অন্তরালের অনুরাগ ❤ পর্বঃ৭২

0
4927

গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ৭২ ❤

প্রেম এক ভয়ংকর সর্বনাশা নেশা। যা হতে না কখনও পুরোপুরি নিস্তার পাওয়া যায়, না আপনমনের স্বাধীনতায় নিজস্ব সত্তায় মিশিয়ে নেওয়া যায়! এ যেন ভাসমান এক নিদারুণ অসহ্যনীয় যন্ত্রণা। তেমনিভাবে ভালোবাসার মানুষের যন্ত্রণাগুলোও বোধহয় নিজের যন্ত্রণা। কষ্টগুলো যেন স্বেচ্ছায় এসে ভালোবাসাকে কাছে আসার আহ্বান জানায়। যা ফিরিয়ে দেওয়া অসম্ভব। একেবারেই নিজ হাতের বাহিরে যার অবস্থান।
সাদিদেরও হয়েছে একই দশা। প্রিয়তমার বিষন্ন মুখশ্রী তার বুকের হৃদযন্ত্রটাতে ক্রমশ ঝড় তুলে। শ্বাস নেওয়া তখন কষ্টকর। গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখে সাদিদ আড়চোখে বারবার কোমল নারীটার মলিন মুখটার দিকেই তাকাচ্ছে। তানহাকে হসপিটাল থেকে দেখে আসার পর থেকেই মেয়েটা একেবারে নীরব হয়ে রয়েছে। সাদিদ যতটুকু কথা বলেছে তাতে কেবল নীলার উত্তর হ্যাঁ এবং নাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। পিচ্চি রাজকন্যাটা তাদের সাথে নেই। ছোট্ট মানুষ বিধায় হসপিটালের পরিবেশে নিয়ে আসা সাদিদ উপযুক্ত মনে করেনি। তার কথার উপরে নীলাও তখন কোনো কথা বলেনি। মেয়েকে বাসায় রেখে তারা কিছু সময়ের জন্যই এসেছিল। এইটুকু সময় পিচ্চি নীয়ানা শায়লা রহমান এবং নিধির কাছেই রয়েছে। সাদিদরাও প্রায় এসে পড়েছে। আর হয়তো দশ কিংবা পনেরো মিনিটের পথ বাকি৷ এতক্ষণ নীরব থেকে নীলাকে সময় দিলেও এবার সাদিদ আর চুপ থাকলো না। গাড়ি ইউ টান নিতে নিতেই গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল,

— ‘ সমস্যা কি পাখি? ‘

নীরবতার আচ্ছাদন ছেদ করে আচমকা সাদিদের পুরুষালি গম্ভীর স্বরে নীলা খানিকটা হকচকিয়ে উঠল। হতভম্ব স্বরেই বলল,

— ‘ কি..কি? ‘
— ‘ আমি সেটাই জানতে চাইছি সমস্যাটা কি? এভাবে মনমরা হয়ে বসে থাকার মানে কি? ‘

নীলা এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলো না। মলিন মুখেই মাথা নিচু করে রাখলো। সাদিদের রাগটা আবারও যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মেয়েটা কি তাকে পুরোপুরি পাগল বানিয়ে ফেলবে নাকি?
আচমকা গাড়ির ব্রেক পরাতে নীলা তাল সামলাতে পারলো না। অনেকটাই সামনে ঝুঁকে গিয়েছে। সিটবেল্ট পরে রাখাতে কোনোমতে শেষ রক্ষা হয়েছে। সে কিছুটা হকচকিয়েই সাদিদের দিকে তাকালো। আর মুহূর্তেই যেন ভিজে বেড়ালের মতো চুপসে গেল। সাদিদের রাগকে সে বরাবরই ভয় পায়। তার রক্তলাল চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার সাহস নীলার কোনোকালেই ছিল না।
সাদিদ একহাতে নীলার বাহু চেপে তাকে কাছে টানলো। রাগের মাথায় একটু জোরেই চেপে ধরেছে। যার ধরুন নরম শরীরে শক্তপোক্ত হাতটার ভার সামলানো ক্রমশ দায় হয়ে পরেছে। তারপরও নীলা সহ্য করতে চাইল। দাঁতে দাঁত চেপে চোখ-মুখ খিঁচে মাথা নুইয়ে রাখলো। কিন্তু মুখ ফুটে একটা টু শব্দও করলো না। সাদিদের ক্ষিপ্ত রাগটা যেন তাতে আরও দ্বিগুণ বেড়ে গেল। সে শক্ত হাতে নীলার গাল চেপে ধরে মুখটা উঁচু করলো।

— ‘ আমাকে এভাবে জ্বালিয়ে কি মজা পাচ্ছিস? তোকে এভাবে দেখলে যে আমার কষ্ট হয় সেটা বুঝিস না? ‘

