে যাবে।সেখান থেকে দশ মিনিটের রাস্তা পার হয়ে পূর্ব দিকে গিয়ে সোজা হাটবে।সেখানেই পাবে হাইওয়ে।সেখানে দাড়িয়ে শিহরন কে কল করবে।ও তোমাদের নিয়ে যাবে।”
নিমিত্তি কান্না কন্ঠে বলে–
“কিন্তু ভাইয়া,;তুমি!!
মারশিয়াদ এর স্নিগ্ধ শ্বাস ছেড়ে বলে–
“ভাইয়ার কিছু হবে না।তোমরা সাবধানে যাবে।এই কুকুরগুলোর মধ্যে কেউ যদি তোমাদের ছোয়ারও চেষ্টা করে জাস্ট একবার বলবে।”
মারশিয়াদ হাসি হাসি মুখে বলে–
“যান কাজলচোখী।ভালো থাকবেন।হয়তো এর পরে আর কখনো আপনার সাথে আমার দেখা হবে না।”
“জান!!!
“আপনি আর এই নামে আমাকে ডাকবেন না।যান কাজলচোখী,চলে যান।আপনার রাহান ভাইয়া আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।”
মারশিয়াদ এর স্ফিত দৃষ্টি সম্মুখদিকে নিবদ্ধ করে।নিমিত্তি হাত টেনে নিয়ে যায় প্রহর কে।প্রহর এর মনে হচ্ছে সে যেনো এক মূহুর্ত্তের জন্য তার প্রান টা রেখে যাচ্ছে।
গমগম গোডাউনে নিরবতা ছেয়ে গেছে।
মারশিয়াদ অরল্যান্ডো কে ঘুরিয়ে ওর মুখে এক ঘুষি মারে।ছিটকে পরে সে।সেখান থেকে উঠিয়ে আর কিছুক্ষন মারপিট হয়।অরল্যান্ডোকে ফ্লোরে ধড়াম করে ফেলে।ওর বুকের উপর হাটু গেড়ে বলে–
“পেনড্রাইব টা দে।দে বলছি।”
মারশিয়াদ ওর বুকের উপর আরেকটা ঘুষি মারে।কেপে উঠে অরল্যান্ডোর সমস্ত শরীর।
অনেক কষ্টে হাতিয়ে ওর বুক পকেট থেকে পেনড্রাইভ টা নিয়ে নেয় মারশিয়াদ।ভয়ে তটস্থ থাকা ওর লোকগুলো কে বলে–
“তোদের সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই।কথায় আছে,,চাচা আপন প্রান বাঁচা।তোদের আমি ১মিনিট দিলাম।বের হ এখান থেকে সব কয়টা।”
লোক গুলো আর কালক্ষেপন করে না।দ্রুত পায়ে প্রস্থান করে সে স্থান।মারশিয়াদ দমকে উঠে।এক ঝাকি মারে অরল্যান্ডো কে।
“কেনো মারলি ওকে??
তোরা চ
যা চেয়েছিলি সব তো পেয়েছিলি তবুও ওকে এই নির্মম মৃত্যু কেনো দিলি??
অরল্যান্ডো কিছু বলতে গিয়েও পারছে না।কারণ তার গলা চেপে রেখেছে মারশিয়াদ।মারশিয়াদ তার সেই শার্প নাইফ ইউস করে।অরল্যান্ডোর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় তা দিয়ে আচড় দিতেই ফিনকি দিকে রক্ত বেরিয়ে আসে।
মারশিয়াদ ছিল একজন পলিটিক্যাল লিডার।ছোটবেলা থেকেই মানুষের বিপদ আপদে ঝাপিয়ে পড়া ওর নেশা।কারণ পিছু টান তার ছিল না।অাস্তে আস্তে তার গ্রুপ আর পরিধি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।অবশ্য তার বেশিরভাগ ই রাতের অন্ধকারে।দিনের আলোতে মারশিয়াদ যতটা শান্ত রাতের তমসায় ঠিক ততটাই অশান্ত।
