গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ১৫
স্নিগ্ধ সূর্যের আলো সাদিদের মুখে লাগতেই সে পাশ ফিরল। জীবনের খুব মধুর একটা মুহূর্তের সুখ কল্পনায় সে এখন ব্যস্ত। বন্ধ আখিঁদ্বয়ের মধ্যেও তার ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি। পাশের কোলবালিশটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে গেলেই সাদিদ দ্রুত চোখ খোলে তাকালো। মুহূর্তেই তার চক্ষু বিস্ফোরিত হলো। উপরের হালকা চাদরটা সরিয়ে সে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। রাগীস্বরে বলে উঠল,
— ‘ তুই এখানে কি করিস? ‘
— ‘ ঘুমাতে আসছি। ‘
তানহার নিলিপ্ত বাক্যে সাদিদের রাগটা তরতর করে বেড়ে গেল। মুহূর্তেই ফর্সা কপালের রগটা ফোলে উঠল। নিজেকে সে শান্ত রাখতে পাড়ছে না। তারপরও যথেষ্ট চেষ্টা করে বলল,
— ‘ ঘুমাবি ভালো কথা। কিন্তু আমার রুমে কেন? আর তুই ভিতরে আসলি কিভাবে? আমিতো দরজা ভিতর থেকে লক করে ঘুমিয়েছি। ‘
— ‘ ফাস্ট অফ অল তোর রুমে আমার ঘুমটা চাপে বেশি। আর ভিতরে কিভাবে আসলাম? এইতো চাবি। ‘
বলেই তানহা হাতের মুঠোতে চাবিটা উপরে ঢিল মেরে ক্যাচ করল। মুখে তার দুষ্টু হাসি। যেন সে খুব ভালো একটা কাজ করেছে।
— ‘ তুই এতটা নির্লজ্জ কিভাবে হতে পাড়িস! আমি ঘুমিয়েছিলাম। এমতাবস্থায় লক খোলে ভিতরে এসে আমার-ই বিছানায় আমার পাশে শুয়ে থাকতে তোর বিবেকে একটুও বাঁধল না? ‘
সাদিদের মুখে রাগের পাশাপাশি ঘৃণার আভাস। প্রিয়তির মুখটা এবার মলিন হলো। সে দ্রুত বিছানা থেকে নেমে দৌড়ে এসে সাদিদের বুকে ঝাপটে পড়ল। বিষয়টা এতটাই দ্রুত ঘটেছে যে সাদিদ আঁচ পর্যন্ত করতে পারেনি। সে এবার ঝাটকা মেরে তানহাকে দৌড়ে সরাল৷ চোখ গরম করে আঙ্গুল উঁচিয়ে শাসাল,
— ‘ খবরদার তানহা। তোকে আমি আগেও সাবধান করেছি। একদম আমার গা ঘেঁষার চেষ্টা করবি না। নতুবা তোর কুকীর্তির কথা সবাইকে জানাতে আমি বাধ্য হব। ‘
— ‘ কেন? কেন সাদি, বল আমাকে? এত কেন বিতৃষ্ণা তোর! আমার মধ্যে কিসের অভাব? কতটা বছর ধরে তোর পিছনে পড়ে রয়েছি অথচ তুই একবার ফিরেও তাকাস না। কেন রে? কি কমতি আছে আমার মধ্যে? তোর জন্য নিজেকে কোনো দিক দিয়ে কম রাখিনি। তারপরও কেন আমাদের মধ্যে এই দুরত্ব? ‘
সাদিদের এবার খারাপ লাগছে। সাদিদতো জানে এই মেয়েটা তাকে কতটা পছন্দ করে। তার জন্য কত ভয়ংকর কাজও করে ফেলতে পারে। কিন্তু সাদিদও যে নিরুপায়। ভালোবাসা যদি জোর করে আদায় করা যেত তাহলে এই জিনিসটার মূল্য এতটা হতো না। সাদিদ ছোট্ট একটা শ্বাস টেনে এককদম এগিয়ে এলো। নরমস্বরে বলল,