নীলার ভিতরকার মিশ্র অনুভূতিগুলো সাদিদের রাগের তোপে ক্রমশ ঝড়ে পড়তে লাগলো। ছলছল চোখজোড়া নিয়ে সে সাদিদের চোখে চোখ রাখলো। কোনোরকম প্রতিউত্তর না দিয়ে নরম হাতটা সাদিদের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির উপরে বুলাতে লাগলো। সাদিদ কয়েক মুহূর্ত থম মেরে থেকে কেবল নিষ্পলক চোখে নীলার মুখশ্রীতে তাকিয়ে রইল। অতঃপর আচমকা হেঁচকা টানে তাকে নিজের কাছে আনলো। কপালে কপাল ঠেকিয়ে নীলার নাকের ডগাটাতে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে শ্বাসরুদ্ধকর নরম স্বরে বলে উঠল,

— ‘ এমন করো কেন? জানো না, এখানে যে কষ্ট হয়? ‘

সাদিদের একটা হাত তার বুকের বামপাশে ইশারা করছে। নীলা নরম শরীরটা সাদিদের বুকের উপর ছেড়ে দিয়ে অশ্রুসিক্ত গলায় বলল,

— ‘ সবকিছুর জন্য আমি দায়ী। না আপনি আমাকে ভালোবাসতেন, আর না আজ এতসব হতো। আর না তানহা আপু আর ইমরান ভাইয়ার সাথে এসব হতো। সবকিছুর জন্য কেবল আমিই দায়ী। ‘
— ‘ অনেকদিন যাবত মার খাওনা লক্ষীটি। এবার নির্ঘাত মার খাবার সময় হয়েছে। ‘

সাদিদের টন্ট মেরে কথার পরিবর্তে নীলা মাথা উঁচু করে তাকালো। চোখ দুটো বরাবরের মতোই কুঁচকানো। সাদিদ তার মুখশ্রীতে বেশি নজর দিলো না৷ নতুবা না চাইতেও হাসি এসে পরবে। তাই নীলার মেদুর গালে আলতো করে টিপে দিয়ে পূর্বের রাশভারী স্বর ত্যাগ করে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

— ‘ তোমার জন্য কিছু হয়নি। তারা কেবলমাত্র নিজেদের কর্মফল ভোগ করছে। ‘
— ‘ কিন্তু তাদের কর্মফলের পিছনের কারণ তো আমি। ‘
— ‘ কেউ কারও অপরাধের জন্য দায়ী নয়। নিজেদের বিবেক দিয়ে তারা সেটা করেছে। তুমি কাউকে বাধ্য করোনি। তাই এমনটা ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করবে না। নতুবা আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না। ‘

সাদিদের কন্ঠস্বরে আচমকাই আবারও রাগের আভাস পরিলক্ষিত হলো। নীলা আর আগ বাড়িয়ে কিছু বলার সাহস পেল না। এমনিতেই আজ কম বকাঝকা খায়নি। নতুবা হিসেবের খাতায় অতিরিক্ত পড়লে বদহজম হয়ে যাবে।
সাদিদ আলতো হাতে নীলার গালে হাত বুলিয়ে কপালে ছোট্ট করে চুমু খেয়ে নিজের জায়গায় চলে আসলো। গাড়ি পুনরায় স্টার্ট দিতে দিতে ভীষণ নরম গলায় বলল,

— ‘ আমি তোমাকে ঠিক কতটা চাই সেটা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব পাখি। তাই অন্ততপক্ষে আমার জন্য হলেও আর কখনও এসব নিয়ে মন খারাপ করে থেকো না। তোমার বিষন্ন মুখশ্রী দেখলে আমার হৃদয়ে অদৃশ্য রক্তক্ষরণ হয়। এই যন্ত্রণা সহ্য সীমারেখার উর্ধ্বে। ‘

নীলার চোখজোড়া আবারও কৃতজ্ঞতায় ছলছল করে উঠল। জীবনে চলার পথে এতো ঝড়ঝাপটা পার করে এসেও যখন ভালোবাসার মানুষটা সর্বদা পাশে থাকার, নিরন্তরভাবে বিশ্বাস করার প্রত্যাশা রাখে তখন সবকিছুই মুগ্ধতার উর্ধ্বে জায়গা করে নেয়। পৃথিবী তখন সুন্দর। একটু বেশিই যেন তার সৌন্দর্য প্রকাশ পায়।
নীলা হাত বাড়িয়ে সাদিদের বামহাতটা নিজের দুইহাতে আঁকড়ে ধরল। কোমল পেলব ঠোঁটযুগল খুবই আলতো করে সাদিদের লোমশ হাতটার উপর চেপে ধরল। তাতে সাদিদের ঠোঁটের কোণ জুড়ে ঈষৎ হাসির রেখা ফুটে উঠল। প্রিয়তমার হাতটা বুকে চেপে ধরেই সে সমানে ডাইভিংয়ে মননিবেশ করলো।

______________

রান্নাঘরের কিছু কাজের জন্য নিধি পিচ্চি নীয়ানাকে শায়লা রহমানের কাছে দিয়ে সেদিকে গেল। শায়লা রহমান পিচ্চিটার শরীরে বেবি ওয়েল মাখিয়ে দিচ্ছে। বয়স্ক মানুষের এই এক অভ্যাস। পিচ্চি-পাচ্চিকে পাশে পেলেই দিন নাই রাত নাই মালিশ-টালিশে লেগে পড়ে।
ছোট শাদও শায়লা রহমানের রুমেই আছে। সে পিচ্চিটার পাশেই অস্থির হয়ে ঘুরঘুর করছে। শায়লা রহমান অনেকক্ষণ যাবত তার কর্মকান্ড খেয়াল করে অবশেষে মুখ ফুটে বলেই ফেলল,

