অনুভূতিতে তুমি পর্ব-১২

0
2502

#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_১২

“বাহ! ভাবা যায়, আমাদের নির্ঝর তাহলে কারো প্রেমে পাগল হলো। এতোটাই পাগল হলো যে ঘর থেকে বের হওয়াই ছেড়ে দিল। থাক ভাবিস না, তোর বন্ধুরা আছে কি করতে। দিয়ে এলাম তোকে তোর জানের আছে। এখন ঠিক থাকবি তুই। ধন্যবাদ দেবার দরকার নাই। ৫ হাজার টাকা দিলেই চলবে দোস্ত। অনেক কষ্টে আছি। একেক জনকে পাঁচ টাকা দিস। হ্যাপি ডেট ডে! অল দা বেস্ট হি হি হি!

নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে মেসেজ টা পড়ে ফোনটা বন্ধ করে রেখে দিল। ফরহাদের মেসেজ ছিল এটা। নির্ঝরের কাছে এখন সবটা পরিষ্কার। চোখ তুলে সামনে তাকিয়ে দেখে মেহেরিন অর্ণব কে আইসক্রিম খাওয়াচ্ছে। অর্ণবের ঠোঁটের কোনে আইসক্রিম লেগে গেল। মেহেরিন টিস্যু দিয়ে আইসক্রিম’র মুছে দিচ্ছে। অর্ণব দাঁত বের করে হেসে দিল। অর্ণবের হাসি মেহেরিন’র ঠোটের কোনের হাসি ফুটাল। মেহেরিন’র হাসি নির্ঝরের কিঞ্চিত হাসির কারন হলো।

নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে মেহেরিন বলে উঠে,
“কোথায় তারা?

“ওদের একটু কাজ ছিল তাই চলে গেছে।

“তাহলে কি আমরা একাই শপিং করবো।

“ঘুরে দেখা যাক, চলো!

অর্ণব দাঁত বের করে হেসে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ড্যাডি!

নির্ঝর উঠে দাড়িয়ে অর্ণব কে কোলে তুলে নিল। মেহেরিন উঠে এসে পাশে দাঁড়াল নির্ঝরের। একসাথে হাঁটা শুরু করল তারা। কেনাকাটা করল কিছু। অর্ণব কিছুক্ষণ নির্ঝরের কোলে ছিল আবার কিছুক্ষণ নির্ঝরের হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিল।‌ পাশ দিয়ে কয়েকজন যাচ্ছিল আর তাদের দেখে নিজেরা নিজেরা’ই বলতে লাগল,

“কিউট ফ্যামিলি নাহ!

“হুম, অনেক কিউট!

কথাটা নির্ঝরের কানে বাজল। সে তাকাল তাদের দিকে। দুটো মেয়ে যাচ্ছিল। নির্ঝর কে দেখে তারা দুজনেই হেসে দিল!

মেহেরিন আর নির্ঝর দোকানে গেল। সেলসম্যান তাদের বসতে বলল। নির্ঝর অর্ণব কে কোলে বসিয়ে বলল,
“বিয়ের জন্য লেহেঙ্গা দেখাতে!

তারা অনেক রঙের লেহেঙ্গা দেখাল। সাইজ জানতে চাইলে নির্ঝর মেহেরিন কে দেখাল। লোকটা একটু বিভ্রান্ত হলো। নির্ঝর একটা সাদা রঙের লেহেঙ্গা পছন্দ করল মেহেরিন’র জন্য। তাকে বলল একবার এটা একটু আয়নার সামনে গিয়ে দেখে আসতে। মেহেরিন সেটা নিয়ে উঠে গেল। নির্ঝর অর্ণব’র সাথে কথা বলতে লাগল। সেলসম্যান জিজ্ঞেস করল,

“স্যার ছেলেটা কি আপনার!

নির্ঝর হেসে বলল,
“হুম!

“উনি কি আপনার ওয়াইফ!

“হুম।

“ওহ তাহলে আপনাদের ম্যারেজ অনিভার্সেরি! কনগ্রেচুলেশন স্যার!

নির্ঝর আর কথা বাড়াল না। শুধু মুচকি হেসে বলল,
“ধন্যবাদ!