নৈসরা ছিল সান ফ্রান্সিসকো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল স্টুডেন্ট।সেখানকার একটা টিম একটা মেডিসিন আবিস্কার এর উপর রিসার্চ করছিল।নৈসরা,অরল্যান্ডো আর ওর ভাই অরভিলও ছিল সেই টিম এর সদস্য।নৈসরা অনেক ব্রাইট স্টুটেন্ড ছিল।নিজের অক্লান্ত পরিশ্রম,অধ্যবসায় সব কিছু দিয়ে সে ওই মেডিসিনের সম্পূর্ন ফর্মূলা তৈরি করতে সক্ষম হয়।কিন্তু অরল্যান্ডো আর তার ভাই ছিল ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ই ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছেলে।তারা চাই নি এতো বড় একটা সাফল্যের ক্রেডিট অন্য কেউ পেয়ে যাক।তাই ওরা সেই ফর্মূলা তৈরির ভিডিও নিয়ে যায় আর নৈসরা কে রেইপ করে।নৈসরা যখন তার বাড়ির গেইটে ব্যালকনি থেকে ওদের দেখতে পায় তখন ই ও মারশিয়াদ কে কল করে।কিন্তু দূর্ভাগ্য মারশিয়াদ আসার আগেই সব ঘটে যায়।নৈসরা মারা যাওয়ার আগে ওর সেই মেডিসিন এর প্রথম ট্রায়াল এর জন্য যা তৈরি করে ছিল তা মারশিয়াদ কে দিয়ে যায়।অরভিল কে মারশিয়াদ পেয়ে যায়।কিন্তু অরল্যান্ডো তার আগেই বাংলাদেশে ঘাঁটি গাড়ে।
মারশিয়াদ কথা বলতে বলতে অরল্যান্ডো ওর হাত দিয়ে ফ্লোরে থাকা ধূলো জড়ো করে ওর চোখে ছুড়ে মারে।মারশিয়াদ এর চোখে জ্বালা শুরু করতেই ও কিছুটা সরে গিয়ে উঠে দাড়ায়।অরল্যান্ডো ধম করে উঠে সেই রড দিয়ে আবারও মারশিয়াদ কে মারতে থাকে।মারশিয়াদ ভালো করে কিছুই না দেখার ফলে নিজেকে রক্ষাও করতে পারছে না।মারশিয়াদ এর পিছনেই ছিল একটা লম্বা তাক।তার উপরে কিছু জিনিসপত্র রাখা।মারশিয়াদ তার উপরে গিয়ে পড়ে।অরল্যান্ডো এইবার সেই রড মারশিয়াদ এর বুকে ঢোকাতে গেলেই মারশিয়াদ সেখান থেকে সরে অরল্যান্ডোর পিছনে এসে ওর গলা চেপে ধরে ঘাড়ে একটা ইঞ্জেকশন ইঞ্জেক্ট করে দেয়।
গড়িয়ে পড়ে অরল্যান্ডো।কিছুক্ষনের মধ্যেই শান্ত হয়ে যায়।মারশিয়ার বিদ্রুপপূর্ণভাবে বলে–
“তোকে আমি স্নিগ্ধ মৃত্যু দিলাম।উপরে গিয়ে ভালো থাকিস।”
সায়ানাইড এসিড।যার ২৫০ খেলে মানুষ সেকেন্ডে মারা যায়।মারশিয়াদ তাই ই পুশ করে অরল্যান্ডোর শরীরে।
গল গল করে রক্ত বেরিয়ে আসে মারশিয়াদ এর মুখ থেকে।দু হাটু ভেঙে নিচে পড়তেই সেখানে আসে শিহরণ।ওকে নিজের কোলের উপর টেনে নেয়।চোখের কোন বেয়ে ঝড়ছে জলধারা।
“এইসব কী করেছিস তুই!!কেনো একা এলি??