— ‘ দেখ তানহা, আমি তোকে আগেও বলেছি। তোকে আমি বোন আর ফ্রেন্ড ব্যতিত অন্যকিছু আগেও ভাবিনি। আর এখনও ভাবছি না। প্লিজ আমার পিছনে পড়ে না থেকে ফুফা-ফুপির পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করে ফেল। আমি শুনেছি ছেলেটা তোর জন্য পাগল। ‘
— ‘ কিন্তু আমিতো নই। আমি যে তোর জন্য পাগল। প্লিজ সাদি একটু চেষ্টা কর। একটু ভালোবাস। কথা দিচ্ছি তোর জীবনটা সুখে ভরিয়ে দিব। ‘
— ‘ তানহা, আবার তোর পাগলামি শুরু! প্লিজ এমন করে বলিস না। নিজের কাছেই শুনতে খারাপ লাগে। ‘
তানহা এবার এগিয়ে এসে সাদিদের গালে দুই হাত দিয়ে চেপে ধরল। সাদিদ পিছিয়ে গিয়ে সরিয়ে নিতেই আবারও এসে তানহা তাকে ঝাপটে ধরল। সে অস্থির হয়ে বলতে লাগল,
— ‘ প্লিজ এমন করিস না। আমি তোকে ভালোবাসি ইয়ার। তোর জন্য সব কিছু করতে পারব। প্লিজ আমাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিস না। ‘
— ‘ তানহা ছাড় বলছি। আমি কিন্তু রাগে কিছু একটা করে বসব। ‘
— ‘ প্লিজ কর। একটাবার কাছে টেনে নে। দেখবি এত সুখ আর কোথাও পাবি না। ‘
তানহা এবার পাগলামি করে টপসের বোতাম খোলা শুরু করতেই সাদিদ তাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরাল। কিন্তু তানহা তাতেও থেমে থাকল না। টপসটা একটা টানে শরীর থেকে খোলে নিলো। সাদিদ দ্রুত চোখ বন্ধ করে পিছনে ফিরে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে ধরতেই তানহা এসে বাধা দিলো। সাদিদকে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
— ‘ তানহা, আমি তোকে খুন করব। লজ্জাহীন মেয়ে, ছাড় আমাকে। তোকে এই অবস্থায় দেখে আমার গা ঘুলাচ্ছে। ‘
— ‘ এখন-ই ঠিক হয়ে যাবি। দেখবি তুই এরপর সুখে পাগল হয়ে যাবি। ‘
তানহা সাদিদের পরনের ট্রি-শার্ট খোলার চেষ্টা করতেই সাদিদের রাগটা সহ্যের বাহিরে চলে গেল। তানহাকে ছাড়িয়ে তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গালে সজোরে একটা থাপ্পড় বসাল।
— ‘ বোন হিসেবে আজ পর্যন্ত তোর এসব সহ্য করছিলাম। কিন্তু তুইতো…
এতদিন তোকে শুধু ভালোবাসতাম না। আজ থেকে তার সাথে আরেকটা জিনিস যোগ হলো। আমি তোকে ঘৃণা করি তানহা। তোর মনমানসিকতায় আমি থুথু ফেলি। বুঝিছিস তুই? ‘
সাদিদ দরজাটা ধারাম করে খোলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। রাগটা তার এখন সাত আসমানে। এই রাগ দ্রুত কমাতে না পাড়লে তার মাথা ফেটে যাবে।
অপরদিকে তানহা গালে হাত দিয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে সাদিদের গমন পথের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সে বোধহয় এতটা ভালো এই জীবনে আর কাউকে বাসেনি। কিন্তু ভালোবেসে লাভ হলো না। শুধুমাত্র প্রাপ্য হিসেবে পেয়েছে সীমাহীন কষ্ট। কষ্টের গন্ডি এখনও পূর্ণ হয়নি। তাইতো সাদিদ আজও তার ভালোবাসা পায়ের নিচে পিষে চলে যাচ্ছে।
