অপেক্ষা পর্ব-(১৬+১৭)

অপেক্ষা পর্ব-(১৬+১৭)
লেখিকা: সামিয়া বিনতে হামিদ

১৬।
সন্ধ্যায় রক্তিম রিধির রুমের সামনে এসে দাঁড়াল। এমন সময় রিধিও দরজা খুলল।

রিধি: আপনি?

রক্তিম: আজকে পড়বে না?

রিধি: দুইদিন ছুটি নিয়েছি।

রক্তিম: এই সময় ছুটি নেওয়ার দরকার আছে? প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ।

নবনী রিধি আর রক্তিমকে একসাথে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখে বলল,
নবনী: কি হয়েছে? এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিস?

রক্তিম: রিধিকে পড়াতে এসেছিলাম। কিন্তু রিধি ছুটি নিয়েছে।

নবনী: কিসের ছুটি? পড়াশুনায় কোনো ছুটি নেই। ওই সময় কতো পড়াশুনা করতো আমার ছেলেটা। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়াও করে নি। আর তুই সারাদিন টোটো করে ঘুরে বেড়াস।

নবনীর কথা শুনে রক্তিম রিধির দিকে তাকিয়ে মুখ চেপে হাসছে আর ভ্রু নাচিয়ে মজা নিচ্ছে।

রক্তিম: আমার মতো হতে হলে রিধির অনেক পরিশ্রম করতে হবে। আর ও পারবেও না আমার মতো হতে।

রিধি দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
রিধি: আমার কোনো ইচ্ছেও নেই আপনার মতো হওয়ার। হুহ।

তারপর মুখ ভেংচি দিয়ে রুমে ঢুকে পড়ল। রক্তিম চেয়ার টেনে বসলো রিধির পাশে।

রক্তিম: আজকে অন্য টপিক নিয়ে কথা বলি। যা তোমারও ভালো লাগবে।

রিধি মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।

রক্তিম: তোমার অনু ভাইয়া কেমন ছিলো?

রিধি অনু ভাইয়ার কথা শুনে রক্তিমের দিকে মুখ তুলে তাকায়।

রিধি রক্তিমের সাথে যা মনে আছে সবকিছুই শেয়ার করে। অনেক কিছুই তার মনে নেই। তারা বাইরের দেশে ছিলো এসব কথাও রিধির মনে নেই। রিধি ওই সময় লিখতে শিখেছিল। রিধির ড্রয়িং খাতায় সে ছবিও এঁকেছিলো চারজনের। নিচে নাম লিখে রেখেছে তার আম্মি, বাপ্পি আর অনু ভাইয়ার। রিধির আর কারো কথা মনে নেই। রিধি আর কাউকে চিনতোও না। স্কুলেও ভর্তি হয়নি। তাকে মা পড়াতো বাসায়, সাথে অনু ভাইয়াও পড়তো।

রক্তিম: তোমার মনে আছে তোমার আম্মি বাপ্পি দেখতে কেমন ছিলো?

রিধি: মনে পড়ছে না। কেমন ঝাপসা মনে হয় এখন।

রক্তিম: দেখলে চিনবে?

রিধি: হয়তো। কিন্তু কিভাবে? তারা তো বেঁচে নেই।

রক্তিম: এমনি জানতে চেয়েছি। যদি বেঁচে থাকে? তুমি নিশ্চিত কিভাবে হতে পারো? তাদের লাশ কি দেখেছিলে??

রিধি: না।

রক্তিম: আচ্ছা, বাদ দাও। আজ তোমার ছুটি। নিজের মতো পড়ো আজকে।

রক্তিম চলে আসে নিজের রুমে। রক্তিম রিধিকে জানাতে চায় না এখন কিছুই। দিব্যকে ফোন দিয়ে অনিকের সব তত্ত্ব নেয়। অনিকের নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, অরনীর পুরো নাম সবকিছুই রিধির দেওয়া তত্ত্বের সাথে মিলে যায়। এর চেয়ে বেশি প্রমাণ রক্তিমের লাগবে না। শুধুমাত্র একটি জিনিস সবকিছু পানির মতো পরিষ্কার করে দেবে যদি, রিধির ছোটবেলার ছবি অনিকের বোনের ছবির সাথে মিলে যায়। রিধির সাত বছরে তোলা ছবি তো অবশ্যই থাকবে অনিকের কাছে।

দিব্য ব্যাপারটি সন্দেহ করে।

দিব্য: অনিকের বোনের ছবি কেন ভাইয়া? ভাইয়া আপনি কি কিছু জানেন?

