অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ #পর্ব-২৯

#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-২৯
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★খুশিইইইইই,,,,
চিৎকার করে ঠাস করে চোখ খুলে উঠে বসলো প্রহর। সারা শরীর অসম্ভব রকম কাঁপছে। ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা। কেমন শ্বাসকষ্ট হচ্ছে পর।হাপাতে লাগলো, অস্থির হয়ে আশেপাশে তাকালো ও। নিজেকে হসপিটালের একটা কেবিনে আবিস্কার করলো প্রহর। ও এখানে কি করছে? খুশি? আমার খুশি কোথায়? খুশি কি তাহলে… না না না কিছুতেই না। খুশিইই খুশিইই.. অস্থির হয়ে প্রহর নিচে নামার চেষ্টা করলো। তখনই হঠাৎ ফাহিম দৌড়ে এসে প্রহরকে ধরে বললো।
–প্রহর তো জ্ঞান ফিরেছে? ঠিক আছিস তুই?

–ঠিক আছি মানে? আমার আবার কি হবে?

–আরে খুশিকে নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই তো তুইও ওখানে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলি। গত চার ঘন্টা যাবৎ তুই বেহুঁশই ছিলি।

–অ অজ্ঞান ছিলাম? তা তারমানে ওসব কি স্বপ্ন ছিল? খুশি? আমার খুশি? ফা ফাহিম আমার খুশি? খুশির অপারেশন??

ফাহিম স্বস্তিময় হাসির রেখা টেনে বললো।
–তোর বিশ্বাস জিতে গেছে প্রহর। খুশির অপারেশন সাকসেসফুল হয়ে গেছে। তোর খুশি আবারও ফিরে এসেছে তোর কাছে।

প্রহর অশ্রুসজল চোখে ফাহিমের দিকে। প্রহরের দেহে এবার প্রাণের সঞ্চালন হচ্ছে। খুশি ফিরেছে। আমার খুশি ফিরেছে আমার কাছে। প্রহরের আনন্দ যেন ধরছে না। প্রহর উঠে দাঁড়িয়ে বললো।
–ফাহিম আমি খুশির কাছে যাবো। কোথায় খুশি?

–খুশিকে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। এখনো জ্ঞান ফিরেনি। জ্ঞান ফেরার পর কেবিনে শিফট করবে।তখন দেখতে পারবি।

–না না আমি এখুনি দেখবো। দূর থেকে হলেও দেখবো। ওকে এক নজর না দেখলে নিঃশ্বাস নিতে পারবোনা আমি।
কথাটা বলেই প্রহর নিচে নেমে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে ছুটে গেল। ফাহিম আটকানোর চেষ্টা করেও পারলোনা। প্রহর বাইরে এসে দেখলো অবজারভেশন রুমের বাইরে করিডরে সবাই বসে আছে। প্রহরকে আসতে জিদান সাহেব এগিয়ে গেলেন ওর কাছে। প্রহর ওর বাবার দিকে তাকিয়ে অস্থির কন্ঠে বললো।
–বা বাবা আমার খুশি। খুশি কোথায়?

জিদান সাহেব ছেলেকে আস্বস্ত করে বললেন।
–ভয়ের কিছু নেই প্রহার। খুশি হলো ফাইটার। ঠিকই মৃত্যুকে ফাইট করে হারিয়ে দিয়েছে। আমাদের কথা রেখেছে ও। আমাদের খুশি মা এখন ঠিক আছে।

প্রহর অশ্রুসজল চোখে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো।
–আমি জানতাম বাবা আমার খুশি আমাকে ছেড়ে যেতেই পারে না। আল্লাহ আমাকে এতবড় শাস্তি দিবে না। বাবা খুশি কোথায়? আমি একবার ওকে দেখবো। প্লিজ বাবা।

