অপেক্ষা পর্ব (১৩+১৪+১৫)
লেখিকা: সামিয়া বিনতে হামিদ
১৩।
দিব্য সবার সামনে ইশাকে প্রপোজ করবে ইশা ভাবতেই পারেনি। দিব্য আর ইশা মুখোমুখি হয়।
দিব্য ইশার কাছে এসে বলল,
দিব্য: তুমি কি রাগ করেছো?
ইশা দিব্যের চোখে চোখ রাখলো। সে কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না বলার মতো।
দিব্য ইশার দিকে ঝুঁকে এসে বলল,
দিব্য: বিশ্বাস হচ্ছে না?
ইশা: আপনি এভাবে সবার সামনে? দিয়াও ছিল, ইফতিকে বলে দিলে? পরে বাসায় সবাই জানতে পারলে?
দিব্য: আমাকে দেখে কি ভীতু মনে হয়? আমি মাকে তোমার কথা বলেছি। আর আংকেল-আন্টির কথা ভাবছো? তুমি রাজি থাকলে প্রস্তাব পাঠিয়ে দিতেও আপত্তি নেই। আর আমি এতোও কি খারাপ যে আমাকে পছন্দ হবে না?
ইশা: আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।
দিব্য: তোমাকে যথেষ্ট সময় দিচ্ছি আমি। এখন চল বাসায়।
ইশা: হুম।
দূর থেকে রোহান তাদেরকে একসাথে দেখে খুব কষ্ট পাচ্ছে। অনিক বুঝতে পেরেছে রোহানের অবস্থা। অনিক তবুও মানতে পারছে না রোহানেরও ইশাকে পছন্দ হতে পারে।
ইশা অনেক সুন্দর, কিন্তু ইশার চেয়ে সুন্দর মেয়েও ভার্সিটিতে আছে। এতো মেয়ে থাকতে দিব্য যাকে পছন্দ করে তাকেই কেন পছন্দ করতে হলো? এখন যদি বিষয়টি দিব্য জানতে পারে নিজের ভালোবাসাকে সে বিসর্জন দিয়ে দিবে, শুধুই রোহানের জন্য। অনিক চায় না রোহানের জন্য তার বেষ্ট ফ্রেন্ড কষ্ট পাক। অনিক বুঝতে পারে না এতো কি মায়া দিব্যের, রোহানের প্রতি? এমন অনেক কিছুই সে রোহানের খুশির জন্য ছেড়েছে।
বন্ধুত্ব মানেই ত্যাগ-ভালোবাসা। বিপদে পাশে থাকা। দিব্যের মধ্যে এসব গুন আছে। সে দেখতে যেমন ভালো, তার মনটা এর চেয়ে বেশি ভালো।
দিব্যের ভদ্রতার সুনাম পুরো এলাকায় ছড়িয়ে আছে। ভার্সিটিতে তো আছেই।
ইশার বাবা-মা দুজনেই দিব্যকে খুব পছন্দ করেন। ইশার ভাই, ইফতিকে সবসময় বলে, দিব্যের সাথে বেশি কথা বলতে। মাঝে মাঝে তুলনাও করে দিব্যের সাথে। একারণে ইফতি অনেক বিরক্ত বোধও করে। তবুও দিব্যকে সে পছন্দ করে।
আমাদের সমাজের বেশিরভাগ বাবা-মা সন্তানদের সাথে অন্যের তুলনা করে। তারা ভাবে হয়তো উদাহরণ দিলে সন্তানরা তাদের মতো হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করবে। কিন্তু মাঝে মাঝে হিতে বিপরীতও হয়ে যায়। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট প্রতিভা আছে। অন্যের প্রতিভা অনুসরণ না করে নিজের প্রতিভা বিকাশের চেষ্টা করাই উত্তম।
অনিক দিব্যের হাত ধরে তাকে টেনে নিয়ে যায় অন্যদিকে।
অনিক: এভাবে ইশাকে প্রপোজ করবি আমাকে বলিস নি কেন?
দিব্য: বললে আর সারপ্রাইজ থাকে?
অনিক: তুই তো বলেছিলি অপেক্ষা করবি। হঠাৎ বলে দিলি কেন?
দিব্য: নিশ্চুপ অপেক্ষা করার চেয়ে না করা উত্তম। এখন সে জানে আমি তাকে ভালোবাসি। এখন এই অপেক্ষার আলাদা মূল্য আছে।
অনিক: ভালো করেছিস।
দিব্য: আর আমাদের তো শেষ বছর। আর ইশা মাত্র এসেছে। আরো তিনবছর লাগবে বের হতে। এর মধ্যে কেউ যদি ইশাকে প্রপোজ করে দেয়? তখন আমার কি হবে? এখন সবাই আমাকে চেনে। সবার ধারণা হয়ে যাবে ইশা আমার গার্লফ্রেন্ড। ইশাকে কেউ আর বিরক্ত করবে না এখন।
অনিক: গ্রেট ম্যান। তোর তো মাথায় অনেক বুদ্ধি?