রক্তিম: দিব্য এখন আমাকে কিছুই জিজ্ঞেস করবে না প্লিজ। তুমি অনিককে কিছু বুঝতে না দিয়ে চাইবে। অনিক যদি তার বোনকে খুঁজে পায় তা তো ভালোই।

দিব্য: অনিক ওর বোনকে অনেক ভালোবাসে। ও যদি ওর হারানো বোনকে ফিরে পায় আমি তো অনেক খুশি হবো। কিন্তু আপনি কোনো কিছু তো অবশ্যই জানবেন, তা না হলে আমার কাছে এসব তত্ত্ব নিতে চাইতেন না।

রক্তিম: দেখো দিব্য, আমি জানিনা অনিকের বোন কে? তবুও যদি খুঁজে দিতে পারি আমার জন্য অনেক বড়ো পাওয়া হবে। আমি কিছু জানতে পারলে অবশ্যই বলবো। আমি এখন পর্যন্ত কিছুই জানি না।

দিব্য: আচ্ছা আমি আপনাকে ছবি পাঠিয়ে দেবো, অনিক থেকে নিতে পারলে।

রক্তিম মনে মনে ভাবছে, আমার রিধির জীবন থেকে দত্তক শব্দটি মুছে দেওয়া খুব দরকার। রিধিকে তার অধিকার দিতে হবে। রিধির অধিকার আছে তার আসল বাবা-মার সাথে থাকার।।এটি মাত্র একটি দুর্ঘটনা। কোনো ইচ্ছাকৃত ভাবে হওয়া ঘটনা না।। ভাগ্যই লিখে রেখেছিল আমার জীবনে রিধি আসবে তাই আজ এভাবেই এসেছে।

এখন হয়তো ভাগ্যই কিছু অস্তিত্বের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে চায়।

সকালে ভার্সিটি এসে দিব্য অনিক থেকে অরনীর ছবি খুঁজে নেয়। তারপর রক্তিমকে পাঠিয়ে দেয়।
ছবি দেখার পর রক্তিমের যা সংশয় ছিলো সব কেটে যায়। রিধিই অরনী, অনিকের বোন। সিদ্দিকা মরিয়ম অরনী, সিদ্দিক কবির অনিকেরই ছোট বোন। অরুর অনু ভাইয়া বেঁচে আছে। রক্তিমের এখন অনেক ভালো লাগছে। রক্তিমের রিধি অনাথ না। রিধির পরিবার একদিন রক্তিম নিজেই পূর্ণ করে দেবে। কিন্তু এখনো সময় আসে নি। এতো তাড়াতাড়ি রিধিকে সে হারাবে না। তার অপেক্ষার শেষ সমাপ্তি পর্যন্ত সে কিছুই জানাবে না কাউকে।

কয়েকসপ্তাহ পর ইশা আর দিব্যদের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। এরই মধ্যে দিব্য আর ইশার সম্পর্ক আরো গভীর হয়। ইশা মুহিবকে পুরোপুরি ভুলতে না পারলেও দিব্যের প্রতি অনেক মায়া জন্মেছে। ইশা এখন বুঝতে পেরেছে ভালোবাসা কি?

ভালোবাসা শুধু ফোনে কথা বলে রাত পার করা নয়, ভালোবাসা মানে অল্প কথাতেই মানুষটির খোঁজ নেওয়া। কিছু টাকা উড়িয়ে দামী দামী গিফটের মাঝে ভালোবাসা নেই, ভালোবাসা হচ্ছে প্রিয় মানুষটির চোখের গভীরতা বুঝতে পারা। রেস্টুরেন্টের খাবার খেয়ে ভালোবাসা ভাগ করা যায় না। নিজ হাতে প্রিয় মানুষটির জন্য তার পছন্দের খাবার রান্না করার মাঝেই আছে ভালোবাসা। দামী গাড়ি কিনে ঘুরতে যাওয়া ভালোবাসা না। লোকাল বাসে একসাথে দাঁড়িয়ে ভালোবাসার মানুষটির হাত ধরে থাকার মাঝেও ভালোবাসা আছে। সুইমিংপুলের পানিতে একসাথে গোসল করে সেল্ফি নেওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোড করার মাঝে সেই ভালোবাসা নেই, যে ভালোবাসা একসাথে পুকুরের পানিতে পা ডুবিয়ে পাশাপাশি বসে মনের জমানো কথা ভাগ করে নিয়ে নিরব পরিবেশকে নাড়িয়ে দেওয়ার মাঝে আছে। ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া আর নেওয়ার জন্য শুধু একটি সুন্দর মন প্রয়োজন। ভালোবাসা এমন একটি মূল্যবান জিনিস যেটিতে কোনো খরচ নেই।

এদিকে রিধিদের গ্রুপস্টাডি শুরু হয়। দুইদিন করে করে এক এক জনের বাসায় গিয়ে পড়বে তারা। প্রথম দুইদিন আনিকার বাসায় গিয়ে গ্রুপস্টাডি করলো। এই দুইদিনে ইফতি অনেক ফ্রি হয়ে যায় রিধির সাথে। আর এই দুইদিনই রক্তিম আনিকার বাসার একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলো যতোক্ষন রিধি ওই বাসায় ছিলো। রিধিকে দ্বিতীয় দিন ইফতির সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে রক্তিমের অনেক বিরক্ত লাগছিলো।

রক্তিম রিধি আর ইফতির সামনে এসে বলল,
রক্তিম: পড়া শেষ হওয়ার পর সোজা বাসায় যাওয়ার কথা ছিলো। আর তুমি অভদ্রের মতো এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছো দাঁত বের করে? এখন সন্ধ্যা হয়েছে রিধি। বাসায় চলো।

রক্তিমের কথা শুনে মুখ ফুলিয়ে জোরে পা চালিয়ে চলে যায় রিধি।

রক্তিম পেছন পেছন এসে রিধিকে বলল,
রক্তিম: এভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে আসলে কেন?

