#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ৭
✍️ তাজরিয়ান খান তানভি
কলেজের বাইরে দাড়িয়ে আছে নির্ধা আর প্রহর।উদ্দেশ্য ফুচকাওয়ালা মামা।একমাস পর ওদের এইস.এস.সি পরীক্ষা।কিছুদিনের মধ্যেই কলেজ বন্ধ।তাই শেষবারের মতো পরীক্ষার আগে উদরপূর্তি করা আর কি।
কলেজের দুইপাশেই ছোট ছোট ষ্টেশনারির দোকান।শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বই খাতাসহ বাকি সকল জিনিষ সেখানে সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়।কলেজের ভিতরকার বড় আমগাছটার বেশীরভাগ শাখা প্রশাখা কলেজের বাইরের দিকে হেলে পড়া।কলেজের সামনেই কিছু মহিল কিছু ঝুপড়ি নিয়ে বসে।ফুচকাওয়ালা মামাকে তারা আমগাছটার ছায়ায় পায়।
এতো এতো ট্রল এর পরও মেয়েরা এই ফুচকার জন্য কি করে পাগল হয় তা আজোও কেউ খুজে পায় না।এ কোন মায়ায় ফুচকা তাদের জড়িয়েছে।ঘামার্ত শরীর নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলে যে মেয়েরা ছেলেদের গুষ্ঠি উদ্ধার করে তারাই আবার পোকা পড়া টক পানিতে চুবিয়ে ঐশ্বরিক স্বাধে ফুচকা গিলে।জৈনক ব্যক্তি ঠিকই বলেছেন,,মেয়েদের মন বোঝা বড় মুশকিল।
রাস্তার ওপারে একটা চায়ের টঙ দোকান।তার পাশেই এক অর্ধ বয়সি লোক ছোট্ট একটা দোকান নিয়ে বসেছে।উপড়ে এক বিশাল ছাতা লাগিয়েছে।টঙ দোকানের এইপাশে ছোট্ট কাপড়ের দোকান।চৌদ্দ পনেরো বছরের এক কিশোর অতি অভিজ্ঞতার সাথেই তা পরিচালনা করে।টঙ দোকানটি এখানকার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ আড্ডাস্থল।ছেলেমেয়ে,বুড়ো সব বয়সি মানুষের আনাগোনা সেখানে।
নির্ধা আর প্রহর ফুচকাওয়ালা মামার কাছে গিয়ে ফুচকা অর্ডার করে।নির্ধার চোখ যায় রাস্তার ওপাশের সেই টঙ দোকানে।উঠতি বয়সের চার পাঁচজন ছেলে ওদের দিকেই কামুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।প্রহর এর সেদিকে খেয়াল নেই।ও একের পর এক ফুচকা মুখে পুরছে।
“এই তুই ওইদিকে তাকিয়ে আছিস কেনো??
“কই কিছু না।”
ওইদিকে ছেলেগুলোর মধ্যে একজন বলে–
“মামা,,মালটা কিন্তু সেই।”
“ওই চুপ কর।কলেজের বাচ্চা মাইয়া।”
“মামা,,বয়সে বাচ্চা হইলে কি হইবো ফিগার কিন্তু সেই।”
এইবার সাথের বাকি ছেলেগুলো উৎসুক দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকায়।রাস্তার এপার ওপার হওয়াতে সামনে থাকা সব দৃশ্যমান হলেও ওরা ওদের কথা শুনতে পায় না।
“দেখ ছেলেগুলো কিভাবে তাকিয়ে আছে??
“নির্ধা,,এগুলো ওদের রোজকার কাজ।তাকিয়ে লাভ নেই।কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না।
মামা,,জলদি করুন।”
খাওয়ায় এতোটাই মগ্ন প্রহর কখন যে ওর ওড়না বুকের উপর থেকে সরে গেছে তা খেয়াল করে নি।ছেলেগুলো তাই দেখছিল শকুনের দৃষ্টিতে।
ওদের মধ্যে একজন সিঙারাতে কামড় বসিয়ে বলে—
“ওদের দেখে লাভ নেই মামা,,অলরেডি বয়ফ্রেন্ড এর সাথে সব করা ফিনিশ।তাই সিঙারা খা ওইদিকে দেইখা লাভ নাই।”
“আরে নিজে খাবারের অর্ডার করেছি বলে অন্যের প্লেটে তাকানো যাবে না তা তো না।”
বলেই নোংরাভাবে হাসতে থাকে।চা বিক্রেতা এদের আচরণে খুবই বিরক্ত।কিন্তু কিছু বলতে পারে না।এমন সময় সেখানে কেউ একজন এসে বলে–
“অন্যের প্লেটে যদি অমৃত এর বদলে বিষ থাকে তাহলে কিন্তু বাচা মুশকিল!!