দিব্য হেসে বলল,
দিব্য: আমি এখন আসি। অপ্সরী একা একা বসে আছে হয়তো। তার জন্য বাসে সিট রাখার দায়িত্ব নিয়েছি। এখন কিন্তু অনেক দায়িত্ব আমার।
অনিক: আচ্ছা, অল দা বেস্ট। আল্লাহ হাফেজ।
সন্ধ্যায় নবনী-জুনাইয়েত বাসায় ফিরে আসেন।
নবনী: রক্তিম, বাবা আমার। শরীর কেমন লাগছে এখন?
রক্তিম: হ্যাঁ, ভালো লাগছে। তোমার মেয়ে অনেক সেবা করেছে আজকে।
নবনী: তাই? কি কি বানিয়েছিস দুপুরে?
রিধি: ডিম ভাজি, আলু ভাজি, ডাল।
নবনী: অনেক কিছু বানিয়েছে আমার মা টা।
রক্তিম: হ্যাঁ, তেতো ডাল আর পোড়া ভাজি।
রিধি: হুহ, আমি আপনাকে বানিয়ে খাইয়েছি তাতে আপনার আমাকে ধন্যবাদ দিলেও কম হবে। আর আপনি প্রশংসা না করে আমার সমালোচনা করছেন?
রক্তিম: ওহ, আচ্ছা। মা জানো কি বানিয়েছে আজ রিধি? হলুদের ঝোল, আর কালচে রঙের ভাজি। এই প্রথম এমন বিরল খাবার খেয়েছি। তুমিই বলো রিধির নতুন রেসিপির জন্য কিভাবে প্রশংসা করা যায়? আমার তো মনে হয় প্রশংসা করার ভাষায় নেই।
রিধি মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেল।
এভাবে প্রতিদিন রিধি-রক্তিমের খুনসুটি চলতে থাকে। নবনী-জুনাইয়েত মনে মনে অনেক খুশি। এতোদিন পর তাদের জীবনে আবার আনন্দ এসেছে। সারাদিন তাদের ঝগড়া মিটমাট করতে থাকে দুজন। নবনী হোসেইন রক্তিমের পক্ষে থাকেন, আর জুনাইয়েত হোসেইন রিধির পক্ষে।
কিছুদিন পর রিধির টেস্ট পরীক্ষার সময়সূচী দিয়ে দেয়। রক্তিমের এখন দায়িত্ব রিধিকে পড়ানোর। আর রিধি কোনো ভাবেই রক্তিমের কাছে পড়বে না।
রিধি: না, না, না। আমি পড়বো না উনার কাছে।
রক্তিম: আমার কাছে পড়লে তোমার সমস্যা কি?
রিধি: সমস্যা আছে। অনেক সমস্যা। বাবা প্লিজ, আমি পড়বো না উনার কাছে।
জুনাইয়েত: রিধি মা আমার। রক্তিম একটু সাহায্য করবে। এতে কিসের সমস্যা? তোর ভালোর জন্য বলছি।
রিধি: কিন্তু বাবা….
নবনী: আর কোনো কিন্তু না। যা চুপচাপ পড়তে বস। রক্তিম, যা রিধিকে সাহায্য কর। কি বুঝে না দেখিস।
জুনাইয়েত হোসেইনের দিকে তাকিয়ে বলল,
নবনী: আর তুমি চলো তো। আর কিছু বলবে না।
এদিকে রিধি তার রুমে গেলে পেছন পেছন রক্তিমও আসে।
রিধি: এক্সকিউজ মি, আমার রুম এটি।
রক্তিম: আমি কি বলেছি আমার? আমি তোমাকে পড়াবো এখন থেকে। তাই আমাকে স্যার বলে ডাকবে।
রিধি: আপনাকে? স্যার? আমার বয়েই গেছে।
রক্তিম টেনে এনে রিধিকে চেয়ারে বসিয়ে দেয়।
রক্তিম: কি সমস্যা বের করো।
রিধি: সমস্যা বের করবো?
রক্তিম রিধির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
রক্তিম: আমি কি চাইনিজ ভাষায় বলেছি?
রিধি: আপনি চাইনিজ ভাষা পারেন?
রক্তিম: রিধি সমস্যা বের করো জলদি।
রিধি: আমার তো একটাই সমস্যা।
রক্তিম: কি?
রিধি: আপনি। এখন বের হয়ে যান।
রক্তিম: তোমার সমস্যা কি? আমাকে কি তোমার পরিহাসের বস্তু মনে হয়?
রিধি: আপনি তো নিজেই নিজের পরিহাস করে বেড়ান।
রক্তিম: আমি কি এমন পরিহাস করি নিজের?