— ‘ কিছু লাগবে দাদু ভাই? ‘
— ‘ কি? ‘
— ‘ তখন থেকে দেখছি রুম জুড়ে পায়চারি করছো৷ তাই জিজ্ঞেস করলাম কিছু লাগবে কি-না? ‘
— ‘ দাদুমণি তোমার আর কোনো কাজ নেই? ‘
— ‘ মানে? ‘

ছোট্ট শাদের এহেন কথায় শায়লা রহমান বেশ অবাক হলেন। তার চোখে-মুখে এখনও বিষ্ময়ের স্পষ্ট চিহ্ন। শাদ উঁকি মেরে পিচ্চি নীয়ানার দিকে একপলক তাকিয়ে মিনমিনিয়ে বলল,

— ‘ তুমি কখন থেকে এখানে বসে রয়েছ তাই জিজ্ঞেস করছিলাম তোমার অন্য কোনো কাজ আছে কি-না? তোমার কাজ থাকলে তুমি যেতে পারো। আমি বউকে পাহারা দিব। বউ একদম ব্যথা পাবে না। ‘

শায়লা রহমান বোধহয় এবার সবটা বুঝতে পেরেছেন। তার এই মুহূর্তে ভীষণ হাসি পাচ্ছে। কিন্তু নিজ সম্মান রক্ষার্থে কোনোভাবে হাসি চেপে রেখেছে। ইদানিং এই পাকনাটা এমন সব পাকনামি করে যে না হেসে পারা যায় না। তিনি পিচ্চিটাকে আরেকটু ক্ষেপিয়ে দিতে বললেন,

— ‘ না দাদু ভাই, আমার এখন আর কোনো কাজ নেই। আমি তোমার বোনের কাছেই থাকব। ‘

কাটা গায়ে যেন সরাসরি মরিচের প্রলেপ! এমনিতেই কখন থেকে ছোট মেয়েটাকে একা পাওয়ার ধান্দায় রয়েছে কিন্তু একটাবারের জন্যও পাওয়া যাচ্ছে না। তারউপর এখন আবার বোন বলে সম্বোধন করা! বাড়ির সবাই কি জানে না নীয়ানা যে শাদমানের পিচ্চি বউ? তারপরও বারবার সবাই কেন বোন বোন বলে তছবি পড়ে!
শাদের ফর্সা মুখটা নিমিষেই রাগের তোপে লালচে হতে শুরু করেছে। শায়লা রহমান এবার তাকে আর ঘাটতে গেল না।

— ‘ কিন্তু একটা কাজ মাত্রই মনে পড়ল। দাদু মণির কাছে তুমি একটু বসো দাদুভাই, আমি কাজটা শেষ করেই আসছি। ‘

শাদের অল্প কিছুক্ষণ আগের রাগটা মুহূর্তেই যেন উধাও হলো। সে ছোট্ট দাঁতগুলো বের করে হেসেই ফেলল। শায়লা রহমান আদরের নাতির মাথায় হাত বুলিয়ে রুম থেকে যাওয়ার জন্য সামনে পা বাড়ালেন। কিন্তু কি মনে করে যেন দরজার কাছে গিয়ে আবারও পিছনে ফিরে তাকালেন। আর মুহূর্তেই তার চোখ-মুখ খুশিতে চিকচিক করে উঠল।
ছোট শাদ দুইগালে হাত দিয়ে একদৃষ্টিতে পিচ্চি নীয়ানার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তার মুখ হাসি-হাসি।
শায়লা রহমানের মুখেও তৃপ্তির হাসি। ছোট্ট নীয়ানা তাদের বাড়ির প্রথম কন্যাসন্তান। বলতে হয় না পিচ্চিটা সবার কতো আদরের। আর বাড়ির মেয়ে যদি সবসময় বাড়িতেই থাকে তাহলে তাদের থেকে বেশি আর কে খুশি হবে?
তিনি সাথেসাথেই সৃষ্টিকর্তার নিকট শুকরিয়া আদায় করলেন এবং তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য প্রার্থনা করতে ভুললেন না।
তিনি মুখে হাসি নিয়েই রুম থেকে প্রস্থান করলেন।

— ‘ বউ? ‘

অনেকক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পর পিচ্চি শাদ ভীষণ আদুরে স্বরে নীয়ানাকে ডেকে উঠল। নীয়ানা এদিক-ওদিক তাকিয়ে অবশেষে চোখ ঘুরিয়ে শাদের দিকে তাকালো। বারকয়েক ডাগর ডাগর চোখগুলো পিটপিট করে ঠোঁটের কোণে ঈষৎ মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে তুলল। শাদমানের খুশি আর দেখে কে!