–কিন্তু অবজারভেশন রুমে তো কাওকে যেতে দেয়না। কেবিনে শিফট করার পর দেখিস।

–না না আমি এখুনি দেখবো। শুধু দূর থেকে একবার দেখবো।

প্রহর অবজারভেশনের করিডরের দরজা ঢেলে ভেতরে ঢুকলো। সেখানে রিসিপশনে বসে থাকা নার্সরা প্রহরকে বাঁধা দিল ভেতরে ঢুকতে। তবে প্রহর কিছুই মানতে রাজি না। সে শুধু বারবার খুশিকে দেখার জেদ করে যাচ্ছে। অগত্যা আর না পেরে দূর থেকে দেখার পারমিশন দিলো ওকে। খুশির রুমের কাছে এসে দরজায় লাগানো কাচের ভেতর থেকে খুশিকে দেখলো প্রহর। সারা মাথায় ব্যান্ডেজ লাগানো, মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো জ্ঞানহীন খুশি শুয়ে আছে। প্রহরের চোখের বরষা অঝোর ধারায় বইছে। কাচের ওপর দিয়েই হাত বুলালো প্রহর। ওর ঝাঁসির রানি যুদ্ধ জয় করে ফিরেছে। আমার কাছে ফিরেছে। হৃদয়ের স্পনদ ফিরে পেয়েছে প্রহর। শেষ হয়েছে ওদের জীবনের কঠিন পরিক্ষা।
___

রাত ৮ টার দিকে জ্ঞান ফিরে আসে খুশির। ডক্টর এসে বলে গেলো সবাইকে। একটু পরে খুশিকে বেডে শিফট করা হবে। সবার মাঝে এক অপরিসীম প্রশান্তির লহর ছড়িয়ে পড়লো। এতক্ষণ যতটুকু ভয়, চিন্তা কাজ করছিল। তারও লেশমাত্র অবকাশ রইলো না। সবার মুখে ফুটে উঠলো প্রাপ্তির হাসি।

কেবিনে শিফট করার পর খুশির মা বাবা আর নিভান পাঁচ মিনিটের জন্য একটু দেখা করে আসলো। কারন ডক্টর বলেছে বেশিক্ষণ রুগীর কাছে ভীড় করা যাবে না। বেশি কথা বললে খুশির সমস্যা হতে পারে । তাই ওরা অল্প কিছু সময়ের জন্য শুধু দেখে চলে আসলো। এরপর এলো প্রহর। দরজা খুলে মৃদুপায়ে ভেতরে ঢুকলো। ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে খুশির পাশে টুলের ওপর বসলো। প্রহরের আভাস পেয়ে ভারি চোখের পলক দুটো ধীরে ধীরে খুলে তাকালো খুশি। পাশে তাকিয়ে দেখতে পেল ওর দিওয়ানা পাগলকে। মায়াময় চোখে তাকিয়ে হাসির রেখা আনলো ঠোঁটের কোনে। ব্যাস এতটুকুই যেন প্রহরের শরীর মনকে প্রশান্তির অথই সমুদ্রে ভাসানোর যথেষ্ট। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে আনন্দাশ্রু। খুশির একহাতে স্যালাইন লাগানো। প্রহর খুশির অন্য হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিলো। খুশির হাতের উল্টো পিঠে অধর ঠেকালো প্রহর। মাথা ঝুঁকিয়ে অধর ঠেকালো খুশির কপালে। আনন্দাশ্রু জমে গেল খুশির চোখের কোনে। তবে সেটা চোখের কোন বেয়ে নিচে পড়তে দিলোনা প্রহর।তার আগেই নিজের অধর দ্বারা শুষে নিলো সে। মায়াবী কন্ঠে বলে উঠলো।
–নো মোর টিয়ারস খুশিরাণী। ইট’স টাইম টু সেলিব্রেট ইউর ভিক্টোরি। অ্যাম সো প্রাউড অফ ইউ সুইটহার্ট।

খুশি মুচকি হেঁসে ভাঙা গলায় বললো।
— আই নো আই নো, আই অ্যাম সো শক্তিশালী। যমরাজ কে এক ঢিসুম মেরে কুপোকাত করে দিয়েছি ।

অশ্রু চোখেই হাসলো প্রহর। ব্যাস এভাবেই খুশি সারাজীবন ওর পাশে থাকুক। আর কিছু চাইনা ওর।
__

করিডরে একসারিতে লাগানো চেয়ার গুলোর একটাতে বসে আছে বেলি। সাহেলা বেগম ওকে বাসায় চলে যেতে বলেছিল। তবে খুশিকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছিল না তার। তাই এখানেই বসে আছে। কিছুক্ষণ আগেই খুশির সাথে দেখা করে এসেছে। মেয়েটাকে ভালো হতে দেখে তার এখন স্বস্তি লাগছে। হঠাৎ একটা ধোঁয়া ওঠা গরম কফির ওয়ান টাইম কাপ কেউ ধরলো বেলির সামনে। বেলি মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলো জিদান সাহেব। বেলি সৌজন্যমূলক মৃদু হেসে বললো।
–আরে শুধু শুধু কেন কষ্ট করতে গেলে?