রিধি: নিজের থেকে অর্ধেক বয়সের মেয়ের সাথে প্রেম করার ইচ্ছে নিয়ে ঘুরে বেড়ান।
রক্তিম: রিধি তুমি আমাকে অপমান করছো।
রিধি: অপমানিত হওয়ার ইচ্ছে না থাকলে আমাকে আমার মতো থাকতে দিন। আমি নিজেকে নিজের মতো ঘুচিয়ে নিতে পারি। বাই দা ওয়ে গানটি আমার ভালো লাগে অনেক।
রক্তিম একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
রক্তিমের দোষটি কোথায়? রিধির কথাবার্তা, দুষ্টুমি সবকিছুর প্রেমে পড়েছিলো। এখন ভালোবেসেও ভালোবাসার মানুষটির কাছে অপমানিত হচ্ছে। রিধি তাকে ভালোবাসে না, ভালোবাসার কোনো ইচ্ছেও নেই হয়তো। তবে কিসের অপেক্ষায় আছে?
রিধির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে,
রক্তিম: রিধি তোমাকে বড়ো হতে হবে। হয়তো তোমার বোঝার বয়স হয়নি এখনো। আমিও কি বোকার মতো বাচ্চা মেয়েটিকে ভালোবাসার কথা বলতে গেলাম।
রিধি রক্তিমের মুখ ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
রক্তিম: কি দেখছো এভাবে?
রিধি মুখে হাত দিয়ে বলল,
রিধি: ও এম কে, আপনার পাকা দাঁড়ি।
রক্তিম: সমস্যা কোথায়?
রিধি: সমস্যা নেই, বুড়ো স্যার।
রিধি খুব জোরে হেসে দিলো এবার।
রক্তিম রাগ করে চলে গেলো। রিধি তো মনে মনে খুব খুশি। রক্তিম তাকে পড়া জিজ্ঞেস করলে কিছুই পারতো না। কারণ এতোদিন সে হাল্কা পাতলা পড়েছে। আর রক্তিমের স্বভাব ভেতর থেকে প্রশ্ন করা। তাই সে রক্তিমকে রাগানোর জন্য এমন করেছে। যাতে আজকে কিছু না পড়ায়। আজ সারারাত সে বই রিভিশন করবে।
আর যাই হোক রক্তিমের সামনে লজ্জা পেতে চায় না সে। কি মনে করবে? গুবলেট ভাবলে? মান-সম্মান যা আছে সব হাওয়ায় উড়ে যাবে। তখন রক্তিম তাকে পঁচানোর সুযোগও পাবে। সে রক্তিমকে পঁচানোর সুযোগ দিতে চায় না।
১৪।
ইশার আজ একটু দেরী হয়ে যায় ঘুম থেকে উঠতে। গতবারের মতো লোকাল বাসে করে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই, তাই কোনো ভাবে তৈরি হয়ে নেয়। চুলগুলোও ঠিকমতো বাঁধতে পারেনি। কোনো ভাবে প্যাঁচিয়ে নেয়। বাস ধরার জন্য একপ্রকার দৌঁড় দেয়। আশেপাশে মানুষ দেখার সময় নেই তার। দিব্যের আজকে ভার্সিটিতে ক্লাস নেই, তবুও আড্ডা দেওয়ার জন্য যাবে। ইশাকে দৌঁড়াতে দেখে সেও একটু জোরে পা চালালো। সামনের বাসটি অল্পের জন্য মিস। আর ইশা বাসের পেছনে ছুটছে।
দিব্য ইশার অবস্থা দেখে দৌঁড়ে এসে ইশাকে আটকায়।
দিব্য: তুমি পাগল? এভাবে দৌঁড়ালে বাস দাঁড়াবে ভাবছো?
ইশা: আমি লোকালে যাবো না।
দিব্য: তোমাকে যেতে বলছে কে?
ইশা: ভার্সিটিতে ক্লাস আছে। শেষ বাসটিও মিস।
দিব্য: তাহলে তো সমস্যা।
ইশা: আপনি যাবেন না?
দিব্য: যাবো তো।
ইশা: আপনার মধ্যে তো বাস মিস হয়ে যাওয়ার কোনো টেনশন দেখছি না।
দিব্য: জীবনে কতো টেনশন আসবে। মেয়েদের মতো এসব ছোটোখাটো ব্যাপার নিয়ে টেনশন করে সময় নষ্ট করার কি দরকার?
ইশা: এটি ছোটোখাটো ব্যাপার? ঠিকাছে, এখন কীভাবে যাবেন?