রিধি: আপনি সবার সামনে আমাকে বকা দিচ্ছিলেন আর আমি কচ্ছপের মতো হেঁটে আসবো, যাতে সবাই আরো মজা নিতে পারে?

রক্তিম: ছেলেটির সাথে এতো হাসছিলে কেন?

রিধি: ওমা, হাসি এসেছে তাই হেসেছি। আপনার মতো বাংলার পাঁচ বানিয়ে রাখবো মুখটা?

রক্তিম: আমার মুখ বাংলার পাঁচের মতো?

রিধি: আপনার কি নিজেকে খুব সুদর্শন মনে হয়? প্রতিদিন আয়না দেখবেন ভালো করে। ভ্রান্তিটা দূর হয়ে যাবে তখন। হুহ, বুইড়া ব্যাটা একটা।

রক্তিম: রিধি।

রিধি দৌঁড়ে বাসায় চলে যায়।

প্রতিদিনই এখন এমন হয়। কখনো আদি, কখনো শাহেদ বা ইফতির সাথে কথা বলে রিধি, রক্তিমকে দেখিয়ে দেখিয়ে। রক্তিমের মুখ লাল হয়ে যায় রাগে, তবুও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখে। কিছু বলতেও পারছে না।

রিধিরও ভালো লাগছে রক্তিমকে রাগাতে। প্রতিদিন গ্রুপস্টাডি শেষ করার পর রক্তিম রিধিকে জেরা করে কি করেছে জানার জন্য। রিধির একটিই উত্তর, আমি যাই করি আপনার কি?

আজকে রিধির বাসায় আসবে সবাই। রিধি সকাল থেকে রুম পরিষ্কার করছে।

রক্তিম রিধিকে রুম পরিষ্কার করতে দেখে বলল,
রক্তিম: পাত্র দেখতে আসবে তোমায়? রুম যেভাবে সাজাচ্ছো!

রিধি: পাত্র দেখতে আসলেই কি মানুষ রুম গুছিয়ে রাখে?

রক্তিম: আর তুমি এভাবে! এসব কি? ঠোঁটে কি লাগিয়েছো?

রিধি: আপনি আমার রুমে এসে এভাবে তদন্ত করছেন কেন? আমার যেমন ইচ্ছে আমি তেমন করবো।

রক্তিম: দেখো রিধি, তুমি ছেলেগুলোকে দেখানোর জন্য এভাবে সেজেছো? রিধি ছি! এসব কিন্তু ভালো না।

রিধি: আমি নিজেকে পরিপাটি করেছি। আর সেজেছি মানে? শুধু একটু ঠোঁটে হালকা….

রক্তিম রিধিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে, তাকে কাছে টেনে আনলো আর জোর করে ঠোঁট মুছে দিলো।

রক্তিম: আর এভাবে সেজেগুজে পড়তে বসলে মেরে ভর্তা বানিয়ে দেবো। পড়ায় মন আছে নাকি অন্য কোথাও? আর যাতে এসব ভং-চং করতে না দেখি।

রিধি রক্তিম থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রক্তিমের হাত কামড়ে দিলো।

রক্তিম: রিধি।

রিধি: রাক্ষস একটা। সাহস কি করে হয় আমাকে বিরক্ত করার?

রক্তিম: তুমি আমার হাত কামড়িয়েছো আর আমাকে রাক্ষস বলছো? তোমাকে তো আমি মানুষ ভেবেছিলাম আর তুমি তো..

রিধি: আমি কি? হ্যাঁ?

রক্তিম: আমার হাত কামড়িয়েছো তুমি দাঁড়াও। মজা বুঝবে এখন।

রক্তিম রিধির বই খাতা সব বিছানায় ফেলে দেয়। কাপড় চোপড় সব নিচে। কয়েকমিনিটের মধ্যে পুরো রুম এলোমেলো করে দেয়।
এদিকে বেল বেজে উঠল, রিধির ফ্রেন্ডরা চলে আসে।
রিধি চোখ বড়ো বড়ো করে পুরো রুমের অবস্থা একবার দেখে নেয়।

রক্তিম রিধির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,
রক্তিম: আমার কথামতো না চললে এমন অত্যাচার রোজ চলবে। বাই, বাই ডিয়ার।

রিধির মাথা এই মুহূর্তে খুবই গরম। রিধি জোরে জোরে চিৎকার করে বলল,
রিধি: আমি প্রতিশোধ নেবো। আমি দেখে নিবো বলে রাখছি।

১৭।

আজকে দিব্যের জন্মদিন। রাজিয়া রহমান সকালে দুটি কেক বানিয়েছেন। প্রতিবছর তিনি দিব্যের জন্মদিনে দুটি কেক বানান। একটি কেক দিব্যের জন্য, আরেকটি কেক রোহানের জন্য। রোহানের কেকটি বানিয়ে মেডিকেলে নিয়ে যান। শিশু ওয়ার্ডের বাচ্চাদের সাথে নিয়ে কাটেন। এই পনেরো বছরে তিনি ছেলেকে একটিবার দেখার জন্য কতো ছটপট করেছেন! কিন্তু এটি মনের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলো।

