অদ্ভুত প্রেমোমোহ তুমি পর্বঃ৬

0
3261

#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ৬
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

নিগূঢ় আঁধারে ঢেকেছে আকাশ।চাঁদ তার জোসনা ছড়িয়ে দিয়েছে পৃথিবীর বুক জুড়ে।রূপালী চাঁদ ক্ষনে ক্ষনে মেঘের আড়ালে লুকায়।তারই চারপাশে তারকারাজির মেলা।টিপ টিপ করে জ্বলছে।একটু পর পর ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যায়।
বারান্দার রেলিং ধরে দাড়িয়ে রাতের এই অকৃত্তিম আঁধারের সৌন্দর্য অবলোকন করছে প্রহর।হঠাৎ ঠান্ডা কিছুর বিচরন চলছে তার কোমড়ে।কিছু বুঝার আগেই কারো বুকের সাথে নিজের মাথার স্পর্শ টের পায় প্রহর।বুঝতে পারে তার রাহান ভাইয়া।গন্ধরাজ ফুলের তীব্র ঘ্রাণ যে তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়েছে।

“কি করিস তুই??

“চাঁদ দেখি।”

আজরাহান প্রহর কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।রেলিং এর সাথে ঘেষে দাড়ায় প্রহর।আজরাহান তার দুইহাত প্রহর এর দুইপাশে রেলিং এ রাখে।

“আর আমি আমার চাঁদ কে দেখি।”

“কে??

আজরাহান প্রহর এর নাকে নাক ঘষে বলে–

“তুই।”

প্রহর আজরাহান এর বুকে মুখ লুকায়।বাম হাতের আঙ্গুল ওর বুকের উপর ঘোরাতে থাকে।আজরাহান এক হাত প্রহর এর কোমড় জড়িয়ে রেখেছে আরেক হাত প্রহর এর চুলে ঘুজেছে।নিজের চিবুক প্রহর এর ঘাড়ে রেখে তা হালকা বাকিয়ে প্রহর এর কানের কাছে বলে–

কতটা ঘোর তোমাতে আমার
কতটা তার সত্য,
নিয়নের বাতির আবছা আলোয়
তোমাতেই আমি মত্ত।

“প্রহরিনী,ভালোবাসিস আমাকে??

প্রহর ওর বুক থেকে মাথা উঠিয়ে আজরাহান এর চোখের দিকে তাকিয়ে চোখের পাঁপড়ি নাচিয়ে হা বোধক সম্মতি দেয়।

আজরাহান প্রহর এর চিবুক একটু উচু করে ধরে ওর অধরে এক বিস্ময়কর চুমু খায়।প্রহর চোখ বন্ধ করে নেয় পরম আবেশে।

জানালার পাশে রাখা টেবিলের উপর থেকে হাওয়ার ঝটকায় ফুলদানি পড়াতে ঘুম ভেঙে যায় প্রহর এর।
পাশেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আজরাহান।

“দূর ছাই,এতো সুন্দর স্বপ্নটা ভেঙে গেলো।”

টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখে সেখান দুটো নীল চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে আজরাহান এর প্রান ওর বিল্লিরানি কিঞ্চি।বিড়াল টা প্রহর কে একদম সহ্য করতে পারে না।না হলে কি এতো সুন্দর স্বপ্নটা ভেঙে দেয়।পাজি বিল্লি কোথাকার!!

বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে যায় প্রহর।নন্দিতা নাস্তা তৈরি করছে।

“ভাবী কি করছো??

“আজ এতো সকালে উঠলি??

“তা নাহলে কি করবো,,ওই যে আমার সতিন তোমার দেবর তো তার প্রানসুন্দরী কে ছাড়া রাতে ঘুমাতেই পারে না।”

নন্দিতা হেসে উঠে।

“কি বানাচ্ছো ভাবী??

“মাংস পিঠা”

এইটা এক ধরনের পিঠা যার মধ্যে মাংসের পুর ব্যবহার করা হয়।মাংস ছোট ছোট টুকরো করে কেটে তাতে সব ধরনের মসলা দিয়ে ঝুড়িভাজার মতো করে।রুটি বেলে তার মধ্যে পুর দিয়ে পুলি পিঠার মতো করে তৈরি করা হয়।কিন্তু তা আকারে একটু ছোট হয়।তারপর ডুবো তেলে ভাজতে হয়।

“ও তাই নাকি,,দেখি তো।”

প্রহর একটা পিঠা নিয়ে কামড় বসায় তাতে।

“বাহ।বেশ মজা তো।”

“তোর ভালো লেগেছে?