দরকার ছিল না কোন কথা বাড়ানো। অর্ণব কে নিজের ছেলে হিসেবে মেনেই নিয়েছে সে। মেহুর প্রতি কোন অভিযোগ নেই। বরং মেহুর জন্য তার সম্মান বেড়ে গেছে। নিজের ভাবনা চিন্তার জন্য সে নিজেই লজ্জিত। কিন্তু এমন একটা পরিবার নিয়ে শুধু ১ বছর’ই হবে তার যাত্রা। হঠাৎ মাঝপথেই থেমে যাবে সবকিছু। তখন নির্ঝর ও আবার আগের মতো হয়ে যাবে। নিজের স্বাধীনতা নিয়ে থাকবে সে! এসব ভেবে ওপাশে তাকিয়ে দেখে মেহু আয়নায় লেহেঙ্গা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশে একটা মেয়ে তাকে হেল্প করছে। মেহু পেছনে ঘুরে নির্ঝরের দিকে তাকাতেই নির্ঝর ইশারায় বলল,

“সুন্দর!
.
ফরহাদ, ঈশান আর আরিফ দৌড়াতে দৌড়াতে বেলকনিতে এসে দাঁড়িয়েছে। অনেক কষ্ট করে দরজা আটকানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু আটকানোর সময় দরজার মাঝে হকি স্টিক রেখে দিল। তারা কোনোমতেই দরজা আটকাতে সক্ষম হলো না। দরজা ছেড়ে দিয়ে তিন কোনাই দাঁড়াল তিনজন!

নির্ঝর বাঁকা হেসে হকি স্টিক টা কাঁধে নাই বলল,
“তোদের পাঁচ হাজার টাকা দিতে এসেছি আর তোরা দেখছি পালিয়ে যাচ্ছিস।

ঈশান বলে উঠে,
“আরে ইয়ার, আমরা তো তোর হেল্প করছিলাম।

“তাই তো নির্ঝর! এতো কিছু করলাম যাতে ভাবির সাথে তুই সময় কাটাতে পারিস।

“তোর কি মনে হয় না তোর আমাদের ট্রিট দেওয়া উচিত!

নির্ঝর তিন জনের দিকে তাকাল।মাথা নাড়িয়ে বলল,
“ট্রিট! হ্যাঁ সেটা তো তোদের দিতেই হবে।

বলেই হকি স্টিক নিয়ে মারতে লাগল তাদের। তিন জন’ই দৌড়াতে লাগল, বেশ মারামারি চলছে। তিন’জনকেই মারছে নির্ঝর।
.
মেহেরিন সোফায় বসে কাছ করছে, নিচে অর্ণব আঁকছে। আকাঁ শেষ করে, অর্ণব উঠে এলো মেহেরিন’র কাছে। মেহেরিন কোলটুকু দখল করে কাগজ টা মেহেরিন’র হাতে দিল। মেহেরিন চোখ বুলিয়ে দেখে ছবিতে তিন জনকে দেখা যাচ্ছে। মেহেরিন’র ধারনা এটা মেহেরিন নির্ঝর আর অর্ণব। মেহেরিন কিঞ্চিত হেসে অর্ণব কে জিজ্ঞেস করল,

“এরা কারা অর্ণব!

অর্ণব হাত দিয়ে দেখাল,
“মাম্মি, অর্ণ আর ড্যাডি!

মেহেরিন মুচকি হেসে অর্ণব’কে জরিয়ে বলে,
“তাই!

অর্ণব হেসে মাথা নাড়ায়। মেহেরিন তাকিয়ে দেখে ছবিটায়। মাঝখানে অর্ণব! এর একপাশে নির্ঝর আরেকপাশে মেহেরিন। দু’জনের হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে অর্ণব। মেহেরিন একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ভাবছে, কতোটা সহজে আপন করে নিয়েছে সে নির্ঝর কে। মিশতে পারছে,‌সবার সাথে পারবো তো। ধীরে ধীরে অর্ণব বড় হবে। তখন অন্যদের সাথে না মিশলে যে তাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। একা একা অর্ণব কিভাবে কি করবে।

ভাবনার ছেদ ঘটল ফোনের রিংটোনে। মেহেরিন তাকিয়ে দেখে নির্ঝরের কল। অর্ণব নাম্বার দেখেই বলে উঠে,