দিব্য: লোকালে উঠে যাবো। দাঁড়িয়ে বা বসে, একভাবে গেলেই চলবে। আর আমার ক্লাসও নেই। আর সামনের চায়ের দোকানের চা টা খুব মজা। এককাপ খেয়ে তারপর বাস ধরবো।
ইশা: ওহ। আমি এখন বাসায় চলে যাবো? মা অনেক বকবে। কারণ দেরীতে ঘুম ভেঙেছে এই কারণেই বাস মিস।
দিব্য: আচ্ছা, তাহলে আমার সাথে চলো। তোমার অভিজ্ঞতা বাড়িয়ে দেয়। ভিন্নভাবে আজকে জীবনটাকে দেখবে।
দিব্য আর ইশা হাঁটছে রাস্তার পাশে।
দিব্য: প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে বাস ধরে ভার্সিটিতে আসা, তারপর আবার বাস ধরে বাসায় যাওয়া এগুলো তো কমন। এমন কিছু করো যেটি কখনো করো নি। অনেক কিছু শিখবে, বুঝবে, আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পুরোনো খারাপ স্মৃতি মনে করার সময় পাবে না। ভালো স্মৃতিগুলো বাজে স্মৃতিগুলোকে ঢেকে দেবে।
ইশা: কিভাবে?
দিব্য: তুমি প্রতিদিনের কাজে অভ্যস্ত, দিনশেষে বাসায় আজকের দিনগুলো চিন্তা করবে। যদি নতুনত্ব না থাকে, চিন্তা করে কোনো মজা পাবে না। তারপর আবার পুরোনো খারাপ দিনগুলো কল্পনা করবে। যখন নতুন কিছু ঘটবে, তোমার ব্রেইন কিছুদিন নতুন জিনিসগুলো নিয়ে ভাববে। এভাবে প্রতিদিন নতুন কিছু ঘটলে ধীরে ধীরে তোমার পুরনো অতীত সারাজীবনের জন্য ভুলে না গেলেও মনে করতে ইচ্ছে করবে না। তোমার মন চাইবে সুখ স্মৃতিগুলো মনে করতে, যেদিন তুমি সবচেয়ে বেশি হেসেছো।
ইশা: অনেক অভিজ্ঞতা আপনার!
দিব্য: আমাকে আপনি করে ডাকবে না আর।
ইশা: কেন?
দিব্য: ভুলে গিয়েছো, আমি কিন্তু ভালো বন্ধু হতে চেয়েছি! আর বন্ধুত্বে আপনি মানাই না, তুই বা তুমি মানায়। আমি যেহেতু বয়সে বড়ো তাই তুমি বলবে।
ইশা মুচকি হেসে বলল,
ইশা: আচ্ছা।
ইশা আর দিব্য রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে গেল। দুকাপ চা নিয়ে পাশের বেঞ্চে বসলো।
দিব্য: খোলা আকাশের নিচে বসে গাড়ির হর্ণ শুনে চা খাওয়ার আলাদা মজা আছে। কবি কিন্তু চায়ের কাপ নিয়েও কবিতা লিখতে জানে।
ইশা: হ্যাঁ। আর চায়ের স্বাদও কিন্তু অনেক ভালো।
দিব্য: এইগুলোই ন্যাচারাল। বাঙালি বাঙালি ভাব। রেস্টুরেন্টের মনোরম পরিবেশ, হাজার হাজার বাতি আর এয়ারকন্ডিশনের কৃত্রিম হাওয়ার মধ্যে তুমি বাঙালি হওয়ার অনুভূতি খুঁজে পাবে না। টাকা দিয়ে কৃত্রিমতা পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক কোনো কিছু পাওয়ার জন্য অনুভব করা প্রয়োজন।
ইশা: আপনি অনেক কিছুই জানেন। আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগছে।
দিব্য আর ইশা চা খেয়ে রিক্সায় উঠলো।
ইশা: আমার রিক্সায় চড়তে অনেক ভালো লাগে।
দিব্য: তাই?
ইশা: রাতে বেশি ভালো লাগে। অন্ধকার, নিরব পরিবেশ, আশেপাশের বিল্ডিং আর দোকানের বাতি, আকাশের তারা, এসবকে সাক্ষী করে রিক্সায় চড়ে মনে হাওয়া লাগানো। ভালো লাগে না পরিবেশটা?
দিব্য ইশার দিকে তাকিয়ে আছে।
ইশা: কি হলো?
দিব্য: কিছু না। এমন পরিবেশে তুমি থাকলে আমারও ভালো লাগবে। আইসক্রিম খাবে?
