অবহেলা ময় ভালোবাসা পাঠ-১

সিনিয়ার আপুর প্রতি আগে থেকেই দুর্বলতা আমার
কেন জানিনা এরকম হয়
সিনিয়র আপু দেখলেই ক্রাশ খাইতে ইচ্ছা করে।
তবে প্রেম করা হয়ে ওঠেনি কারো সাথে
এখনো সিনিয়র আপুর অপক্ষাতেই আছি
এ পর্যন্ত কত গুলো ক্রাশ খাইছি নিজেও জানিনা

আমি ইন্টার ২য় বর্ষ পড়ি
বাবা সরকারি চাকুরি করেন
কোনো জায়গাতে ২-৩ বছরের বেশি থাকতে পারিনা
বাবাকে এবার সরাসরি বলে দিয়েছি
এবার তার ট্রান্সফার হলেও আমি এ জায়গা ছাড়ছিনা
নতুন জায়গা নতুন কলেজে খাপ খাওয়া যে কতটা কষ্টকর আমি জানি
তবে আমি তেমন কারো সাথে মিশিনা
কথাও বলিনা তেমন কারো সাথে
এর মাঝেই দুই একজন বন্ধুকে পাই
কিন্তু তাদেরকেও যদি ছাড়তে হয় তাহলে কি ভালো লাগবে
এবার বাবার ট্রান্সফার হয়েছে রাজশাহি থেকে চট্টোগ্রামে
তো সব কিছু গুছায় নিয়ে চলে আসলাম সেই অচেনা জায়গায়
জীবনে কখনো চট্টোগ্রাম আসা হয়নি
তাই একবারেই নতুন সব কিছু
বাবা আগেই বাসা ঠিক করে রেখেছেন
বাসা উঠে সব কিছু গোছাতেই সেদিন চলে যায়
আসলে মা নেইতো
তাই বাবা আর আমাকেই সব কিছু ঠিক করতে হয়
বাবাই আমার বন্ধু
ছোটতে মাকে হারিয়ে ফেলেছি
দুচোখ দিয়ে তাকে দেখার সুযোগ টুকু হয়েছে কিনা জানিনা

রাতে বাবা আর আমি বসে টিভি দেখতেছি
এমন সময় বেল বেজে উঠলো

বাবাঃএসময় আবার কে এলো
আমিঃআমি দেখতেছি বাবা

দরজা খুলে দেখি এক মহিলা দাড়িয়ে আছে হাতে একটা বাটি নিয়ে
আমিঃআপনাক তো ঠিক চিনলাম না
মহিলাঃআমি এ বাড়ির মালিক বাবা
তুমি নিশ্চই রিয়াজুল সাহেবের ছেলে
আমিঃহ্যা আন্টি আসেন ভিতরে
আন্টি ভিতরে আসতে আসতে বলতে লাগলো
আন্টিঃতোমার নাম কি
আমিঃজি,ইমরান
আন্টিঃকিসে পড়ো তুমি
আমিঃইন্টার সেকেন্ডইয়ার

আন্টিঃআস-সালামু আলাইকুম ভাই
বাবাঃওয়ালাইকুম আস-সালাম আসেন ভিতরে
আন্টিঃনা আজ আর বসবোনা
ভাবলাম নতুন এসেছেন
সব কিছু গোছাতেই তো দিন যাবে তাই
একটু হালকা খাবার নিয়ে আসলাম
বাবাঃআচ্ছা রাখেন
চা তো খেয়ে যান
আন্টিঃনা আজ না আর একদিন খাবো
আজ আসি তাহলে
আন্টি চলে গেল আর আমি গিয়ে আবার দরজাটা
লাগিয়ে দিলাম
যাক ভালো হয়েছে
আজ আর ইচ্ছা করছেনা রান্না করতে
তারপর নাসতা করে বাবাকে বললাম বাবা ছাদে চলো আড্ডা দিবো
বাবাঃওকে তুই যা আমি চা নিয়ে আসছি

একটু পর বাবাও চলে আসলো দুই কাপ চা নিয়ে
চা খাচ্ছি আর আকাশটা দেখছি
বেশ ভালোই লাগছে চট্টোগ্রাম জায়গাটা
আমিঃআজ মা থাকলে কতই না ভালো হতো তাই না বাবা
বাবাঃহুম।তোকে আর এত কষ্ট করতে হতোনা
আমিঃজানো বাবা মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে মায়ের সাথে কথা বলতে কিন্তু কোথায় যেন আটকে যাই আর কথা বলা হয়ে ওঠেনা
বাবাঃবাদ দে ওসব।কেমন লাগছে নতুন জায়গা
আমিঃবেশ ভালোই লাগছে পরিবেশ টা।
মানুষগুলো না জানি কিরকম হয়
বাবাঃঘুমাবি চল
আমিঃআচ্ছা চলো
এভাবেই চলে গেল সেদিনের রাত
পরের দিন সকালে বাবা চলে গেল তার অফিসে
আর আমি রান্না করে চলে গেলাম কলেজে
কলেজে এসে নিজেই ক্লাসটা খুজে নিলাম
ক্লাসে একা একা বসে আছি
কিছুক্ষণ পর স্যার আসলো
সবার এটেনডেন্স নিলো
তারপর স্যার বলতে লাগলো
স্যারঃতোমাদের মাঝে নতুন একজন এসেছে চলো পরিচিত হই সেই অপরিচিত ব্যাক্তির সাথে
সকলেঃজ্বি স্যার
স্যারঃতো ইমরান তুমি সামনে আসো