_________________
রাতে দেরী করে ঘুমিয়েছে বিধায় নীলাও এখন বিছানায় পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। নার্গিস খাতুন ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার উঠে তাকে নাস্তা করতে বলে গিয়েছেন। কিন্তু নীলা হুম হুম করতে করতে এতবেলা করে ফেলেছে।
ফোনের তীক্ষ্ণ আওয়াজে নীলা চোখ বন্ধ রেখেই হাতড়ে বিছানার পাশ থেকে ফোনটা নিলো। কোনোমতে রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে সাদিদের গম্ভীরকণ্ঠ শুনা গেল,
— ‘ এখন-ই নিচে আস। ‘
নীলাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সাদিদ কথাটা বলে উঠল। নীলা পিটপিট করে চোখ খোলল। এতসকালে এমন একটা কথার অর্থ নীলার ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না। তাই ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,
— ‘ জ্বি? ‘
— ‘ আই সেইড গেট ডাউন এট দ্য মোমেন্ট। আদার ওয়াইজ আ’ম কামিং আপস্টাইরাস। ‘
ফোনের অপরপাশে সাদিদের এমন রাগী কন্ঠস্বর শুনে নীলা কেঁপে উঠল। কোনোমতে বলে উঠল,
— ‘ আ..সছি। ‘
নীলা এলেমেলো অবস্থায়-ই শরীরে ভালোকরে চাদর পেঁচিয়ে রুম থেকে বের হলো। নার্গিস খাতুন তাকে দেখেই বলল,
— ‘ বস নাস্তা দিচ্ছি। সবতো ঠান্ডা হয়ে গেল। ‘
— ‘ না মা, এখন না। একটু নিচে যাব। ‘
— ‘ নিচে কি কাজ? ‘
— ‘ না মানে… আসলে একটু হাঁটাহাটি করব। ‘
— ‘ সেটা ভালো কথা। কিন্তু এতবেলা কে মর্নিংওয়াকে বের হয়? ‘
— ‘ সমস্যা নেই মা, আমি যাচ্ছি। ‘
নীলা নার্গিস খাতুনকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বাসা থেকে বের হয়ে গেল। গেইট পেড়িয়ে এদিক-ওদিক তাকিয়ে সাদিদকে খোঁজতে লাগল। রাস্তার ওপাশে সাদিদের গাড়িটা দাঁড়ানো দেখে নীলা সেদিকে এগিয়ে গেল।
সাদিদ সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রয়েছে। গায়ে রাতের পাতলা ট্রি-শার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার। চুল এলেমেলো হয়ে কপালে পড়ে রয়েছে। নীলা একপলক সাদিদকে দেখে জানালায় টুকা দিলো। সাদিদ নীলার উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ বন্ধ রেখেই বলল,
— ‘ গাড়িতে উঠ। ‘
