অবশেষে তোমাকে পাওয়া পর্ব-৪

0
5281

#অবশেষে_তোমাকে_পাওয়া
#পর্ব_চার
#লেখিকা_তারা_ইসলাম

সকালে এমন একটা কেলেঙ্কারি করে!আমি আর রান্না ঘর থেকে নিজের রুমে যায়’নি।আজ ছুটির দিন হওয়ায় সবাই বাসায় আছেন।আমি অল্প সল্প শাশুড়ি মা আর ভাবিকে সাহায্য করছি।কিন্তু গরমে ঘেমে একদম ঘামকুমারী হয়ে গেলাম।তাই শাশুড়ি আম্মু বললেন- তোমরা দুইজন গোসল করে নাও।আর তানিয়া মা তুমি তাড়াতাড়ি গোসল করে ফেলো আবার আফ্রানকেও করাতে হবে!ওকে খাওয়াতে হবে।

“তানিয়া ভাবি হেসে উনার রুমে চলে গেলেন।তবে আমি রুমের কাছে এসে ভেতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছিলাম না।তাও বাধ্য হয়ে নিজেকে সামলিয়ে ভেতরে যাবো ঠিক করলাম।কি আর হবে শুধু জ্ঞান হারাবো এছাড়া তো উনি আর আমাকে মে’রে ফে’লতে পারবেন না।

“আমি রুমে ডুকে দেখলাম উনি গতরাতের সে ফাইল গুলা নিয়ে কি যেনো করছেন।দরজা হয়তো উনিই খুলা রেখেছেন।আমি আস্তে আস্তে আলমারির কাছে গেলাম।এমন ভাবে পা ফেললাম যাতে উনি না বুঝেন আমি রুমে এসেছি।তবে শেষ রক্ষা হলো না।উনি আমার দিকে গম্ভীর চোখে তাকালেন।আর আমি ভয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলাম।আমাকে অবাক করে দিয়ে উনি কিছু না বলে উনার কাজে মন দিলেন।তাই আমি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে শাড়ি হাতে নিয়ে সব গহনা খুলে ওয়াশরুমের দিকে চলে এলাম।

“গোসল করে ভালোভাবে শাড়ি গায়ে জড়িয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলাম।হতেই উনার দিকে তাকালাম!উনি উনার কাজেই ব্যস্ত”ভাবলাম আজ হয়তো কিছু বলবেন না।সেটা ভেবেই মনে মনে হাসলাম।তারপর আয়নার সামনে গিয়ে হাতে বালা,কানে দুল,গলায় ছোট হার পরে নিলাম।আর একটু সেজে চুল গুলা খুলে দিয়ে পাখার নিচে দাঁড়ালাম।তারপর আস্তে আস্তে চুল গুলা নেড়ে-ছেড়ে শুকানোর চেষ্টা করলাম।

“আর অন্য দিকে রুদ্র ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে নূরের দিকে তাকাতে থমকে গেলো।ভেজা চুল এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে দেওয়া।ভেজা চুলের কারণে ব্লাউজ ভিজে একাকার।নূরের এমন রুপ দেখে রুদ্র চোখ বন্ধ করে কয়েকটা লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলো।মেয়েটার প্রতি সে দিন দিন আকর্ষণ অনুভব করছে।করাটা স্বাভাবিক সে তার ওয়াইফ।

“নূর চুল নাড়া-ছাড়া করতে করতে হটাৎ রুদ্রের দিকে তাকালো।রুদ্রের গভীর চোখ দুটো তার মধ্যে সীমাবদ্ধ দেখে চমকে উঠলো।রুদ্র এখনো ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে।কিন্তু কিছু একটা মনে পরতেই সে দ্রুত উঠে নূরের কাছে গিয়ে তার হাত পিছনে আলতো চেপে ধরে বললো- বলছিলান না যেখানে সেখানে বা*চ্চা*মো না করতে?হ্যা বলেছিলাম?