রোহানেরও আজকে জন্মদিন। কিন্তু সে কখনো জন্মদিন পালন করে নি। রোহান নিজের জীবন থেকে যতধরণের রঙিন মুহূর্ত আছে সব মুছে দিয়েছে নিজ হাতে। আজকে সকালে এসেই ঊষা রোহানের পছন্দের নাস্তা বানিয়েছে। কিন্তু রোহান নাস্তা না করেই ভার্সিটি চলে যায়। ঊষার হাতের রান্না রোহানের ভালো লাগে না।
বাসায় বুয়া এসে রান্না করে দেয়। যেদিন বুয়া আসে না সেদিন রোহান কিছুই খায় না। আর দুপুরে তো বাবা, ছেলে বাইরেই খেয়ে নেয়। রাতেও কিনে খায়। মাঝে মাঝে বুয়া রান্না করে দেয়।

গতকাল সারারাত রোহান ঘুমায় নি। রাজিয়া রহমানের ছবি হাতে ছাদে বসে ছিলো। তাই বাসের সিটে মাথা রাখতেই ঘুমিয়ে পড়ল।
আর এদিকে ইশা কেক বানাতে পারে না, তাই অর্ডার করেছিলো। নাস্তাও বানিয়েছে দিব্যের পছন্দের। সকাল সকাল নাস্তা নিয়ে বের হয়ে পড়ে। দিব্যের নীল রঙ পছন্দ তাই নীল রঙের শাড়ি পড়ে। আর কিছুই দেয় নি সে আজ। দিব্য মানা করেছিলো টিপ না দেওয়ার জন্য, তাই টিপ দেয় নি। দিব্যের চুড়ির শব্দ অনেক ভালো লাগে। ইশা চুড়ি পড়লেই দিব্য হাত দিয়ে চুড়িগুলো নাড়াতে থাকে। তাই ইশা নীল রঙের চুড়ি পড়ল হাতে। চুলগুলো খোলা রেখেছে। দিব্য কৃত্রিমতা একদম পছন্দ করে না, তাই ইশা একদম সাজে নি আজকে। আর ইশা প্রাকৃতিকভাবেই অনেক সুন্দর।

ইশা অর্ডার আনার জন্য সকালে ইফতির সাথে রিক্সা নিয়ে জিইসি চলে যায়। সেখান থেকেই ইশাকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে ইফতি চলে আসে বাসায়। বাসে সব সিট ভর্তি ছিলো। শুধু রোহানের পাশের সিটটায় খালি ছিলো।
না চাইতেও রোহানের পাশে বসতে হয় ইশার। আর রোহান তো গভীর ঘুমে মগ্ন।

কিছুক্ষণ পর বাসের ঝাঁকুনিতে রোহানের মাথা ইশার কাঁধে ঢলে পড়ে। ইশা চোখ বড়ো করে রোহানের দিকে তাকায়। সে রোহানকে এর আগের ঘটনার জন্য ক্ষমা করে দিলেও এখনো ক্ষোভটা থেকেই যায়। হাত দিয়ে বার বার সরিয়ে দেওয়ার পরও রোহানের মাথা ইশার কাঁধে এসেই পড়ছে বারবার। ইশার এখন প্রচুর রাগ হচ্ছে। প্রথমত রোহান একটি ছেলে, দ্বিতীয়ত এই ছেলেটিই তাকে নিয়ে বাজে কথা বলেছিলো। রাগের মাথায় হোক আর ঠান্ডা মাথায় হোক, এটা ইশার ব্যাপার না, কিন্তু বলেছিলো তো! তাই এবার খুব জোরেই ধাক্কা দেয় রোহানের মাথাটি। বাসটিও ওইসময় টার্ন নিচ্ছিলো। রোহানের মাথাটি তাই জানালার সাথে খুব জোরেই আঘাত পায়। রোহানের ঘুম তো ভাঙেই সাথে প্রচুর ভয়ও পায় সে। মাথায় হাত দিয়ে ঘুম ঘুম চোখে ইশাকে তার পাশে দেখতে পায়। ইশার চোখে মুখে বিরক্তি দেখে সে বুঝতে পারে কি হয়েছিলো। রোহান মাথায় হাত দিয়ে অনেকক্ষণ বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার নিজেকে খুব তুচ্ছ, নিঃস্ব আর ছ্যাঁচড়া মনে হচ্ছে এখন।

অনেকক্ষণ পর ইশার দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল,
রোহান: সরি, আমি খেয়াল করি নি।অনেক গভীর ঘুমে ছিলাম। কিছু মনে করবে না।

ইশা: মেয়ে দেখলেই এমন ছ্যাঁচড়ামি করতে মন চায়? আপনার দোষ নেই আসলে, এটিতো কালচার।

রোহান কি বলবে বুঝতে পারছেনা। ইশা হয়তো ওইদিনের ব্যবহারটিই সুদেআসলে তুলে নিচ্ছে।

রোহান: ওইদিনের জন্য সরি বলেছিলাম। এখনো রেগে আছো?