সাদিদের এমন থমথমে গলায় নীলার শ্বাস আঁটকে যাবার অবস্থা। কিন্তু ভয়ে কিছু বলতেও পাড়ছে না। সাদিদ যে ভীষণ রেগে আছে সেটা নীলার বুঝতে আর বাকি নেই। কিন্তু রাগটা কিসের এইটাই সে বুঝে উঠতে পাড়ছে না। নীলা আর কিছু চিন্তা না করে দরজা খোলে গাড়িতে বসল। নীলা বসতেই সাদিদ গাড়ি স্টার্ট করল। নিঃশব্দে ডাইভ করে কিছুটা দূর একটু নিরিবিলি জায়গায় এসে সে গাড়ি ব্রেক করল। বিনাবাক্য নিচে নেমে নীলার পাশে গিয়ে দরজাটা খোলল। গম্ভীর কণ্ঠেই বলল,
— ‘ আস। ‘
নীলার নিজেকে বাধ্য পুতুল মনে হচ্ছে। যে তার মালিকের কথায় উঠে-বসে। সাদিদ-ই নীলাকে স্থির বসে থাকতে দেখে হাত ধরে নিচে নামাল। পিছনের দরজাটা খোলে দিয়ে নীলাকে বসিয়ে দিলো। নীলা সাহস করে কিছু জিজ্ঞাসা করবে ভেবেছিল। কিন্তু তার আগেই সাদিদ ভয়ংকর একটা কাজ করে বসল।
সে সোজা গিয়ে নীলার কোলে মাথা রাখল। সে বেশ লম্বা বিধায় পা গুটিয়ে রাখতে হচ্ছে। নীলা এই মুহূর্তে পুরোপুরি অনুভূতিহীন হয়ে গিয়েছে। শরীর অসার হয়ে পাথরে রূপ নিয়েছে। নিরবতা ভেঙে সাদিদ-ই বলল,
— ‘ মাথা ব্যাথা করছে। চুলগুলো টেনে দাও। ‘
— ‘ প্লিজ এখান থে..কে মাথা সরান…
নীলা শুধু আটকে যাওয়া গলায় বলতে নিয়েছিল, কোল থেকে মাথাটা সরাতে। কিন্তু সাদিদকে চোখজোড়া খোলে এমন লাল লাল করে তাকাতে দেখে, নীলা আর বাক্য সম্পূর্ণ করতে পাড়ল না। চুপচাপ কাঁপা হাতটা সাদিদের মাথায় রাখল। শরীর মনে হচ্ছে অসার হয়ে গিয়েছে। হাতও চলছে না। হঠাৎ সাদিদ রাগী স্বরে ধমকে উঠল,
— ‘ খাওনা নাকি? জোরে টান দাও। ‘
নীলা আচমকা সাদিদের এমন ধমকে মৃদু কেঁপে উঠল। বুক ধুকপুক করছে। চোখজোড়াও মুহূর্তেই ম্লান হলো। সাদিদ তাকে কথাটা সুন্দর করে বললেই পারত। এমনভাবে ধমকে বলার কিছু ছিল না। নীলা কান্না চেপে মুখ ঘুরিয়ে জোরে জোরে চুল টানতে লাগল। এত জোরে টানার চেষ্টা করছে বোধহয় আজ সাদিককে পুরো টাকলু বানিয়েই দম নিবে।
সাদিদ এতক্ষণ রেগে থাকলেও নীলার এমন বাচ্চামি দেখে তার এখন দম ফাটানো হাসি আসছে। সাদিদ চোখজোড়া খোলে উপরে তাকালো। নীলাকে মুখ ফিরিয়ে রাখতে দেখেই সে ঠোঁট টিপে নিঃশব্দে হাসল। প্রাণপাখির রাগ ভাঙাতে নরম স্বরে ডাকল,
— ‘ বউ? ‘
নীলা উত্তর দিলো না, এমনকি একবার ফিরেও তাকালো না। সাদিদ এবার শব্দ করেই হেসে ফেলল। নীলা অপরদিকে মুখ ফিরানো অবস্থায় সাদিদের হাসির শব্দ শুনে তার ভ্রুজোড়া তির্যক হলো। নীলার চেহারায় এতক্ষণ অভিমানের রেশ দেখা গেলেও এবার রাগের আভাসও পাওয়া গেল। সাদিদও হাল ছাড়ার পাত্র নয়। সে সুর টেনে ডাকতেই লাগল,
— ‘ বউ, এই বউউউ। ও পাখিবউ। ‘
নীলাকে এখনও ফিরে তাকাতে না দেখে সাদিদ এবার ঠোঁট কামড়ে হাসল। দুষ্টুমিস্বরে ডেকে উঠল,
— ‘ ও আমার বাচ্চাদের মা-পাখি? বাচ্চাদের বাবাই ডাকে তো৷ ‘
