অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ #পর্ব-৩০

#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-৩০
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★স্নিগ্ধ আলোর সরু এক কিরণ জানালার পর্দা ভেদ করে এসে প্রবেশ করলো রুমে। আধার সরিয়ে দিয়ে জাগিয়ে তুললো নতুন উদ্যমের নতুন সুপ্রভাত। প্রভাতের আলোয় পরিস্ফুটিত হলো চাদরে মোড়ানো আলিঙ্গনরত এক সুখী দম্পতির। ঘুমন্ত মুখশ্রীতেও যেন সুখ রাজ্যের সমাহার ছড়িয়ে আছে। তাদের প্রনয়লীলা দেখে প্রকৃতিও মুচকি হাসছে। যে হাসির রেখা ছড়িয়ে পড়ছে ধরনী জুড়ে।

ঘুম ভেঙে আসতেই ঢিপঢিপ ধ্বনি তরঙ্গ কানে এলো খুশির। আঁখি যুগল মেলে তাকালো সে। প্রহরের উন্মুক্ত বুকে আবিস্কার করলো নিজেকে।মুচকি হেসে কিছুক্ষণ কান পেতে শুনতে লাগলো প্রহরের হৃৎস্পন্দন। তারপর আস্তে করে মাথা তুলে তাকালো সে। প্রহরের বুকে নিজের নামের ট্যাটু টা দেখতে পেল খুশি। আলতো করে হাত বোলালো সেখানে। ট্যাটু টা যতবারই দেখে ততবারই আবেগপ্রবণ হয়ে যায় খুশি। নিজেকে তখন দুনিয়ার সবচেয়ে ভাগ্যবতী মনে হয়। মাথা নামিয়ে গভীর করে অধর ছোঁয়াল ট্যাটু করা জায়গায়। এরপর আরেকটু উজিয়ে গিয়ে প্রহরের মুখোমুখি হলো। প্রহর এখনো ঘুমে বিভোর। ঘুমন্ত মুখটাতে কতো সুন্দর প্রশান্তি ছড়িয়ে আছে। খুশি মুচকি হেঁসে প্রহরের কপালেও পরম আদরে নিজের অধর ছোঁয়ালো। তারপর প্রহরের দিকে মায়াময় চোখে তাকিয়ে প্রহরের গালে আলতো করে হাত বোলাতে লাগলো। এখন একটু শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। তাছাড়া জেগে থাকলে তো সারাক্ষণ শুধু আমার চিন্তাতেই অস্থির হয়ে থাকে। এতটা কেন পাগল এই ছেলেটা? আই মিন কেউ কতটা ভালোবাসলে কষ্ট পাবে ভেবে নিজের বউকে আদর করতে চায়না। এত ভালো ও কিভাবে বাসতে পারে? আর এই পাগল টাকে আমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও কতো কষ্ট দিয়েছি। কতো যন্ত্রণা দিয়েছি। দিনের পর দিন কতো কষ্ট পেয়েছে আমার জন্য। সেজন্য নিজেকে হয়তো কখনো মাফ করতে পারবোনা। তবে আমি প্রমিজ করছি প্রহর। এখন থেকে আমার জীবনের একটাই উদ্দেশ্য হবে তোমাকে সুখী রাখা। নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে শুধু তোমাকে সুখী করার চেষ্টা করবো। তোমার মুখের এই প্রশান্তি আমি বিলীন হতে দিবোনা। কিছুতেই না।

এসব ভাবতে ভাবতে আবেগপ্রবণ হয়ে চোখে পানি চলে আসে খুশির। চোখের পানি টপ করে পড়ে প্রহরের মুখের ওপর। নড়েচড়ে উঠে প্রহর। কপাল কুঁচকে চোখ মেলে তাকায় সে। চোখ খুলেই খুশির অশ্রুসজল চোখ দেখে ঘাবড়ে যায় প্রহর। অস্থির হয়ে দুই হাতে খুশির মুখটা ধরে ভয়ার্ত কন্ঠে বললো।
–হেই খুশিরাণী কি হয়েছে তোমার? কাঁদছ কেন? শরীর খারাপ করছে? দেখেছ বলেছিলাম না তোমার কষ্ট হবে? এখন হলো তো? নিশ্চয় তোমার শরীর খারাপ হচ্ছে তাইনা? দোষ আমারই। আমার নিজেকে আরও নিয়ন্ত্রণ করার দরকার ছিল। আমার জন্য তোমার এখন শরীর খারাপ……

