অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ #পর্ব-১০

#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-১০
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★অতিবাহিত দিনের সাথে যোগ হয়েছে আরও একটি সপ্তাহ। ফাল্গুন মাস পেরিয়ে চৈত্রতে পদার্পণ করেছে। শীতের আবহাওয়া অনেক টা কমতে শুরু করেছে। বাতাসের আনাগোনায় হালকা গরমের আভাস বিদ্যমান। কখনো প্রখর রোদের তপ্ততা, তো কখনো আবার শীতল বাতাসের আচ্ছন্নতা।

সময় যেমনই হোক, প্রহরের জীবনে যেন আষাঢ়ের ঘনঘটা বইছে। নব ভাবপ্রবনের ঝুম বর্ষার আর্দ্রতা ভাসাচ্ছে তাকে। শত প্রচেষ্টা করেও নিজেকে এই বর্ষনে ভেজা থেকে আটকাতে পারেনি। সব সংকল্পই ওর ব্যার্থ হয়েছে। বারবারই চরম ভাবে পরাজিত হতে হয়েছে ওকে। তবুও জীবনের এই নির্মম পরাজয়ে কেন যেন কোন খেদ নেই। নেই কোন গ্লানি। বরং এই পরাজয়েই মাঝেই যেন অসীম এক জয় লুকিয়ে আছে। এই পরাজয়েই আছে অপরিসীম সুখআনন্দের পূর্বাভাস। তাইতো নিজেকে আর আটকাতে চায় না সে। ভাসাতে চায় এই নব আবেগের জোয়ারে। এই প্রথম আর ভয় হচ্ছে না ওর।

খুশি নামের বর্ষা ওকে ভিজিয়ে দিয়েছে। সে চেয়েও পারেনি নিজেকে বাঁচাতে। এই কয়দিনে খুশি ওর চারপাশের দেয়াল ভেঙে ওর মন পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হয়ে গেছে।খুশি জিতে গেছে তার চ্যালেঞ্জ। সে যে এখন শরীর ভেদ করে হৃদপিণ্ডে হামলা করেছে।ধীরে ধীরে হৃদপিণ্ডের জমিন দখল করে নিয়েছে। মন মস্তিষ্কেও তার বিচরণ চলছে। সে যেন আমার মাঝে আমিটাকেই সরিয়ে দিয়ে সর্বত্র নিজের রাজত্ব বিরাজ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তার এই ষড়যন্ত্র যে সফল হওয়ার পথে, সেটারও আভাস পাচ্ছে প্রহর। জানা নেই শেষ পর্যন্ত ওর মাঝে ওর নিজের বলতে কিছু থাকবে কিনা। মেয়েটা যে ওকে নিঃস্ব করার ধান্দায় আছে।

ভার্সিটিতে নবীন বরণ উৎসব আজ। ভার্সিটি, কলেজের সব স্টুডেন্ট একসাথেই অংশগ্রহণ করছে। সেই উপলক্ষে জমজমাট আয়োজন করা হয়েছে। পুরো ক্যাম্পাস নতুন বধুর সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। রঙ বেরঙের কাপড়চোপড় আর সাজসজ্জায় আবৃত স্টুডেন্ট দের পদচারণায় মুখরিত পরিবেশ। ক্যাম্পাসের মাঠে বড়ো করে স্টেজ করা হয়েছে। সেখানে স্টুডেন্ট রা নিজেদের ইচ্ছেমতো নানান রকমের পারফরম্যান্স দিচ্ছে। নাচ গান সহ আরও অনেক রকম প্রতিভা প্রদর্শন করছে।

