অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ #পর্ব-১১

#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-১১

#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★আরও একটা সপ্তাহের ইতি ঘটলো। প্রহরের সর্বত্র জুড়ে এখন খুশির বসবাস। খুশি তার ষড়যন্ত্রে পরিপূর্ণ ভাবে সফল হয়ে গেছে। একেবারে নিঃস্ব করে দিয়েছে প্রহরকে। প্রহরের মন মস্তিষ্কে রাজত্ব করছে সে। যদিও প্রহর এখনো পর্যন্ত তার মনোভাব খুশির সামনে কোনরূপে প্রকাশ করেনি। সেদিন খুশিকে ওভাবে কোলে নিয়ে সোজা গাড়ির কাছে এসে গাড়িতে বসিয়ে ওকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসে। তাছাড়া কিছুই বলেনি সে। বলবেই কিভাবে? সে যে নিজের সাথেই যুদ্ধ চালাচ্ছিল। ভালোবাসা নামক বস্তুু যে, বিনা আহবানে ওর মনের কোঠায় হানা দিয়েছে।যেসব ভয়ংকর অনুভূতি থেকে সারাজীবন দূরে পালিয়ে বেড়িয়েছে। আজ হঠাৎ তার কাছেই কিভাবে ধরাশায়ী হবে? সেটা যে তার জন্য মেনে নেওয়া টা বড়োই দুষ্কর।মন যেটা জানছে, মস্তিষ্ক সেটা মানতে চাচ্ছে না। তাইতো মন মস্তিষ্কের মাঝে তুমুল লড়াই চলছিল। তবে সেই লড়াইয়ে এই প্রথম মনের জয় হলো। এই প্রথম ওর মস্তিষ্ক হার মেনে নিল। খুশি যে মরণঘাতী ভাইরাস হয়ে তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। এই সংক্রমণের প্রতিষেধকও যে শুধুই খুশি। সেটাও হারে হারে টের পাচ্ছে প্রহর। তবে মনের কথা মুখে কি কখনো আনতে পারবে সে? এসব ব্যাপারে যে সে বড়ই অপারগ। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করা যে তার কাছে অতিব দুষ্কর কর্ম। মনে হয় না তার দ্বারা এটা কখনো সম্ভব হবে।

সূর্য মামার ক্রোধ যেন আজ একটু বেশিই দেখা যাচ্ছে। রোদের তপ্ততায় চারদিক খা খা করছে। তবে বাইরের তাপের থেকে বেশি তাপমাত্রা বেড়ে গেছে প্রহরের অন্তরালে।আর আজকাল প্রহরের মন মেজাজের পরিবর্তন শুধুমাত্র একটা কারণেই হয়। সেটা হলো খুশি। আর আজও সেটার ব্যাতিক্রম হয়নি।ভার্সিটিতে আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত খুশিকে দেখেনি প্রহর। রোজ এতক্ষণে চলে আসে খুশি। আজ এক ঘন্টা পার হয়ে গেল তবুও ও আসেনি এখনো। প্রহরের নজর শুধু খুশিকেই খুঁজছে। কেমন অস্থিরতা কাজ করছে ওর ভেতর। মেয়েটা আজ আসছে না কেন? ওকি কলেজে আসেনি আজ? রোজ তো এর আগেই চলে আসে। ও ঠিক আছে তো? শরীর খারাপ করলো নাতো মেয়েটার? এসব ভেবে অস্থিরতা আরও বেড়ে যাচ্ছে প্রহরের।

দেখতে দেখতে ওদের বাসায় যাওয়ার সময়ও চলে এলো। তবুও খুশি এলোনা। প্রহরের অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। চিন্তা হচ্ছে মেয়েটার জন্য। বুকটা কেমন চিনচিন করছে। খুশির একটা খবর জানতে পারলে হয়তো শান্তি পেতো। কিন্তু কিভাবে খবর নিবে। ওর কাছে তো খুশির ফোন নাম্বারও নেই। থাকলেই বা কি? সেকি কখনো ফোন করতে পারতো খুশিকে? কিই বা বলবে ফোনে? একবার কি কলেজে গিয়ে দেখবে ও? কিন্তু কলেজে গিয়েই বা কাকে কি বলবে? দিয়া মেয়েটাকে কি কিছু জিজ্ঞেস করবো? ও হয়তো কোন খবর দিতে পারবে। কিন্তু বলবোটা কি? আর ওই মেয়েটাই বা কি ভাববে? কেমন একটা অকওয়ার্ড সিচুয়েশন।

