অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part: 20

অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part: 20
.
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤

.
🍁
.
ব্যালকেনিতে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে আয়ান।।অদিতি ওর হাসির কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না।। তাই অসীম কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করেই ফেললো,,
.
হাসছেন কেন একা একা??
.
কেন হাসার জন্য পার্টনার লাগবে এমন কোনো নিয়ম সংবিধানে লেখা আছে নাকি??(ভ্রু কুচঁকে)
.
না তা নেই।।বাট বিনা কারনে হাসাটা পাগলের কারবার কিনা তাই বলছিলাম আরকি…(দাঁত কেলিয়ে)
.
ওহ হ্যালো,, আমি মোটেও বিনা কারনে হাসছি না।।ফাহিম আর রিয়ার কান্ড দেখে হাসছি।।রিয়াটা আসলেই বাচ্চা,,,ফাহিম যে কিভাবে ওকে সামলাবে কে জানে??(মুচকি হেসে)
.
ফাহিম ভাই ওকে সামলাতে যাবে কেন??(ভ্রু কুচঁকে)
.
ফাহিমের বউকে ফাহিম সামলাবে না তো পাশের বাসার দারোয়ান সামলাবে??অদ্ভুত “!!
.
” ফাহিমের বউ” কথাটা শুনেই অদিতির হাত থেকে কফির কাপটা পড়ে গেলো।অবাক চোখে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো…
.
ফাহিম ভাইয়ের বউ মানে?
.
ফাহিমের বউ মানে ফাহিম’স ওয়াইফ।।ওহ সরি লিটেল মিস্টেক।।ওটা হবে ফাহিম’স উডবি ওয়াইফ।।
.
মানে কি??ফাহিম ভাই আর রিয়া??ইম্পসিবল!!! (অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে)
.
কেন ইম্পসিবলের কি দেখলে??ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে তো বিয়ে করবে এটাই স্বাভাবিক ইম্পসিবল হতে যাবে কেন?
.
কিহহহহহহহহহহ????
.
আস্তে,, চেঁচাচ্ছো কেন??তুমি না প্রেগনেন্ট আস্তে কথা বলো।।।আমাদের পাশের বিল্ডিংয়েই বাচ্চারা আছে তোমার এই কর্কশ চিৎকারে ওরা সেন্সলেস হয়ে যেতে পারে।।
.
কিহ??আমার কন্ঠ কর্কশ??(রাগী গলায়)
.
এনি ডাউড??আমার তো নেই।।
.
শুনুন…আমার কন্ঠ শুনে ভার্সিটিতে ছেলেরা উল্টে পড়ে যেতো হুহ!!”(অন্য দিকে ফিরে)
.
আমিও তাই গেস করেছিলাম এবং এটাই স্বাভাবিক।।(নির্লিপ্ত মুখে)
.
মানে??(,অবাক হয়ে)
.
ভার্সিটির সহজ সরল,,ফিডার খাওয়া ছেলেদের সামনে তোমার মতো পেত্নী গর্জে উঠলে যে তারা উল্টে পড়বে এটাই স্বাভাবিক তাই বললাম।।(মুচকি হেসে) সবাই তো আর আমার মতো সাহসী নয় যে পেত্নীর সাথে এক রুমে থাকবে…(ভাব নিয়ে)
.
ইউউউউ
.
হুহ আমি জানি আমি সাহসী চেঁচিয়ে বলতে হবে না,, আমার নজ্জা লাগে।।(হাত দিয়ে মুখ ঢেকে)
.
আয়ানের কথা বলার ভাব দেখে অদিতি হুহা করে হেসে উঠলো।।আয়ান মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অদিতির সেই প্রানবন্ত মুখটির দিকে।।কি অসাধারণ হাসি,, সাথে মনমাতামো রুনুঝুনু শব্দ।।আচ্ছা মেয়েটি কি জানে তার ওই হাসিতে অদ্ভুত এক মায়া আছে।।যে মায়া ভাঙতে পারে পৃথিবীর হাজারো মায়ার জাল।।হয়তো জানে না নয়তো এমন নির্দয়ের মতো হেসে হাজারো পুরুষের বুকের কাঁপুনির কারণ হতো না সে।।আয়ানের বুকের মিষ্টি ব্যাথার কারণ হতো না সে।।অদিতির হাসিতে আয়ানের ঠোঁটেও ফুঁটে উঠলো হাসির রেখা,,আনমনেই বলে উঠলো নজরুলের সেই বিখ্যাত লাইন- “তোমারে যে চাহিয়াছে ভুলে একদিন,,সে জানে তোমারে ভুলা কি কঠিন”” আয়ানের কথায় হাসি থামিয়ে দিলো অদিতি।।আড়চোখে তাকিয়েই বলে উঠলো,,” কি বললেন?” আয়ান মুচকি হেসে চোখ সরিয়ে নিলো…
.