“ড্যাডি, ড্যাডি।

মেহেরিন ভ্রু কুঁচকালো। অর্ণব কি করে জানে এটা নির্ঝরের কল। নাকি এইভাবে বলল। এসব নিয়ে বেশি কিছু ভাবল না। মেহেরিন কল টা ধরতেই ওপাশ থেকে নীলিমা’র স্বর ভেসে উঠলো। নীলিমার কন্ঠ অনেকটা অস্থির লাগছিলো তার কাছে। মেহেরিন কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই নীলিমা একদমে সবটা বলল। মেহেরিন সব টা শুনে শান্ত গলায় বলল,

“আমি আসছি!

অর্ণব মেহেরিন’র মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। মেহেরিন অর্ণবের কপালে চুমু খেয়ে বলল,
“অর্ণ সোনা তুমি বাসায় থাকো। মাম্মি কাজ শেষ করে খুব জলদি চলে আসবো ঠিক আছে।

অর্ণব বাধ্য ছেলের মতো মাথা নাড়াল। মেহেরিন মিস মারিয়া কে ডেকে অর্ণবকে দেখতে বলল। অতঃপর গাড়ির চাবি নিয়ে বের হয়ে গেল। ছোট্ট অর্ণব মেহেরিন’র যাবার দিকে তাকিয়ে রইল।
.
মেহেরিন দাঁড়িয়ে আছে নির্ঝরের বেডরুমে। এর আগেও একবার এসেছিল এই রুমে, এনগেজমেন্ট’র দিন! এরপর আজ এই প্রথম বার। তার সামনে বিছনায় আধশোয়া অবস্থায় বসে আছে নির্ঝর। তার হাত ব্যান্ডেজ করা। গুরুত্বর আঘাত পেয়েছে। পাবার’ই কথা! সিঁড়ি থেকে পড়ে গেল ব্যাথা পাবে তা স্বাভাবিক। কিন্তু একইভাবে যদি চারজন পরে যায় আর তিনজন যদি একজনের উপর পড়ে তাহলে গুরুতর ব্যাথা পাওয়া স্বাভাবিক। আর এই কান্ড করেছে নির্ঝর! হাতে আঘাত পেয়েছে, হাতের কনুই অবদি ব্যান্ডেজ করা। বাকিরাও আছে। তারাও চোট পেয়েছে। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। নির্ঝর মাথা নিচু করে একটু পর পর চোখ তুলে তাকাচ্ছে। নিজেকে আসামি মনে হচ্ছে তার। মেহুর চোখের চাহনি মোটেও ঠিক লাগছে না তার।
এদিকে মেহেরিন ভাবছে তারা পড়লো কিভাবে, বাচ্চা নাকি। এতো বড় বড় ছেলে হয়ে কি না এভাবে পড়ে গেল। এর সাথে কিনা অর্ণব থাকবে আর কয়েকদিন পর। কি হবে তখন…? ভাবতেই মেহেরিন’র মাথা ধরে যাচ্ছে। সে তাদের থেকে চোখ সরিয়ে রিদুয়ান’র দিকে মুখ ঘুরল। জিজ্ঞেস করল,

“ডাক্তার কি বলেছে?

“বলেছে কয়েকদিন রেস্ট এ থাকতে। হাতের নড়াচড়া একদম বন্ধ!

“ওহ আচ্ছা! তা কদিন?

“দেড় মাস!

“ওহ!

রিদুয়ান কিছুটা সংকোচ এ বলেন,
“মেহেরিন বলছিলাম কি?

“হুহ!

“বিয়ের ডেট টা পিছিয়ে নিলে কেমন হয়, আসলে নির্ঝরের সাড়তে তো সময় লাগবে।

মেহেরিন চুপ হয়ে নির্ঝরের দিকে ঘুরল। নির্ঝর তাকিয়ে আছে এবার মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন শান্ত গলায় বলে উঠে,
“না! বিয়ের তারিখ যেদিন ছিল সেদিনই হবে।

নীলিমা অবাক হয়ে বলে,
“নির্ঝরের এই অবস্থায়!