কিছুই ভালো লাগছে না প্রহরের। গাড়ির কাছে এসেও দাঁড়িয়ে আছে। যেতে ইচ্ছে করছে না ওর। যদি খুশি চলে আসে। প্রহরের অস্থিরতা দেখে ফাহিম বাঁকা হেসে বললো।
–বায়দা ওয়ে আমার কাছে কিন্তু ভাবিজীর নাম্বার আছে। তোর কথা জানার জন্য আমার কাছে মাঝে মধ্যে ফোন দেয়।

প্রহর অপ্রস্তুত হয়ে বললো।
–হ্যাঁ তো আমাকে কেন বলছিস? আমি কি জানতে চেয়েছি নাকি?

–না মানে এমনি জানকারি দিলাম আরকি। আমার কেন যেন মনে হলো তথ্য টা তোকে জানানো দরকার। ওকে দেন আমি যাই তাহলে বাই।
কথাটা বলে ফাহিম ওর বাইকের দিকে হাটা ধরলো। প্রহর ভীষণ দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে গেল। খুশির নাম্বার নেওয়ার তীব্র আকাঙ্খা থাকলেও, সেটা চাইতে চরম অস্বস্তি হচ্ছে ওর। ফাহিমের কাছে নাম্বার চাওয়া মানে ওর কাছে মজার পাত্র হওয়া। যেটার কোন ইচ্ছে নেই ওর।

অতঃপর ফাহিম চলে গেল। আর প্রহর পেছনে শুধু অস্থিরতায় ভুগতে থাকলো। যেটা সময়ের সাথে শুধু বেড়েই চলেছে। দিন গড়িয়ে রাতে নেমেছে। প্রহরের অস্থিরতা যেন এবার আকাশচুম্বী হচ্ছে। সবকিছু যেন অসহ্য লাগছে ওর। রাতের ডিনারও ঠিকমতো করেনি।বাবার সামনে কোনরকমে বাহানা দিয়ে রুমে চলে এসেছে। তখন থেকে রুমে এসে শুধু পায়চারী করে যাচ্ছে। মেয়েটার সাথে একবার কথা না হওয়া পর্যন্ত ওর কিছুতেই শান্তি লাগছে না। কিন্তু কিভাবে বলবে? তখন তো এটিটিউট দেখিয়ে ফাহিমের কাছ থেকে নাম্বারটাও নিলাম না। এখন কি করবো? নাহ আর পারছে না প্রহর। শেষমেশ নিজের ইগো সাইডে রেখে ফাহিমের নাম্বারে ফোন দিল। ফাহিম ফোন রিসিভ করেই বাঁকা হেসে বললো।
–জানতাম আমার কথা তোর আজকে অবশ্যই মনে পড়বে। আমাকে খুব মিস করছিস তাইনা?

প্রহরের কথা জিহ্বায় আসছে কিন্তু মুখ ফুটে বের হচ্ছে না। প্রচুর ইতস্তত লাগছে ওর। কিভাবে বলবে কথাটা বুঝতে পারছে না। কোনরকমে গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠলো।
–উহুম,,বলছিলাম তোর কি আজ কথা হয়েছে?

ফাহিম না বোঝার ভান করে বললো।
–কথা? কার সাথে? কিসের কথা?

–দেখ ফাহিম ভান করিস না। তুই জানিস আমি কার কথা বলছি।

–ওমা আমি মনোবিজ্ঞানী নাকি? হাউ ডু আই নো ম্যান?

প্রহর দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
–খুশি। ওর সাথে কথা হয়েছে তোর?