ফাহিমের কথা বলছিলাম।।সে ভুলে রিয়াকে চেয়ে এখন পুরোটাই ফেঁসে গেছে।
.
মানে কি?ফাহিম ভাই রিয়ার মতো বাচ্চার প্রেমে পড়লো কিভাবে বুঝলাম না।
.
ফাহিম ভাই না গো ফাহিম ভাই না।।আমাদের রিয়া বেবিটাই তার প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে তাকে প্রেমে পড়তে বাধ্য করেছে।প্রথমে ফাহিম এসব রিয়ার আবেগ বলেই এবোয়েড করেছে বাট রিয়ার ওভাবে পালিয়ে যাওয়া তারপর সুইসাইড এটেম্প করা।।এসবের বেড়াজালে ছেলেটা বাচ্চাটার প্রেমে ফেঁসে গেছে।।ওহ্…তুমি হয়তো জানো না যে রিয়ার বাড়ি থেকে পালানো থেকে সুইসাইড সবটার কারনই হলো ফাহিম।।
.
কিহহহহহহ??
.
আবারও?(কানে হাত দিয়ে) বার বার চেঁচিয়ে উঠো কেন বুঝি না।।
.
আপনি বুঝতে পারছেন না…ফাহিম ভাই আর রিয়া ইম্পসিবল।।
.
কেন?(অবাক চোখে)
.
কেন মানে??উনাকে আমি ভাই ভাই ডাকি আর আমার থেকেও সাত বছরের ছোট একটা বাচ্চা মেয়ে তাকে ওগো শুনো গো।।জানু,, বেবি বলে ঘুরে বেড়াবে ভাবা যায় এগুলো???আপনাকে আমাকে আমাদের সবাইকে ওই বাচ্চা মেয়েটাকে ভাবি ডাকতে হবে….হায় আল্লাহ কই কি??
.
অদিতি বেবি।।এবরিথিং ইজ পসিবল।।।আর বাচ্চা বাচ্চা যে করছো।।সে এতোটাও বাচ্চা নয়।।আর ১০ বছরের ডিফারেন্ট এতোটাও ডিফারেন্ট না যে তুমি হায় হোতাস করছো।।।চিল বেবি চিল।।
.
অদিতি কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই ফোনটা বেজে উঠলো তীব্রভাবে।।বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করে কানে নিতেই ওপাশ থেকে চেঁচিয়ে উঠলো সাদিয়া…
.
অদিতি??দোস্ত?কাহিনী হয়ে গেছে তো।।
.
কি কাহিনী??
.
আরে…ফাহিম ভাই আর রিয়া,, রিয়া ফাহিম ভাইকে পছন্দ করে এবং তারজন্যই নাকি সুইসাইড এট্যাম্প করেছিলো ভাবা যায়??
.
সত্যিই রে এটা আনএক্সপেক্টেট।।আমি তো টুটালি সারপ্রাইজড দোস্ত।।এতো কিছু হয়ে গেলো অথচ তুই আমি কিছুই বুঝলাম না??
.
হুমম আমিও তাই ভাবছি।।আচ্ছা শোন…ফাহিম ভাইয়ার ফ্যামিলিকে সব জানানো হয়েছে উনারা পরশো আসছে।।তুই কিন্তু আসছিস ব্যস।।আমি কিছু শুনতে চাই না।।যদি বিয়ে টিয়ে হয়ে যায় তো তুই মিস করে যাবি তো।।তুই আর আমি ব্যাপক মজা করবো বুঝেছিস??
.
আরে তুই না বললেও আমি চলে আসতাম….
.
