অনুভূতিতে তুমি পর্ব-১১

0
2691

#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_১১

কাঁদতে কাঁদতে এখন ক্লান্ত মেহেরিন। নিস্তেজ দেহটাকে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে নিচে বসে পড়ল সে। চোখ বুজে যাচ্ছে তার, মেলে রাখা অসাধ্য হয়ে পড়ছে তার পক্ষে। হুট করেই কানে ভেসে আসছে চিরচেনা গলার স্বর তার সাথে বেলী ফুলের জোরালো ঘ্রাণ পাচ্ছে সে। এটা কি করে হতে পারে। স্টোররুমে কোন বেলী ফুলের গাছ নেই। তাহলে সে কেন পাচ্ছে এই ঘ্রাণ। কারো মৃদু গলার স্বর ভেসে আসছে,

“মেহের! মেহের!

মেহেরিন চোখ মেলে সামনে তাকানোর চেষ্টা করছে। কেউ আছে মনে হচ্ছে সামনে। চোখে ঝাপসা দেখছে সে। চোখ বার বার বুঁজে যাচ্ছে তবুও সামনে দেখার চেষ্টা করছে। হাত দিয়ে চোঁখের পানি মুছলো সে। অতঃপর সামনে তাকাতেই সে থমকে গেল। নিরু দাঁড়িয়ে আছে সামনে। মেহেরিন দ্রুত দাঁড়িয়ে গেল। তার চোখের কোনে আবারো অশ্রু জমতে শুরু করল। মেহেরিন কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

“নননিরু দি!

“মেহের! তুই কাঁদছিস কেন?

“দি তুমি এসেছ!

“এলাম আবার কখন, আমি তো সবসময় তোর সাথেই থাকি।

“দি! দি আমি খুব একা এখানে, আমার একটুও ভালো লাগছে না এখানে। আমি চলে আসি তোমার কাছে।

নিরু কিঞ্চিত হাসল। মেহেরিন অবাক চোখে তাকিয়ে রইল সেই হাসির দিকে। হাসিটা এখনো খুব মিষ্টি। নিরু হেসে বলে উঠে,

“পাগলী কোথাকার! তুই চলে এলে আমার অর্ণবকে কে দেখবে শুনি।

“দি!

“খুব জ্বালায় বুঝি অর্ণব তোকে। দেখ এখন কেমন লাগে, একসময় তুই ও এভাবে আমাকে জ্বালিয়েছিস। কিন্তু আমার অর্ণব তোর মতো এতোটা দুষ্টু না কিন্তু!

মেহেরিন নিরুর দিকে তাকিয়ে এগিয়ে তার কাছে আসতে লাগল। এদিকে নিরু রাজ্যের কথা শুরু করে দিয়েছে। মেহেরিন হাত বাড়িয়ে যেই না নিরু কে ছুঁতে যাবে তখনই নিরু বলে উঠে,

“ছুবি না মেহের! তোর হাতের ছোঁয়া পেলে আমি হারিয়ে যাবো যে।

“দি তুমি আবার চলে যাবে।

“ধুর পাগলী একটু আগেই তো বললাম, আমি আছি সবসময় তোর পাশে, তোর সাথে।

“তাহলে তোমাকে কেন ছুঁতে পারি না আমি।

“মেহের, বোন আমার! তুই এখনো সেই ছোট্ট মেহের’ই আছিস। যে কিনা আমার প্রিয় বেলী ফুল গুলো গাছ থেকে ছিঁড়ে ফেলতি। আমি খুব রেগে যেতাম তোর উপর। তুই সেই বেলী ফুলের মালা গেঁথে আমার গলায় পরিয়ে দিতি মনে আছে তোর।