তবে সেসবে প্রহরের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। প্রহর একপাশে একটা চেয়ারে বসে আছে। পাশেই ফাহিম বসে আছে। ফাহিমের জোরাজুরিতে পার্পল কালারের একটা পাঞ্জাবি পড়েছে সে। তবে পাঞ্জাবি পরে খুবই আনকম্ফোর্টেবল লাগছে ওর। এসব ওর একদমই ভালো লাগে না। ওতো আজ আসতোও না। তবে আজ খুশি নাকি স্টেজে পারফরম্যান্স দিবে। কদিন ধরে সেটা বলে বলে ওর কান ঝালাপালা করে দিয়ে দিয়েছে। যদিও উপরে না দেখালেও মনে মনে প্রহর নিজেও আগ্রহী খুশির পারফরম্যান্স দেখার জন্য। শুধুমাত্র সেই জন্যই তো ওর আসা। নাহলে এসব ফাংশনে ও কখনোই আসে না। ফাহিমও প্রথম প্রথম খুব অবাক হয়েছিল প্রহরকে এখানে দেখে। তবে পরে সে বুঝতে পেরেছে আসল কারণ টা। প্রহর না বললেও ওর মনোভাব ঠিকই বুঝতে পারছে ফাহিম। প্রহরের জীবনের এই পরিবর্তন দেখে সে সত্যিই খুব খুশি। বন্ধু টার জীবন এবার বুঝি একটু লাইনে আসবে।

প্রহরের নজর শুধু খুশিকেই খুঁজছে। আসার পর একবারও দেখেনি। আজকাল ওর নজর শুধু খুশির খোজেই থাকে। মেয়েটা যে ওর অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। যে আগে ওর কাছে মহা বিরক্তির কারণ ছিল। সেই এখন যেন ওর দৃষ্টি সীমানার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাইতো নজর শুধু তাকেই খোঁজে। প্রহরের এই অধীরতা দেখে ফাহিম দুষ্টু হেসে বললো।
–সবুর কর ভাই। সবুরের ফল মিঠা হয়। ভাবিজী অবশ্যই আইবো।

প্রহর অপ্রস্তুত হয়ে বললো।
–হোয়াট রাবিশ। এমন কিছুই না। আমি কেন ওকে খুঁজতে যাবো?

–এখন এক্সাক্টলি কি কারণে খুজতাছস। হেইডা তো তুইই ভালো জানোস। আমি অবলা প্রাণী কিভাবে বলবো? তয় শুনছি ভাবিজী নাকি পারফরম্যান্স এর জন্য রেডি হইতাছে।

ওদের কথার মাঝেই প্রহরের নজর গেল স্টেজের পাশে। খুশি এইমাত্র এসে দাঁড়িয়েছে ওখানে। প্রহরের নজর খুশিতে আবদ্ধ হতেই আশেপাশের সবকিছু অদৃশ্য হয়ে গেল। ফাহিমের বকবকও ওর কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে খুশির পানে।খুশি ওর পারফরম্যান্স এর জন্য লাল পাড়ের সাদা জর্জেট জরির কাজ করা শাড়ি পড়েছে। সাথে হরেক রকম ভারি অর্নামেন্ট আর অপরুপ সাজে সজ্জিত।যেন পুরোনো দিনের কোন রাজকুমারীর মতো লাগছে। এই প্রথম খুশির এমন রুপ দেখছে প্রহর। প্রহরের হৃদপিণ্ডে যেন ঝংকার দিয়ে উঠছে। চোখের নজর স্থির হয়ে গেছে।

খুশি প্রহরদের দেখতে পেয়ে হাত নাড়িয়ে ওদেরকে ইশারা করলো। প্রহরের ঘোর কাটলো।মাথা ঘুরিয়ে চোখ বন্ধ করে নিজেকে একটু সামলে নিল সে। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে খুশির দিকে এগিয়ে গেল ওরা। খুশির কাছে এসে ফাহিম বলে উঠলো।
–ওয়াও ভাবিজী কি লাগছো। একেবারে ফাটিয়ে দিয়েছ। আজতো কারোর নজর সরবেই না তোমার থেকে।

খুশিও গদগদ হয়ে বললো।
–শুকরিয়া শুকরিয়া দেবরজী। আসলে আজকে আমার পারফরম্যান্সে আমি একটা রাজকুমারীর রোল প্লে করছি। তাই ওরা আমাকে এতো সাজিয়ে একেবারে শোপিস করে দিয়েছে।