— ‘ এইতো এখন সুন্দর লাগছে। সবসময় আমাকে দেখে এমন করে হাসবা। ঠিক আছে? ‘

শাদ নিজের মতো কথা বলতেই থাকলো। এটা-সেটা তার বন্ধুদের কথা। মূলত কিছু বাদ রাখতে ইচ্ছুক নয়। এদিকে পিচ্চিটা যে অনবরত বকবকে বিরক্ত হচ্ছে সেদিকে তার বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই৷ যেন সে কতদিনের জমানো কথা অতি পরিচিত কারো সাথে শেয়ার করছে।
নীয়ানা বিরক্ত হতে হতে একপর্যায়ে ঠোঁট ফুলিয়ে ফেলল। চোখজোড়া মুহূর্তেই তার ছলছলে হয়ে উঠল। শাদের এতক্ষণে বোধহয় হুঁশ ফিরেছে। সে কথা থামিয়ে পিচ্চিটার মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকালো। কি ভেবে যেন নরম-কোমল গালটাতে ডানহাতের তর্জনী আঙুল দিয়ে হালকা করে চেপে ধরল। স্পঞ্জের মতো শাদের হাতটা পিচ্চির গালে চেপে যাচ্ছে। সে তার দুষ্টুমি রিপিট করতে লাগলো। আর ছোট্ট নীয়ানা পারে না এখনই উঠে বসে শাদের ছোট চুলগুলো সজোরে টেনে ধরতে। রাগে পিচ্চির ফর্সা মুখটা আরও লালচে হয়ে দাড়িয়েছে।

— ‘ বউ, তোমার গালগুলো কি নরম! চাপ দিলেই আঙুল নিচে চলে যায়। আরেকবার দেই? ‘

শাদ প্রশ্ন ঠিকই করলো। কিন্তু নীয়ানা তার প্রতিউত্তর দেওয়ার আগেই শাদ তার গাল টেনে ধরল। আপাতদৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে সে ভীষণ উৎসাহ নিয়ে কোনো খেলা খেলছে। ছোট নীয়ানা এতক্ষণ সহ্য করে গেলেও এবার শাদের পাগলামি তার সহ্যসীমার বাহিরে পৌঁছে গিয়েছে। সে বরাবরই নিঃশব্দে ঠোঁট ভেঙে কান্না করে। এবারও তাই হলো।
শাদ আহত দৃষ্টিতে পিচ্চিটার দিকে তাকালো। তার এতক্ষণের সামান্য মজা করাতে পিচ্চিটা যে কান্না করবে এটা সে ভাবতেই পারেনি।

— ‘ হুঁশ কাঁদে না। আদর করছি কাঁদে না। ‘

শাদ নিজেই ছোট তারপরও নীয়ানাকে কোলে নিতে চাইছে। কিন্তু অভ্যাস না থাকার ধরুন সুবিধা করতে পারছে না৷ তাই বালিশে শুইয়ে রেখেই আস্তে আস্তে বড়দের মতো বুকে-পিঠে হাত বুলিয়ে শান্ত করতে চাইল। ধীরে ধীরে নীয়ানা নিঃশব্দের কান্না বন্ধ করলো। আর ফ্যাল ফ্যাল করে ছোট শাদমানের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। তাকে স্বাভাবিক দেখে শাদমানও যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। আর খুশির চুটে টুপ করে নরম গালে চুমু খেয়ে বসলো।
ছোট্ট নীয়ানাটা তার কর্মে চোখ বাঁকিয়ে তাকালো। সে যদি বলতে পারতো তাহলে হয়তো অবশ্যই এই নির্লজ্জ ছেলেটাকে কয়েকটা বড় বড় কথা শুনিয়ে দিত। একেবারে লজ্জাশরম খেয়ে বসে আছে। হুটহাট কাছে এসে টুপটাপ চুমু খেয়ে চলে যায়!
নীয়ানাকে এমন চোখ বাঁকিয়ে তাকাতে দেখে শাদের যেন এতক্ষণে একটু লজ্জা শরমের ছিটেফোঁটা শরীরে লাগলো। সে মুখ ঘুরিয়ে আড়চোখে একবার নীয়ানার দিকেে তাকালো। তাকে এখনও চোখ-মুখ কুঁচকে রাখতে দেখে হালকা তেতে উঠে বলে উঠল,

— ‘ এমন করে কি দেখ? ছোট একটা আদরই তো করলাম। তাতে এমন করে তাকানোর কি মানে! ‘

এই কথার পরিবর্তে অবশ্য নীয়ানার মধ্যে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল না। সে পূর্বের মতোই বড়দের ন্যায় চোখ বাঁকিয়ে রয়েছে।
শাদমান এবার আর বিরক্ত হলো না। বরং নিচু হয়ে নীয়ানার ছোট মুখের উপর নিজের মুখ রাখলো। পিচ্চি হলেও এতোটুকু জ্ঞান আছে যে নীয়ানা ব্যথা পাবে। তাই কোনোরকম শরীরী ভর তার উপর পড়তে দিলো না। নিজের শরীরকে ব্যালেন্সের উপর রেখে বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে নীয়ানার নরম গালে স্লাইড করলো। অতঃপর ঠোঁটের কোণে আঙুল ঠেকিয়ে বিজ্ঞদের মতো করে বলল,

— ‘ অনেক অনেক বড় আদর করবো। কিন্তু এখন না, বিয়ের পরে। আমি ছবিতে দেখেছি বিয়ের পর বউকে অনেক আদর করতে হয়। আমিও করব। ‘