“রুদ্রের এমন হুট করে আক্রমণে ঘাবড়ে যায় নূর।যেন মনে হলো সে জ্ঞান হারাবে।

“রুদ্র হয়তো সেটা বুঝতে পারলো তাই রেগে বললো- যদি জ্ঞান হারাও তাহলে এমন অবস্থা করবো যে আর জ্ঞান ফিরে আসবে না।

“উনার কথার ঝংকারে আমি আর জ্ঞান হারালাম না তবে মৃদু কাঁপছে আমার সারা-শরীর।

“আমার কাঁপা-কাঁপি দেখে উনি বিরক্ত হয়ে বললেন- এত কাঁপছো কেন?ভালোভাবে দাড়াও বলছি।

“আমি নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রাখার চেষ্টা করলাম তবে সফল হলাম না এক প্রকার দূর্বল হয়ে উনার বুকে ঢলে পরলাম তবে জ্ঞান হারায়’নি।

“উনি আমার এমন কাজে হতভম্ব হয়ে গেলেন।তারপর মিনমিন গলায় বললেন- একটু কাছে আসতেই তুমি জ্ঞান হারাও আর দাদি যা বললো তা করতে গেলে তো তোমাকে আর খুঁজেও পাওয়া যাবে না ন্যাকা।

“উনার কথার মানে বুঝতে পেরে লজ্জায় আমি লাল হয়ে গেলাম।তবে দূর্বল শরীর নিয়ে উনার বুক থেকে মাথা তুলতে পারলাম না।

“উনি আমাকে বললেন- দাদি আমাদের সবার গুরুজন।উনাকে আমরা সবাই সম্মান দিয়ে কথা বলি।তুমি যেভাবে কথা বলেছো নিশ্চয় উনি কষ্টে পেয়েছেন?উনি কথা গুলা ভুল বলেন’নি কারণ উনি তো সে জামালার মানুষ।তাই উনার কথা গুলা এমন।তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী তাই তোমাকে বুঝাচ্ছি এখন।কিন্তু পরের বার যেন আর ভুল না হয়।তখন বুঝাবো না বরং পি*স্ত*ল দিয়ে ঠু*কে দিবো।এখনো চিনো নাই আমাকে।

“উনার কথা গুলা শুনে ভয়ে আমি আরও জমে গেলাম।আসলেই তো উনি ভুল কথা বলেন’নি।আমি কোনোদিনও দাদির সাথে এমন বিহেভ করতাম না।উনার প্রতি রাগ ছিলো সেটাই বের করেছিলাম তখন।উনি আমাকে এত সুন্দর করে বুঝালেন যে আমার বেশ ভালো লাগলো।তবে শেষের কথা শুনে কেঁপেও উঠলাম।

“তারপর আমি আস্তে আস্তে উনার বুক থেকে মাথা তুলতেই উনি হুট করে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলেন।উনার কাজে আমি বোকা বনে গেলাম।আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকাতেই উনি বললেন- এমন আধ-ভেজা অবস্থায় আমার সামনে আসবে না বলে দিলাম।ভুল কিছু হয়ে গেলে তুমি এক-মাস জ্ঞান হারিয়ে পরে থাকবা।বলেই আমাকে ছেড়ে আবার বিছানায় বসে পরলেন।

“উনার কথা শুনে লজ্জায় আমি কুঁকড়ে গেলাম।তারপর নিজেকে পরিপাটি করে উনার দিকে না তাকিয়ে রুম ত্যাগ করলাম।
————————————–
~ আজ অনেকদিন পর আমি আর মারিয়া ভার্সিটি যাচ্ছি।তাও আবার তাদের গাড়ি নিয়ে।যা আমার কাছে বিরক্তিকর!কারণ আমি সব সময় রিকশা করে চলাচল করতে পছন্দ করি।কিন্তু শশুড় বাবার হুকুমে আমাদের গাড়ি করেই যেতে হচ্ছে।আর মির্জা সাহেবের কথা মতো আমি কালো,বোরকা,হিজাব,পড়লাম!আমি আগেও পড়তাম তবে মাঝে মাঝে।আমি ভার্সিটি আসার আগে উনি বার বার করে বলেছেন- দুষ্টামি,লাফালাফি একদম করবে না।উনার এক-প্রকার হুমকি-ধুমকি শুনেই ভার্সিটি যাচ্ছি।
———————————
তো মিস্টার রুদ্র মির্জা নিজের ওয়াইফ কে কখন ডিভোর্স করছো?