প্রায় ৪০ মিনিট হতে চললো অদিতি আর সাদিয়ার কথা চলছে।।অদিতি সারা রুমময় ঘুরে ঘুরে কথা বলছে হাসছে।।।কথার তালে তালে রিয়েকশন দিচ্ছে।।আর আয়ান সোফায় গালে হাত দিয়ে বসে অদিতিকে দেখছে।।এতোক্ষণ কিভাবে কথা বলে এরা??এই একটা টপিক থেকে দুনিয়ার সব উদ্ভট প্রেম কাহিনী নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিয়েছে তারা।।তাদের কোন বান্ধবী ৫০ বছরের বুড়াকে বিয়ে করেছিলো এগুলো ওদের গল্পের টপিকস।।তারা নিজেদের মধ্যেই আলোচনা চালাচ্ছে যে রিয়ার চয়েজ ঠিক আছে কি না??অবশেষে একঘন্টার মাথায় রিয়ার ডিসিশান একদম ঠিক এই মতামতকে গ্রহন করে,, তৃপ্তির হাসি নিয়ে ফোন রাখলো অদিতি।।ফোনটা বিছানায় রেখে তাকাতেই দেখে আয়ান ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।।
.
কি সমস্যা??এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন??
.
লাইক সিরিয়াসলি?? একঘন্টা??এতোক্ষন কি কথা বললা শুনি??আগে শুধু শুনতাম এখন বিশ্বাসও হয়ে গেলো মেয়েরা বেস্টফ্রেন্ড পেলে পুরো দুনিয়া ভুলে যায়।।
.
অদিতি কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।।কিছু একটা ভেবে চমকে উঠলো সে।।আশ্চর্যের বিষয় হলো সাদিয়া আর অদিতির মধ্যে সব জড়তা কেটে গেছে।।তারা আগের মতোই আবারও গল্পের ঝুড়ি খুলে বসেছে।।অদিতির ভাবতেই আনন্দ লাগছে।।না,, বন্ধুত্ব হারে নি।।সেই ঠুনকো ভালোবাসার বেড়াজালে তার বন্ধুত্ব হেরে যায় নি।।অদিতির প্রানখুলে হাসতে ইচ্ছে করছে।।আজ সে জিতে গেছে,,,জিতে গেছে সে।।
.
.
🍁
.
.
ফাহিম ড্রাইভ করছে আর রিয়া ফাহিমের কোলে বসে আছে।।ফাহিম অনেক চেষ্টা করেও তাকে কোল থেকে নামাতে পারে নি।।তার এক কথা “আমি নামবো না।।পারলে এভাবে ড্রাইব করুন নয়তো এভাবেই বসে থাকুন আই ডোন্ট কেয়ার”।। ফাহিমও বাধ্য হয়ে মেনে নিয়েছে।।কিন্তু কিছু দূর এসেই শুরু হয়েছে আরেক নতুন ঝামেলা,, ফাহিমের ঠোঁটের নিচের তিল টাকে রিয়া একবার অনামিকা আঙ্গুল দিয়ে ঢেকে দিচ্ছে।।আবার আঙ্গুল সরিয়ে নিচ্ছে।। আবার ঢাকছে তো আবার সরিয়ে নিচ্ছে।।ফাহিম ব্যাপারটাই চরম বিরক্ত।।আরে এভাবে কি ড্রাইভ করা যায় নাকি??
.
রিয়া??কি হচ্ছে এটা??আমি ড্রাইভ করছি তো।।তুমি এমন করলে তো এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে।।দেখো তুমি সাথে আছো আমি কোনো রিস্ক নিতে চাচ্ছি না।। সো প্লিজ এসব বন্ধ করে নেমে বসো।
.
আমি কি করলাম??আমি তো জাস্ট বোঝার চেষ্টা করছি যে আপনার এই তিলটা না থাকলে আপনাকে কেমন লাগলো…
.
রিয়া…আম অল ইউরস।।আমাকে দেখার মতো সময় তুমি অনেক পাবে।।তো প্লিজ এখন এসব বাচ্চামো বন্ধ করো।
.
রিয়া কিছু বলতে গিয়েও বললো না।।কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু একটা ভেবেই বলে উঠলো…
.
গাড়ি থামান
.
কেনো?(অবাক হয়ে)
.
থামাতে বলছি থামান
.
কিন্তু কেনো সেটা তো বলি।।কাজী অফিস যেতে তো আরো ১৫ মিনিট লাগবে এখনই থামাবো কেন??