নীলার সব রাগ ভানের জলে ভেসে গেল। সাদিদের মুখে আবারও এমন লজ্জাজনক কথা শুনে, তার মুখে ঈষৎ লালাভ আভা দেখা গেল। সাদিদ কোলে শুয়ে থেকে নীলার অর্ধ লালাভ চেহারাটা দেখে নিঃশব্দে হাসল। আরেকটু লজ্জা দিতে কাত হয়ে শুয়ে নীলার পেটে মুখ গুঁজলো। সাদিদের তপ্ত নিঃশ্বাস জামার উপর দিয়ে পেটে লাগতেই নীলা ভয়ংকরভাবে কেঁপে উঠে সাদিদের চুল খামচে ধরল। সাদিদ নীলার শরীরে বহমান কম্পন অনুভব করতে পাড়ছে। আর এই কম্পনের অর্থও তার কাছে অজানা নয়। সাদিদ নীলার কোমড় জড়িয়ে ধরে পেটে মুখে গুঁজে উষ্ণ ঠোঁট ছোঁয়াতে লাগল। নীলা চোখ বন্ধ করে আটকে যাওয়া গলায় বলল,
— ‘ কি কর..ছেন? ‘
— ‘ কি করছি? ‘
সাদিদের নির্লিপ্ত উত্তরে নীলার মুখটা এবার অসহায়ে পরিণত হলো। তারপরও যে সাদিদকে এখান থেকে সরাতেই হবে। নতুবা নীলা এখানেই বোধহয় জ্ঞান হারাবে।
— ‘ প্লিজ উ..ঠুন। সহ্য কর..তে পাড়ছি না। ‘
সাদিদ নীলার জামার উপর দিয়ে আরেকটা চুমু দিয়ে বলল,
— ‘ কি সহ্য করতে পাড়ছ না? ‘
নীলা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগানো গেলেও ঘুমের অভিনয় করা ব্যক্তিকে জাগানো অসম্ভব। সাদিদও এখন নীলার কাছে তেমন-ই একজন ব্যক্তি। নীলা হালকা রেগে সাদিদের চুলে টান দিয়ে বলল,
— ‘ সরুন। আপনার খোঁচা দাড়িতে আমার শরীর শিরশির করছে। ‘
সাদিদ এবার মাথা তুলে নীলার দিকে তাকালো। নীলার মুখ থেকে এইরকম কথা বের করতে পেরে সে হাসল। কিন্তু পরমুহূর্তেই শয়তানি মাথায় চেপে সে নীলার পেটে সুড়সুড়ি দিতে লাগল। নীলার এসব একেবারে সহ্য হয় না। তাই অনবরত হাসতে হাসতে সাদিদকে সরাতে চাইছে। কিন্তু সাদিদ তো ছাড়ার পাত্র নয়। উঠে বসে নীলাকে ক্রমাগত সুড়সুড়ি দিতে লাগল। নীলা হাসতে হাসতে সিটে হেলে পরতেই সাদিদ থামল। নীলা ক্রমাগত বড়বড় নিঃশ্বাস নিচ্ছে। ঠোঁটের কোণে এখনও তার মৃদু হাসির রেখা। সাদিদ একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ নীলার এলোমলো শরীরের দিকে তাকিয়ে থাকল। তার চোখে ক্রমশ ঘোর লাগতে লাগল। সবসময়ের মতো এবারও মুখ ঘুরিয়ে নিতেই সাদিদ থেমে গেল। আবারও সে নীলার দিকে ফিরে তাকালো। সে তো এখন সাদিদের বিয়ে করা বউ। যেভাবেই হোক বিয়ে তো হয়েছে। নগদ মোহরানা দিয়ে সাদিদ তাকে বিয়ে করেছে। নীলার আর তার মধ্যে এখন স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র সম্পর্ক বিদ্যামান। নীলার সর্বাগ্রে তার পুরোপুরি হক আছে। তাই এবার সাদিদ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইল না। নীলাকে সে চায়। একজন স্ত্রীর ন্যায় নীলাকে তার চায়। নীলা এখনও পাশ ফিরে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস টানছে। সাদিদের চোখে যে নেশা লেগে যাচ্ছে এদিকে তার খেয়াল নেই। সাদিদ একপলক নীলাকে আবারও দেখে নিয়ে, নেশাক্ত চাহনি নিয়ে সে নিচু হলো।