কিছুক্ষনের মধ্যেই টঙ দোকানে মানুষের জটলা তৈরি হয়।লোকজনের কোলাহল দেখে ওরা সেদিকে তাকায়।
“এই নির্ধা,,দেখ মনে হয় মারামারি লেগেছে চলনা দেখে আসি কাকে কে মারলো।”
“তুই কি পাগল!!বয়সে তো মাত্র এক বছরের ছোট তাও এমন বাচ্চাদের মতো কথা কেনো বলিস?
মরুক ওরা তাতে আমাদের কি!!
“কি হচ্ছে এখানে??
আজরাহান কে দেখে প্রহর এর পিলে চমকে উঠে।
“আপপপনিইই!!
“তোকে না এইসব খেতে বাড়ন করেছি??
“না,,মানে,,
“কেমন আছেন আজরাহান ভাইয়া??
“ভালো।
ওর মাথায় না হয় গোবর ভরা তুমিও কি ওর মতো নাকি??
“আসলে,,
“কি পাও এইসব খেয়ে??
“সরি।”
“আর সরি বলতে হবে না।
মামা এদের দুজন কে আরো এক প্লেট দিন।”
প্রহর আর নির্ধা অবাক চোখে তাকায়।এইমাত্রই তো বকা দিলো।
আরেক প্লেট ফুচকা হাতে নিয়ে ওরা খেতে থাকে।আজরাহান ফুচকা বিক্রেতার সাথে কথা বলতে থাকে।
“মামা,,রোজ কেমন বিক্রি হয় আপনার??
“এই কোনদিন শ পাচেক কোনোদিন হাজার।”
“হাতে তো গ্লাভস ব্যবহার করতে পারেন??
তাতে করে আপনার হাত ও সেফ থাকবে খাবারও।”
“কথা আপনি ঠিক ই কইছেন।কিন্তু এতো ঝামেলা কে করবো মামা??
“তা হাত ভালো করে সাবান দিয়ে পরিস্কার তো করেন??
“হ মামা।”
“কোথায়,, পরিস্কার করার তেমন কিছু তো দেখছিনা??
“আরে এখানে না মামা।ওই যে টয়লেটে যাওয়ার আগে ভালো কইরায় পরিস্কার করি।সারাদিন মরিচ নিয়া এতো নাড়াচাড়া করি।”
“ও আচ্ছছছা।আর আসার পর??
“আসার পর কোনদিন করি কোনোদিন করি না।”
বলেই পান খাওয়া দাঁত বের করে হাসতে থাকে।
প্রহর আর নির্ধা পুরাই স্ট্যাচু।ভিতর থেকে সব গুলিয়ে আসছে।হাত থেকে প্লেট রেখে ওয়াক ওয়াক করতে থাকে।
“কিরে তোদের আবার কি হলো??
আরেক প্লেট দিতে বলি??
“ছিঃ রাহান ভাইয়া আপনি আসলেই একটা,,
“আচ্ছা,,এখন আমার দোষ।আরো খা বেশি করে।”
নির্ধা একটু স্বাভাবিক হয়ে ইচ্ছেমতো ঝাড়ে ফুচকাওয়ালা কে।ফুচকাওয়ালা বিনা মেঘে বজ্রপাত দেখে পুরাই হতবিহ্বল।
নির্ধাকে একটা রিক্সায় উঠিয়ে দিয়ে আজরাহান বাইক এর কাছে আসে।প্রহর এর হাত চেপে বলে–
“কি সমস্যা তোর??কলেজে এইসব করতে আছিস??
“কি করেছি আমি??
“কি করেছিস,,এই এই তুই কি বাচ্চা??ওড়না যদি ঠিক ই না রাখতে পারিস তাহলে পরিস কেনো??
প্রহর নিজেকে ভালো করে দেখে।ক্রসবেল্ট তো ঠিক জায়গায়ই আছে।আর ওড়নাও।
আজরাহান এইবার ওর দুই হাতের বাজু ধরে বলে–
“তুই কি চাস তোর জন্য আমি রাস্তঘাটে মারপিট করে বেড়াই??