.
আপনি থামাবেন?নাকি আমি আপনার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলবো??
.
আচ্ছা বাবা,,থামাচ্ছি।
.
ফাহিম গাড়িটা সাইড করে থামাতেই রিয়া ঝটপট নেমে গেলো।।ফাহিম রিয়ার মতিগতি কিছুই বুঝতে পারছে না।।তাই সেও সিট বেস্ট খুলে নামতে যাবে তার আগেই রিয়া একটা রিক্সা ভাড়া করে চলে গেলো।।ফাহিম তাড়াতাড়ি নেমে দৌড়ে গিয়েও কোনো লাভ হলো না।।ততোক্ষণে রিয়া পগারপার।। ফাহিম বুঝতে পারছে না এই মেয়েটা আসলেই চায়টা কি??ঠিক তখনই ফোনটা বেজে উঠলো তার।।ফোনের স্ক্রিনে আয়ানের নাম ভেসে উঠেছে।।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনটা কানে নিতেই আয়ান বলতে শুরু করলো…
.
দোস্ত…হ্যাপি বিয়া(দাঁত কেলিয়ে) কি রে আমাদের পিচ্চি ভাবি কই??বিয়ে কমপ্লিট না??
.
তোর মাথা।।মাইয়া ভেগে গেছে বিয়ে কি আমি কাজি কে করবো নাকি,??
.
কিহ??মেয়ে ভেগে গেছে মানে?রিয়া ভেগে গেছে?কিন্তু কই গেছে?(অবাক হয়ে)
.
আমি কি করে বলবো।।হঠাৎ গাড়ি থামাতে বললো।।গাড়ি থামিয়ে আমি নামতে নামতেই সে উল্টো পথে পাড়ি জমালো।।
.
এতোক্ষণ তো বিয়ের জন্য সেই এক্সাইটেড ছিলো তো হঠাৎ কি হলো??
.
সেটাই তো….এতোক্ষন বিয়ের জন্য কান্নাকাটি করলো এখন যখন আমি রাজি তখন ফুরুৎ।।কই ভাবছিলাম কোনো একটা এডাল্ট মেয়ে বিয়ে করবো।।।যে আমায় সামলানে তা না।।তার বিনিময়ে একদম ফিডার খাওয়া বাচ্চার প্রেমে পড়ে গেছি ইয়ার।।জীবনটাই কাহিল।।
.
.
🍁
.
.
রিয়াকে দুই ঘন্টা যাবৎ ফোন করছে ফাহিম বাট তার পাত্তায় নেই।হোস্টেলে খবর নিয়ে দেখেছে সেখানেও নেই।।রিয়াদকে ফোন করে শুনলো চট্টগ্রামেও যায় নি।।এবার ফাহিম চিন্তায় পড়ে গেলো।।রিয়া সেখানে গেলো যেনো তাকে জানানো হয় এই কথা বলে ফোন রেখেছে ফাহিম।।সারাদিন খুঁজেও রিয়ার কোনো হুদিস পেলো না সে।।সন্ধ্যা সাতটা চুপচাপ বসে আছে বিছানায়।।ঠিক তখনই ফোনটা বেজে উঠলো…স্ক্রিনে রিয়াদের নামটা ভাসতেই লুফে নিলো ফোনটা।।
.
হ্যালো রিয়াদ??রিয়া কই?
.
জি ভাইয়া,,রিয়া কিছুক্ষণ আগেই বাসায় পৌঁছেছে।।টেনশন করবেন না।।ও ঠিক আছে।
.
ওকে একটু দেওয়া যাবে??ওর ফোনটা বন্ধ।।
.
একটু ওয়েট করুন।।(কিছুক্ষণ পর)ভাইয়া ও তো আপনার সাথে কথা বলতে চাইছে না ওর নাকি মুড নেই কথা বলার।
.
ওহ,,আচ্ছা। মুড না থাকলে কথা বলতে হবে না রাখছি।।
.
রিয়াদ ও ফাহিম দুজনেই অস্বস্তি নিয়ে কথা বলছিলো।।রিয়াদেরও ভাবতেই অবাক লাগছে ফাহিম ভাই ওর পিচ্চি বোনটাকে ভালোবাসে।।ভাবা যায়??
.
.
#চলবে🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here