জিদান সাহেব বেলির পাশে বসে বলে উঠলেন।
–বারে এতে আমার কেন কষ্ট হতে যাবে? কফি কি আমি বানিয়েছি নাকি? কফি তো বানালো ক্যানটিনওয়ালা আমিতো শুধু নিয়ে এলাম। গরম গরম কফি টা খেয়ে নাও। শরীর মন ফ্রেশ হয়ে যাবে।

বেলি কফির কাপটা হাতে নিলো। জিদান সাহেবও তার নিজের কফিতে চুমুক দিলো। বেলি কফি খেতে খেতে ইতস্ততভাবে বলে উঠলো।
–জিদান তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।

–হ্যাঁ বলো,জিজ্ঞেস করার কি আছে?

–আসলে আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে তোমার খুশির কথা মানার কোন দরকার নেই। দেখ আমি জানি তুমি খুশির ওই অবস্থায় ওকে মানা করতে পারোনি। তাই ওর মন রাখতে রাজি হয়ে গেছ। তবে তোমার এসব করার দরকার নেই। আমি খুশিকে বুঝিয়ে বলবো। ও নিশ্চয় বুঝতে পারবে।

জিদান সাহেব বলে উঠলেন।
–আর আমি যদি বলি আমি আমার মনের ইচ্ছেতেই রাজি হয়েছি তাহলে?

বেলি চকিত দৃষ্টিতে তাকালো জিদান সাহেবের দিকে। জিদান সাহেব স্মিথ হেঁসে বললেন।
–হ্যাঁ বেলি, তুমি হয়তো ভাবছ আমি খুশির রাখতে বা তোমার ওপর দয়া করে তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি। তবে এমন টা না। আমি আমার নিজের খুশিতেই রাজি হয়েছি। আসলে আমি উপলব্ধি করেছি জীবনে একটা যোগ্য সঙ্গিনীর খুবই প্রয়োজন। যার কাছে নিজের ভালো মন্দের কথা মন খুলে বলতে পারবো। কিংবা আমার না বলা কথাও সে বুঝে যাবে। জানো পাপিয়া আমার বউ হলেও ও কখনো আমার মনের কথা বুঝতে পারেনি। তবুও আমি কখনো ওর ওপর অভিযোগ করিনি। ভেবেছি সবাই তো আর এক হয়না। ও নাহয় একটু অন্যরকম। তবে ওর ওভাবে চলে যাওয়ার পর অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। নিজেকে কেমন ইডিয়ট মনে হচ্ছিল তখন আমার। কিন্তু আমি এই কষ্ট কারো সাথে শেয়ার করতে পারতাম না। কারণ তখন প্রহরকে সামলানোটাই আমার সবচেয়ে বড়ো প্রায়োরিটি ছিল। এভাবে নিজের অনুভূতি গুলো নিজের মাঝেই চেপে প্রহরকে মানুষ করা আর বিজনেসের ভেতর ডুবে থাকলাম। কিন্তু দিনশেষে ঠিকই নিজেকে খুব একা মনে হতো। মনে হতো কেউ একজন যদি থাকতো তাহলে তার কাঁধে মাথা রেখে নিজের সুখ দুঃখ শেয়ার করতে পারতাম।যদিও প্রহর বড়ো হবার পর থেকে আমাকে অনেক বার বিয়ে করতে বলেছে। তবে আমার মন চায়নি আর। কারণ একবারই মনমতো জীবনসঙ্গী বেছে নিতে ভুল করেছি। আবারও যদি সেই একই ভুল করি তাহলে কি হবে? আর সে যদি প্রহরকে আপন করে না নিতে পারে সেই ভয়ে কখনো সেই পথে পা বাড়াইনি। তবে একাকীত্ব এখনো আমাকে তাড়া করে বেড়াই। আর এতো বছর পর তোমাকে দেখে কেন যেন মনে হলো তুমিই হয়তো আমার একাকীত্ব দূর করতে সাহায্য করতে পারবে। কারণ তোমার ভালো বন্ধু আমার আর কেউ নেই। তুমিই একমাত্র আমাকে ভালো ভাবে বুঝতে পারো। তাই খুশির কথায় আর দ্বিতীয় বার ভাবিনি আমি। তবে এটা একান্তই আমার ইচ্ছে। তুমি যদি মানা করতে চাও অনায়াসে করতে পারো। তোমার ওপর কোন চাপ নেই। তুমি যা ডিসিশন নিবে তাই হবে।