“হুম।
তুমি এতো সকালে কেনো উঠো ভাবি??

“না উঠে কি করবো বল তারা তো আমার হাতের রান্না ছাড়া খেতেই পারে না।”

“সরি ভাবী।”

“তুই সরি কেনো বলছিস?

“এই যে আমি তোমাকে একটু সাহায্য করতে পারি না।রাহান ভাইয়া আমাকে রান্নাঘরে আসতেই দেয় না।”

“আজরাহান তোকে খুব ভালো বাসে তাই না?

“ভালোবাসে না ছাতার মাথা।যতক্ষন জেগে থাকে ততক্ষন আমাকে ধমকাবে আর না হয় পড়ে পড়ে ঘুমাবে।”

“কেনো আর কিছু করে না বুঝি??

নন্দিতা মিটিমিটি হাসছে।

“হা করে তো আমাকে শাস্তি দেয়।এইটা করবি ওইটা করবি ,এইটা ধরবি না ওইটা ধরবি না।”
নন্দিতা এইবার হালকা আওয়াজ করে হেসে উঠে।

“তুমি হাসছো!!
তোমার দেবর আস্ত একটা হাঁদারাম।একদম আনরোমান্টিক।শুধু ঘুমাতে জানে।যত্তসব।”

প্রহর পিঠার থালা টা হাতে নেয়।

এরমধ্যেই আজরাহান এসে দাড়ায় সেখানে।নন্দিতা দুষ্টুমি করে বলে–

“তাই নাকি??আমি তো ভেবেছিলাম আজরাহান ভারি রোমান্টিক।”

“গোবেট একটা।শুধু হনুমান এর মতো চিল্লাতে পারে।তার চেয়ে ওই পেটমোটা অসুর,,,,,,

প্লেট হাতে নিয়ে ঘুরতেই ওর সামনে পড়ে আজরাহান।

“তো তুই ওই শিম্পাঞ্জি কে মিস করছিস তাই
তো??
তাহলে চল তোকে ওই শিম্পাঞ্জির কাছে দিয়ে আসি।এক রাতেই তোর রোমান্সের শখ মিটিয়ে দিবে।”

“আজরাহান,,এইসব কি বলছো তুমি??

“কেনো ভাবী,,ও মাত্র বললো না আমার চেয়ে ওই শিম্পাঞ্জি টা ভালো।”

“আচ্ছা বাদ দাও।ও ছেলেমানুষ,কি বলতে কি বলে ফেলেছে।”

আজরাহান গাঢ় কন্ঠে বলে–
“ছেলেমানুষ তো এতো রোমান্সের শখ কেনো ওর??

প্রহর কাদো কাদো হয়ে বলে–

“আমি কি বলেছি নাকি,,

“আর একটা কথা বললে একটা চড় মারব। যা এখান থেকে।”

প্রহর প্লেট হাতে বেরিয়ে আসে রান্নাঘর থেকে।

“আজরাহান,,শুধু শুধু মেয়েটাকে কেনো বকা দাও তুমি??

“ছাড়ো ওর কথা।আমার কথা আছে তোমার সাথে।”

“কি বলবে??

“তোমার টাকা টা আমি,,

“চুপ করো তুমি।এইসব কেনো উঠছে এখন??

“উঠছে এই জন্যই যে আজ তোমার জন্যই প্রহর কে আমি নিজের করে পেয়েছি।তুমি যদি টাকা টা না দিতে তাহলে,,,

“আমি ভেবেছিলাম আমার একটা ভাই আছে।কিন্তু তুমি তো আমাকে কখনো আপন ভাবোই নি।”

“ভাবী এইসব কেনো বলছো,,তুমি যে আমার কি তুমি তা ভালো করেই জানো।”

“যদি তাই ই হয় তাহলে আজকের পর ওই টাকার কথা তুমি ভুলে যাও।মনে করো এই টাকা আমি তোমাদের বিয়েতে উপহার হিসেবে দিলাম।”

“কিন্তু ভাবী,,

এরমধ্যেই কুহেলিকা বেগমের আত্ন চিৎকারে পুরো বাড়ি কেপে উঠে।দৌড়ে যায় আজরাহান আর নন্দিতা।গিয়ে দেখে কুহেলিকা বেগম ফ্লোরে পড়ে আছেন আর পাশেই দাড়িয়ে আছে প্রহর।

“একি হলো রে,,এই মেয়ে একদিন আমাকে মেরেই ফেলবে।
ওরেএএএ আমার কোমড় গেলো রে।”

“মা,, পড়লে কিভাবে তুমি??