মারশিয়াদ হালকা শ্বাস টেনে নেয়।আর বলে–
“আমি তো একাই রে।”
ছোট্ট করে হেসে আবার বলে–
“একদম ঠিক সময়ে এসেছিস।এই জন্যই তোকে আমি এতো ভালোবাসি।”
মারশিয়াদ আবার কিছুক্ষন থামে।দুটো লম্বা শ্বাস নেয়।নিজেকে আর একটু উচু করে নেয় শিহরন এর কোলে।শিহরণ এর পাশেই এসে বসে আজরাহান।চোখে তার বিস্ময়।
লম্বা লম্বা শ্বাস ফেলে মারশিয়াদ বলে–
“এই নে পেনড্রাইভ।আর আমার কাবার্ড এর ড্রয়ারে আছে ওই টিউব।তুই আমেরিকা গিয়ে অ্যালবার্ট স্যার কে দিবি।আর বলবি এর প্যাটেন্ট যেনো নৈসরার নামে বের করে দেয় যার একমাত্র স্বত্ত্বাধীকার থাকবে নিমিত্তি।”
মারশিয়াদ আবারও থামে।বুকে তার প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে।শ্বাস যেনো থমকে যাবে।আবার বলে–
“আমি দদাদুদদু কেএএ বলেএছিই,নিমিত্তিকে অ্যাডোপ্ট করে নিতে।”
হালকা মৃদু আওয়াজ করে উঠে মারশিয়াদ।শিহরণ এর নোনা জল টুপ টুপ করে পড়ছে মারশিয়াদ এর মুখে।এই মানুষটাই একদিন নিজের রক্ত দিয়ে ওর প্রান বাচিয়েছিল।আজ তার সামনেই সে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে।
শিহরণ এর দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসে মারশিয়াদ।নিরস স্বরে বলে—
“সরি রে কলিজা,তোর নির্ধারণ কে আর আমার দেখা হলো না।ওকে বলিস ওর মামা ওকে খুব ভালোবাসে।”
মারশিয়াদ অধর ছড়িয়ে কয়েকটা নিঃশ্বাস টেনে নেয়।বুকে তার অবাধ্য যন্ত্রণা।মনে হচ্ছে এখনই ওই রুষ্ট দেয়াল ভেদ করে যমদূত এসে ওর প্রানপাখি টাকে ছোঁ মেরে নিয়ে যাবে।
ভেজা কন্ঠে হালকা উচু গলায় শিহরণ বলে–
“তোর কিছু হবে না।তুই ঠিক হয়ে যাবি।আমি তোকে এখনই হসপিটাল এ নিয়ে যাব।”
মারশিয়াদ দুইবার তার শিয়র এপাশ ওপাশ করে।
“নারে আমার সময় শেষ।লাভ নেই।”
মারশিয়াদ এইবার দৃষ্টি নিপাত করে আজরাহান এর দিকে।
“সরি ইয়ার,শুধু শুধু তোমাদের জীবনে অভিশাপ হয়ে এসেছিলাম।আজ আমি যাচ্ছি।”
আজরাহান মুখে কিছু বলে না।তার চোখ বলছে,,,তুমি যেতে পারো না মারশিয়াদ।আমার অস্তিত্ব কে পূর্নতা না দিয়ে তুমি যেতে পারো না।
নিমিত্তি হু হু করে কেঁদে উঠে।অস্ফুটভাবে বলে–
“ভাইয়া!!
প্লিজ আমাদের ছেড়ে যেওনা।”
মারশিয়াদ দু হাতে ভর দিয়ে আরেকটু উচু হয়ে মাথা রাখে শিহরণ এর কোলে।
“কে বলল আমি যাচ্ছি!!
আমি সারাজীবন তোমাদের ভালোবাসায় বেঁচে থাকব।”
মারশিয়াদ আবার বলে–
“শিহরণ,ইনশিরাহ কে বলিস আমি ওর ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারি নি।ও যেন আশফিক কে মেনে নেয়।”
মারশিয়াদ শান্ত হয়।নিজের দুই হাত জোড় করে বলে–
“আমার দাদু কে দেখো।তার তো আমি ছাড়া কেউ নেই।বেচারা আমার কথা শুনলে বোধ হয় বাচবেও না।”
মারশিয়াদ এর ঠোঁটের কার্নিশ বেয়ে রক্ত ঝড়তে থাকে।সব দেখছিলো প্রহর।নরম পায়ে ওর সামনে এসে দাড়ায়।মারশিয়াদ এর স্নিগ্ধ দৃষ্টি তার কাজলচোখীর নীল নয়নে নিবদ্ধ।কিন্তু আর কোনো কথা নেই।সে এইবার শান্ত,সমাহিত।আজ সে শুধু দেখবে।প্রহর নিঃশ্বব্দে ওর পাশে বসে।কাপা কাপা হাতে ওর বুকের উপর হাত রেখে বার কয়েক নাড়া দেয় আর বলে—
“জান,কথা বলেন।কথা বলেন জান।”
নাহ।আজ কাজলচোখীর জান কথা বলে না।শান্ত দৃষ্টিতে শুধু তাকে দেখছে,যেনো জীবন্ত দৃষ্টি।মারশিয়াদ এর অধরের সেই স্মিত হাসি যেনো মনে হচ্ছে এখনই উঠে এসে বলবে—
“সর্বগ্রাসী কাজলচোখী,,
আমি তোমায় ভালোবাসি,আমি তোমায় ভালোবাসি,আমি তোমায় ভালোবাসি।”
সমস্ত গোডাউনের নিস্তব্ধতা কাপিয়ে তোলে প্রহর তার আর্তনাদে।যেনো কোনো উড়ন্ত পাখি কে তার ডানা কেটে খাচায় বন্দি করে রেখেছে।
“জান!!!!!!!!
চলবে,,,