ইশা: হুম, চকোলেট ফ্লেবারেরটা।
দিব্য: আমার ভ্যানিলা টা ভালো লাগে।
দিব্য আর ইশা রিক্সা থেকে নেমে পড়ল। দিব্য ভাড়া মিটিয়ে দোকান থেকে দুটি আইসক্রিম কিনে নেয়।
দিব্য: চলো ওই পাশের রাস্তায় মানুষজন কম। হেঁটে হেঁটে আইসক্রিম খাওয়া যাক।
ইশা: আমারো হেঁটে হেঁটে খেতে ভালো লাগে আইসক্রিম। স্কুল থেকে যখন বাসায় ফিরতাম বান্ধবীদের সাথে, এভাবে হেঁটে হেঁটে খেতাম। কিন্তু এখন বড়ো হয়ে গিয়েছি। মানুষজন কি ভাববে তাই আর…।
দিব্য: মানুষজনের কথা ভেবে কি জীবনকে উপভোগ করা ছেড়ে দেবে? আজ আছি কাল নেই। আমাদের প্রতিটি দিন আনন্দের সাথে কাটাতে হবে। প্রতিটি দিনের শেষে মনের মাঝে যদি সন্তুষ্টি থাকে ওইটাই সবচেয়ে বড়ো অর্জন ওইদিনটির জন্য।
ইশা: হুম।
ইশা দিব্যের দিকে তাকিয়ে ভাবছে, এমন মানুষই সে চেয়েছিলো, যে মানুষটি তাকে জীবনের অর্থ বোঝাবে, সব কিছুর মধ্যেও তার সুখ স্মৃতির সঙ্গী হবে।
ইশা মনে মনে বলছে,
ইশা: দিব্য কেন আগে আসে নি আমার জীবনে? কেন মুহিব নামের মানুষটি এসে আমার জীবনের কিছু অংশ কালো করে দিয়েছে? কেন আমি মুহিবের পেছনে এতো সময় অপচয় করেছি? ওইসময় আমি কেন নিজেকে ফিরিয়ে আনি নি? কেন নিজের আত্ম-মর্যাদাকে নিচে নামিয়ে দিয়েছি?
দিব্য: কি ভাবছো?
ইশা: পুরোনো স্মৃতি। আমার অনেক আফসোস হয়। আমি…….
দিব্য ইশার ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে তাকে চুপ করিয়ে দিলো।
দিব্য: যে চলে গিয়েছে তাকে উড়িয়ে দাও। যে আছে তাকে ধরে রাখো। অতীতকে মনে করে কষ্ট পাওয়া বোকামি। হ্যাঁ অতীতের ভালো স্মৃতিগুলো, মনে করা ভালো।
দিব্য আর ইশা কথা বলতে বলতে লোকাল বাসে উঠে পড়ে।
দিব্য: দাঁড়িয়ে যাবো আমি। তুমি বসো।
ইশা: আমিও দাঁড়িয়ে যাবো। সব অভিজ্ঞতা একসাথে করেছি, এটি কেনো বাদ যাবে?
দিব্য: তুমি মেয়ে মানুষ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে…
ইশা এবার দিব্যের ঠোঁটের সামনে আঙ্গুল ধরে বলল,
ইশা: জীবনে নতুন অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য কি এখন ছেলে হয়ে যেতে হবে?
দিব্য হেসে বলল,
দিব্য: ঠিকাছে। ভালো মতো ধরবে কিন্তু ব্রেক করলে না হয় পড়ে যাবে।
দিব্য আর ইশা দাঁড়িয়ে যায় অনেকক্ষণ। পরে ইশার দাঁড়াতে ভালো লাগছে না । ভার্সিটির বাস হলে সমস্যা ছিলো না। একসাথেই নামে তারা। শৃঙ্খলা আছে একটি। এখন কিছুক্ষণ পরপর কেউ নামছে আর উঠছে।
দিব্য: বলতে চেয়েছিলাম, এভাবে দাঁড়িয়ে যাওয়া মেয়েদের জন্য অস্বস্তিকর ব্যাপার। কিন্তু কিছু বলার আগেই চুপ করিয়ে দিলে। সবজায়গায় কিন্তু মেয়েদের অভিজ্ঞতা না হওয়ায় ভালো। বাংলাদেশ কিন্তু এটি।
ইশা: হুম।
তাদের একটু দেরী হয় ভার্সিটি পৌঁছাতে। রোহান আর অনিক দিব্যের জন্য অপেক্ষা করছিল। দিব্যের সাথে ইশাকে দেখে রোহানের ভেতরটি কেমন জানি মোচড় দিয়ে উঠল। তারা হেসে হেসে কথা বলে আসছে।
ইশাকে হাসতে দেখে রোহান ভাবছে,
আমার সাথে তো কখনো এভাবে হেসে কথা বলে নি। আমার সামনে আসলে ইশা তো চুপ হয়ে থাকে। আমার সাথে হাঁটতেও চায় না। সবসময় দূরে দূরে থাকে। তাকায়ও না ঠিকমতো।
দিব্য আর ইশা রোহান আর অনিকের সামনে আসে।
অনিক দিব্যের কাঁধে হাত রেখে বলল,
অনিক: দোস্ত, আজকে ভীষণ খুশি মনে হচ্ছে!