শাদের ফর্সা মুখটাতে যেন মেয়েদের মতো হালকা লাজুকতা এসে ভিড় জমিয়েছে। সে নীয়ানার ঠোঁটের কোণে আঙুল বুলিয়ে মাথা নুইয়ে বলে উঠল,

— ‘ এখানেও আদর দিব। কিন্তু এখন না, সেটাও বিয়ের পরে। আচ্ছা আমাদের বিয়েটা কখন হবে? ‘

ইশশ আর সহ্য করা সম্ভব হলো না। নীয়ানা এবার নিজের ভদ্র সত্ত্বা ভুলে গিয়ে শব্দ করেই কান্না শুরু করলো। শাদ অতি দ্রুত সোজা হয়ে ঠিক করে বসলো।

— ‘ এই, এই কাঁদে না। চুপ চুপ। ‘

কার কথা কে শুনে নীয়ানা গলা ফাটিয়ে কান্না শুরু করেছে। পিচ্চিটা এতো জোরে কান্না শুরু করেছে যে নিচ পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে। নিধির কানে নীয়ানার কান্নার আওয়াজ পৌঁছাতেই সে একপ্রকার হুড়মুড়িয়ে উপরে উঠল।

— ‘ কি হয়েছে শাদ? বোন কান্না করে কি জন্য? ‘
— ‘ ইশশ মা, বোন না! ‘
— ‘ শাদ! ‘

নিধির রাগীস্বরে শাদমান চুপ হয়ে গেল। নিধি দ্রুত কাছে এসে নীয়ানাকে কোলে তুলে নিলো। আগের রাগ ধরেই বলল,

— ‘ তুমি ব্যথা দিয়েছ ওকে? ‘
— ‘ আমি ব্যথা দিব কেন? আমার বউ হয় না? বউকে কেউ ব্যথা দেয়? ‘
— ‘ মা কিন্তু তোমাকে মার দিব। দিন দিন বড্ড পাঁজি হয়ে যাচ্ছ। ‘

শাদ আর প্রতিউত্তর দিলো না। নতুবা তার পিচ্চি বউয়ের সামনে আবারও মা তার পেস্ট্রিজ পাঞ্চার করবে।
নিধি নীয়ানাকে কোলে নিয়ে ঘরজুড়ে হাটাহাটি করে কান্না থামানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু নিধিতো আর জানে না তার দুষ্টু ছেলেটা পিচ্চিটাকে কি কি বলেছে!

— ‘ লক্ষ্মী মেয়ে কাঁদে না। গলা ভেঙে যাবে আম্মু। কান্না বন্ধ করো। এইতো খালা মণি নিয়ে নীয়ানাকে হাঁটছি। এখনও কাঁদবে? ‘
— ‘ কাঁদবেই তো। লক্ষ্মী না পঁচা মেয়ে একটা। পঁচা না হলে কেউ আদরের কথায় এমন গলা ফাটিয়ে কাঁদে! ‘

শাদের বিড়বিড়িয়ে কথাটা নিধির কান পর্যন্ত গেল না। কিন্তু ছোট্ট নীয়ানা আবারও ঠোঁট ভেঙে দিয়েছে।
সাদিদ-নীলা মাত্রই বাসায় পৌঁছেছিল। আর মেয়ের এমন কান্না শুনে দুইজনই দ্রুত শায়লা রহমানের রুমে গিয়ে পৌঁছালো।

— ‘ কি হয়েছে ভাবীমণি, মেয়ে এমন কাঁদছে কেন? ‘
— ‘ আর বলো না ভাই আমি কিচেনে ছিলাম। নীয়ানার কান্না শুনেই উপরে এসেছি। শাদ পাশে ছিলো। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম ব্যথা পেয়েছে কি-না? কিন্তু শাদ বললো ব্যথা পায়নি। বুঝতে পারছি না এভাবে কেন কাঁদছে! ‘
— ‘ আপুনি আমার কাছে দাও তো। হয়তো খিদে পেয়েছে। ‘

নিধি আর সময় নষ্ট করলো না। নীয়ানাকে নীলার কোলে দিয়ে দিলো। নীলা মেয়েকে বুকে জড়িয়েই নিজেদের রুমে আসলো।

— ‘ প্রিন্সেসকে আমার কাছে দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে আসো। ‘

নীলা একপলক সাদিদের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে মেয়েকে তার বাপের কোলে দিয়ে দিলো। বেশ ভালোই জানে মেয়ের ব্যাপারে মেয়ের বাপ বড্ড সিরিয়াস। তারা এতক্ষণ হসপিটালে ছিল আর হসপিটাল থেকে এসে সরাসরি মেয়েকে ফিডিং করাবে এটা সাদিদ উপস্থিত থাকলে একেবারে অসম্ভব ব্যাপার-স্যাপার।
নীলা ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসতেই সাদিদ মেয়েকে তার কোলে দিলো৷ নীলা মেয়েকে নিজের সাথে আগলে নিয়ে তার ছোট্ট পেটের খুদা নিবারণে লাগলো।
সাদিদ নিজেও ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে চলে আসলো। সাদিদ কথা বললেই মেয়ে এখন খাওয়া বাদ দিয়ে বাপের দিকে তাকিয়ে থাকবে। তাই চুপচাপ মেয়ের কান্নারত লালচে মুখটার দিকে তাকিয়ে রইল। নীলা আস্তে আস্তে মেয়ের স্লিল্কি চুলগুলোতে হাত বুলাচ্ছে।
অনেকটা সময় পার করে পিচ্চিটা মায়ের বুক থেকে মুখ উঠাতেই সাদিদ মেয়ের ছোট্ট শরীরটা সযত্নে আঁকড়ে নিলো। এঁটো মুখটা মুছে দিয়ে কপালে স্নেহের চুমু খেল।