–আব আয়া না উট পাহাড় কে নিচে। এনিওয়ে, না আজ কোন কথা হয়নি। ভাবিজী ফোন দেয়নি। আমি নিজেই কয়েকবার দিয়েছিলাম কিন্তু ধরেনি।

–নাম্বার টা দে।

–হোয়াট? কি বললি আরেকবার বল? আমি না কানে কম শুনছি বোধহয়।

প্রহর দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
–বেশি ঢঙ করলে আমি সত্যি করে তোকে বয়রা করে দিবো। এখন কথা না বাড়িয়ে ফটাফট নাম্বার ম্যাসেজ করে দে।

–জো হুকুম মহামান্য।
ফাহিম হেঁসে দিয়ে ফোন কেটে নাম্বার টা ম্যাসেজ করে দিলো।

প্রহর নাম্বার টার দিকে তাকিয়ে রইলো। অতঃপর দ্বিধাদ্বন্দ্ব করতে করতে ডায়াল করেই ফেললো।রিং হচ্ছে। বুকটা কেমন ধুকধুক করছে প্রহরের। এই প্রথম সে খুশিকে ফোন করলো। কেমন অদ্ভুত ফিলিং হচ্ছে ওর। কাওকে ফোন দেওয়াও যে ওর এতটা অসাধ্য সাধন হতে পারে তা আজ জানছে ও। রিং বাজতে বাজতে একসময় বন্ধ হয়ে গেল তবে ফোন রিসিভ হলোনা। এতে যেন প্রহরের চিন্তা আরও বেড়ে গেল। প্রহর আবারও ডায়াল করলো। কিন্তু ফোন আবারও রিসিভ হলো না। প্রহরের একবারের বেশি কাওকে ফোন দেওয়ার অভ্যস নেই। এটা ওর কাছে ব্যাড মানার্স মনে হয়। প্রহর ভাবলো আর ফোন দিবে না। তবে পাঁচ মিনিট অতিবাহিত হতে না হতেই সেই সংকল্প বালিচাপা দিয়ে প্রহর আবারও ডায়াল করলো। রিং যাচ্ছে তবে রিসিভ হচ্ছে না।এবারও হয়তো রিসিভ হবে না ভেবে প্রহর হতাশায় চোখ বন্ধ করে পা নাচাতে লাগলো। শেষ পর্যায়ে এসে ফোব কান থেকে সরাতে নিলেই, হঠাৎ ওপাশ থেকে নরম গলায় বললো।
–হ্যা….লো

পা নাচানো বন্ধ হয়ে গেল প্রহরের। হৃদপিণ্ড তুমুল বেগে দৌড়াতে লাগলো। চোখ খুলে তাকালো সে। হঠাৎই অস্থিরতা কমে গিয়ে এক শীতল বাতাস ছুঁয়ে গেল তাকে। ওপাশ থেকে খুশি আবারও নরম ঘুমো ঘুমো কন্ঠে বললো।
–হ্যালোওও.. কে বলছেন?

ফোন দিলেও এখন আর মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে প্রহরের। গলায় যেন সব আটকে যাচ্ছে। কি বলবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। এমন অকওয়ার্ড সিচুয়েশনে জীবনে এই প্রথম পড়তে হলো ওকে। একটা পিচ্চি মেয়ের সাথে কথা বলতে যে এতটা জড়তা হচ্ছে ব্যাপার টা সত্যিই হাস্যকর প্রহরের জন্য। ওদিকে খুশি কোন রেসপন্স না পেয়ে আবারও বলে উঠলো।
–এই কেরে ভাই? কথা কন না ক্যা? ফোন দিয়া আবালের মতো বইসা আছেন? এমনিতেই জ্বরে তাপমাত্রা হাই হয়ে আছে। তারওপর যদি আজাইরা কল দিয়া থার্মোমিটার আরও হাই করে দেন, তাহলে কিন্তু ফোনের ভেতরে ঢুকে গিয়ে চোখ দুটো খুলে নিয়ে গুটি খেলবো বলে দিলাম।

জ্বরের কথা শুনে প্রহরের বুকের মাঝে ধুক করে উঠলো। প্রহর চিন্তিত সুরে বলে উঠলো।
–তোমার জ্বর এসেছে?

খুশি বিরক্তির সুরে বললো।
–না না জ্বর আসবে কেন? আমিতো চায়ের মধ্যে থার্মোমিটার চুবিয়ে লেভেল হাই করে দিয়েছি। আমার না এটা করতে হেব্বি মজা লাগে।

–হোয়াট??