ইশা: আমি সিট পায় নি তাই এখানে বসতে হয়েছে। এখন আবার এটি বলবেন না আমার ভালো লাগছিলো। আর ধাক্কা দেওয়া ছাড়াও আমার উপায় ছিলো না।

রোহান মনে মনে ভাবছে,
রোহান: কিভাবে বুঝাবো ইশা ওইদিন আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নি। আমি রাগের মাথায় বলেছিলাম। আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না। আমার হয়তো কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতাও নেই। কিন্তু আমি তো তোমাকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি ইশা। ভালোবাসার মানুষকে কি ইচ্ছে করে কেউ কষ্ট দেয়, বলো? আমি কিভাবে পারি তাহলে? ভালোবাসবে না আমাকে সমস্যা নেই। তুমি আর দিব্য একসাথে ভালো থাকলে আমার আর কিছুই চাই না। কিন্তু একটু সুন্দর করে কথাও তো বলো না আমার সাথে। অনিকের সাথে তো বলতে পারো। আমিও তো দিব্যের বন্ধু, আমার সাথে বললে কি এমন হয়? একটু ভালো মতো কথা বলো আমার সাথে ইশা। কেউ বলে না আমার সাথে কথা। কারো সাথে পারি না মনের কথা ভাগ করে নিতে। দিব্য কতো ভাগ্যবান! কতো বন্ধু ওর। তুমি আছো, দিব্যের বোন আছে, মাও আছে। আমার তো মাও নেই। কতোদিন মা বলে ডাকি না কাউকে। কখনো কাউকে বলতে পারিনি ভালোবাসি। আমার একাকী জীবনের সঙ্গী কেউ হতে চাই না। তোমার চোখেও এতো অবহেলা আমার জন্য। আর ভালো লাগে না ইশা। ভালো লাগে না আমার কিছুই। জীবনের শেষ চাওয়া যদি হয় সেটিতে তুমিই থাকবে। জানি তুমি আমার হবে না, কিন্তু তোমার অপেক্ষায় থাকবো। আশাহীন অপেক্ষা, যেই অপেক্ষার কোনো শেষ নেই।

ভার্সিটি পৌঁছানোর পর ইশা দিব্যকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা দেয়।

দিব্য রোহানকে জড়িয়ে ধরে বলল,
দিব্য: হ্যাপি বার্থডে দোস্ত।

রোহান: হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।

ইশা: তোমরা কি টুইন?

দিব্য আর রোহান ইশার কথা শুনে চোখ বড়ো বড়ো করে তার দিকে তাকায়। এই কথা আগেও অনেক বার শুনেছে তারা। তাদের একসাথে দেখে অনেকেই বলেছিলো।
কিন্তু রাজিয়া রহমান দিব্যকে বলেছেন তার বাবা দেশের বাইরে থাকে তার ভাইকে নিয়ে। আর রোহানকেও ফয়সাল আহমেদ বলেছেন তার ভাই, বোনকে নিয়ে তার মা দেশের বাইরে চলে গেছেন।
তাদের সবকিছুতেই অনেকটা মিলও আছে। তবে অনেকের চেহারা হালকা মিলে যায় তাই তারা এই বিষয়ে কখনো পাত্তা দেয় নি। ভাগ্যক্রমে তাদের জন্মতারিখও একই দিনে। তবুও দিব্য ব্যাপারটি তামাশায় উড়িয়ে দেয়। সে চায় না তার মায়ের অতীত বা তার বাবার কোনো অস্তিত্বও বর্তমানে তাদের জীবনে আসুক। আর রোহান দিব্যকে খুব ভালোবাসে। ভাইয়ের থেকেও বেশি। যদি কখনো সত্যি হয়ে যায় বিষয়টি সে সহ্য করতে পারবে না। তাই তারা অতীত নিয়ে কোনো কথা বলে নি, আর পারসোনাল ব্যাপার নিয়ে তো কখনোই না। দুইভাইয়ের মধ্যে চাপা স্বভাবটি আছে। কিন্তু রোহান একটু বেশিই চাপা স্বভাবের।

দিব্য: কি বলছো? আমরা অনেক ভালো বন্ধু।

রোহান: হ্যাঁ, বন্ধু আমরা।

ইশা: প্রথম যখন দেখেছিলাম ভাই মনে হয়েছিলো। কিন্তু তোমার তো কোনো ভাই নেই তাই আর কিছু বলিনি। আর আজকে উনারও বার্থডে। তোমারও?

অনিক: আরে ইশা, মিল হতেই পারে। একদিনে কতো মানুষ জন্ম নেয়। তুমিও না!

দিব্য ইশার কাছে এসে বলল,
দিব্য: তোমাকে তো আজকে খুব সুন্দর লাগছে।

ইশা মুচকি হাসলো। এদিকে রোহান তাদের কথা বলতে দেখে চলে গেলো সামনে থেকে। অনিক রোহানের পেছন পেছন গেলো।

অনিক: তোর কি ইশাকে পছন্দ?