— ‘ আমার প্রিন্সেস কান্না করেছে কেন? ‘

পিচ্চি নীয়ানা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। হাত নেড়ে সাদিদের মুখটা ধরার চেষ্টা করতেই সাদিদ নিজেই মেয়ের হাতটা টেনে ছোট্ট ছোট্ট আঙুলগুলোতে ঠোঁট ছুঁয়ালো।

— ‘ বাবাই প্রিন্সেসকে খুব মিস করেছি। ‘

মেয়ে যেন আহ্লাদে কাতুকুতু। পারে না বাবার বুকের ভিতর ঢুকে যেতে। নীলা পাশ থেকে বাপ-মেয়ের আদরঘন মুহূর্ত দেখে ঠোঁট টিপে হাসছে। সাদিদের হঠাৎ তার উপর চোখ পরতেই সে বলে উঠল,

— ‘ কি? ‘
— ‘ কিছু না। ‘
— ‘ কাছে আসো। ‘

নীলা কালবিলম্ব না করে সাদিদের কাছে আসলো। সাদিদ মেয়েকে বুকের সাথে আগলে নিয়ে নীলার মাথাটাও তার ডান বাহুর উপর রাখলো। মেয়ে কি বুঝলো! কিন্তু পিচ্চিটা নিঃশব্দে হাসছে।

— ‘ দেখলে পাখি আমাদের কলিজার টুকরোটা মা-বাবাকে একসাথে দেখে কতো খুশি? ‘

নীলা প্রতিউত্তরে মিষ্টি করে হাসলো। অতঃপর মাথা উঁচিয়ে মেয়ের ছোট কপালটাতে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। মেয়ের ঠোঁটের কোণটা যেন তাতে আরও বিস্তৃত হলো।

— ‘ আর মেয়ের বাবারটা? ‘

সাদিদ বাঁকা হেসে ঠোঁটে আঙুল দেখাতেই নীলা আস্তে করে তার বাহুতে একটা থাপ্পড় লাগালো। নিচুস্বরে বলল,

— ‘ অসভ্য একটা। মেয়ের সামনে এসব কি? ‘
— ‘ মেয়েতো শুনেনি। আম্মা তুমি শুনেছ? ‘

পিচ্চি নীয়ানা হাসছে। সেটা দেখে নীলা আরও ক্ষেপে গেল। এবং বেশ জোরেই সাদিদের বাহুতে চিমটি কাটলো।

— ‘ চুপ করেন তো। আপনার মেয়ে একটা পাকা বুড়ি। সব কথা বুঝতে পারে। ‘
— ‘ তাই নাকি বাবাই? বেশ ভালো তো তাহলে। মেয়েটা অবশেষে তার বাবার মতোই হয়েছে। ভাগ্যিস মায়ের ব্রেনটা পায়নি। নতুবা বাবার ভীষণ জ্বালা ছিল প্রিন্সেস। ‘