–কি ব্লাক হেয়াইট করছেন? এই কে ভাই আপনি বলেন তো। মাত্রই একটু ঔষধ খেয়ে ঘুমোচ্ছিলাম। ওমনি আপনার রিং দিয়ে আমাকে জাগাতে হলো? কে আপনি বলেন তো?

প্রহর গলা খাঁকারি দিয়ে বললো।
–আমি বলছি।

–বাহ্, নাইস টু মিট ইউ মিঃ আমি। তা আমার কাছে কি চাই মিঃ আমি?

–খুশি আমি বলছি। প্রহর।

খুশি এবার কন্ঠ নরম করে ঘুমের মাঝেই বলে উঠলো
–ওও তুমি? তারমানে তুমি আবার আমার স্বপ্নে চলে এসেছ তাইনা? আমিতো ভাবছিলাম বোধহয় সত্যিই আমার ফোন এসেছে।

প্রহর বুঝতে পারছে মেয়েটা ঘুমের মধ্যে এলোমেলো বলছে। হয়তো জ্বরের ঘোরে কিছু টের পাচ্ছে না। খুশি ওপাশ থেকে আদুরে গলায় বলে উঠলো।
–জানো আমার না অনেক জ্বর হয়েছে। একটুও ভালো লাগছে না আমার। এই পঁচা জ্বরটার কারণে আজ তোমাকে দেখতেও পেলাম না। জ্বরের চেয়ে বেশি খারাপ লাগছে তোমাকে দেখতে না পেয়ে। তোমাকে একদিন দেখতে না পেলে আমার অনেক কষ্ট হয়। প্রচুর কান্না পায় আমার। এই দেখ এখনো কান্না পাচ্ছে আমার। কিন্তু তুমি কি করে দেখবে? তুমিতো স্বপ্নের মাঝে এসেছ। বাস্তবে তো তুমি আমাকে সহ্যই করতে পারো না। আজ আমি না আসায় হয়তো তুমি অনেক খুশি হয়েছ।

খুশির কথায় প্রহরের বুকের মাঝে হু হু করে উঠলো।খুশির কথায় তার প্রতি হাজারো না বলা অভিযোগের ঝলক দেখতে পাচ্ছে সে। গলার মাঝে কেমন দলা পাকিয়ে আসছে ওর। প্রহর ঢোক গিলে বলে উঠলো।
–তুমি দেখতে চাও আমাকে?

–হ্যাঁ চাইতো। অনে….ক,,

–ঠিক আছে দশ মিনিট পর তুমি ব্যালকনিতে আসো। আমাকে দেখতে পাবে।

–সত্যিই??? আমি এখুনি আসছি।

প্রহর লাইনে থেকেই দ্রুত গাড়ির চাবি নিয়ে নিচে নেমে এসে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো। বিশ মিনিটের রাস্তা দশ মিনিটেই অতিক্রম করে চলে এলো খুশির বাসার সামনে। আর খুশিতো তখনই উঠে এসে ব্যালকনিতে বসে আছে। আসলে জ্বরের ঘোরে খুশি কি করছে তার কোনো হুঁশই নেই। ফোন কানে নিয়ে দুর্বল শরীরে গ্রীলে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে। প্রহর গাড়ি থেকে বের হয়ে দেখলো খুশি ব্যালকনিতে বসে আছে। রাস্তার লাইটের আলোয় খুশিকে দেখতে পাচ্ছে প্রহর। প্রহর খুশির দিকে হাত নাড়িয়ে ফোনে বললো।
–এই দেখ খুশি আমি এখানে। নিচে তাকাও।

খুশি উৎসুক হয়ে নিচে তাকালো। প্রহরকে দেখতে পেয়ে বাচ্চাদের মতো হাসিমুখে হাত নাড়াতে লাগলো। খুশির মুখের হাসি দেখে প্রহরের মনেও যেন অনাবিল প্রশান্তির অনুভব হচ্ছে। প্রহর মুচকি হেসে বললো।
–এখন খুশিতো?