অনিকের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেল রোহান। অনিক কিভাবে বুঝতে পারলো। সে তো কাউকে কিছুই বলে নি।

রোহান: কি বলতে চাচ্ছিস?

অনিক: আমি চাইল্ড না রোহান। আমি বুঝি সব। তোর ইশাকে ভালো লাগে। হোয়াটএভার এই কথা দিব্য যাতে কখনো না জানে। দিব্য আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড। আমি চাই না ও কষ্ট পাক তোর জন্য।

অনিকের কথা শুনে যেন রোহানের কাটা ঘায়ে কেউ নুন, মরিচ ছিটিয়ে দিয়েছে বেশি করে। দিব্য কি শুধুই অনিকের বেষ্ট ফ্রেন্ড? তারও তো বেষ্ট ফ্রেন্ড। কিভাবে ভাবতে পারলো অনিক এমন কিছু সে করবে যাতে দিব্য কষ্ট পায়!

অনিক আর বাকী বন্ধুরা মিলে যে কেক এনেছিলো ওইটা কাটলো রোহান আর দিব্য। রোহান এসব পছন্দ করে না তাই আলাদা ভাবে কেক কাটে নি কখনো। দিব্যে জোর করেই রোহানকে সাথে নিয়ে কাটে। বন্ধুদের আনা কেক কাটার পর ইশার আনা কেকটি কাটলো দিব্য।

অনিক: আচ্ছা, বন্ধুগণ তাদের একটু আলাদা থাকতে দেয়। আমরা কাবাবে হাড্ডি না হই। চল সবাই।

ইশা খুব লজ্জা পাচ্ছে, লজ্জায় তার ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে।

দিব্য ইশার কানের কাছে এসে বলল,
দিব্য: টমেটো হয়ে গেলে একেবারে।

ইশা: আমি টমেটো? কোথায়? আচ্ছা তোমার জন্য নাস্তা বানিয়েছি নিজ হাতে। খেয়ে দেখো কেমন হয়েছে।

দিব্য খুব আয়েশ করে ইশার হাতে বানানো খাবার খাচ্ছে, আর ইশা বসে বসে দিব্যকে দেখছে। দিব্য হঠাৎ ক্যামেরা বের করলো।

দিব্য: ছবি তুলে নাও আমি সুন্দর করে পোজ দিচ্ছি। ক্যাপশন হবে হ্যাশট্যাগ অপ্সরীর হাতে জাদু।

ইশা সুন্দর করে দিব্যের ছবি উঠিয়ে নিলো। ইশা মনে মনে ভাবছে কতো হাসিখুশি থাকে ছেলেটা। আল্লাহ তাকে যাতে সবসময় খুশি রাখে।

দিব্য খাওয়া শেষ করে ইশার পাশে গিয়ে বসলো। ইশার হাতের চুড়িগুলো নাড়িয়ে ছাড়িয়ে দেখছে। ইশার এই মুহূর্তে খুব ভালো লাগছে।

দিব্য: বিয়ে করবো তোমাকে।

ইশা: বাবাকে বলে দেখো।

দিব্য: চাকরী ধরতে হবে।।চাকরী ছাড়া বেকার ছেলেকে কি মেয়ে দেবেন, বলো? তবুও মাকে বলেছি। তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে কি কোনো সমস্যা আছে তোমার?

ইশা: না, আমার কিসের সমস্যা?

দিব্য: অনেক মেয়েরাই পড়াশুনা শেষ করে বিয়ে করতে চায় তাই বললাম।

ইশা: কারণ স্বামী বা শ্বশুরবাড়ী থেকে যদি বাঁধা আসে? তার জন্য। তুমি কি আমায় পড়তে দেবে না?

দিব্য: আমি কখনো তোমার স্বপ্নে বাঁধা হয়ে আসবো না। যেদিন তুমি আমার হবে সেদিন থেকে তোমার সবকিছুই আমার, তোমার স্বপ্ন বাস্তবে রুপ দেওয়ার দায়িত্বও আমার।

ইশা: তুমি অনেক ভালো দিব্য। সবাই কি তোমার মতো ভালো হয়?

দিব্য: ইশার দিব্য শুধু ইশার জন্যই ভালো। আর কারো জন্য না। তোমাকে ছাড়া চলবে না আমার। বড্ড ভালোবাসি তোমায়। এখন তো ভালোবাসার সাগরে পড়েছি। ডুবে গেলেও শান্তি পাবো। আমার পাশে থেকো ইশা। আমাকে ছেড়ে কিন্তু যাবে না কখনো।

ইশা: তোমাকে কতোটুকু ভালোবাসতে পেরেছি আমি জানি না। ভালোবাসা কি ব্যাখ্যা করা যায়? কিন্তু অনেকটা জায়গা করে নিয়েছো তুমি। বড্ড বেহায়া মনে হয় নিজেকে, খুব সহজেই অতীতকে ভুলে তোমার হাত ধরে বাঁচতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু একটা সময় সেই অতীত আমার জন্য অনেক কিছুই ছিলো।