–ওকে ওকে অল দ্যা বেস্ট ভাবিজী।

ফাহিমের একটা ফোন আসায় ও ওখান থেকে একটু দূরে চলে গেল। খুশি এবার প্রহরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–কি ব্যাপার কিছু বললে না? আমাকে কেমন লাগছে? আমার জন্য নাহয় একটু মিথ্যে প্রসংশাই করে দাও।

প্রহর কি বলবে? খুশিতো আর জানে না যে, সে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। কোন ভাষায় কি বললে খুশির সৌন্দর্য জাস্টিফাই হবে তা আপাতত জানা নেই প্রহরের। তবুও খুশির মন রক্ষার্থে সে গলা খাঁকারি দিয়ে বললো।
–ঠিকই লাগছো।

খুশি মুখ কুঁচকে বললো।
–ঠিকই লাগছে! এটা আবার কেমন প্রসংশা? মনে হচ্ছে তোমার বাথরুম চেপেছে। আর সেটা অনেক কষ্টে চেপে ধরে কথা বলছ। তুমি এতো কিপটুস কেন? প্রসংশা করতেও কিপ্টামি করো। যেন প্রসংশার ওপর কোটি টাকার ট্যাক্স লেগেছে। কিপ্টার দাদা চিপ্টা হুহ্। আরে প্রসংশা করতে হলে আমার মতো মন খুলে করো। এইযে যেমন তোমাকে আজ এই পাঞ্জাবি টাতে চরম,মারাত্মক,ভয়ংকর লেভেলের হ্যান্ডসাম লাগছে। মন চাচ্ছে এখুনি একটা জোরদার পাপ্পি দিয়ে দেই।

খুশির কথায় প্রহরের বিষম উঠে গেল। মেয়েটা সত্যিই পাগলী। মুখে যা আসে তাই বলে দেয়। মেয়েটা একদিন ওর হার্ট অ্যাটাক করিয়েই ছাড়বে।
খুশি কিছুটা দূরে দিয়াকে দেখতে পেয়ে, ওর দিকে হাত উঁচু করে নাড়াতে লাগলো। তখনই হঠাৎ প্রহরের চোখ পড়লো খুশির কোমড়ের দিকে। খুশির কোমড়ের কাছে শাড়ি একটু সরে গিয়ে কোমড় দেখা যাচ্ছে। প্রহর আশেপাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখলো অনেক ছেলেরাই খুশির দিকে তাকিয়ে আছে। চট করেই যেন প্রহরের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। প্রহর ঝট করে খুশি হাত ধরে নিচে নামিয়ে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো। –স্টপ ইট ইডিয়ট। কি করছ এসব?

খুশি ভ্রু কুঁচকে বললো।
–আমি আবার কি করলাম? আমিতো দিয়াকে ডাকছিলাম।

–দিয়াকে পড়ে ডাকবে। আগে গিয়ে নিজেকে ঠিক করো?

–নিজেকে ঠিক করবো মানে? কি ঠিক করবো?

প্রহর অন্য দিকে তাকিয়ে ইতস্তত ভাবে বললো।
–তোমার কাপড় ঠিক করো।

খুশি নিজের দিকে চোখ বুলিয়ে বললো।
–কই? সবতো ঠিকই আছে।

প্রহর দাঁত চিবিয়ে চোখের কোনা দিয়ে ইশারায় দেখিয়ে বললো।
–তোমার কোমড়,,

খুশি দুষ্টু হেসে বললো।
–ওও এই কথা? চুপিচুপি আামকে চেকিং করা হচ্ছে বুঝি? তা কেমন দেখলে? সুন্দর না আমার কোমড়? একেবারে হট কোমড়।

প্রহরের এবার রাগী কন্ঠে বললো।
–জাস্ট শাট আপ ইডিয়ট। তোমার কোমড় থেকে শাড়ী সরে গেছে। ঠিক করে এসো ওটা।

খুশি কোমড়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো সত্যিই কাপড় সরে গেছে। তবুও খুশি ওর দুষ্টুমি বজায় রেখে বললো।
–ও এটা? শাড়িতো বড়ো আপুরা পড়িয়ে দিয়েছে। আমি এসব পারি না। তবে তুমি চাইলে এটা ঠিক করে দিতে পারো। দাওনা ঠিক করে।

–হোয়াট? হ্যাভ ইউ গন ম্যাড? আমি কেন করবো?

