অন্তরালের অনুরাগ ❤ পর্বঃ১২

0
5472

গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ১২

সাদিদরা বাসায় আসতেই একদফা অবাক হলো। আঁটসাঁট পোষাক পরিহিত মেয়েটাকে দেখেই সাদিদের কপাল অটোমেটিকলি কুঁচকে এলো। মেয়েটা তাদেরকে দেখে একপ্রকার দৌড়ে আসলো। খুশিতে আত্মহারা হয়ে শায়লা রহমানকে ঝাপটে ধরল।

— ‘ মামি। ‘

তানহা শায়লা রহমানকে দুইহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। একপ্রকার হাড়গোড় ভেঙে ফেলার জোগাড়। শায়লা রহমানের বোধহয় শ্বাস আটকে যাবার অবস্থা। কিন্তু তানহার ছাড়ার নাম নেই।

— ‘ কিরে তুই কখন আসলি? ‘
— ‘ ভাই কিছুক্ষণ আগেই এসেছি। তোমাদের সারপ্রাইজড দিব বলে ফোনে বলিনি। ‘
— ‘ সেটা না হয় বুঝলাম। কিন্তু ফুফা-ফুপি কই? তারা আসেনি? ‘
— ‘ না ভাই। বাবার অফিসে ভীষণ চাপ। সময় একেবারে নেই, তাই বাবা আসেনি। আর মা বাবার জন্য আটকা পরেছে। ‘
— ‘ আচ্ছা। তাহলে তুই উপরে যা। ফ্রেস হয়ে নিয়ে আস। খেতে খেতে না হয় বাকি কথা বলব। ‘

সবাই তানহার সাথে কৌশল বিনিময় করে উপরে উঠে গেল। সাদিদ তাকে একপলক দেখে উপরে উঠার জন্য সিঁড়িতে পা বাড়াল। কিন্তু তানহা গিয়ে পিছন থেকে তার হাত টেনে ধরল।

— ‘ এতদিন পর দেখা, ভালো আছি কি সেইটাও জিজ্ঞাসা করবি না? ‘
— ‘ তুই যে ভালো আসিছ এটা দেখতেই পাচ্ছি। আর কান যেহেতু ঠিকঠাক আছে সবার কথোপকথনও শুনেছি। ‘
— ‘ এত ত্যারমি করে কথা বলস কেন? ‘
— ‘ সরি টু সে বাট আমি তোর জন্য নিজেকে চেইঞ্জ করতে পারব না। ‘

বলেই সাদিদ উপরে উঠতে গেলে তানহা আবারও তার হাত টেনে ধরল। সাদিদের এবার রাগে চোখ-মুখ গরম হয়ে লাল হলো। ঝাটকা মেরে তার হাতটা ছাড়িয়ে নিলো। গম্ভীরস্বরে ধমকে উঠল,

— ‘ খবরদার তানহা, একদম আমার গা ঘেঁষাঘেঁষি করবি না। ‘
— ‘ এমন করিস কেন সাদি? আর সবার সাথে তো এমন করিস না! কেবল আমার বেলাতে তোর এত রাগ-ক্ষোভ। ‘
— ‘ কেননা বাকি সবাই তোর মতো কাজকারবার করার চেষ্টা করে না। তাই এমন করিনা। ‘
— ‘ ইন্টারমিডিয়েটের কথা এখনও মনে ধরে রেখেছিস? ‘
— ‘ সেইটাই কি যথাযোগ্য নয়? ‘

তানহার উত্তর শুনার সাদিদ আর প্রয়োজনবোধ করল না। কেননা সে আর কথা বাড়াতে চায় না। তাই দ্রুত পায়ে নিজের রুমে গেল। তানহাও এবার ফোঁসতে ফোঁসতে ফ্রেস হতে চলে আসলো। কিন্তু আয়নায় সামনে নিজের প্রতিবিম্বকে দেখে সে তৃপ্তির হাসি হাসল।

— ‘ এবার তোকে ছাড়ছি না সাদি। অনেক দিন আমার থেকে দূরে সরে থেকেছিস। এবার তোকে তানহার জালে আটকা পরতেই হবে। কেননা নিজেকে আমি সেইরকম ভাবেই তৈরি করেছি। ‘

.