“রুদ্র ভ্রু কুঁচকে রেয়ান চৌধুরির দিকে তাকিয়ে বললো- আমি কেন আমার ওয়াইফকে ডিভোর্স দিতে যাবো?

“ও মিস্টার রুদ্র মির্জা- আমি জানি তোমাদের বিয়েটা একটা মিস্টেকের কারণেই হয়েছে।

“রুদ্র স্বাভাবিক গলায় বললো- তো?

“রেয়ান হেসে বললেন- তো কথা হচ্ছে আমার বোন তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।আমি চাই তুমি আমার বোনকে বিয়ে করো।

“রেয়ানের কথা শুনে রুদ্র চেহেরায় বিরক্তি ফুটিয়ে তুলে বললেন- মিস্টার রেয়ান চৌধুরি আমি অলরেডি বিবাহিত।আমার দুটো বউ পা*লা*র ইচ্ছে কিংবা মুড কোনোটাই নেই।

“রেয়ান এবার চোখ মুখ শক্ত করে বললেন- তুমি তোমার ওয়াইফকে ডিভোর্স দিবে।আর আমার বোনকে বিয়ে করবে!এটাই ফাইলান।

“রুদ্র বাঁকা হেসে বললেন- আমার লাইফের ডিসিশন কি আপনি নিবেন মিস্টার রেয়ান চৌধুরি?আর আমি আমার ওয়াইফকে ডিভোর্স দিয়ে তার জীবন নষ্ট করতে চাই’না।

“রেয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বললেন- তাহলে আমাদের মাঝে একটা ডিল হয়ে যাক?

“রুদ্র শান্ত গলায় বললেন- কিসের ডিল?

“রেয়ান শান্ত আর স্বাভাবিক গলায় বললেন- তুমি যখন চাও’না তোমার বর্তমান ওয়াইফে ডিভোর্স দিয়ে জীবন নষ্ট করতে।তখন আমি একটা কথায় বলবো তুমি ডিভোর্স দিয়ে দাও ওই মেয়েটাকে তারপর নাহয় তাকে আমি বিয়ে করবো।আর তাও তুমি আমার বোনকে বিয়ে করে নাও!আমার বোনের জন্য এতটুক ত্যাগ আমি করতেই পারি।

“রুদ্র তার কথা শুনে রেগে টেবিলে থাকা গ্লাসটা নিচে ফেলে বললো- মুখ সামলে কথা বলুন মিস্টার রেয়ান চৌধুরি।ভালোভাবে কথা বলছি বলে মাথায় উঠে নাচবেন না।আমি আমার বর্তমান ওয়াইফ নিয়ে সন্তুষ্ট আছি।আর আমি কাপুরুষ না যে নিজের ওয়াইফকে অন্য কারোর হাতে তুলে দিবো।এবং গেট আউট বলেই চিল্লিয়ে উঠলেন।

“রেয়ান অপমানে সে জায়গা ত্যাগ করলেন।তবে যেতে যেতে বললেন- আমার বোনকে তোমার বিয়ে করতেই হবে।

“রেয়ানের সব কথা ভাবতেই রাগে সারা-শরীর কাঁপছে রুদ্রর।সে কখনোই ভাবতে পারে না নূর অন্য কারো হবে সেটা।সে নূরের সাথে থাকতে থাকতে তার মায়ায় পরে গেছে।কিন্তু রেয়ানের কথা গুলা কোনো ভাবে ভুলতে পারছে না।তাই সেখানে থাকা কিছু জিনিসপত্র ভাঙ্গতে শুরু করলো।