খুশি ভাবলেশহীন ভাবে বললো উঠলো।
–ঠিক আছে না করলে। আমি এভাবেই থাকবো। আমার কোন সমস্যা নেই।এতো সুন্দর কোমড় যখন আছে, তখন প্রদর্শন করাতো দরকার তাইনা? মানুষও তো একটু দেখুক আমার হট কোমড়।
কথাটা বলে খুশি নির্বিঘ্নে সামনের দিকে পা বাড়ালো। তবে এগুতে পারলো না। পেছন থেকে সজোরে টান পড়লো প্রহরের হাতের। খুশি বাঁকা হাসি দিল। প্রহর খুশির হাত শক্ত করে ধরে সামনের একটা ক্লাসরুমের দিকে টেনে নিয়ে গেল। পেছন থেকে খুচি মুচকি হাসছে। সে জানতো প্রহর ওকে কখনো ওভাবে যেতে দিবেনা। এতদিনে একটু হলেও যে সে প্রহরের মনে জায়গা করতে পেরেছে এতটুকু ভরসা পাচ্ছে ও।

প্রহর খুশিকে টেনে ক্লাসরুমে নিয়ে এস সামনে দাঁড় করালো। তারপর গম্ভীর কন্ঠে বললো।
–শাড়ী যখন সামলাতে পারোনা তাহলে এসব পড়ার কি দরকার? ইডিয়ট একটা। এখন চুপচাপ এখানে দাঁড়িয়ে থাকো।
কথাটা বলে প্রহর খুশির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওর শাড়ি ঠিক করে দিতে লাগলো। খুলে যাওয়া সেপ্টিপিন টা আবার ঠিক করে শাড়ির সাথে লাগিয়ে দিচ্ছে। তখনই মহান খুশি দেবি বিশেষ টিপ্পনী কেটে বললো।
–বায়দা মহাসড়ক, এখানে কেউ নেই।তুমি চাইলে এডভান্টেজ নিতে পারো। আই ওন্ট মাইন্ড।

যথাযথ ভাবেই প্রহর একটা রাম ধমক দিয়ে বললো।
–শাট আপ ইডিয়ট। কথা বলার আগে একটু ভেবে চিন্তে বললে কি খুব একটা ক্ষতি হয় তোমার? যখনি মুখ খোল শুধু ফালতু কথাই বলা লাগবে?

খুশি ভেংচি কেটে বিড়বিড় করে বললো।
–হুহ্ কথায় কথায় খালি শাট আপ। সারাজীবনে মনে হয় এই দুইটা ইংরেজি শব্দই শিখেছে। এতো পড়াশোনা করে তাহলে কি লাভ হলো? এরচেয়ে তো আমিই ভালো। টেনেটুনে পাশ করে তাও তো তার চেয়ে ভালো জানি। আর কথা বলার আগে আবার ভাবনা চিন্তার কি আছে? কথা বলা কি কোন ওপেন হার্ট সার্জারী নাকি যে, বোর্ড মিটিং ডেকে কথা বলতে হবে?

বিড়বিড় করে বললেও প্রহরের কান পর্যন্ত ঠিকই পৌঁছালো খুশির কথা। মাথা নিচু করে নিঃশব্দে হাসলো সে। এই মেয়ের কোন গতি নেই। পাগলের পাগলই থেকে যাবে। সাথে বাকিদেরও পাগল করে দিবে।
___