রাতের খাওয়া-দাওয়ার পর নীলা রুমে আসতেই ফোনের ভাইব্রেশনের আওয়াজ শুনতে পেল। সেন্টার টেবিল থেকে ফোনটা তুলে স্ক্রিনে তাকাতেই সে নিঃশব্দে হাসল। সে ফোনটা রিসিভ করে বিছানায় গেল।

— ‘ আসসালামু আলাইকুম। ‘
— ‘ ওয়ালাইকুম আসসালাম। খাওয়ার পর্ব শেষ? ‘
— ‘ জ্বি শেষ। আপনি খেয়েছেন? ‘
— ‘ না একটু পরে খাব। ‘
— ‘ অনেক রাত হয়েছে। আর কখন খাবেন? ‘
— ‘ খাবতো, কিন্তু আগে অন্য জিনিস খাব। বলতে পার স্পেশাল জিনিস। ‘

নীলা বোকার মতো প্রশ্ন করে বসল,

— ‘ কি জিনিস? ‘

সাদিদ ফোনের অপরপাশে ঠোঁট কামড়ে দুষ্টু হাসছে। ফোনটা নিয়ে হেঁটে বারান্দায় গেল সে। সোফায় বসে নিচুস্বরে বলে উঠল,

— ‘ আই ওয়ান্ট এ কিস। ‘

নীলা এবার লজ্জা পেল। লজ্জায় গাল লাল হলো। সে ফোন রাখতে গেলেই সাদিদ ধমকিয়ে উঠল,

— ‘ খবারদার হাত ভেঙে রেখে দিব। ‘
— ‘ তাহলে এমন পঁচা কথা বলেন কেন? এমন কথা বললে ফোন রাখতেই হবে। ‘
— ‘ কোথায় পঁচা কথা বললাম? ‘
— ‘ মানে একটু আগে কে বলল কিস-টিসের কথা? এসব কি ভালো কথা? ‘
— ‘ শুধু ভালো নয় পাখি, অতিভালো কথা। আর নিশ্চয়ই ভালোর সঙ্গে অতি সুস্বাদুও হবে। সেইদিন কফি খাওয়ার পর থেকে এমনটাই মনে হচ্ছে। ‘

নীলার শ্বাস আটকে যাবার অবস্থা। পাখা চলছে তারপরও সে ঘেমে যাচ্ছে। কিন্তু অপরদিকে সাদিদ নেশাক্ত কন্ঠে বলে উঠল,

— ‘ পাখি, কবে আসবে সেই দিনটা? অপেক্ষার রজনী যে বড্ড দীর্ঘ এবং কষ্টদায়ক। ‘
— ‘ আমি রা..খছি। ‘
— ‘ শুধুতো এইটাই পার। ‘

সাদিদ নিজেই ফোনটা কেটে দিলো। আর নীলা এখন হাসছে। মাঝে মধ্যে সাদিদের বাচ্চামিগুলো দেখলে না হেসে পারা যায় না। রাগ করলে দুনিয়ার সব ভুলে যায়। এতটা বড় মানুষটাও বাচ্চাদের মতো আচরণ করে। নীলার মনে হয় এই ছেলের রাগটা যেন সবসময় নাকের ডগায় লেগে থাকে। একটু এদিক-সেদিক হলেই তাতে বিস্ফোরণ ঘটে।
নীলার হাসতে হাসতে এখন পেটে খিল ধরে যাবার অবস্থা। এমতাবস্থায় ফোনে মেসেজের টোন শুনে তার ধ্যান ভাঙল। মেসেজ চেক করার জন্য ফোনটা হাতে নিতেই তার হাসি এবার ফোঁস হয়ে জানালা দিয়ে উঠে গেল।