“আমি পড়েছি নাকি এই অলক্ষি আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে।”

“ছোট মা,,, আমি ইচ্ছে করে করিনি।আমিতো আপনাকে দেখিনি।”

“তুই চুপ কর বেয়াদব মেয়ে।আমাকে মারতে চাস তাই তো??
ওমা গেলুম রে,,”

প্রহর এর চোখ এর জল টুপ টুপ করে ঝরছে।

আজরাহান ওর মা কে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে বিছানায় শোয়ায়।বাড়ির বাকি সবাইও সেখানে উপস্থিত হয়।

সানোয়ার আহমেদ বলে–

“এইসব হলো কি করে??

“ওই ওই মেয়ে আমাকে মারার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।আমি তো ওর চরম শত্রু।”

“আহ।চুপ করো তো,,কেনো মেয়েটাকে শুধু শুধু দোষ দিচ্ছো??

“ও আচ্ছা।তো তুমি বলছো আমি মিথ্যে বলছি।”

“মা তুমি চুপ করবে,,প্লিজ চেচামেচি করোনা।”

“হ এখন তো আমার কথা চেচামেচি ই মনে হইবো।”

প্রহর দরজায় স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে।ঘরের ভিতর এক পা দিতেই আজরাহান বলে–

“এখানে আসবি না।ঘরে যা।”

“রাহান ভাইয়া,,

“বললাম না ঘরে যা।যা এখান থেকে।””

প্রহর চলে যায়।

আজরাহান এদিক টা সামলে ডক্টর কে কল করে।

নিজের ঘরে এসে প্রহর কে না পেয়ে বারান্দায় গিয়ে
দেখে প্রহর হাটুর উপর মাথা রেখে কাদছে।

“কিরে কাদছিস কেনো??

প্রহর মাথা উচু করে বলে–
” আমি ছোট মাকে ধাক্কা
দেইনি।”

আজরাহান ওর পাশেই বসে।

“তোদের মেয়েদের সমস্যা কি বলতো।কিছু হলেই নাকের জল আর চোখের জলের ঢেউ খেলিয়ে দিস চেহারায়।মা বললেই কি আমি বিশ্বাস করেছি যে আমার প্রহরিনী কাউকে আঘাত করতে পারে??

“তাহলে আমাকে ঘরে ঢুকতে দিলেন না কেনো??

আজরাহান প্রহর এর দিক তাকিয়ে বলে–
ঘরে ঢুকলে যে মা তোর উপর কথার বিদ্যুৎ বর্ষন করতো তা কি তুই জানিস না।”

প্রহর চোখের পানি মুছে।চুপ করে মাথাটা আজরাহান এর হাতের উপর রাখে।

“ছোট মা আমাকে পছন্দ করে না কেনো??

“জানি না রে।মা যে কেনো এমন করে আমি আজ পর্যন্তু জানতে পারিনি।কেনো যে তোকে সহ্য করতে পারে না।”

“আচ্ছা,,আমাদের বাবু হলেও কি ছোট মা আমাকে সহ্য করতে পারবে না??
আজরাহান কঠোর দৃষ্টিতে তাকায় প্রহর এর দিকে।
,
,
,
উল্টো দিকে হাত বেধে হাটু ভাজ করে দাড় করানো সাতজন লোক সবার মুখের উপর টেপ লাগানো।
ওদের সামনেই বসে আছে মারশিয়াদ।চেয়ারে বসে ধোয়া উড়ানো ব্ল্যাক কফিতে চুমুক লাগায়।
ঠোঁটের কোন খানিক বাকিয়ে বলে–

“আই ডোন্ট বিলিভ দিস।একটা পেইন্টিং চুরি করতে সাত জন!!!
অবশ্য তোদের পাঠানো ওই সাইকো বস কে দেখে আমি প্রথম দিনই বুজতে পেরেছি ওর মাথার ঘিলু অর্ধেকটাই খালি।আজ তা ফুল প্রুভ হলো।
কিন্তু এখন বল তোদের সাথে আমি কি করবো??