“সব মনে আছে দি, সব আছে।

নিরু আবারো হেসে দিল। মেহেরিনও এবার হেসে দিল। নিরু বলে উঠে,

“খুব ক্লান্ত লাগছে তোকে মেহের।

“আমি ঠিক আছি দি।

“না ঠিক নেই তুই,‌ কোনদিন ভালো করে রাতে ঘুমোতে পারিস না তুই। মাঝরাতেই জেগে উঠিস, বসে থাকিস। ঘুমের ঔষধ খাবার পরও তোর ঘুম হয় না। কেন করিস মেহের এসব। এরকম চলতে থাকলে যে তুই অসুস্থ হয়ে যাবি। তখন আমার ছোট্ট অর্ণবের কি হবে বল। কে আছে ওর তুই ছাড়া। আমি তো কবেই চলে গেলাম না ফেরার দেশে। দূর থেকে তোদের দেখতে পারলেও যে তোদের ছোঁয়ায় সাধ্য আমার নেই। তুই কি জানিস না অর্ণবের মাঝে আমি আছি। তোর নিরু দি আছে। এরপরও তুই বলবি তুই চলে আসতে চাস আমার কাছে।

মেহেরিন’র চোখের জমা অশ্রু দ্রুত’ই কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল। মেহেরিন ধপ করে মেঝেতে বসে পড়ল। কাঁদতে লাগল। চেঁচিয়ে বলতে লাগল,

“তোরা সবাই ঠক, সবাই। কেউ ভালোবাসিস না আমায়।

“মেহের কাদিস না বোন!

“কথা বলবি না তুই,‌ তোরা সব এক। স্বার্থপর! সবাই স্বার্থপর! মা কে জ্বালাবো বলে মা জন্মের পর’ই চলে গেল আমায় ছেড়ে। তোকে বেশি ভালোবাসতাম বলে তুইও ছেড়ে চলে গেলি। আর বাবা তোকে বেশি ভালোবাসতো বলে তোর সাথে চলে গেলো। আর তুই এখন বলছিস তোর অর্ণবের জন্য আমায় থাকতে। দেখলি তোরা সব স্বার্থপর সব! যাকেই আমি আকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চাই না কেন সেই আমাকে একা রেখে চলে যায়। চলে যায় সে!

“তুমি অভিমান করছিস মেহের।

“অভিযোগ করছি অভিমান না।

নিরু এবার জোরে হাসল। খিলখিলিয়ে হাসল। মেহেরিন নিরুর দিকে তাকাল। তার সামনে আসন পেতে বসে আছে নিরু। সবসময় এভাবেই বসে থাকতো সে। মেহেরিন অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,

“তুই হাসছিস!

“হাসবো না আবার! কান্না করতে করতে ঝগড়া করার অভ্যাস তোর এখনো গেল না। এই আমার বোন নাকি বিয়ে করবে কয়েকদিন পর আর এখনো বাচ্চাদের মতো কাঁদে। ছিঃ মেহের তোর বর জানলে কি হবে জানিস।

“ও তো জেনে গেছে।‌ জেনে গেছে অর্ণব আমার ছেলে না।

“তো, তুই বেশি ভাবছিস মেহের। নির্ঝর অর্ণব কে অনেক ভালোবাসে। সে তোর হোক আর আমার ছেলে!

“তুই ওর নাম জানিস!

“বাহ জানবো না কেন? আমার বোনের বরের নাম জানতে তো হবেই।

বলেই আবারো হাসর নিরু। মেহেরিন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার দিকে। নিরু মেহেরিন’র এমন চাহনি দেখে বলে উঠে,

“কি ভাবছিস মেহের!

“ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে তোমায়।

নিরু আবারো হাসল। হেসে বলল,
“তুই ভারী মতলব বাজ বুঝলি মেহের। যখন মরে ফ্যানের সাথে ঝুলছিলাম তখন এসে তো একবার ও ছুঁয়ে দেখলি না আমায়, ভয়ে পিছিয়ে পড়লি আর এখন এলি ছুঁতে বাহ। খুব সুন্দর লাগছে বুঝি এখন আমায়।

“তুমি তো বরাবরই সুন্দর দি।

নিরু আবারো হাসল। অতঃপর মুখটা মলিন করে বলে উঠে,
“জানিস মেহের, আমি চাই নি তোদের ছেড়ে চলে যেতে। কিন্তু যেতে হয়েছে।

“কেন গেলে দি!