— ‘ হাসি পাচ্ছে না? খুব হাসি? আচ্ছা এখন খুব করে হেসে নাও। কয়েকদিন পরতো কান্না করেই সময় পাবে না। তাই এখন যত পার হেসে নাও। শীঘ্রই তোমার জন্য হাসি-কান্নার সংমিশ্রণের ব্যবস্থা করব। তখন তোমার ঐ অবস্থা দেখে আমি হাসব। এককথায় দম ফাটানো হাসি যাকে বলে। ‘

কি ভয়ংকর ছেলে! নীলা আবারও ঘামতে লাগল। এই ছেলে সত্যি তার কোনো একদিন মরণব্যাধি রোগ বাধিয়ে ছাড়বে। তার ভালোবাসার বীজ হিসেবে মরণব্যাধি বীজ।

_________________

আশেপাশের পরিবেশ দেখতে নীলার বেগ পেতে হচ্ছে। কেননা সাদিদ প্রচন্ড স্পিডে ডাইভ করছে। যার জন্য ভালোভাবে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এখন শুধু এক্সিডেন্ট না হলেই হয়। নীলা যে কিছু বলবে সেটাও রাস্তা নেই। এক ধমকি খেয়ে সে ঠান্ডা। সাদিদ যে মারাত্মক রেগে আছে সেটা বুঝায় যাচ্ছে। তাই নীলার সাহসে কুলাচ্ছে না আগ বাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করার। ভয়ে একপ্রকার জড়সড় হয়ে সে সিটে বসে রয়েছে। জনসমাগম থেকে বেশ দূরে সম্ভবত পূবাইলের দিকে এসে বড় একটা মাঠে সাদিদ গাড়িটা ব্রেক করল। এতটা সময় নীলা একটা শব্দ পর্যন্ত করতে পারেনি। রাগে সাদিদের মুখ লাল হয়ে আছে। ফর্সা গায়ে হাতের, কপালের রগগুলো স্পর্শ ভেসে উঠেছে। গাড়ি ব্রেক করে সাদিদ সিটে চোখ বন্ধ করে হেলান দিলো। তার নিঃশ্বাস দ্রুত হচ্ছে। ঘন নিঃশ্বাসের শব্দ জানালা বন্ধ গাড়িতে স্পষ্ট শুনা যাচ্ছে।
কিছু মুহূর্ত পর সাদিদ চোখ বন্ধ রেখেই নীলার বাহুতে টান দিয়ে তার বুকে নিয়ে আসলো। নীলা কিছুই বুঝতে পারল না। হঠাৎ এভাবে টান দেওয়াতে হালকা ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। শুধু সেইটুকুই অনুভব করতে পারছে। সাদিদের বাকিসব কর্মকান্ডগুলো তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
সাদিদ এবার নীলার মাথাটা বুকে শক্ত করে চেপে ধরল। কতসময় এভাবে কেটে গেল তার আন্দাজ করা মুশকিল। নীলাও চুপচাপ সাদিদের বুকের উষ্ণতা অনুভব করে গিয়েছে।
সাদিদ এবার ঠিক করে বসে নীলাকেও সিটে ঠিকভাবে বসিয়ে দিলো। নীলার ডানটা মুঠো করে ধরে একটা লম্বা শ্বাস টেনে বলল,

— ‘ ভয় পেয়েছ? ‘

নীলা মিইয়ে গেল। সে সত্যিই সাদিদের এমন কাজে ভয় পেয়েছিল। কিন্তু মুখে বলার সাহস পাচ্ছে না। সাদিদ এবার মৃদু হাসল। নীলার গালে একটা হাত রেখে আদর মাখা কন্ঠে বলল,