দিব্য হেসে বলল,
দিব্য: হুম অনেক বেশি।
তারপর ইশার দিকে তাকিয়ে বলল,
তুমি ক্লাসে যাও। যাওয়ার সময় আমাকে একটি ফোন দেবে। বুঝেছো?
ইশা: আচ্ছা।
ইশা চলে যাওয়ার পর অনিক হেসে বলল,
অনিক: ফোন দেবে? বাহ, এতোদূর। দোস্ত বড়সড় ট্রিট পাচ্ছি কিন্তু।
রোহান: তোকে ইশা ফোন নম্বর দিয়েছে?
দিব্য: ইশার নম্বরতো আমার কাছে আগে থেকেই ছিলো। ইশার কাছেও ছিল আমার নম্বর। আমরা তো প্রতিবেশীও, আর কলেজ থেকে চিনি ইশাকে। নম্বর থাকবে না?
অনিক রোহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
অনিক: অনেক পুরোনো ভালোবাসা আমার বন্ধুর। দুদিনের প্রেম না কিন্তু।
ইশার ক্লাস শেষে দিব্য আর ইশা একসাথে বাসায় যায়। রোহান চুপচাপ তাদের দেখছে। পুরো বাসে সে ইশার প্রোগ্রামে গাওয়া গান আর কবিতা শুনে গিয়েছিল। ইশার গাওয়া গানটির সাথে মিলে যাচ্ছে রোহানের জীবন। চোখ বন্ধ করে ভাবছে এতো আনন্দহীন জীবনতো সে চায় নি। তার বাড়ন্ত বয়সে মাকে পায় নি। বাবা সবসময় ব্যস্ত ছিলো। ঊষাও বাসায় তখন আসতো, যখন ফয়সাল আহমেদ থাকতেন। মায়ের আদর, বাবার আদর সবকিছু থেকে বঞ্চিত ছিলো রোহান। আজ প্রথম কাউকে ভালোবেসেও সে হারিয়ে ফেলেছে।
অদ্ভুত জীবন যাকে ভেবে আমরা জীবন পাড়ি দেয়, সে অন্যের সাথেই সুখ ভাগভাগি করে।
রোহানের মন আজ বড়োই ছন্নছাড়া। রোহানের অপেক্ষা একটিই, কবে ফিরে পাবে সে জীবনের অর্থ, কবে পরিপূর্ণ হবে তার পরিবার? রোহানের অপেক্ষার সমাপ্তি কবে হবে?
১৫।
রক্তিম এখন আগের মতোই রিধিকে পড়ায় সাহায্য করে, যেভাবে ছোটবেলায় করতো। ইদানীং রক্তিম রিধির সাথে অযথা কথা বলে না। রিধির বিষয়টা ভালো লাগছে না। এমন তো না যে রিধির রক্তিমকে ভালো লাগে! রিধি রক্তিমকে নিয়ে ওভাবে ভেবে দেখেনি কখনো। তবুও রক্তিমের গম্ভীর ব্যবহার তাকে প্রচুর বিরক্ত করছে।
রিধি মনে মনে ভাবছে, আমি তো এমনটিই চেয়েছি। তবুও কেন ভালো লাগছে না আমার?
রিধিদের টেস্ট পরীক্ষা শেষ। অনেকদিন সে টানা পড়াশুনায় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিল। তাই দুইদিন ছুটি নিয়েছে পড়াশুনা থেকে। বিকেলে দিয়ার সাথে হাঁটতে বের হয়েছে রিধি।
দিয়া: রিধি, রক্তিম ভাইয়ার কি অবস্থা?
রিধি: কেন? উনার কি হয়েছে?
দিয়া: আঙ্কেল আন্টি যেদিন বাসায় ছিলো না, ওইদিন রাতের কথা ভুলে গিয়েছিস?
রিধি: না ভুলে যাই নি।
দিয়া: তোকে ভালোবাসে বলেছিল। রক্তিম ভাইয়া তোকে নিয়ে অন্যভাবে চিন্তা করে। বোন হিসেবে দেখে নি কখনো। নবনী আন্টি আর জুনাইয়েত আঙ্কেল জানতে পারলে?
রিধি: মা জানে।
দিয়া: সত্যি? উনি জানার পরও রক্তিম ভাইয়ার সাথে তোকে একলা ছেড়ে দেয় কিভাবে? কবে থেকে জানে?