দিব্য: চুপ, একদম চুপ। তোমার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সব কিছুই আমি হতে চাই। আমি ছাড়া যেসব অধ্যায় আছে তোমার জীবনে, সব ভুলে যাও।

ইশা: দিব্য, তোমাকে আমি কখনো ভুলতে পারবো না। যদি ভাগ্য আমাদের এক হতে নাও দেয়, তবুও তুমি আমার জন্য অনেক বেশি স্পেশাল থাকবে।

দিব্য: ইনশাল্লাহ। আমাদের আলাদা থাকতে হবে না। আমি তোমার সাথেই থাকবো যতোদিন তুমি আছো। ততোদিন আমার অস্তিত্বও তোমার সাথেই থাকবে।

এদিকে গতকাল থেকেই রিধি মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। কারণ রক্তিম রিধির রুমের অবস্থা যা করেছিল, সবাই তা দেখে অবাক। রিধি কোনোভাবে কাপড় উঠিয়ে গুছিয়েছে তাদের সামনে। মনে মনে রক্তিমকে গালি দিচ্ছে, সাথে শাস্তি দেওয়ার প্ল্যানও বানিয়ে ফেলেছে। তাই দিয়াকে ফোন দিয়ে রাজিয়া রহমান থেকে খুব ভালো মানের ঘুমের ওষুধ নেয়। পানির সাথে গুলিয়ে রক্তিমকে রাতে খাওয়ায়। রক্তিমের সন্দেহ হলেও একটু খেয়ে দেখে, স্বাদ খারাপ না লাগায় সে খেয়ে ফেলে। এরপর থেকে অঘোরে ঘুমোচ্ছে সে। নবনী জুনাইয়েত ঘুমিয়ে পড়লে রিধি রক্তিমের রুমে আসে। এরপর ব্লেড দিয়ে রক্তিমের দাঁড়ি যা আছে সব কেটে ফেলে এলোমেলো ভাবে। ঘুমের ওষুধ এইজন্যেই খাওয়ায় যাতে রক্তিম কোনো কিছু টের না পায়। এরপর রং দিয়ে রক্তিমের সাদা শার্ট গুলো ইচ্ছেমতো এঁকে দেয়। রক্তিমের কাপড়-চোপড় সব বাথরুমে রেখে আসে। এরপর কালো কালি দিয়ে মুখে রাক্ষস লিখে দেয়।

রিধি মনে মনে বলছে,
রিধি: রাক্ষস মিয়া, তুমি যদি ডালে ডালে থাকো আমি থাকবো পাতায় পাতায়। তুমি পাতায় পাতায় চললে, আমি দৌঁড়াবো শিরায় শিরায়। আর তুমি শিরায় যাওয়ার চেষ্টা করলে আমি উপশিরায় চলে যাবো। তুমি তাও রিধির সাথে পারবে না। কখনো না।

রিধির এখন অপেক্ষা কখন রক্তিমের ঘুম ভাঙবে। নবনী রক্তিমকে জাগাতে গেলে রিধি দৌঁড়ে এসে পথ আটকে দেয়।

রিধি: মা রক্তিমের মাথায় প্রচুর ব্যথা করছে। তাই ঘুম থেকে ডাকতে মানা করেছিলো।

নবনী: কি বলিস? আমাকে বলিস নি কেন?

রিধি: তুমি শুধু শুধু টেনশন করবে তাই বলি নি।

নবনী: আচ্ছা। আজকে তোর ফ্রেন্ডরা আসবে না?

রিধি: হ্যাঁ।

নবনী: আচ্ছা, যা রুম গুছিয়ে নে।

রক্তিমের ঘুম ভাঙার পর অদ্ভুত লাগছে সবকিছু।।

আয়নার সামনে যাওয়ার আগেই রিধি এসে ভীত কন্ঠে বলল,
রিধি: কে জানি এসেছে দরজা খুলুন আমার ভয় লাগছে খুব।

রক্তিম কিছু না ভেবে দরজার সামনে গিয়ে দেখল।
এরপর রিধিকে বলল,
রক্তিম: তোমার বন্ধুরা এসেছে। ভয় পাওয়ার কি আছে?

রিধি: আচ্ছা, আপনি দরজাটা খুলুন। আমি রুম ঠিক করে আসছি।
রিধি রুমে যাওয়ার পর মুখ চেপে হাসছে।
মনে মনে বলছে,
রাক্ষসরাজ এবার মজা বুঝুন, রিধিকে পঁচানোর শাস্তি।
দরজা খোলার পর রিধির বন্ধুরা রক্তিমকে দেখে অবাক হয়ে যায়। হাঁ করে তাকিয়ে থাকে।

রক্তিম: এভাবে কি দেখছো, আসো ভেতরে।

রক্তিমকে দেখে বিথী হাসি আটকে রাখতে না পেরে হেসে দেয়। দিয়া খুব জোরে চিমটে কাটে বিথীকে।।চিমটে খেয়ে বিথী হাসি বন্ধ করে। রক্তিমতো কিছুই বুঝতে পারছে না।

আদি রক্তিমের কাছে এসে বলল,
আদি: ভাইয়া আপনার মুখের অবস্থা!