“কি করব বল আমার সময় যে ফুরিয়ে গেল। কিন্তু জানিস মেহের খুব কষ্ট হয় রে তোর জন্য, খুব কষ্ট হয়। তুই একা একা খুব কষ্ট করছিস জানি কিন্তু আমি যে অপারগ!

“থেকে যাও না দি।

“পাগলী একটা! তা কি হয় নাকি।

“দি! একটা কথা জিজ্ঞেস করব?

“কেন মরে গেলাম তাই..

“না করলেও তো পারতে!

“আমি চাই নি করতে মেহের, আমি চাই নি। তুই জানিস যখন আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল তখন আমার সামনে তোর আর বাবা’র মুখখানা বার বার ভেসে উঠছিল। জানিস অর্ণব তখন আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। সে বুঝতেই পারছিল না কি হচ্ছে। ও যদি তখন জানত ওর মা একদম না ফেরার দেশে চলে যাচ্ছে তখন হয়তো খুব কাঁদতো, তাই না।

কথা গুলো বলার সময় নিরুর গলা ভারী হয়ে আসছিল। নিরুর চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। মেহেরিন মেঝেতে ঠেসে ঠেসে নিরুর কাছে এলো। নিরু মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে হেসে দিল। নিরু যেন কান্না আর হাসা একসাথে মিলিয়ে ফেলেছ। কাঁদো মাখা মুখে হাসছে।

“খুব ইচ্ছে করছে বুঝি ছুঁয়ে দেখতে।

“তোমার চোখের পানিটা মুছে দেই দি।

“দিবি, দে! কিন্তু আমাকে ছুলেই যে আমি হারিয়ে যাবো। তবে ভাবিস না আমার অর্ণব কখনো আমার অভাব তোকে বুঝতে দিবে না। আমি সবসময় থাকবো তোর পাশে। যখন মন থেকে আমায় ডাকবি তখনই আমায় পাবি। বুঝলি তো পাগলী। নে এবার জলদি ছুঁয়ে দে তো আমায়।

“দি, একটিবার বলো না কি হয়েছিল সেদিন।

“সেদিন! অনেককিছুই তো হয়েছিল, অনেককিছুই সহ্য করেছি আমি, সহ্য করেছিস তোরা সবাই। আমিও হাঁপিয়ে উঠলাম এসব থেকে। তাই পরিত্রাণ পেতে চাইলাম আর পেয়েও গেলাম।

“তুমি মিথ্যে বলছো দি!

“আহ্ মেহের, এবার কিন্তু বেশ যন্ত্রণা করছিস তুই। চোখের পানি কি মুছে দিবি না নাকি চলে যাবো আমি।

মেহেরিন আর কিছু বলল না। হাত উঠিয়ে নিরুর চোখের পানি মুছতে নিল। আর তখন’ই নিরু যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। শুধু কানে একটা কথা বাজল,

“মেহের কাদিস না বোন!

মেহেরিন’র কানে কথাটা বাজতেই হু হু করে কেঁদে উঠলো সে। এরকম একবার না অনেকবার হয়েছে। যতবার’ই নিরুর কথা ভেবে সে কাঁদে তখন’ই এই কথা শুনতে পায়। নিরু এসে হাজির হয়। অনেক গল্প করে ওর সাথে। আবার চলে যায়। মেহেরিন বার বার জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছিল সেদিন? প্রত্যেকবার’ই নিরু কিছু একটা বলে কথা ঘুরিয়ে ফেলে। মেহেরিন এখনো মনে করে কিছু একটা হয়েছিল সেদিন নিশ্চিত। কিন্তু এসব কাউকে বললে কেউই বিশ্বাস করবে না। সবাই তাকে একটা পাগল ভাববে। কারন এসব যে তার হ্যালুসেশন। এ কথা মেহেরিন নিজেও জানে কিন্তু মানতে চায় না।
.
নির্ঝর কয়েকদিন যাবত ভাবছে মেহেরিন’র সাথে দেখা করবে কিন্তু কোনভাবেই যেন তা হয়ে উঠছে না। কোথায় না কোথায় গিয়ে আটকে যাচ্ছে সে। নিজেকে একটা গুরুতর আসামি বলে মনে হচ্ছে। যেন মানুষ খুনের চেয়েও আরো বড় কাজ করেছে সে। এইসব ভেবে কয়েকদিন যাবত ঘর থেকেই বের হচ্ছে না সে।