ঘাড়ে গরম নিঃশ্বাসের উপস্থিতি টের পেয়ে নীলা দ্রুত চোখ খোলে তাকালো। সাদিদকে নিজের এতটা কাছে দেখে চমকিত দৃষ্টিতে তাকালো। কিন্তু পরমুহূর্তেই সাদিদের এমন ঘোলাটে চোখ দেখে তার বুকে টিপটিপ করে আওয়াজ হতে লাগল। ক্রমশ আওয়াজের পরিমাণটা বাড়তে লাগলেই নীলা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। কাঁপা গলায় বলল,
— ‘ এখন যে..তে হবে। নতু..বা আম্মু বকা দিবে। ‘
— ‘ কোথাও যেতে হবে না। ‘
সাদিদের এমন নেশাক্ত কন্ঠ শুনে নীলা মৃদু কাঁপতে লাগল। নীলা আবারও সাহস করে সাদিদের দিকে তাকাতেই তার ঘোলাটে দৃষ্টির সম্মুখীন হলো। সে দ্রুত চোখ ফিরাল। এই দৃষ্টির দিকে তাকানো যায় না। এই চোখে নীলা তার সর্বনাশ দেখে। সাদিদ নীলার ঘাড়ে মুখ গুঁজে বলে উঠল,
— ‘ বউপাখি! তুমি-কি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে হওয়া আমাদের এই বিয়েটাকে মানতে পারনি? ‘
নীলা অবাক চোখে তাকালো। সাদিদ এমন করে বলছে কেন? নীলা এমনটা কখন বলল? হয়তো সে নিজেকে প্রস্তুত করার সময় পায়নি বা এসবের জন্য সে এখন-ই তৈরি ছিল না।
কিন্তু বিয়ে তো বিয়ে। ধর্মমতে তাদের বিয়ে হয়েছে। এখানে মানা না মানার প্রশ্ন আসছে কেন?
সাদিদ বোধহয় নীলার অব্যক্ত উত্তর খোঁজে নিতে পাড়ল। তাই ঘাড়ে ছোট্ট করে একটা চুমু খেয়ে বলল,
— ‘ তাহলে তো কাছে আসতে কোনো বাধা থাকার কথা নয়। আমরা কি…
— ‘ প্লিজ বাসা..য় যেতে দিন। অনেক স..ময় হয়েছে। ‘
নীলা সাদিদকে থামিয়ে অতিদ্রুত কথাটা বলল। শেষের কথাটা বলতে তার কন্ঠনালী বারবার আটকে যাচ্ছিল। কিন্তু কোনোমতে বাক্যটা সমাপ্ত করল। নীলার এতকষ্টের পরিশ্রমেও সাদিদ জল ঢালল। একপ্রকার না শুনার ভান ধরে নেশালো কন্ঠ বলে উঠল,
— ‘ সবসময় তো তোমার কথা শুনলে চলবে না। তুমি বলেছ আপাতত পরিবারের কাউকে জানাতে পারব না। তাই আমিও তোমার কথায় রাজি হয়েছি। কিন্তু বউ হয়েও আমার থেকে এমন দূরত্ব বজায় রাখবে এটাতো হতে দেওয়া যায় না। আমি সেটা মানতে পারব না। ‘
সাদিদের এমন কথা শুনে নীলার শ্বাস আঁটকে যাচ্ছে। জোর খাটিয়ে উঠতে চাইলেই সাদিদ তাকে নিজের সাথে চেপে ধরল। গালে গাল ঘষতে ঘষতে বলল,
— ‘ মধুচন্দ্রিমা। ‘
সাদিদের খোঁচা দাড়ির আঘাতে এমনি-ই নীলার অবস্থা খারাপ। তারউপর এই শব্দটা শুনে নীলার তো মরে যাবার অবস্থা। সাদিদ এমন করছে কেন? সে কি বুঝে না নীলার এসব সহ্য হয় না?