আমি কিছু না বলে সামনে চলে আসলাম
স্যার আবার বলতে শুরু করলো

স্যারঃএ হচ্ছে তোমাদের নতুন বন্ধু
ইমরান তো পরিচয় দাও
ইমরানঃস্যার আমার পরিচয় এটুকুর বাইরে আর কিছু নেই
স্যারঃশোনো এখানের সবাইকে নিজের পরিবারের সদস্য মনে করবা
সব কিছু শেয়ার করবা
আর আমাকে নিজের বন্ধু ভাববা
আর তুমি হয়তো জানোনা
আমরা সকলে সকলের কষ্টের বিষয়টা জানি
পরিচিত হওয়ার সাথে সাথে কষ্টের বিষয় গুলোও
শেয়ার করছি এক জন আর একজনের সাথে
এখন তোমার পালা
তুমি তোমার কষ্টেরর বিষয় গুলো শেয়ার করো
আমিঃআমার আবার কষ্ট
স্যারঃকষ্ট সকলের আছে
আজ তোমার টা বলো আস্তে আস্তে সকলের টা জানতে পাবা
আমিঃআমার কষ্টটা মাকে ঘিরেই
জীবনে সরাসরি দেখার সুযোগ হয়নি তাকে
খুব মিস করি মাকে।
মাকে ছাড়া একটা পরিবার কিভাবে চলে আমি জানি
আমার নতুন কলেজ
হয়তো সকালে ঘুমে থাকতাম মা এসে ডেকে তুলতো তারপর খাওয়ায় পকেটে টাকা দিয়ে পাঠায় দিতো কলেজে
কিন্তু দেখেন স্যার নেই মা পাশে
যে সকালে আমার বিছানায় থাকার কথা সেখানে থাকতে হয় রান্না ঘরে
আসলে মা এমন একটা জিনিস যার নেই সেই বোঝে।
জানেন স্যার খুব ইচ্ছা করে মা বলে কাউকে ডেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে
কিন্তু পারিনা

রুমাল বার করে চোখ দুটো মুছলাম
দেখলাম স্যারের চোখেও পানি
স্যারঃজানো তোমার মতই মা হারা আরো একজন এই ক্লাসে আছে
সে কে জানো
তোমার এই স্যার
আমি কলেজ থেকে বাসায়
ফিরলেই মায়ের খোজ নিতাম
মা অনেক আদর করে জিজ্ঞেস করতো কেমন কাটলো বাবা আজকের দিনটা
এখন দেখো বাসায় ফিরলে কেউ আর জিজ্ঞেস করেনা

যাক বাদ দাও ওসব
সবাইকে যেতেই হবে তার কাছে
জীবনকে জীবনের নিয়মে চলতে দেওয়াই ভালো
এরপর একটু সময় পর সেই ক্লাস শেষ
বাকি ক্লাস করে বাসা আসছিলাম
রাস্তায় দেখলাম এক আপু ফোনে কথা বলতেছে
বড় হবে নাকি ছোট হবে জানিনা আমি
কথা বলতে বলতে রাস্তার বেশ মাঝেই চলে গেছে
অপর পাশ থেকে একটা মাইক্রো জোরে আসতেছে
যা উনি দেখতেই পাননি
আমি কোনো রকমে দৌড়ে তার হাতত ধরে টান দিয়ে সাইডে নিয়ে আসি
টান দেওয়াতে ওনার মোবাইল টা পড়ে যায়
আর উনি অন্য কিছু দেখে ঘুরে আমি হাত ধরে আছি জন্য দিলেন এক চর বসে
আপুঃছোট লোক আমার হাত ধরলি ধরলি আবার মোবাইল টাও ফেলে দিলি
ইডিয়েট

পাশ দিয়ে যখন মাইক্রো টি চলে গেলো
তখন হয়তো বুঝতে পাররছে কি হতে যাচ্ছিলো।
এরপর আমার দিকে ঘুরে কিছু বলতে চাইলো আমি বলার সুযোগ না দিয়েই চলে আসলাম

এভাবেই কেটে গেলো ১০ দিন
কলেজের স্যারের সাথে বন্ধুদের সাথে অনেক ফ্রি হয়েছি এ কয়েকদিনে

আজকে কলেজে এসে শুনি যে আজ ক্লাস হবেনা
কি নাকি সেমিনার আছে
একটু পড়ে স্যার সবাইকে মাঠে ডাকলো
ইন্টার অনার্স ডিগ্রির সকলে মাঠে উপস্থিত
প্রিন্সিপাল স্যার বলতে শুরু করলো
স্যারঃপ্রতিবারের মত এবারো আমাদের কলেজে ব্রেইন গেমের প্রতিযোগিতা হবে
আর সেটা আজকেই
জানি কারো তেমন কোনো প্রিপারেশন নেই
তাইতো আজকেই ব্রেইনগেম এর প্রতিযোগিতা টা নেওয়া হচ্ছে দেখা যাক কার দক্ষতা কেমন
তো সকলের জন্য একটা ধাধা আছে
ধাধাটি যেমন তেমন ধাধা না
একটা বই কমন জায়গায় লুকিয়ে আছে
এই ধাধার দ্বারা বইটি খুজে বার করতে হবে
ধাধাটা হলো”উপাধি রাজা তার,,
কারণ তার গর্জন।
খুজে দেখো গহীনে,,
করিতে পারো অর্জন।

সময় ২০ মিনিট
যে পারবে সে হবে এই ইয়ারের ব্রেইন গেম চ্যাম্পিয়ান

সকলের মাথা খারাপ
এটা কিরকম ধাধা
কলেজে বন বা সিংহ বা আসবে কোথা থেকে
১০ মিনিট চলে গেছে কিন্তু কেউ পাচ্ছেনা

চলবে………….
.
.
#অবহেলা_ময়_ভালোবাসা
#পার্ট~১
#লেখকঃBipul_Imran

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here