রিধি: রক্তিম দেশের বাইরে যাওয়ার আগ থেকে।
দিয়া: মা আর ভাইয়া যদি জানতে পারে কেউ আমাকে পছন্দ করে, আমাকে একা ছাড়বেও না।
রিধি: উনি আমার আসল মা না, দিয়া। রক্তিম আসার পর থেকে মা আমার সাথে আর আগের মতো ভালো করে কথাও বলে না। রক্তিম আমাকে ভালোবাসে, এখানে আমার দোষ কোথায়? বাবাও জানতে পারলে হয়তো আমাকে বিয়ে দিয়ে দেবে। আমার জন্য তারা তাদের ছেলেকে কেন হারাবে? রক্তিম তাদের সন্তান। আম্মি, বাপ্পি বেঁচে থাকলে হয়তো আমার সাথে এমন হতো না।
রিধির চোখে পানি দেখে দিয়া রিধির হাত ধরে বলল,
দিয়া: রিধি আমি আছি না তোর সাথে। বিয়ে করতে না চাইলে আমার কাছে চলে আসবি। আমরা একসাথে থাকবো। আর মা তোকে খুব ভালোবাসে। ভাইয়া তো তোকে বোনের মতো দেখে। আর ইশা আপু মানে আমার হবু ভাবীও কিন্তু অনেক ভালো।
রিধি: ইশা আপু আর দিব্য ভাইয়ার মধ্যে কিছু আছে?
দিয়া: হ্যাঁ। ভাইয়া আপুকে প্রপোজ করেছিল। আপু এখনো হয়তো হ্যাঁ বলে নি। কিন্তু প্রতিদিন একসাথে ভার্সিটি যায়, একসাথে আসে। ভাইয়া তো ইদানীং ইশা আপুর বাবা কামাল আঙ্কেলের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক করে ফেলেছে। ইশা আপুর বাবা প্রতিদিন মসজিদে গিয়েই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। ভাইয়া তো সকালের টা বাসায় পড়তো। বাকীগুলো মাঝে মাঝে মসজিদে গিয়ে পড়তো। এখন প্রতিদিন যায়, সকালেও। আমাকেও ঘুম থেকে উঠিয়ে দিয়ে যায়।
রিধি: অনেক ভালো। ভালোবাসাও কিন্তু মানুষকে পরিবর্তন করে অনেকটা।
দিয়া: হ্যাঁ, ঠিক বলেছিস। ভাইয়ার অনার্স শেষ হলে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে বলেছে।
রিধি: ইশা আপুতো এখনো হ্যাঁ বলে নি।
দিয়া: উনি হ্যাঁ বলে নি তো কি হয়েছে নাও তো করেনি। ভাইয়াকে বলেছিল, ইশা আপুর বাবা-মা রাজি থাকলে ইশা আপুর সমস্যা নেই। কিন্ত ইশা আপু প্রেম করতে পারবে না ভাইয়ার সাথে। ইশা আপুর প্রেমের প্রতি আস্থা নেই।
রিধি: তুই কিভাবে জানলি এতো কিছু?
দিয়া হেসে বলল,
দিয়া: ভাইয়া আর ভাইয়ার বন্ধু আছে না, অনিক ভাইয়া? তাদের কথা শুনে ফেলেছি।
রিধি: ওরে আমার কান পাতলা রে। এগুলো শুনিস আড়ি পেতে? খারাপ অভ্যাস।
দিয়া: চুপ কর।
রক্তিম রাস্তায় হাঁটতে বের হয় ওসময় দিব্য আর অনিকের সাথে দেখা।
দিব্য: আসসালামু আলাইকুম রক্তিম ভাইয়া।
রক্তিম: ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো?
দিব্য: ভালো আলহামদুলিল্লাহ। আমার বন্ধু- অনিক।
অনিক: ভালো আছেন?
রক্তিম: হ্যাঁ। ভালো আছি। তুমি?
অনিক: আমিও ভালো। আপনার কথা অনেক শুনেছি দিব্যের কাছ থেকে। অনেক মেধাবী স্টুডেন্ট ছিলেন। মেডিকেল আর বুয়েটে একসাথে চান্স পেয়েছিলেন।
রক্তিম উত্তরে শুধু মুচকি হাসলো।
অনিক: আপনি তো এখন সাক্সেফুল ইঞ্জিনিয়ার।
রক্তিম: তবুও বাবার বিজনেস সামলাচ্ছি। নিজের কিছুই নেই। তোমরা এই এলাকায় থাকো?
অনিক: না না, দিব্যের সাথে এসেছি ওর বাসায়। আমি একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি।
রক্তিম: তোমার পরিবার?
অনিক: বাবা-মা দেশের বাইরে থাকেন।। আমি ভার্সিটির জন্য এখানে থাকছি। আমার দেশে থেকে পড়াশুনা করার ইচ্ছে ছিলো তাই। তবে পড়াশুনা শেষ করলে এখানেই বাসা নিয়ে নেবো। বাবা-মাও দেশে চলে আসবেন।
রক্তিম: তোমরা চট্টগ্রামের?