— ‘ আমাকে ভয় পাবার কি হলো? আমি কি কখনও তোমার উপর হাত তুলব নাকি! তোমার সাথে কাপুরুষের ন্যায় আচরণ করব, এমনটা আমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারি না। ‘
— ‘ না তেমন কিছু নয়। আসলে.. তখন আপনি ঐরকম রেগে গিয়েছিলেন বলে…
— ‘ না রেগে কি করব? ঐ ছেলেটা তোমাকে বাজে ভাবে স্পর্শ করতে চেয়েছিল। এটা কি আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখব নাকি? মেরে ফেলিনি যে এইটাই তার ভাগ্য। শালাকে আরও খানিকটা লাগাতে পারলে বোধহয় শান্তি লাগত। কিন্তু তারা জোরপূর্বক ধরে ফেলাতে পারলাম না। আটকিয়ে তাকে তো বাঁচিয়ে দিলো। কিন্তু আমার যে এখন অগ্নির তাপ অনুভব হচ্ছে! গায়ে রীতিমতো আগুন জ্বলছে। ‘
— ‘ আপনি আবারও উত্তেজিত হচ্ছেন কেন? এমটাতো রোজ রোজ হয় না। আজকেই জীবনে প্রথম…
— ‘ ইনশাআল্লাহ শেষ। এতদিন যেহেতু সামলাতে পেরেছি ভবিষ্যতেও ইনশাআল্লাহ পারব। ‘
— ‘ মানে? এতদিন সামলানো! আমি আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারছি না। ‘

সাদিদ এবার রাগ ভুলে মাথা চুলকে ঠোঁট কামড়ে হাসছে। নীলাও এবার ভয়-টয় ভুলে সাদিদের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে আছে। কিছুটা সন্দেহ প্রবল দৃষ্টিতে সে বলে উঠল,

— ‘ আমার বান্ধবীরা সবসময় এই কথাটা বলত। এমনকি আমারও যে মাথায় আসিনি সেটা নয়। স্কুল-কলেজ লাইফ এতটা শান্তিপূর্ণভাবে ইভটিজিং বিহীন কাটানো চারটিখানি কথা নয়। এতদিন উত্তরটা না খোঁজে পেলেও আজকে বোধহয় পেয়ে যাচ্ছি। ‘

নীলার রাগি চেহারা দেখে সাদিদ এবার হেসে দিলো। সাদিদের কর্মকান্ড নীলার আর বুঝার বাকি নেই। তাই সে রাগ করে গাড়ির দরজা খোলতে নিলেই সাদিদ তাকে বাধা দিলো।

— ‘ ছাড়ুন বলছি। আপনার সাথে আমি এক মুহূর্তও থাকব না। ‘
— ‘ আরে পাখি, এমন করে না। ব্যাথা পাবে তো। ‘

কিন্তু নীলা শুনার পাত্রী নয়। সাদিদের সাথে জোর খাটিয়ে দরজা খোলতে চায়ছে। তাই সাদিদও এবার জোর করল। টান দিয়ে নীলাকে এনে তার কোলে বসাল। নীলা অনবরত ছুটে যাবার চেষ্টায় আছে। কিন্তু সাদিদের শক্তির সাথে কুলিয়ে উঠতে পারলেই হয়।

— ‘ ছাড়ুন আমাকে। একদম আমার কাছে আসবার চেষ্টা করবেন না। ‘
— ‘ ইশশশ, আমার ছোট্ট পাখিটার এত রাগ! একটু শান্ত হও আমি সব বুঝিয়ে বলছি। ‘
— ‘ কিছু বলতে হবে না। আমি আপনার কোনো কথা শুনতে রাজি নই। ‘

সাদিদ এবার হাসতে হাসতেই নীলাকে শক্ত করে তার বুকে চেপে ধরল। মাথায় চুমু খেয়ে আলতো করে চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠল,

— ‘ প্লিজ রাগ করে না পাখি। আমার কি দোষ বলো? প্রেয়সী নিজের থেকে হাজার মাইল দূরে, তারউপর সে আগুন সৌন্দর্য নিয়ে জন্মেছে। এতটা হাত গুটিয়ে কিভাবে বসে থাকব? ‘

নীলা এবার ধুম করে সাদিদের বুকে কিল বসাল। কিন্তু সাদিদ আরাম পেয়েছে এমন একটা ভাব করে বলল,