এই তুই এতো উশৃঙ্খল হলি কি করে??রাস্তায় শরীর দেখিয়ে হাটতে ইচ্ছে করে তাই না।মা ঠিক ই বলে তুই আসলেই রাস্তার মেয়ে।”
প্রহর এইবার ফুপিয়ে কেদে উঠে।ওর রাহান ভাইয়া এমন কেনো করে।
আজরাহান ওর বাজুতে আরো জোরে চেপে ধরে বলে–
“তোকে এইভাবে দেখার অধিকার শুধুই আমার,;আর কাউকে যদি সেই সুযোগ দিস তাহলে সেইটা তোর জন্য একদম ভালো হবে না।
উঠ বাইকে।”
প্রহর স্থির হয়ে থাকে।
“উঠবি নাকি ফেলে রেখে যাবো?
প্রহর উঠে বসে।আজরাহান কিছুটা শান্ত হয়।
,
,
,
বিছানার উপর বই খাতা ছিটানো।সৃর্য্যি কে পড়াচ্ছে প্রহর।
“কিরে নিজের পড়া রেখে ওকে কেনো পড়াচ্ছিস??
“আরে ওর ও তো এক্সাম।”
“নিজের চরকায় তেল দে আগে।
সূর্যি মামুনি তুমি তোমার মামুনির কাছে গিয়ে পড়ো।”
“ওকে চাচ্চু।”
আজরাহান বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পড়ে।হালকা ঘাড় ঘুরিয়ে প্রহর কে দেখে।মেয়েটাকে আজ যা নয় তা বলেছে।
“খেয়েছিস??
“না।”
“কেনো??
“আপনি কোথায় ছিলেন??
“এইটা আমার প্রশ্নের উত্তর?
“আপনি এলে একসাথে খাবো তাই।”
আজরাহান উঠে বসে।
“আজকের পর কখনো আমার জন্য অপেক্ষা করবি না।খেয়ে নিবি।”
“কেনো??
“আমি বলেছি তাই।
আজরাহান একটা দম ছাড়ে।
“তোর এক্সাম সামনের মাসে?
“হুম।”
“কত টাকা ডিউ আছে এখনো??
“দশ হাজার।”
“লাস্ট ডেট কবে??
“পরশু।”
আজরাহান কিছু একটা ভেবে উঠে দাড়ায়।
“যা খেয়ে ঘুমিয়ে পর।আমি এসে যেনো না দেখি তুই জেগে আছিস।”
“আপনি কোথায় যান??
“বাবার কাছে।”
আজরাহান চলে যায় কিছু একটা ভেবে আবার ফিরে আসে।প্রহর এর কপালে একটা ছোট্ট চুমু খায়।
প্রহর এর খুশি যেনো উপচে পড়ে।
,
,
,
স্ট্যাডিরুমে বসে আছে সানোয়ার আহমেদ।
“বাবা আসবো??
“এসো।”
“কেমন আছো তুমি??
“ভালো।
কিছু বলবে??
“জ্বি।
আসলে আমার কিছু,,
“টাকা লাগবে তাইতো??
“জ্বি।”
“তা হবে না।আমি তোমাকে বলেছি প্রহর এর সব দায়িত্ব তোমার।”
“কিন্তু পরশু লাস্ট ডেট ফি জমা দেওয়ার।”
“তা তোমাকে আগেই ভাবা উচিত ছিলো।
আমি তোমাকে যতটা স্নেহ করি ঠিক ততোটাই তোমার মা কে ভালোবাসি।আর তাকে দেওয়া কথারও শ্রদ্ধা করি।
আমার সবচেয়ে দুঃসময়ে আমার পাশে তোমার মা কে ছাড়া আমি কাউকে পাই নি।”
“জানি বাবা।”
“আমি তোমাকে আগেই বলছি যতদিন না নিজেকে যোগ্য করে তুলতে পারো প্রহর কে ওর ভবিষ্যৎ এর উপর ছেড়ে দাও।কিন্তু তুমিই ওকে নিজের সাথে জড়িয়েছো।”
“বাবা তুমি জানো এছাড়া আমার কোনো উপায় ছিলো না।নাহলে মা ওকে ওই শিম্পাঞ্জির সাথে বিয়ে দিয়ে দিতো।”
“তুমি কি করেছো,,ওর মান সম্মান সব উড়িয়ে দিয়েছো বাতাসে।মেয়েটাকে সবার সামনে ছোট করেছো।ওর কি এইটাই প্রাপ্য ছিলো ওর রাহান ভাইয়ার কাছে??