খুশি বাচ্চাদের মতো করে বললো।
–হ্যাঁ খুশি অনে….ক খুশি। তোমাকে না এই ড্রেসে অনেক কিউট লাগছে।

প্রহর এবার নিজের দিকে নজর বুলিয়ে দেখলো, ও তারাহুরোয় বাসার পড়া টিশার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়েই চলে এসেছে। বেচারা আবারও অস্বস্তিতে পড়ে গেল। প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য প্রহর বললো।
–জ্বর কখন এসেছে?

খুশি ঠোঁট উল্টে বললো।
–আজ সকাল থেকেই।

–মেডিসিন নিয়েছ?

–নিয়েছি। ফুপি জোর করে খাইয়ে দিয়েছে।

–খেয়েছ কিছু?

–উহুম খেতে ইচ্ছে করে না। বমি আসে।

–তা বললে চলবে না। খেতে তো হবেই। নাহলে কিন্তু আমি আর কথা বলবোনা।

–এই না না। আমি খাবোতো। সত্যিই বলছি।

–আচ্ছা ঠিক আছে। এখন যাও শুয়ে পড়ো। বাইরে বেশিক্ষণ থাকলে জ্বর বেড়ে যাবে।

–আরেকটু থাকি না? আরেকটু দেখি তোমাকে?

–না আর না। শরীর আরও খারাপ করবে। গুড গার্ল রা জিদ করেনা। যাও শুয়ে পড়ো।

–আচ্ছা ঠিক আছে।
খুশি আবারও হাত নেড়ে ভেতরে এসে শুয়ে পড়লো।

খুশি ভেতরে গেলে প্রহর আস্তে করে হেঁটে এসে গাড়ির বোনেটের ওপর উঠে বসলো। আকাশের দিকে ভাবতে লাগলো হঠাৎ করে কিভাবে ও এমন পাগলামি করে ফেললো? জীবনে কখনো কারো জন্য এমন পাগলামো করবে সেটা কল্পনার বাহিরে ছিল প্রহরের। সুশৃঙ্খল জীবনজাপন করা প্রহর হঠাৎই কেমন বেখেয়ালি হয়ে গেছে। মেয়েটাকে শুধু একদিন না দেখেই ওর এমন বেগতিক অবস্থা হয়ে গেছে। যদি কখনো না দেখতে পায় তাহলে কি হবে ওর? এই ভাবনাটাই যেন শ্বাসরুদ্ধকর। নাহ পারবে না সে। খুশিকে ছাড়া যে তার চলবে না এখন। এই ব্যাপারে আর কোন সংশয় নেই প্রহরের। প্রহর এবার বোনেটের ওপর চিত হয়ে শুয়ে পড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করতে বলতে লাগলো,
–কি হয়ে গেল তোর ? তুই তো শেষ ভাই? শেষমেশ তুইও এই মরণঘাতী ভাইরাসে সংক্রামিত হয়ে গেলি? ইউ আর ইন লাভ ম্যান।
প্রহর দুই হাত দিকে ছড়িয়ে একটু উচ্চোস্বরে বলে উঠলো।
–ইয়েস, আই অ্যাম ইন লাভ। আই অ্যাম ইন লাভ।

প্রহর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো খুশির সামনে এবার মনের অনুভূতি গুলো জাহির করবে। আর দেরি করবে না সে। খুশিকে আর অপেক্ষা করাবে না। এখন যে তার নিজেরও আর দূরত্ব ভালো লাগছে না। খুশি কলেজে আসলেই বলবে ওকে। ভাবনা চিন্তার মেলা শেষে প্রহর গাড়িতে বসে আবার বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।
__

একদিন পর খুশি কলেজে আসে। সেদিন প্রহরের সাথে কথা বলা, দেখা করা কিছুই মনে নেই তার। সকাল হতেই সব স্বপ্ন ভেবে উড়িয়ে দিয়েছে সে। আজ শরীর একটু সুস্থ হতেই চলে এসেছে।