“সে কখনো তাদের অফিসে আসে না।তার আলাদা কাজ থাকে সব-সময় কিন্তু বাবার কথাতেই আজকে বাধ্য হয়ে আসলো।আর আসতেই রেয়ান হাজির।রুদ্র মনে মনে ভাবলো রেয়ান যদি এমন একটা বাজে ডিল নিয়ে আবার কখনো তার কাছে আসে।তখন সে নির্ঘাত ঠু*কে দিবে।
——————————————–
রেয়ান নিজে আজ গাড়ি চালিয়ে বোনের ভার্সিটির দিকে যাচ্ছে।সে কোনো সময় বোনকে আনতে যায়’না কারণ ব্যস্ততার জন্য একদম সময় পায়’না।কিন্তু আজ সে ফ্রী তাই বোন’কে সারপ্রাইজ দিতে আসা।মনে মনে ভাবছে রুদ্রর কথা গুলা।রুদ্র যা বলেছে তা একদম ঠিক।তবে রেয়ান কি করবে বোন’কে তাকেই ভালোবাসে।ভাবলো পরে আবার বুঝাবে রুদ্রকে আপাতত সব শান্ত হুক।

“ভার্সিটির কাছে আসতেই সে গাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কখন তার বোন বের হবে তার জন্য।

“কিন্তু কিছুক্ষণ পর কিছু একটা দেখে রেয়ান থমকে যায়।কঠোর হৃদয়ে খেলে যায় একরাশ অনুভূতি।এই অনুভূতির সাথে তার নতুন পরিচয়।সে জানে না এই অনুভূতির নাম কি?

“সে দেখতে পায়- তার থেকে কিছুটা দূরে দুটো মেয়ে বেলুন নিয়ে টানাটানি করছে কিন্তু তার চোখ আটকে যায় কালো বোরকা হিজাব পড়া মেয়েটির দিকে।চেহেরা দেখা যাচ্ছে কারণ মুখে দেওয়া মাস্কটা হাতে নেওয়া।গোল গোল টাইপের গাল দুটো ঘেমে লাল হয়ে আছে।কাজলহীন চোখ দুটো বেশ আর্কষনীয়।ঠোঁটটা অনেকটা গোলাপি।এতটুক ভাবতেই মেয়েটা তার কাছে এসে বললো- ভাইয়া আপনি কি আমার বেলুন গুলা রাখবেন। তবে ওই যে চু*ন্নি (ওর সাথে থাকা মেয়েটার দিকে ইশারা করে বললো)ওকে আবার দিতে যাবেন না।ও আপনার থেকে নিতে আসলে অবশ্যই ধমক দিবেন বলেই মেয়েটা আমার গাড়ির পিছনে লুকালো।মেয়েটার কন্ঠ শুনে যেন আমি অন্য দুনিয়ায় হারিয়ে গেলাম।সে কি বললো সেটা আমি শুনিও’নি শুধু ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম।

“মেয়েটাকে খুঁজতে এলো সে মেয়েটা যাকে সে চু*ন্নি বলে সম্মোধন করছে।

“সে মেয়েটা আমার কাছে এসে বেলুন গুলা দেখে বললো- ভাইয়া নিশ্চয় বেলুন গুলা আপনাকে নূর দিয়েছে।তো নূর কই জানেন?

“যাকে দেখে আমার হার্ট দ্রুত চলা শুরু করেছিলো সে মেয়েটার নাম নূর।সেটা জেনেই মনে মনে হাসলাম।আরও হাসি পেলো তাদের বা*চ্চা*মো দেখে।

“আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললাম- হ্যা এইগুলা আমাকে নূরময়ী দিয়েছে।আর সে আমার গাড়ির পিছনেই লুকিয়ে আছে।

“আমার কথা শুনে নূরময়ী গাড়ির পিছন থেকে বের হয়ে এসে ছু মে’রে বেলুন গুলা নিয়ে আমাকে বললো- আপনার মতো আজাইরা লোককে বিশ্বাস করায় আমার ভুল হয়েছে।কেন বলতে গেলেন?মজাটায় ন*ষ্ট করে দিলেন।বলেই এক-প্রকার রেগে চলে গেলো নূরময়ী।তার পিছন পিছন চলে গেলো তার সাথে থাকা মেয়েটা।

“ওর কথা শুনে মুচকি হাসলাম।মেয়েটা বড়ই বা*চ্চা*মো স্বভাবের।তারপর মনে মনে নূরময়ী নামটা কয়েক-বার উচ্চারণ করতেই রেয়ানের মনে অদ্ভুত অনুভূতি হলো।মনে মনে ভাবলো এই নূরময়ীকে আমার চাই চাই।তাকে একান্ত আমার নূরময়ী করে রাখতে চাই….

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here