অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ #পর্ব-৩৫

#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-৩৫
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★ভারি চোখ দুটো অনেক কষ্টের পর মেলে তাকাতে সক্ষম হলো খুশি। মাথাটাও প্রচন্ড ভারি হয়ে আছে। এক হাত মাথায় চেপে ধরে চোখ খুলে তাকালো খুশি। তবে মনে হচ্ছে এখনো ও চোখ পুরোপুরি খুলতে পারেনি। কারণ চোখের সামনে কালো আধার ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। খুশি এবার চোখের পাতা ভালো করে ডলে নিয়ে আবারও মেলে তাকালো। তবুও সেই একই কালো আধার দেখতে পাচ্ছে সে। খুশি এবার ধড়ফড়িয়ে নড়েচড়ে বসলো। আশেপাশে মাথা ঘুড়িয়ে শুধু গাঢ় অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। ভয়ে জমে গেল খুশি। এ এ আমি কোথায় এসেছি? এটা কোন জায়গা?আমিতো তখন মেলায় ছিলাম। এখানে কি করে এলাম? প্রহর কোথায়? প্রহর…. প্রহর…খুশি ভয়ার্ত কন্ঠে চিৎকার করে প্রহরকে ডাকতে লাগলো। কিন্তু কোথাও সারাশব্দ পাচ্ছে না সে। খুশির হঠাৎ মনে পড়লো তখন মেলায় হঠাৎ কে যেন ওর নাকের সামনে কিছু স্প্রে করলো। ব্যাস তারপর থেকে আর কিছু মনে নেই। তা তারমানে কি কেউ ওকে কিডন্যাপ করে এনেছে? তবে কি ওই ভয়ংকর লোকটা আমাকে কিডন্যাপ করে এনেছে? কথাটা ভাবতেই ভয়ে কলিজা কেঁপে উঠল খুশির। এ এখন কি হবে? আমি কি করবো? আর এটা কোন জায়গা?

খুশি অন্ধকারের মাঝে হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করলো ও কোথায় আছে। হাতের সাথে কিছুক্ষণ পরপরই শুধু গাছ বাঁধছে। আর পায়ের নিচে মাটি আর পাতার ঢের। চাঁদের হালকা আলোয় খুশি বুঝতে পারলো ও জঙ্গলের ভেতর রয়েছে। হয়তো বিচের ধারে ঝাউবনের মাঝে। এই ঘন অরণ্যের মাঝে এখন কোনদিকে যাবে খুশি? কিছুই বুঝতে পারছে না ও। একা এই নির্জন জঙ্গলে ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে সে। দুচোখে নেমে আসছে করুন কান্নার ঝর্ণাধারা। ও কিভাবে এখান থেকে বের হবে? প্রহর… তুমি কোথাই? প্লিজ নিয়ে যাও আমাকে এখান থেকে। আমার অনেক ভয় করছে। প্রহর… শুনতে পাচ্ছ তুমি? তোমার খুশি এখানে হারিয়ে গেছে। প্লিজ জলদি এসো…