সামনে রাখা টেবিল থেকে পিস্তল টা হাতে নিয়ে দাড়ায় মারশিয়াদ।
“ও,,তোদের তো মুখ বাধা।মরার আগে শেষ ইচ্ছে তো বলে যা।””

মারশিয়াদ ওদের মধ্যে একজনের মুখের টেপ টা সরিয়ে দেয়।

“স্যার ,মাফ কইরা দেন।আর জীবনেও এই ভুল করমু না।আমরাতো চোর না।কয়েডা ট্যাকার লোভে এইকাজ করছি।”

“হ্যাঁ।সেইটা আমি তোদের দেখেই বুঝেছি যে তোরা প্রফেশনাল চোর নস।
এখন বল তোদের সাথে আমি কি করতে পারি??
পিস্তলের ট্রিগার এ আঙ্গুল ঢুকিয়ে তা ঘোরাতে থাকে মারশিয়াদ।ভয়ে সবার মুখ থেকে গোঙানির আওয়াজ বের হতে থাকে।

“ওদের ছেড়ে দিন মারশিয়াদ আরজান।”

“আমি তো আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম মিস ইনশিরাহ।”

নিজের গার্ডদের ডেকে লোকগুলো কে ছেড়ে দিতে বলে।আর ওয়ার্নিং দেয় যেনো নেক্সট টাইম আর কখনো এমন না করে।

“কেমন আছেন মারশিয়াদ?এখন তো এই নামে ডাকতেই পারি আপনাকে।”

“আমি যদিও আপনাকে সেই অধিকার দেই না তারপর ও ইটস গ্রান্টেড।”

“থ্যাংকস।”

“এইসব করার মানে??আমি আপনাকে বলেছি ওই পেইন্টিং বিক্রয়ের জন্য নয়।”

ইনশিরাহ ওর বামহাত টা ঠিক মারশিয়াদ এর হৃদযন্ত্রের উপর রাখে।

“আমার এখন এইটার প্রয়োজন।”

মারশিয়াদ এক হাত দিয়ে ইনশিরাহ কে ঘুরিয়ে ওর হাত পিছনে মুড়ে ধরে।আরেক হাত দিয়ে পিস্তল টা
ইনশিরাহ এর মুখের উপর ঘোরাতে ঘোরাতে বলে–

“সাইক্রিয়াটিস্ট প্রয়োজন আপনার।”

“আমার তোমাকে প্রয়োজন মারশিয়াদ।”

“আপনি থেকে তুমি!!
বাট আই ডোন্ট নিড ইউ বেবি।জাস্ট গেট আউট।”

মারশিয়াদ ওর হাত ছেড়ে দেয়।ঘুরে দাড়াতেই ইনশিরাহ বলে—

“আই লাভ ইউ মারশিয়াদ।”

মারশিয়াদ ঘুরেই ওর পিস্তল টা একদম ইনশিরাহ এর কপালে টার্গেট করে।ইনশিরাহ হালকা কেপে উঠে।আস্তে আস্তে তা নামিয়ে ইনশিরাহ এর ঠোঁটে র উপর নিয়ে আসে।

“ইউ আর নট মাই টাইপ বেবি।গো টু দ্যা হেল।”

“মারশিয়াদ,,,,.

“শিষষষষষষ,,,নো মিস।নো।আই হেট শাউটিং।বি ক্লাম।
আমার ভালোবাসা পাথরের তৈরি শো পিস নয় ইচ্ছে হলো কিনে নিলাম।”

মারশিয়াদ বাড়ির ভিতরে চলে যায়।

ইনশিরাহ ভাবে,,,,,যে কথায় কথায় পিস্তলের ভয় দেখায় সে সাধারন কেউ হতে পারে না।একজন সাধারন পেইন্টার এর অঙ্গভঙ্গি এমন হতে পারে না।হোয়াটএভার,,, আই জাস্ট ওয়ান্ট হিম।ইউ আর মাইন অনলি মাইন মারশিয়াদ আরজান।

দেয়ালের সেই পেইন্টিং এর সামনে দাড়িয়ে আছে মারশিয়াদ।
“কোথায় হারিয়ে গেলেন ‘কাজলচোখী’??
আপনাকে ছাড়া যে আমার বেচে থাকা মুশকিল।

নেশা লেগেছে আজ তোর প্রেমেতে
হারিয়েছি এই মন,
আমার এই ছোট্ট হৃদয়ে
শুধু তোরই প্রয়োজন।
একবার ফিরে আসুন ‘কাজলচোখী’।আই সোয়ের আমি আপনাকে আর হারিয়ে যেতে দিবো না।প্লিজ একবার আপনার জান এর সামনে আসুন।একবার।”

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here