সাদিদের কন্ঠে ঘোর হতাশার চিহ্ন। নীলা চোখ বাঁকিয়ে এই গিরগিটি টাইপ পুরুষটাকে দেখে চলেছে। যে কি-না ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলাতে ওস্তাদ।
সাদিদ নীলার কুঁচকানো কপাল দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। চোখের পলকে মেয়ের দৃষ্টির আড়ালে নীলার হালকা গোলাপি অধরযুগল ছুঁয়ে দিলো। এবং অতি দ্রুত স্বল্প সময়ের মধ্যে মিষ্টি চুমুর অদলবদলও হয়ে গেল।
নীলা এখনও আহাম্মকের মতো ঠোঁটে হাত ছুঁয়ে রয়েছে। ঠিক কয়েক সেকেন্ড আগে কি হয়ে গেল সেটা তার ব্রেনও যেন ক্যাচ করতে পারেনি। ব্রেনে বার্তা পৌঁছানোর আগেই কাজ শেষ।
কিন্তু দেখো, যে কাজ করেছে সে সম্পূর্ণ ভাবলেশহীন। দেখে বুঝার উপায় নেই ক্ষনিক সময় পূর্বে পিচ্চি মেয়েটার অগোচরে তার নির্লজ্জ বাপটা কি কান্ড ঘটিয়েছে। সাদিদ আড়চোখে নীলার দিকে তাকাতেই নীলার ভ্যাবাচেকা খাওয়ার দৃষ্টির সম্মুখীন হলো। তাতে দুষ্টুর শিরোমণির যেন আরও দুষ্টুমি বৃদ্ধি পেল। আর নীলার দিকে সম্পূর্ণ নজর পড়তে বৃদ্ধির হার বোধহয় কয়েকগুণ বেড়ে গেল। সে মেয়ের সাথে আহ্লাদভরা কথা বলতে বলতেই নীলার জামার খোলা চেইনে হাত দিলো। তখন মেয়েকে ফিডিং শেষে বেখেয়ালিতে নীলা জামার জিপ লাগাতে ভুলে গিয়েছে৷ আর দুষ্টু সাদিদ এখন সেটারই ফায়দা তুলছে। পুরুষালী শক্ত খড়খড়ে আঙুলগুলো বুকের নরম অংশে লম্বালম্বিভাবে ছুঁয়ে যেতেই নীলার সর্বাঙ্গে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। শরীরের সবকটা লোমকূপ দাড়িয়ে যাবার উপক্রম। নীলা ঠান্ডা হাতে দ্রুত সাদিদের হাত চেপে ধরল। লজ্জায় মেয়েটা চোখ তুলে তাকাতে পর্যন্ত পারছে না। সাদিদ নীলার লজ্জামাখা মুখশ্রীতে নজর দিয়ে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরল। মেয়েটা এখনও তার পুরুষালী ছুঁয়াগুলোতে লজ্জায় কুঁকড়ে যায়।
মেয়েটা সাথে আছে বিধায় সাদিদ আর দুষ্টুমি বাড়ালো না। ভদ্র ছেলের মতো হাত সরিয়ে নিলো। এবং নিজেই নীলার বুকের চেইনটা লাগিয়ে দিলো। কিন্তু অসভ্য লোকগুলো কি ভালো হলেও এতোটা হয়?
তাইতো নীলার কানের কাছে ঠোঁট ছুঁইয়ে ঘন স্বরে বলে উঠল,

— ‘ আই লাভ ইট। ‘

ইশশ কি নির্লজ্জ এই সাদিদ ইবনে শাহরিয়ার। নীলা আর এই নির্লজ্জের সামনে থাকতে পারলো না। মাথা নুইয়েই লজ্জাবতী লাজুকলতা হয়ে দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো। মেয়ের সামনে আর এক মুহূর্তও এমন বেশরম লোকের সামনে থাকা যায় না। একবারেই যায় না।

_____________

শান্তর ফোনে সকাল থেকেই একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে বারবার কল আসছে। একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে নাম্বার ব্লকলিস্টেই ফেলে দিয়েছে। তারপরও কল আসা বন্ধ হয়নি। বারবার কল আসতেই রয়েছে।
তানবীরের অফিস থেকে ফিরে আসার সময় হয়ে গিয়েছে। অল্প কিছুসময়ের মধ্যেই বোধহয় সে চলে আসবে৷ তাই শান্ত কলটা সাইলেন্ট মুডে রেখে কিচেনে গেল। তানবীরকে রং নাম্বার সম্পর্কে এখনো কিছু জানানো হয়নি। তাকে বললেই এর পিছনের ব্যক্তিকে খোঁজে বের করে উল্টো পাল্টা কাজ শুরু করবে। হয়তো বা রাগের মাথায় বেচারার দুইএকটা হাড়গোড়ও ভেঙে ফেলতে পারে। যেটার রিক্স শান্ত কোনোভাবেই নিতে চায় না। তাইতো এই গোপনীয়তা।
কিন্তু কথায় আছে না, ” যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়! ”
বিষয়টা কিছুটা সেইরকমই।
কলিং বেল বাজতেই শান্ত নিজে গিয়েই দরজা খোলে দিলো। বাড়িতে এতো কাজের লোক থাকা সত্বেও শান্তর দরজা খোলাটাতে তানবীর ভীষণ তৃপ্তি পায়। সেইজন্যই শান্ত কখনও এই সুযোগটা হাতছাড়া করতে চায় না।
তানবীরের ক্লান্ত মুখটা দেখেই শান্তর ভীষণ মায়া হলো। শাড়ির আঁচলে খুব যত্নে তানবীরের মুখটা মুছিয়ে দিলো।

— ‘ আহা বউ! দিলটা জুড়িয়ে গেল। ”

শান্ত মুচকি হাসলো। অফিস ব্যাগটা নিজের হাতে নিয়ে নরম স্বরে প্রতিউত্তর করলো,

— ‘ আপনি গিয়ে ফ্রেশ হন। আমি আপনার জন্য লেমন জুস নিয়ে আসছি। ‘

তানবীরের ঠোঁটের কোণে ঈষৎ হাসি। আড়চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে শান্তর কপালে অল্প সময়ের জন্য রুক্ষ ঠোঁটজোড়া চেপে ধরল। শান্ত মুহূর্তেই ছিটকে দূরে সরলো।

— ‘ কি করেন এসব! বাড়িতে এতগুলো হ্যাল্পিং হ্যান্ড। ‘
— ‘ তাতে কি? বউ হও আমার। ‘
— ‘ যান তো এখান থেকে। উপরে গিয়ে ফ্রেস হোন। আমি জুস নিয়ে আসছি। ‘