হাঁটু মুড়ে বসে কাঁদতে লাগলো খুশি । চারিদিকে গভীর ঘেরা অরণ্যে কোনদিকে সঠিক পথ সেটা কি করে বুঝবে ও? কিভাবে বের হবে এখান থেকে? প্রহর? ওর প্রহরের নাজানি কি অবস্থা হচ্ছে ওকে না পেয়ে। কিভাবে ফিরবো আমার প্রহরের কাছে? সেকি আর কখনো ওর প্রহরের কাছে ফিরতে পারবেনা? ভয় আর চিন্তায় মুষড়ে যাচ্ছে খুশি। হৃদপিণ্ড আর শরীর দুইই সমানতালে কাঁপছে। আর ওর ভয়ের মাত্রা আরও বেড়ে গেল হঠাৎ জঙ্গলের জীব জন্তুর ভয়ংকর সব আওয়াজে। আচমকা চারিদিক থেকে নানানরকম জীবের হুংকার শোনা যেতে লাগলো। এবার বুঝি আতঙ্কেই জান বেড়িয়ে যাবে খুশির। খুশি কোনরকমে মনে সামান্য জোর বল এনে উঠে দাঁড়িয়ে দিশাহীন ভাবে দৌড়াতে লাগলো। দৌড়াতে দৌড়াতে অন্ধকারে হঠাৎ ওর পায়ের নিচে কোন কাটা জাতীয় কিছু বিঁধল। খুশি ব্যাথায় আর্তনাদ করতে নিয়েও আবার নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরলো। জঙ্গলের প্রাণীরা যাতে ওর আওয়াজ না শুনতে পায় সেকারণে। খুশি অন্ধকারে হাতড়িয়ে পায়ের কাটাটা টান দিয়ে ছাড়ালো। সাথে সাথে পা দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হতে লাগলো। যন্ত্রণায় খুশির চোখ মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। তবুও অনেক কষ্টে ওই ক্ষত পা নিয়েই খুশি আবারও দৌড়াতে লাগলো।
__

রাতের ১১টা বাজতে চললো। গত চার ঘন্টা যাবৎ খুশিকে পাগলের মতো হন্যে হয়ে খুঁজে যাচ্ছে প্রহর। ফাহিম আর তিশাও খোঁজার চেষ্টা করছে খুশিকে।প্রহর এখানকার পুলিশকেও জানিয়েছে। তারাও নিজেদের মতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে খুশির কোন খোঁজ পায়নি ওরা। প্রহরের মাথা শূন্য হয়ে গেছে। এতটা সময় ধরে খুশি নিখোঁজ। ও কোথায়, কি অবস্থায় আছে, ওর সাথে কোন অঘটন হলো নাকি এসব ভয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছে প্রহর। হৃৎপিণ্ডের কম্পন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। খুশি বিহীন সবকিছু যেন বিষাক্ততায় ভরে উঠছে। মাথায় চুল টেনে ধরে নিচে হাঁটু গেড়ে ধপ করে বসে পড়লো প্রহর। নিজেকে চরম ভয়ংকর শাস্তি দিতে ইচ্ছে করছে ওর। সব আমার কারণে হয়েছে। আমি কেন আমার খুশিকে একা ছাড়লাম? যখনি আমি ওকে একা ছাড়ি তখনই ওর সাথে কিছু না কিছু হয়। আসার পর থেকেই ওর সাথে কিছু না কিছু হচ্ছে। তারপরও কেন আমি ওকে একা ছাড়লাম? কেন? কেন?কেন? সব আমার কারণে হয়েছে। আমি পারিনি আমার খুশির খেয়াল রাখতে। আই জাস্ট হেট মাইসেল্ফ।

ফাহিম এসে প্রহরের কাঁধে হাত রেখে বললো।
–নিজেকে সামলা প্রহর। এভাবে ভেঙে পড়লে কিভাবে চলবে? ভাবিজীকে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।

প্রহর করুন বেদনার্ত কন্ঠে বললো।
–কিভাবে সামলামো ফাহিম আমি? বল কিভাবে? গত চার চারটা ঘন্টা ধরে আমার খুশি আমার কাছে নেই। চার চারটা ঘন্টা, ভাবতে পারছিস তুই। আর এই অপদার্থ আমি কিচ্ছু করতে পারছিনা। নিজেকে এতো অসহায় আমার কখনোই মনে হয়নি।একবার আগেও ওকে হারিয়ে কতো সাধনার পর ওকে আবার ফিরে পেয়েছিলাম। কিন্তু আজ আমার অসাবধানতার কারণে আমার খুশিকে আবার হারিয়ে ফেললাম। সব আমার দোষ। আমার দোষ।
নিজের ওপর রাগ করে মাটিতে সজোরে ঘুষি মারতে লাগলো প্রহর।