কথাগুলো বলে কফি শেষ করে উঠে গেল জিদান সাহেব। আর বেলি তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। সত্যিই কি সে তার ভালোবাসার পূর্ণতা পেতে চলেছে।
__

এক সপ্তাহ পর খুশিকে হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ দিয়ে দিলো। এখন অনেক টা উন্নতি হয়েছে খুশির। মাথার ব্যাথাটাও অনেক কমে গেছে। বাসায় আনার পর থেকে প্রহর দিনরাত খুশির সেবায় নিয়জিত থাকে। এক মুহূর্তের জন্যেও খুশিকে একা ছাড়ে না। খাইয়ে দেওয়া, গোসল করানো,নিয়মিত মেডিসিন দেওয়া সহ যাবতীয় কাজই প্রহর নিজের হাতে করে। খুশিকে নিজের পায়ে এক পাও হাঁটতে দেয়না প্রহর। যেখানে যাবে খুশিকে কোলে নিয়ে যায়। যেন খুশি কোন ছোট বাচ্চা যাকে ছেড়ে দিলেই পড়ে যাবে। এই অতিরিক্ত কেয়ারে খুশির মাঝে মধ্যে খুব বিরক্ত লাগ। সে বিরক্তির সুরে বলে,
–আরে এতো পুতুপুতু করার কি আছ? আমি কি নবজাতক শিশু নাকি আজব? এভাবে চলতে থাকলে তো আমি নিজের পায়ের বোধশক্তিই হারিয়ে ফেলবো। তখন সারাজীবন কাঁধে নিয়ে নিয়ে ঘুরো লেঙরা বউকে।

প্রহর তখন মুচকি হেঁসে বলে।
–ঘুরতে হয় ঘুরবো। তোমার তাতে কি? আমার বউকে আমি সারাজীবন কোলে কাঁধে নিয়েই ঘুরবো।
প্রহরের কথায় তখন আবার চোখ ভরে আসে খুশির। কেউ কাওকে এতটা কিভাবে ভালোবাসতে পারে? মন চায় তখন এই পাগলটাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিয়ে আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে।

দেখতে দেখতেই কেটে গেল আরও বিশটা দিন। খুশি এখন প্রায়ই সুস্থ। মাথার ব্যান্ডেজও খুলে দিয়েছে। মাথায় আবার নতুন করে চুল গজিয়েছে খুশির। এখন নিজে নিজেই চলাফেরা করে। যদিও প্রহর বেশি চলাফেরা করতে মানা করেছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। খুশিতো খুশিই। তাকে আবদ্ধ করে রাখা খুবই দুর্বোধ্য কাজ।

আজ খুশির অপারেশনের এক মাস পূর্ণ হয়েছে। খুশি এখন অনেক টা সুস্থ হওয়ায় প্রহর আবার অফিস যাওয়া শুরু করেছে। খুশি হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে প্রহর আর অফিসে যায়নি। এতদিন জিদান সাহেবই সবকিছু সামলেছেন। তবে এবার বাবাকে রেস্ট দিয়ে প্রহর আবারও দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে। যদিও বেশিসময় থাকে না সে। দ্রুত কাজ সেরে বাসায় চলে আসে সে। খুশির চিন্তা যে তাকে থাকতে দেয়না। ও জানে ও না থাকলে খুশি একটুও নিজের খেয়াল রাখে না। মেডিসিন গুলোও ঠিকমতো নেয় না। তাইতো খুশির কাছে না আসা পর্যন্ত ওর চিন্তার কমতি থাকে না।