আর বলতে পারলোনা প্রহর। খুশি তার অভিনব কৌশলে প্রহরের মুখ বন্ধ করে দিলো। খুশির আচমকা এ্যাকশনে প্রহরও থ হয়ে গেল। খুশি প্রহরের অধর ছেড়ে দিয়ে বলে উঠলো।
–এত ঘাবড়ানোর কিছুই নেই মিঃ হাসব্যান্ড। চোখের পানি সবসময় শুধু কষ্টেরই হয়না। কখনো কখনো অতি সুখেও চোখে বরষা শুরু হয়। আর আমার এখনকার চোখের পানিও আমার অতি সুখের বহিঃপ্রকাশ। যে সুখের রাজ্য তুমি আমাকে দিয়েছ।

প্রহর খুশির গালে হাত বুলিয়ে মায়া ভরা বললো।
–সে যাইহোক, দুঃখের হোক বা সুখের হোক তোমার চোখে কোন পানি আসবেনা ব্যাস। আমার সহ্যশক্তির চেয়েও বেশি তোমাকে কাঁদতে দেখেছি আমি। আর পারবোনা। তোমার চোখে আর এক ফোঁটা পানিও আমি দেখতে চাইনা। আমি আমার আগের সেই হাস্যজ্বল প্রাণচঞ্চল দুষ্টুপরি টাকে দেখতে চাই। যার চঞ্চলতা আর উদ্দীপনায় সারাবাড়ি মেতে উঠবে।

খুশি দুষ্টু হেসে বললো।
–আচ্ছা তাই? ওকে জো হুকুম জাঁহাপনা।
কথাটা বলেই খুশি গায়ের চাদর টা টান দিয়ে ফট করে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের গায়ে পেঁচিয়ে নিল। বেচারা প্রহর থতমত খেয়ে তড়িঘড়ি করে বিছানার বেডশিট টান দিয়ে নিজের ইজ্জত ঢাকার চেষ্টা করে বললো।
–আরে আরে সকাল সকাল নিজের হাসব্যান্ড এর মানহানি করছ?

খুশি বাঁকা হেসে বললো।
–বারে তুমিই তো বললে আগের ফর্মে ফিরে আসতে। তাইতো করছি। তোমার দুষ্টুপরির দুষ্টুমি ইশটাট( স্টার্ট)

–আচ্ছা তাই বুঝি? দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।
প্রহর উঠে দাঁড়িয়ে বেডশিট টা কোমড়ে পেচিয়ে নিয়ে খুশির দিকে অগ্রসর হলো। অবস্থা বেগতিক দেখে খুশিও দৌড় দিল প্রহরের হাত থেকে বাঁচার জন্য। প্রহরও খুশির পিছে পিছে দৌড়াচ্ছে। খুশি খিলখিল করে হাসছে বেডের চারপাশে দৌড়াচ্ছে। প্রহর হাসিমুখে ছুটছে খুশির পেছনে। ছুটতে ছুটতে একসময় খুশিকে ধরে ফেললো প্রহর। দুই হাতে পেছন থেকে খুশির কোমড় পেঁচিয়ে ধরে খুশিকে উঁচু করে ধরে গোলগোল ঘুরতে লাগলো। আর খিলখিল করে হেঁসেই যাচ্ছে । প্রহর এবার খুশিকে দাঁড় করালো,তারপর আবার পাঁজা কোলে তুলে নিলো। খুশি মুচকি হেঁসে প্রহরের গলা জড়িয়ে ধরলো। প্রহর খুশিকে নিয়ে ওয়াশরুমের ভেতর ঢুকে পড়লো।
__

ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে খুশিকে শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছে প্রহর। আজ খুশিকে শাড়িতে দেখার ইচ্ছে হচ্ছে প্রহরের। তাই সে নিজের হাতেই ওর বউকে শাড়ীতে সুসজ্জিত করছে। শাড়ী পড়ানো শেষে প্রহর খুশিকে রেডি করিয়ে দিল। খুশির কপালে আবেগের পরশ এঁকে দিয়ে খুশির হাত ধরে নিচে নেমে এলো। নিচে এসে দেখলো জিদান সাহেব সোফায় বসে পেপার পড়ছেন। প্রহর আর খুশিকে দেখে জিদান সাহেব গম্ভীর কন্ঠে বললেন।
–সকাল হলো তাহলে? বলছে যে ঘুম থেকে উঠতে তো বেলা দুপুর করলেন। তা বাসার কাজকাম গুলো কে করবে শুনি? সকালের ব্রেকফাস্ট কে বানাবে? কোন দায়িত্ববোধ আছে কি নেই? এই শিক্ষা পেয়েছেন?

জিদান সাহেবের হঠাৎ এমন কথায় প্রহর খুশি দুজনই অবাক হলো। প্রহর ভ্রু কুঁচকে বললো।
–বাবা তুমি…

প্রহর কিছু বলতে যাবে তার আগেই খুশি মাথা নিচু করে মলিন সুরে বললো।
–সরি এসবি। ভুল হয়ে গেছে। এরপর থেকে আর এমন হবে না।

জিদান সাহেব বলে উঠলেন।
–আরে আরে তুমি কেন সরি বলছ বৌমা? আমি কি তোমাকে বলছি নাকি? আমিতো এই নালায়েক টাকে বলছিলাম। এতবেলা হয়ে গেছে জনাব ব্রেকফাস্ট না বানিয়ে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। শুনি কাজকাম গুলো কে করবে শুনি? এই শিক্ষা দিয়েছি আমি তোকে?

প্রহর এবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। ওতো ভুলেই গিয়েছিল যে, ওর বাবা আরেক ড্রামাবাজ। খুশিও এবার মুচকি হেঁসে বললো।
–থাক থাক এসবি আজকের মতো মাফ করে দিন ওকে। বেচারা রাতভর অনেক খাটাখাটুনি করেছে তো।

খুশির কথায় প্রহরের কাশি উঠে গেল। চোখ বড়বড় করে তাকালো খুশির দিকে। কি পাগল মেয়েরে বাবা। শশুরের সামনে কেউ এসব বলে? খুশি দুষ্টু হেসে বললো।
–আই মিন রাত জেগে জেগে আমার সেবাযত্ন করেছে তো। তাই হয়তো সকাল সকাল উঠতে পারেনি বেচারা। এবারের মতো ছেড়ে দিন। এরপর থেকে আমি ওকে সময়মতো উঠিয়ে দেবো।

জিদান সাহেব বলে উঠলেন।
–হ্যাঁ তো? বউয়ের সেবা করা তো ওর দায়িত্ব। এতে এতো ফুটেজ খাওয়ার কি আছে? তার বদলে কি কাজে ফাঁকি দেবে নাকি? আজকে তোমার জন্য ওকে মাফ করে দিলাম। নাহলে আজ ওকে দেখিয়ে দিতাম এই জিদান সাহেব কি জিনিস।

প্রহর বুঝে গেল এখানে আর কিছুক্ষণ থাকলে ওর ইজ্জতের আবর্জনা হয়ে যাবে। এই বউ শশুর এক জায়গায় হলে ওর আর কোন ভেলুই থাকে না। দুইটা একই কোয়ালিটির। প্রহর তাই মাথা নেড়ে ওখান থেকে সরে কিচেনের দিকে পা বাড়ালো। প্রহর যেতেই খুশি জিদান সাহেবের হাতের সাথে হাইফাই দিয়ে দুজনেই হেঁসে উঠলো।

প্রহর কিচেনে এসে ব্রেকফাস্ট বানানোর কাজে লেগে পড়লো। এক চুলোয় খুশির জন্য দুটো ডিম সিদ্ধ দিয়ে আরেক চুলোয় ওর বাবার জন্য অমলেট বানানোর জন্য ফ্রাই প্যান গরম করতে দিলো। টোস্টার মেশিনে ব্রেড দিলো টোস্ট করতে। তারপর পেঁয়াজ কাটা শুরু করলো। হঠাৎ পেছন থেকে খুশি এসে জড়িয়ে ধরলো প্রহরকে। প্রহর মুচকি হেঁসে হাতের পেঁয়াজ আর ছুরিটা রেখে পেছনে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো।
–তুমি কেন এখানে এসেছ? কিচেনের গরমে মাথা ঘুরাবে তোমার। তুমি বাইরে গিয়ে বাবার সাথে বসো। আমি পাঁচ মিনিটের ভেতরেই ব্রেকফাস্ট নিয়ে আসছি।