ফাহিম ওকে কোনরকমে থামিয়ে দিয়ে বললো।
–বাচ কর ইয়ার।এখন নিজেকে দোষারোপ করার সময় না। আমাদের ভাবিজীকে খুজে বের করতে হবে। নিজেকে শক্ত কর।

প্রহর উঠে দাঁড়িয়ে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ খুঁজে বের করতে হবে। আমার খুশিকে আমি যে করেই হোক আমি খুঁজে বের করবোই। অবশ্যই খুজে বের করবো।

কথাটা বলেই প্রহর আবারও পাগলের ছুটলো খুশিকে খুঁজতে। ঝাউবনের দিকে এগিয়ে গেল খুঁজতে খুঁজতে। ফাহিমও গেল প্রহরের সাথে। রাত অনেক হওয়ায় ফাহিম তিশাকে রিসোর্টে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন শুধু ওরা দুজনেই খুঁজছে খুশিকে। হাতে টর্চ নিয়ে দুজন হন্যে হয়ে খুঁজে যাচ্ছে। হঠাৎ ঝাউবনের দিকে খোজাখুজি করতে করতে চকচকে কোন কিছু দেখতে পেল মাটিতে। প্রহর হাত বাড়িয়ে সেটা তুলে ভালো করে খেয়াল করে দেখলো এটা খুশির কানের দুল। যেটা সে আজ বিচে আসার আগে পড়েছিল। প্রহর ফাহিমের উদ্দেশ্যে বললো।
–ফাহিম এটা খুশির কানের দুল।

–আর ইউ শিওর??

–অফকোর্স ইয়ার। ওর কোন জিনিস চিনতে আমি ভুল করতে পারি নাকি? আজ সকালেই খুশি এগুলো পড়ে এসেছিল।

–তাহলে আমার মনে হয় ভাবিজী হয়তো এই ঝাউবনের মাঝেই কোথাও আছে। আমরা ভালো করে খুঁজলেই পেয়ে যাবো।

প্রহর আর এক মুহূর্তও আর বিলম্ব না করে ছুটে গেল ঝাউবনের দিকে। টর্চের আলো এদিক ওদিক ছড়িয়ে খুশিকে খুঁজতে লাগলো। ফাহিমও ওর সাথে সাথে খুঁজে চলেছে। অনেকক্ষণ খোঁজার পর হঠাৎ মাটিতে রক্তের দাগ দেখতে পেল প্রহর। অন্তর কেঁপে উঠল প্রহরের। ভয়ার্ত কন্ঠে বললো।
–র রক্ত.. ফাহিম রক্ত কেন এখানে? এ এটা নিশ্চয় খুশির হবে না। তাইনা বল?

রক্ত দেখে ফাহিমেরও চিন্তা হচ্ছে। খুশির সাথে কোন অঘটন হয়নিতো? ফাহিম মাটিতে ভালো করে খেয়াল করে কিছু একটা দেখে বললো।
–রিলাক্স প্রহর এই দেখ এখানে রক্ত লাগা কাটা দেখা যাচ্ছে। মনে ভাবিজীর পায়ে কাটা বিঁধেছিল। সেটারই রক্ত। তারমানে ভাবিজী আশেপাশেই কোথাও আছে। এটা একটা ভালো খবর আমাদের জন্য। এখন অতিশীঘ্রই ভাবিকে পেয়ে যাবো দেখিস।

–হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস। আমার খুশিকে পেয়ে যাবো আমি। খুশিইই..খুশিইই…
খুশির নাম ধরে উচ্চস্বরে ডাকতে ডাকতে খুশিকে খুঁজতে লাগলো ওরা। রক্তের দাগ যেদিকে যাচ্ছে। ওরাও সেদিকে ছুটতে লাগলো।
__