খুশির পারফরম্যান্স এর সময় হয়েছে। প্রহর আর ফাহিম সামনের দর্শক সারিতে বসে আছে।কিছুক্ষণ পরেই পারফরম্যান্স শুরু হয়ে গেল। স্টেজে রাজা মহারাজার দরবারের মতো কিছু লোক সৈন্য সেজে দাঁড়িয়ে আছে। আর দুজন রাজা রানী সেজে বসে আছে। একজন সৈন্য সামনে এসে হাঁক ছেড়ে বললো।
–সাবধান,হুশিয়ার, কটনবার, ম্যাঙ্গোবার,চকোবার, শনি থেকে শুক্রবার। তো যেমনটা আমরা সবাই জানি। আজকে আমাদের রাজকুমারী পরীজানের স্বয়ম্বর হবে।আজ রাজকুমারী সব রাজকুমারদের মাঝ থেকে তার হবু বরকে খুঁজে নিবে। দেখা যাক কে হয় সেই ভাগ্যবান রাজকুমার। তো সবার প্রথমে আমাদের রাজকুমারীকে ডেকে নেই। রাজকুমারী পরিজান হাজির হোওওওওও….

একটু পরে খুশি মাথার ঘোমটা ধরে ধীরে ধীরে স্টেজে এলো। স্টেজের মাঝ বরাবর এসে সুন্দর করে বসলো। প্রহরের নজর আর হৃদপিণ্ড দুটোই খুশিতে আটকে আছে। ব্যাকরাউন্ডে মিউজিক বেজে উঠলো।
♬ নাজার জো তেরি লাগি
♬ মে দিওয়ানি হো গায়ি
♬ দিওয়ানি হো দিওয়ানি, দিওয়ানি হো গায়ি
♬ মাশহুর মেরে ইস্ক কি কাহানি হো গায়ি
♬ কেহ তে হে এ দিওয়ানি মাস্তানী হো গায়ি
♬ দিওয়ানি হো দিওয়ানি, দিওয়ানি হো গায়ি

গানের তালে নাচছে খুশি।আজ যেন খুশির অন্যই এক রুপ দেখতে পাচ্ছে প্রহর। এক মোহয়সী নারীর রুপ দেখতে পাচ্ছে ও। যে চাইলে তার মোহনীয়তার তীরে যে কাওকে সহসাই ঘায়েল করতে পারে। যেমন টা এইমুহূর্তে প্রহরকে ঘায়েল করছে। খুশির তীক্ষ্ণ তীর প্রহরের হৃদয়ের আরপার করে দিচ্ছে।

খুশির নাচ শেষে সে তার আসনে গিয়ে বসলো। সেই সৈন্য টা আবারও হাঁক ছেড়ে বললো।
–তো স্বয়ম্বর আরম্ভ করা হোক। আমাদের রাজকুমারী পরিজানের জন্য শুধু সাধারণ রাজকুমার না।বরং বড়ো বড়ো সেলিব্রিটি এমনকি বড়ো বড়ো সুপার হিরোরাও এসেছে। তো সবার প্রথমে আসছে মাকড়সা মানব।আই মিন স্পাইডার ম্যান। স্পাইডার ম্যান হাজির হোওওও…

সবাই স্টেজের এনট্রির দিকে তাকিয়ে আছে। তবে স্পাইডার ম্যান এলো উপর থেকে। এদিক ওদিক জালি ছড়িয়ে, জালি ধরে ঝুলে ঝুলে এলো। খুশির সামনে এসে বসে বললো।
–রাজকুমারী পরিজান আমাকে আপনার বর হিসেবে গ্রহণ করুন। আমার মতো জীবনসঙ্গী আর একটাও পাবেন না। আরে আমার সাথে থাকলে আপনার জীবনে কখনো গাড়ী ভাড়া লাগবে না। কখনো জ্যামে আটকে থাকার প্রয়োজন হবে না। কাপড় শুঁকানোর জন্য কখনো দড়ির দরকার হবে না। ভেবে দেখুন আমার মতো কাজের লোক আর একটাও পাবেন না।

খুশি বলে উঠলো।
–হ, আর সারাজীবন বসে বসে খালি মাকড়সার জালি পরিস্কার করবো তাইনা? না বাবা না মাফ করুন।