“বিয়ের কার্ড ছাপা হয়ে গেছে।

“কিন্তু দেওয়া তো হয় নি, গেস্টদের দেবার আগেই ডেট চেঞ্জ করলেই তো হয়।

মেহেরিন এবার শক্ত গলায় বলল,
“না বিয়ে যেদিন হবে বলেছিলাম সেদিন’ই হবে।

নির্ঝর বলে উঠে,
“আমি এই ভাঙ্গা হাত নিয়ে বিয়ে করবো?

“কবুল বলবেন তো মুখ দিয়ে, হাতের দরকার কি?

“তাই বলে নিজের বিয়েতে কি নাচতেও পারবো না।

মেহেরিন নির্ঝরের চোঁখের দিকে তাকিয়ে বলে,
“হাঁটতে গিয়েই এই অবস্থা, নাচানাচি করে আর হাত পা ভাঙ্গার দরকার নেই!

বলেই বের হয়ে গেল রুম থেকে। নীলিমা একটু নারাজ হলো। সে কিছু বলতে নিবে তার আগেই রিদুয়ান থামিয়ে দিল। বলে উঠে,

“মেহেরিন কথাটা ভুল বলে নি।

*তুমি এখন ওর সার্পোট টানছ, দেখছ না আমার ছেলেটার কি অবস্থা?

“আমি সার্পোট টানছি না‌। তোমরা হয়তো বুঝতে পারছো না, বিয়ের কথা টা মিডিয়ায় ছড়িয়ে গেছে। খান দের যেমন একটা রেসপেক্ট আছে তেমন চৌধুরীদেরও। এখন বিয়ের তারিখ বদলালে অনেক সমস্যা হবে। তাই দরকার নেই এসবের।

নির্ঝর বলে উঠে,
“কিন্তু ড্যাড?

“আর কোন কথা না নির্ঝর, যা বলেছি তাই!

নীলিমা উঠে রাগে বের হয়ে যায়। তার পিছু পিছু বের হয় রিদুয়ান। ঈশান হেসে বলে,

“কাহিনী কি হলো, ভাবি তো দেখছি ডেট পিছুতে চাইছে না।

আরিফ হেসে বলে,
“শেষমেষ ভাঙা হাত নিয়ে বিয়ে করতে যাবি নির্ঝর!

ফরহাদ বলে উঠে,
“বিয়েতে মেয়েদের পিছনে ফ্লাটিং করা শেষ তোর!

নির্ঝর রেগে সব গুলোকে লাথি মেরে বিছানা থেকে সরায়। শুয়ে পড়ে বিছানায়, ভাবছে..

“এই মেয়ের মাথায় নির্ঘাত কিছু আছে। কোন কারন ছাড়া কিছু করে না এই মেয়ে। কিন্তু কি সেই কারণ? কি আছে এই তারিখে!
.
চাঁদের আলো আজ দেখা যাচ্ছে না। কে জানে চাঁদ কোথায় লুকিয়ে গেছে। বেশ গরম পড়ছে ইদানিং। বৈশাখ তো চলে এলো তবুও কেন বৃষ্টি হচ্ছে না মেহেরিন জানে না। বৃষ্টির প্রকোপে গরম কিছুটা হলেও কমতো।অর্ণব ঘুমিয়েছে অনেকক্ষণ। আজও ঘুম আসবে না মেহেরিন’র। ঘর পুরো অন্ধকার, টেবিলের কাছে ল্যাম্পশেডের বাতিটা জ্বলছে শুধু। মেহেরিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে টেবিলের ডয়ার খু্ললো। একটা কার্ড এলো তার হাতে। তারিখে বড় বড় করে লেখা ২৭ই বৈশাখ! হ্যাঁ এই দিনেই তার আর নির্ঝরের বিয়ে কিন্তু এটা তারও আগে লেখা। কোন এক বিশেষ কারণে লিখেছিল সে।

কার্ডের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মেহেরিন’র কাছে মনে হলো কেউ কথা বলছে। মেহেরিন আশপাশ তাকাল। পুরো ঘর এখন আলোকিত,‌বিছানায় অর্ণব নেই। কারো গলার স্বর তার কানে বাজছে। তার গলার স্বরে মেহেরিন’র শরীর শিউরে উঠলো। মেহেরিন নিজেকে নিজে’ই দেখল। সে দেখছে তার সামনে কেউ দৌড়িয়ে এই ঘরে এলো। পেছন পেছন একজন আসছে আর বলছে,

“মেহেরিন! মেহেরিন দাঁড়াও!