সময় তখন রাত ১০ টা, প্রহর একটু ওর বাবার সাথে বিজনেসের ব্যাপারে কিছু আলাপ করতে গিয়েছিল। কথা শেষে সে ফিরে এলো ওর রুমে। রুমে এসে দেখলো খুশি রুমে নেই। ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ দেখে বুঝলো খুশি ওয়াশরুমে গিয়েছে। প্রহর বেডের পাশে ছোট ল্যাম্প টেবিলের কাছে গিয়ে খুশির মেডিসিন গুলো চেক করতে লাগলো। ঠিকমতো মেডিসিন গুলো নিয়েছে নাকি তাই দেখছে। তখনই ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে স্বাভাবিক ভাবেই পাশে ফির তাকালো প্রহর। আনমনে ফিরে তাকিয়ে আবারও মাথা ঘুরাতে নিলেই আটকে গেল তা। ধীরে ধীরে আবারও ফিরে তাকালো খুশির পানে।মুহূর্তেই থমকে গেল প্রহর। নির্বোধ নির্বিকার হয়ে গেল সে। চোখের পলক পড়তে আর হা হওয়া মুখটা চাপতে ভুলে গেল। ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আবেদনময়ী মহীয়সী রমনীকে দেখে হৃৎস্পন্দন কম্পন করা থামিয়ে দিল।

খুশি একটা শর্ট জিন্স আর স্লিভলেস সাদা শর্ট টিশার্ট পড়েছে, যার নিচে পেটের অর্ধভাগ দৃশ্যমান। টিশার্টের ওপরে লং একটা বুক কাটা জর্জেটের কটি পড়েছে। খুশির এই মাত্রাতিরিক্ত আবেদনময়ী রুপ প্রহরকে নাস্তানাবুদ করে দিচ্ছে।চোখের পর্দায় মাদকতা ছড়িয়ে পড়ছে। হাতের শক্তি হারিয়ে হাতে থাকা ঔষধ গুলো সব নিচে পড়ে গেল। এই শীতের মৌসুমেও যেন অতিরিক্ত গরমের প্রভাব অনুভব করছে প্রহর। গলা শুঁকিয়ে আসছে তার। খুশি ঠোঁটের কোনে আবেদনময়ী হাসি ঝুলিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো প্রহরের কাছে। প্রহরের একেবারে কাছে এসে দুই হাতে প্রহরের গলা জড়িয়ে ধরে বললো।
–কি হয়েছে মিঃ হাসব্যান্ড? মুখটা একটু চাপাও নাহলে মশাগুলো সব বিনা দাওয়াতে ঢুকে পড়বে।

প্রহর শুঁকনো ঢোক গিলে নিয়ে আমতাআমতা করে বললো।
–এ এসব কি খুশি? শীতের দিনে এমন কাপড়চোপড় কেউ পড়ে? ঠান্ডা লেগে যাবে তো।

খুশি আরও একটু বেশি আবেদনময়ী ভঙ্গিতে বললো।
–আচ্ছা তাই বুঝি? তাহলে এতো শীতের মাঝে তুমি ঘামছ কেন সুইটহার্ট?
কথাটা বলে খুশি ঠোঁট গোল করে প্রহরের মুখের ওপর ফু দিতে লাগলো। বেচারা প্রহরের অবস্থা আরও বেগতিক হয়ে যাচ্ছে। খুশি ফু দেওয়া শেষে বললো।
–এখন ঠিক লাগছে? নাকি আরেকটু ঠান্ডা হাওয়া দিবো? গলাও শুঁকিয়ে গেছে নাকি? ঠোঁট দুটো শুষ্ক হয়ে গেছে। চলো এদের একটু সিক্ত করে দেই।
খুশি এবার প্রহরের অধর পানে এগুতে লাগলো।কিন্তু প্রহর খুশিকে থামিয়ে দিয়ে বললো।
–খুশি এক মিনিট, আমার কথা শোন। দেখ তুমি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হওনি। এখুনি এসবের সময় হয়নি। এতে তোমার সমস্যা হতে পারে।