অনিক: না ঢাকার। ঢাকায় দাদার বাড়ি, নানার বাড়ি দুটোই ছিলো। আর আমার দাদা আর নানা আপন চাচাতো ভাই ছিলেন। আমাদের ফ্যামিলি অনেক ছোট তাই।
রক্তিম: তারা এখন কোথায় আছেন? বাকী আত্মীয়রাও কি ঢাকায়?
অনিক: আমাদের আত্মীয় নেই। আমার বাবা আমার দাদার একমাত্র ছেলে আর মা নানার একমাত্র মেয়ে ছিলেন। নানা অসুস্থ ছিলেন, বাবা-মার বিয়ের আগেই মারা যান। নানার ইচ্ছে ছিলো বাবা-মার বিয়েটা হোক। ওভাবেই সম্পর্ক। দাদা-দাদীও মারা যায় অল্প বয়সে। পরে নানীও মারা যান ছোট বোন হওয়ার পর।
রক্তিম: তোমার ছোট বোন আছে?
অনিক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
অনিক: বেঁচে নেই। সাতবছর বয়সেই একটি এক্সিডেন্টে মারা যায়। তারপর থেকেই দেশের বাইরে চলে যায় আমরা। বাবা অনেক আঘাত পেয়েছিল ওইসময়। তাই কয়েকবছর ট্রিটমেন্ট করার পর তিনি সুস্থ হোন।
রক্তিম: কিরকম এক্সিডেন্ট?
অনিক: আগুন লেগেছিলো মেলায়। মেলায় গিয়েছিলাম আমরা। বাবা অরুকে খোঁজার জন্য গিয়েছিলো। কিন্তু বাবা আগে থেকে হার্টের রোগী ছিলেন। স্ট্রোক করে ফেলেন ওই সময়। দেশে পরিচিত ছিলো না কেউ আমাদের, কারণ আমরা আগে থেকেই দেশের বাইরে ছিলাম। ওইসময় তিনবছর হয়েছিলো মাত্র ঢাকায় এসেছিলাম। বাবার ম্যানেজার আসেন আমাদের নিতে, কারণ বাবার ট্রিটমেন্ট দেশের বাইরেই ভালো হবে তাই।
রক্তিম: তোমার বোনের খোঁজ নাও নি?
অনিক: বিপদ আসলে সব একসাথে আসে। আমি তো ওইসময় এতো বড়ো ও ছিলাম না। মার একার পক্ষে সব সম্ভব ছিলো না। বাবার সাথে তো কাউকে থাকতে হবে। তবুও খোঁজ নেওয়ার জন্য ম্যানেজারকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। উনি বলেছেন অনেককে চিহ্নিত করা যাচ্ছিলো না। বুঝতেই তো পারছেন ভাইয়া। কিন্তু তবুও মা এখনো বিশ্বাস করে অরু বেঁচে আছে। আসলে এইকারণেই পরিবার অনেক দরকার। ছোট পরিবারে বিপদ আসলে পাশে থাকার মতো কেউ থাকে না। আর বাবা খুব কম মানুষের সাথে মিশতেন। তাই বন্ধুও কম ছিলো।
রক্তিম কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। রিধির বাবা-মাও ঢাকায় থাকতো। আর রিধিও বলেছিল অনু ভাইয়ার কথা। তার অনু ভাইয়া অনিক হবে না তো? রিধিকেও মেলায় পাওয়া যায়, আর আগুন লাগার ঘটনা সব মিলে যাচ্ছে। রক্তিম অনিকের চেহারা ভালো মতো দেখছে, রিধির সাথে অনিকের চেহারার অনেক মিল। ভাই-বোন লাগবেও তাদের।
রক্তিম: তোমার বোনের নাম অরু?
অনিক: অরনী। আদর করে অরু ডাকতো সবাই।
রক্তিম: ওহ, আচ্ছা। আমি আসি। আশা করি তোমার বোন যেখানেই আছে ভালো থাকবে।
রক্তিমের কথা বলার আর কিছুই নেই। বাসায় গিয়ে ভাবছে রিধির নামও অরনী ছিল। বাবা রক্তিমের নামের সাথে মিলিয়ে রেখেছিল রিধি। এখন সে কি করবে? বাসায় বলবে নাকি চুপ থাকবে। বাবা রিধিকে ছাড়া থাকতে পারবেন না। তিনি রিধিকে খুব ভালোবাসেন। আর রিধি জানলে এই বাসা ছেড়ে চলে যাবে। তাকে যদি দেশের বাইরে নিয়ে যায়! রক্তিম রিধিকে আর পাবেই না?
না, এখন সে বলবে না কিছু, যতোদিন রিধির মনে জায়গা হবে না তার জন্য। রক্তিম এখন রিধির ভালোবাসার অপেক্ষায় আছে। তবুও রক্তিম এখন বিষয়টি নিশ্চিত করবেই। রিধিই কি সেই অরনী, যাকে অনিক অরু বলছে।
চলবে-
আগের পর্বের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/373624264359352/