নীলিমা নির্ঝরের এমন অবস্থা দেখে অনেক চিন্তিত। কিছুদিন ধরে তার ছেলেকে বাইরে যেতে দেখছেন না। ঘর থেকেই বের হচ্ছে না। খাবার অবদি বলছে ঘরে দিয়ে যেতে কি তা ঠিক মতো খাচ্ছেও না। মাঝে মাঝে গিটার বাজানোর শব্দ পায় সে। নির্ঝরের মন খারাপ ছাড়া সে গিটার বাজায় না একথা নীলিমার অজানা না।

বাড়ির ল্যান্ডলাইন’র ফোনটা বেজে উঠলো। নীলিমা উঠে কল রিসিভ করল। ওপাশ থেকে ফরহাদ বলে উঠে,

“আসসালামুয়ালাইকুম আন্টি আমি ফরহাদ।

“ওয়া আলাইকুমুস সালাম, বাবা। কেমন আছো?

“আমি তো ভালো আছি আন্টি কিন্তু নির্ঝর মনে হয় ঠিক নেই। কয়েকদিন ধরেই ফোন করছি কল কিছু ধরছে না।‌আর ধরছে তো কথা বলছে না। কি হয়েছে আন্টি ওর।

“আমি নিজেও জানি না বাবা। খুব চিন্তা করছি ওকে নিয়ে। এক ছাদের নিচে থেকেও ছেলেটা আমার কথাবার্তা কিছুই বলছে না।

“তেমন গুরুতর কিছু কি হয়েছিল আন্টি?

“হ্যাঁ তা তো হয়েছিল। ফরহাদ তোমরা বরং একটা কাজ করো। একবার বাসায় চলে এসো। সামনাসামনি বলি তোমাদের আর দেখো আমার এই ঘরোয়া ছেলে টাকে যদি একটু বের করতে পারো ঘর থেকে। আমার যে এখন অস্বস্তি লাগছে বাবা।

“আচ্ছা আন্টি আমি দেখছি। আসছি আমরা।

“আচ্ছা !
.
বিকালের দিকে ফরহাদ ওরা সবাই এসে হাজির নির্ঝরের বাসায়। একে একে সব কথা শুনছে তারা। সব কিছু শোনার পর ফরহাদ বলে উঠে,

“তার মানে অর্ণব মেহেরিন’র ছেলে না।

আরিফ বলে উঠে,
“অপরাধ বোধ তো এখন আমাদের মনেও জাগছে। ইশ এই মেয়েটাকে নিয়ে যে কতো কিছু ভেবেছি আমরা।

ঈশান বলে উঠে,
“একটা মানুষ সম্পর্কে না জেনে এতো কিছু ভাবা মোটেও উচিত হয় নি আমাদের।

ফরহাদ কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইল। সেদিন ক্লাবে ঘটা ঘটনার কথা মনে পড়ল তার। আসলেই সেদিন অনেক কিছু হয়েছিল। নির্ঝর তখন কিছুই বলে নি। আর বলে নি বলেই এখন অপরাধবোধে জাগছে তার মানে। নিজেকে অপরাধী ভাবছে সে। নীলিমা বলে উঠে,

“এখন কি করবে বলো,‌নির্ঝরের তো একটা ব্যবস্থা করতে হবে বলো।

ফরহাদ উঠে দাঁড়িয়ে বলি,
“দেখছি আমি!