শান্ত লজ্জামাখা মুখ নিয়েই কিচেনে গেল। আর অপরদিকে তানবীরও হাসি মুখে রুমের দিকে পা বাড়ালো।
আজকে আবহাওয়া প্রচন্ড গরম ছিল। তাই তানবীর বেশ লম্বা সময় নিয়ে একটা শাওয়ার নিলো। কোমড়ে তোয়ালে পেঁচিয়েই ওয়াসরুম থেকে বার হলো। কিন্তু শান্তকে কোথাও দেখা গেল না। শুধু সেন্টার টেবিলের উপর ঠান্ডা লেমন জুসের গ্লাসটা রাখা রয়েছে। তানবীরের মুহূর্তেই মেজাজ চটে গেল। মেয়েটাকি জানে না বাসায় এসে তাকে চোখের সামনে না পেলে যে তানবীরের রাগ হয়?
তানবীর রুমের দরজা থেকেই গলা ফাটিয়ে শান্তর উদ্দেশ্য হাঁক ছাড়লো,

— ‘ এই মেয়ে, কোথায় তুমি? দ্রুত রুমে আসো। ‘

শান্ত পাশের সার্ভেন্টদের দিকে তাকিয়ে ভীষণ লজ্জা পেল। তারা মাথা নিচু করে মিটমিটিয়ে হাসছে। এসব করার কোনো মানে হয়? সবাই কিসব ভাবছে! অথচ এই অসভ্য ছেলেটা বারবার তাদের সামনে শান্তকে লজ্জায় ফেলে।

— ‘ মেম যান। স্যার আবারও ডাকছে। ‘

কিচেন সার্ভেন্ট আফিয়ার কথায় শান্ত দ্রুত কিচেন থেকে বের হলো। আর মনে মনে তানবীরের পিন্ডি চটকাতে চটকাতে রুমের দিকে এগিয়ে যাওয়া ধরলো।

— ‘ আজকে তার একদিন কি আমার একদিন। দিন দিন নির্লজ্জের সব সীমারেখা পার করে ফেলছে। ‘

তানবীর রাগী মুডেই জুসের গ্লাসে চুমুক দিলো। গরম মাথাটাকে ঠান্ডা করার ক্ষুদ্র প্রয়াস।
মেয়েটার হাতে বোধহয় যাদু আছে। সে বরাবরই শান্তকে কিচেনের কাজ থেকে দূরে থাকতে বলে। অথচ মুখ ফুটে এটা বলতে পারে না আর কিছু না হলেও তানবীরের রান্নাটুকু যেন সে সর্বদা করে। আজকাল শান্তর হাতের রান্না ছাড়া তার পেটই ভরে না। কিন্তু তানবীর সেটা বলে না। নতুবা মেয়েটা রান্নাঘরেই নিজের জীবন দিয়ে ফেলবে। চব্বিশ ঘণ্টা রান্নার পিছনেই লেগে থাকবে। তাইতো মনের কথাটা তানবীর আপনমনেই খুব যত্ন করে তোলে রাখে। তাদের অল্প কিছুদিনের সংসার জীবনের কথা মনের আঙিনায় ভেসে উঠতেই তানবীরের রাগটা অল্প অল্প করে পরে যেতে লাগল। মুচকি হাসিতে গ্লাসে চুমুক দিতেই বিছানার সাইডে রাখা শান্তর ফোনের উপর নজর পড়ল। নিঃশব্দে ফোনের আলো জ্বলছে। অর্থাৎ কেউ কল দিচ্ছে। সাইলেন্ট আছে বিধায় আওয়াজটুকু কানে আসছে না। তানবীর হাত বাড়িয়ে ফোনটা কাছে আনলো। নম্বরটা সেভ করা নেই৷ অর্থাৎ অপরিচিত। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আবার প্রাইভেসি কিসের? তাই কিছু না ভেবেই তানবীর ফোনটা রিসিভ করে নিলো৷ সে মুখ ফোটে কিছু বলতে পারলো না। অপরপাশ থেকে ভেসে আসা কন্ঠস্বর শুনেই তার পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যাওয়ার উপক্রম।
শান্ত কপট ক্ষেপা রাগ নিয়েই রুমে ডুকলো।

— ‘ আপনাকে না কত বার নিষেধ করলাম এমন করে ডাকাডাকি করবেন না! জানেন সার্ভেন্টরা মুখ টিপে হাসছিলো। আমিতো…

শান্ত মুখের কথাটুকু আর শেষ করতে পারলো না। তানবীরের উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ মুখটা ভীষণ কালচে দেখাচ্ছে। চোখগুলো রক্তলাল। কাঁচের গ্লাসটা মেঝেতে ভাঙা অবস্থায় পরে রয়েছে। শান্তর চোখে মুখে মুহূর্তেই আতংক নেমে এলো। সে কিছু জানতে চাইবে তার আগেই তানবীর উঠে এসে তার গাল চেপে ধরলো৷ এতোটাই জোরে ধরেছে যে গালের নরম মাংস ভেদ করে আঙুলগুলো ভেতরে ডুকে যাবার জোগাড়।

— ‘ আমার পিছন পিছন এতকিছু? এতো সাহস তোর? আমাকে ধোকা দিস! মেরে ফেলব তোকে। একেবারে শেষ করে ফেলব। ‘

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here