“আমি যা করেছি তা ভুল ছিলো।কিন্তু এছাড়া আমার কিছুই করার ছিলো না।মা কোনোভাবেই ওকে মেনে নিতো না।”
“তোমার জন্মের সময় অতিরিক্ত ব্ল্যাডিং হওয়ার ফলে ডক্টর যখন বলল তোমাকে আর বাচানো যাবে না তখন তোমার মা ডক্টর এর কাছে অনুনয় করে বলেছে যেনো তার প্রানের বিনিময়ে তোমাকে বাচিয়ে দেয়।
আর প্রহর,যেদিন তুমি ওকে ছাদ থেকে পড়ার হাত থেকে বাচিয়েছো সেদিন থেকে সে তোমাকে তার প্রানেশ্বর মেনে নিয়েছে।
তাই তাদের দুজনের কাছে তোমার কি মূল্য তা নিশ্চয় তোমার বোধগম্য হয়েছে।আমি চাইনা আমার ছেলে কাউকে প্রতারিত করুক।”
আজরাহান চুপচাপ শুনছে।এইসব ই ওর জানা।
“তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কিছু একটা করো।প্রহর কে তার যোগ্য সম্মান দিতে তোমাকে প্রথমে তার যোগ্য হয়ে উঠতে হবে।”
“জ্বি,,বাবা।”
“মেয়েটা ছোটবেলা থেকে অনেক সহ্য করেছে।এইবার নিশ্চয় তুমি তাকে সুখের মুখ দেখাবে??
“আমি চেষ্টা করবো।”
,
,
,
রাত প্রায় সাড়ে তিন,,
তিন ঘন্টা যাবৎ পাথরের মূর্তি হয়ে বসে আছে শিহরন।মারশিয়াদ আজ তার কলিজার পেইন্টিং বানাচ্ছে।
“তুই কি আমাকে মেরে ফেলবি??
দেখ ভাই আমাকে সকালে হসপিটালে যেতে হবে।সাড়ে তিনটা অলরেডি।একটু ঘুমাতে দে??
“আর এক মিনিট ওয়েট কর।”
অবশেষে পেইন্টিং শেষ হলো।
“তুই কি পাগল??
রাত বারোটায় আমার বাসায় কেনো এলি?আর আমার ঘুমের বারোটা বাজালি?
“দেখতো পেইন্টিং টা কেমন হয়েছে??
“রাখ তোর পেইন্টিং।শালা পাগল।”
“নট পাগল।আমি দিওয়ানা।আমার কাজলচোখীর প্রেমে।”
“সর এখান থেকে ঘুমাতে দে।”
“ওই ভি আই পি পাস কেনো নিলি??
“আমার গার্লফ্রেন্ড এর জন্য।”
“তা ভাবি কি করে??
“এইস.এস.সি ক্যান্ডিডেট।”
মারশিয়াদ হা হা করে হেসে উঠে।
“শালা মেয়ে পেলি না আর।”
“ভাই ক্ষমা কর আমায়।কাল সকালে যা বলার বলিস।আমারে ঘুমাইতে দে।”
“আচ্ছা ঘুমা।”
“তুই??
“আজ তোর এখানেই থাকবো।ঘুমা তুই।”
শিহরণ সটান করে শুয়ে পড়ে বিছানায়।
মারশিয়াদ ডিভাইন এর উপর শরীর এলিয়ে দেয়।কিছুক্ষন পরেই বুঝতে পারে ঘুমের দেশে তলিয়েছে শিহরণ।কিন্তু মারশিয়াদ এর চোখে ঘুম নেই।তার দুচোখ এখনো অন্ধকারের ভীড়ে তার কাজলচোখী কে খুজে বেড়ায়।
চোখ বন্ধ করেই আওড়াতে থাকে—-
“তোমাকে দেখবো বলে আঁধারে চোখ বুঝি,
তুমি কেনো দেখা দিয়েও হারিয়ে যাও,
মর্ত্যলোকে আমি শুধু তোমাকেই খুঝি।
আমার জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আমি নিজেকে আপনার নামে উৎসর্গ করেছি কাজলচোখী।আপনি কি একবারও আসবেন না আমার সামনে???
চলবে,,,
(বিঃদ্রঃ গল্পটা রোমান্টিক হলেও একটু অন্য ধাঁচের।
আপনাদের কি বোরিং লাগছে???😕😕😕😕