বলেই বাইরে চলে গেল। তার পিছু পিছু ঈশান আর আরিফ ও গেল। খানিকক্ষণ পর ফিরেও এলো এসে গেল নির্ঝরের ঘরের দিকে। নির্ঝরের ঘর বাইরে থেকে লক করা। ফরহাদ দরজায় নক করে বলে,

“নির্ঝর!

“কে?

*আমি!

“ফরহাদ!

“শুধু ফরহাদ না ঈশান আরিফ আমরা সবাই আছি।

“তো কি হয়েছে?

“দরজা খোল?

“কেন?

“বাইরে যাবো?

“কেন?

“শপিং করতে!

“আমি যাবো না তোরা যা।

“কেন, চল আমাদের সাথে।

“ভালো লাগছে আমার।

“কিন্তু শপিং তো তোর করতে যাবো।

“আমার!

“হ্যাঁ, তোর! তোর আর মেহেরিন’র। তোদের বিয়ের শপিং
মেহেরিন একটু আগেই ফোন করেছিল আমায়। বলেছে তোকে নিয়ে যেন বের হই।

“সত্যি!

নির্ঝরের আওয়াজ শুনে ফরহাদ বুঝতে পারল নির্ঝর টোপ গিলেছে। এবার তাকে বের করে আনা যাবে। ফরহাদ বলে উঠে,

“তোকে মিথ্যে কেন বলবো?

নির্ঝর দরজার ওপাশ থেকে বলে উঠে,
“তাহলে আমাকে না ফোন করে তোদের কেন বলল!

নির্ঝর এভাবে তাদের জাল ধরে ফেলবে ফরহাদ ভাবে নি। আরিফ নির্ঝরের ফোন নাম্বার ডায়াল করে দেখে নির্ঝরের ফোন বন্ধ। সে বুদ্ধি করে বলে উঠে,

“কেন বললো তোকে ফোন দেই নি। তোর ফোন তো বন্ধ তাই কথা বলতে পারে নি।

ঈশান বলে উঠে,
“ফোন করল ল্যান্ড লাইনে। আমরা সবাই তখন নিচে ছিলাম। তাই আমাদের বলল কথাটা।

“বিশ্বাস না হলে আন্টি কে জিজ্ঞেস কর, আন্টি ও ছিল সেখানে!

নীলিমা বলে উঠে,
“নির্ঝর দরজা খোল,‌ ওরা সব সত্যি বলছে!

ওপাশ থেকে আর আওয়াজ এলো না। সবাই ভাবল হয়তো নির্ঝর কথাটা বিশ্বাস করে নি। হুট করেই দরজা খোলার শব্দ পেল সবাই। ফরহাদ হাত দিয়ে দরজা ধরতেই দরজা খুলে গেল। সবাই ভিতরে এসে দেখে নির্ঝর আলমারি থেকে সব জামাকাপড় বের করে আয়নায় দাঁড়িয়ে দেখছে। নির্ঝরের অবস্থা একদম বেহাল। মাথার অগোছানো চুলের মতন তাকেও দেখতে অগোছালো লাগছে। সবাই অবাক হয়ে দেখছে তাকে। নির্ঝর আয়নায় দাঁড়িয়ে বলে উঠে,

“কখন ফোন করেছিল মেহেরিন!

ঈশান বলে উঠে,
“এই ৩০ মিনিট!

আরিফ বলে উঠে,
“এই ‌২০ মিনিট!

দু’জনে একসাথে বলায় নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ফরহাদ বলে উঠে,

“আরো ১০ মিনিট। মানে ফোন করেছে ১ ঘন্টা হলো। তোর এভাবে মিনিট করে কেন বলছিস!

নির্ঝর অবাক হয়ে বলে উঠে,
“কি এক ঘন্টা আর তোরা আমায় এখন বলছিস! গাধার দল গুলো!