খুশি প্রহরের ঠোঁটের ওপর তর্জনী আঙুল ঠেকিয়ে বললো।
–হুঁশশ অনেক হয়েছে। কি অসুস্থ অসুস্থ লাগিয়ে রেখেছ? অ্যাম নট ইউর পেশেন্ট। অ্যাম ইউর ডিয়ার ওয়াইফ। সো ট্রিট মি লাইক দ্যাট।
খুশি প্রহরের কপাল আর গালে আঙুল বোলাতে বোলাতে বললো।
–জানো কক্সবাজারে তোমার ওই ব্যাড বয় ইমেজ টা কিন্তু আমার হেব্বি লেগেছিল। জাস্ট কিলিং। কিন্তু এখানে এসে তুমি আবারও সেই আগের বোরিং নীতিবান হয়ে গেছ। আই ওয়ান্ট দ্যাট গাই।

–আমার কথাটা তো…

আর বলতে দিলোনা প্রহরকে। তার আগেই আলতো করে ধাক্কা দিয়ে প্রহরকে বেডে ফেলে দিলো। তারপর গিয়ে প্রহরের পেটের ওপর চড়ে বসলো খুশি। প্রহরের দুই হাতের মাঝে নিজের হাত ঢুকিয়ে বেডের সাথে আটকে ধরে বললো।
–আই ওয়ান্ট মাই লাবিডাবি হাসব্যান্ড রাইট নাও।

–দেখ খুশি সোনা বোঝার চেষ্টা করো তোমার কষ্ট হবে।

খুশি প্রহরের কথায় বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করলো না। মাথা ঝুঁকিয়ে প্রহরের কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে লো ভয়েসে বললো।
–এই কষ্ট সুখের কষ্ট। আমার কিছুই হবে না। সত্যিই বলছি। প্লিজ প্রহর…

প্রহরতো এমনিতেই খুশিতে নিমজ্জিত। তারওপর প্রিয়তমার এমন আবদার ফিরিয়ে দেওয়ার সাধ্য নেই ওর। আর শক্ত রাখতে পারলোনা নিজেকে। নেশায় ডুবে গেল সে নিজেও। তার নেশা আরও বাড়িয়ে দিলো খুশির কোমল অধরের ছোঁয়া। যা এই মুহূর্তে খুশি ওর গলা আর ঘাড় জুড়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে। খুশি প্রহরের শার্টের বোতাম খুলে গলা বুক জুড়ে অধরের স্পর্শ ছড়িয়ে দিচ্ছে। পাগল হয়ে যাচ্ছে প্রহর। দুই হাতে খুশির কোমড় জড়িয়ে ধরে খুশিকে নিচে নামিয়ে দিলো। নিজে খুশির ওপর ঝুঁকে খুশির সারামুখে অধরের স্পর্শ চিহ্ন এঁকে দিতে দিতে লাগলো। তারপর অধর মেশালো খুশির অধরে। খুশির অধরসুধাপান করতে লাগলো। খুশিও প্রহরের মাথার চুল খামচে ধরে নিজেকে ভাসিয়ে দিলো প্রহরের মাঝে। অধর ছেড়ে খুশির গলায় নেমে এলো প্রহর। গলা ঘাড়ে ভরিয়ে দিচ্ছে ভালোবাসার ছোঁয়ায়। কম্পন শুরু হয়ে গেছে খুশির মাঝে। প্রহর মাথা তুলে খুশির চোখে চোখ রেখে বললো ।
–খুশি আবারও বলছি তোমার কিন্তু কষ্ট হবে। তুমি বললে আমি এখনো থেমে যাবো।

খুশি কোন কিছু না বলে প্রহরের সাথে অধরযুগল মিলিয়ে নিলো। প্রহর খুশির জবাব পেয়ে গেল। তাই সে খুশিকে নিয়ে ডুব দিলো প্রেম সাওরের অথই সমুদ্রে। সাদা মেঘের ভেলায় ভেসে হারালো দুজন স্বপ্নের রাজ্যে।

চলবে…….

গল্পের লেটেস্ট আপডেট পেতে আর গল্প নিয়ে যেকোনো আলোচনা আড্ডা দিতে আমার গ্রুপে জয়েন হওয়ার আমন্ত্রণ রইল। নিচে গ্রুপ লিংক দেওয়া হলো। জয়েন হতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। 👇
গ্রুপ
https://facebook.com/groups/170529085281953/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here