খুশি ক্ষত পায়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দৌড়েই যাচ্ছে। কোন দিশায় যাচ্ছে তা জানা নেই। শুধু মনে হচ্ছে দৌড়ালেই বুঝি প্রাণে বাঁচবে ও। তবে আর বেশিক্ষণ দৌড়াতে পারলোনা ও। হঠাৎই থেমে গেল ওর কদম। খুশির সামনে প্রকট হলো আবারও সেই ভয়ংকর মানব। মুখে তার লাল আলো ওয়ালা মনস্টার মাস্ক লাগানো। ভয়ংকর পৈশাচিক হাসি হাসতে লাগলো সে। সাথে বের করলো তার সেই ধারালো ছুরি। যেটা সে খুশির দিকে তাক করে আছে। খুশির এতক্ষণ যাও বা মনোবল ছিল তাও এবার নিঃশেষ হয়ে গেল। বিষম ভয়ে অন্তর,আত্মা, হৃৎপিণ্ড তাড়াস তাড়াস করে একসঙ্গে মুচড়ে যেতে লাগলো। এখন কি করবে ও? আর কোথায় পালাবে? তবে কি শেষ এখানেই?

সব আশার আলো যখন নিভে যেতে লাগলো তখনই যেন নতুন প্রাণের আলো ফিরে পেল খুশি। হঠাৎ প্রহরের আওয়াজ শোনা গেল। ওইতো পাগলের মতো ডেকে প্রহর ওর খুশিকে। প্রহরের কন্ঠ ভেসে আসতেই সামনের ভয়ংকর মানব টি হঠাৎ করে ওখান থেকে সরে গেল। খুশি প্রহরের কন্ঠ অনুসরণ করে সেদিকে এগিয়ে গেল।

প্রহর উন্মত্ত হয়ে খুশিকে খুঁজে যাচ্ছে। চিল্লিয়ে ডাকছে,
–খুশিইইই…..খুশিইইই…কোথায় তুমি??দেখ আমি এসে গেছি। তোমার প্রহর চলে এসেছে। খুশিইইই….

তখনই সামনে থেকে কারো আসার পদধ্বনি পেল ওরা। টর্চের আলো সামনে ধরে দেখলো প্রহরের অন্তঃপ্রাণ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ওর দিকে ছুটে আসছে। প্রহর যেন প্রাণের আলো ফিরে পেল।খুশি ক্লান্ত করুন সুরে ডাকলো প্রহরকে। অতি ভারাক্রান্ত আবেগপ্রবণ হয়ে দ্রুত ছুটে গেল প্রহর ওর প্রাণভোমরার দিকে।খুশির কাছে এসে সর্বশক্তি দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে মিশিয়ে নিলো নিজের সাথে। যেন হৃৎপিণ্ডের ভেতর ঢুকিয়ে নিতে পারলে শান্তি পেতো। এতক্ষণে বুঝি দেহে প্রাণের সঞ্চালন হলো। প্রহর দুই হাতে খুশির মুখটা ধরে সারামুখে পাগলের মতো চুমুতে ভরিয়ে দিলো। তারপর আবারও বুকের মাঝে ভরে নিয়ে অস্থির কন্ঠে বললো।
–কোথায় গিয়েছিলে সোনাটা আমার? জানো তোমাকে না পেয়ে আমার কি অবস্থা হয়েছিল? জান বেড়িয়ে যাচ্ছিল আমার। আর কখনো এভাবে আমাকে ছেড়ে যেওনা কলিজাটা। কখনো না।

হঠাৎ প্রহর অনুভব করলো খুশির শরীর কেমন ছেড়ে দিয়েছে। ঘাবড়ে গিয়ে প্রহর দুই হাতে খুশির মুখটা ধরে সামনে এনে দেখলো খুশি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। ভার ছেড়ে দিয়ে নিচে পড়ে যেতে নিলে দ্রুত ধরে ফেললো প্রহর। ভয়ে কলিজা শুকিয়ে এলো প্রহরের। খুশির গালে হাত রেখে হালকা ঝাঁকিয়ে ভয়ার্ত কম্পিত গলায় বললো।
–খু খুশি? এ এই খুশি? খুশিরাণী? চোখ খোল সোনা। প্লিজ সোনা এভাবে শাস্তি দিওনা আমাকে। চোখ খোল প্লিজ।