বলেই নির্ঝর তাড়াতাড়ি একটা হুডি দিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। তার কান্ডকারখানা দেখে সবাই হেসে উঠে!
.
নির্ঝর তৈরি হবার পরও বারবার আয়নায় দেখছে নিজেকে। ফরহাদ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,

“সুন্দর লাগছে দেখতে, এতোবার দেখার দরকার নেই!

নির্ঝর মুখ ভেংচি কেটে বলে,
“আমি জানি আমি সুন্দর!

ঈশান বলে উঠে,
“ঠিক আছে ভাই এখন চল, লেট হচ্ছি আমরা!

“হুম, চল!

অতঃপর সবাই বের হলো। নীলিমা ছেলেকে স্বাভাবিক দেখে অনেকটা খুশি। নির্ঝর গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি ড্রাইভ করছে। তার পাশে ফরহাদ বসা। পিছনের সিটে ঈশান আর আরিফ। ফরহাদ নির্ঝর কে উদ্দেশ্য করে বলে,

“এতো দেখা করার শখ অথচ একবার ফোন করে জিজ্ঞেস করবি না। এটা কেমন কথা বল আরিফ!

“কি জানি ভাই, যার যার মন তার তার ব্যাপার। আমি আর তুই তো এক নদীর মাঝি!

ঈশান হেসে বলে উঠে,
“তোরা যে নৌকার মাঝি আমি তার পথিক ঠিক আছে।

তিন জন’ই হো হো করে হেসে উঠলো। নির্ঝর মুখ ভেংচি কেটে চুপ করে গেল। কিন্তু মনে মনে ঠিক’ই ভাবতে লাগলো। আসলেই এতোদিন তার মন খারাপ ছিল কিন্তু আজ মেহু’র কথা বলতেই মনটা হুট করে ভালো হয়ে গেল। যদি সে জানতো মেহুর সাথে কথা বললে মন ভালো হয়ে যাবে তখনই ফোন করে কথা বলে নিতো।
.
নির্ঝর গাড়ি থামাল শপিং মলের সামনে। গাড়ি পার্ক করে চারজন নামল একসাথে। ফরহাদ মেহেরিন কে কল করে জিজ্ঞেস করল সে কোথায়? মেহেরিন জানাল সে এসে গেছে। তারা সবাই শপিং মলে ঢুকে মেহেরিন কে খুঁজতে লাগল। হঠাৎ করেই অর্ণবের আওয়াজ পেল। সামনে তাকিয়ে দেখে অর্ণব ‌দৌড়ে তার কাছেই আসছে

“ড্যাডি ড্যাডি!

“অর্ণ!

কিঞ্চিত হেসে কোলে নিল অর্ণব কে। সামনে তাকিয়ে দেখে মেহেরিন আসছে। তাকে আজ খানিকটা অন্যরকম লাগছে। কেন লাগছে তার জানা নেই তবুও অন্যরকম লাগছে। মেহেরিন’র ঠোঁটে হালকা হাসি। সে হেসে নির্ঝরের কাছে এলো। বলে উঠে,

“বিয়ের এখনো অনেক দিন বাকি, আপনি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের শপিং করার সিদ্ধান্ত নিলেন যে!

নির্ঝর অবাক হয়। ভ্রু কুঁচকে ঠোঁটে হাসি রেখে বলে,
“এটা তো আমার না তোমার সিদ্ধান্ত , ফোন করে তো তুমি বললে শপিং করার কথা। আসলে প্রথমে আমিও অবাক হয়েছি এই কথা শুনে!

“না নির্ঝর আপনি ভুল করছেন। আমি বলি নি। ফোন তো ফরহাদ‌ করলেন। উনি বললেন যে…

দুজনেই চুপ হয়ে গেল। একজন অন্যজনের মুখের দিকে তাকাতে লাগল। অতঃপর পিছনে ফিরে দেখে….

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here