— ‘ আরেকটা দাওতো। এত নরম কেন তোমার হাতগুলো? মনে হয় তুলো দিয়ে আঘাত করেছ। ‘

নীলা চোখ গরম করে তাকাতেই সাদিদ এবার দুষ্টুমি শুরু করল। নীলার চোখের পাতায় চুমু দিয়ে হাসতে লাগল। নীলার আবারও চোখ গরম করতে সাদিদ তার আরেক চোখের পাতায় চুমু খেল। এমন করতে করতে সাদিদ নীলার দুইগাল, চোখ, কপাল সব জায়গায় চুমু খাওয়া শুরু করল। নীলার পক্ষে আর রাগ ধরে রাখা সম্ভব নয়। এই ছেলেটা বড্ড পাঁজি। নীলা এবার আলতো করে সাদিদের বাহুতে চিমটি কেটে তার বুকে মুখ খুঁজল। সাদিদ তাকে বাহুবন্ধনে আগলে নিয়ে বলল,

— ‘ মহারাণীর রাগ কমেছে? ‘
— ‘ না কমেনি। এমনটা করলে রাগ কমবে কিভাবে? ‘
— ‘ পাখি আমি বাধ্য ছিলাম। ‘
— ‘ তাই বলে আমার উপর নজর রাখবেন? কারও উপর এমনভাবে নজর রাখা কি ঠিক? আপনি-ই বলেন? ‘
— ‘ একদম ঠিক নয়। কিন্তু পাখি আমার দিকটাও একটু দেখ। নিজে এখানে উপস্থিত ছিলাম না। তারউপর আমাদের মধ্যে পূর্বে এতসব ঘটনা হয়েছিল যে, তোমাকে ভালোভাবে কিছু বললেও বোধহয় শুনতে না। আর তুমি শুনলেও খারাপ ছেলেগুলো ভালো কথা শুনতে চায় না। তাই আমার অবর্তমানে তোমার যেন কোনোরকম ক্ষতি করতে না পারে সেইজন্যই এত নিরাপত্তা। ইচ্ছে করে তোমার উপর গোয়েন্দাগিরি করিনি। তোমার উপর আমার অঢেল বিশ্বাস রয়েছে। কিন্তু এই সমাজের মানুষরূপী কিছু অমানুষের উপর বিন্দুমাত্র নেই। তাই এইসব নজর-টজরের ব্যাপার। এখানে আমার কি দোষ বলো? ‘
— ‘ হ্যাঁ সেইটাই। আপনি কি কখনও নিজের দোষ দেখেন? আপনি হচ্ছেন শুদ্ধ সাধুসন্ন্যাসী। যারা সকল প্রকার দোষ-পাপ থেকে মুক্ত। একেবারে নিট এন্ড ক্লিন। ‘

সাদিদ নীলার কথায় হাসল। রাগের তেজস্বী হয়ে থাকা প্রাণপাখিকে লজ্জায় ফেলতে, নীলার লাল হয়ে যাওয়া নাকটাতে নিজের নাকটা ঘষা দিলো। নীলা তাতে মৃদু কেঁপে উঠল। সাদিদ নীলার নাকে নাক ঘষতে ঘষতেই নেশাক্ত কন্ঠে বলে উঠল,

— ‘ কিন্তু আমি যে সাধুসন্ন্যাসী হতে চাই না পাখি। আমি তাদের মতো নিরামিষময় জীবন কাটাতে পারব না। নিজেকে সঙ্গীর স্পর্শ থেকে দূরে রেখে জীবনের মূল্যবান অল্প সময়টুকু নষ্ট করতে পারব না। আমিতো জীবনকে আমার প্রাণপাখির সাথে উপভোগ করতে চাই। আমাদের ছোট্ট একটা সংসার সাজাতে চাই। ছোট্ট ছোট্ট হাতপা নিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরবে, আধো আধ বুলিতে বাবাই বলে ডাকবে এরকম অসংখ্য প্রিন্স এন্ড প্রিন্সেসের বাবা হতে চাই। এতসব ইচ্ছেগুলো কি সাধুসন্ন্যাসী হয়ে পূরণ করা সম্ভব? ‘