–আমার কিছু হবে না। আর নাস্তা আমি বানাচ্ছি। তোমার এসব করতে হবে না। বাড়ির বউ হিসেবে আমারও তো কিছু দায়িত্ব আছে।

–তোমাকে না বলেছি বেশি পাকনামো দেখাতে আসবেনা। চুপচাপ বাইরে গিয়ে বসো।

–দেখ ভয় পাওয়ার দরকার নেই। আমি এখন রান্না শিখে গেছি।
খুশি মলিন সুরে বললো।
–তুমি যখন কাছে ছিলে না। তখন তোমার কথা মনে করে করে রোজ কিছু না কিছু বানাতাম। আর তোমাকে ভেবে নিজেই সেগুলো খেতাম। প্রথম প্রথম খুব বাজে হতো। তবুও খেতাম। কারণ তুমিওতো আমার ওই বাজে খাবার গুলো বিনাবাক্যে খেয়ে নিতে। এভাবে একসময় আমার রান্নার হাতও ভালো হয়ে গেল। এখন আমি ভালোই রান্না করতে পারি।

খুশির মলিন চেহারা দেখে প্রহর বলে উঠলো।
–এই এই খবরদার কাঁদবে না কিন্তু। চোখ দিয়ে যেন কোন পানি বের হতে না দেখি। নাহলে কিন্তু আমি সত্যিই মার দিবো তোমাকে।

খুশি প্রহরের দুই গাল টেনে টেনে ঠোঁট চোখা করে বললো।
–অঁওওওওও… এত্তো কিউট কেন তুমি? আমার কিউটি লোলি পোলি টোলি মোলি গুলগুলি…

প্রহর হেঁসে উঠে বললো।
–তুমি আর তোমার এসব আজব ল্যাঙ্গুয়েজ। কোথাথেকে পাও এসব? আচ্ছা যাইহোক এখন যাও বাইরে যাও। আমি এখুনি নাস্তা নিয়ে আসছি।

খুশি ঠোঁট উল্টে আদুরে গলায় বললো।
–একটু থাকি না??

–নো মিনস নো। যাও বাইরে যাও।

খুশি মুখ ছোট করে বললো।
–ওকে..

খুশির লটকানো মুখ টা দেখে প্রহর মৃদু হাসলো। দুই হাতে খুশির মুখটা ধরে আলতো করে একটা চুমু খেল খুশির অধরে। তারপর বললো।
–এখন যাও প্লিজ।

খুশি হাসিমুখে বললো।
–আচ্ছা।
__

ডাইনিং টেবিলে নাস্তা করছে সবাই। প্রহর বরাবরের মতোই খুশিকে খাইয়ে দিচ্ছে। কাটা চামচে খাবার তুলে খুশির মুখে দিচ্ছে। জিদান সাহেব খেতে খেতে বললেন।
–প্রহর একটা কথা ছিল।

–হ্যাঁ বাবা বলো।

–বলছিলাম তোদের বিয়েটা তো হঠাৎ করে হলো। কাওকে জানাতেই পারিনি। এখন যেহেতু খুশি মাও সুস্থ হয়ে গেছে। তাই ভাবছি সামনের শুক্রবারে বড়ো করে একটা রিসিপশন পার্টি রাখবো। তুই কি বলিস?

–ওকে বাবা। তোমার যেমন ইচ্ছে।

–ঠিক আছে তাহলে সামনের শুক্রবারেই রিসিপশন পার্টির আয়োজন করি।
__

এতদিন পর নিভান আবার ওর আগের স্কুলে এসেছে। সারেরা পরিচিত থাকায় এতদিন পরেও আবার স্কুল কন্টিনিউ করতে পারছে ও। অবশ্য নিভানের বাবা এসে টিচারদের সবকিছু খুলে বলেছিল। তাই তারাও আর মানা করেনি। নিউ টেনে ওঠার পরপরই হঠাৎ ওভাবে চলে যেতে হয় ওদের। আর আজ পাঁচ ছয় মাস পর আবার আসছে ও। ওর নজর শুধু খুজে চলেছে একজনকেই। হঠাৎ চলে যাওয়ায় স্পৃহাকে কিছু বলতে পেরেছিলোনা তখন। পরবর্তীতে আর যোগাযোগ করতে পারেনি ও। মেয়েটা নিশ্চয় ওর ওপর কতো রেগে আছে। কথাও বলবে কিনা কে জানে?