কিন্তু সে দাঁড়াচ্ছে না। খিলখিলিয়ে হাসছে সে। মেহেরিন দু চোখ ভরে সেই হাসি দেখছে। এই হাসি টা ছিল ভালোবাসার হাসি। কোন খুদ ছিল না এই হাসিতে। কোন একজন কে দেখে তার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। মেহেরিন পিছনে তাকিয়ে দেখল কেউ একজন ঘরে প্রবেশ করেছে। ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিল সে। মেহেরিন তাকে দেখে আসছে। সে হেসে বলে,

“হুম! এবার কোথায় পালাবে মেহেরিন!

মেহেরিন হেসে বলে,
“আমাকে ধরে দেখাও আগে!

বলেই মেহেরিন দৌড়াতে থাকে। সেও তার পিছন পিছন দৌড়ায়। দুজনে পুরো ঘর জুড়ে দৌড়িয়ে যাচ্ছে। মেহেরিন কার্ড টা শক্ত করে ধরে দেখছে দুজনকে। তার চোখের কোনে জল জমতে শুরু করেছে। এক পর্যায়ে সে ধরে ফেলল মেহেরিন কে। দুই বাহু দিয়ে আঁকড়ে ধরল মেহেরিন কে। তার থিতুনি রাখল মেহেরিন’র ঘাড়ে। কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলল,

“ভালোবাসি তোমায়, অনেক ভালোবাসি!

মেহেরিন লজ্জায় লাল হয়ে গেল।‌ মাথা নিচু করে নিল সে!…
এসব দেখে মেহেরিন’র এখন কান্না পাচ্ছে। খুব কান্না পাচ্ছে। কিন্তু সে কাঁদবে না। কোনমতে কাঁদবে। কেন কাঁদবে কার জন্য কাঁদবে। এমন একটা অমানুষের জন্য! মেহেরিন চোখ বন্ধ করে মুখ ঘুরিয়ে নিল। ওমনি সব কিছু হারিয়ে গেল। আর কারো হাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছে না মেহেরিন। সামনে তাকিয়ে দেখে সব হারিয়ে গেছে ধোঁয়াশার মাঝে।‌ কিছু নেই আশপাশ। শুধু অন্ধকার! এই আঁধারের মাঝেই তার অতীত যেন তলিয়ে গেছে।‌ মেহেরিন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।‌ পর্দা ভেজ করে শীতল বাতাস এসে স্পর্শ করল তাকে। চোখ বন্ধ করে নিল মেহেরিন। এক ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ল চোখের কার্নিশ বেয়ে। মেহেরিন’র মনে হলো সে হেরে গেছে। অতীতের কাছে হেরে গেছে সে। সে বলেছিল সে কাঁদবে না কিন্তু তার চোখের অশ্রু বেইমানি করল তার সাথে। কাঁদিয়ে ছাড়ল তাকে। কেন এতো বিরহ! কি আছে এতো বিরহের মাঝে। কেন ভালোবাসে মানুষ? শুধুই কি কষ্ট পেতে।‌ কি জানি! আজ পর্যন্ত আমি যা পেয়েছে তা শুধুই কষ্ট। ভালোবেসে একের একের পর এক কষ্ট। এখন তো ভালবাসতেও ভয় হয় আমার। কাকে ভালোবাসব? নিজের চোখের অশ্রু যেভাবে বেইমানি করে তখন আর কোন মানুষের উপর বিশ্বাস কর!

কথা গুলো বরাবর বাজছে মেহেরিন’র মনে। সে এক পা এক পা করে এগিয়ে এলো বেলকনির দিকে। আহ্ চারদিক কি অন্ধকার। সব কিছু মনে হচ্ছে মিলিয়ে গেছে এই আঁধারে। রাতের চাঁদ টাকেও হারিয়ে ফেলল এই অন্ধকার। অন্ধকার আছে বলেই আলোর এতো দাম! কিন্তু এই অন্ধকারকে কেউ দাম দিচ্ছে না। তুচ্ছ মনে করে সবাই! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের অশ্রু মুছে ফেলল মেহেরিন।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here