নীলার শরীর থরথর করে কাঁপছে। এই ছেলেটা তাকে না একদিন হাঁপানির রুগী বানিয়ে ফেলে। আর কথার কি ধরণ! পুরোই নির্লজ্জের কারখানা। লজ্জাশরম সব খেয়ে নিয়েছে।
নীলার উত্তর না পেয়ে সাদিদ নীলার পিঠে হাত দিয়ে তাকে আরেকটু কাছে টেনে নিলো। সিটে মাথা ঠেকিয়ে নীলার গালে একহাত রেখে বলল,

— ‘ আমার ইচ্ছেগুলো পূরণ করবে না? আমাকে বাবাই বলে ডাকবে তাদেরকে আনবার ব্যবস্থা….

নীলার পক্ষে আর সহ্য করা সম্ভব নয়। দম প্রায় আটকে আসছে। সাদিদের কথাগুলো নীলার শরীরে ক্রমশ কাটা দিয়ে উঠছে। তাই এবার একপ্রকার জোর খাটিয়ে সাদিদের থেকে সে দূরে যেতে চাইল। কিন্তু সাদিদ তাকে আরও টেনে ধরল। নীলার কাঁধে নাক ঘষতে ঘষতে নেশালো কন্ঠে বলে উঠে,

— ‘ পালাচ্ছ কেন? তুমি চাইলেই যে আমি তোমাকে নিজের থেকে পালাতে দিব না। পাখি এখনও অনেকটা পথ চলার বাকি। এখনও অনেকগুলো স্বপ্নবোনন করবার বাকি। এগুলো না করে কোথায় যাও? ‘
— ‘ প্লিজ ছা..ড়ুন। আমার শরীর কে..মন যেন করছে। ‘
— ‘ কেমন করছে পাখি? উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছ? ‘

সাদিদের ফিচেল কন্ঠের লজ্জাবাণে নীলা এবার পুরোপুরি চুপসে গেল। লজ্জায় তার গাল-নাক লাল হয়ে যাচ্ছে। নীলার এই অবস্থা দেখে সাদিদ ঠোঁট কামড়ে কানের কাছে মুখ লাগিয়ে বলে উঠল,

— ‘ বাট পাখি, আই থিংক ইট’স নট পসিবল এট দ্য মোমেন্ট। উয়ি উইল হ্যাভ টু ওয়েট ফর দ্য রাইট টাইম। ‘

সাদিদ এতটুকু বলে থামল। নীলা চোখ বন্ধ করে রয়েছে। লজ্জায় সারামুখ তার লাল হয়ে মৃদু কাঁপছে। সাদিদ নীলার বন্ধ চোখে ফুঁ দিলো। নীলা তাতে টিপটিপ করে চোখ খুলতেই, সাদিদ নিজের মুখটা একেবারে নীলার কাছে নিয়ে গিয়ে বলে উঠল,

— ” পাখি, সুন আই উইল এরেন্জ দ্যাট রাইট টইম। দ্যান ডু হুয়াটএবার ইউ ওয়ান্ট। আই ওন্ট স্টপ ইউ। ইনফেক্ট ইউ মে নিড টু স্টপ মি। ‘

বলেই সাদিদ নীলার কোমড়ে জোরে চাপ দিলো। নীলা মৃদু ব্যাথায় আহ্ করে উঠতেই সাদিদের মুখে দুষ্টু হাসি দেখে আবারও লজ্জায় কুঁকড়ে গেল। সে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে সাদিদের বুকে হেলে পরল। আটকে যাওয়া গলায় নিচুস্বরে বলল,

— ‘ অসভ্য পুরু..ষ। নির্লজ্জ পুরুষ। একেবারে বাজে পুরুষ। ‘

#চলবে…

[ পাঠকগণ আপনাদের পাঠপ্রতিক্রিয়াগুলো আমাকে জানাবেন। আমি আপনাদের ভালোলাগা মন্দলাগাগুলো জানতে আগ্রহী। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here