হাঁটতে হাঁটতে সেই বটতলায় এলো নিভান। যেখানে ওরা রোজ বসে আর্টক্লাস করতো আর সময় কাটাতো। বটতলার কাছে আসতেই স্পৃহাকে দেখতে পেল নিভান। মেয়েটা কেমন মন মরা হয়ে বসে আছে। নিভান হাসিমুখে এগিয়ে গেল ওর কাছে। কাছে এসে বললো।
–হায় স্পৃহা,, কেমন আছ?

নিভানকে দেখে চমকে গেল স্পৃহা। তবে হঠাৎ মুখশ্রী কঠিন করে বললো।
–এক্সকিউজ মি? তুমি কে? আমি কি চিনি তোমাকে?

নিভান অবাক হয়ে বললো।
–কি বলছ স্পৃহা? আমি নিভান। তুমি চিনতে পারছনা আমাকে?

–সরি আমি নিভান ফিভানকে চিনি না।

কথাটা বলে স্পৃহা ওখান থেকে চলে যেতে লাগলো। নিভান বুঝতে পারছে স্পৃহা মারাত্মক রেগে আছে। নিভান স্পৃহার হাত ধরে আটকালো ওকে। স্পৃহা রাগী চোখে তাকিয়ে বললো।
–এসব কি অসভ্যতামো? ছাড়ো বলছি।

নিভান বিনয়ী সুরে বলে উঠলো।
–অ্যম রিয়েলি সরি স্পৃহা। তোমার রাগ করা একদম জায়েজ। কিন্তু একবার আমার কথাটা তো শোন প্লিজ। আই ক্যান এক্সপ্লেইন ইউ।

–আমি তোমার কোন কথায় শুনতে চাইনা। ছাড় আমাকে। কিছু বলার থাকলে আগেই বলতে। এভাবে হঠাৎ করে হারিয়ে যেতে না। তোমার কাছে যদি আমার বিন্দুমাত্র দাম থাকতো তাহলে অন্তত একটা বার আমাকে বলে যেতে। কিন্তু বলোনি তাহলে এখন কি বলতে চাও? জানো তোমার ওভাবে হঠাৎ গায়েব হয়ে যাওয়ায় আমার কতো খারাপ লেগেছিল? তুমি কিভাবে জানবে?

কথা বলতে বলতে স্পৃহার গলা ধরে এলো। স্পৃহা হাত ছাড়িয়ে আবারও চলে যেতে লাগলো। নিভান এবার স্পৃহার সামনে এসে হঠাৎ হাঁটু গেড়ে বসে দুই কান ধরে অনুনয়ের সুরে বললো।
–প্লিজ স্পৃহা অ্যাম সরি। দেখো তুমি ভুল ভাবছ।তুমি আমার কাছে অনেক ইম্পর্ট্যান্ট। আমার জীবনে তুমিই আমার একমাত্র ফ্রেন্ড। আসলে আমাদের জীবনে হঠাৎ এমনকিছু হয়েগিয়েছিল যে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ আমাদের এই শহর ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল। তাই তোমাকে জানানোর সময় ধরে পাইনি। আমাদের আগের সব নাম্বারও বদলে ফেলেছিলাম তাই যোগাযোগ করতে পারিনি। প্লিজ একটা সুযোগ দাও আমাকে। আমি তোমাকে সব খুলে বলছি।

নিভানের আকুতি মিনতি দেখে স্পৃহার একটু মায়া হলো। এবার একটু নরন হয়ে বললো।
–ঠিক আছে ঠিক আছে ওঠ এবার। স্কুলের মধ্যে তামাশা করতে হবে না। পাঁচ মিনিট দিচ্ছি যা বলার বলো।

নিভান এবার মুচকি হেঁসে বললো।
–ঠিক আছে তাহলে চলো বটতলায় গিয়ে বসি।

স্পৃহা আর নিভান গিয়ে বটতলায় বসলো। নিভান ধীরে ধীরে সবকিছু খুলে বললো স্পৃহাকে। সব শুনে স্পৃহারও খারাপ লাগলো। স্পৃহা এবার মুচকি হেঁসে বললো।
–ঠিক আছে এবারের মতো মাফ করে দিলাম তোমাকে। আর যেন না হয়।

–একদমই না। আর কখনো এমন হবে না।
নিভান হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো।
–দেন ফ্রন্ডস এগেইন?