রক্তিম মুখে হাত দিয়ে দেখে তার দাঁড়ি কিছু আছে কিছু নেই। তাদের কিছু না বলে দরজা বন্ধ করে রুমে এসে আয়না দেখল তার জঘন্য অবস্থা বানিয়ে রেখেছে রিধি।

রক্তিম দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
রক্তিম: রিধির বাচ্চা রিধি, আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন।

কাপড় নিতে গিয়ে দেখে আলমারির অবস্থা খারাপ। বাথরুমে গিয়ে দেখে, তার জামাকাপড় সব বাথরুমের ফ্লোরে। আর সাদা শার্টগুলোতে রঙের দাগ।

রক্তিম নিজেকে কন্ট্রোল করে, মা কে ডাক দেয়। নবনী ছেলের এই অবস্থা দেখে হেসে দেয়।

রক্তিম: তুমি হাসছো?

নবনী: যাক বাবা, এখন তোকে মানুষের মতো লাগছে। এতোদিন জংলীদের মতো লেগেছিলো।

রক্তিম: মা!

নবনী হেসে হেসে রুম থেকে চলে যান।

দিয়া: এসব তোর কারসাজি ছিলো?

গলা নামিয়ে বলল,
রিধি: আস্তে আস্তে। হ্যাঁ।
তারপর দুজনে মিলে খিলখিলিয়ে হেসে দিলো।

রিধির ফ্রেন্ডরা চলে গেলে নবনী রিধির সামনে এসে দাঁড়ায়। রিধি নবনীর চেহারা দেখে খুব ভয় পায়।

নবনী: রক্তিমের এই অবস্থা তুই করেছিস?

রিধি মনে মনে বলছে,
রাক্ষসটা মাকে বলে দিতে গেলো কেন? সে না কতো ভালোবাসে আমায়! কচুর ভালোবাসা। মাকে না বললে হতো না? এখন কি করি?

নবনী: আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি রিধি!

রিধি: মা, রক্তিম গতকাল আমার ফ্রেন্ডদের সামনে আমাকে অপমানিত করেছিলো তাই।

নবনী: তাই তুইও করেছিস? এটিই বলতে চাচ্ছিস?

রিধি: মা, আমি…

নবনী হেসে বলল,
নবনী: যা করেছিস ভালোই করেছিস। এখন কিছুটা জাতের লাগছে। আর সারাদিন বাসায় বসে থাকে। থাক কিছু কাজ তো পেলো এখন। কাপড়গুলো এখন বসে বসে পরিস্কার করবে।

নবনীর কথা শুনে রিধি হেসে দেয়।

নবনী: এভাবে হাসিস না। তোর রাক্ষসের মাথা গরম। একটু কান্নাকাটি করিস।

রিধি চোখে পানি আনার চেষ্টা করছে।

রিধি রক্তিমের রুমে গিয়ে দেখে রক্তিম রাগে আগুন হয়ে আছে। রিধিকে দেখে মাথা আরো গরম হয়ে যায়।

রিধির হাত শক্ত করে ধরে রিধিকে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
রক্তিম: কি করেছো এসব রিধি?

রিধি মাথা নিচু করে বলল,
রিধি: আর কখনো হবে না প্রমিজ।আমি সব ধুয়ে দিচ্ছি।

কথাটি বলতে বলতে রিধির চোখ বেয়ে পানি নিচে গড়িয়ে পড়ল। আর রিধি মনে মনে হাসছে কারণ একটু পেঁয়াজ কেটেছে চোখে পানি আনার জন্য। আর একটা পেঁয়াজ কাটলেই রিধির অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। রক্তিম রিধির হাত ছেড়ে রিধির মুখ উঠিয়ে দেখে রিধি কান্না করছে। দুহাত রিধির গালের দুপাশে রাখে।

রক্তিম: ইটস ওকে রিধি। কেন কাঁদছো? মা কিছু বলেছে?

রিধি: আমার কোনো অধিকার নেই এমন করার। আমাকে তো কুঁড়িয়ে এনেছে। আমি তো অনাথ। আমার উপর তো দয়া করছে সবাই। তাও আমি সবাইকে কষ্ট দেই।

রক্তিম: খবরদার রিধি। আর এসব কথা বলবে না। তোমার অধিকার আছে। তুমি অনাথ না। রিধি আই এম সরি। কাঁদবে না প্লিজ। একদম না। তুমি কাঁদলে আমার ভালো লাগে না রিধি।প্লিজ, চুপ করো।

রক্তিম রিধিকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। রিধিও ইচ্ছেমতো নাকের পানি চোখের পানি ঝেড়ে রক্তিমের শার্ট ভিজিয়ে দেয়।

রিধির খুব হাসি পাচ্ছে রক্তিমের অবস্থা দেখে তাও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে।

রিধির এখন রক্তিমকেই বড়ো আপন মনে হচ্ছে। এই মুহূর্ত যেন হারিয়ে না যাক কিশোরী আর যুবকের জীবন থেকে। অবুঝ বয়সেই শুরু হওয়া প্রেমের গল্পটি খুঁজছে শেষ সমাপ্তির ঠিকানা।

চলবে—–

https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/373723294349449/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here