সৈন্য টা এবার নেক্সট ক্যান্ডিডেট বাহুবলীর নাম ধরে ডাক দিল। একটু পরে কাঁধে বিশাল ভারী একটা শস্ত্র নিয়ে ধুপধাপ করে হেঁটে এলো বাহুবালী। খুশির সামনে এসে বললো।
–রাজকুমারী পরিজান আপনি আমাকে আপনার জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করুন। আমার কোয়ালিটি প্রো ম্যাক্স। মানুষ গরুর থেকে দুধ বের করে। আর আমি সোজা চিজ বের করে আনি। মুরগির থেকে ডিমের বদলে অমলেট বের করে আনি। ফল খেতে চাইলে ফলের গাছ শুদ্ধ উপড়ে নিয়ে আসি। কোথাও বেড়াতে গেলে লাগেজ নিতে হবে না। কারণ আমি পুরো বাসাই হাতে করে নিয়ে যাই। আমার মতো ট্যালেন্টেড ব্যাক্তি আর কেউ নেই।

খুশি বলে উঠলো।
–উহুম আপনাকে বিয়ে করা যাবে না। আপনার মাঝে ম্যানুফ্যাক্সারিং ডিফেক্ট আছে।

–কি ডিফেক্ট?

–আমি শুনেছি আপনার নেচার ঠিক নেই। আপনার কাটাপ্পার সাথে গে ওয়ালা সম্পর্ক আছে। তাই আপনি ক্যান্সেল।

এরপর আসে আয়রন ম্যান। সে খুশির সামনে এসে বললো।
–রাজকুমারী আমাকে বিয়ে করুন। আমাকে বিয়ে করলে আপনার শরীরে কখনো আয়রনের ঘাটতি থাকবে না।

এরপর আসে ক্রিশ। সেও এসে নিজের প্রতিভার গুনগান গায়। এভাবে একে একে সব সুপার হিরো আর রাজকুমার রা এসে তাদের প্রদর্শনী করে। সব ক্যান্ডিডেট দের কথা শোনা শেষে সৈন্য বললো।
–এখন সব ক্যান্ডিডেট গুলো লাইন হয়ে দাঁড়িয়ে যাও। রাজকুমারী সবাইকে দেখবে। তারপর তার যাকে পছন্দ হবে তার গলায় মালা পড়াবে।

অতঃপর খুশি ফুলের মালা হাতে দাঁড়িয়ে সবার সামনে গিয়ে ঘুরে ঘুরে সবাইকে দেখতে লাগলো। সব ক্যান্ডিডেট গুলো নিজের গলায় মালা নেওয়ার জন্য এগিয়ে আসতে লাগলো। একপর্যায়ে সবাই ধাক্কাধাক্কি শুরু করে দিলো। এদের ধাক্কাধাক্কিতে খুশির গায়েও ধাক্কা লেগে খুশি ব্যালেন্স হারিয়ে স্টেজ থেকে নিচে পড়ে যেতে লাগলো। প্রহর সামনের সারিতেই বসে ছিল। খুশিকে পড়ে যেতে দেখে ঘাবড়ে গিয়ে সেদিকে দৌড়ে গেল প্রহর।খুশি পড়ে যেতে লাগলে প্রহর দৌড়ে গিয়ে নিচ থেকে খুশিকে ধরে ফেললো। খুশি পড়ার সময় ওর হাতে থাকা মালাটা সোজা প্রহরের গলায় গিয়ে পড়লো। খুশি নিজেকে প্রহরের কোলে দেখে দুষ্টু হেসে বললো।
–বাহ্, দেখেছ আমার মতো আমার মালাটাও ঠিকই তার আসল ঠিকানা খুঁজে নিয়েছে।

প্রহর একবার নিজের গলার দিকে তাকালো। তারপর কিছু না বলে খুশিকে কোলে রেখে ওভাবেই হাঁটা ধরলো। খুশিও মুচকি হেসে দুই হাতে প্রহরের গলা জড়িয়ে ধরে প্রহরের দিকেই তাকিয়ে রইলো।

চলবে……

গল্পের লেটেস্ট আপডেট পেতে আর গল্প নিয়ে যেকোনো আলোচনা আড্ডা দিতে আমার গ্রুপে জয়েন হওয়ার আমন্ত্রণ রইল। নিচে গ্রুপ লিংক দেওয়া হলো। জয়েন হতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। 👇
গ্রুপ
https://facebook.com/groups/170529085281953/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here