ফাহিম প্রহরকে আস্বস্ত করে বললো।
–প্রহর শান্ত হ। শুধু জ্ঞান হারিয়েছে। হয়তো অতিরিক্ত ভয় আর স্ট্রেসের কারণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। ঠিক হয়ে যাবে তুই চিন্তা করিস না।

–কিভাবে চিন্তা না করবো? ফাহিম ওর কিছুদিন আগেই এতবড় একটা মেজর অপারেশন হয়েছে। এইমুহূর্তে এভাবে জ্ঞান হারিয়ে ফেলায় যদি ওর কোন বড় সমস্যা হয় তখন কি করবো আমি? সব আমার দোষ। আমিই ওর খেয়াল রাখতে পারিনি।

–কিছু হবে না ভাবিজীর। এখন সময় নষ্ট না করে ওকে জলদি নিয়ে চল। সি নিডস ডক্টর ইমিডিয়েটলি।

প্রহর কোলে তুলে নিল খুশিকে। তারপর দ্রুত বেড়িয়ে এলো ওখান থেকে। ওরা চলে যেতেই গাছের আড়াল থেকে বেড়িয়ে এলো সেই অজানা মানব। কিছু একটা চলছে তার মস্তিষ্কে।
__

সময় এখন রজনীর মধ্যভগ। ঘড়ির কাঁটা একটা পেরিয়ে গেছে। বিছানায় শুয়ে আছে খুশি। জ্ঞান ফেরেনি এখনো। ডক্টর এসে দেখে গেছে খুশিকে। রিসোর্টে আসার সাথে সাথে রিসোর্টের কর্মীদের বলে ডক্টর কে আনিয়েছে প্রহর। খুশিকে দেখে জরুরি কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে গেছে। আর বলে গেছে ঘন্টাখানিক পর জ্ঞান ফিরে আসবে। খুশির পায়ের কাছে ফ্লোরে বসে আছে প্রহর। আলতো হাতে ব্যান্ডেজ করা পা টা ধরলো। অশ্রুসিক্ত চোখে চেয়ে অধর ছোঁয়ালো পায়ের আঙুলে। বিড়বিড় করে বললো।
–অ্যাম সরি সোনা। আমি খেয়াল রাখতে পারিনি তোমার। তোমাকে দেওয়া প্রমিজ রাখতে পারিনি। আজ আমার অসাবধানতার জন্য তুমি কতো কষ্ট পেয়েছ। নিজেকে এরজন্য কখনো মাফ করতে পারবোনা আমি। অ্যাম সো সরি । তবে আজই শেষবার। এরপর আর কোন কষ্টের ছায়াও পড়তে দেবনা আমি তোমার ওপর। আর একটাবার সুযোগ দাও আমাকে। আজ আমি এই রহস্যের উদঘাটন করেই ছাড়বো। যে তোমাকে এতো কষ্ট দিয়েছে। তাকে এর থেকে শতগুণ ভয়ংকর শাস্তি দিবো আমি। আই প্রমিজ দ্যাট। শুধু তুমি একবার ঠিক হয়ে যাও।

রাত দুটোর পরে খুশির জ্ঞান ফিরে আসে। জ্ঞান ফেরার পর খুশি প্রহরকে সবটা খুলে বলে। প্রহর মনে মনে কিছু পরিকল্পনা করতে থাকে।
__