সাদিদ একপলক নীলার দিকে তাকালো। তার অস্থিরতা সাদিদ বুঝতে পাড়ছে। সবকিছু এত দ্রুত হয়েছে যে নতুন সম্পর্কের জন্য এক্সট্রা কোনো সময় পাওয়া যায়নি।
কিন্তু বিয়েটা যেহেতু হয়ে গিয়েছে এখন অযথা দূরত্ব বজায় রেখে কষ্ট পাওয়ার মানে কি? তাই সাদিদ গাল থেকে নিজের মুখটা সরিয়ে নীলার চোখের দিকে তাকালো। গালে হাত বুলাতেই নীলা আবারও মৃদু কেঁপে উঠল। সাদিদ নীলার অপরগালে ভিজে ঠোঁট স্পর্শ করে আদর দিলো। নীলার কানের কাছে মুখ লাগিয়ে মিহি স্বরে বলল,
— ‘ বিয়ে হলো অথচ বাসর হলো না। এখন আবার মধুচন্দ্রিমাও কি বাদ যাবে নাকি? আমি অতটা দয়ালু নয় পাখি। আমি আমাদের মধুচন্দ্রিমা চাই। এটাতেও যদি তোমার আপত্তি থাকে, তাহলে আমি ফ্যামিলিকে জানাতে বাধ্য হব। তারা অন্ততপক্ষে বিয়ের পরও স্বামী-স্ত্রীকে আলাদা রেখে পাপ করতে চাইবে না। কিন্তু যে করেই হোক তোমাকে আমার চাই। আর এই দূরত্ব সহ্য হবার নয়। এতটা বছর খুব জ্বালিয়েছ। আর তোমাকে জ্বালাতে দিতে পারব না। এখন আমার সময়, তাই তোমাকে খুব করে জ্বালাব। ‘
নীলা চোখ বন্ধ করে রয়েছে। সাদিদ তাকে কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছে! না এদিকে গেলে বাঁচা যায় না ঐদিকে গেলে। এককথায় সব জায়গাতেই নীলার জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে। একপাশে তৃষার্ত প্রেমিকের অতিরিক্ত ল ভালোবাসার বিপদ। আর অপরদিকে পরিবারের সদস্যরা কষ্ট পাবে এই বিপদ। এই কোন মহাবিপদে পড়ল সে?
#চলবে…
[ প্রিয়পাঠক, আপনাদের জন্য আমার ছোট্ট একটা উপহারের ব্যবস্থা। আপনারা গল্প পড়ে প্রায় সময়-ই বলে থাকেন এমনটা ভেবেছিলেন। আপনাদের এই চিন্তা শক্তিকে অনুপ্রাণিত করতেই আমার এই উপহার। পাঠকগণ আগামী পর্বে ছোটখাটো একটা চমক নিয়ে আসছি। আমি ভ্রমণপ্রেমী বিধায়, সবসময় ভ্রমণ নিয়ে টুকটাক লিখতে ইচ্ছে করে। তাই ইনশাআল্লাহ এবারও সামান্য ইচ্ছাটুকু পূরণ করব। ]
🔹আপনাদের জন্য কেবলমাত্র একটি প্রশ্ন।
🌍গল্পের পরবর্তী অংশে ভ্রমণের স্থান কোনটি হবে?
কিন্তু এক ব্যক্তি কেবল একটা নাম-ই কমেন্টের মাধ্যমে উত্তর হিসেবে বলতে পারবেন। ইনশাআল্লাহ বিজয়ীদাতাকে আমার পক্ষ থেকে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের “সেরিনা” বইটি উপহারস্বরূপ দেওয়া হবে। 🎉📚🎁💙😊