স্পৃহাও হাসিমুখে হাত মিলিয়ে বললো।
–উই আর অলওয়েজ ফ্রেন্ডস।
___

আজ শুক্রবার, খুশি আর প্রহরের রিসিপশন পার্টি আজ। পার্টি সেন্টারে জমজমাট আয়োজন করা হয়েছে। ফেইরিলাইটস আর রঙবেরঙের ফুলে সেজেছে পুরো হল। সব মেহমানরা এসে গেছে। প্রহরও মিনিট পাঁচেক হলো রেডি হয়ে বসে আছে মঞ্চে। কিন্তু খুশিকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না ও। নজর শুধু খুশিকেই খুঁজছে। ফাহিম কে কয়বার জিজ্ঞেস করেছে। কিন্তু সেও কিছু বলছেনা। অধৈর্য হয়ে যাচ্ছে প্রহর। সেই কখন থেকে দেখেনা ওর খুশীরাণীকে। নাজানি কত সুন্দর লাগছে আজ ওকে। প্রহরের যেন আর তর সইছে না।

হঠাৎ সব লাইট বন্ধ হয়ে গেল। স্পট লাইট পড়লো সামনের ডান্স ফ্লোরে। সাথে সাথে মিউজিক প্লেয়ারে মিউজিক চালু হয়ে গেল। চারজন লোক মিলে কাঁধে করে একটা সিংহাসন নিয়ে আসছে। যার ওপর স্টাইল নিয়ে বসে আছে খুশি। মেরুন রঙের লেহেঙ্গা, মাথায় দোপাট্টা, আর চোখে কালো চশমা। খুশির এই সোয়্যাগ আবতার দেখে প্রহরের মুখ গোল আলুর মতো হা হয়ে গেল। মঞ্চের মাঝখানে এসে খুশিকে নামিয়ে দিলো। খুশি নেমে দাঁড়িয়ে চশমাটা হালকা নিচু করে প্রহরের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মেরে দিলো। প্রহর হেঁসে দিল। খুশি হেলেদুলে হাত নাড়িয়ে নাচতে নাচতে গেয়ে উঠলো।
♬ তু জানু বানু জো কেহতা হে
♬ বিবি তেরি হু লাগতাহে সামে মোর সামে
♬ মে সামে সামে জো কেহতা হু
♬ মারাদ মেরা তু লাগতাহে সামে মোর সামে
(খুশি সিড়ি বেয়ে প্রহরের কাছে যেতে যেতে গাইলো)
♬ তেরে পিছে পিছে চালু জেইসে
♬ তেরে পিছে পিছে চালু জেইসে
♬ মান্দির কি সিড়িপে চারু সামে
(প্রহরের পাশে এসে বসে গাইলো)
♬ তেরে বাগল বেঠু এইসে জেইসে
♬ শীবজি বাগল গৌরি মোর সামে
(খুশি প্রহরের হাত ধরে নিচে আনতে আনতে গাইলো)
♬ ও ডাগার জাবা তেরি নাজার
♬ লে যায়েগি প্রেম নাগার সামে আয় সামে
(নিচে এসে প্রহরের চারপাশে ঘুরে নাচতে নাচতে গািলো)
♬ আরে সামে,আজা সামে,বালাম সামে
♬ সানাম সামে
♬ আজা সামে, বালাম সামে,সানাম সামে..

প্রহরও খুশির হাত ধরে ডান্স করতে লাগলো। শেষের দিকে জিদান সাহেব ফাহিম সহ খুশির পরিবারের সবাই এসে উড়াথুড়া নাচা শুরু করে দিলো। আনন্দ উল্লাসের মাধ্যমেই শেষ হলো ওদের রিসিপশন পার্টি।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here