এরই মধ্যে দুদিন পার হয়ে যায়। খুশির পা এখন মোটামুটি অনেক টা ভালো। এই দুদিন আর ওরা রিসোর্টের বাইরে কোথাও যায়নি। প্রহর সারাক্ষণ খুশির সাথে সাথে থেকেছে। খুশিকে কোলে নিয়ে নিয়ে সবজায়গায় গিয়েছে। রিসোর্টের ভেতরই একটু ঘোরাঘুরি করেছে। এর মাঝে আর অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটেনি।

বেলা দুপুর এখন। লাঞ্চ করে খুশি একটু ঘুমিয়ে আছে। প্রহর মনে মনে কিছু ভেবে খুশির মাথার কাছে এসে কপালে চুমু দিয়ে বললো।
–ইউ টেক রেস্ট মাই কুইন। আমি কিছু কাজ সেরে আসছি।
কথাটা বলেই প্রহর চোখমুখ কঠিন করে বাইরে বেড়িয়ে এলো।

ঘন্টাখানিক পর, খুশি ঘুম ভেঙে চোখ মেলে তাকালো।তবে চোখ খুলে তাকিয়ে চোখের সামনে আবারও সেই ভয়ংকর মাস্ক ওয়ালা মানবকে দেখতে পেল। আতঙ্কে অস্থির হয়ে গেল খুশি। খুশি উঠে বসে ভয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো।
–দে দেখ চলে যাও এখান থেকে। আমার প্রহর আসলে কিন্তু তোমাকে ছাড়বেনা। প্রহর?? প্রহর… কোথায় তুমি?

সেই মানব টা এগিয়ে আসতে লাগলো খুশির কাছে। তবে আজ আর তার হাতে ছুরি নেই। কিছু একটা বলতে চাচ্ছে সে। তবে খুশি শুধু চিল্লিয়েই যাচ্ছে। মানব টা খুশির কাছে আসতে নিলেই ঠিক তখনই পেছন থেকে মানব টির গলা চেপে ধরলো প্রহর। এক হাতে গলা চেপে ধরে আরেক হাতে মানব টির দুই হাত একসাথে পিঠের কাছে চেপে ধরে চোয়াল শক্ত করে বললো।
–ইউর গেম ইজ ওভার মিস্ট্রি ম্যান। ইউ ক্যান নট হার্ম আস এনি মোর।

প্রহরকে দেখে একটু স্বস্তি পেল খুশি। প্রহর মানটিকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়ে বললো।
–তুই কি ভেবেছিস? তুই এভাবে চুপিচুপি আমার খুশিকে কষ্ট দিয়ে যাবি আর আমি তোকে ধরতে পারবোনা? আমি তোর হিস্ট্রি বের করার জন্যই গিয়েছিলাম। রিসোর্টের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে দেখতে পেলাম তোর কৃতকার্য। আমি ইচ্ছে করেই লুকিয়ে ছিলাম। যাতে তুই খুশি একা আছে ভেবে ওর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করিস। আজ আমি তোকে ছাড়বোনা। আমার খুশিকে কষ্ট দিতে চেয়েছিলি না তুই? আজ তোকে বোঝাবো কষ্ট কাকে বলে। তার আগে একটু তোর মুখখানা তো আগে দেখি। দেখিতো আমার এই অজানা শত্রুটা কে?

কথাটা বলে প্রহর ওই ব্যাক্তির মুখ থেকে মাস্ক টা একটানে খুলে ফেললো। মাস্কের পেছনের ব্যাক্তির মুখ দর্শন হতেই প্রহর খুশি দুজনেই অবাক হয়ে গেল। ওরা দুজন দুজনার মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। তারপর অবিশ্বাস্য কন্ঠে বললো।
–তুমি?????

চলবে……

গল্পের লেটেস্ট আপডেট পেতে আর গল্প নিয়ে যেকোনো আলোচনা আড্ডা দিতে আমার গ্রুপে জয়েন হওয়ার আমন্ত্রণ রইল। নিচে গ্রুপ লিংক দেওয়া হলো। জয়েন হতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। 👇
গ্রুপ
https://facebook.com/groups/170529085281953/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here