প্রহরও আজ পুরো প্রস্তুতি সহকারে এসেছে। আজ সে খুশিকে নিজের অনুভূতির কথা জানাবে। রাস্তায় একটা ফুলের দোকানে গাড়ি থামালো ফুল কেনার জন্য। খুশির জন্য সুন্দর দেখে একটা ফুলের বুকে কিনলো। মনের মাঝে এক অনাবিল আনন্দের ঢেউ বইছে। ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে মুচকি হেসে তাকিয়ে রইলো সে। হাসিমুখে গাড়ির দিকে ফিরতে নিলেই পাশে একটু দূরের এক গাড়িতে নজর পড়লো ওর। আর তৎক্ষণাৎ মুখের অমলিন হাসিটা গায়েব হয়ে গেল। মুখমন্ডল জুড়ে ছেয়ে গেল এক বিষাদের ছাপ। ফুরফুরে মেজাজটা সহসাই তিক্ততার আঁচলে ঢেকে গেল। এতদিন পরে আবারও নিজের জন্মদাত্রী মাকে দেখে চাপা কষ্ট টা জেগে উঠলো। যেটা সে হাজার চেষ্টা করেও ভুলতে পারে না।অথচ তাকে কত সুন্দর হাসিখুশি দেখাচ্ছে। নিজের নতুন স্বামী সংসার নিয়ে বেমালুম আনন্দে আছে। রাগ আর কষ্টের সংমিশ্রণে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো প্রহরের। সে দ্রুত নিজের গাড়িতে এসে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল।রাগে শরীর জ্বলছে ওর। আজই ওই মহিলাকে আমার আমার সামনে আসতে হলো? কতো ভালো মনে বের হয়েছিলাম। সব বিগড়ে দিল। এখন কিভাবে নিজেকে ঠিক করবে? প্রহরের মাথায় তখন একটাই নাম এলো, খুশি। হ্যাঁ খুশি। এখন এইমুহূর্তে খুশিই পারবে ওর মুড করতে। খুশির কাছে গেলে নিশ্চয় এসব ভুলে যাবে ও। মুহূর্তেই ওর মন মেজাজ আবারও ফুরফুরে করে দিবে।

সেই মনস্তাপ নিয়ে খুশির কলেজের সামনে এসে গাড়ি থামালো প্রহর। গাড়ি থেকে নেমে খুশির উদ্দেশ্যে কলেজের মাঠের দিকে এগুলো। কয়েক কদম এগুতেই কিছুদূরে খুশিকে দেখতে পেল। তবে খুশির সামনে একটা ছেলেকে দেখে ভ্রু কুঁচকে আসলো প্রহরের। কারণ ছেলেটা খুশির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে। তারপর হঠাৎ ছেলাটা খুশির দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো।
–আই লাভ ইউ। উইল ইউ বি মাইন?

প্রহরের বিগড়ে থাকা মেজাজটা এবার ব্লাস্ট হওয়ার পর্যায়ে চলে গেল। দপ করে আগুন ধরে গেল মাথায়। প্রহর হাতের মুঠো শক্ত করে এগুনোর জন্য কদম বাড়াতেই হঠাৎ খুশির বলা কথায় কদম থমকে গেল তার। খুশিও অবলীলায় হাসিমুখে ছেলেটার হাতে হাত রেখে বললো।
–ইয়েস, আই উইল।

স্তব্ধ হয়ে গেল প্রহর। হাঠাৎ করেই সবকিছু যেন থমকে গেল। আর এগুতে পারলো না সে। আর এক সেকেন্ডও না দাঁড়িয়ে উল্টোপথে হাঁটা ধরলো সে। নিজের উপরই চরম রাগ হচ্ছে ওর। আবারও ধোঁকা পেল ও। ও কিভাবে ভুলে গেল, মেয়েরা এমনই হয়। ধোঁকাবাজ। আজ আবারও প্রমাণ হলো সেটা। এই মেয়েও ওর মা আর বাকিদের মতো ধোঁকাবাজ। আমি কিভাবে ওর ওপর বিশ্বাস করলাম? আমি এতো বোকা কি করে হলাম? সব মেয়েরাই এক। সবাই ধোকাবাজ।

চলবে……

গল্পের লেটেস্ট আপডেট পেতে আর গল্প নিয়ে যেকোনো আলোচনা আড্ডা দিতে আমার গ্রুপে জয়েন হওয়ার আমন্ত্রণ রইল। নিচে গ্রুপ লিংক দেওয়া হলো। জয়েন হতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। 👇
গ্রুপ
https://facebook.com/groups/170529085281953/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here